#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“ভাইয়া এভাবে চুপচাপ বসে আছো কেন?”
আফরিন এর কথায় ধ্যান ভাঙে আবরারের ও বলল,,
“আচ্ছা যদি আজ আরুহির কিছু হতো তাহলে আমি কি করতাম ভাবতেই বুকটা ধরফর করছে। যখন গাড়িটা পুড়ছিল তখন মনে হচ্ছিল আমার সবকিছু পুড়ছিল। আমি বোঝাতে পারবো না তখন কেমন লাগছিল।”
“তুমি কি এটাই শুধু ভাবছিলে?”
“না কে বা কারা আছে এটার পেছনে সেটাও ভাবছি। কয়েকদিন পরপরই ওদের ওপর অ্যাটাক হচ্ছে। কোন তো কারন নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু আরুহি আমাদের বললো না। ওরা নিশ্চয়ই সব জানে। আচ্ছা ওরা যে লন্ডনে চলে গিয়েছিল সেটার কারনই বা কি? আমার মনে হচ্ছে ওটাও তাদের কোন কিছুর জন্যই হয়েছে।”
“কিছু তো আছেই ভাইয়া কিন্তু ওরা আমাদের জানালো না।”
“সেটাই ভাবছি না বের করতে হবে এটা আমার জীবন নিয়ে সে ছিনিমিনি খেলতে পারে না এতকিছুর পর আমি আরুহিকে পেয়েছি তাকে কোন মতেই হারাতে দেব না। যাই হয়ে যাক না কেন আমার আরুহির কিছু হতে দেব না।”
“আমার মনে হয় শত্রু ওদের কাছের কেউ -ই এই কারনে ওরা আমাদের জানাতে চাইছে না। আর এত বছর তো ওদের পরিবারের কারো কথা শুনলাম না হুট করে পরিবার এলো কোথা থেকে। আবার আরুহি বললো সবকিছু সেখানে গেলেই জানতে পারবেন।”
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”
“আচ্ছা ওর চিন্তা করে লাভ নেই কালকেই দেখা যাবে।”
“হুম এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।”
_________________
রাতে আবরার আরুহিকে ফোন করলো আরুহি তখন ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল ওর ফোন দেখে ল্যাপটপ অফ করে ফোনটা ধরে সালাম দিল,,
‘আসসালামু আলাইকুম!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম! এখন কেমন আছো?
“আমি খারাপ থাকলাম কবে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
‘কি কর?”
“একটা কাজ ছিল ওটায় গুছিয়ে রাখছিলাম। আপনি কি করেন?”
“আমি এখন শুয়ে আমার রানীর সাথে কথা বলছি!”
“ওহ আচ্ছা তাহলে বলুন মহারাজ এখন ফোন দিয়েছেন কেন?’
“ওহ হো আমি তো ভুলেই গেছি তোমাকে তো দরকার ছাড়া ফোন দেওয়া যাবে না। আসলে একটা কথা জানতে চাইছিলাম তুমি যদি আমায় ভালোবেসে থাকো তাহলে এটার উত্তর এখন আর সত্যি টা বলবে।”
“এটা কিরকম হেঁয়ালি।”
“হুম এটাই তুমি সবসময় শুধু কাটিয়ে নাও।”
“তা কি জানতে চান বলুন?”
“পাঁচ বছর আগে তোমরা কাউকে কিছু না বলে লন্ডনে চলে গিয়েছিলে কেন? আর হ্যা এখন এটা বলো না আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য ওরকম করেছিলে এটা বললেও আমি বিশ্বাস করবো না। কারন এখানে অন্য একটা কারন ঘটেছে যার জন্য তোমরা দুজনেই চলে গেছো। তার জন্য তোমাদের ওপর এই অ্যাটাক হয়েছে।”
আরুহি চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা। পাঁচ বছর আগেকার কথা মনে করে একফোঁটা পানি চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো। ও কোনরকম বলল,,
‘পাঁচ বছর আগে কি হয়েছিল সেটা আমি মনে করতে চাইনা নিশান!”
