#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৮ (২য় খণ্ড)
মায়ের কোলে চুপটি করে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে রূপাঞ্জনা। দুনিয়ার এই সবচেয়ে শীতল এবং মমতায় ভরা স্থানের কোনো বিকল্প নেই। মায়ের কোলে এত প্রশান্তি জানা ছিল না রূপার। দিনদুনিয়ার সবকিছু ভুলেই গিয়েছে একপ্রকার। তার মস্তিষ্কেই নেই সে এখানে কী কাজে এসেছিল। মন এবং মাথা জুড়ে এখন শুধু মা এবং মা! চোখ বন্ধ করে থাকা সত্ত্বেও অবাধ্য চোখের পানি পতিত হয়ে ভিজে যাচ্ছে শামীমার শাড়ির আঁচল। জানতে পেরেছে তার জন্ম কতটা অভিশাপ হয়ে এসেছিল তার মায়ের জীবনে। তাকে নিজ ইচ্ছায় দূরে ঠেলে দিয়েছিল তার নিজেরই বাবা। বাবার নামটি শুনে দুনিয়া উল্টেপাল্টে গিয়েছে তার। বিশ্বাস হচ্ছে না কোনোকিছুই। যেন সে ঘোরের মাঝে বিরাজ করছে। এটাও সম্ভব? এইজন্যই বোধহয় হসপিটালে যেদিন রাশেদ সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল সেদিন ওই মানুষটিকে দেখে রূপার মনে প্রথম বাবা শব্দটি এসেছিল। সে অনুভব করেছিল বাবা নামক ছত্রছায়াটি। এমন সময় শামীমা মেয়ের মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে বললেন,
“তুই আর এসব করবি না। পুলিশ তোকে ধরে নিয়ে যাবে। তুই আমার সঙ্গে এখান থেকে পালিয়ে যাবি।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে উঠে বসে রূপা। মায়ের মুখের পানে তাকিয়ে মলিন সুরে বলে,
“সব ছাড়তে চাইলেই ছাড়া যায় না, মা। আমি চেষ্টা করেছিলাম পালানোর। ফলাফল শূন্য। ডার্ক ম্যাক্স আমাকে লোভ দেখিয়েছিল। নিজের পরিচয় জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। এখন সব জানলাম। কিন্তু একটা জিনিস জানা এখনো বাকি। ওই ফাহমিদের পেছনে কে আছে? আমি জানতে চাই। যদি ওদেরকে পুলিশ অবধি পৌঁছে দিতে পারি তবেই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবো আমি। আমার জানামতে হাতে আর বেশি সময় নেই। আর একঘণ্টার মতো সময় আছে। আন্ডারগ্রাউন্ডে সবচেয়ে বড়ো অ/স্ত্র ফিট করে দেওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময় পর সেটা ফে/টে যাবে। তার আগেই যা করার করতে হবে।”
“আমি ওতো কিছু জানি না। তুই আমার সঙ্গে যাবি। আমরা কোথাও চলে যাবো। তোকে খুঁজে পাওয়ার পর আমার মনে আর কোনো আক্ষেপ নাই। এখানে তোকে আমি ছাড়ব না। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না।”
রূপাঞ্জনা মায়ের জেদকে শান্ত করতে তার হাত ধরে আকুল হয়ে বলল,
“আমার কিছু হবে না। ওরা আমার কিছু করবে না। কারণ ওরা জানে আমি ওদের দলের। তাই এই সুযোগ নিয়ে তোমাদেরকে এখান থেকে বের করে দিতে চাই আমি। আমার কথা বোঝার চেষ্টা করো, আমি এখান থেকে বেরিয়ে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সবাই অনেক ভয়ংকর মা। তোমার ধারণাতেও নেই।”
তবুও শামীমা শুনতে চাইলেন না। তাকে অনেকটা জোর করেই তার বোনের সাহায্য নিয়ে এই জায়গাটা থেকে বের হতে সাহায্য করল রূপা। কিন্তু শেষে তাদের জানালা দিয়ে বের করে দিতেই রূপাকে দেখে ফেলল তারই দলের একজন। চোখ বড়ো বড়ো করে চেয়ে রইল সে। তা দেখে থতমত খেলো রূপা। সে বুঝে নিলো এবার তারও অ/স্ত্র চালাতে হবে। ছেলেটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রি/ভ/লবার হাতে নিলেই ছেলেটাও তার দিকে রি/ভল;বার তাক করল। তৎক্ষনাৎ নিচু হয়ে ছেলেটার পেটে পরপর দুটো বু/লেট ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলো রূপা।
সামনে যেতে যেতে আচমকায় ফাহমিদের সঙ্গে দেখা হলো রূপার। তাকে দেখেই কিছুটা অপ্রস্তুত হলো রূপা। ফাহমিদ প্রথমেই তাকিয়ে রইল তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। পরক্ষণেই ঘাড় বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“সব ঠিকঠাক?”
রূপা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করল। দৃষ্টি আরো সরু হলো ফাহমিদের। রূপার দিকে ঝুঁকে হিসহিসিয়ে বলল,
“পুলিশ আছে বলে প্ল্যানিং-এর কোনো চেঞ্জ হবে না। হাতে আর পঞ্চাশ মিনিটের মতো সময় আছে। মিনিটের মতো সময় আছে। এর মধ্যে সব পুলিশগুলোকে একজায়গায় করতে হবে। ওই কোহিনূর আর রায়ান কোথায়?”
