গুছিয়ে রাখা আবেগ শেষ পর্ব

0
1038

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#অন্তিম_পর্ব
#আজরিনা_জ্যামি

আরুহির কথায় আরহাম আর ওর মা ছাড়া সকলে অবাক। ওরা কিভাবে জানতে পারলো। আনোয়ার খান অবাক হয়েই বললো,,,

“মানে ? তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো?”

“আপনি অস্বীকার করতে পারবেন আব্দুল লতিফ আপনার পালিত ছেলে নয়।”

এ কথা শুনে পরিবেশ টা যেন আরো থম মেরে গেল। আনোয়ার খান অস্ফুট স্বরে বলল,

” হ্যা আব্দুল আমার পালিত ছেলে কিন্তু তুমি এ কথা জানলে কিভাবে?”

“বারে যেই জিনিসটা আমাদের জীবনকে অন্ধকার এর দিকে ঠেলে দিয়েছে সেই সম্পর্কে জানবো না।”

‘মানে?”

“মানে হলো এই আপনার এই পালিত ছেলে আপনাদের কোনদিন পরিবার হিসেবে গ্ৰহনই করতে পারে নি। এই মানুষ টা দিনের পর দিন আপনাদের ভুল বুঝিয়ে গেছে। আপনার কাছে একজন আদর্শ সন্তান ও বাবার কাছে একজন আদর্শ ভাইয়ের মতো থেকেছে। এবং সুযোগ বুঝে তাদের পেছনেই ছোবল মেরেছে। এই যে আব্দুল লতিফ কে দেখছেন এটা ওনার ভালো মানুষের মুখোশ। সত্যি টা হলো এই আপনার এই ছেলে আমার বাবার হত্যাকারী অসুস্থ থাকাকালীন আর কারো সাথে সম্পর্ক না থাকলেও উনি বাবার সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন। উনি বাবার ওষুধের সাথে ভুলভাল ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন তার ফলে উনি সেরে ওঠার বদলে আরো বেশি অসুস্থ হন একটা সময় মারাই যান। আমার বাবার মৃত্যুর জন্য এই মানুষ টা দায়ী। হ্যা এই মানুষ টা।

এ কথা শুনে আনোয়ার গিন্নি কাঁদতে থাকে। আনোয়ার খান ওখানে ধপ করে সোফায় বসে পরে কারো বিশ্বাস হচ্ছে না ওনার মতো মানুষ এরকম কিছু করতে পারে। বাড়ির সকলে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আসলে কাকে বিশ্বাস করবে। তখন আব্দুল লতিফ বলল,,

“এসব কিছুই মিথ্যা আমাদের বাড়িতে তোমাদের কোন জায়গা নেই দেখে আমার সাথে এরকম করে তোমরা এ বাড়িতে ঢুকতে চাইছো । এটা আমি হতে দেব না। এখনি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।”

“আমরা কোথাও ঢুকতে চাইছি না। আমরা শুধু সত্য জানাতে এসেছি।”

“তোমরা সত্য না মিথ্যা বলছো।”

“ওহ তাই নাকি আমরা সত্য বলছি নাকি মিথ্যা এটা আরেকটু পরেই টের পাবেন।”

তখন আনোয়ার গিন্নি বলল,,

“তুমি কি বলছো আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। এমনকি রেহানা কিভাবে বেঁচে ফিরলো আর ফিরলো তো আমাদের জানালো না কেন ও বেঁচে আছে। এমনকি আমি যতদূর জানি তোমাদের বাবার মৃত্যুর সময়ও রেহানা তোমাদের সাথে ছিল না।”

