গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ১৭)

0
433

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৭ (২য় খণ্ড)

“এবার ছাড়! তোর স্বভাব কখনোই বদলাবে না। এখনো এমনভাবে জড়িয়ে ধরিস যে ভেতরের সব হা/ড়, মাংস একাকার যাবে। বিয়ের পরেও যদি বউয়ের সাথে এমন করিস তাহলে তো মহা বিপদ। শেষমেশ দেখা যাবে ব্রেকিং নিউজে বের হচ্ছে, ‘সিক্রেট অফিসার নির্জনের ভালোবাসার চোটে তার স্ত্রী আ/হত।’ ব্যাপারটা কেমন দেখায়?”

কোহিনূর এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নাকের ডগায় নিজের বৃদ্ধ আঙ্গুল ঘষে মৃদু হেঁসে মাথা নিচু করে। বাঁকা চোখে দৃষ্টিপাত করে রাগিনীর দিকে। মেয়েটার মুখটাও কেমন ছোটো ছোটো হয়ে গিয়েছে লজ্জায়! কোহিনূর বলে,
“ওসব নিয়ে তোকে এত ভাবতে হবে না। আমার বউ আমার মতোই স্ট্রং হবে। ইউ নো!”

“ইয়েস, ইয়েস আই নো। বাট মিস. রাগিনী! বলছিলাম তার থেকে একটু সাবধানেই থাকবেন। ঘটলে ঘটতেও পারে দু/র্ঘটনা!”

রাগিনী লাজুক মুখে হাসার চেষ্টা করে। তৎক্ষনাৎ কোহিনূর রায়ানের মুখ বন্ধ করার জন্য কেক-এর অংশ তুলে ক্রিম রায়ানের মুখে মাখিয়ে দেয় ইচ্ছেমতো। মিসেস. রমিলা তো শব্দ করেই হেঁসে যাচ্ছেন। নয়নতাঁরা মুগ্ধ পানে চেয়ে থাকে পুরো দৃশ্যটির দিকে আর আনমনে হাসতে থাকে। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে মেসেজটা পাঠিয়েছিল! নয়ত এত সুন্দর ঘটনার নিদর্শন কি হতো? এই সামান্য ইগো নিয়ে এই কঠিন বন্ধুত্বে এত দূরত্বে ছিল ভাবা যায়?

কালো রঙের গাড়িটা বিরতিহীনভাবে চলছে। পলকহীন চোখে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করছে কোহিনূর। রাস্তায় জ্যাম লাগল হঠাৎ। সব গাড়ির ভিড় লেগে গেল। কোলাহল শুরু হলো। শহরের রাস্তায় রাত-দিন বলতে কিছুই নেই। রাস্তায় বের হওয়া মানে ট্র্যাফিক জ্যামের সম্মুখীন হতেই হবে। গাড়ি থামিয়ে চুপচাপ কোহিনূর এবার আয়নাতে পেছনে বসে থাকা নয়নকে দেখে মুখ খুলল এবার।
“তাহলে সব প্ল্যানিং তোমার ছিল?”

নয়ন তৎক্ষনাৎ মুখ খুলে বলল,
” না, না। আমার না। আমি তো জাস্ট ভাবিজানের থেকে হেল্প চেয়েছিলাম। এরপর প্ল্যানিং তো সে-ই করেছে। মানতে হবে ভাবিজান খুবই ট্যালেন্টেড গার্ল।”

এবার ঘাড় ঘুরিয়ে রাগিনীর দিকে তাকায় কোহিনূর তীক্ষ্ণ চোখে। রাগিনী থতমত খেয়ে যেই কিছু বলতে নেবে ওমনি কোহিনূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“হ্যাঁ! কত বুদ্ধির বাহার সেটার প্রমাণ গতকালকেই পেয়েছি। ফুল রানি!”

রাগিনী কিছু না বললেও নাক ফুলিয়ে রা/গ ঝেড়ে বাহিরের দিকে তাকাল। নয়নতাঁরা আগ্রহ নিয়ে বলে উঠল,
“ওয়াও! নিউ নিকনেম? ফুল রানি?”

“আই থিংক সো! জাস্ট ফুলটাকে ইংলিশে উচ্চারণ করো এবং মানে বুঝে নাও।”

কোহিনূরের কথার মানেটা বুঝে রাগিনীর কারণে জোরে না হেঁসে মুখ টিপে হাসতে হাসতে সিটে ঠেস দিয়ে চোখ বুঁজে নেয় নয়ন। রাগিনীও ফুল অর্থাৎ বোকা বুঝে নিয়ে এবার মুখচোখ লাল করে তাকায়। লোকটা তো বেশ খোঁচাখোঁচি করতে জানে! চিল্লিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে ইনসাল্ট করতে পারেন না।”

“ইনসাল্ট কোথায় করলাম? সঠিক নিকনেম দিলাম। তার জন্য আমি গিফট প্রাপ্য! সো গিফট কবে দিচ্ছো বলো?”