“জানি না আমি। খুঁজতে যাচ্ছিলাম।”
রূপার এরূপ উত্তরে কিছুটা অপ্রসন্ন হলো ফাহমিদ। ক্ষোভটা প্রকাশ করার আগেই তার সূক্ষ্ম নজরে ধরা পড়ল কেউ। ডান পাশে ঝুঁকে পড়ে দেখতে পেল ওয়াশরুমের সাইডটাতে নীল রঙা এক আঁচলের। রূপার পাশ কাটিয়ে চলে এসে ফট করেই টেনে ধরলে চিৎকার দিয়ে ওঠে এক নারীকণ্ঠ। হকচকিয়ে পিছু ফিরে তাকায় রূপা। দেখা পায় তারই ন্যায় নারীটির। রাগিনী! নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করে রূপার। একে তো এত ঝামেলা। তার মধ্যে এই মেয়ে কোত্থেকে এলো এখানে? রাগিনীর হাত দুটো মুচড়ে ধরল ফাহমিদ। তৎক্ষনাৎ রাগিনী রাগে চিৎকার দিতে ছটফটিয়ে উঠল।
“ফাহমিদ, লেট মি গো! আমি ভাবিও নি সরষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে। ইউ আর অ্যা লায়ার, চিটার!”
ফাহমিদ কথাগুলো গায়ে মাখাল না। হাতটা আরো জোরে ধরে চাপা সুরে বলল,
“আমরা তো অনেক কিছুই ভাবি না। কিন্তু সেটা আমাদের সঙ্গে ঘটে যায়। যেমন তোমার বাবার কীর্তির কথা কি তুমি ভেবেছিলে?”
রাগিনী প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। কৌশলে নিজের পায়ের হিল জুতোটা তুলে দিলো ফাহমিদের পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছাড়তে বাধ্য হলো ফাহমিদ। পরক্ষণেই মুহূর্তেই তার গালে পড়ল রাগিনীর কোমল হাতের চ/ড়। ফাহমিদের হাত গালে চলে গেল আর রূপার হাত চলে গেল মাথায়। বিষয়টা কী করে সামলাবে বুঝে ওঠার আগেই রাগিনীর কপালে ব/ন্দু/ক ঠেকিয়ে ধরল ফাহমিদ। স্তম্ভিত হলো রাগিনী। রূপা হলো অস্থির। তড়িঘড়ি করে বলল,
“রাগিনীকে আমি দেখছি।”
তাড়াহুড়ো করে রাগিনীর হাত ধরে সরে নিয়ে গেলে চিল্লিয়ে নিজের লোক জড়ো করল ফাহমিদ। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই মেয়েকে কোনো ঘরে বন্দি রাখ। ও যদি কোনোভাবে পালায় তাহলে সবাইকে শেষ করে দেব।”
রূপা আরো কিছু বলতে গিয়েও পারল না। রাগিনীকে সবাই মিলে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলে গেল। দিশাহারা হলো রূপাঞ্জনা। ফাহমিদকে বলল,
“আমি ব্যাপারটা দেখছি।”
সেও রাগিনীকে যেদিকে নিয়ে যাওয়া হলো সেদিকে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ফাহমিদ পেছন থেকে শা/সিয়ে বলল,
“খবরদার! কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবি না। যা করবি ভেবেচিন্তে করবি।”
দৌড়ে নিচের ঘরের একটা ডক্টরের কেবিনে এলো রূপাঞ্জনা। সঙ্গে সঙ্গেই ফাহমিদের সেই কেবিনের দরজা লাগিয়ে দিতে চাইলে সেটা আঁটকে জোর করে কেবিনে প্রবেশ করে রূপা। কথা না বলেই কাউকে সুযোগ না দিয়ে একে একে রি/ভ/লবার চালিয়ে দেয় সে। ধপ করে একেকজনের মৃ/ত দেহ মাটিতে কাতরাতে কাতরাতে পড়ল ভয়ে কেঁপে ওঠে রাগিনী। তা বুঝতে পেরে রূপা দ্রুত কেবিনের দরজা লক করে রাগিনীকে একটা চেয়ারে শান্ত করে বসিয়ে নিজেও রাগিনীর মুখোমুখি বসে পড়ে। মেয়েটির ভয়ার্ত চোখমুখের দিকে কিছুটা সময় নীরবে তাকিয়ে থাকে রূপা। পরক্ষণেই গাম্ভীর্য ধারণ করে জানতে চায়,
“কেন এসেছ এখানে? কথায় বলে, যার মর/ণের পাখনা গজায় সে উড়ে উড়ে নিজের ম/রণের জায়গায় উপস্থিত হয়। তুমি পাগ/লামি কেন করতে গেলে? জানো এখানে কত বি/পদ?”
