গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ২৭)

0
479

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৭ (২য় খণ্ড)

মায়ের ছবিটা সামনে রেখে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে রাগিনী। চোখমুখ ফুলে একাকার করে ফেলেছে। সারা রাস্তা কান্না থামেনি তার। মাথার প্রতিটা রগ যেন একটা একটা করে ছিঁ/ড়ে যাচ্ছে। বুকের বা পাশে যত্নে থাকা সেই হৃৎপিণ্ডকে কেন্দ্র করে বারংবার তীর ছুঁ/ড়ছে কেউ। সহ্য হচ্ছে না এই বাস্তবতার যন্ত্র/ণা। যেন মনে হচ্ছে ম/রণই একমাত্র এই পীড়া থেকে মুক্তি দিতে পারে। মাথা উঠিয়ে ম্লান মুখে মায়ের ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটাতে আলতো করে হাত বুলায় রাগিনী। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে নিজের বুকের ভার হালকা করে আনমনে বলে,
“তোমার অস্তিত্ব, তোমার শারীরিক উপস্থিতি বিলীন হয়ে গিয়েছে তুমি যেদিন শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছ, মা! কিন্তু কী জানো? তুমি তার আগেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলে যেদিন তুমি ব্যতীত অন্যকোনো নারীর প্রতি তোমার স্বামী আকৃষ্ট হয়েছিল। যেমন স্ত্রীর মাঝে স্বামীর গোপন অস্তিত্ব লুকায়িত থাকে ঠিক তেমনই স্বামীর মাঝে স্ত্রীর গোপন অস্তিত্ব লুকায়িত থাকে। তুমি তো তখনি সর্বহারা হয়ে গিয়েছ মা।”

রাগিনী থামল এবার। মায়ের ছবিটা জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। থুঁতনি বেয়ে গড়িয়ে পড়ল পানি। যেই বাবা নামক মানুষটি তার চোখে পানি আসতে দেওয়ার আগেই তার সব চাহিদা পূরণ করেছে সেই বাবাই আজ তাকে এতটা কষ্ট দিল যে তাকে হয়ত সারাজীবন এই কষ্টে তড়পে যেতে হবে।
“আমি সবসময় আফসোস করেছি এই ভেবে যে আমি তোমার আদরে বড়ো হতে পারিনি। তোমাকে কাছে পাইনি, মা। তার আগেই তুমি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছো। কিন্তু আজকে সবটা জানার পর মনে হচ্ছে যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। এই নিষ্ঠুর সত্যি জানার আগে তুমি চলে গিয়েছ। ভালো করেছ। কোনো নারী তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে পরনারীর নাম পাশে দেখতে পারেনা। জানো মা? আমি পুলিশের থেকে জানতে পেরেছি আমার একটা বোনও আছে। হয়ত সে তোমার সন্তান নয়। কিন্তু সেও তো কারোর সন্তান। আমি মনে করি বোনের সম্পর্ক অবৈধ হতে পারে না। আরো অবাক করার বিষয় কী জানো? বোনের সঙ্গে আমিও একবার দেখা করেছি। তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। কিন্তু বুঝতে পারিনি রূপাই আমার সেই বোন। পুলিশের মুখে সবটা শুনে রূপার জন্য কষ্ট হচ্ছে আমার। সাইকোলজিস্ট শাহ্ রাশেদ! যাকে আমি সারাজীবন নিজের এঞ্জেল ভেবে এসেছি। সে নিজে রূপা যখন সদ্যজাত সন্তান তখন একবারও না ভেবে কারোর হাতে তুলে দিলো। কষ্ট হয় মেয়েটার জন্য। আমিও শাহ্ রাশেদের মেয়ে আর সেও তারই মেয়ে। কিন্তু দুজনের ভাগ্য কতটা আলাদা! অদ্ভুত তাই না?

