গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ১৮)

0
397

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৮ (২য় খণ্ড)

“চল! তোকে আরো একটা অফার দেই। তোকে আমি এতটাই ভালোবাসি যে তোকে মা/রতে গেলেও আমার ভাবতে হয়। তাই তোকে আবার আমার দলে ফিরে আসার সুযোগ দিলাম। সামনে একটা বড়ো মি/শন আছে। তুই যদি আমাদের সাথে মি/শনে নামতে পারিস তাহলে কিন্তু আমার চিন্তাই করতে হবে না।”

ফাহমিদ কথাগুলো বলতে বলতে ধুলোপড়া মেঝেতে পা দুটো ছড়িয়ে বসল। চশমাটা খুলে নিলো হাতে। আর ভালো লাগে না এই ভদ্র ছেলে সেজে থাকতে। গুড বয় হওয়াটা বেশ মুশকিল ব্যাপার স্যাপার মনে হয় তার কাছে। বড়ো শ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করল রূপার উত্তরের। মেয়েটা কিছু বলছে না। শুধু তীক্ষ্ণ এবং দুর্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একসময় হুট করে থমথমে গলায় প্রশ্ন করে,
“তোকেও কেউ নির্দেশনা দেয়! আমি জানি! তোর এই অল্প বয়সী ব্রেইনে কেমিস্ট্রির বিক্রিয়া ছাড়া মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা সম্ভব নয়।”

ফাহমিদ কিছুটা চমকালো। অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টিপাত করল রূপাঞ্জনার দিকে। রূপার ভাবমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে সে একদমই নিশ্চিত এ ব্যাপারে।ফাহমিদকে চুপ দেখে রূপা যেন আরো বলার সুযোগ পায়।
“আগের থেকেই সন্দেহ হতো। নিশ্চিত তখন হলাম যখন তুই খবর পেলি আমি রাগিনীদের বাড়িতে। আমি যে ওদের বাড়িতে থাকতে পারি সেটা তোর চিন্তাভাবনাতেও আসার কথা নয়। এই খবর অন্যকেউ দিয়েছে। ওই বাড়ির কেউ মাস্টারমাইন্ড! যাকে তুই নিজ দায়িত্বে আড়ালে রেখেছিস।”

নিজের হাতের চশমাটা রূপাঞ্জনার দিকে ছুঁ’ড়ে দিয়ে ক্রো/ধে চিৎকার দিয়ে উঠল ফাহমিদ। চশমাটা গিয়ে লা/গল রূপার কপালের মাঝ বরাবর। চোখ খিঁচে আ/র্তনাদ করে উঠল রূপা। ফাহমিদ চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে এসে রূপার দুটো গাল চেপে ধরতেই মেয়েটির আর্ত/নাদ বন্ধ হলো।
“তুইতোকারি করবি না আমার সাথে। নয়ত যতটুকু বেঁ/চে আছিস সেটাও থাকবি না। মা/থায় র/ক্ত উঠে যায়।”

হিসহিসিয়ে কথাগুলো বলে ছিটকে সরে আসে ফাহমিদ। রা/গটা নিয়ন্ত্রণে আসে না কোনোমতেই। রা/গ বের করতে না পারলে যেন সে নিজেই ম/রে যাবে। মাথাটার চুল চেপে ধরে বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্থির করে সে। রূপা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। সেই চাহনিতে যেন ফাহমিদ নিজেই নিজের খু/ন হওয়ার কামনা দেখছে। তবে এসবে ফাহমিদের ভয়ডর কম। নেই বললেই চলে। সে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
“খিদে পেয়েছে? খাবি কিছু? এদিকে আয় হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিই। ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করি।”

