#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৯ (২য় খণ্ড)
গাড়ি থেকে অতিশীঘ্র নামল নয়নতাঁরা। তার কোলে রিও আর ফিওনা। আবার হাতে ধরে থাকতে হচ্ছে ছাতাও। দুজনকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সে। এরা দুজন এতদূর গাড়িতে করে আসার পর আর গাড়িতে বসে থাকতে চাইছিল না। রাগিনী এখানে এসেছে জানতে পেরেই তার এখানে ছুটে আসা। অবিরাম বৃষ্টির তেজ কমেছে অনেকটা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে এখন। আকাশটা তখনও গুড়গুড় আওয়াজ করে ডাকছে। বিধ্বস্ত সেই হসপিটালের দালানকোঠার সামনে অজস্র ভিড় দেখে বুক ধুকধুক করতে থাকে তার। এত মানুষের সমাগম দেখে মিসেস. রমিলাকে গাড়িতেই বসিয়ে রেখে এসেছে সে। তার দুচোখ খুঁজছে তার বিগ ব্রাদার আর রায়ানকে। লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করছে প্রিয় মানুষকে নিয়ে আবার অনেক পুলিশ অপ/রাধীদের ধরে নিয়ে যেতে ব্যস্ত। এসবের মাঝে চলতে চলতে হঠাৎ তার নজর আঁটকায় এক মানবকে। সাদা শার্ট র;ক্তে ভিজে হয়েছে রক্তিম বর্ণ। এই বৃষ্টিতে বসে থাকার কারণে মাথার চুল সহ সম্পূর্ণ দেহ ভিজে একাকার। শরীরের গড়ন বুঝে নিতে ভুল হলো না নয়নের। তার বিগ ব্রাদারের নিকট গেল সে। কাছে যেতে যেতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল মেহরাজের মৃ/হদে/হ এবং তার পাশে অন্য কারোর দেহ। ভালো করে খেয়াল করতেই সেই প্রা/ণহীন দেহের হাতের কাছে বের হয়ে থাকা শাড়িটা দেখে স্তব্ধ এবং বিমূঢ় হয়ে পড়ল সে। মনে মনে একটাই কথা জপ করতে থাকল, সে যা ভাবছে তা যেন সত্যি না হয়। ঢক গিলে নিজের ভাইয়ের পানে তাকাল সে। কোহিনূরকে দেখে নিশ্চিত হলো সে যা ভাবছে, যা দেখছে সবই বাস্তব। এমন সময় রিও সব অবলোকন করল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে ছটফট করা শুরু করল। নয়নের হাত আলগা হয়ে এলে লাফ দিলো সে। নয়নতাঁরা নিজেকে সামলাবে নাকি রিও-কে বুঝে উঠতে পারল না। হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরল সে। রিও ধীর পায়ে গিয়ে থামল সেই প্রাণহীনার পাশে। নাক দিয়ে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা গন্ধ নিতে থাকল। সাদা চাদরে ঢাকা সেই নারীর আশেপাশে ঘুরে বেশ মনোযোগের সহিত গন্ধ নিয়ে নাক সিটকে দূরে সরে গেল। ভীড়ের মধ্যে ঢুকে গেল হেলেদুলে। নয়নতাঁরা চেয়েও ডাকতে পারল না রিও-কে। কণ্ঠস্বর আঁটকে গিয়েছে তার। কথা বের হচ্ছে না। গলা ধরে আসছে। চোখের অশ্রু বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসছে। সে না আর দাঁড়িয়ে না থেকে গিয়ে বসল নিজের ভাইয়ের কাছে। শান্তনা দিতে চাইল ভাইকে। তবে কী বলে শান্তনা দেবে? আদেও কোনো কিছু বলে কাজ হবে? আচমকা রিও-কে না ডাকতেই ফিরে এলো। আরামে লেজ নাড়িয়ে কোহিনূরের পানে তাকিয়ে রইল জিহ্বা বের করে। খটখট জুতোর আওয়াজটা তীব্র হলো। লা/শের সামনে এসে দাঁড়াল এক মানবী। নয়নতাঁরা মাথা উঠিয়ে তাকাল সেই আধুনিক পোশাক পরিহিত নারীটির দিকে। মাথার ক্যাপ দ্বারা লম্বা চুল ঢাকেনি তার। ছড়িয়ে পড়েছে কালো ঘন কেশ। দৃশ্যটি দেখেই সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল নয়নের। পাশে থাকা কোহিনূরকে ঝাঁকাতে থাকল হাত ধরে। তার সন্নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি কম্পিত সুরে বলল,
“কোহিনূর।”
মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে রাখা কোহিনূর মাথা উঠিয়ে ধীরে ধীরে অস্পষ্ট দৃষ্টিতে পিটপিট করে তাকায় মেয়েটির পানে। পোশাক দিচ্ছে এক পরিচয় তবে সেই কোমল, তেজোহীন মুখশ্রী দিচ্ছে প্রিয় পরিচয়। মেয়েটি আবারও বলল,
“অফিসার সাহেব!”