মাথা নুইয়ে ফেলে রাগিনী। উসখুস করে বলে ওঠে,
“সত্যি বলব? আমি এখানে তোমার ভরসায় এসেছি। তোমার আর কোহিনূরের খোঁজে এসেছি।”
“আমার প্রতি এত ভরসা জন্মালো কখন থেকে? কেন মনে হলো আমি তোমাকে বাঁচাব? মা/রতেও তো পারি।”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে রূপাঞ্জনা। রাগিনী আগের মতোই নির্লিপ্তে জবাবে বলে উঠল,
“পারবে না। তুমি আমাকে মা/রতে পারো না কারণ আমি তোমার বোন হই।”
রাগিনী ভেবেছিল এই কথাটি শুনে অবাক হবে রূপা। রাজ্যের বিস্ময় তার চোখে দেখা যাবে। তবে মোটেও তা ঘটল না। বরং কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে হাসল রূপা।
“বোন? আমি তো জানতাম নিজের মায়ের পেট থেকে দুটো মেয়ে জন্ম নিলে তাকে বোন বলে। আমি তো তোমার মায়ের পেটের নই। আমি বেনামি সন্তান। যাকে এক কথায় বলে জা/রজ।”
“ছি! এসব বলে না। তোমায় কে বুঝিয়েছে একই মায়ের পেটের হলে তবেই বোন হওয়া যায়? আমি যেই মুহূর্ত থেকে তোমার কথা জেনেছি তখন থেকেই আমি তোমায় বোন বলে মেনে নিয়েছি। সেকারণেই তোমার কাছে ছুটে এসেছি। তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। হয়ত কোথাও আমার জন্যই তুমি আজ এই অবস্থানে বিরাজ করছ। আমায় ক্ষমা করো।”
হাতজোড় করতে চাইলে তাকে বাঁধা দেয় রূপা। বিচলিত হয়ে বলে,
“এসবের কোনো দরকার নেই। ক্ষমা তুমি কেন চাইবে? তুমিও তো তখন আমার মতোই একটা নিষ্পাপ শিশু ছিলে। তোমার বাবার যেদিকে মন টেনেছে উনি সেদিকেই গিয়েছেন। মাঝখান থেকে দাবা/নলে জ্বলেছি আমি আর আমার মা।”
“তুমি কী করে এসব জানলে?”
“আমার মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কাকতালীয়ভাবে মা এই হসপিটালে ভর্তি ছিল।”
শামীমার কথা জানতে পেরে উত্তেজিত হয়ে পড়ল রাগিনী। হম্বিতম্বি করে শুধাল,
“কোথায় তোমার মা? আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই। উনার কাছে আমিও হয়ত দোষী। আমি ক্ষমা চাইব।”
“দরকার নেই এসবের। তুমি একটু বেশিই ইনোসেন্ট।”
মলিন সুরে বলল রূপাঞ্জনা। তখনি উঠে দাঁড়িয়ে তাকে আগলে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল রাগিনী। আবারও থমকাল রূপা। সে আশা করেনি এসবের পরেও রাগিনী তাকে জড়াবে নিজের সাথে তাও এভাবে। পায়ের তলার মেঝে যেন কাঁপছে। শরীরের র;ক্তপ্রবাহ অতিরিক্ত ছোটাছুটি শুরু করেছে। রাগিনী নম্র সুরে বলল,
“প্লিজ এসব ঝামেলা থেকে বেরিয়ে এসো। একবার এসব ছেড়ে দিয়ে দেখো। জীবন সুন্দর! তোমার জীবন পরিপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করব আমি। তাছাড়া অভিরূপ তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে! জানো?”
নিরুত্তর রইল রূপাঞ্জনা। হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়তে থাকল তার। রাগিনীর কাছ থেকে সরে এলো সে। ধীর গলায় বলল,
“জানি আমি সব। কিন্তু এই মুহূর্তে যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন তা হলো তোমাকে এখান থেকে বের হতে হবে।”
“না। আমি কোহিনূর আর তোমাকে নিয়ে বের হবো এখান থেকে।”
বাকবিতন্ডা চলতে থাকল বেশ। রাগিনী মানার মেয়েই নয়। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের রি/ভল/বার দিয়ে বেশ জোরেশোরে রাগিনীর মাথায় আ/ঘা/ত করে বসল সে। মৃদু চিৎকার দিয়ে নেতিয়ে পড়ল রাগিনী। কপালে দৃঢ় ভাঁজ পড়ল রূপার। রাগিনীর স্নিগ্ধ মুখে হাত বুলিয়ে বলল,
“কিছু মুহূর্তেই তুমি বুঝিয়ে দিলে বড়ো বোনের ভালোবাসা। হয়ত এবার আমার সময় ছোটো বোনের ভালোবাসা দেখানোর। তোমায় আ/ঘাত করতে চাইনি। দুঃখিত।”
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থেকে ঝুম বৃষ্টিতে পরিণত হয়েছে। ঠাণ্ডা পুরোপুরি নেমে যাওয়ার আগে এই বৃষ্টিটা শীতল আমেজ আনছে। জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে মুখে ঝাপটা দিলো রূপা।
দুজন দুজনের দিকে রি;ভল/বার তাক করে আছে কোহিনূর আর সৈয়দ। সৈয়দের মুখে পৈশাচিক আনন্দ আর কোহিনূরের মুখে সৈয়দকে ধরাশায়ী করার আকাঙ্ক্ষা।
“ব/ন্দুক চালালে চালাতেই পারো। আমার কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু ওখান থেকে বু/লেট বের হওয়া মাত্র আমি সরে যাব। সেটা সরাসরি বো/মে গিয়ে লাগবে আর বো/ম ব্লা/স্ট!”