রূপা কিছু বলল না। নিশ্চল রইল। এগিয়ে এসে প্রথমে হাতের বাঁধন খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে পায়েরটা একা খুলে নিলো রূপা। ফাহমিদ সরে আসতেই তাকে ধা/ক্কা মা;রা হলো। এর জন্য প্রস্তুত না থাকায় আধশোয়া হয়ে পড়ল ফাহমিদ। ধা/ক্কাটা মে/রেছে রূপা নিজেই। এরপর আর দেরিও করেনি সে। ফাহমিদের গেঞ্জি উঠিয়ে প্যান্টের কাছ থেকে রি/ভলবা/রটা নিজ হাতে নিয়ে সরে এলো সে। ফাহমিদকে টার্গে/ট করে উঠে দাঁড়াল রূপা নড়বড়ে পায়ে। লাল চোখে তার ফাহমিদকে শে/ষ করার নেশা। তাকে দেখে ফাহমিদ ভীরু চোখে তাকাল। কিছুটা সরে গেল। তবে ভুলচুক হলো না রূপার নিশানায়। সে টার্গেট করেই যাচ্ছে। দ্রুত উঠে দাঁড়াল ফাহমিদ। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
“ওটা নামা হাত থেকে।”

“নামাব না। আমাকে দেওয়া এতদিনের ক/ষ্টের শোধ তুলব।”

ফাহমিদ কিছু বলল না আর। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই বুঝি প্রাণ যায়। রূপা আর কিছুই না ভেবে ট্রি/গার চেপে নিলো। আশায় রইল কখন বু/লেট বের হবে এবং এফোঁড়ওফোঁড় করবে এই কালো অধ্যায়ের মানুষটির বু/ক। কিন্তু তা পূর্ণ হলো না। নীরব রইল ঘর। আচমকা ফাহমিদ নামক কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষটি হাসিতে ফেটে পড়ল। পেটে হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো হাসতে থাকল। রূপা বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল দেয়াল ঘেঁষে। কী হচ্ছে? কিছু বুঝে ওঠার আগেই এবার তার হাত মুচ/ড়ে ধরে ঘুরিয়ে হাতের রি/ভলবার কেঁড়ে নিয়ে মূহুর্তেই পকেট থেকে বু/লেট ঢুকিয়ে রূপার মাথার পাশে ঠেকাল ফাহমিদ।
“আমার সঙ্গে সেই ছোট্ট থেকে আছিস। একটু তো ধারণা থাকা উচিত তোর। আমি জেনে-বুঝেই তোর বাঁধন খুলে দিয়েছি এটা বোঝা উচিত ছিল এবং কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল।”

সারা শরীর কাঁপতে থাকল রূপার। ছটফটিয়ে ছাড়াতে চাইল নিজেকে। পেরে উঠল না। ফাহমিদ আবারও বলে,
“ভেবেছিলাম আমাকে এবার নিরাশ করবি না। আমার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করবি। এতে আমার লাভ হতো আর তুইও জীবনের খুঁজে পেতিস।”

“রূপাঞ্জনার জীবনের কোনো মানে আদেও ছিল না। তাই শেষ সময় এসে জীবনের মানে খুঁজে এই বোকামি করতে চাই না।”

ফাহমিদ রূপাকে ছেড়ে দিলো এবার। তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল রূপা। ফাহমিদ একটু হেলে অবিশ্বাস্য সুরে বলল,
“কিন্তু শেষ সময় এসে নিজের পরিচয় জানতে পারলে জীবনের মানে হয়ত আপনাআপনিই বেরিয়ে পড়বে।”

থমকালো রূপা। র/ক্তপ্রবাহে শীতল ধারা বয়ে গেল যেন। কানে কি ঠিক শুনল নাকি ভুল সেটা ভাবতেই দিশাহারা হয়ে গেল। ফাহমিদ তখন রূপার প্রতিক্রিয়া দেখে বেশ সন্তুষ্ট। সে মেয়েটার চোখে এমনই কৌতূহল দেখতে চেয়েছিল। এখন এটা দ্বারাই হতে পারে সে কাবু। এবার রূপার কাঁপা স্বরটা ভেসে এলো।
“পরিচয়? কীসের পরিচয়? আমি তো একটা বে** মেয়ে। এটা ছোটো থেকে আমাকে গবেষক বাবা বলে এসেছে।”

