গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব ১৫)

0
419

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৫ (২য় খণ্ড)

পরদিনও নোমান গিয়ে হসপিটালে উপস্থিত হলো। কিছুটা তাড়াহুড়োর মাঝেই উর্মিলার কেবিনে ভুলবশত অনুমতি না নিয়েই প্রবেশ করল সে। তখন উর্মিলা তবে নিজের অগোছালো চুলটা নার্সের হাতে বেঁধে নিচ্ছিল। এমন হুট করে এই মানবটির আগমনে সে চমকালেও আজ রে/গে গেল না। কেমন যেন ম্লান মুখে তাকাল। আশেপাশে তাকিয়ে উর্মিলার মাকে দেখতে না পেয়ে নোমান জিজ্ঞেস করল,
“আন্টি নেই কেন আজ?”

উর্মিলার ত্যাড়া উত্তর শোনা গেল এবার।
“কেন মাকে দিয়ে কী করবেন? আবার আমার বিয়েশাদি নিয়ে আলাপ করবেন?”

নোমান তার এমন বাঁকা জবাবে মোটেও রাগ করল না বা উত্তেজিত হলো না। বরং হেঁসে বলল,
“হ্যাঁ। উনার সঙ্গেই তো দেখা করতে এলাম। তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসার এত শখ নেই আমার।”

“তাহলে আমাদের বাড়িতে যান ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। দেখা করে আসুন গিয়ে। মা কিছু কাপড় আর ফ্রেশ হতে বাড়ি গিয়েছে।”

“অন্যকেউ নেই তোমার সাথে?”

উর্মিলার সুর এবার নরম হলো খানিকটা।
“খালামনি ছিল। তো উনার ছেলের স্কুল ছুটি দিয়েছে তাই নিতে গেল।”

নার্সটি চুল বেঁধে দিয়ে এবার তাদের কথার মাঝে বলল,
“ম্যাম, আপনার চুল বাঁধা শেষ। এখন কিন্তু হাঁটার প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি অন্য কেবিন থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি। আপনাকে হাঁটতে সাহায্য করব।”

কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র সারা শরীরে কাঁপুনি উঠল উর্মিলার। নার্স চলে যেতে না যেতেই সে হাত উঠিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে নোমানকে কাছে ডাকল। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে নিকটে এলো নোমান। ওমনি তার হাতের বাহু খপ করে ধরে বাচ্চাদের মতো আবদার করে বলল,
“শুনুন না! ওই নার্সটাকে বলে দিন আমি এখনি হাঁটব না। আমার পায়ে অনেক ব্য/থা।”

নোমান এবার কাছে থাকা টুলে বসল। মেয়েটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো একবার। আসলেই তার মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে সে খুব আ/তঙ্কে আছে। তার ভয় কমাতে আশ্বস্ত করে বলল,
“যেহেতু নার্স বলেছে সেহেতু নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। তোমার ভালোর জন্যই বলেছে। একটু হাঁটাহাঁটি তো করতেই হবে।”

“ওসব ভালোর আমার দরকার নেই আপনি জাস্ট বলে দিন আমাকে এখন হাঁটানোর দরকার নেই।”

নোমান এবার কিছুটা ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি কেন বলব?”

“আজব! আপনারই তো বলা উচিত। আপনার জন্য আমি ম্যানহোলে প/ড়ে গেলাম। আপনার তো এটা দায়িত্ব আমার ভালোমন্দের দিকে খেয়াল রাখা।”

নোমান তৎক্ষনাৎ সাফ জানিয়ে দেয়,
“পারব এসব বলতে আমি।”

উর্মিলার ভারি রা/গ হয়। দম ছেড়ে দিয়ে তেতে উঠে বলে,
“অকৃতজ্ঞ লোক একটা!”

কিছু সময়ের ব্যবধানে নার্স এসে উপস্থিত হলো। উর্মিলাকে হাঁটানোর জন্য জোরাজুরি করা শুরু হলো। উর্মিলাও হাঁটবে না বলে পণ করল। দুজনের কান্ড একজায়গায় বসেই ভাবলেশহীন হয়ে দেখতে থাকল। উর্মিলা মেয়েটা তো হাত-পা ছুঁ/ড়ে কাঁদতে বসে যাবে এমন ভাবসাব। গলাটা দুর্বল করেই ফেলেছে ইতিমধ্যে। অবশেষে নোমান নিজের জবান খুলল,
“ডক্টর তোমায় ডেইলি চেকআপ করে। চেকআপ করে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে তুমি হাঁটতে পারবে। কোনো সমস্যা হবেনা একবার ট্রাই করতে ক্ষ;তি কী?”

