গোধূলির রাঙা আলোয় পর্বঃ ০৯

0
240

#গোধূলির_রাঙা_আলোয়
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-০৯

সকালে ঘুম ভেঙে নিজেকে বেলকনিতে আবিষ্কার করলো উৎসা। এখানে বসে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতেই পারেনি। রুমে গিয়ে তামান্নাকে ডেকে তুললো। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। গতকালের মন খারাপের রেশ এখনো কাটেনি উৎসার।

তামান্না উৎসার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেনো ?

উৎসা জোরপূর্বক হেসে বললো, কই কিছু না।

তামান্না বুঝলো উৎসা তাকে কিছু বলতে চাইছে না তাই সেও আর ঘাটালো না। ভার্সিটি পৌঁছে সোজা ক্লাসে চলে গেলো।

এদিকে পুরোটা সময় অস্থিরতায় কাটলো শুদ্ধর। ইচ্ছে করছে উড়ে ঢাকায় চলে যেতে। সকালে তুরাগ সূর্যদয় দেখাতে নিয়ে গেলেও মন থেকে কিছু উপভোগ করতে পারেনি শুদ্ধ। আজ সবাই ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে। মুদ্ধ আর তিয়াসাকে কক্সাবাজার পাঠানোর প্ল্যান ছিলো শুদ্ধর। দুজনের কিছুটা সময় দরকার, সেটা ভেবেই প্ল্যান করেছিলো শুদ্ধ। কক্সাবাজারে তাদের জন্য রুম বুক করাও হয়ে গেছে। শুদ্ধ মুগ্ধকে গাড়ির চাবি দিয়ে দিলো কক্সবাজার যাওয়ার জন্য। শুদ্ধ তুরাগের গ্রুপের সাথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সারা রাস্তা শুদ্ধর হাসফাস করেই কাটতে লাগলো।

শুদ্ধ হঠাৎই নিজের উপর বিরক্ত হয়ে উঠলো আর বললো, ছি শুদ্ধ তুই নিতান্তই একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিস। মেয়েটা তোর থেকে কম হলেও প্রায় ১২ বছরের ছোট। তাই মেয়েটার জন্য এতো অস্থিরতা তোকে মানায় না।

শুদ্ধ নিজেকে হাজারটা বাহানা দিয়েও বুঝিয়ে উঠতে পারছে না। এসব বলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও পরক্ষণে মন হচ্ছে মেয়েটা এভাবে কেনো কাঁদছিলো। খুব বেশি কষ্ট হচ্ছিলো বলেই তো এভাবে কাঁদছিলো। একজন মানুষ হিসাবে আমার উচিত তার খোঁজ নেওয়া।

নিজের আত্মার সাথে যুদ্ধ করে একসময় পরাজিত হয়ে গেলো শুদ্ধ। দু’হাতে নিজের মাথার চুল আঁকড়ে ধরলো।

তুরাগ শুদ্ধকে খেয়াল করে বললো, কী হয়েছে তোর, মাথা ব্যাথা করছে ?

তুরাগ শুদ্ধর পাশের সীটে বসেছে। শুদ্ধ নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো, না কিছু হয়নি।

তুরাগ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, সকাল থেকেই তোকে অনেক চিন্তিত লাগছে আর তুই বলছিস কিছু হয়নি। চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুমাতেও পারিসনি হয়তো।

শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বললো, আমার কী হয়েছে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না ইয়ার।

তুরাগ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো, কী রে লাভ ম্যাটার মনে হচ্ছে ?

শুদ্ধ চকিত নজরে তাকালো তুরাগের দিকে। তুরাগের কথা মস্তিষ্কে আঘাত করতে লাগলো বারবার। না না এটা কী করে হতে পারে ? সে কী করে এমন একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরতে পারে ?

শুদ্ধ ভয়ার্ত গলায় বললো, কী আবোল তাবোল বকছিস ?