নিজের দে/হের বেশির ভাগ জ/খম হয়েছে কোহিনূরের। সেই অবস্থাতে হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে যখন সে পড়ে যেতে চাইল তবে নিজেকে সামলে ভারি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই রাগিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল কোহিনূরের কোলে। কোহিনূরও কোনোপ্রকার আপত্তি না করে তার প্রিয়তমাকে দুহাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে উপরে তুলে নিজের উল্লাস না সামলাতে পেরে চিৎকার দিয়ে গোল ঘুরতে থাকে। রাগিনী জাপটে দুহাতে আলিঙ্গন করে তার প্রিয় মানুষটিকে। একটু জোরে দুহাতে চেপে ধরাতে নিজের বুকে ক্ষ/ত থাকায় হালকা আর্ত/নাদ করলে তৎক্ষনাৎ কোহিনূরকে ছেড়ে দাঁড়ায় সে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় কোহিনূর। এক মুহূর্তের জন্য বাঁচতে ভুলেছিল সে। কেউ যেন তার হৃদয় ছু/রি দিয়ে কেটে ছিঁ/ড়ে কেঁ/ড়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। রাগিনী গম্ভীর মুখে মানুষটির পানে চেয়ে হাত উঁচু করে তার ক্ষ/ত জায়গার চারিপাশে হাত বুলিয়ে নিলো। কপালের র/ক্ত শুঁকিয়ে গিয়েছে কোহিনূরের। ভেজা চুল সব নেতিয়ে ঢাকা পড়েছে কপাল। ঠোঁটের পাশেও অস্বাভাবিকভাবে কা/টা। বাম নাকের ছিদ্রের কাছে লাল র;ক্তও শুকনো। বুকের শার্ট র/ক্ত এবং বৃষ্টির পানি মিলিয়ে সম্পূর্ণ ভেজা। সব মিলিয়ে রাগিনীর কাঙ্ক্ষিত এই মানুষটির অবস্থা দেখে আঁখিতে অশ্রু টলটল করতে লাগল। তিরতির করে কাঁপতে থাকল ঠোঁটজোড়া।
“আমি বলেছিলাম, নিজের খেয়াল রাখতে। আপনি রাখেন নি আমার কথা।”
রাগিনীর মলিন ভরা কণ্ঠসুরে তার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় সযত্নে বন্দি করল কোহিনূর। মেয়েটির ফর্সা এবং নম্র হাতে র/ক্তিম র/ক্তের ছাপ। সেটা মনোযোগের সহিত দেখতে দেখতে কোহিনূর নিস্তেজ গলায় বলল,
“রেখেছি তো। দেখো, আমি কিছু হয়নি।”
নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো রাগিনী। এক রাশ অভিমান নিয়ে ভারি গলায় বলল,
“আপনি আবার আমাকে মিথ্যে কথা বলেছেন। বারবার বলেছি, মিথ্যে বলবেন না আমাকে। পরিস্থিতি যেমনই হোক। সবটা আমাকে বলবেন। আপনি আমার কথায় শোনেন না।”
“আমার মনে হয়েছিল, সত্যিটা বললে তুমি হয়ত অনেক চিন্তা করবে। চট্টগ্রাম যেতে চাইবে না। তাই মিথ্যে বলতে হয়েছে আমাকে। আমিও জানতাম না যে এত বড়ো কাহিনী হয়ে যাবে।”
রাগিনী নিরুত্তর রইল। তার খোলা আকাশে জমেছে রাশভারী অভিমান। তার জবাব না পেয়ে কোহিনূর তার দিকে খানিকটা ঝুঁকে পড়ে আকুল হয়ে বলল,
“আচ্ছা বাবা! আই এম সরি!”