হাত থেকে রি;ভল/বার আলগা হয়ে এলো কোহিনূরের। ঢক গিলে সাবধান থাকার চেষ্টা করল সে। আঁড়চোখে বো/মের টাইমার দেখে নিলো সে। হাতে আছে পঁয়ত্রিশ মিনিটের মতো। কোহিনূর শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করল,
“দাবি কী তোমাদের? কেন এসব করছ?”
সৈয়দ এবার বিরল হাসল। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
“ভালো প্রশ্ন। একদম সঠিক পয়েন্টে এসেছ। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক। তবে তার আগে নিজের হাতের রি/ভল/বারটা নিচে রাখতে হবে। দূরে সরিয়ে দিতে হবে।”
“ওকে, দেন। তোমাকেও একই কাজ করতে হবে।”
সৈয়দ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালে তারা দুজনেই নিজেদের হাতের পি/স্তল ফেলে পা দিয়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো। সৈয়দের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াল কোহিনূর। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এখন বল। কী করলে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেবে তোমরা?”
সৈয়দ বিনা দ্বিধায় বলতে লাগল,
“আমি দেশের নামি-দামি কিছু রিসার্চার-দের আমার সামনে চাই। ওদেরকে আমার দরকার। পাঁচ জন জ্ঞানী রিসার্চার পেলেই সব থামিয়ে দেব।”
দৃষ্টি সরু হয়ে এলো কোহিনূরের। উৎসুক হয়ে জানতে চাইল,
“হঠাৎ সব ছেড়ে রিসার্চার কেন? তাদের সাথে কী শ/ত্রুতা তোমাদের?”
স”যখন এত কৌতূহল জাগছে তখন বরং বলে দেই! আমার পুরো নাম সৈয়দ দেওয়ান। রামিন দেওয়ান মানে তথাকথিত ডার্ক ম্যাক্সের মেজো ভাই। সুমন ছিল আমাদের ছোটো। আমার বড়ো ভাই যে কতটা বুদ্ধিমান ছিল সেটা সব পুলিশের জানা। নিজের বুদ্ধি দিয়ে কেমিক্যাল দিয়ে নতুন কিছু রিসার্চ করার নেশা ছিল তার। কিন্তু আরেকটা শখ ছিল। সবচেয়ে দামী রিসার্চার হয়ে সে পুরো দে/শে রাজত্ব করবে। সে একটা কেমিক্যাল আবিষ্কার করে। যেটা বাকি রিসার্চারদের কাছে আলোচনা করে। তখনও সে এসব পথে আসেনি। সব রিসার্চার আলোচনা এবং রিসার্চ করে আমার ভাইকে দোষী প্রমাণ করে। কারণ বাকিদের মতে ওই কেমিক্যাল বারবার কারোর শরীরে দেওয়া হলে সে মৃ/ত্যুর দিকে ঢলে পড়বে। আমার ভাই বারবার ওই ধরণের কেমিক্যাল বানিয়ে বাকিদের ভালো করার বদলে ক্ষ/তি করতে চায়। সেটাই ওর কাল হয়। সোজা পথে নিজের আশা পূরণ হবে না তাই সে ভুল পথে পা বাড়ায়। আমি ছিলাম তার সঙ্গী। তবে আমরা দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় শাহ্ রাশেদের বাড়িতে আমায় কাজ করতে হতো। তবে আমাদের ছোটো ভাই সুমন এসব জেনে চুপ করে থাকেনি। সে আমাদের বিরুদ্ধে যায়। এক পর্যায়ে রামিন ভাই পুরো শহরকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিলে সুমন তাকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে। একদিন রামিন ভাই পালিয়ে আসে। আত্ম/হ/ত্যা করে। আমার হাতে দায়িত্ব দিয়ে যায় ফাহমিদের। ফাহমিদ তারই ছেলে। ভাই চেয়েছিল ফাহমিদকে দিয়ে যেন আমি তার অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই। তাই অনেকটা সময় নিয়ে আবার দল গঠন করি। আমি থাকতাম আড়ালে। আমি হয়ে উঠলাম ডার্ক ম্যাক্স!”
নিস্তব্ধ রইল কোহিনূর। তাকে চুপচাপ দেখে তার আশেপাশে ঘুরতে লাগল সৈয়দ। রহস্যজনক হাসিটা দিয়ে বলে উঠল,
“তোমায় চুপচাপ থাকতে দেখা মানেই তুমি কিছু একটা ভাবছ। তুমি ভাবছ কী করে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে একটা কথা বলে দেওয়া ভালো। তোমার কাছে দুটো উপায় ছাড়া আর কোনো পথ নাই।”
তবুও চুপ রইল কোহিনূর দৃষ্টিটা একই জায়গায় আবদ্ধ থাকল। সৈয়দ আবারও বলল,
“কী করতে চাও? নিজেদের জীবন দিতে চাও নাকি রিসার্চার-দের আমাদের হাতে তুলে দিতে চাও?”