“সব বলছি তার আগে আমার শ্রদ্ধেয় ফুপু আঁখি খান কে বলি একটু আগে কি বলছিলেন আমার মায়ের ওপর গজব পরেছিল বলেই সে এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছিল। কিন্তু সত্যিই তো এটাই আল্লাহর রহমত আমার মায়ের ওপর ছিল তার জন্য আমার মা এত কষ্টের পরও আমাদের সাথে রয়েছে। সেদিন মায়ের এক্সিডেন্ট ঠিকই হয়েছিল কিন্তু সে মারা যায় নি। তাকে নাহিয়ান খান পেয়েছিলেন সেই এক্সিডেন্ট এ মা তার সমস্ত স্মৃতি হারায় এবং কিছুদিন আগে ফিরে আসে। এবং আমরা কাছাকাছি ছিলাম বলে মা আমাদের সব সত্য জানিয়ে দেন। তারপরেই আমরা মায়ের সত্যি টা জানতে পারি।”

এ কথা শুনে আব্দুল লতিফ আরো ঘাবড়ে যান এবার তো কিছু একটা করতেই হবে না হলে ওকে মারা পরতে হবে‌। আনোয়ার খান আব্দুল লতিফ এর সামনে গিয়ে বলল,,

“আরুহি যা বলছে সব সত্যি তুমি রেহানা কে কিডন্যাপ করে রেখেছিলে? মাহমুদ এর মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী। ”

“বাবা আমি এরকম কিছুই করি নি‌। তুমি তো জানো আমি মাহমুদ কে কতটা ভালোবাসি। ওর সব কাজে আমি ওর পাশে ছিলাম এমন কি ও যখন সবার বিরুদ্ধে গিয়ে রেহানাকে বিয়ে করে তখনও আমি ওর পাশে ছিলাম এখন তোমরাই বলো আমি কি সেরকম কিছু করতে পারি।”

তখন আরহাম বলল,,

“ভালো মানুষ এর অভিনয় কেউ আপনার থেকে শিখুক। আপনি চাইলে কি করতে পারেন সেটা এ বাড়ির কারো ধারনাতেও নেই।

“তোমরা যে আমার নামে এতকিছু বলছো তোমাদের প্রমান কোথায়?’

“এই তো লাইনে এসেছেন আরু ওনাকে একটু প্রমান দেখাও তো বেচারা নিজের রিয়েল লুক দেখার জন্য হাঁসফাঁস করছে।”

আরুহি নিজের ফোনটা নিয়ে সবাইকে ভিডিও ক্লিপ টা দেখালো। এতক্ষন তাও সবাই একটু দ্বিধায় ছিল এখন সবার কাছে সব ক্লিয়ার। এটা দেখে আনোয়ার গিন্নি আরো ভেঙে পরলেন। সবার চোখেই পানি এবাড়ির ছেলে হিসেবে মাহমুদ খান কে সবাই একটু বেশিই ভালো বাসতো। আহমদ খান বাবার কাছে গেলেন রেহানা খান শাশুড়ির কাছে যেতে গিয়েও গেলেন না। আনোয়ার খান উঠে আব্দুল লতিফ কে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,,

“কেন করলে এরকম আমরা তো তোমাকে নিজের ছেলে হিসেবে দেখতাম। তাহলে কিসের এত রাগ তোমার মাহমুদ এর ওপর। কি ক্ষতি করেছিল মাহমুদ তার জন্য ওর জীবন এরকম অন্ধকার এ তলিয়ে দিলে।”

আব্দুল লতিফ মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।তখন আনোয়ার খান আবারো বলল,,

“কি হলো চুপ করে আছো কেন? জবাব দাও!”

তখন আরহাম বলল,,

“এর জন্য আপনারা দায়ী নন কি আপনাদের একপাক্ষিক ভালোবাসার জন্য আজ আমাদের পরিবারের এই অবস্থা। যখন এই মানুষ টার দরকার ছিল তখন আপনারা ঠিকই এই মানুষটাকে ভালোবেসেছেন কিন্তু যখন দরকার ফুরিয়ে গেছে তখনি আপনারা তাকে অবহেলা করেছেন। এই জন্যই এই মানুষ টা আজ এরকম।”

“মানে কি বলতে চাইছো তোমরা?”