রাগিনী মিনমিন করে বলল,
“এবার যদি মিথ্যে বলেছেন আমি কিন্তু বাড়ি ছেড়ে চলে আসব।”
কোহিনূর এবার রাগিনীকে কাছে টেনে বলল,
“এভাবে বলে না। আর একটু হলে নিঃশ্বাস আঁটকে যেত আমার, দম বন্ধ হয়ে যেত, মনে হচ্ছিল আমার গলা কেউ চেপে ধরেছে। আমি পৃথিবী উলোটপালোট হয়ে গিয়েছিল। আমার পৃথিবী তোমার মাঝে আবদ্ধ, রাগের রানি।”
“পা/গল আপনি। রিও-কে দেখুন। ও ঠিকই খুঁজে নিয়েছে আমায়। দৌড়ে আমার কাছে চলে এসেছিল।”
রিও-এর দিকে তাকাল কোহিনূর। সে রাগিনীর পায়ের কাছে গাঁ ঘষছে। আর আদুরে সুরে ডেকে চলেছে বারংবার। তারপর দৃষ্টি আবারও রাগিনীর মাঝে নিবদ্ধ করে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“কী দরকার ছিল ওখানে এখানে আসার?”
“দরকার ছিল বলেই এসেছি। বাবা… ”
‘বাবা’ শব্দটি উচ্চারণ করেই থেমে গেল রাগিনী। সেই নিকৃষ্ট ব্যক্তিটিকে বাবা বলে সম্বোধন করতে বিবেকে বাঁধছে তার। তাই ঢক গিলে সে আবারও বলতে আরম্ভ করল,
“মি. শাহ্ রাশেদ গ্রেফতার হওয়ার পরপরই সেটা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আমি সেখান থেকে খবর পেয়ে কিছু না ভেবে চলে আসি। তার সঙ্গে দেখা করি। সত্যিটা জানতে পারি। আমার জীবন বৃথা হয়ে গিয়েছে, কোহিনূর। বাবা নামক মানুষটির সব ভালোবাসা, স্নেহ মিথ্যে মনে হচ্ছে। অভিনয় লাগছে সব।”
রাগিনীর মাথায় হাত রাখল কোহিনূর। ক্যাপটা খুলে মসৃণ, এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আলতো করে। শান্তনা দিয়ে বলল,
“আমার যা মনে হয়েছে তোমার বাবা তোমাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলেন।”
রাগিনী নির্বাক। ঠোঁট চেপে নিজের কান্না নিবারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুটা মুহূর্ত পর বিমর্ষ হয়ে সে জিজ্ঞেস করল,
“আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেছিলাম কারণ আমার মনে হয়েছিল আমার বাবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষদের মাঝে একজন। কিন্তু আজ আমি উপলব্ধি করেছি, আমার চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই। কেন এমন হলো কোহিনূর? বাস্তবতা আরেকটু সুন্দর হতে পারত না?”
কোহিনূর এবার নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল। সে জানে, রাগিনী তার বাবাকে কতটা ভালোবাসত। কতটা সম্মান করত। কতটা ভরসা করত। চূর্ণ হয়েছে তার বিশ্বাসের স্থান। রাগিনী আবারও বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আমার মাকেও তিনি নাকি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তাহলে কেন এত জঘন্যভাবে ধোঁকা দিলেন তিনি? আমার কখনো এমন করার আগে প্লিজ আমায় মে/রে ফেলবেন, কোহিনূর।”
রাগিনীর কাঁধে হাত রাখল কোহিনূর। ভরসা যুগিয়ে বলল,
“বিশ্বাস করে আমার হাত ধরেছ তুমি সবকিছু ছেড়ে। এই বিশ্বাস নির্জন আহমেদ কোহিনূর কখনো ভাঙবে না। এই ভরসা ভাঙার ভাবনা আসার আগেই কোহিনূর ভস্ম হয়ে যাবে।”
রাগিনী গুনগুন করে কাঁদতে আরম্ভ করল। সব অনুভূতির মিশ্রিত এই ক্রন্দন। সে জানে, সে কোহিনূরের হাত ধরে ভুল করেনি। তবে ভয় তো পিছু ছাড়েনা।
নয়নতাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে রইল। সে চায় না তার ভাই এবং ভাবীজানের ব্যক্তিগত মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটাতে। আস্তে করে পিছু সরে আসতে লাগল সে। কোথাও মস্তিষ্কে কিঞ্চিৎ চিন্তা জাগল! রায়ান লোকটি কোথায়? সেও কি এই মিশনে ছিল? যদি থেকে থাকে কোথায় সে? ঠিক আছে তো?
