গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ৭

0
567

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_৭
#আজরিনা_জ্যামি

আরহাম একটা ফুচকা স্টলের সামনে গাড়ি থামালো। ফুচকা ওয়ালাকে বেশি করে ঝাল দিয়ে দু প্লেট ফুচকা বানাতে বলে দুটো আইসক্রিম নিয়ে আসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝাল ঝাল ফুচকা চলে এলো। আরুহি গাড়িতেই ছিল তাই আরহাম সব গাড়িতেই এনেছে। সব আসা হলে আরুহি বলল,,

“বেশি করে ঝাল দিয়েছে তো?”

“আমি তো দিতে বলেছিলাম এখন দিয়েছে কিনা আমি কি জানি?”

“ওহ আচ্ছা! কিন্তু তুমি দু প্লেট একসাথে এনেছো কেন?

“বারে তুই খাবি আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো নাকি।”

“আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু তুমি আইসক্রিম কেন এনেছো?”

“তুই ঝালের জন্য লাফাবি আর আমি পরে দৌড়াবো নাকি। তাই আগেই এনেছি। তুই এতো প্রশ্ন করছিস কেন? খাওয়া শুরু কর আইসক্রিম গলতে শুরু করে দিয়েছে।”

ওরা খাওয়া শুরু করলো। ওরা ঝাল খায় কিন্তু মিডিয়াম মানে স্বাভাবিক। কিন্তু যেহেতু স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশি ঝাল দিতে বলেছে তাই ফুচকা ওয়ালা বেশি করেই দিয়েছে। দু পিচ মুখে দেওয়ার পরই মনে হচ্ছে ঝাল মাথায় উঠে গেছে। আরহাম একটা খেয়ে বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর অবস্থা দেখে আরহাম আইসক্রিম এর প্যাকেট খুলে সামনে ধরলো। আরুহি আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলো। তা দেখে আরহাম বলল,,

“যেটা পারিস না সেটা করতে যাস কেন?”

“আসলে খুব রাগ হচ্ছিল তাই কি দিয়ে কমাবো সেটাই ভাবছিলাম তাই এই বুদ্ধি। এখন একটু কমেছে ।”

“তা এখন কি করবি খাবি নাকি!”

“তো খাবার অপচয় করবো নাকি। তাছাড়া এখন তো আইসক্রিম আছে একটা করে ফুচকা খাবো আরেক বাইট আইসক্রিম খাবো তাহলেই তো হলো।”

“ওকে তাহলে খান। আমিও খাই দেখি কি রকম টেস্ট লাগে। এক কাজ করি আইসক্রিম ফুচকার ভেতরে দিয়ে খাই। তাহলেও অন্যরকম টেস্ট হবে।”

“ধুর ভাইয়া আমার খাওয়ার মুড নষ্ট করো নাতো। চুপ করে খাও।”

“ওকে।”
________________

“ভালো মা তুমি ঠিক আছো এরকম চুপ করে আছো কেন?”

আবরারের কথায় ভালো মায়ের ধ্যান ভাঙে উনি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“এমনিই কথা বলতে ভালো লাগছে না। তাছাড়া ওষুধের ডোজটা মনে হয় বেশি পরে গেছে শরীর টা কেমন যেনো লাগছে।”

“তাহলে তুমি চোখ বন্ধ করে আমার কাঁধে মাথা রাখো।

আফরিনের কথায় ভালো মা মুচকি হেসে বলল,,

‘লাগবে না আফরিন আমি ঠিক আছি। আসলে তখনকার ঘটনাগুলো মনে পরছে। ঐ মেয়েটাই তোর বান্ধবী আরুহি তাই না।”

“হুম তাই!”

“ওদের পরিবারে কে কে আছে?”

“আমি যতদূর জানি ওদের পরিবার বলতে ওরা দুজন-ই। ওদের মা নাকি দশ বছর আগে মিসিং হয়েছিল তার কয়েকদিন পরেই শোনা যায় উনি নাকি মারা গেছে। তার তিন বছর পর আংকেল ও হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ওদের মা বাবা ছাড়া পরিবার আছে কিনা তা বলতে পারব না। তবে আজ ও তোমাকে মা মা করছিল দেখে অবাকই হয়েছিলাম।”

এ কথা শুনে উনি কি ভাবলেন কি জানে উনি বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কাল আমি ওদের জন্য খাবার রেঁধে দিব । তোরা দুজনে নিয়ে যাস ওদের জন্য। ওরা দুই ভাইবোন কি খায় না খায় তা তো জানিনা।”

তখন আবরার বলল,,

“তোমাকে তো যেতে বলল ভালো মা তাহলে তুমিই ওদের বাড়িতে যেও।”

“আমি পরে যাবো কোন একদিন। মেয়েটা অসুস্থ তাই খাবার দেওয়ার কথা বললাম। এই সময় মেয়েটার আলাদা যত্নের প্রয়োজন।”

“তুমি গেলে আরুহি খুব খুশি হবে ভালো মা।’

“একটু খুশি দিতে যেয়ে যদি আরো কষ্ট পায় থাক দরকার নেই।”

“আরো কষ্ট পাবে কেন ভালো মা।”

কথাটা শুনে ভালো মা একটু থতমত খেয়ে গেলেন। আর বললেন,,

“ও কিছু না। বাদ দে!”