তুরাগ মুচকি হেসে বললো, তুই যে অস্থিরতা অনুভব করছিস, সেই অস্থিরতায় আমি ভুগছি আজ দু’বছর ধরে। ভালোবাসার মানুষের জন্য ছটফট করা কাকে বলে সেটা আমার থেকে কেউ ভালো বলতে পারবে না।

শুদ্ধ রেগে বললো, একদম বাজে কথা বলবি না। আমি এটা কখনো করতে পারি না। মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না।

তুরাগ বললো, ভালোবাসতে কয়েক দিনের প্রয়োজন হয় না। কখনো কখনো কয়েক সেকেন্ডে ভালোবাসা হয়ে যায়। একটা কথা কী জানিস শুদ্ধ ? এমন অনেক উদাহরণ আছে দশ বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি আবার দশ দিনের ভালোবাসা বিয়ে পর্যন্ত গেছে। কাউকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলেও ভালোবাসতে পারেনি আবার কোনোদিন মুখে না বলেও অসম্ভব ভালোবেসে গেছে। ভালোবাসা অনুভূতিটা অদ্ভুত, একটা দমকা হাওয়ার মতো আমাদের জীবনে আছে, সব এলোমেলো করে দেয়। সেটা কারো জীবনে আসে সারাজীবন কাছে থাকার জন্য আবার কারো জীবনে আসে ক্ষণিকের মধুর স্মৃতি হতে, গোধূলির রাঙা আলোর মতোই।

শুদ্ধ কিছুতেই মানতে রাজি নয় সে তার থেকে এতো ছোট বয়সের একটা মেয়েকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তার জন্য ভাবতে শুরু করেছে।

শুদ্ধ আমতা আমতা করে বললো, না না এটা ভালোবাসা হতে পারে না। বেশ কিছুদিন হলো আমাদের সাথে আছে তাই হয়তো চিন্তা হচ্ছে।

তুরাগ শুদ্ধর কাঁধে হাত রেখে বললো, জানি না তুই কার কথা বলছিস। তবে এটুকু বলবো কখনো সময় পেলে তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত কল্পনা করিস। নিজেই বুঝতে পারবি সে তোর ভালোবাসা নাকি ক্ষণিকের মায়া।

শুদ্ধ আর কিছু বললো না, চোখ বন্ধ করে সীটে মাথা এলিয়ে দিলো। শীতের দিনের রেশ এখনো পুরোপুরি যায়নি, খোলা জানলা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস এসে মুখে আছড়ে পড়ছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো উৎসার মুচকি হাসি লেগে থাকা সেই মুখখানা। উৎসার মুখটা চোখের সামনে ভাসতেই শুদ্ধর ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠলো। তবে পরক্ষণেই মনে পরে গেলো গতরাতে উৎসার অসহায়ের মতো কান্না করা। ফট করে চোখ খোলে ফেললো শুদ্ধ আবার অস্থিরতা ঘিরে ধরলো তাকে। কী হয়েছে মেয়েটার না জানা পর্যন্ত হয়তো এক সেকেন্ডের জন্য শান্তি পাবে না সে।

১৩.
ভার্সিটি থেকে এসে ব্যাগটা বেডে ছুঁড়ে ফেলে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো উৎসা।

তামান্না পেছন থেকে বললো, এখনই শাওয়ার নিবি ? একটু রেস্ট নিয়ে তারপর যেতে পারতি।

উৎসা একহাতে মাথা চেপে ধরে বললো, মাথা ব্যাথায় মাথা ফেটে যাবে মনে হচ্ছে। এখনই শাওয়ার না নিলে আমি মারা যাবো।

তামান্না চিন্তিত গলায় বললো, তোর মাথা ব্যাথার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে উৎসা। তোর উচিত একজন ডক্টর দেখানো।

উৎসা বিরক্ত গলায় বললো, সামান্য মাথা ব্যাথার জন্য আমি হসপিটালে যাবো ডক্টর দেখাতে, ইম্পসিবল। শাওয়ার নিয়ে খাবার খাবো একটা মেডিসিন খেয়ে লম্বা ঘুম দিবো। মাথা ব্যাথা এমনই হাওয়া হয়ে যাবে।

তামান্না বললো, কোনো কিছু এতো হেলাফেলা করতে নেই উৎসা। সমস্যা ছোট থাকতে তার সমাধান করতে হয়, পরে বড় হয়ে গেলে কিছু করার থাকে না।

উৎসা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, নিজের জীবনের ছোট ছোট সমস্যা গুলোকে প্রাধান্য দিতাম যদি আমি কারো জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতাম। বিশ্বাস কর তামান্না আমার এই সামান্য কষ্ট কেনো, আমি যদি মরেও যাই তুই আর ফুপি ছাড়া দুফোঁটা চোখের পানি ফেলার কেউ নেই আমার। আমার না আছে কোনো পিছুটান আর না আছে জীবনের মূল্য।

তামান্না রেগে বললো, একদম বাজে কথা বলবি না উৎসা।

উৎসা তামান্নার দিকে টলমলে চোখে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। ঝর্ণা ছেড়ে ফ্লোরে বসে নিঃশব্দে নোনাজলের বিসর্জন দিলো অনেকটা সময় নিয়ে। কান্না করায় মাথা ব্যাথা আরো বাড়তে লাগলো। উৎসা উঠে দাঁড়ালো আর চোখ বন্ধ করে নিলো।

আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি কাঁদছি কেনো ? আমি তো নিজের কাছে ওয়াদা করেছিলাম যতদিন বাঁচবো হাসিমুখে বাঁচবো। হাজার কষ্ট দিয়েও কেউ আমার মুখের হাসি কেড়ে নিতে পারবে না।

শাওয়ার শেষে চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো উৎসা। তামান্নার উদ্দেশ্যে বললো, যা শাওয়ার নিয়ে আয়।

উৎসা ভেজা কাপড় নিয়ে ছাঁদে চলে গেলো শুকিয়ে দিতে আর তামান্না ওয়াশরুমে। কাপড় মেলে দিয়ে রেলিং ধরে ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাড়ালো। ব্যস্ত ঢাকা শহর দেখলো কিছুটা সময়।

তামান্নাও শাওয়ার নিয়ে ছাঁদে এসে কাপড় মেলে দিতে দিতে বললো, মাথা ব্যাথা করছে আবার রোদে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ?

উৎসা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তামান্নাও গিয়ে উৎসার পাশে দাঁড়ালো।

উৎসা হঠাৎ বললো, তামান্না আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি পড়াশোনাটা কমপ্লিট করতে পারবো না। এই শহরের ভদ্র মানুষদের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর রুপ মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবো না। সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না আমার।

তামান্না চিন্তিত গলায় বললো, হঠাৎ এসব কেনো বলছিস তুই ?,

উৎসা বললো, জানি না কেনো মনে হলো। আঠারো বছরের জীবনে কোনোদিন আমার কোনো ইচ্ছা পূরণ হয়নি। এবার হবে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।

তামান্না উৎসার কাঁধে হাত রেখে বললো, কেনো এমন ভাবছিস তুই ? তোর স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।

উৎসা মুচকি হেসে বললো, আমার কী মনে হয় জানিস ?

তামান্না বললো, কী ?

এই পৃথিবীতে আমি যতদিন নিশ্বাস নিবো, ততদিনই আমাকে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়তে হবে। ভালোবাসা জিনিসটা আমি বেঁচে থাকতে কোনোদিন পাবো না। যেদিন আমাকে কেউ প্রচন্ত ভালোবাসবে সেদিন আর আমার নিশ্বাস পৃথিবীর বাতাসে মিশবে না।

তামান্না হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো উৎসাকে আর বললো, আমি তো তোকে ভালোবাসি।

উৎসা হাত উল্টে তামান্নার মাথায় হাত রেখে বললো, সেই ভালোবাসটুকু আমাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। তোর ভালোবাসটুকু না পেলো পৃথিবীর সবচেয়ে তুচ্ছ ব্যক্তি মনে হতো নিজেকে।

তামান্না হঠাৎ বললো, তুই না বলেছিলি যতদিন বাঁচবি হাসিমুখে বাঁচবি।

উৎসা কষ্টমিশ্রিত গলায় বললো, মনের ভেতরের ক্ষতগুলো শীতের ঝরা শুকনো পাতার মতো মিথ্যা হাসি দিয়ে লুকিয়ে রাখি সবসময় কিন্তু একটু বাতাসেই শুকনো পাতার মতো হাসিটা সরে যায় আর বের হয়ে আসে রক্তাক্ত তাজা ক্ষত।

তামান্না বুঝতে পারলো বাবা কিংবা মায়ের সাথে উৎসার আবার কিছু হয়েছে। উৎসা নিজের কষ্টগুলো প্রকাশ করে অন্যের কাছে নিজেকে দূর্বল প্রমান করতে চায় না তাই মুখে কিছু বলে না। তামান্নার কাছে তবু হেরে যায় মাঝে মাঝে। তবে তামান্না আজ আর জোর করলো না কী হয়েছে জানার জন্য।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তোর না মাথা ব্যাথা করছে, চল খেয়ে ঘুমাবি। রোদে দাঁড়িয়ে থেকে চুলও শুকিয়ে গেছে।

উৎসা আর কিছু বললো না তামান্নার সাথে নিচে চলে গেলো। খাবার খেয়ে রুমে এলে তামান্না মেডিসিন বের করে হাতে দিলো আর উৎসাও বিনাবাক্য ব্যয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লো। তামান্না রুমের পর্দাগুলো মেলে দিলো রুম অনেকটা অন্ধকার হয়ে গেলে নিজেও শুয়ে পড়লো উৎসার পাশে।