“আমি জানতে চাই আমিও তোমার সাথে থাকতে চাই। যারা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের শাস্তি দিতে চাই। আমিও তোমার কষ্টের ভাগিদার হতে চাই। প্লিজ আরুহি বলো।”
“সেদিনের কথা মনে পরলে আমার কষ্ট হয় বুকটা ভার হয়ে আসে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।”
‘আমি শুনতে চাই আরুহি আমিও তোমার কষ্টের ভাগিদার হতে চাই।”
“কিন্তু আমি যে আপনাকে আমার কষ্টের ভাগিদার বানাতে চাইনা। আমি আমার সুখের ভাগিদার বানাতে চাই দুঃখের না।”
“কিন্তু আমি যে তোমার দুঃখের ভাগিদার হতে চাই প্লিজ বলো না। আমি কথা দিচ্ছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দেবে একদিন।”
এ কথা শুনে আরুহির কান্না পেল। ওর চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। ও বলতে শুরু করল,,
“একদিন আমি আর ভাইয়া স্কুল থেকে ফিরছিলাম তখন ভাইয়ার ফোন আসে একটা ইম্পোর্টেন্ট মিটিং এর জন্য শেখ ইন্ড্রাটিজ এর সাইটে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে সেখানে যেতে হবে। তাই ভাইয়া সেখানে যায় আমাকে নিয়ে। আমি গাড়িতেই বসে থাকি আর ভাইয়া সেখানে যায়।
অতীত,,
আরুহি গাড়িতে বসে আশেপাশে টা ভালো করে দেখতে থাকে। হুট করে চার পাঁচ জন মানুষ কে দেখতে পায় একজন কে ধরে নিয়ে আরেকটা নতুন বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে তার ভেতরে গেল। তাদের হাতে রিভলবার আর লোকটাকে ভিশন মারা হয়েছে রক্ত পরছে। আরুহি আরহাম কে কল করে কিন্তু আরহাম ফোন ধরে না।
আরুহি নিজেকে আর দমিয়ে না রাখতে পেরে তাদের পেছনে গেল। যদিও ও ছোট ছিল তখন ওর ভয় হচ্ছিল কিন্তু তবুও সে গেল ওদের পিছু পিছু হুট করেই তারা তৃতীয় তলার একটা রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো যেহেতু নতুন ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে সবে ইট দিয়ে গাঁথা হয়েছে ভেতরে তেমন দরজা দেওয়া হয় নি। ও একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে আসলে লোকটাকে কেন আনা হয়েছে আর এভাবেই বা কেন ? লোকটা একটা লোকের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। আরুহি আরেকটু ঝুঁকে দেখতেই নিজের বড় কাকা কে দেখে অবাক হয়। ও তাও সাহস জুগিয়ে ফোনের ক্যামেরা বের করে যাতে পুলিশ এর কাছে দিতে পারে এভিডেন্স হিসেবে। ওর বড় কাকা আব্দুল লতিফ লোকটার বুকে লাথি মেরে বলল,,,
“তোর সাহস তো কম না তুই আমার এতদিনের আড়াল করা সবকিছু ঐ আরহাম কে বলে দিতে যাচ্ছিলি। আজই তোর শেষ দিন হবে।
তখন পরে থাকা লোকটা বলল,,,
“হ্যা বলে দেব তোমার সব কুকির্তি কিভাবে তুমি ওদের থেকে ওদের মাকে আলাদা করেছো কিভাবে ওদের মাকে অন্ধকার রুমে আটকে রেখেছিলে। ওদের মায়ের এক্সিডেন্ট এর খবরও তুমি দিয়েছিলে। ওদের ওপর অত্যাচার করার জন্য কিভাবে আনোয়ার খানের মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছিলে। কিভাবে মাহমুদ খান কে তার পরিবার থেকে আলাদা করেছিলে এমন কি মাহমুদ খানকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলে তাকে ভুলভাল ওষুধ দিয়ে অসুস্থ করে দিয়েছিলে। তার ওপর মাহমুদ খান এর মৃত্যুর খবর শুনেও তারা আসতে চেয়েছিল তুমি ভুলভাল বুঝিয়ে তাদের আসতে দাও নি। কিভাবে তুমি ওদের অন্ধকার জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছো সব বলবো।”