পিঠের সঙ্গে অযাচিত ধা/ক্কা খেয়ে ফিওনাকে নিয়ে চমকে পিছু ফিরে তাকায় নয়নতাঁরা। তার মুখোমুখি থাকা মানবটির গালে তীব্র ক্ষতচিহ্ন নাড়িয়ে তুলল নয়নের হৃদয়। কাঁধেও লেগেছে বোধহয় বেশ আ/ঘাত। সেখানটা লাল হয়েছে পোশাক। নয়ন রায়ানের উদ্দেশ্যে দ্রুততার সাথে বলল,
“আপনি ঠিক আছেন? কত চিন্তা হচ্ছিল আপনার জন্য আপনি জানেন? অবশ্য আপনি জানবেন কী করে? আপনি তো কিছুই বোঝেন না।”
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল রায়ান। উৎসুক হয়ে বলল,
“কী বুঝি না? তুমি একটু বুঝিয়ে দাও।”
অতিরিক্ত অস্থিরচিত্ত হয়ে নয়ন একটু বেশি বলে ফেলেছে সেটা বুঝতে পারল সে। মুখ কাঁচুমাচু করে আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে আন্টি আপনার জন্য চিন্তা করছিল। তাই একটু বেশিই…”
নিজের হাত নয়নের সামনে তুলে ইশারায় তাকে থামাল রায়ান। ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইল,
“না, না। এটা শুনতে চাইনি। আমি কী যেন বুঝিনা বলছিলে। কী বুঝিনা সেটা বলো। বুঝিয়ে দাও একটু।”
রায়ানের চোখের সাথে চোখ মেলানো সম্ভব হলো না নয়নতাঁরার। মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রইল নীরবে। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে দোষারোপ করল মনে মনে। রায়ান ফের বলল,
“কী হলো ম্যাডাম? প্লিজ, এক্সপ্লেইন ইট!”
“উফফ…ছেলেদের এসব নিজে বুঝে নিতে হয়। মেয়েরা বলতে অনেক লজ্জা পায়।”
ঠোঁট টিপে হাসল রায়ান। শুধাল,
“সো মিস. নয়নতাঁরা বুঝি লজ্জাও পায়?”
এমন প্রশ্নে তেতে উঠল লাজুক নয়ন। কণ্ঠে সামান্য তেজ নিয়ে বলল,
“কেন আমাকে বুঝি মেয়ে বলে মনে হয় না?”
“তা কখন বললাম? তোমার দেখছি তোমার ভাইয়ের মতো উল্টাপাল্টা বোঝার স্বভাব আছে।”
“মোটেও না। আপনি যেমন বলেছেন তেমনই বুঝেছি।”
বিরস মুখে বলল নয়ন। রায়ান এবার নয়নের মাঝে অভিনিবেশ করল। ভালো করে পরখ করল মেয়েটির মাধুর্য। তার কথায় এবং কাজে চাঞ্চল্য রায়ানকে উৎকণ্ঠিত করে তোলে। হয়ত মায়ের সিদ্ধান্ত ভুল নয়। এই মেয়েটাই তার জীবনের আলো! সেই ছোটোবেলা থেকে নয়নের প্রতি তার অধিক আগ্রহ সবাইকে তাক লাগাত। সেই আগ্রহ তখন আকর্ষণ হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন নয়নের নিজের মনের কথা ইনিয়েবিনিয়ে বলার চেষ্টা করার ভঙ্গি বেশ কাছে টানে। কখনো কখনো নিজের অজান্তে নয়নের মোহে আবিষ্ট হয়েছে সে। খুব গভীর চিন্তা করলেই বোঝা যায়। বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে রায়ান বলে ওঠে,
“আমার মনে হয়, কারোর যদি কাউকে ভালো লাগে বা ভালোবেসে ফেলে তবে সেটা সময় যাওয়ার আগেই বলে দেওয়া উচিত।”
ভ্রু কুঞ্চিত হলো নয়নের। অবাক পানে শুধাল,
“কে বলছে না আপনাকে মনে কথা? কেউ আছে বুঝি আপনার?”
“আছে তো অবশ্যই। কিন্তু সে স্বীকার করতে চায় না। এইযে, সে আমার জন্য এত চিন্তিত তবে এখন আমার সামনে একেবারে নির্বিকার হয়ে গিয়েছে। এটা কি ঠিক?”