উৎসার ঘুম ভাঙলো বিকেল পাঁচটার দিকে। রুমে তামান্নাকে না দেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো, ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আছরের নামাজ পড়ে নিলো আর যুহরের নামাজ কাযা আদায় করে নিলো। নামাজ শেষে নিচে গিয়ে দেখলো তামান্না আর আনোয়ারা বেগম কিচেনে রাতের রান্নার ব্যবস্থা করছে। উৎসাও হাতে হাতে সাহায্য করে দিতে লাগলো।

উৎসা হঠাৎ বললো, আন্টি এবার তো সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে আমরা হোস্টেলে উঠে যাই।

আনোয়ারা বেগম কাজ থামিয়ে ঘুরে তাকালো উৎসার দিকে, কেনো মা তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে এখানে ?

উৎসা অস্থির হয়ে বললো, না না আন্টি কী বলেন। কখনো মনেই হয়নি আমি এই পরিবারের কেউ নই। মাত্র কয়েকটা দিনে আপন হয়ে গেছেন আপনারা।

আনোয়ারা বেগম আবার কাজে মনোযোগ দিয়ে বললো, আমি তো ভাবছি তোমাদের এখানেই রাখবো। হোস্টেল যেতে হবে না আর। তামান্নার পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা ছিলো পরে ভেবে দেখলাম এখানে থাকলেই আমি তাও চোখে চোখে রাখতে পারবো, বরং হোস্টেলে গেলেই নিজের ইচ্ছে মতো চলবে। ওর মায়ের সাথেও আমার কথা হয়েছে এই নিয়ে।

তামান্না গোলগাল চোখে তাকালো নিজের খালামুনির দিকে, তবে কিছু বললো না। উৎসা মুখটা মলিন হয়ে গেল কারণ সে তামান্নাকে ছাড়া থাকতে পারবে না এই অচেনা শহরে। তামান্না এখানে থাকলে সে একা কীভাবে থাকবে হোস্টেলে ?

উৎসা মলিন গলায় বললো, তামান্না এখানে থাকলে আমি বরং তাহলে কাল চলে যাই হোস্টেলে।

কেউ কিছু বলার আগেই তামান্না চেঁচিয়ে বললো, আমি উৎসাকে ছাড়া থাকবো না।

উৎসা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তামান্নার দিকে আর আনোয়ারা বেগম ভ্রু কুঁচকে।

তোমাকে কে বললো উৎসাকে ছেড়ে থাকতে ? উৎসাও তোমার সাথে এই বাড়িতেই থাকবে।

তামান্না আর উৎসা অবাক চোখে তাকালো আনোয়ারা বেগমের দিকে।

১৪.
গায়ে পাতলা চাদর মুড়িয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। একবার তাকালো শুদ্ধর বেলকনির দিকে। বেলকনির সাথে রুমটাও অন্ধকারে ডুবে আছে, উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ঘড়িতে রাত প্রায় এগারোটা তখন, একটা সিএনজি গেইটের সামনে এসে থামলো। সাদা শার্ট পরা একজন নামতেই উৎসার ঠোঁটের কোণে দাঁড়িয়ে ফোটে উঠলো, তখনই সেও ফিরে তাকালো উৎসার বেলকনির দিকে। উৎসা বেলকনি থেকে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো। সে যেতেই কলিংবেলটা বেজে উঠলে দরজা খোলে দিলো।

শুদ্ধ ভেতরে ঢুকেই হাতের ব্যাগ নিচে ফেলে এগিয়ে গেলো উৎসার দিকে। হাত বাড়িয়ে ধরতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নিয়ে অস্থির গলায় বললো, কী হয়েছে তোমার ? ওভাবে কাঁদছিলে কেনো গতরাতে ? তোমার ফোন বন্ধ কেনো ?

উৎসা অবাক হয়ে তাকালো শুদ্ধর দিকে। গতরাতে ফোন বন্ধ করার পর সেটার কথা আর মনেই নেই তার। উৎসাকে খোঁজার মতো কেউ নেই তাই ফোনটার কথাও মাঝে মাঝে ভুলে যায় সে। উৎসা ভালো করে তাকালো শুদ্ধর দিকে। চোখ দুটো লাল টকটকে দেখা যাচ্ছে, তাকেও কেমন এলোমেলো লাগছে। এই কয়েকদিনে উৎসা কখনো তাকে এমন উসকোখুসকো দেখেনি, সবসময় টিপটাপ থাকে শুদ্ধ।

উৎসা বললো, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো ডাক্তার সাহেব ?

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here