গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ২০)

0
443

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২০ (২য় খণ্ড)

অশ্রুতে টইটম্বুর হলো রাগিনীর দুটো চোখ। তা গাল বেয়ে থুঁতনিতে গিয়ে থেমে ফট করেই গিয়ে পড়ে রিও-এর গায়ে। রিও মাথা উঠিয়ে রাগিনীর দিকে তাকিয়ে উঠে তার সামনের এক পায়ের দ্বারা রাগিনীর গালে হাত রাখল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল রাগিনী রিওকে জড়িয়ে। এই কান্না সুখের, আনন্দের। বহুল প্রতীক্ষিত ছিল এই মূহুর্ত। নিচ থেকে কোহিনূর তার প্রেয়সীকে এমন অশ্রু নিবারণ করতে দেখে কালো সেই বিড়ালকে একহাতে জড়িয়ে অন্যহাত দুটো গালে ঠেকিয়ে ইশারায় কাঁদতে মানা করল। অতঃপর হাত দিয়ে ইশারাতেই ডাকল রাগিনীকে তার নিকট। কান্নারত রাগিনী সেই অবস্থাতেই হেসে দিয়ে কোনো বিলম্ব না করে বারান্দা থেকে ছুট লাগায়। আর কোনো বাঁধা মানবে না সে।

দরজা খুলে একপ্রকার দৌড়েই গার্ডেন পেরিয়ে সোজা বাহিরে চলে আসে রাগিনী। মাঝখান থেকে দারোয়ান সায়েদুল রাগিনীকে এভাবে বের হতে দেখে থতমত খেয়ে যান। বাহিরে তাকিয়ে দেখেন কোহিনূরের সামনে রাগিনীকে দাঁড়াতে। তাই তিনি আর কিছু বললেন না। প্রাচীরের আড়ালে গিয়ে টুলে বসে রইলেন। কোহিনূরের সামনে গিয়ে হাঁপাতে লাগল রাগিনী। তারপর নিষ্পলক তাকিয়ে রইল মানুষটির দিকে। এখনো গাল ভেজা মেয়েটার। তা খেয়াল করে কোহিনূর তার বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে ছুঁইয়ে দেয় রাগিনীর গাল। আদুরে গলায় বলে,
“একি! আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ের কথা বললে আমার রাগের রানি খুশিতে নাচতে শুরু করবে। কিন্তু এখন তো দেখছি সে কেঁদেই ভাসিয়ে দিচ্ছে।”

“উঁহু! আপনি বুঝবেন না আমার খুশির কান্না।”

নিজের চোখ কচলে বলে রাগিনী। তৎক্ষনাৎ খানিকটা নিকটে এসে কোহিনূর গলায় প্রতিত্তোর করে,
“তাই বুঝি? আমি না বুঝলে কে বুঝবে?”

“জানি না।”

মিনমিনে গলায় কথাগুলো বলতেই রাগিনী আর কোহিনূর উভয়ই খেয়াল করে তাদের হাতে থাকা দুটো বিড়ালই দুজনকে দেখে মিও মিও করে উঠছে। রাগিনী ও কোহিনূর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে এসে তারা নিচে নামিয়ে দিলো দুটো বিড়ালকেই। রিও ধীর পায়ে প্রথমে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল মেয়ে বিড়ালটির পাশে। অতঃপর একটা পা তুলে আস্তে করে ধা/ক্কা দেওয়ার চেষ্টা করল তাকে। মেয়ে বিড়ালটি ক্ষে/পে উঠে কোহিনূরের পায়ের আড়ালে সরে আসে। এরপর রিও আবারও বিড়ালটির কাছে যায় আর আস্তে করে জড়িয়ে ধরতেই শব্দ করে হেসে দেয় রাগিনী। কোহিনূর বলে ওঠে,
“সিরিয়াসলি! প্রমাণ পেলে তোমার এই বিড়াল ছানা আসলেই পাঁ/জি। নয়ত এত সুন্দর একটা বউ এনে দিলাম। প্রথমে এমন কেউ করে?”