“আচ্ছা ভালো মা আজ তোমার পুরোনো স্মৃতি মনে পরেছে। না মানে ডক্টর বলেছিলেন লাস্ট খোঁজ দেওয়ার পর তোমার পুরোনো কথা মনে পরতে পারে।”

“না না কিছু মনে পরে নি আমার। আমার ভালো লাগছে না এখন কথা বলতে আর কতদূর।”

“এই তো আর পাঁচ মিনিট লাগবে।”

“আচ্ছা।”

__________________

আরহাম আর আরুহি খাওয়া শেষ করলো। গাড়ি চলতে শুরু করল তখন হুট করে আরুহি বলল,,

“ভাইয়া ওটা যে মা এটা আমি এক শত ভাগ সিওর। কারন মা আমার কপালে চুমু দিয়েছে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে এমন কি তার চোখ থেকে পানিও গড়িয়ে আমার মুখে পড়েছে। আমার জন্য তার চোখে আমি যন্ত্রনা দেখেছি। মনে হচ্ছিল ঐ চোখদুটো কি যেন বলতে চাইছে। তাছাড়া ঐ মমতাময়ী চাহনি সেই চোখ সেই মুখ সেই কথা বলার ভঙ্গি সব একইরকম। কিন্তু মা কিছু বললো না কেন?”

“সেটার উত্তর তো মা-ই দিতে পারবে। আপাতত বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। আমরা জানতে পেরেছি মা কোথায় থাকে। তুই সুস্থ হ তারপর ও বাড়িতে যাওয়ার বন্দোবস্ত করছি‌।”

“কিছু তো একটা ব্যাপার আছে ভাইয়া তার জন্য মা সব বুঝেও হয়তো কিছু বুঝতে চাইছে না। মা আমাদের ধরা দিতে চাইছে না কেন? কিছু তো আছে এটাই বের করতে হবে। ”

‘আফরিন তোকে ওদের ভালো মায়ের কথা বলেছে?”

“হুম বলেছে ভালো মা নাকি ওদের মায়ের মতো ভালোবাসে ওদের খেয়াল রাখে। আর কিছু বলে নি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ লাগাতে হবে‌।”

‘ওকে দ্যাখ কতটুকু জানতে পারিস। তোর মাথা ব্যাথা করছে না তো।”

“একটু তো করবেই চিন্তা করো না। আমাকে নামিয়ে রেখে অফিসে যাবে। আজ একটা ইম্পোর্টেন্ট মিটিং আছে। অনেক বড় প্রজেক্ট।

“আজকে আমি আমার বোনকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। তাতে লস হলে হোক আমার কাছে আমার বোন আগে। আজকের এই দিনটাই কেমন জানি আজই সবে মাত্র এলাম বাংলাদেশ এ আর আজই কতোকিছু ঘটলো।”

____________________

আবরাররা বাড়িতে ঢুকলে আবরারের বাবা নাহিয়ান খান বললেন,,,

“তোরা এতো লেট করলি কেন? টাকা কতক্ষন তোদের জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু তোরা এলিই না। আজ রুনা( আবারারের ভালো মা) ওর সাথেও দেখা করাতে চেয়েছিলাম কিন্তু হলো না। তোরা আসার পাঁচ মিনিট আগেই ওনারা চলে গেলেন। ওনাদের ট্রেনের সময় হয়ে গেছিল।”

“নাহিয়ান ভাই কাদের কথা বলছেন আপনি ?”

“আর বলো না আমার কাকা ওনার নাম আনোয়ার খান। এতদিন শুধু ফোনে যোগাযোগ হতো। কয়েকদিন আগে হুট করে জানালেন ওনারা আসছে। ওনারাই এসেছিলেন। ”

এ কথা শুনে আবারারের ভালো মা অস্ফুট স্বরে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ!”