একা একা অনেকক্ষণ ধরেই প্রলাপ বকে গেল রাগিনী। মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে সে। তাকে সামলানোর কেউ নেই বর্তমানে। ঠান্ডা ফ্লোরে অনেকক্ষণ হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকতে থাকতে তার মনে হলো, কোহিনূরকেও তো সে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কোহিনূরও কি তার সঙ্গে এমন করবেন? কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে টলমল করতে করতে ঘরে টাঙানো কোহিনূরের বড়ো ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল রাগিনী। তার এক হাত কোহিনূরের ছবিতে রেখে বলল,
“আপনিও এমন করবেন না প্লিজ। তাহলে আমি ম/রেই যাব।”

বিকট শব্দে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল রাগিনীর। তার হাতে থাকা মায়ের ছবিটা পড়তে গেলে ধরে ফেলল সে। বিষণ্ণ মুখে তাকাল দরজার দিকে। এলোমেলো পায়ের ধাপ ফেলে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। করিডোরে পৌঁছাতেই রেলিং-এর কাছাকাছি যাওয়া মাত্র কয়েকটা লোকের দেখা পেল সে। মুখচোখ ঢেকে রীতিমতো ড্রয়িংরুমের জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে। রাগিনীর বুঝতে খুব একটা সময় লাগল না এরা নিশ্চিত তার বা নয়নেরই খোঁজে এসেছে। এই মূহুর্তে তাদের কাছে ধরা দেওয়া মানে কোহিনূরকে অর্ধেক নিজেদের কবলে নিয়ে আসা। নিচে থাকা লোকদের মধ্যে একজন উপরে তাকাতেই মাথা নিচু করে বসে পড়ল রাগিনী। বুকটা ঢিপঢিপ করছে তার। কোথাও একটা আত্মগোপন হতে হবে! কিন্তু কোথায়?

রাগিনী অথবা কোহিনূরের বাড়ির কাউকে ধরে আনার জন্য আদেশ করেছে ফাহমিদ। কথা অনুযায়ী তার লোকজন ঢুকে পড়েছে কোহিনূরের বাড়িতে এবং সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। সবশেষে কোহিনূরের ঘরটার সবজায়গা খুঁজেও পাওয়া গেল না কারোর উপস্থিতি। পুরোটাই ফাঁকা বাড়ি। খোলা ঘরগুলো সার্চ করেও যখন কিছু পাওয়া গেল না তখন লক করা স্টোররুম খোঁজাও বাদ দিলো না তারা। সেখানেও কিছু না পেয়ে তাদের মধ্যে একজন গড়গড় করে বলল,
“আমার মনে হয় ওই কোহিনূর আগে থেকেই চালাকি করে নিজের বাড়ির লোকজনকে কোথাও সরিয়ে দিয়েছে।”

“আমার তাই মনে হচ্ছে। ওই অফিসার আমাদের ভাবনার চেয়েও দুই ধাপ আগে চলে। বস তো বলল, কোহিনূরের টিম নাকি হসপিটালেও উপস্থিত হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের লোকজন আজকে কিছু একটা করেই ছাড়বে। বুঝলি? ওই হসপিটালকে উ/ড়িয়ে দেবে।”

হাসিঠাট্টা চলল লোকগুলোর মাঝে। ফাঁকা হাতেই চলে গেল তারা। সঙ্গে সঙ্গেই লক করা ওয়্যারড্রব থেকে একটা টেডি গড়িয়ে পড়ল। টেডিবিয়ারের পেছনের চেইন খুলে নিজের মাথা বের করে বড়ো বড়ো শ্বাস নিতে লাগল রাগিনী। মুখের উপর পড়া এলোমেলো চুল সরিয়ে দেয়ালের গায়ে পিঠ লাগিয়ে দিলো সে। আরেকটু হলে যেন দম আঁটকে কিছু একটা হয়ে যেত তার। কিন্তু লোকগুলোর কথাবার্তা কান অবধি এসেছে তার। কোহিনূরের নাম নিতেই আঁতকে উঠেছিল সে। টেরো/রিস্ট টিমের নেক্সট আর ফাইনাল টার্গেট যে সিটি হসপিটাল সেটা বোধগম্য হলো তার। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“তারমানে কোহিনূর ওখানে আছেন। আর আমাকে বলেছেন ছোটোখাটো একটা মি/শন আছে? আবারও মিথ্যে বললেন আমাকে? এই লোকটা কখনো শুধরাবে না। কখনোই না। আচ্ছা, রূপাও কি ওখানে আছে? থাকার তো কথা! কিন্তু নিশ্চিত হবো কী করে? ওর সঙ্গে দেখা করা খুবই দরকার!”