“আমি এখনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না তাও একা একা! আমাকে বাকিদের আলোচনা করতে হবে।”
এবার শব্দ করে হাসে সৈয়দ। হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,
“আমাকে এতটুকু চিনলে তুমি অফিসার? তোমাকে আমি বাহিরে যেতে দেব আর তুমি বাকিদের সাথে প্ল্যানিং করে আমাদের পরা/স্ত করার চেষ্টা করবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের দাবি আমরা পূরণ করে নেব। আমার অনেকদিনের শখ আছে। তোমাকে নিজহাতে মা/রব।”
বিলম্ব না করে নিজের কাছে থাকা চেয়ারটা উঠিয়ে কোহিনূরের দিকে আ;ঘাত করার জন্য বাড়িয়ে দিলো সৈয়দ। সঙ্গে সঙ্গেই কোহিনূর তা ধরে ফেলে পিছিয়ে দেয় সৈয়দরকে। চেয়ার দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে তাকে। সফল হয় না। হঠাৎ করেই আর্তনাদ করে উঠতে হয় কোহিনূরকে। হাতের বাহু দিয়ে গলগল করে নিচে বেয়ে পড়ে র/ক্ত। একহাতে বাহু চেপে ধরার সাথে সাথেই কোহিনূরের বুক বরাবর লা/থি দেয় সৈয়দ। তার লোকজন এসে উপস্থিত হয়। ব্যথা, যন্ত্/ণায় কাতর হয়ে পড়ে কোহিনূর। একের পর এক মা/রা শুরু করা হয় তাকে। নিজের সর্বস্ব চেষ্টা করে কোহিনূর বাকিদের প্রতি/হত করার। তবে সফল হয় না। হুট করেই সৈয়দ নিজের কাছে থাকা কাঁচের এক বোতল ভা/ঙে। অর্ধ ভাঙা বোতলের ধা/রালো দিক দিয়ে ধেয়ে আসে সে। ঝুঁকে তা দিয়ে কোহিনূরের বুকের বা পাশটায় বসিয়ে দেয় সেই ধা/রালো প্রান্ত। ছটফটিয়ে ওঠে কোহিনূর। সমস্ত ব্য/থা সইয়ে পুরোপুরি জ্ঞান হারানোর আগেই দাঁত দিয়ে সৈয়দের হাতে কাম/ড় বসায় সে। সৈয়দ মৃদু চিৎকার করে সরে গেলে নিজের বুকে বিঁধে থাকা কাঁচের টুকরো বের করে ওঠার চেষ্টা করলে তার বু/কে পা তুলে দেওয়া হয়। নজরে নিজের রি/ভল/বার পড়তেই তা হাতিয়ে নিয়ে কিছু না ভেবেই ট্রিগারে চাপ দিয়ে একজনকে মে/রে দেয়। তড়িঘড়ি করে বুকে হাত দিয়ে উঠে বসে কোহিনূর। কাঁপা শরীরে উঠে দাঁড়ায়। গায়ের কো/ট কোনোরকমে ছাড়িয়ে নেয়। সাদা শার্ট পুরোপুরি লাল রঙে পরিণত হয়েছে। বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলে সৈয়দের দিকে যেতেই তাকে ধা/ক্কা দিলেই পরপর বেশ কয়েকবার রি/ভল/বার চালানোর শব্দ পাওয়া যায়। গেট থেকে ভেতরে ঢুকে আসে রায়ান। কোহিনূরকে সামলানোর চেষ্টা করে। তবে নাছোড়বান্দা কোহিনূর সব ছাড়িয়ে হা/ম/লে পড়ে সৈয়দের দিকে। কোহিনূরের কাঁপা হাতের এক থা/প্পড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সৈয়দ। কোহিনূরও নিজেকে সামলাতে না পেরে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। সৈয়দ আবারও তাকে আ;হত করার চেষ্টাই শুইয়ে দিলে পাল্টা আক্র/মণ করে কোহিনূর। নিজের হাতে থাকা অর্ধ ভাঙা বোতলটা ফট করেই সৈয়দের গলার বিঁধে যায়। এক মুহূর্তও না ভেবে সেই বোতলে আরো চাপ দেয় কোহিনূর। সৈয়দের প্রা/ণ বেরিয়ে আসতে লাগে মৃ;ত্যু যন্ত্র/ণায় ছটফটানি শুরু হয়। কোহিনূর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কে কার হাতে ম;রে সেটা ভাগ্য ঠিক করে। কৈ মাছের প্রাণ আমার। আমি ম/রব না। কারণ আমি একজনকে কথা দিয়েছি আমি তার কাছে ফিরে যাব। তাই আমাকে ফিরতেই হবে।”
রায়ান কোহিনূরকে ধরে ওঠায়। খুব বা/জেভাবে জ/খম হয়েছে কোহিনূর। শরীরের সব জায়গা দিয়ে যেন র/ক্তের স্ফুলিঙ্গ বইছে। তাকে ধরে বাহিরে আনতে আনতে কোহিনূর চিন্তিত গলায় বলল,
“সবাইকে উদ্ধার করা গিয়েছে?”
“প্রায় শেষ কাজ। কয়েকজন আছে শুধু। আর আমি টিমকে বলেছি তারা যেন রি;ভল;বার না চালিয়ে যাদের গায়ে জ্যাকেট আছে তাদের গায়ের থেকে জ্যাকেট আগে খুলে নেয় কৌশলে। কারণ জ্যাকেটেই বো/ম ফিট করা আছে।”
স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল কোহিনূর। ফের গম্ভীর গলায় বলল,
“মেহরাজ কোথায়? ও আশেপাশে নেই কেন?”