“প্রশ্নই আসেনা। আমি উঠে বসলেই পায়ে লাগছে। হাঁটতে গেলে ম/রেই যাব।”

এসব শুনে নার্স আরো কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেন তবে নোমান ইশারায় থামাল তাকে। নিজে উর্মিলার হাত ধরে বলল,
“আচ্ছা আমি তোমায় হেল্প করি?”

“না। আমি হাঁটব না।”

উর্মিলার স্পষ্ট নাকচ পছন্দ হলো না নোমানের। সে তবুও জোর করে বলল,
‘আরে বাবা! আমায় অনেক তো অবিশ্বাস করলে একবার বিশ্বাস করে দেখো। ঠকবে না।”

উর্মিলা তবুও মানল না। এবার নোমান অনেক ভাবনাচিন্তা করে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। তার এমন চলে যাওয়ায় বোকাবনে গেল উর্মিলা। তার এমন জে/দে কি রাগ করল লোকটি? এই ভাবনাকেও ভুল প্রমাণ করে নোমান কিছুক্ষণ পরেই ফিরে এলো। হাতে একটা ঔষধের পাতা দেখিয়ে বলল,
“নাও এটা খেলে হাঁটতে আর ব্যথা করবে না। ডক্টরের কাছ থেকে নিয়ে আসলাম।”

ভ্রু কুঁচকায় উর্মিলা এবার। চশমার কাছে নেমে আসে ভ্রুকুটি। যেন তার বিশ্বাস হয়নি। নার্স নিজেও হতভম্ব নোমানের এমন কথায়। এমন কোন ঔষধ আছে যেটা খেলে ব্যথা সাথে সাথেই গায়েব হবে? এতদিন নার্সিং পড়ে শিখলটা কী? ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল নোমানের দিকে। উর্মিলা সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“সত্যি?”

“খেয়েই দেখো একটা। তারপর হেঁটে দেখো যদি ব্য/থা না কমে তাহলে আমার নাম পাল্টে রেখো?”

অনেক ভেবে উর্মিলা এবার আশ্বস্ত হলো। এরই মাঝে ইশারায় কিছু কথোপকথন হলো নার্সের সঙ্গে নোমানের। নার্স ঔষধের পাতা দেখে বুঝল এটা শুধুমাত্র একটা ভিটামিন ট্যাবলেট ছাড়া কিছুই নয়। শুধুমাত্র মেয়েটাকে যেন হাঁটানো যায় সেকারণে এই পরিকল্পনা করেছে লোকটি। নার্সের বেশ ভালো লাগল বিষয়টা। উর্মিলা ঔষধ খেয়ে আস্তে করে নোমানের হাত টেনে ধরেই অল্প অল্প করে হাঁটল। হালকা ব্য/থা পেল অতঃপর সেই পায়ে চাপ কম দেওয়ায় তেমন সমস্যা হলো না। নোমান তাকে ধরে রেখে বলল,
“বলেছিলাম না? ব্য/থা করছে?”

উর্মিলা প্রফুল্লতার সাথে বলল,
“হালকা করছিল। ব্যাপার না এটা।”

“হুমম। যেমন মাচা তেমনই নাচা।”

নোমানের বিড়বিড়িয়ে বলা কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেল না উর্মিলা। তখনি বলল,
“কী বললেন?”

কথাটা নিজে ঘুরে বলতে গিয়ে পায়ে বেশি চাপ লেগে নিজেকে সামাল দিতে পারল না উর্মিলা। প/ড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে সে দ্রুত নোমানের বুকের শার্টের অংশ জড়িয়ে নিলো। অনুভব করা গেল মানুষটির ভেতরে থাকা সেই ধুকপুক সুন্দর এক আন্দোলিত আবৃত্তি। নোমান নরম সুরে বলল,
“বললাম যে আজ হয়ত আমাদের লাস্ট দেখা।”

পরক্ষণেই চোখমুখ অন্ধকার হলো উর্মিলার। তার বুকের হৃদস্পন্দনের গতিও তড়তড়িয়ে বেড়ে গেল অকারণেই। শুকনো গলায় শুধাল,
“মানে?”