রাগিনী রাগে ফোঁসফোঁস করে অন্যদিকে মুখ করে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“গিফট না ছাই!”

কথায় কথায় ট্র্যাফিক জ্যামটা ছাড়ল। গাড়ির চলাচল স্বাভাবিক হলো। রাগিনীর বাড়ির সামনে এসে থামা হলো। রাগিনীর কিছুটা চিন্তা হলো। অনেকক্ষণ তার বাবাকে দেখা হয়নি। না জানি কেমন আছে! যদিও অভিরূপকে ফোন করেছিল সে দুইবার। তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়েও আটকালো কোহিনূর। ভ্রু কুঞ্চিত হলো রাগিনীর। পিছু ফিরে তাকিয়ে কোহিনূর নয়নের উদ্দেশ্যে বলে,
“এই তুমি একটু গাড়ি থেকে নামো তো।”

নয়নতাঁরাও চমকালো। নেত্রপল্লব সরু করে চিকন গলায় বলল,
“বিগ ব্রাদার এটা ভাবিজানের বাড়ি। আমি কেন নামব?”

“আমি নামতে বলেছি তাই।”

কোহিনূরের সাফ কথায় মানতে নারাজ নয়নতাঁরা। তবে তার ভাইয়ের সাথে কথায় বা কাজে ঠিক সেভাবে পেরে ওঠে না সে। তাকে নামতেই হলো। নেমে চোখমুখ জড়িয়ে নিতেই ফট করেই জানালার কাঁচ লাগিয়ে দিলো কোহিনূর। রাগিনী হতভম্ব হলো সঙ্গে বাহিরে থাকা নয়নতাঁরাও! একী কাণ্ড?

“কী হলো? জানালার কাঁচ লাগালেন কেন? তাও নয়নকে বাহিরে রেখে?”

রাগিনীর হকচকিয়ে করা প্রশ্নে কোহিনূর শান্ত জবাবে বলল,
“কেন? তুমি তোমার হবু ননদের সামনে তোমার উপহার আমায় দিতে চাও? আমার কিন্তু এতে প্রবলেম নেই। তোমার প্রবলেম থাকতে পারে বলেই বের করে দিয়েছি।”

“মানেটা কী? কীসের উপহার?”

“এত সুন্দর নিকনেম দিলাম তার জন্য গিফট দেওয়া উচিৎ না তোমার? আশ্চর্য! একজন বড়োলোকের মেয়ে হয়ে এত কিপটে হলে হয়?”

রাগিনী এবার চোখজোড়া ছোটো ছোটো করে তাকাল। কোহিনূর বেশ প্রশান্তি নিয়ে তার গাল এগিয়ে দিতেই রাগিনীর বুঝতে এক মূহুর্তও লাগল না এই অসভ্য লোকটি উপহার বলতে কী বুঝিয়েছে! আর মনে মনে আনন্দ জেগে উঠল এই ভেবে যে মানুষটির রা/গ কমেছে এতক্ষণে। সে নিঃশব্দে হেঁসে মাথা নুইয়ে নিলো। কোহিনূর চোখ বন্ধ করে বলে,
“উঁহু, এত সময় নেই। তোমার হবু ননদ আবার খুব ধৈর্যহারা মেয়ে। কখন না জানি জানালার কাঁচ ভেঙে দেয়।”

কথা শেষ হওয়া মাত্র এক নম্র ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া গাল সহ যেন কোহিনূরের প্রতিটা অঙ্গ মুখরিত হয়ে ওঠে। গলার মাঝখানটা ফট করেই শুঁকিয়ে যায়। চোখ মেলতে ইচ্ছে করে না। শুধু অনুভব করতে ইচ্ছে করে। জোর করে চোখ খুলে রাগিনীকে নামতে প্রস্তুতি নিতে দেখে কোহিনূর ফিসফিসিয়ে বলে,
“এভাবে কেউ সাজে? আমাকে বিয়ের আগেই পা;গল করে দেওয়া ফন্দি এঁটেছ? পা/গল হলে কি আবারও আগের মতো সামলাতে পারবে? ”

রাগিনীও মিষ্টি করে জবাব দেয়,
“সামলাব না মানে? কোমড়ে আঁচল বেঁধে সামলাব।”