এ কথা শুনে আরুহি বোধহয় ওখানেই জমে গেল । তার মানে তার মা কারো সাথে পালিয়ে যায় নি। এমনকি ওরা জানতো ওর বাবা এমনি এমনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে কিন্তু তাকে খুন করা হয়েছে সবার অগোচরে। ওর শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে। ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এতদিনের চাপা সবকিছু ওর ব্রেন হয়তো নিতে পারছে না। ও কিছু করবে তার আগেই আব্দুল লতিফ লোকটার সামনে গিয়ে বলল,,
“তা কে বলবে শুনি আজ তো তুই আর আরহামের কাছে যেতে পারবি না। কারন এখন তো তুই সোজা ওপরে যাবি। ইস কতো শখ ছিল তোর আরহাম কে সব বলে দিবি। ইস তোর শখটা পুরন হলো না সো স্যাড।”
“আমাকে মেরে ফেললে কি হবে সত্যি কখনো চাপা থাকে না একদিন না একদিন তো সব সত্য বের হবে। সেদিন তোর কি হবে। তাছাড়া তুই কি শুধু মাহমুদ এর পরিবার কে নষ্ট করেছিস। না তুই তো পুরো খান পরিবার কেই শেষ করেছিস। কিসের এত রাগ তোর ঐ পরিবার নিয়ে। তার জন্য তুই নিজে খারাপ হয়েছিস। তুই ও তো ঐ বাড়ির সন্তান।”
এই কথা শুনে আব্দুল লতিফ পাগলের মতো হাসতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,
“সন্তান তাই না সন্তান ওরা এই সন্তানের কোন দাম দিয়েছে না দেয় নি। না ভেবেছে না ওরা এই সন্তানের কথা ভাবে নি। যাকগে গেল সেসব কথা। এবার মরার জন্য তৈরি হয়ে মা তোর অন্তিম সময় এসে গেছে।”
বলেই আব্দুল লতিফ লোকটার বুকে তিনটা গুলি করলো। আরুহি নিজের মুখটা চেপে ধরলো। না এখানে আর থাকা যাবে না ও তাড়াতাড়ি করতে যেয়ে কয়েকটা বাঁশের সাথে ধাক্কা লাগলো বাঁশ গুলো পরতেই ভেতর থেকে সবাই বেরিয়ে আসলো সবাই দেখলো একটা মেয়েকে দৌড়ে যেতে। আব্দুল লতিফ মেয়েটাকে ধরতে বলল কিছু লোক ওকে ধাওয়া করলো। আরুহি নিজের সর্বোচ্চ শক্তিতে দৌড়াতে লাগলো এখন ওকে আগে এদের থেকে বাঁচতে হবে তারপর ভাইয়াকে সব বলতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে ওকে কেউ পেছন থেকে পায়ে গুলি করলো। ও ওখানেই পরে গেল সামনে ইট ছিল ইটের ভেতর পরে ওর মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত দিয়ে মুখের একসাইট পুরো রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল। লোকগুলো ওর চারপাশে দাঁড়িয়ে গেল। তখন ও বলল,,
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও আমি কিছু দেখি নি আমি কিছু জানিনা।”
তখন একটা লোক বলল,,
“তোকে ছেড়ে দিলে কিভাবে হবে? এখনি তো তুই গিয়ে সব পুলিশ কে বলে দিবি।”
“বিশ্বাস করো আমি কিছু জানি না।”
তখন আব্দুল লতিফ ওখানে এলো আর সবাইকে সরিয়ে দিয়ে আরুহির হাতে পারা মেরে বলল,,
“কি দেখেছো বলো?”
“আমি কিছু জানি না।”
“তাহলে ওভাবে পালাচ্ছিলি কেন?”