“কাল বাড়ি থেকে কল এসেছিল। আমার ফুপিমণি মা/রা গিয়েছেন। আমাকে যেতে হবে। রাগিনীর মতো আমারও মা নেই। তাই উনি আমায় কোলেপিঠে করে মানুষ করলেন। সেই মানুষটাকে দেখতে হয়ত পাব না। তবে শেষকাজে অংশগ্রহণ করতে চাই আমি।”

“আর এই দেশে ফিরবেন না?”

নোমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“জানি না।”

উর্মিলার কিছুক্ষণ আগেই উৎফুল্ল হওয়া মনটা আস্তে আস্তে মিইয়ে গেল। ভারী হলো নিঃশ্বাস।

গত রাত থেকে বেশ কয়েকবার কোহিনূরকে কল করেছে রাগিনী। তার মাঝে একবারও কোহিনূর কলটা রিসিভ করেনি। সময়ে সময়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে নিজের। বিষয়গুলো রাগিনীকে এবার বেশ দুঃখ দিচ্ছে। অভিমান জমাচ্ছে। একবারও কি পুরো ব্যাপারটা শোনা উচিত ছিল না? এমন উটকো ব্যবহার রাগিনীকে এবার ক্লান্ত করল। সে জানে কোহিনূর নিজের জায়গা থেকে ঠিক। তবে রাগিনীও মন্তব্যও তার শোনা উচিত! কিন্তু এই মানুষটা আগে থেকে এতোটা ঘাড়ত্যা/ড়া সেটা জানা ছিল না রাগিনীর। দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে ফের কল লাগাল রাগিনী। ফলাফল শূন্য। তবে দুই-তিন বার কল করাতে অবশেষে যেন প্রতীক্ষার শেষ হলো। কল রিসিভ হতেই দ্রুত রাগিনী বলে উঠল,
“কী সমস্যা আপনার? কাল রাত থেকে কল করে যাচ্ছি। খেয়াল আছে?”

“একচুয়ালি ম্যাম! আমি মেহরাজ।”

পরপর তিনটে ভাঁজ পড়ে রাগিনীর চুলে ঢাকা কপালে। এমনি মনমেজাজ ঠিক নেই। তার ওপর কোহিনূরের ফোনে মেহরাজের গলা। বিরক্ত হলো রাগিনী।
“আপনি কেন? আপনার স্যার কোথায়?”

“স…স্যার তো বিজি।”

রাগিনীর বুঝতে বাকি রইল না কোহিনূর মেহরাজের আশেপাশেই আছে। জোর গলায় বলল,
“ওই লোকটা আপনার পাশেই আছে বুঝতেই পারছি আমি। এখনি ফোনটা উনাকে দিন নয়ত আমি নিজে সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই ফা/জিল লোকটাকে তো দুটো চ/ড় ক/ষিয়ে দেবই তার সঙ্গে আপনাকেও…”

পুরো কথাটা শোনার সাধ্য হলো না ফোনের ওপাশে থাকা মেহরাজের। তড়িঘড়ি করে কোহিনূর হাতে ফোন ধরিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“অন্যের বউয়ের হাতে চ/ড়-থা/প্পড় খাওয়ার শখ নেই স্যার। আপনিই খান। আমি বরং কাজে যাই।”

কোহিনূর চোখ গরম করে তাকিয়েও কাজের কাজ হলো না। মেহরাজ চলে গেল। অগত্যা ফোনটা কানে কাছে ধরল কোহিনূর। রসকষহীন কাঠখোট্টা গলায় জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে? ফোন করেছ কেন?”

“কী হয়েছে মানেটা কী? আমি কি আপনাকে কারণ ছাড়া কল করতে পারিনা?”

কোহিনূর আগের প্রতাপ নিয়েই জবাবে বলে ওঠে,
“কাজের সময় আমি ডিস্টার্ব করা পছন্দ করিনা রাগিনী। সেখানে তুমি একের পর এক কল করেই চলেছ।”

রাগিনীর কণ্ঠে এবার অভিমানের আভাস পাওয়া গেল,
“এখন আমি আপনার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি? কাল রাত থেকে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তখনও কি কাজ ছিল?”

“এসব উল্টাপাল্টা কথা না বলে কী রিজনে কল করেছ সেটা বলো।”

রাগিনী বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল কিছুটা। কোহিনূরের সঙ্গে সে নিজেও চ/টে গেলে বিষয়টা আরো বিগড়ে যাবে। শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
“আপনি আমায় ভুল বুঝছেন কোহিনূর। আমি আপনাকে কাল রূপার কথা জানাতে চেয়েছিলাম। অভিরূপ অনুরোধ করলেন। উনি নিজে বলেছেন রূপার সাথে পারসোনালি কথা বলে নিজে পু/লিশের হাতে তুলে দেবে। আমার তখন কিছু করার ছিল না!”