রাগিনী ওমনি দুম করে বলে ওঠে,
“আমার তো মনে হচ্ছে ও আপনার থেকেই সব শিখেছে। মানতেই হবে দিনশেষে ও একটা ছেলে বিড়াল। সে আপনাকে সহ্য করতে না পারলেও ঠিকই আপনার অভ্যেসগুলো রপ্ত করে ফেলেছে। আপনি যেমন প্রথমে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখেন তারপর কাছে টানেন ঠিক ওমনি তৈরি হয়েছে রিও।”

কোহিনূর এবার নিঃশব্দে হাসে। রাগিনীর ডানহাতটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে নিজের বুকে ঠেকিয়ে শীতল গলায় বলে উঠল,
“কথা দিলাম, দূরে সরিয়ে রাখব না কখনো। নিজের হৃদয়স্থলে যত্ন করে সাজিয়ে রাখব। মাঝে মাঝে বের করব। ইচ্ছেমতো ভালোবাসব! আবারও হৃদয়বাসে লুকিয়ে রাখব।”

মাথা নুইয়ে ফেলে রাগিনী। হয়ত কিছুটা লজ্জায়, কিছুটা খুশিতে। শহুরে বিলাসবহুল মহল্লায় এখনো কয়েকটা গাড়ি চলছে। তাই নিজের কোলে কালো বিড়ালটিকে তুলে নিলো রাগিনীকে। আর কোহিনূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“রিওকে আপনি নিন!”

কোহিনূর তৎক্ষনাৎ আশ্চর্য হয়ে বলল,
“মাথা খা/রাপ? আমার কাছে নিলে আমার আ/স্ত রাখবে? এমনি সেদিন গালে যা খামচে দিয়েছিল! তুমি কি চাও বিয়ের আগে তোমার হবু বরের ফেসটা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাক?”

“আপনাকে তো ওকে সামলানোর অভ্যেস করতেই হবে। আফটার ওল বিয়ের পরেও সে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। তাই দেরি না করে জলদি কোলে তুলে নিন। গাড়ি চলছে এখনো। কখন কোথায় দৌড়ে যাবে ঠিক নেই।”

ঢক গিলে এবার সাহস করে রিওকে দুহাতে তুলেই নিলো কোহিনূর। রিও প্রথমে কোহিনূরের দিকে একটু রাগি রাগি ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে যেন মিইয়ে যায়। কোহিনূর নিজেও হতবাক এমন কাণ্ডে। অন্তত একটা আঁচড় আশা করেছিল সে রিও-এর কাছ থেকে। হতবাক হয়ে সে বলল,
“এটা কী হলো? আজকে চাঁদ ঠিকদিকে উঠেছিল তো?”

আকাশের দিকে উঁকিঝুঁকি দিলো কোহিনূর চাঁদ দেখার আশায়। রাগিনী ফিক করে হাসতে গিয়ে বলল,
“আমার মনে হয় সে বুঝতে পেরেছে আপনিই ওর জন্য সঙ্গী খুঁজে এনেছেন। তাই আপনাকে মেনে নিয়েছে আর আজকে ক্ষমা করে দিয়েছে।”

“তাই হবে হয়ত।”

“এই ব্ল্যাক প্রিন্সেস এর কোনো নাম রেখেছেন? গায়ে তো ভীষণ ময়লা! কোথায় পেলেন তাকে?”

“আমি আসছিলাম তোমার কাছেই। একটা হোটেলের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলাম। খিদে পেয়েছিল ভীষণ। নিজের খাওয়া শেষ করে বের হতে গিয়ে দেখলাম সে হোটেলের কাছে বসে আছে। বারবার খাবারের দিকে তাকাচ্ছিল। তাই ওকে একটু খাইয়ে ভাবলাম নিয়ে চলেই আসি। তাই নিয়ে এলাম। নামটা রেখেছি ফিওনা। ভালো হয়েছে নাকি খারাপ।”

রাগিনী ফিওনাকে জড়িয়ে নম্র সুরে বলল,
“খারাপ হবে কেন? নামটা বেশ মানিয়েছে তাকে।”

কোহিনূর এবার উৎসুক হয়ে বলে,
“তবে পাত্র এবং পাত্রী দুটোই পছন্দ হয়েছে আপনার? অপেক্ষা কীসের তাহলে শুভ কাজ সারতে?”

রাগিনী কিছু বলতে গিয়েও থামে এবার। কিছু একটা মনে আসায় মুখের উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফ্যাকাসে হয়। মূহুর্তেই বিষণ্ণতায় অস্ফুটস্বরে বলে,
“বাবা! ওই মানুষটার বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না কোহিনূর!”

কোহিনূর মোটেও অস্থির হলো না। আগের ন্যায় শান্তই রইল। ধীর গলায় বলল,
“কে বলেছে উনার বিরুদ্ধে যেতে?”