“মানে আপনি আর আপনার স্ত্রী স্বার্থপর।”

“আমরা স্বার্থপর যদি হতাম তাহলে আব্দুল এখানে দাঁড়িয়ে থাকতো না । ওর জায়গা হতো খান বাড়ির বাইরে আর না আব্দুল খান ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর এম.ডি থাকতো।”

এতক্ষন আব্দুল লতিফ চুপ করে থাকলেও এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না। উনি চিৎকার করে বলল,,,

“হ্যা আরুহি যা বলেছে তাই তোমরা। তোমরা স্বার্থপর তোমরা শুধু আমায় ব্যবহার করে গেছো। কি বললে তোমরা যদি স্বার্থপর হতে তাহলে আমি খান বাড়ির বাইরে থাকতাম। আর খান ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর এম.ডি থাকতাম না। কিন্তু সত্যি টা তো এই তোমার ছেলে আহমাদ এর বিজনেস সামলানোর মতো ক্ষমতা নেই। মাহমুদের ছিল কিন্তু ও তো আলাদাই বিজনেস করেছে। এই জন্য আমি খান ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর এম.ডি। আমাকে তোমরা সবসময় তোমাদের সাথে রেখোছো যদি আমাকে ছুড়ে ফেলে দাও তাহলে লোকে কি বলবে। শুধু নামে খান বাড়িতে রেখেছিলে কিন্তু এই আমি কতটা অবহেলা অনাদর এ বড় হয়েছি সেটা শুধু আমি জানি। আমি এই খান বাড়ির পালিত ছেলে যখন তাদের সন্তান হচ্ছিল না তখন তারা আমাকে এনেছিল তখন আহমদ হলো তখনো তোমরা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসাতো কিন্তু তখন মাহমুদ হলো তখন তোমরা আমাকে ভুলেই গেল। নতুন সবকিছু আহমাদ আর মাহমুদ কে দেওয়া হতো। তারা তা চাইতো তাই তাদের দেওয়া হতো কিন্তু আমাকে কখনো কেউ জিজ্ঞেস করেছে আমি কি চাই আমার কিছু চাই কি না। শুধু টাকা দিয়ে জীবন চলে না ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। সেই থেকে আমি মাহমুদ কে ঘৃনা করি আনোয়ার খান আর আনোয়ার খানের স্ত্রী কে ঘৃণা করি। তবে থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিই যার জন্য আনোয়ার খান আমাকে অবহেলা করেছেন তাকেই তোমাদের থেকে দূরে করে দেব। আমার প্রতিহিংসার আগুন এতটাই গভীর ছিল ঠিক ভালো কিছু বুঝিনি আমার একটাই চাওয়া ছিল সেটা হলো মাহমুদ কে শেষ করা। আর আমি সফল ও হয়েছি।আর হ্যা আমিই সবকিছু করেছি মাহমুদের সাথে যা হয়েছে আমিই করেছি। রেহানা কেও আমি আটকে রেখেছিলাম। এমন কি এই আরুহি কে দেখছো ওকে আমি কয়েক বার মারার চেষ্টাও করেছি। পাঁচ বছর আগে ও মরার হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। এমন কি কাল ওর গাড়িতে বোমা ও রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ও বেঁচে গেছে। যা করেছি বেশ করেছি আমি এতে আমার কোন অনুতপ্ততা নেই। আমি আমার জায়গায় ঠিক আছি।”

সব শুনে সবার চোখ ছলছল করে উঠলো আনোয়ার খান কি বলবেন ওনার কোন ভাষাই নেই। উনি আব্দুল লতিফ এর সামনে গিয়ে বলল,,,