“হুমম বলেছে। কারণ তখন তোকে দিয়ে কাজ করাতে পরিচয় জানানোর দরকার পড়েনি। এখন মনে হলো তোকে অফারটা দেওয়া উচিত।”

বিস্ময়ের সীমানা রইল না রূপার। এ কী হচ্ছে? কেন এতবছর পর তাকে জানতে হচ্ছে কেউ তার জন্মের পরিচয় জানে অথচ বলেনি! মস্তিষ্ক খালি খালি লাগছে। যেন এখনি পড়ে যাবে ভীমড়ি খেয়ে। দেয়ালটা একহাতে ধরল সে। আগের সুরেই শুধালো,
“আপনি আমার পরিচয় জানেন?”

ফাহমিদ খুশি হলো। শুঁকনো সেই ঠোঁটে ফুটল রাজ্যের হাসি। এতক্ষণ পর এই ত্যাঁড়া মেয়েটা লাইনে এসেছে। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
“অবশ্যই।”

“বিশ্বাস হয় না। যদি সত্যি জানা থাকত আমাকে আগেই বলে দেওয়া হতো।”

“আমাকে কখনো স্বার্থ ছাড়া কিছু করতে দেখেছিস? তোকে যদি বলতাম তুই তো তোর পরিবারের খোঁজে চলে আসতি। তোকে দিয়ে এত কাজ কী করে করাতাম তখন?”

কথাগুলো বলতে বলতে আবারও আগের জায়গায় রি/ভলবার গুঁজে নিলো ফাহমিদ। রূপাঞ্জনার কান্না পাচ্ছে। কপাল বেয়ে পড়ছে ঘাম। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে সে। সেই কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“বিশ্বাস করিনা এসব। আমাকে আবার দলে টানার জন্য এসব বলছেন।”

“তুই কোন হসপিটালে, কোনদিন হয়েছিস, কেন তোকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হলো সব আমি জানি। ডিসিশন তোর। সামনে বড়ো একটা মি/শন আছে। সেখানে আমাদের সঙ্গে নামতে পারলে প্রমাণ সহ নিজের পরিচয় পাবি।”

রূপার তবুও বিশ্বাস হলো না। টলমল করতে থাকল সে। ফাহমিদ বড়ো একটা হাই নিলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর হঠাৎ চিল্লিয়ে ডেকে উঠল,
“এই কে কোথায় আছিস? এরে দিয়ে আর কোনো লাভ নাই। এরে বেঁধে দিয়ে যা।”

ডাকতেই যতটা সময় লাগল। আসতে সময় লাগল না বাহির থেকে। দুজন ছেলে ভেতরে ঢুকে আসতেই রূপা হুড়মুড়িয়ে বলে বসল,
“আমি এই মি;শনে নামছি সকলের সঙ্গে। প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু হবে আমার।”
ফাহমিদ হাসে। এ যেন আগের থেকেই এক বিজয়ের হাসি!