গাড়ি থেকে অবশেষে রাগিনীকে নামতে দেখে হাফ ছাড়ল নয়নতাঁরা। গাড়ির কাঁচটাও খোলা হলো এবার। কোহিনূর নিজেকে ধাতস্থ করে ঘড়ি দেখে ব্যস্ত কণ্ঠে নয়নের উদ্দেশ্যে বলল,
“গাড়িতে বসো। রাত অনেক হয়েছে। আমাকে আরো একবার অফিস যেতে হবে।”

নয়নতাঁরা কোহিনূরের কথা কানে নিলো না। বরং রাগিনীর হাত ধরে ভেংচি কেটে বলল,
“একটু পর আসছি। ভাবিজানের সাথে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”

কোহিনূর কপাল জড়িয়ে তোলে। সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করে,
“কী কথা?”

“ননদ আর ভাবির কথার মাঝখানে ঢুকতে নেই। একজন সিক্রেট অফিসার হয়ে এতটুকুও কমন সেন্স নেই তোমার? গাড়িতেই বসে থাকো। আমাদের কথা শোনার চেষ্টাও করবে না।”

কটমটিয়ে কথাগুলো বলে নয়ন রাগিনীকে কিছুটা দূরে নিয়ে এলো। রাগিনী নিজেও বুঝল না নয়ন কী কথা বলতে চায় তাকে। কিছু বোঝার আগেই মেয়েটা খুব জোরসে আলিঙ্গন করল তাকে। আচমকা এমন ব্যবহারে হতবিহ্বল হলো রাগিনী। নয়ন অনুতপ্ত হয়ে বলল,
“আই এম সরি ভাবিজান!”

“হঠাৎ সরি কেন?”

রাগিনীকে ছেড়ে দাঁড়ায় নয়ন। তবুও তার হাত ছাড়ে না। হাতটা টেনে নিয়ে সেটা বুলাতে বুলাতে মিনমিন করে নয়ন প্রতিত্তোরে বলে,
“আমি সেদিন বিগ ব্রাদারকে জানিয়েছিলাম যে তোমাদের বাড়িতে তোমার মতো দেখতে ওই মেয়েটা আছে। আমি ভেবেছিলাম কেস সলভ হলে তোমারও উপকার হবে। তাই তোমায় কিছু না জানিয়ে সরাসরি বিগ ব্রাদারকে বলে দিয়েছি সব। এতে তোমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে তাই না? ওই বিগ ব্রাদার তোমার উপর রা/গ করেছে খুব?”

রাগিনী সবটা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে নয়নের গালে হাত রেখে নম্র আওয়াজে বলল,
“তা তো একটু হয়েছে। ওসব ঝগড়া একটুআধটু হয়েই থাকে। তাছাড়া তুমি আমাদের ভালো ভেবেই তো ওই কাজটা করেছ। তোমার মনে তো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না।”

“তুমি আমার ওপর রা/গ করো না প্লিজ! আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি এই কয়দিনে।”

বাচ্চাদের মতো করে বলা নয়নের কথা গলিয়ে দিলো রাগিনীর মন। সে নয়নের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“রা/গ করব কেন? ছোটো বোনের ওপর কেউ রাগ করে? খুশিমনে বাড়ি যাও।”

নয়ন আবারও জাপ্টে ধরে তাকে। খুশিতে বলে ওঠে,
“আই লাভ ইউ ভাবিজান!”

অবশেষে বাড়িতে ফিরল রাগিনী। দরজা খুলে দিলো অভিরূপ। প্রথমেই ছেলেটির চিন্তিত সেই মুখটি দেখে কিছুটা বিভ্রান্ত হলো রাগিনী। পরক্ষণেই বিচলিত সুরে জিজ্ঞেস করল,
“বাবা ঠিক আছে তো?”

অভিরূপ শীতল কণ্ঠে বলে,
“টেনশন করো না। আঙ্কেল ইজ অলরাইট। ডিনার করে ফেলেছেন। এতক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছেন।”

“তাহলে কি আপনার কিছু হয়েছে?”

অভিরূপ উত্তরে কিছু বলল না। হলরুমটাও কেমন যেন অন্ধকার করে রাখা। উপরে জ্বলছে শুধু ঝাড়বাতি। সেখানকার সোফাতেই গিয়ে বসল অভিরূপ। রাগিনী এসে তার সামনে দাঁড়াল। একইভাবে বলল,
“নোমান ভাই চলে যাওয়ায় কি আপনার মন খারাপ?”