অবাক পানে তাকাল রাগিনী। একহাতে রাগিনীর হাতটা ধরল কোহিনূর। বেশ অবিচলভাবে তারা প্রবেশ করল বাড়ির অভ্যন্তরে। রাগিনী হতবিহ্বল হয়ে হাঁটতে থাকল। কোহিনূরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও পেরে উঠল না। বুঝতে পারল না লোকটি কী করতে চাইছে। সদর দরজা পেরিয়েই যখন হলরুমে তারা ঢুকল সোফায় দেখা গেল স্বয়ং রাশেদ সাহেবকে। সোজা হয়ে দরজার পানেই তাকিয়ে ছিলেন ভদ্রলোকটি। যেন অপেক্ষায় ছিলেন তাদের দুজনেরই। পাশে দাঁড়িয়ে আছে অভিরূপ। সেও যেন তাদেরই জন্য অধীর আগ্রহে ছিল। রাগিনী তার বাবাকে দেখামাত্র ভড়কে গেল প্রথমেই। নিশ্চয় কোহিনূরকে তার সঙ্গে দেখে বেশ রে/গে গিয়েছেন তিনি! এই ভেবেই দ্রুত তার বাবার কাছে গিয়েই ফ্লোরেই হাঁটু গেঁড়ে বসল রাগিনী। কাঁপা সুরে অনুনয়ের সঙ্গে বলল,
“বাবা…”

রাশেদ সাহেব হাতটা তুলে ইশারা করে মেয়েকে থামালেন। চুপ করিয়ে দিলেন। ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইল রাগিনী। রাশেদ সাহেব নিজের আদরের মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করলেন দীর্ঘ সময় ধরে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোহিনূরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন তিনি। তারপর গম্ভীর মুখে বললেন,
“ভালোবাসাকে ছাড়তে পারলেই না?”

রাগিনী মাথা নিচু করে বসেই রইল নীরবে। তার বাবা কী কষ্ট পাচ্ছে? ভাবনার মাঝে একরাশ আশার আলো জাগিয়ে রাশেদ সাহেব আবারও বললেন,
“আমরা সাইকোলজিস্টরাও এটা মানি ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি। পৃথিবীতে সবার প্রতি সবার ভালোবাসা থাকা উচিৎ। সেটা যেকোনো সম্পর্কের ভালোবাসা হতে পারে। ভিন্ন সম্পর্কে ভালোবাসা ভিন্ন সংজ্ঞার হয়। একটা মেন্টাল পেশেন্টকে নরমাল বানাতেও ভালোবাসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রণয় মানেই জীবনের দুঃখী মূহুর্তগুলোও সুখী করে তোলা।”

রাগিনী বাকরুদ্ধ! তার বাবা কেন এসব বলছে তা মাথায় ঠিক করে না এলেই জেগেছে সূক্ষ্ম ভরসা। রাশেদ সাহেব আবারও বলেন,
“তবে আজকাল মানুষ ভালোবাসা, ভালো লাগার মাঝে তফাৎ বুঝতে পারে না। বিশেষ করে তোমার বয়সী ছেলেমেয়েরা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আগে আমি নিজে পর্যবেক্ষণ করে দেখব। বিষয়টা আগে নিশ্চিত হবো এবং আজ আমি নিশ্চিত হয়েছি। আজ নয় অবশ্য! বেশ কয়দিন আগেই নিশ্চিত হয়েছি। যেদিন তুমি চট্টগ্রাম যেতে গিয়েও ফিরে এসেছিলে।”

মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগে রাগিনীর। তার বোকার মতো তাকিয়ে থাকা দেখে রাশেদ সাহেব এবার কোহিনূকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“কী হলো? এখনো কিছুই বলো নি মেয়েটাকে?”

কোহিনূর মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ সে বলেনি। রাশেদ সাহেব এবার রাগিনীর মাথায় হাত রেখে বলে ওঠেন,
“বুঝতেই পারছি। বিয়ে দেওয়ার পর আমার মেয়েটাকে শুধু রহস্যের বেড়াজালে রেখে দেবে। এখনি সব লুকিয়ে যাচ্ছে।”

রাগিনী তবুও কিছুই বুঝল না। কী-ই বা বুঝবে? তাদের কারোর কথার আগামাথা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। উঠে দাঁড়ায় রাগিনী। কথার মাঝে অভিরূপ বলল,
“আঙ্কেল! এবার আপনার মেয়েটা মাথা ঘুরে পড়েই যাবে। এত সাসপেন্স না রেখে সত্যিটা বলেই দিন।”