“আমি তো? প্লিজ আমাকে যেতে দিন আমি কিছু জানি না আমি কিছু দেখি নি।”
“তুই বললেই আমরা বিশ্বাস করবো। বল কি দেখেছিস তুই।”
আরুহি সহ্য করতে পারছে না একে তো পায়ে গুলি লেগেছে তারওপর মাথাটাও ফেটেছে। আব্দুল লতিফ বলল,,
“তুই দেখলেও মরতে হবে না দেখলেও মরতে হবে।”
বলতে বলতে উনি রিভলবার নিয়ে আরুহির পেটে গুলি করতে যায় কিন্তু আরুহি একটু সরে যায় তখন ওর হাতে লাগে। ও চিৎকার দেয় তখনি আরহাম আর কিছু লোককে দৌড়ে আসতে দেখা যায় । তখনি আব্দুল লতিফ সবাইকে নিয়ে চলে যায় ততক্ষণে আরুহি অজ্ঞান হয়ে গেছে । আরহাম বোনের অবস্থা দেখে পাগল পাগল অবস্থা ও তাড়াতাড়ি করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন ডাক্তার বলে আরেকটু দেরি হলেই আরুহিকে আর বাঁচানো যেতো না। প্রায় দুদিন পর আরুহির জ্ঞান ফেরে। এই দুদিনে আব্দুল লতিফ আরুহির সম্পর্কে সব জেনে নেয়। মুখে রক্ত লেগে থাকায় উনি আরুহিকে চিনতে পারে না। আরুহি জ্ঞান ফিরে আরহাম কে ফোনের কথা জিজ্ঞেস করে তখন ও জানায়,,
“ফোন আছে ওর কাছে একটা লোক ফোনটা ওকে দিয়েছে তোর পাশে নাকি পরে ছিল। কিন্তু তুই ফোন দিয়ে কি করবি?
“তুমি ঐ ফোনটা আগে আনো তারপর বলছি!”
আরহাম ফোনটা দেয় তখন আরুহি ফোন বের করে ঐ ভিডিও ক্লিপ দেখায়। সব দেখে তো আরহাম পুরো থম মেরে যায়। আর সেদিনই হাসপাতালে আরুহি আর আরহামের ওপরে এ্যাটাক হয়। আরুহি আগের থেকে আরো অসুস্থ হয়ে কোন রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে। আরহাম কিছুটা আহত হয় ওদের বাবার বন্ধু আজিম আহমেদ সবসময় আরহামদের খেয়াল রাখতো। সেদিন ও তিনি ওদের বাচিয়ে নেয়। আর ওনার পরামর্শে ওরা তাড়াতাড়ি করে দুদিনের মধ্যে লন্ডনে চলে আসে। ওদের সবকিছু আগে করা ছিল বলে তেমন ঝামেলা হয় নি। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে কাউকে কিছু জানাতে পারে না।
______________
বর্তমান,,
আরুহি কাঁদছে ওপাশ থেকে আবরারের চোখটাও ভিজে উঠেছে। তার প্রিয়সী কতটা কষ্টে ছিল কোন রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসছে। আবরার নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“তুমি চিন্তা করো না আরুহি সে তোমাদের কষ্ট দিয়ে সুখে আছে তাই না । এই সুখ তার কপালে বেশিদিন থাকবে না। আমি থাকতে দেব না। প্রত্যেকটা কষ্টের হিসাব নেব আমি।”
আরুহি নিজের চোখের পানি মুছে বলল,,
“তার দরকার হবে না আমি তার ব্যবস্থা করেছি কালই হবে খোলামেলা ভাবে তার শেষ দিন। এরপর সে থাকবে জেলে।”
“মানে?”
“সাথেই চলুন না তারপর দেখতে পাবেন কি হয়। তবে জানেন কি আমার দাদুভাই কে আপনি চেনেন আপনাদের বাড়িতে যে আনোয়ার খান এসেছিলেন উনিই আমাদের দাদুভাই।”
“সেই জন্যই কি তুমি ওভাবে এতো বড় ঘোমটা দিয়েছিলে।”
“হুম কারন তারা যদি আমাকে চিনে ফেলতো তাহলে তার কানে আমার খবর তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতো।”
“ওহ আচ্ছা!”
“হুম এখন রাখি কাল দেখা হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ!”
“হুম আল্লাহ হাফেজ এবং ধন্যবাদ!”
“হুম!”