পাঁচটি দিন কেটে গেল। সময় অল্প গড়িয়েছে। দিন থেকে রাত হয়েছে। রাত থেকে দিন। এই সময়ের সঙ্গে বদলে গেল কিছু সম্পর্কের সমীকরণ। আজ নবীন সকালে উর্মিলা চা খেতে খেতে ভার চোখেমুখে অপেক্ষা করছিল কারোর। পায়ের সমস্যা হওয়ায় ভার্সিটিতেও যাওয়া হয় না তার। মনটা আজকাল টিকছে না তার। বিরক্ত লাগে ভীষণ। অবাক করার বিষয় হলো এই বিরক্তির কারণটা হয়ে উঠেছে নোমান। হ্যাঁ, লোকটা নেই এই দেশে। নিজ দেশে পাড়ি জমিয়েছ। এটাই এখন হয়ে উঠেছে উর্মিলার সবচেয়ে অসহ্যের কারণ। উঠতে, বসতে, ঘুমোতে, খেতে সবসময় এই বদ লোকটির কথা স্মরণে না এলে যেন তা চলেই না। এক কথায় মানুষটিকে এতটাই মনে পড়ে যে তাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবা হয়ে উঠছে না। মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে চলেছে যে সেই মানবটি ফিরে এসেছে। সেই চেনা গা জ্বালানো হাসিটা দিয়ে আবার তাকে জ্বালাচ্ছে। স্বপ্ন যে সত্যি হয় না! নোমান বাস্তবে আসে না।

নিজ ঘর থেকে রাগিনীর গলা পেয়ে উৎকণ্ঠা হয় উর্মিলা। পাশে থাকা চশমাটা দ্রুত পরে নিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই মিষ্টি হাসি দেওয়া রাগিনীকে দেখে যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় তার। সোজা হয়ে তড়িঘড়ি করে বসে। রাগিনী সন্নিকটে আসতেই উর্মিলা বলে,
“এত দেরি করলি যে! বস এখানে।”

রাগিনীর হাত ধরে টেনে বসায় উর্মিলা। রাগিনী বসতে বসতে জবাব দেয়,
“আরে আসতে তো একটু সময় লাগবে নাকি!”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তা কেমন আছিস?”

“এটা জানতে আমাকে ডাকলি বুঝি?”

ঠোঁট চেপে হেঁসে জিজ্ঞেস করে রাগিনী। উর্মিলা দম নিয়ে বলে,
“তোকে প্রশ্নও করা যাবে না? আমি বুঝি জানতে চাইতে পারি না তুই কেমন আছিস?”

“হুমম অবশ্যই পারিস। আচ্ছা, আমি তো ভালোই আছি। তোর কী অবস্থা? পায়ের কন্ডিশন আগের চেয়ে বেটার?”

“হুমম অনেকটা ভালো।”

বলেই থম মে/রে বসে রইল উর্মিলা। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারল না যেন। রাগিনী তার চোখমুখের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝেই নিয়েছে সে কিছু বলতে চাইছে। উর্মিলা পরক্ষণেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলল,
“তা তোর অতিথিদের কী অবস্থা? অভিরূপ! উনি তো এখানেই আছেন তাই না?”

“হুমম। তা তো আছেন। উনার মা-বাবা অনেক প্রেশার দিচ্ছেন যেন দেশে ফিরে যান। কিন্তু জানি না কেন আছেন এখানে।”

উর্মিলা এবার ঢক গিলে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,
“তা উনার বন্ধু তো চলে গেলেন আগেভাগেই। উনাকে এখন সামলে দেশে নিয়ে যাবেন কী করে? নাকি উনার ফেরার চান্স আছে?”

রাগিনী এবার পুরো বিষয়টা বুঝল। মুচকি হেঁসেও লুকিয়ে ফেলল হাসিটা। তৎক্ষণাৎ না বোঝার ভান করে বলল,
“উনিটা কে?”

উর্মিলা বিরক্ত হলো এমন প্রশ্নে। অপ্রসন্ন গলায় উত্তর দিলো,
“আরে উনি! নোমান।”

“জানি না রে। উনার সাথে তো কথা হয় না।”

মুখটা ফ্যাকাশে হলো উর্মিলার। লোকটি কী করে এভাবে হাওয়া হয়ে যেতে পারে? ভাবতেই রাগ লাগছ তার। একবারও কিনা খোঁজ খবর রাখারও চেষ্টা করল না? এ তো পুরো স্বার্থপর মানুষ! তবুও নিজেকে সামলে বলল,
“উনার নম্বর তোর কাছে আছে?”