“তুমি যেটা ভাবছো তেমন টা নয় আমরা তোমাকে ছোট থেকেই ভালোবাসতাম এখনো বাসি মাহমুদ আসার পর সবদিক মিলিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকতাম। তুমিও বড় হয়েছিল এই জন্য ভেবেছি তোমার আর আমাদের দরকার নেই। মাহমুদ ও জেদ করতো ওকে নিয়ে ঘুরতে তাই সময় হয়ে ওঠেনি। ওর যা প্রয়োজন হয়েছে ও মুখ ফুটে চেয়েছে কিন্তু তুমি কোনদিন বলো নি তোমার কি চাই তাই আমরা বুঝেছি তোমার হয়তো কিছুর দরকার নেই। কিন্তু বুঝতে পারি নি তোমার তখনো ভালোবাসার দরকার ছিল। তখন যদি তোমাকে ভালোবাসতাম তাহলে আমাদের এই দিন দেখতে হতো না। আরুহি ঠিক বলেছে আমরাই দায়ী এর আমাদের ক্ষমা করে দিও। ”

আব্দুল লতিফ অশ্রু চোখে আনোয়ার খানের দিকে তাকালেন আর বললেন,,,

“তখন আমাকে মাহমুদ এর মতো ভালোবাসলে কি হতো বাবা। আমি পেতাম একটা সুন্দর পরিবার । আমি এরকম হতাম না আমি কি খারাপ ছিলাম। নিজে আইসক্রিম খেতে গেলে আগে দুই ভাইয়ের জন্য ও কিনতাম। আমাকে যদি একটু খেয়াল করতে তাহলেই সব বুঝতে পারতে। তোমার পরিবারের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তুমি তখন ওদের আদর করতে তখনো আমি তোমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম কিন্তু তোমরা আমাকে খেয়াল করো নি। আমাকে ভালোবাসো নি।”

তখন আনোয়ার গিন্নি আব্দুল লতিফ কে জরিয়ে ধরে বলল,,,

“আমি তোকে খুব ভালোবাসি আব্দুল। আমি তোকে অবহেলা করি নি তুই আমার প্রথম সন্তান।”

“ঐ তো তিন বেলা একসাথে খাওয়ার জন্য ডাক দিতে
কিন্তু মাহমুদের মতো ভাত মেখে খাওয়াতে না। এখন এটা বলো না মাহমুদ ছোট ছিল। মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না।”

সবাই চুপ কারো কোন কথা নেই। আনোয়ার গিন্নি ও পিছিয়ে গেলেন। তখন আরুহি বলল,,

“আপনাদের অতিরিক্ত ভালোবাসা আমার বাবার জীবন এ অন্ধকার এনেছে। আপনাদের জন্য আমার বাবা একজনের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। ইচ্ছে তো করছে আপনাদের আগে পুলিশে দিই কিন্তু এটার যে কোন মামলা হয় না। নাহলে আপনাদের কেই আগে জেলে দিতাম আমি। আপনারা ভেতরে আসুন আর আব্দুল লতিফ কে নিয়ে যান।”

তখনি কতগুলো পুলিশ ঢুকলো। আবরার জিজ্ঞেস করল,,,

‘সবকিছু রেকর্ড করে নিয়েছেন তো?”

“জি স্যার করে নিয়েছি।”

“আচ্ছা এখন ওনাকে নিয়ে যান।”

একজন পুলিশ গিয়ে আব্দুল লতিফ এর হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো আব্দুল লতিফ আরুহির সামনে গিয়ে বলল,,

“সত্যি বলতে তোমাদের ওপর কেন যেন আজ রাগ হচ্ছে না। কারন একমাত্র তোমরা দুই ভাইবোন আমার দিকটা বুঝতে পেরেছো। তোমাদের সাথে যা করেছি তার জন্য তোমাদের কাছে দুঃখিত। প্রতিহিংসার কারণে কতটা নিচে নামিয়েছি নিজেকে সেটা আমি নিজেও জানিনা।পারলে মাফ করে দিও। আল্লাহ হাফেজ।”