কোহিনূর কিঞ্চিৎ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
“রূপা কে?”

“ওই আমার মতো দেখতে যেই মেয়েটা।”

এবার ওই বিষয়টা আসতেই রা/গটা আরো বাড়ল কোহিনূরের। তবুও রা/গ না দেখনোর চেষ্টায় বলল,
“ওইসব কথা বাদ দাও। আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাইনা। এসব শোনাতে কল করে থাকলে এখনি কল কাটো। আমার রা/গটা দেখলে তোমার নিজেরই ক/ষ্ট হবে।”

“এটা এক্সকিউজ নয় কোহিনূর। বোঝার চেষ্টা করুন।”

“লজিকলেস লজিক দিলে কী বুঝব আমি? আমাদের কাছে অপ/রাধীকে ধরাটা প্রয়োজন। সেখানে সেই অপ/রাধীকে নিয়ে তোমরা আবেগে ভেসে যাচ্ছো এবং পুরো বিষয়টা আমাদের থেকে লুকিয়েছ।”

রাগিনী চোয়াল শক্ত করে বলল,
“আবেগ কখন কার ওপর কাজ করে সেটা কি কেউ লিখে দিতে পারে? আপনি নিজেও তো আমাকে প্রথমে ক্রি/মি/নাল ভেবেছিলেন। আবার পুরো নিশ্চিত না হয়েই আমাকে ভালোবেসেছিলেন। তাহলে অন্যদের বেলায় ভিন্ন কেন?”

কল কেটে গেল এবার। রাগিনী শুনতে পেল না কোহিনূরের জবাব। এভাবে হঠাৎ কল কেটে দেওয়ায় হতাশ হলো রাগিনী। মনে জমল ধূসর রঙের সেই অভিমানের স্তর। লোকটা কেন যে বুঝতে চাইছে না! আর রূপাঞ্জনাই বা কোথায়? গতকাল থেকে তার বাবাও ভয়ে, রাগিনীর উপর রে;গে বেশ অসুস্থ হয়েছেন। ডক্টর ঘুমের ঔষধ দিয়ে রেখেছেন বর্তমানে। মূহুর্তেই সব এলোমেলো হলো। রাগিনীর চোখের কোণে পানি জমল। সেই ছলছল দৃষ্টিতে বিছানার কাছের জানালার কাছে বসে বাহিরের আকাশের দিকে নিবদ্ধ করল দুটো চোখ। অনুভব করল রিও এসে গুটিশুটি হয়ে তার কাছে বসেছে। তার দিকে না তাকিয়ে একহাতে তার গায়ে হাত রাখল। অন্যহাত দিয়ে চোখের পানিটা গাল বেয়ে পড়ার আগেই মুছে নিলো তাড়াতাড়ি।

বিকেল হতে না হতেই নয়নতাঁরা বাঙালীয়ানার সাজে রায়ানের বাড়িতে পদার্পণ করল। আজ নীল রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে সে। হাতে নীল-সাদা রেশমি চুড়ি ঝনঝন করছে। বাঙালী মেয়েদের মতোই হালকা করে সেজেছে। তবে যেটা তার মনমতো হয়নি সেটা হচ্ছে চুল। বাঙালী নারীদের ন্যায় বড়ো বড়ো কোমর অবধি ঘন কেশ নেই তার। চুলগুলো শুধু কাঁধ ছেড়ে একটু বেড়েছে। তাও কোঁকড়ানো! কী জানি তাকে কেমন লাগছে! রায়ানের বাড়ির দরজায় কলিংবেলে চাপ দেওয়ার আগেই তার মনে হলো রায়ান তাকে জোকার ভেবে হাসাহাসি করবে না তো? অনেক ভাবনাচিন্তা করার পর সে সাহস নিয়ে কলিংবেল চাপে। কিছুক্ষণ পরই দরজা খোলে রায়ান। আজ তার ছুটিই ছিল। গতকাল সে শিশু পা/চারকারীদের ধরেছিল। তার ওপর জন্মদিন আজ তার। ফলে ছুটি উপভোগ করছে বাড়িতে ঘুমিয়েই। হঠাৎ নয়নের আগমনে বেশ চমকালো সে। তার উপর এমন সাজগোজে রায়ানের মস্তিষ্ক ফাঁকা হতে শুরু করল। কোথাও একটা মুগ্ধতা লেগেই গেল! অতঃপর চোখটা সরিয়ে নিজের মনকে বলল, ‘ছি রায়ান! ওকে তুই আন্ডাবাচ্চা থাকতে জামা ছাড়া ঘুরতেও দেখেছিস। তার দিকে এভাবে দেখিস না।’

নিজেকে ধাতস্থ করে রায়ান বলল,
“মিস. নয়নতাঁরা? তুমি?”