এবার উর্মিলার কাঁধ চেপে ধরল রাগিনী। তাকে আলতো ধা/ক্কিয়ে বলল,
“ব্যাপার কী? তুই তো তাকে সহ্যও করতে পারিস না। কী হলো হঠাৎ?”

আমতা আমতা করতে থাকল উর্মিলা।
“স…সহ্য করতে পারিনা বলে কি আমার দায়িত্ব নেই? থাক তোকে নম্বর দিতে হবে না।”

রাগিনী ফোন বের করল এবার ব্যাগ থেকে। উর্মিলাকে শান্তনা দিতে দিতে বলল,
“মজা করছিলাম তো। নম্বর নে।”

যথারীতি নম্বরটা নিজের ফোনে তুলে নিলো উর্মিলা। কাজটা শেষ হওয়ার পরপরই এবার রাগিনী মজা করেই বলল,
“দেখিস! সাবধানে কল দিস। তোর কল পেয়ে বেচারা হার্ট অ্যা/টাকও করতে পারে।”

হসপিটালের তেরো নম্বর কেবিন। মিসেস. রমিলা সোফায় বসে থেকে স্যুপের বাটিতে চামুচ দিয়ে স্যুপ নাড়াচ্ছেন। পাশেই গম্ভীর মুখে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত ছেলেটা রায়ান। আধশোয়া হয়ে বাঁকা চোখে নয়নতাঁরা পর্যবেক্ষণ করছে তার ইন্সপেক্টরকে। রায়ান অফিসে যাওয়ার আগে তার মাকে নয়নের কাছে ছেড়ে দিতে এসেছিল। আরেকটি উদ্দেশ্য হলো নয়নকে একটু দেখে যাওয়া। মেয়েটার অবস্থা এই কদিনে কাহিল হয়ে গিয়েছিল পিঠে গু/লি লাগার ফলে। কোহিনূরের অবস্থা হয়েছিল পা/গল প্রায়। সারা দিনরাত ছেলেটা নিজের প্রতি রা/গ ঝে/ড়ে গিয়েছে। সামাল দিতে হয়েছে রায়ানকে। মিসেস. রমিলার কথায় ধ্যান ভাঙে রায়ানের।
“রায়ান, আমার হাতটা ব্যথা করছে। তুমি একটু নয়নকে স্যুপ খাইয়ে দাও তো।”

বিষম খায় রায়ান। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে নয়নের দিকে তাকায়। নয়নও উসখুস করছে। তার মা দেশে আসার পর থেকেই নয়নের সামনে তাকে অপ্রস্তুত করে তুলছে। নিজেকে ধাতস্থ করে রায়ান জবাব দিলো,
“আমি?”

“তো কে? রায়ান বলতে আর কেউ আছে ঘরে?”

রায়ান আমতা আমতা করতে থাকে। মাঝে নয়নতাঁরা নিজেই নিচু সুরে বলে,
“আমি একাই খেতে পারব আন্টি। আমাকে দিন বাটিটা।”

মিসেস. রমিলা নারাজ হয় বিষয়টাতে। রায়ানের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলেন,
“প্রশ্নই আসে না। পিঠের আ/ঘাত এখনো ঠিক করে শুকিয়ে যায়নি। ঠিক আছে ওকে খাওয়াতে হবে না। আমিই আমার হাতব্যথা নিয়ে খাওয়াব।”

উপায়ন্তর না পেয়ে মায়ের হাত থেকে বাটি নিয়ে নয়নের কাছে গিয়ে বসে রায়ান। চামুচে স্যুপ তুলে একটু করে ফুঁ দিয়ে নয়নের মুখের সামনে এগিয়ে ধরতেই সেটা ইতস্ততবোধ করে মুখে নেয় সে। কিন্তু সমস্যা হয় তাতে। মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। রায়ান দ্রুত পানি হাতে নিয়ে বলে,
“গরম হয়েছে বেশি স্যুপ? দ্রুত পানি খাও।”