অভিরূপ মাথা ঝাঁকাল। অর্থাৎ না। দীর্ঘশ্বাস নিলো রাগিনী। অভিরূপ প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“কেমন কাটল আজকে তোমার দিন? সব প্ল্যানিং ঠিকঠাক সাকসেসফুল হয়েছে? এদিকে রিও বোধহয় তোমায় মিস করছিল। সারা বাড়ি ঘুরে বেরিয়েছে। অবশেষে হয়ত আমার ঘরে গিয়েই বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।”

“রূপাঞ্জনার জন্য টেনশন করছেন?”

রাগিনীর কথায় এবার আটকালো অভিরূপ। কণ্ঠস্বর আঁটকে আসল তার। গলা ধরা এলো। ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“টেনশন না রাগ! রাগ হচ্ছে ওর প্রতি।”

“রাগ কেন?”

অভিরূপ এবার কড়া গলায় বলল,
“ও তো কোথাও পালিয়ে গেল। আচ্ছা! ঠিক আছে। মানলাম, ও ঠিক কাজ করেছে। কিন্তু তাই বলে ওর কি উচিত ছিল না একবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার? যারা তার এত কেয়ার করল তাদের প্রতি এতটুকু কৃতজ্ঞতা বোধ আশা করা যায় না?”

রাগিনী এবার চুপ রইল। আসলেই এই রূপা মেয়েটা হারিয়েই গেল! খুঁজেও পাওয়া গেল না। সে নিজ থেকে আর একবারও দেখা দিলো না। এবার রাগিনী বলল,
“আপনি ডিনার করেছেন?”

“না, সৈয়দ আঙ্কেল ডিনার করতে বললেন। আমার খেতে ইচ্ছে করছিল না বলে বলেছি পরে খাব।”

“নোমান ভাই চলে গিয়েছেন বলে আপনি এই অনিয়মটা করতে পারছেন। আপনার ডায়েট চার্টে তো সন্ধ্যার পরপরই খাওয়ার রুটিন রয়েছে।”
অভিরূপ প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। মুখ নামিয়ে চোখ বুঁজে বসে রইল। নিজেও আর কথা না বাড়িয়ে রাগিনী খাবার আনতে চলে গেল।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘুমে কাবু হলো নয়নতাঁরা। পেছনের সিটে গা এলিয়ে পা নিচে রেখে বেঘোরে ঘুমোতে দেখা গেল তাকে। পিছনে ফিরে ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ছোটো বোনকে দেখে নিলো কোহিনূর। হাত বাড়িয়ে মাথা বুলিয়ে দিলো তার। নয়নকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। মেয়েটা আজ হঠাৎ শাড়ি পড়েছে। যদিও কোহিনূর এই সাজগোজের কারণ জানে। তাই সে কিছুটা চিন্তিত। নিচু সুরে বলে,
“বাবাহ! ছোটোবেলায় মায়ের ওড়না দিয়ে শাড়ি পড়া মেয়ে আজ সত্যি সত্যি শাড়ি পড়েছে দেখি!”

নয়ন ঘুমের মাঝে ভ্রু কুঁচকে নিলো। কোহিনূর হেঁসে আদুরে সুরে ডাক দিলো এবার।
“নয়ন! বাড়ি এসেছি। উঠে পড়ো।”

ঘুমটা হালকা হলো নয়নের। নড়েচড়ে বিরক্তি নিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
“আরেকটু ঘুমাব।”

“নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমাও। তাড়াতাড়ি ওঠো। নয়ত তোমায় গাড়িতে লক করে আমি ঘরে গেলাম।”

তবুও কোনো হেলদোল দেখা গেল না নয়নতাঁরার মাঝে। সে একভাবে আধশোয়া হয়ে রইল। এবার না পেরে সিট থেকে নেমে পেছনের দরজা খুলে নয়নতাঁরার হাত ধরে টেনে তুলল কোহিনূর। চোখমুখ জড়িয়ে নিলো নয়ন। চোখ দুটো ঘষে বলল,
“ধুর! তুমি আমাকে কখনো শান্তি দেবে না বিগ ব্রাদার।”