হসপিটালের চারিদিকে শোরগোল হচ্ছে। সকলে আতঙ্কে এদিক থেকে ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। যদিও খুবই কম রয়েছে রোগী এবং ডাক্তারের সংখ্যা। গতকাল রাত থেকেই রোগীদের অন্য হসপিটালে শিফট করার ব্যবস্থা শুরু করা হলেও সবাইকে সরানো যায়নি। কারণ অন্য হসপিটালেও এত জায়গা নেই। এখন যারা আছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পুলিশের লোকজন এবং বাকিরা হচ্ছে উ/গ্রপ/ন্থী। পুলিশ চেয়েও কিছু করতে পারছে না। কারণ শত্রুপক্ষের কাছে বো/ম আছে। তাও আবার তাদেরই গায়ের সঙ্গে ফিট করা। তাই তারা সকলে চেষ্টা করে যাচ্ছে কোনোমতে যেন হসপিটালের সকল পেশেন্টকে বের করে দেওয়া যায়। ইতিমধ্যেই র/ক্তার/ক্তি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উ/গ্রপ/ন্থীদের পাল্টা আক্র/মণের জন্য রি;ভল/বার চালাতে বাধ্য হচ্ছে পুলিশ টিম। র‌্যাবের টিম বাহিরে উপস্থিত রয়েছে।

কপালের বাম দিক থেকে র/ক্ত গড়িয়ে কোট অবধি পড়েছে। আ;ঘাত পেয়ে মাথাটা ঝিমঝিম করছে কোহিনূরের। এলোমেলো পায়ে হাঁটছে করিডর দিয়ে। এমন সময় শ্যু/টের বিকট শব্দ শুনে চমকে সামনে তাকাল সে। রি;ভল/বার সামনের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছে মেহরাজ। মাটিতে নিথর হয়ে পড়ে আছে একজনের দেহ। বুঝতে বাকি রইল না মেহরাজ তাকে শু/ট করেছে। কোহিনূরকে কভার করেছে সে। তার এই অবস্থা দেখে দৌড়ে এলো মেহরাজ।
“স্যার আপনি ঠিক আছেন?”

“ইয়েস। আই এম অলরাইট। কতজন পেশেন্টকে বাহিরে পাঠাতে পেরেছে সবাই?”

“এইতো। অনেকজনকেই এরমধ্যে সেফলি বাহিরে নিয়ে যেতে পেরেছি। বাট স্যার চাইল্ড ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। ওখানে অনেক বাচ্চা আছে।”

চোখ কপালে উঠে গেল কোহিনূরের। অনেকগুলো বাচ্চা মানে অনেকগুলো প্রাণ! যদি না উদ্ধার করতে পারে তারই জীবন বৃথা। চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
“সেটা এখন বলছ তুমি? চলো সেদিকে।”

মেহরাজের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ছুটতে ধাতস্থ হলো কোহিনূর। তবে মেহরাজ তার হাত ধরে আটকালে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকালে মেহরাজ নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে উঁচু হয়ে কোহিনূরের কপালে বেঁধে দিলো। কিছু মূহুর্তের জন্য নীরব হলো কোহিনূর। এই ছেলেটা সবখানে যত্ন দেখাতে ছুটে আসে। অতঃপর দ্রুত দুজন ছুটল চাইল্ড ওয়ার্ডের দিকে।

কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে দরজার কাছেই আটকালো কোহিনূর। ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল দুজন লোককে। তারা রি/ভলবা/র হাতে নিয়ে পায়চারি করছে। ওয়ার্ডে আছে অনেক বাচ্চা! কোনো রিস্ক নেওয়া যাবে না। কোহিনূর মেহরাজকে বলে,
“লিসেন, তুমি বাহিরে থেকে আমাকে কভার করবে। আমি সামনে গিয়ে ওদের মনোযোগ সরাব বাচ্চাদের থেকে। ওরা আমাকে শু/ট করতে লাগলে কভার করবে।”

মেহরাজ ঢক গিলে সম্মতি জানালেই কোহিনূর গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ায়। বিলম্ব না করেই দুটো লোক কোহিনূরের দিকে তাক করলে সঙ্গে সঙ্গেই মেহরাজ বু/লেট ছুঁড়ে দেয় তাদের দিকে। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে কোহিনূর। প্রতিটা বাচ্চার নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
“এখানে কয়েকজনকে ডেকে নাও। বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করতে হবে।”

“ইয়েস স্যার।”

প্রতিটা কেবিন ভালো করে পরিদর্শন করছে এক নারী। পরনে শার্ট তার উপরে কোট আর মাথায় টুপি। চুলগুলো পেছন দিকে বাঁধা। সেই মানবী স্বয়ং রূপাঞ্জনা। সে খেয়াল রাখছে কোথাও কোনো রোগী বাদ থাকল না তো? উপায় করে ফাহমিদের থেকে লুকিয়ে সেও বেশ কিছু রোগীদের এই হসপিটাল থেকে বের হতে সাহায্য করেছে। এখনো সেটাই করে চলেছে। হঠাৎ একটা কেবিনে গিয়ে থমকাল সে। নজরে এলো দুটো বয়স্ক মহিলা। তারা ভয়ে সিটিয়ে গিয়েছে তার। তাদের দিকে ছু/রি ধরে আছে ফাহমিদের দুটো লোক। চোয়াল শক্ত করে কেবিনে প্রবেশ করল রূপা। তাকে দেখে দুটো লোকের মনোযোগ ভড়কে গেল। তাদের উদ্দেশ্য করে রূপা শক্ত গলায় বলল,
“তোমরা অন্যদিকে যাও। এদের আমি দেখে নিচ্ছি।”

রূপাঞ্জনার কথা অমান্য করার সাহস নেই তাদের। রূপার কথা মেনে দুজনই প্রস্থান নিলে এক দুর্বল মেয়েলি কণ্ঠ কর্ণগোচর হলো তার। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই বিছানার এক কোণে রুগ্ন হয়ে বসে থাকা মহিলার দিকে তাকাল সে। মহিলাটি তাকে ইশারায় কাছে ডেকে ধীর সুরে বলল,
“এই মেয়ে শোনো!”

রূপা প্রথমে ইতস্ততবোধ করল। ঠাঁই দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,
“আপনাদের ভয় নেই। এদিক দিয়ে আপনারা সোজা পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যান। ভাঙা একটা জানালা আছে। ওদিক দিয়ে এখান থেকে বের হয়ে যান।”

শামীমার কানে যেন রূপার কথা গেলই না। সে আবার ইশারা করে ডাকল,
“এখানে আমার কাছে একটু আসো।”

শামীমার বোন তৎক্ষনাৎ শামীমাকে বাঁধা দিলে শুনল না সে। রোগা শরীর নিয়েই হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রূপার কাছে আসতে নিলে সামলাতে পারল না সে। তবে রূপা তাকে ধরে নিলে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল শামীমা। সব সত্যিটা জানার এবং শোনার পর অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শামীমা। যার কারণে তাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। রূপার দিকে কিছুটা সময় অপলক চেয়ে থেকে হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে তাকে জড়িয়ে নিলেন শামীমা। চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলেন। প্রথমে থতমত খেলেও রূপা পরক্ষণেই শুনতে পায় শামীমার বলা কথা।
“আমার মেয়ে! আমার মেয়েকে পাইছি। আমার মেয়ে তুমি।”

রূপাঞ্জনার হৃদকম্পন কিছুক্ষণের জন্য যেন একেবারেই থেমে গিয়েছিল। শিথিল হয়ে উঠেছে আপাদমস্তক। মহিলাটির বলা কথাগুলো ভ্রম মনে হচ্ছে তার। নিজেকে কোনোরকমে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে ছিটকে এলো রূপা। অস্ফুটস্বরে বলল,
“কে আপনার মেয়ে? আমি আপনার মেয়ে কী করে? আপনি আমাকে চেনেন?”