নয়নতাঁরার বুঝতে একটু সময় লাগল রায়ান তাকে কথাগুলো বলছে। কান গরম হতে থাকল তার। ইচ্ছে করল কাটা ঘুড়ির মতো দূরে কোথাও পালাতে। কেন পড়তে হবে তাকে ধরা? শুঁকনো ঢক গিলে নেওয়ার আগেই ফট করে রায়ান বলল,
“আমার আকাশটা খুব অন্ধকার। সেখানে চাঁদের মতো টিমটিম করে জ্বলছে আমার মা। যে খুব কষ্টে আমার আকাশটাকে সামান্য আলো দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার একটা সঙ্গী প্রয়োজন। একটা সন্ধ্যাতাঁরা ভীষণ দরকার। তুমি কি আমার আকাশের তাঁরা হবে? সকলের আগে দীপ্তিমান হবে তুমি, তাঁরা? আমার একমাত্র তাঁরা হতে কি তুমি রাজি?”
রায়ানের এহেন কথায় যেন নয়নের পায়ের জমিন কাঁপতে আরম্ভ করল। এ যেন তার দিবাস্বপ্ন! কথাগুলো বারবার কানে প্রতিধ্বনিত হওয়ায় পাগল পাগল অনুভূতি জাগল নয়নের মনে। রায়ান আবারও নিজের হাত বাড়িয়ে বলল,
“আমার মায়ের বউমা হবে তুমি প্লিজ? নিজের জন্য কিছু চাই না। আমি আবার এত স্বার্থপর না। আমি শুধু আমার মায়ের জন্য একটা ছটফটে বউমা চাই!”
লজ্জাবতী নয়নতাঁরা ফিক করে হেঁসে দিলো। অতঃপর রায়ানের শীতল দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে নিজের কাঁপা হালকা ভিজে হাতটা রায়ানের হাতের উপর রাখল। খুশি, উচ্ছ্বাস যেন আকাশসম হলো তার। এই মানুষটিকে পাওয়া তার কাছে ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। রায়ান নয়নের হাতটা সুন্দর করে নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে বলল,
“আমার একটাই দাবি। আমি যদি দশ বাচ্চার বাবাও হয়ে যাই তবুও যেন আমার তাঁরার চটপটে স্বভাব না কমে। তার এই চাঞ্চল্যতা আমি নিজের পুরো জীবন ভরে দেখে যেতে চাই।”
মৃদু হাসে নয়ন। একহাতে ফিওনাকে ভালো করে ধরতেই রায়ান ফের চিন্তিত হওয়ার ভান ধরে বলে,
“তবে হ্যাঁ, বলে তো দিলাম দশ বাচ্চার বাবা হওয়ার কথা। কিন্তু বাচ্চাগুলো তোমার স্বভাব যেন না পায়! তাহলে কিন্তু আমাকে হিমশিম খেতে হবে।”
বলেই শব্দ করে হাসতে শুরু করে রায়ান। নয়নতাঁরা চোখজোড়া সরু করে তার বুকে আলতো করে ধা/ক্কা দিয়ে বলে,
“পাঁজি পুলিশ!”
নিশ্চুপ রাগিনী আর কোহিনূর। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। কোহিনূর রাগিনীকে কথা বলতে বারণ করে দিয়েছে। সে শুধু রাগিনীকে পাশে নিজের সংলগ্নে রেখে একটু মন ভরে শ্বাস নিতে চায়। কিছু সময় আগে যখন অন্য কারোর লা/শ দেখে রাগিনী ভেবে নিয়েছিল তখন তার কেমন মনস্তাপ হয়েছিল সে-ই জানে একমাত্র।
“তুমি কেন এখানে আসতে গিয়েছিলে? মেহরাজ যখন বলল ও তোমায় দেখেছে আর আমি খুঁজতে গিয়েও পেলাম না। আর আমার চোখের সামনে যখন ব্লা/স্ট হলো আমার কেমন লাগছিল তুমি জানো? কলিজা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছিল। তুমি এমন করলে তোমার চিন্তাই আমি কোনদিন যেন ম/রে যাই!”