“আমিও বুঝতে পারছি না। হয়ত ছোটাছুটি করছে।”
কোহিনূরের বিশ্বাস হলো না কথাটা। কারণ সে জানে মেহরাজ তার আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। ছেলেটার কি কোনো বিপদ হলো তবে? কোহিনূরের আশঙ্কা সত্যি হলো। নিচের ফ্লোরে নামতেই পা নিয়ে কাতরাতে দেখা গেল মেহরাজকে। সঙ্গে সঙ্গেই যেন নিজের যাবতীয় শক্তি ফিরে পেল কোহিনূর। রায়ানের থেকে সরে এসে তাড়াতাড়ি মেহরাজের পায়ের কাছে এসে বসল সে। কোহিনূরকে দেখে মেহরাজ তৎক্ষনাৎ বলল,
“স্যার!”
“একি পায়ের অবস্থা তোমার?”
“কিছু হয়নি। আপনি ঠিক আছেন স্যার?”
কোহিনূর কথা বাড়াল না মেহরাজের সাথে। দ্রুততার সাথে মেহরাজকে নিজের পিঠে তুলল সে। মেহরাজের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়েছে ততক্ষণে। প্রচণ্ড র/ক্তক্ষরণ হয়েছে তার। চোখ দুটো বুঁজে আসছে শুধু। একটা ফাঁকা কেবিনে গিয়ে মেহরাজকে শুইয়ে দিলো কোহিনূর। রায়ান ততক্ষণে অন্যদিকে ছুটেছে। সবাইকে হসপিটাল থেকে বের করতে পেরেছে কিনা চেক করতে গিয়েছে।
নিজের মাথার রুমাল খুলে মেহরাজের পায়ে বেঁধে দিলো কোহিনূর। মনে মনে ভাবল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেহরাজকে এখান থেকে বের করতে হবে। নয়ত ছেলেটার অবস্থা আরো বেগতিক হওয়ার সম্ভবনা আছে। ভাবনার মাঝেই মেহরাজের কণ্ঠ বাস্তবে আনল তাকে।
“স্যা…স্যার। আপনার সঙ্গে ব্লুটুথে অনেকবার কন্ট্রাক্ট করার ট্রাই করেছি।”
কোহিনূর কানে হাত দিলো। ব্লুটুথ কোথাও ছিটকে পড়েছে ধস্তাধস্তিতে। ভার গলায় বলল,
“নেই তো ব্লুটুথ। সব হারিয়েছি।”
“স্যার আপনাকে একটা ইম্পর্টেন্ট কথা বলার আছে। আমি রাগিনী ম্যাডামকে দেখেছি। উনি এখানে এসেছেন।”
র;ক্তপ্রবাহ থেকে শুরু করে হৃৎস্পন্দন মনে হয় এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল কোহিনূরের। যেন তড়িৎ স্পর্শ করল তাকে। আঁতকে উঠল মন এবং মস্তিষ্ক। ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
“কী? এটা কী করে হয়? ওর এখন চট্টগ্রামে থাকার কথা।”
“নো স্যার। বিলিভ মি! আমি উনাকে দেখেছি। কয়েকজন লোক তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। ওটা রাগিনী ম্যাডামই ছিল। নীল শাড়ি পড়া!”
মাথার চুল চেপে ধরল কোহিনূর। না চাওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভয় স্পর্শ করল তাকে। উত্তেজিত হয়ে পড়ল সে। মেহরাজ পরক্ষণেই বলল,
“স্যার আপনি উনাকে খুঁজুন। উনি এখানেই আছেন।”
একটুও দেরি করল না কোহিনূর। দৌড়ে বাহিরে যাওয়ার আগে মেহরাজকে বলল,
“আমি রুম লক করে দিয়ে যাচ্ছি। তুমি এখানেই থাকো। কোথাও যাবে না।”
তড়িৎ গতিতে প্রস্থান করল কোহিনূর। পথে ফের প্রতিপক্ষের লোক জমা হলো তার। পেছন থেকে ঘাড়ে আ/ঘাত করল ফাহমিদ। শরীরে বেশ শক্তি অবশিষ্ট না থাকায় ধুম করেই ফ্লোরে পতিত হলো কোহিনূর। তার কপালে পি/স্তল ঠেকানো হলো। ফাহমিদ কোহিনূরের গলা ধরে জিজ্ঞেস করল,
“আমার চাচাকে তুই মে/রেছিস?”
“হ্যাঁ মে/রেছি তো?”