কোহিনূর কিছু বলল না। সে সরে এলো গাড়ির কাছ থেকে। নয়নতাঁরা তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে। মূহুর্তেই এই নিস্তব্ধ এই মহল্লায় বিকট শব্দ শোনা গেল। পিলে চমকে উঠল কোহিনূরের। ফের শোনা গেল সেই একই রকম আওয়াজ। কানের পাশ ঘেঁষে কী যেন একটা চলে গেল! নয়নের দম ওঠানামার শব্দ শোনা গেল। পেছন ফিরে তাকাল কোহিনূর। তার বোনটা গাড়ি ঘেঁষে বসে পড়েছে। গাড়ির গায়ে স্পষ্ট লাল তাজা র/ক্তের ছাপ। হৃৎস্পন্দন যেন এক মূহুর্তের জন্য থেমে গেল। কোথাও কেউ তার নিজস্ব পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা চালানোর আভাস পেল। কোহিনূরের দুচোখ অন্ধকারে ছেয়ে আসার আগেই দ্রুত নিজের রি/ভলবা/র বের করে আশেপাশে তাকাল এবং হেলে পড়তেই আরেকটা গু/লি চলে গেল অন্যদিকে। ল্যাম্পপোস্টের কাছে এক অবয়ব দেখামাত্র রি/ভলবার চালালো কোহিনূর। সঙ্গে সঙ্গেই তার বাড়ি পাহারা দেওয়া এক্সপার্ট গার্ড এসে একজোট হলো। লাল চোখে নিজের বোনের আ/হত শরীরের দিকে দৃষ্টিপাত করে কোহিনূর। এ যেন নয়ন নয় তার বুক থেকে র/ক্ত ঝরছে। বুকে ধরেছে ক্ষীণ ব্যথা। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নয়নের কাছে। তার মাথাটা নিজের বুকে আগলে নিলো। ততক্ষণে ঘরে ঘরে লাইট জ্বলেছে। এত শব্দ কীসের তা দেখতে মানুষ বেরিয়ে আসছে। লাভ কী? ক্ষতি করে অপ/রাধী পালিয়েছে। কোহিনূর চোখ বুঁজে নিজের অশ্রু সংবরণ করার চেষ্টায় রইল। ভাঙা গলায় বলল,
“বাবাকে কথা দিয়েছিলাম, এই ছোট্ট দেহ থেকে কখনো এক ফোঁটা র/ক্ত পড়তে দেব না। আমি কথা রাখতে পারিনি। আমায় মাফ করো।”

বদ্ধ ঘর। কোনোরকম বাতাস চলাচলের জন্য জানালাও খোলা নেই। এই অবস্থায় একভাবে বসে শুয়ে থাকতে থাকতে পুরো শরীরে যেন জং ধরেছে রূপাঞ্জনার। শান্তিতে শ্বাস নেওয়ার মতোও পরিস্থিতি নেই। হাত-পা বেশ শ/ক্ত করে বাঁধা। মুখের ভেতরে কাপড় পুরে দেওয়া। এই অবস্থায় থাকলে দম বন্ধ হয়ে ম/রে যেতে হবে তার। দেয়ালে মাথা লাগিয়ে এই খা/রাপ পরিস্থিতি ভুলে যেতে রূপা স্মৃতিচারণ করতে থাকল রাগিনীকে সঙ্গে কাটানো সময়ের। রাগিনী মেয়েটা আসলেই বেশ মিষ্টি। অপরদিকে অভিরূপের কথা মাথায় আসতেই দীর্ঘশ্বাস নিলো সে। লোকটা কি তাকে খুঁজছে? অন্ধকার ঘরে এবার আলোর সঞ্চার হলো। চোখটা আপনাআপনি বুঁজে এলো রূপার। দরজা খোলার শব্দ হলো। নিভু নিভু চোখে দৃশ্যমান হলো এক পুরুষের অবয়ব। এই অবয়ব রূপার অচেনা নয়। সেই আদলের ভয়াবহ রূপও রূপার জানা। লোকটি তার কাছে এসে নিচু হলো। তার মুখ থেকে কাপড় টেনে নিতেই সাপের ন্যায় ফোঁস করে উঠল রূপাঞ্জনা। লোকটির মাঝে ভাবান্তর দেখা গেল না। বরং শান্ত গলায় প্রশ্ন করল,
“এত বছর পর কেন শ/ত্রুতা করছিস রূপা?”

এই চশমা পরিহিত লোকটির চোখে চোখ রাখে রূপাঞ্জনা। কটমট করে বলে ওঠে,
“যদি পারতাম তাহলে তোর চশমার পেছনে যেই ভয়া/বহ চিন্তা লুকায়িত সেটা সবাইকে দেখিয়ে দিতাম।”

ফাহমিদ রাগল না। বরং মজা পেল ভীষণ। হেঁসে উঠল শব্দ করে। হাসতেই থাকল। তার হাসির ভয়া/নক প্রতিধ্বনিতে কাঁপতে থাকল ঘরের দেয়াল।

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। পরবর্তী পর্বে চমক রয়েছে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here