আরুহি ফোনটা কেটে দিলো এখন সে অনেক হালকা ফিল করছে এতদিন এই কষ্ট আর কথাগুলো নিজের কাছে চেপে রেখেছিল।
______________
আরেকটা নতুন দিনের সূচনা আরহাম সকাল সকাল খান বাড়িতে এসে পরেছে আবরার আর আফরিন কে নিতে। নাহিয়ান খান কে ওরা আগেই বলে রেখেছিলো কুমিল্লা যাওয়ার ব্যাপারে তাই বেশি সমস্যা হয় নি। আবরার আর আফরিন কে আগেই বলে রাখা হয়েছিল কালকের ব্যাপার নিয়ে যেন তাদের কিছু না জানায় তাই ওরাও কিছু জানায় নি। তবে আজ আরহাম জানিয়েছে তাদের দাদুভাই হলো আনোয়ার খান আর নাহিয়ান খানের কাকাতো ভাই ছিল মাহমুদ খান। শুনে তিনি দুঃখিত হন। সবাই এত কাছে থেকেও অচেনা ছিল এতদিন। আরহাম আবরার আর আফরিন কে নিয়ে ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো আরুহি নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছিল হালকা জ্বর এসেছিল বলে আরহাম বা রেহানা খান কেউ ওকে ডাক দেয় নি। ওরা আজ না যেতে চাইলেও আরুহির জন্য যেতে হচ্ছে। আবরার এসে জিজ্ঞেস করল,,
‘যে যাওয়ার প্ল্যান করেছে সে কই ভাইয়া? তুমি যে সকাল সকাল আমাদের নিয়ে এলে!
তখনি আরুহি নিচে আসতে আসতে বলল,,
“এই যে আমি এখানে। আসলে আপনাদের সকাল সকাল এখানে আনার কারন হলো আমরা ট্রেন এ যাবো। কাল রাতেই আমি অনলাইন টিকিট কিনে নিয়েছি।”
তখন আফরিন বলল,,
“ওহ আচ্ছা তা তুই আর ভালো মা তো আমাদের বাড়িতে যেতে পারছি সেখান থেকেই স্টেশনে যেতে পারতাম।”
“তোদের থেকে আমাদের বাড়ি থেকে স্টেশন কাছে।আমার একটু জ্বর ছিল তাই এখন আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছি। মা তুমি তৈরি চলো তাহলে!”
“আরে খেয়ে যাবি তো তুই তো কিছুই খাস নি। আর ট্রেনের সময় ও আরো এক ঘন্টা পর।”
_______________
আনোয়ার খানের বাড়িতে আজ ছোটখাটো অনুষ্ঠান বলা যায় আজ খান বাড়ির মেয়ে আঁখি খান তিন বছর পর বাড়িতে ফিরছে সেই সুবাদে খান বাড়ির বড় ছেলে আব্দুল লতিফ অনেক দিন পর কাল রাতে ফিরেছে বলা যায় খান বাড়ির ছেলেমেয়েদের রি ইউনিয়ন। আজ খান বাড়ির সবাই খুব খুশি অনেক দিন পর বাড়িতে একটু খুশির ঝলক কিন্তু এই খুশিতে পানি ঢেলে বিকালের দিকে আরহাম আর আরুহি প্রবেশ করে খান বাড়িতে। আরহাম আর আরুহি সোজা বাড়িতে ঢুকে পরে এই সময় দু’জন কে দেখে সবাই অবাক হয় কিন্তু তারা চিনতে পারে না তেমন। কিন্তু আব্দুল লতিফ এর ওদের দেখে দাঁড়িয়ে যায়। আর চিৎকার করে বলে,,
“তোমরা তোমরা দুজন এখানে কি করছো আর তুমি তুমি তো কাল,,
এইটুকু বলেই আব্দুল লতিফ থেমে যান কিন্তু ওনার কথা শুনে আরহাম আর আরুহি হাসে । আরুহি বলল,,
“আমি জানতাম মিস্টার আব্দুল লতিফ আর কেউ না চিনলেও আপনি আমাদের ঠিকই চিনবেন।”
তখন আনোয়ার গিন্নি বলল,,
“কারা ওরা আব্দুল?”