কোহিনূরের নির্লিপ্তে স্বীকারোক্তি আরো রাগাল ফাহমিদকে। কোহিনূরকে আবারও লা/থি মে/রে ফেলে দিলো সে। সময় না নিয়েই ট্রিগার চেপে ধরে কোহিনূরকে গু/লিবিদ্ধ করার আগেই ফাহমিদের বুক বরাবর বু/লেট ঢুকে গেল। হাঁটু গেঁড়ে বসল সে। তার দলবল সহ কোহিনূর পিছু ফিরে তাকালে মেহরাজের দেখা পায়। ছেলেটা রি/ভল/বার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরো ইচ্ছেমতো রি;ভল;বার চালাতে শুরু করে চিৎকার দিয়ে। পর মুহূর্তেই চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। বুক দিয়ে র/ক্ত স্রোত নেমে যায় মেহরাজের। চিত হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায় সে। তার এমন দুর্দশা দেখে কোহিনূর নিজের শরীরের দুর্বলতার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায়। ফাহমিদ মেহরাজের দিকে পি;স্তল তাক করে আছে। তা দেখে মাথা গরম হয় কোহিনূরের। তার হাতে পি/স্তল কেঁড়ে নিয়ে অবিরাম গু;লি চালিয়ে ঝাঁ/ঝরা করে দেয় ফাহমিদের দেহ। স্তব্ধ এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে মেহরাজকে পড়ে থাকতে দেখে কোহিনূর তার কাছে গিয়ে ধুপ করে বসে। মেহরাজের নি/থর দেহ এক পলক দেখে নেয়। মেহরাজের মাথা নিজের কোলে নিয়ে তাকিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। ছেলেটা এমন চুপ রয়েছে কেন সেটা বোধগম্য হলো না কোহিনূরের। সে তো এমন চোখ বন্ধ করে চুপ থাকার মতো নয়! তবে? মেহরাজের গালে আলতো চাপ/ড় দিয়ে নরম গলায় ডাকল কোহিনূর,
“মেহরাজ! এই মেহরাজ!”
মেহরাজ নিরুত্তর। কোনো নড়াচড়া নেই তার। কোহিনূর ঘাবড়ে গেল। পাগ/লের ন্যায় ডাকতে থাকল,
“এই ছেলে! কী শুরু করেছ? এমনিতে ভয় পেয়ে আছি। আরো ভয় দেখাচ্ছ কেন? আমার এসব ভালো লাগছে না। তাড়াতাড়ি তাকাও আমার দিকে।”
আগের মতোই নিস্তব্ধ মেহরাজ। তার বুকে মাথা লাগিয়ে দিলো কোহিনূর। শোনা গেল না কোনো হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ। টের পেল বা হৃদয়ের গতি। বুক ধুকপুক করতে লাগল কোহিনূরের। এ কী হলো? গলা ফাটিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে কোহিনূর। রায়ান দৌড়ে আসে। মেহরাজকে এই অবস্থায় দেখে ঝুঁকে তার হাতে পার্লস চেক করে নিজেও নীরব হয়ে যায় সে। থমথমে গলায় জবাব দেয়,
“ওর পার্লস চলছে না নির্জন! হি ইজ নো মোর।”
রায়ানের মুখে হাত দেয় কোহিনূর। মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে বলে,
“এসব কী বলছিস? বলবি না এসব কথা। ও এত তাড়াতাড়ি কী করে মর/তে পারে? ওর কিছু হলে আমার সমস্ত রাগ আমি কার উপর ঝাড়ব? আমার গোপন কথা কে ফাঁস করবে সকলের সামনে? ও ম;রতে পারে না।”
ঢক গিলে রায়ান। কোহিনূরের অবস্থা বুঝতে পেরেও কিছু বলতে পারেনা সে। সে জানে কোহিনূর উপরে উপরে প্রকাশ না করলেও নিজের মনের মধ্যে ঠিকই নিজের আশেপাশের মানুষকে ভীষণ ভালোবাসে, স্নেহ করে। তার মধ্যে মেহরাজ অন্যতম। কোনোরকম কথা না বাড়িয়ে কোহিনূরের মাথা রায়ান নিজের বুকে চেপে ধরে।
“ও আর নেই, নির্জন! তুই একজন সিক্রেট অফিসার। কড়া মন তোর। সামলা নিজেকে।”
কোহিনূর কিছু বলল না। অপলক চেয়ে রইল মেহরাজের দিকে। রায়ান কিছুটা থেমে কোহিনূরকে টেনে তুলে বলল,
“এখন আর এখানে থাকা যাবে না। কেউ একটা বো/ম ব্লা/স্টের সময় এগিয়ে দিয়েছে। আমরা প্রায় সমস্ত পেশেন্টকে বাহিরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। চল বাহিরে চল।”
কোহিনূর সেসব কথা কানে না নিয়ে কিছু একটা বিড়বিড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। রায়ানকে বলল,
“না! এখানে আমার রাগিনী আছে। ওকে না নিয়ে কোথায় যাব?”