রাশেদ সাহেব মাথা দুলিয়ে বলতে শুরু করেন,
“তোমায় আমি যেদিন চট্টগ্রাম চলে যেতে বলেছিলাম সেদিন রাতেই কোহিনূর আমার কাছে এসেছিল। আমি প্রথমে খুবই রা/গ করি তার উপর। পরক্ষণেই সে আমায় মানিয়ে ফেলে। যাকে বলে বউ পটানোর আগে শ্বশুরকে পটানো। আমিও তাকে শর্ত দিই সে যদি রাগিনীকে আটকাতে পারে তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তোমাদের মাঝে বোঝাপড়া কেমন এবং আমি সন্তুষ্ট! আমার আর কোনো অভিযোগ নেই।”

কথার মাঝে একটু থামেন রাশেদ সাহেব। তারপর আবার বলতে লাগলেন,
“কোহিনূর, আমি তোমার চেয়ে যোগ্য ছেলে আর কোথাও পাবো না। তুমি সেই মানুষ যে আমার পর মেয়েটাকে আগলে রাখতে পারবে। আমার অনুপস্থিতিতে আমার আদরের এই মেয়েটাকে মাথায় তুলে রাখবে।”

কোহিনূর মাথা নুইয়ে বাধ্য ছেলের মতো বলে,
“ভরসা রাখতে পারেন। ভাঙবে না এই ভরসা।”

উঠে দাঁড়ান রাশেদ সাহেব। কোহিনূরের দিকে এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রেখে প্রসন্ন হয়ে বলেন,
“ঠিকই বলেছিলে তুমি। জন্ম, মৃ/ত্যু কোনোটাই কোনো মানুষের উপর নির্ভর করে না। তুমি এমন জব করো সেকারণে আমার মেয়েকে আমি হারিয়ে ফেলব এমন ভুল ধারণা নিয়ে আমি বেঁচে ছিলাম। তুমি আমায় সেই ভুল ধারণা ভাঙিয়েছ। ইউ আর ইন্টেলিজেন্ট ম্যান!”

রাগিনীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে এবার। বাবার কাছে এসে বাবার আদুরে ছোট্ট মেয়ের মতো জড়িয়ে ধরে মিনমিন করে বলে,
“তোমরা আমাকে এসব আগে তো জানাও নি বাবা। কেন?”

রাগিনীকে একহাতে আগলে ধরে রাশেদ সাহেব শান্ত সুরে বললেন,
“সেটা তোমার হবু বরের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নাও। আমি এই বিষয়ে নির্দোষ। সে আমায় বলেছে সময় দিতে। বলেছিল, সঠিক সময় এলে নিজেই সব জানিয়ে দেবে।”

চোখ ছোটো-ছোটো করে কোহিনূরের দিকে তাকাল রাগিনী। কোহিনূর তখন জিহ্বা বের করে একটা কান ধরেছে সরি বলতে। তখনি চোখ সরাল রাগিনী। কোহিনূর বলল,
“আর সময়ের দোহাই দিতে চাইনা স্যার। আপনি যেদিনই বলবেন সেদিনই আমি প্রস্তুত।”

“যদি বলি কালকে তাহলে?”

কোহিনূর ভণিতা ছাড়াই জবাব দিলো,
“তাহলে কালকের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাই আমি যদি আপনার আদরের রাজকন্যার কোনো আপত্তি না থাকে!”

রাশেদ সাহেব এবার উৎসুক হয়ে তাকালেন রাগিনীর পানে। রাগিনী তখন লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত। এই কোহিনূর লোকটি একেবারে যা-তা! এভাবে কোনো মেয়েকে বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে সে কী করে বলবে বাবার সামনে? সে এবার হলরুম ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় কোনোরকম কথা ছাড়াই। সে যেতেই বাকি সকলে হেসে ওঠে। অভিরূপ হাসতে হাসতে বলে,
“হেই ম্যান! এভাবে কোনো মেয়েকে প্রশ্ন করতে আছে নাকি? ফেলে দিলে তো তাকে লজ্জায়!”

মাথা চুলকাতে লাগল কোহিনূর। অভিরূপ এবার হাসিটা থামাল। কোথাও যেন দেখতে পেল তার ভবিষ্যৎ। সেও মনে মনে ভেবে রাখল তারও কখনো এই সুন্দর মূহুর্তটা আসবে। সেও কখনো এই মূহুর্তের সামান্য ভাগিদার না হয়ে বরং সেই অপরূপ সময়ের প্রধান হবে!