“হ্যাপি বার্থডে ইন্সপেক্টর!”

“থ্যাংক ইউ। বাট…”

রায়ানকে নয়ন থামিয়ে বলল,
“কিন্তু টিন্তু কিছু না। আমি এসেছি প্ল্যান সাকসেসফুল করতে।”

রায়ান কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“মানে কীসের প্ল্যান?”

“উফফ…আপনি না বললেন আমার বিগ ব্রাদারকে আপনার জন্মদিনে উপস্থিত করলে খুশি হবেন সেটা!”

রায়ান আশেপাশে তাকাল। নির্জনকে দেখতে পেল না। কনফিউজড হয়ে বলল,
“কই সে? আসেনি তো।”

“ওহ হো! আমি বলেছি সে এখনি আসবে? তার আসার তো ব্যবস্থা করতে হবে নাকি?”

নয়নের প্রতিটা কথা যেন রায়ানের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সে প্রথমে সরে গিয়ে নয়নকে বাড়ি ঢুকতে দেয়। নয়নতাঁরাও স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়িতে প্রবেশ করে বলে,
“দেখুন, এমনিতে তো বিগ ব্রাদার আসবে না! এরজন্য পরিকল্পনা করতে হবে। বাড়ি সাজাতে হবে। বার্থডে পার্টির আয়োজন করতে হবে। তারপর তাকে ডাকতে হবে।”

রায়ান তবুও বুঝল না। বলল,
“করলেই যে সে আসবে সেটার নিশ্চয়তা কী?”

“আপনি ওতোসতো বুঝবেন না। এখন আমাকে আপনার এই পুরো ড্রয়িংরুম সাজাতে হেল্প করুন।”

এবার মাথা ঘুরছে রায়ানের। মেয়ের কী আশ্চর্য কথাবার্তা! নিজের জন্মদিনে নিজেই অবশেষে ঘর সাজাবে?

অনেকক্ষণ হলো। নয়নতাঁরা কাজে ব্যস্ত। ড্রয়িংরুমের অনেকটা সাজিয়ে ফেলেছে সে। রায়ান নিজের ঘরে গিয়েছে কিছু কাজে। ব্যস্ততার মাঝে কলিংবেলটা বাজে। নয়নতাঁরা প্রথমে খানিকটা অসহ্য হলেও পরবর্তীতে ভাবে হয়ত কেক ডেলিভারি করতে এসেছে। সে কেকও অর্ডার দিয়ে রেখেছিল। এই ভেবে সব কাজ ফেলে সে দরজার কাছে এগোয়। আপনমনে দরজা খুলতেই বাহিরে আবিষ্কৃত হয় এক বয়স্ক মহিলা। হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ। নয়ন মহিলাটিকে চিনতে পারল না।

রায়ানের মা বেশ কয়দিন ধরেই ভালো আছেন। ছেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশে আসার তোড়জোড় করছিলেন ছেলেকে না জানিয়েই। ভেবেছিলেন জন্মদিনের দিন বাড়িতে ফিরে একটা চমক দেবেন আদরের ছেলেকে। কিন্তু উনি নিজের বাড়িতে এমন সুন্দরী একটা যুবতী মেয়েকে দেখে নিজেই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মুখে আসছে না কোনো কথা? তবে ছেলেটা কি না বলে কয়ে বিয়ে টিয়ে করে ফেলল? তিনি বারবার নয়নকে পরখ করলেন। পোশাকআশাক দেখে বুঝলেন মেয়েটি ভালো ঘরের। তখন আরো নিশ্চিত হলেন ছেলে নিশ্চয় বিয়ে করেছেন। দ্রুত নয়নকে ঠেলে হাহুতাশ করতে করতে কিছুটা জোরে জোরে বললেন,
“এই দিনটাই দেখা বাকি ছিল! ছেলেটা আমাকে পর করে দিয়েছে। আমায় না জানিয়ে বিয়ে করে বাড়িতে মেয়ে এনে তুলেছে। আমি এসব দেখার জন্যই বেঁচে ছিলাম?”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here