“কেউ নেই এখানে। সবাইকে বাহিরে নিয়ে গিয়েছি আমরা।”
রায়ানের কথা মানতেই চাইল না কোহিনূর। নিজের আ/হত শরীর নিয়ে ছুটে সেখান থেকে যেতে চাইলে সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। রায়ান তার টিমের লোকজনকে ডাকে। ইশারায় বলে, মেহরাজের প্রাণহীন হিমশীতল শরীরটাকে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কোহিনূরের সন্নিকটে গিয়ে রায়ান সহ আরো দুজন টেনে তোলে তাকে। নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছোটাছুটি করতে চায় কোহিনূর।
“আরে ভাই! আমার কথা বোঝ। আমি শুনেছি এখানে রাগিনী এসেছে। রিকুয়েষ্ট করছি যেতে দে আমাকে।”
কোহিনূরের ক্রন্দন ভরা সুর। ভীষণ আকুতি জড়িয়ে কথায়। এরই মাঝে আরেকজন এসে রায়ানকে অস্থির হয়ে বলল,
“স্যার! হাতে আর মাত্র তিন মিনিট আছে। বো/ম ডিফিউজ করা যাচ্ছে না কোনোমতে। হয়ত কোনো পন্থায় বানানো। সময় লাগবে ডিফিউজ করতে।”
“তাহলে আমাদের এখনি এই জায়গা ছাড়তে হবে।”
সকলে রায়ানের কথায় সম্মতি জানালেও কোহিনূর এসব কথা কানে তুলছে না। রীতিমতো পা/গলামি শুরু হয়েছে তার। বেশ কয়েকজন মিলে তাকে জোর করে ধরে বাহিরে বের করা হলো। হসপিটালের গার্ডেন পার হতে না হতেই ভয়ংকর আওয়াজ শোনা গেল। চোখের সামনে ধ্বস নামল হসপিটালে। আন্ডারগ্রাউন্ডে বো/ম ফিট করার কারণে পুরো বিল্ডিং-এর অংশ ছিটকে পড়ল। বাকি দুটো নতুন বিল্ডিংয়ে কিছু না হলেও প্রধান দালানকোঠা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেল। হাঁটু মুড়িয়ে নিচে ধপ করে বসে পড়ে কোহিনূর। মাথা নুইয়ে ফেলে সে। হাত শক্ত করে। ভেতরে জ্বালাপোড়া হচ্ছে তার। ধীর গলায় বলল,
“আমার রাগিনী!”
রায়ান ঝুঁকে পড়ল তার দিকে। কাঁধে হাত রেখে বলল,
“হসপিটালে কেউ ছিল না নির্জন। বিশ্বাস কর। যদি রাগিনী এসেই থাকে তাহলে নিশ্চয় আমাদের টিমের কেউ ওকে বাহিরে এনেছে।”
“সবাইকে আমরা বাঁচাতে পারিনি রায়ান। একশ জনের মধ্যে আটানব্বই জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তার মধ্যে দুজন করে সেই উগ্র/পন্থীদের হাতে মা/রা পড়েছে।”
রায়ানের ভয় লাগছে না এমনটা নয়। কিন্তু কোহিনূরকে সামলানোর জন্য তার মধ্যে অনুকূল চিন্তা ঢোকাতে হবে। তাই সে আস্থা দিয়ে বলল,
“কেন নেগেটিভ ভাবছিস? ভাবিস না এসব।”
কোহিনূর জবাবে নিস্তেজ রইল। চোখ বন্ধ করে বেশ কিছুটা সময় চুপ থেকে কিছু একটা নিজে নিজে বিড়বিড় করে কষ্ট করে দাঁড়াল। পায়েও বড়োসড়ো ব্য/থা পেয়েছে সে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অন্যপাশে গেল। সেখানে তার টিমের লোকজন লা/শ উদ্ধার করছে। একজন একজন করে মাটিতে শোয়াচ্ছে। সেসব দেখে হৃদকম্পন বাড়ছে তার। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। ইচ্ছে করছে পাগলের মতো চিৎকার করে কাঁদতে। তবে তা পারল না। তার চলন থেমে গেল মেহরাজের প্রভাহীন, অনুজ্জ্বল, হাসিবিহীন র/ক্তাক্ত মুখ দেখে। সে থাকলে বোধহয় এতক্ষণে কোহিনূরের যত্ন নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কোহিনূর মনে মনে বলল, ‘যে আমার রক্ষাকবচ ছিল তার রক্ষা আমি করতে পারিনি। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যর্থ মানুষ আমি। আমাকে ব্যর্থ প্রমাণ করে দিয়ে চলে গেলে তুমি। আই এম সরি মেহরাজ।’
দিশাহারা কোহিনূরের দৃষ্টি এবার সন্ধান করতে লাগল রাগিনীর। শত শত মানুষের ভিড়ের ফাঁকে শুধু সেই প্রশান্তির মুখটা খুঁজল সে। পেল না। একটা সময় মেহরাজের পাশে একটা নারীকে শুইয়ে দেওয়া হয়। মুখ সহ পুরো শরীর ছিল সাদা চাদরে ঢাকা। পুরো শরীর খুব বাজেভাবে বো/ম বি/স্ফোরণ হওয়ার কারণে পুড়ে গিয়েছে। কোহিনূর প্রথমে সেদিকে খেয়াল না করলেই মেয়েটির বিবর্ণ হয়ে যাওয়া শাড়ির রঙ এবং নকশা দেখে অনুভূতিহীন হয়ে অবলোকন করল সে। তার মনে আছে বিয়ের আগের দিন রাতে এই রঙের শাড়িটা কিনেছিল রাগিনীর জন্য। তা স্মরণে আসতেই সারা দেহ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল তার। আর কিছু ভাবতেই পারল না। মস্তিষ্ক, দেহ সব অচল হয়ে গেল। মাটিতে নেতিয়ে পড়ে মাটিতে মাথা লাগিয়ে দিলো কোহিনূর। গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল। কোহিনূরকে চাপা সুরে বলতে শোনা গেল,
“আল্লাহ! আমাকে এত বড়ো শাস্তি দিও না।”
চলবে…