সব পুলিশ অফিসার তাকে নিয়ে চলে গেল। খান বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। আরুহিদের তাদের দেখে খারাপ লাগছে তাছাড়া আব্দুল লতিফ এর স্ত্রী ও একজন মেয়েও আছে তাদের দেখেও খারাপ লাগছে। রেহানা খান আব্দুল লতিফ এর স্ত্রীর কাছে গিয়ে তার ঘারে হাত রেখে বলল,,,

“ভাবি নিজেকে সামলান আপনি ভেঙে তো আপনার মেয়েও ভেঙে পরবে। মেয়েকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখুন। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

উনি কিছু না বলে রেহানা খান কে জরিয়ে ধরে বলল,,

“কি বলে তোমার কাছে মাফ চাইবো রেহানা জানা নেই। এতকিছুর পর ও তুমি শান্তনা দিচ্ছো। ”

“দোষটা উনি করেছে আপনি না।”

আনোয়ার গিন্নি এসে রেহানা খান এর কাছে মাফ চাইলো। আঁখি খান ও আরুহি আর ওর মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলো। কিছুক্ষণ সবার মেলোড্রামা হলো। সবাই মিলে গেলেও কোথাও একটা কিন্তু রয়েই যায়। আরুহিরা পরের দিন সকালে সবার থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় এলো তারা বলেছে তারা সবকিছু ভুলতে চায় বিয়েতে নিশ্চয়ই আসবে।

_______________________

“ঐ বান্ধবীর ভাই এভাবে চোখ বেঁধে কোথায় আনলেন বলুন তো?”

“এই তো আফরিন আর একটু এসে গেছি দাঁড়াও।”

আরহাম আফরিন এর চোখ খুলে দিল। ওরা একটা পার্কে এসেছে পার্কের একসাইডে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। আফরিন চোখ খুলতেই সব দেখে খুশি হয়ে গেল। ওখানে আবরার আরুহি আর রোজা ছিল। ও খুশি হয়ে বলল,,,

“এসব কিসের জন্য?”

আরুহি আরহাম এর হাতে কয়েকটি লাল গোলাপ দিয়ে গেল। আরহাম হাঁটু গেড়ে বসে বলতে শুরু করল,,

“তোমার নাকি খুব ইচ্ছে তোমার বর তোমাকে হাটু গেড়ে সুন্দর করে ডেকোরেশন করে তোমার বান্ধবীদের সামনে তোমাকে প্রপোজ করবে। তাই তোমার ইচ্ছে পূরণ করার জন্যই এই ব্যবস্থা করেছি আমি। ভালোবাসার প্রকাশ নাকি ফুল দিয়ে করতে হয় তাই ফুল দিয়েই বলছি,,

“তুমি কি জানো তোমাকে আমি আগে থেকেই পছন্দ করতাম। তখন আমি আরুহিকে আনতে যেতাম তখন তোমার বান্ধবীর ভাই বলাটা খুব করে টানতো। তুমি রোজার মতো ভাইয়া বলতে না দেখে আমার খুব ভালো লাগতো। কিন্তু তুমি ছোট ছিলে বলে তোমাকে বলা হয় নি আমিও তোমাকে পছন্দ করি কিংবা ভালোবাসি। তোমার জন্য একটু একটু আমার সব আবেগ গুছিয়ে রেখেছিলাম। তো বোনের বান্ধবী আমার #গুছিয়ে_রাখা_আবেগ গুলো আমি তোমার হাতে তুলে দিতে চাই! তো Will you marry me Miss Nishi Afrin khan?”

আফরিন কি বলবে বুঝতেই পারছে ও ভাবতেই পারে নি। ওর ইচ্ছে পূরণ করার জন্য আরহাম এরকম কিছু একটা করবে। ও ফুল গুলো নিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,,

“Yes I will Mr: Arham Mahmud Khan.