তখন আরহাম বলল,,
“ওহ হো দাদি জান আগে জানতাম আপনি আমার মাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু আপনি তো আমাদের পছন্দ করতেন ভালোও বাসতেন আপনি আমাদের চিনতে পারছেন না। আমি আরহাম আর ও আমার বোন আরুহি।”
এ কথা শুনে পরিবেশ টা যেন মুহূর্তেই থম মেরে গেল। এদিকে আব্দুল লতিফ এর শরীর ঘামছে । তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“তা এখানে আসার কারন? তোমাদের তো এ বাড়িতে আসার কথা না। মাহমুদ আমাদের সাথে সকল সম্পর্ক ত্যাগ করে এ বাড়ি থেকে চলে গেছে ।”
“সেই জন্যই কি আমার বাবার মৃত্যুর সময় ও তার পাশে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি। আর বাবা গেছে বেশ করেছে আপনারা কি করেছেন তার আদরের ছেলেমেয়ের ওপর দিনের পর দিন অত্যাচার করেছেন। সেটা ঠিক করেছেন আপনারা। ছেলে-মেয়েদের একটা ভালো জীবন দেওয়ার জন্য যদি সে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে কি সে খুব বড় অন্যায় করেছে।”
তখন আরুহি বলল,,
“ভাইয়া রিল্যাক্স শুনুন মিস্টার আনোয়ার খান আমরা এখানে থাকতে আসে নি । আমরা এসেছি আমাদের বিয়ে সামনের মাসে তার দাওয়াত দেওয়ার জন্য। আর একজন ভালো মানুষ এর আসল চেহারা চেহারা দেখানোর জন্য।
“আমাদের সাথে তখন তোমাদের কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে দাওয়াত কিসের?”
“তিক্ত হলেও সত্য যে আপনারা ছাড়া আমাদের কোন আত্মীয় স্বজন নেই। আপনারাই আমাদের অভিভাবক তাই।”
হুট করে আনোয়ার গিন্নি আরুহিকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“আমাদের মাফ করে দে আরুহি আমরা বুঝতে পারি নি তোকে শাসন করতে গিয়ে আমরা তোকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছিলাম।”
আরুহি কিছু বললো না তখন আখি খান বললেন,,
“মা তোমার কোন সেন্স নেই। তুমি কি ভুলে গেলে ওর মা আমাদের বাড়ির নাক কেটে এ বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। আল্লাহ ভালো বিচার করেছে আমাদের সাথে ছলনা করেছে বলেই না ওভাবে এক্সিডেন্টে মরে গেলো। আল্লাহ তায়ালা গজব ফেলছিলো ওর ওপর।”
“ওহ তাই নাকি আমি তোমাদের বাড়ির নাক কেটে গিয়েছিলাম নাকি তোমাদের বাড়ির ছেলে আমাকে আটকে রেখে আমাকে কলঙ্ক দিয়েছিল।”
এই কথা শুনে সবাই বাড়ির দরজার দিকে তাকালো। আর তাকিয়ে সবাই ভুত দেখার মতো চমকে গেলো। কারন দরজার সামনে রেহানা খান দাঁড়িয়ে আছে তার পাশেই আবরার আর আফরিন। আরুহি ওর মায়ের হাত ধরে বলল,,
‘সবাই চমকে গেলেন বুঝি আরে এটা তো একজনের জন্য সারপ্রাইজ ছিল।”
আরুহি আব্দুল লতিফ এর সামনে গিয়ে বলল,,
“সারপ্রাইজ! মিস্টার আব্দুল লতিফ।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“এখানে কি হচ্ছে আমাকে কেউ বলবে?”
তখন আরহাম বলল,,
“আমি বলছি সত্যি টা তো হলো এই আমাদের মা এখান থেকে পালিয়ে যান নি তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল। আর সেটা করেছিলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় বড় কাকা এবং সেই রটিয়েছিল আমার মা কারো সাথে পালিয়ে গেছে।”
“তোমরা মিথ্যে বলছো। বাবা ওরা মিথ্যা বলছে আমি এরকম কিছুই করি নি।”
আব্দুল লতিফ এর কথায় আনোয়ার খান বললেন,,
‘ও আমাদের বাড়ির ছেলে ও কেন করবে নিজের বাড়ির বদনাম।”
“কিন্তু করেছে তো সেই তার জন্যই আমাদের জীবন এরকম তার জন্য আমরা আমাদের মাকে হাড়িয়েছিলাম। তার জন্য আমার বাবা মারা গেছেন এবং তার জন্যই আমি দুই বার মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি।”
“কি বলছো তোমরা আমি এগুলো কিছুই বিশ্বাস করি না। আমার ছেলে আমাদের খুব ভালোবাসে মাহমুদ কেও ভালোবাসতো। তাহলে ও কি করে মাহমুদ আর এর স্ত্রী সন্তানদের সাথে এরকম করতে পারে।”
“কারন পালিত ছেলে কখনো আপন ছেলে হতে পারে নি তাই মিস্টার আনোয়ার খান। ”
~চলবে,,