কোহিনূরের এমন কথায় রাগিনী তাকে ধমকে বলল,
“ছি! কী বলছেন। আমি তো শুধু রূপার কাছে আসতে চাইছিলাম। ওর সঙ্গে দেখা করা খুব জরুরি ছিল। আমি ওকে এই ভুল কাজ থেকে সরাতে চাইছিলাম। ও আমার বোন হয়, কোহিনূর। আচ্ছা! ওকে কি ধরতে পেরেছেন? কোথায় ও? শেষে আমার মাথায় ও এমন জোরে আ;ঘাত করল যে পরে ওকে খুঁজে পাওয়ার আগেই আমাকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আর এই পোশাক… ”
পোশাকের কথা স্মরণে আসতেই নিজের দিতে ভালো করে তাকাল রাগিনী। জামা, জিন্স দেখে হতবাক হয়ে বলল,
“এগুলো তো রূপা পরে ছিল।”
কোহিনূরের কপালে ভাঁজ পড়ে। কিছু একটা ভেবে বলে,
“আমি যার লা/শ তোমার ভেবেছিলাম সে কিন্তু তোমার মতো শাড়ি পরে ছিল।”
কোহিনূরের এমন কথা ঘাবড়ে যায় রাগিনী। চোখমুখ চুপসে যায়। মনে উল্টাপাল্টা ভাবনা আসে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। কোনোরকমে বলে,
“কোথায়? কোথায় সেই বডি? আমি দেখতে চাই।”
রাগিনীর হাত ধরে ভিড় পেরিয়ে লা/শগুলোর সামনে দাঁড়ায় তারা। কোহিনূর ইশারায় দেখিয়ে দেয় রাগিনীর শাড়ির ন্যায় হুবহু শাড়ি পরিহিত এক নারীকে। মুখটা চাদরে ঢাকা তার। রাগিনী তার মুখটা দেখতে চায়। এলোমেলো পায়ে কাছে গিয়ে বসে সে। চাইছে না কাপড় উঠিয়ে মুখটা দেখতে। মনে মনে দৃঢ় প্রার্থনা করল যাতে তার ধারণা ভুল হয়। আস্তে করে মুখের চাদর উঠিয়ে ফেলতেই চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় রাগিনী। দূরে ছিটকে আসে কিছুটা। কোহিনূরও চোখমুখ জড়িয়ে ফেলে। ভয়ানক ব্লা/স্টে এই অজানা নারীর সারা দেহ হয়েছে ছি/ন্নভিন্ন। পুড়ে কালো হয়েছে মুখশ্রী। জায়গায় জায়গায় ক্ষ/তের সৃষ্টি হয়েছে। একজন কনস্টেবল এসে দ্রুত চাদর দিয়ে মেয়েটির মুখ ঢেকে দিলো। রাগিনী ভাবলেশহীন হয়ে উঠে এলো। কোহিনূরের পাশে দাঁড়াল।
“কী ভাবছ?”
রাগিনীকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞাসা করল কোহিনূর। রাগিনী অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
“আমি যা ভাবছি তা যেন সঠিক না হয়।”
কোহিনূর কিছু বলল না। অনেক ভাবনাচিন্তা করে একজন কনস্টেবলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই লা;শের পায়ের দিক থেকে চাদর উঠিয়ে দাও তো। একটা জিনিস চেক করব।”
কনস্টেবল সম্মতি জানিয়ে বাধ্যগত ঝুঁকে পড়ে পায়ের দিক থেকে চাদর উঠিয়ে দিলো। দৃশ্যমান হলো একজোড়া পুড়ে যাওয়া পা। গুনে গুনে একটা পায়ে ছয়টি আঙ্গুল আবিষ্কার করল কোহিনূর। বিমূর্ত হয়ে দৃষ্টিপাত করল অস্থিরতায় ছটফট করা রাগিনীর দিকে। থেমে থেমে বলল,
“আমার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা রূপাঞ্জনা। না, মনে হচ্ছে না। আমি নিশ্চিত! এটা রূপা। কারণ ওর পায়ে ছয়টা আঙ্গুল ছিল। তোমার বাবা একথা বলেছিল।”
বিমর্ষ মনে চাদর দিয়ে ঢাকা প্রাণহীন দেহটির দিকে তাকাল রাগিনী। মস্তিষ্কে তড়িৎ খেলে গেল। ভাবনাশক্তি বন্ধ হয়ে গেল তার। রূপা যেমনই হোক তার জন্য ভীষণই মায়া অনুভব করেছে রাগিনী। বুকে অনুভূত হলো তীব্র যন্ত্র/ণা। চিৎকার করে কেঁদে উঠে মাথায় চুল চেপে ধরে বসে পড়ল সে।
“না। আমাকে বাঁচিয়ে সে ম;রতে পারে না। আমি আফসোসে শেষ হয়ে যাব তবে। ওটা রূপা নয়।”
“রূপার নামে কিছু বললে তোমরা?”