সবাই হাত তালি দিল। তারপর সবাই মিলে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে গেল। ওদের বিয়ের এখনো ১৫ দিন বাকি। সব শপিং প্রায় শেষ। দেখতে দেখতে ১৫ দিন কেটে গেল।

আজ আবরার +আরুহি !!!!!!আরহাম+ আফরিন এর শুভ বিবাহ। এখানে সব থেকে ব্যস্ত মানুষ হচ্ছে রোজা তার কিনা দুই বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে কিন্তু ও কার দিকে যাবে সেটাই বুঝতে পারছে না। দুজনেই ফোনে জ্বালিয়ে মারছে। যেহেতু এক জোড়া আর একই বাড়ির বিয়ে তাই ওরা একটা বড় হল বুক করেছে। তাই সবার সুবিধা হয়েছে। রোজা আরুহির রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন নিবিড় বলল,,

“এই যে বন্ধুর বউয়ের বান্ধবী সেই সকাল থেকে দেখছি শুধু এদিক সেদিক যাচ্ছেন একটু বসুন রেস্ট নিন। নাহলে কখন জানি চোখে মুখে অন্ধকার দেখেন।”

“আমার চিন্তা আপনার করতে হবে না মিস্টার নিবিড়!”

“আরে আপনি আমার বেয়াইন আপনার চিন্তা তো করতেই হবে নাহলে লোকে কি বলবে।”

“লোকের কথায় আপনি কবে থেকে কান দিলেন!”

“আচ্ছা বাদ দিন তা দুই বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেল আপনি কবে বিয়ে করছেন?”

“ভালো ছেলে পেলেই বিয়ে করে নিব। আপনি দেখেন তো ভালো ছেলে পাওয়া যায় কি না। আমার জামাই খোঁজার দায়িত্ব আমি আপনাকে দিলাম।”

“আরে সামলে ছেলে থাকতে আবার খুজতে হবে নাকি?”

“মানে?”

“মানে হলো আপনি আমাকে বিয়ে করবেন আপনাকে আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি।”

“বারে এই ভাবে কেউ কাউকে বিয়ের কথা বলে নাকি।”

“তো কিভাবে বলে?”

“আমার বাবার সাথে কথা বলুন তারা রাজি থাকলে আমিও রাজি।”

“দুলহা দুলহান রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি!”

এ কথা শুনে রোজা লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। নিবিড় হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে যায়।

_____________________

আরুহি রেডি হয়ে এখন আরহাম কে রেডি করাচ্ছে। আরুহির জন্য আবরার খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা আর ম্যাচিং গর্জিয়াস হিজাব কিনে দিয়েছে। আরুহি খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা আর হিজাব পরেছে মুখে হালকা মেক আপ। ব্যস এতেই আমাদের আরুহিকে অনেক সুন্দর লাগছে। আরুহি পছন্দ করে আরহামের জন্য ও নীল রঙের শেরআনী কিনেছে। আরুহির সাজ শেষ এখন সে খুব যত্ন করে ভাইকে সাজিয়ে দিচ্ছে। রেহানা খান অশ্রু ভেজা চোখ নিয়ে নিজেদের ছেলেমেয়েকে দেখছে। আরহাম নরাচরা করছে আরুহি ধমক দিচ্ছে। এর থেকে বোধহয় সুন্দর দৃশ্য হয় না। দুজনের হাসি মজার মাঝে ওরা রেডি হয়ে যায়। রেহানা খান ওদের কপালে চুমু দিয়ে কিছু কথা বলে নিচে চলে যান। তখন আরহাম আর আরুহি একা ছিল,,

‘আজ আমার বোনটা আমাকে ছেড়ে অন্যের বাড়িতে চলে যাবে কিন্তু আমি খুলে দুঃখ বিলাস ও করতে পারছি না।”

“যাতে দুঃখ বিলাস না করতে পারো তাই এই ব্যবস্থা করেছি!”