শামীমা ডুকরে কাঁদলেন। অস্পষ্ট সুরে বলতে লাগলেন,
“আমি আমার মেয়েকে চিনতে ভুল করব? পুলিশ আমাকে বলেছে, তোমার ছবি দেখিয়েছে। তুমি ভুল পথে চলে গেছো সেটাও বলেছে। আমার মেয়েকে আমি ঠিক চিনে নিয়েছি। আমি তোমার মা। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছি।”

রূপার কাছে অবিশ্বাস্য লাগল সবটা। স্বপ্ন নয়ত কল্পনা মনে হলো তার কাছে। মাথায় তড়িৎ খেলছে যেন! সর্বাঙ্গ কাঁপছে তার। এই মহিলা সত্যিই যদি তার মা হয় তবে এত বছর কোথায় ছিল সে? কেন নেয়নি তার খোঁজ? তাই বিশ্বাস করল না সে। সেই অবিশ্বাসের জের ধরে বলল,
“আপনি আমার হলে এতদিন আমি অন্য কারোর বাড়িতে বড়ো হয়েছি কেন? আপনি আমায় জন্ম দিলে আমি আজ ক্রি/মি/নাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি কেন?”

শামীমা বাকরুদ্ধ হলো। বসে পড়ল ফ্লোরে। রূপা যেন নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারিয়েছে। এমন সময় শামীমার বোন বলে উঠলেন,
“আমার বোনকে সময় দাও। কাহিনীটা অনেক বড়ো। বাহিরে এত বিপদ! ও ঠিকঠাক বলতে পারবে না।”

রূপাঞ্জনা শক্তি জোগাল। দম নিয়ে দরজার কাছে ঘুরে গিয়ে লক করে দিলো। ফের শামীমার কাছে নিজেও ফ্লোরে বসে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি আমার মা হলে আমি নিজের সব প্রশ্নের উত্তর চাই।”

শামীমা কোনোরকম কথা না বলে প্রথমেই রূপাঞ্জনার গাল দুটো ধরে টলমল চোখে তাকিয়ে রইল। কলিজা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না সে। এত প্রতীক্ষার ফল সে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যাবে ভাবেনি কখনো। হুট করেই রূপাঞ্জনার মুখ নিচু করে গালে, মুখে, কপালে চুমুতে ভরিয়ে দিলো শামীমা। রূপা মায়ের প্রথম আদুরে স্পর্শে নিভতে শুরু করল। মনে হলো না এই স্পর্শের ভাষা মিথ্যে। এটা নিশ্চয়ই মায়ের স্পর্শ! চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে লাগল তার। মায়ের এই স্নেহের ছোঁয়া পেতে সে কত মূহুর্ত তড়পেছে! আজ অবশেষে হৃদয়ে বইতে লাগল শান্তির হাওয়া।