ভিড়ের মাঝে চেনা কণ্ঠ পেল কোহিনূর। সামনে এসে দাঁড়াল অভিরূপ এবং নোমান। দুজনই গিয়েছিল উর্মিলার বাড়িতে। নোমান এবং উর্মিলার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল তারা। এরপর একটা ইভেন্টে অভিরূপের এটেন্ট থাকার কথা ছিল। সেখানেই লাইভে খবর পেয়ে হসপিটালে ছুটে আসতে গিয়েও পারেনি তারা। অভিরূপকে গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। কেননা, অভিরূপ সকলের জন্য পরিচিত এক মুখ। সকলে উত্তাল হয়ে পড়বে তাকে দেখলে। নোমান জোর করে বসিয়ে রেখেছিল তাকে। অবশেষে বাঁধ ভেঙে জেদ করে গাড়ি থেকে বেরিয়েছে অভিরূপ। অনেক খুঁজে রাগিনী আর কোহিনূরকে আবিষ্কার করল তারা। রূপার নাম কানে আসতেই ব্যাকুলতা আঁকড়ে ধরল অভিরূপকে। অন্যদিকে রাগিনী যেন বধির হয়েছে। দুনিয়ার কোনো কথা তার কানে আসছে না। সে নিজ শোকে কাতর। কোহিনূর অভিরূপের কথার জবাব না দিয়ে একজন কনস্টেবলকে ডেকে বলল,
“লিসেন, এই বডিটাকে যত তাড়াতাড়ি পারো পোস্টমর্টেমের জন্য যাও। আর ডিএনএ টেস্টেরও প্রয়োজন। আই থিংক ইটস রূপাঞ্জনা।”
কনস্টেবল মাথা নাড়িয়ে আরো কয়েকজনকে ডাকে। অভিরূপ কপাল কুঁচকায়। অবিশ্বাস্য লাগে সবটা। কোহিনূরের উপর চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“এই কী বলছেন আপনি? ও কী করে রূপা হয়? রূপা ভালো আছে। ওর সঙ্গে একসাথে থাকার কথা আমার। ওর কিছু হবে কেন?”
কোহিনূর তবুও প্রতিত্তোর করল না। রাগিনী তখনও হাত দিয়ে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেঁদে চলেছে। কোহিনূর গিয়ে বসল পাশে থাকা মেহরাজের কাছে। ছেলেটার মুখের উপর থেকে চাদর সরে গিয়েছে। বৃষ্টির হালকা পানি মুখে পড়ছে। হাঁটু গেঁড়ে বসে চাদর দিয়ে মুখটা ঢেকে দিতে দিতে ঢক গিলে বলল,
“আমায় ক্ষমা করো মেহরাজ। আমায় ক্ষমা করো। তোমায় না বাঁচাতে পারার আফসোস আমাকে সারাজীবন ভোগাবে।”
হালকা নিচু হতেই রাগিনীর কোটের পকেট থেকে ফট করে পড়ে গেল ভাঁজ করা সাদা কাগজ। কাতর রাগিনী কোনোরকমে কাগজটি হাতে তুলে মেলতে থাকল। দৃশ্যমান হলো অগোছালো, বাচ্চাদের মতো হাতের লেখা। নিচে রূপার নামটি দেখে হুড়মুড়িয়ে পড়তে শুরু করল রাগিনী।
‘প্রথমেই আমার বাজে হাতের লেখার জন্য দুঃখিত, রাগিনী আপু। আমি তো তোমার মতো স্কুল, কলেজ আর পড়াশোনা করার সুযোগ পাইনি কখনো। তাই হাতের লেখা একটু অগোছালো। আমি জানি চিঠিটা তুমিই পাবে। কারণ কৌশল আমি এমনই করেছিলাম। তোমার মাথায় আঘাত করার জন্যও আমি ক্ষমা চাইছি রাগিনী আপু। হয়ত অবাক হচ্ছো তোমায় আমি আপু কেন বলছি! কারণটা হয়ত আমারও জানা নেই। আমি তোমার মধ্যে একজন বোনকে দেখতে পেয়েছি আজ। জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের মাঝে তোমার সঙ্গে কাটানোর মুহূর্ত অন্যতম। আমি যখন অসুস্থ হয়ে তোমার বাড়িতে অবস্থান করেছিলাম তুমি তখন কাউকে না জানিয়ে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমায় গোপন করেছ। সত্যিই তুমি ভীষণ কোমল। তোমাকে