“বিয়ে যদি প্রকৃতির নিয়ম না হতো আমি কখনো আমার থেকে দূরে করতাম না।”

‘হুম!”

“আরু আমি একটু তোকে জরিয়ে ধরি?”

আরুহিকে বলতে দেরি আরুহি ভাইকে জরিয়ে ধরতে দেরি করে নি। আরুহি আরহাম কে জরিয়ে ধরে বলল,,

“ভাইয়া আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হবে ভাইয়া। তোমার আর আমার খুনসুটি গুলো খুব মিস করবো ভাইয়া। আমার তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না ভাইয়া।”

আরহাম কি বলবে ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে। আরহাম নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“আরে পাগলি মেয়ে কাদছিস কেন? আমাদের যখন দেখা হবে চান আমরা পুরোনো সব করবো খুনসুটি করবো। মারা মারি করবো আমিও তোকে খুব ভালোবাসি আরু আমারও তোকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে।”

“আফরিন কে দেখে রেখো ভাইয়া ওর সব ইচ্ছা পূরণ করো। ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব কিন্তু তোমার।”

“রাখবো আরু!”

ওরা দুই ভাইবোন নিজেদের সামলে নিল। তখন রোজা আসলো ওদের খাকতে। আরহাম আরুহির হাত ধরে এক সিঁড়ির ওপরে দাঁড়ালো আরেকটা সিড়ির সামনে আবরার আফরিনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা চারজন একসাথে দুই সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। আবরার খয়েরি রঙের শেরয়ানী পড়েছে আর আফরিন নীল রঙের লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং হিজাব আর হালকা মেকআপ। ওদের দুজনকেও অনেক সুন্দর লাগছে। চারজনের মুখেই রয়েছে তৃপ্তির হাসি চারজন ই যে তাদের প্রিয়জনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে। পূর্নতাগুলো সবসময় সুন্দর হয়। ওরা চারজন নিচে নেমে এলো আবরার আফরিনকে নিয়ে আরহাম এর হাতে আর আরহাম আরুহির হাত আবরারের হাতে তুলে দিল।

ওরা গিয়ে নিজেদের জায়গায় বসে পরলো। তিন কবুল পড়ে ওরা একেঅপরের সাথে আবদ্ধ হয়ে গেল। সব কিছু শেষ করে সবাই নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি। আরুহি আর আফরিন একটু কাদলো সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে । রোজা পরেছে মহা বিপদে এখন ও কার বাসর ঘর ধরবে তাই ও চারজনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“এই যে দেখেন আপনারা আমি একা মানুষ আমার দুই বাড়িতে যাওয়া পসিবল না তাই দুজনেই আমার বাসর ঘরের টাকা দিয়ে দিন।”

তখন আরহাম বলল,,

“বাসর ঘর ধরলে না বাসর ঘরের টাকা দিব সালিকা।”

তখন আবরার বলল,,

“ঠিক তাই!”

“আমি দুইটা বাসর ঘর ধরতে পারবো না। তাই বুদ্ধি করে দুই গাড়ির চাবি আর বাসর ঘরের চাবি নিয়ে এসেছি। সবাই বাসর ঘর ধরে আমি গাড়ি ধরছি। এবার টাকা দাও বাড়ি যাও তারপরে বাসরঘরের যেতে পারবে ।”

তখন আফরিন আর আরুহি বলল,,

‘এই না হলে আমার বান্ধবী। রোজা আই প্রাউড অফ ইউ। সবার থেকে ইউনিক স্টাইল সবার বান্ধবী বাসর ঘর ধরে আর আমার বান্ধবী গাড়ি ধরছে।

“শুকরিয়া মেরে বান্ধবীরা। তো দুলাভাইরা টাকা দিয়ে দিন। নাহলে বাড়ি যেতে পারবেন না আর বাড়ি যেতে না পারলে বাসর ঘরের ঢুকতে পারবেন না। কারন দুটোর চাবিই আমার কাছে।”

তখন আবরার বলল,,,

“এরকম বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কেমনে?”