একটা বয়স্ক মহিলাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল রায়ান। ঠোঁট ফেটে র/ক্ত নামক তরল পদার্থটি বেরিয়ে থুঁতনিতে এসে তা শুঁকিয়েও গিয়েছে। কথা বলার সময় ঠোঁট নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে তার। একজনের সঙ্গে হাতাহাতি করতে গিয়ে সে রায়ানকে সরাসরি দেয়ালে ছিটকে ফে/লে দিয়েছিল। তারপর এক বয়স্ক মহিলাকে একটা কেবিনে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে হসপিটালের পেছনে নিয়ে যাচ্ছে সে। সাইড থেকে আচমকাই গু/লির শব্দ পেলে সরে যাওয়ার আগেই কাঁধের কিছু অংশে আ/ঘা/ত লেগে যায় তার। হালকা আর্তনাদ দিয়ে উঠে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালে প্রতিপক্ষ দলের একজনকে দেখে রি/ভ/লবার দিয়ে তাক করার আগেই কোত্থেকে কোহিনূরের উদয় হয়। দ্রুত ট্রিগার চেপে পরপর দুটো বু/লেট চলে যায় লোকটির বুকের ভেতর। তারপর দ্রুত পায়ে কোহিনূর রায়ানের কাছে এগিয়ে এসে কাঁধে লাগা চোট দেখতে চাইলে রায়ান তাকে ইশারায় বারণ করে বলে,
“তুই এই আন্টিকে বাহিরে নিয়ে যা। আমি ঠিক আছি। এখন এসব চোট দেখার সময় নেই।”

কোহিনূর রায়ানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দ্রুত হুইলচেয়ার ধরে বাহিরের দিকে এগিয়ে যায়।

একটা দশ বছরের বাচ্চার হাতে গু;লি লেগেছে। আরো আ;ঘাত করার আগে মেহরাজ ক্রি/মিনা/লটিকে ধরাশায়ী করে ফেলে। তার রি/ভল/বারে বু/লেট আর নেই। তাই কাঁচের বোতল দিয়ে বা/ড়ি মে/রেছে লোকটির মাথায়। তারপর বাচ্চাটিকে কোলে তুলে দৌড়াতে শুরু করলে হুট করেই কেউ একজন তার পায়ে শু/ট করে দেয়। সরাসরি ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় মেহরাজ। বাচ্চা ছেলেটাকে আগলে ধরে পেছনে তাকায় সে। প্রতিপক্ষ টিমের আরেকজন তাকে গু;লি মে/রেছে। তার হাতের কাছে আরেকটি রি/ভল/বার পেয়ে সেটা মূহুর্তেই নিজের কাছে নিয়ে সেই মানবটিকেও পরপর তিনবার গু/লি চালিয়ে নিঃশেষ করে দিলো সে। উপস্থিত হলো তার দলের দুজন। তাদেরকে মেহরাজ বলে দিলো বাচ্চাটাকে উদ্ধার করতে। তারপর নিজে দাঁড়াতে গিয়ে পায়ের তীব্র ব্য/থায় আবারও আধশোয়া হয়ে কাতরাতে থাকল সে। বুঝতে পারল এই পা নিয়ে সে বেশিদূর যেতে পারবে না। ইতিমধ্যে মেঝে র/ক্তে মাখামাখি অবস্থা!

বৃদ্ধ মহিলাটিকে বাহিরে বের করে দিয়েই আন্ডারগ্রাউন্ড রুমের দিকে হাঁটা দিলো কোহিনূর। সেখানে সে কাউকে যেতে দেখেছে। যেটা কোহিনূরের কাছে সুবিধাজনক লাগেনি। জায়গাটির কাছাকাছি পৌঁছে উদ্ভট আওয়াজ পেল সে। এক প্রান্তের আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো সে ভেতরের দিকে। দেখা গেল একটা লোককে বো/ম ফিট করতে। বো/মের পুরো ধরণটা দেখে মনে হচ্ছে এটাই মেইন অ/স্ত্র তাদের। দেরি না করেই নিজের রি;ভল/বার বু/লেট লোড করে তড়িঘড়ি করে ভেতরে ঢুকে লোকটিকে জোর গলায় বলল,
“হ্যান্ডস আপ! আর একটাও কিছু করলে এখানেই শু/ট করব।”

লোকটি আচমকা চমকে উঠে দুটো হাত উপরে তুলল। তারপর কোহিনূরের দিকে ফিরতেই বিস্ময়ে চক্ষু চড়কগাছ হলো কোহিনূরের। যদিও সে ধারণা করেছিল এই লোকটা সম্পর্কে। তবুও পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলো না। দাঁতে দাঁত চেপে রি;ভ/লবার আরো শক্ত করে চেপে ধরে কোহিনূর বলল,
“সৈয়দ!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here