মা/রার কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। তোমার পোশাক এক্সচেঞ্জ করতে আমি বাধ্য হয়েছি। তোমার জীবন বিপন্ন হোক আমি চাই না। তাই আমি রাগিনী সেজেছি আর তোমায় রূপা সাজিয়েছি। অফিসার কোহিনূরের সঙ্গে ভালো থাকো তুমি। প্রথম প্রথম তোমার উপর ভীষণ হিংসে হয়েছিল। কারণ তুমি আমারই বাবার আরেক সন্তান। কিন্তু তুমি তার অতি আদরে বড়ো হলে আর আমি প্রচণ্ড অবহেলায়। পরে ভাবলাম, দোষটা তোমার নয়। আমার জন্মদাতার। যদি বেঁচে থাকতে পারতাম তাহলে বাবা নামক মানুষটাকে কিছু প্রশ্ন করতাম। জিজ্ঞেস করতাম, যদি আমাকে শিশু অবস্থায় অন্য কাউকে দান করারই ছিল তাহলে জন্ম কেন দিলো? কেন সেদিনই আমায় মে/রে দেয়নি? তাহলে এতবছর পর আমি ভুল পথে পা বাড়াতাম না। আমি খারাপ আমি মানি। কিন্তু আমার চেয়েও খারাপ আমার জন্মদাতা। আমি মাতৃস্নেহ পাওয়ার জন্য ছটফট করেছি। বাবার ছায়া পেতে তড়পেছি। কিন্তু কেউ ছিল না আমার পাশে। তাই একজন অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। এই অমানুষের জীবনে একটা ভালো মানুষের ছোঁয়াও পেয়েছি। মানুষটির নাম অভিরূপ! তিনি নাকি আমাকে ভালোবাসেন। আসলে ভালোবাসা জিনিসটা আমার মাথায় ঢোকে না। সেটার অনুভূতি কেমন আমার জানা নেই। কিন্তু তার সঙ্গে থেকে তার প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি। যাকে আমি প্রথম প্রথম এতটা জ/খম করতে চেয়েছি। সে আমাকে রক্ষা করতে নির্দ্বিধায় নিজে জ/খম হয়েছে। এটাই যদি ভালোবাসা হয় তবে আমি বলব, তিনি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। আমি তার যোগ্য কোনোদিনই ছিলাম না। তবুও তিনি আমার সঙ্গে পালিয়ে যেতে চেয়েছেন। উনার উদ্দেশ্যে একটা কথায় বলব, আপনার থেকে ভালোবাসা শেখা আর আমার হলো না, অভিরূপ। আমার মৃ/ত্যুর খবর হয়ত আপনাকে চূর্ণবিচূর্ণ করবে ভেতর থেকে। আপনি ভেঙেও পড়বেন। কিন্তু আপনি আবার গড়ে উঠবেন নতুন করে। আমি চাইব, আপনি আমার শোকে কাতর না থেকে নিজেকে সুখের সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যান। চোখের পানি আমার জন্য নষ্ট করবেন না। আপনি আমাকে শিখিয়েছেন জীবনে বাঁচার মানে কী! আপনার সঙ্গে রিকশায় একসঙ্গে বসা, আপনার হাতে সুন্দর স্পর্শ আমায় অন্য এক জগতে নিয়ে গিয়েছিল। আমিও হারাতে চেয়েছিলাম আপনার সঙ্গে। তবে জানতাম, এই চাওয়া অপূর্ণ থাকবে। কিন্তু আমি অখুশি হবো যদি আপনি আমার জন্য দিনের পর দিন যন্ত্রণা পেতে থাকেন। যখন খারাপ লাগবে, তখন ভেবে নেবেন এই রূপাঞ্জনার একমাত্র চাওয়া আপনার ভালো থাকা। ভালো থাকবেন।
আর রাগিনী আপু! আমি জীবনের শেষ মুহূর্তে আরেকটি পূর্ণতা লাভ করেছি নিজের মাকে পেয়ে। আমার মৃ/ত্যু তাকেও ভীষণ দুঃখ দেবে। দয়া করে তাকে সামলে নিও। আমার মাথা ভার হয়ে আসছে। কান দিয়ে র/ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আর লেখার শক্তি পাচ্ছি না। রাগিনী আপু! তোমার এই অবৈধ বোনের কথা রেখো। ইতি রূপাঞ্জনা।’
চলবে…