আর বলল,,

“ওহ আচ্ছা পরের বার আসলে দেখা হবে। আমি এখন ঘরে যাই ভালো লাগছে না আমার।”

“আচ্ছা যাও আর সরি ওদের জন্য তোমাকে আনতে যেতে পারি নি এইজন্যই তো আবরার আর আফরিন কে পাঠিয়েছিলাম।”

“সমস্যা নেই নাহিয়ান ভাই। আপনি আমার জন্য আজ পর্যন্ত যা করেছেন তার কাছে এইটুকু কিছুই না।”

“আহ হা রুনা আমি তোমার কে হই ভাই আর তুমি আমার বোন বুঝলে ভাই হয়ে যদি বোনের জন্য কিছু না করলাম তাহলে কিসের ভাই। তুমি এবার ওপরে যাও রেস্ট নাও।”

আবরারের ভালো মা চলে গেল। তখন নাহিয়ান খান আবরারদের জিজ্ঞেস করল,,

“এত দেরি হলো কেন তোমাদের?”

“আসলে রোজার ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল। তার জন্য দেরি হলো তারওপর আবার আরুহির এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই আরো দেরি হলো।”

“কি আরুহির এক্সিডেন্ট হয়েছে কিভাবে?” ও ঠিক আছে তো?

তখন আবরার বলল,,

“কিছুনা এখন উনি ঠিক আছে। একটু মাথায় কেটে গেছে আরেকটু হাতে ব্যাথা পেয়েছে। ওনার ভাই ওনাকে নিয়ে গেছে।”

“ওহ আচ্ছা যাও তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার বারছি। আর আসার সময় রুনাকেও সাথে করে নিয়ে এসো।”

মায়ের কথায় আবরার আর আফরিন ওপরে চলে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পর নাসরিন খান বললেন,,

“আজকে রুনার আচরন একটু অন্যরকম লাগছিল তাই না।”

“হুম এটা আমিও খেয়াল করেছি।”
______________________

রাতে আবরার আরুহিকে ফোন করলো। আরহাম ওখানেই ছিল তাই আরহাম বলল,,

“কে ফোন দিয়েছে বোনু?”

“মিস্টার নিশান আবরার!”

‘ওহ আচ্ছা কথা বল আমি আসছি আমার একটা জরুরি কল করার আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। এখন কেমন আছেন আপনি?”

“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।” আপনি কেমন আছেন?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

দুজনের মধ্যে মৌনতা। হুট করে আবরার বলল,,

“আজকে কি জানেন আপনি ?”

“কি?”

“আজকে প্রথম সুভাসিনী আমায় চিরকুট দিয়েছিল।”

এ কথা শুনে আরুহির কান্না পেল কিন্তু ও কাদলো না। আজকের দিনটা ওর মনে আছে যে সুভাসিনী আজ প্রথম আবরার কে চিরকুট লিখেছিল। আরুহি কিছু বলছে না দেখে আবরার বলল,,

“এত গুলো বছর আমি কিন্তু এই দিনটা সেলিব্রেট করেছি জানেন কি দিয়ে?”

“কি দিয়ে?”

“একটা করে ফুলের গাছ লাগিয়ে ! একটা ফুল রেগে মুঠো করে নষ্ট করেছিলাম বলেই না সুভাসিনী আমায় চিরকুট লিখেছিল !”

“সেই চিরকুট টা লিখেই জীবনের বড় ভুল করেছিল। না সে চিরকুট টা লিখতো আর না তার জীবন এমন হতো।”

“আচ্ছা ওসব বাদ দিন। কাল বিকালে একটু দেখা করতে পারবেন মিস্টার নিশান আবরার?”

“কাল কেন? আপনি না অসুস্থ কাল রেস্ট নিন তার পরের দিন আপনার সাথে দেখা করবো। অবশ্য কাল ভালো মা বলেছে আপনাদের জন্য খাবার রান্না করবে আপনাদের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসতে।”

“আসলে কিছু কথা বলতাম কাল যদি আসেন তাহলে কথা হবে। তবে আপনার ভালো মাকে নিয়ে এলে খুশি হতাম।”

“আচ্ছা আমি নিয়ে আসবো।”

“শুকরিয়া আল্লাহ হাফেজ রাখছি।”

আরুহি ফোন রেখে ,,

“ভাইয়ায়ায়য়য়য়া”

“কি হয়েছে বোনু তুই এত জোরে চিৎকার করছিস কেন?”

“কাল মা আসছে আমাদের বাড়িতে। মিস্টার নিশান আবরার বলেছে মাকে নিয়ে আসবে।”

“সত্যি!”

“হ্যা সত্যি !”

___________________

আবরার আলমারি থেকে একটা ছোট বক্স বের করলো। বক্সটা খুলে সে সব থেকে প্রথমে রাখা সেই চিরকুট টা বের করলো। আজকের দিনেই সুভাসিনী তাকে চিরকুট লিখেছিল। ও বের করে তাতে লেখা দেখলো।

“পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম কোমলপ্রিয় সৃষ্টি হচ্ছে ফুল। জানেন কি? ফুলের মধ্যে কিছু মানুষের আত্মা থাকে তাই ফুলকে যত্ন করতে শিখুন নষ্ট করতে না।”

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here