এই রাতের সময়ে অফিসে প্রবেশ করছে কোহিনূর। মাথায় এখন অনেক চিন্তা! সে বলে তো দিয়েছে সে কালকের জন্য প্রস্তুত। তবে কী করে এত অল্প সময়ের মাঝে এত কিছু আয়োজন করবে সেটা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছে না সে। নয়নতাঁরা মেয়েটাকেও এখন প্রেশার দিতে পারবে না সে। সে থাকলে কোহিনূরকক এত চিন্তা হয়ত করতেই হতো না। নয়ন কাল হসপিটাল থেকে রিলিজ পাবে। অলরেডি সে নিজের ভাইয়ের বিয়ের খবর শুনে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। শপিং করার জেদও নাকি ধরেছিল সে। অবশেষে ডক্টরের কথায় ঘুমের ঔষধে কাবু করা হয়েছে তাকে। হয়ত এখন তন্দ্রাচ্ছন্ন মেয়েটা।

কোহিনূরের শেষ ভরসা মেহরাজ! এই ছেলেটাকেই দিয়ে যা করানোর করতে হবে। তাই তার অফিসে আসা। মেহরাজের কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়ে কিছু পড়তে থাকা মেহরাজ যেন চমকে ওঠে। যেন হুট করে কোহিনূরের এমন আগমন আশা করেনি সে। ঢক গিলে কিছু বোঝার আগেই তার হাতে থাকা কিছু পেছনে লুকিয়ে ফেলে সে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় কোহিনূর। কাছে এসে শুধায়,
“কী ব্যাপার? কী হচ্ছে?”

মেহরাজ আমতা আমতা করে জবাবে বলে,
“ক…কী হবে স্যার?”

কোহিনূরও সময় না নিয়ে মেহরাজ পেছনে লুকিয়ে রাখা বইটি ফট করেই টেনে বের করে নিয়ে দেখতেই কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয় সে। আশ্চর্য হয়ে বলে,
“কেমিস্ট্রির বই? এগুলো তো সব কেমিস্ট্রির ফর্মুলা দেওয়া! ব্যাপার কী? আজকাল পড়াশোনাও করতে লেগে পড়েছ নাকি?”

মেহরাজ শুকনো ঢক গিলে বলল,
“না স্যার। আ…আমি পড়াশোনা করব কেন? আমি যখন এতিমখানায় ছিলাম তখন আমার তো অনেকের সাথে পরিচয় ছিল। তার মাঝে একটা ছোটো বোনের পরীক্ষা। তো সে সাজেশন চাইছিল। আমি কেমিস্ট্রিতে একটু ভালো পারি তো তাই আরকি!”

কোহিনূর আর মাথা ঘামালো না এই ব্যাপারে। বই রেখে দিয়ে জোর গলায় বলল,
“অনেক হয়েছে সাজেশন দেওয়া। এখন লেটস গো! অনেক কাজ আছে।”

“কীসের কাজ স্যার?”

“বিয়ের শপিং করতে হবে! হাতে একদম সময় নেই।”

মেহরাজ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল প্রথমে। তারপর হতবাক হয়ে বলল,
“বিয়ে? কার বিয়ে? কীসের বিয়ে?”

এমন প্রশ্নে বিরক্ত হলো কোহিনূর। দম ফেলে বলল,
“অফকোর্স আমার বিয়ে।”

আরো এক দফা বিস্ময়ে যেন শক খেলো মেহরাজ। কোহিনূরকে মাথা থেকে পা অবধি পরখ করে নিলো একবার। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
“সত্যি স্যার?”

“ডাউট আছে কোনো?”

মেহরাজ তৎক্ষনাৎ মাথা ঝাঁকায়। আবার ঘড়ি দেখে বলে,
“বাট স্যার! এত রাতে বিয়ের শপিং?”

“হু! কেন কী সমস্যা?”

“শপিংমল খোলা না পাওয়া গেলে…”

কোহিনূর কথার মাঝেই বলে দিলো,
“খোলা না পাওয়া গেলে তোমায় দিয়ে ডা/কাতি করাব। তাও আজকের রাতে বিয়ের শপিং হওয়া চাই।”

“ইয়েস স্যার।”

কোহিনূর বেরিয়ে গেল তখনি। পিছুপিছু মেহরাজ যেতে যেতে বলল,
“বিয়েটা তাদের। ব/লির পাঠা আমি!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here