“যেভাবে মানুষ ঘুমায়।”

আরুহি আর আফরিনের যে মন খারাপ ছিল সেটা রোজার কাজকর্মে দূর হয়ে গেল। ওরাও ফোর্স করলো ওদের বান্ধবী কে টাকা দেওয়ার জন্য। অতঃপর অনেক কথা কাটাকাটির পর আরহাম আর আবরার রোজা কে টাকা দিয়ে গাড়ির চাবি আর বাসর ঘরে চাবি নিয়ে এলো। সবাই খুশি মনে নিজেদের গাড়িতে বসলো আরহাম রা গাড়িতে উঠলো ওদের কারো গাড়ির ড্রাইভার নেই ওরা নিজেরাই নিজেদের বউকে নিয়ে যাবে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো। একটা মোড়ে আরহাম রা অন্যদিকে গেল আর আবরার রা অন্যদিকে। আবরার একটা পার্কে এনে গাড়ি থামালো। তা দেখে আরুহি বলল,,

“এখানে থামালেন কেন?”

“কারন এখানেই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম। গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে। তা আমার জন্য গাল ফুলিয়ে দেখাবে এখন একবার। কি কিউট লাগছিল তোমায় দেখতে।”

এ কথা শুনে আরুহি হাসলো আর বলল,,

“সবসময় আপনি আমার গাল ফুলানোর কথা বলেন লোকে কতকিছুর মায়ায় পড়ে আর আপনি এই গাল ফুলোনোতে পরলেন!”

“আরে ফোলাও না একবার!”

“আরুহি’ না’ বলে গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো।আবরার হাসলো আর বলল,,

“হয়েছে আর কিছু করতে হবে না এবার এদিকে তাকাও!

আবরার গাড়ির পেছন থেকে একটা বক্স বের করলো আর বলল,,

“এখানে তোমার সবগুলো চিরকুটের উত্তর লেখা আছে। আর এই বক্সটায় আমার গুছিয়ে রাখা আবেগ সব জমা আছে। আমি খুব যত্ন করে রেখেছিলাম। সেগুলো আজ সব তোমায় দিলাম।”

আরুহি মুচকি হেসে বক্সটা নিল আর বলল,,

“ভালোবাসি!”

“কাকে?”

‘আমার জন্য যে তার সব আবেগ গুছিয়ে রেখেছিল তাকে!”

“আমিও ভালোবাসি!”

“কাকে?”

“যাকে আমার সমস্ত গুছিয়ে রাখা আবেগ গুলো দিয়ে দিলাম তাকে।”

তারপর দুজনেই একসাথে বলে উঠল,,

“আমি তোমাকে ভালোবাসি আরুহি ”
“আমি আপনাকে ভালোবাসি নিশান”

~সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা আর শেষ হলো। জানিনা কেমন হয়েছে জানিনা গল্পটা আপনাদের মনমতো দিতে পেরেছি কিনা। আজ যেহেতু শেষ হলো গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। তবে গল্পটায় আমি যে সব চরিত্র কে এখানে তুলে ধরতে পারি নি সেটা আমি জানি। তবে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি হয়তো হয়ে উঠতে পারে নি। তার জন্য গল্পটা তারাতাড়ি ইতি টানতে হলো। যারা প্রথম থেকে সাথে ছিলেন তাদের কে শুকরিয়া। আমার প্রত্যেকটা পাঠক পাঠিকা কে মন থেকে শুকরিয়া এবং ভালোবাসা। সকলের জন্য মন থেকে ভালোবাসা। সবশেষে এটাই বলবো সকলে নিজের খেয়াল রাখবেন। ভালো থাকবেন ইনশাআল্লাহ্। ❤️🥀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here