গ্লাস ঠোঁটে লাগায় নয়নতাঁরা। লোকটা আজকাল বেশি কেয়ার দেখায়। এটা তার ভুল ধারণা নাকি সঠিক সেটা খুঁজে পাচ্ছে না। পানি পান করা শেষে রায়ান যত্ন করে হাতে টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে স্যুপটা ফুঁ দিয়ে খাওয়াতে। মিসেস. রমিলা গালে হাত দিয়ে একমনে ছেলেটাকে দেখে একটু আমিষ ভাব খুঁজে পান। আসল ব্যাপার উনার হাতে ব্যথা কিছুই নয়। সবই বাহানা!

এরইমাঝে রাগিনী প্রবেশ করে কেবিনে। আচমকা তাকে দেখে নয়নতাঁরা হেঁসে ওঠে। রাগিনী প্রথমেই নিজের নেত্রপল্লব দ্বারা খুঁজে নেয় কোহিনূরকে। মানুষটি আজকেও নেই এখানে। গত পাঁচদিন ধরে সে দেখা দিচ্ছে না রাগিনীর সামনে। বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে রাগিনীর কাছে। কল দিলে কল ধরে না অথবা বিজি দেখায়। সেদিন গাড়িতে ওমন সুন্দর কথায় সে ভেবেছিল হয়ত কোহিনূরের রা/গটা কমেছে। কিন্তু গত দিনগুলোর ব্যবহার অন্যকিছুই বলে দেয়। দুইবার কোহিনূরের অফিসেও গিয়েছে রাগিনী। মেহরাজ বার বার বলেছে, কোহিনূর নেই কাজে গিয়েছে বাহিরে। সে কেবিন চেক করেও তাকে পায়নি। সব মিলিয়ে রাগিনী ভালো নেই। কোহিনূরকে সামনাসামনি করে বিষয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন তার। কিন্তু হচ্ছে কোথায়?

“ভাবিজান!”

“কেমন আছো এখন?”

রাগিনীর কথায় নয়নতাঁরা হাত উঠিয়ে বলে,
“একদম ফিট।”

“ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাদের।”

নয়নতাঁরা এবার তার সামনের চুলগুলো ভাব নিয়ে ফু়ঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
“টেনশন নট ভাবিজান। আমি এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছি না। তোমাকে পরিপূর্ণ আমার ভাবিজান হিসেবে দেখতেই হবে আমায়।”

রাগিনী নয়নতাঁরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আরো কথা বলে তখন আগমন ঘটে মেহরাজেরও। কিছু ফলমূল নিয়ে এসেছে সে। সেসব কিছু দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজের বাহানা দিয়ে কেবিন থেকে সময় না দিয়েই বেরিয়ে পড়ে। তবে এবার নিস্তার নেই মেহরাজের। এই ভেবেই রাগিনীও বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। মেহরাজ সামনে ছুটতেই দ্রুত রাগিনী গিয়ে তার সামনে দাঁড়ায়। শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আপনার স্যার কোথায়?”

মেহরাজ থতমত খেয়ে জবাব দেয়,
“বাহিরে কাজে আছে। অফিসেও নেই, বাড়িতেও নেই।”

রাগ হয় রাগিনীর। চোখ গরম করে বলে,
“তো আছেটা কোথায়? মঙ্গল গ্রহে?”

“তা তো জানি না। আমার কাজ আছে ম্যাডাম। আমি যাই।”

মেহরাজ রাগিনীর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তবে রাগিনী তখনি জোর গলায় বলে ওঠে,
“খবরদার আমার সব কথা না শুনে যাবেন না। আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার।”

মেহরাজ ঢক গিলে বলল,
“স্যারের সম্পর্কে হলে কিছুই বলতে পারব না।”

“বলতে আপনি বাধ্য!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here