গল্পের নামঃ #প্রণয় #পর্বসংখ্যা_০৮(বোনাস)

0
1086

গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_০৮(বোনাস)
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

অফিসে রাগারাগি করে আজ বেশ তাড়াতাড়িই বেড়িয়ে গেছিল পৃথিশা।বাড়িতেও যায়নি,এনজিওতে বাচ্চাদের সাথে পুরোটা সময় কাটিয়েছে।
তাই আজ পৃথিশা বেশ রাত হয়ে গেছে।বাড়ির রাস্তায় পা বাড়াতেই দেখতে পায় গলিতে পাড়ার কিছু বখাটে আড্ডা দিচ্ছে।পৃথিশা হেলদেল না করে তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে থাকে।ছেলেগুলোকে কিছু না বলায় মনে মনে স্বস্তি অনুভব করে।কিছুক্ষণ পর হাতে টান অনুভব করলে পেছন না ফিরেই হাত ধরে রাখা মানুষটার মুখে থাপ্পর মেরে দিলো।পেছন ফিরার আগেই গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ এলো,

-“তোর এতো সাহস পৃথি,তুই আমাকে থাপ্পর মারিস!”

পৃথিশা থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো।তার মনে হলো তার পা দুটো মাটির নিচ থেকে কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।কাঁপতে কাঁপতে পিছনে ঘুরলো সে।মারুফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে এলো।
কাঁপা কাঁপা স্বরে পৃথিশা বলল, “মারুফ ভাই আমি কি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি?”
মারুফ নির্বিকার ভাবে বলল,”এখন এসব জড়াজড়ির মুডে নাই আমি।”
পৃথিশা ঝড়ঝড়িয়ে কেঁদে ফেলল।এই বাজে লোকটার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করেছে সে। নিজের বয়স বাড়িয়েছে।মারুফ গম্ভীর স্বরে বলল, “তোর শাস্তি পাওনা আছে পৃথি,তুই আমাকে থাপ্পর মেরেছিস!”
পৃথিশা কোন কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বসে পড়ল।মারুফ পৃথিশার সামনে বসলে পৃথিশা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।মারুফ মুখ শক্ত করে বসে আছে।পৃথিশা আবারো ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল,এই মূহূর্তে তার মনে হচ্ছে মারুফ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠোর মানুষগুলোর মধ্যে একজন।
মারুফকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করতেই হাতে টান পড়লো তার।পৃথিশা বুঝতে পারলো পেছন থেকে মারুফ তার হাত ধরে আছে।রাগে হাত ঝাড়া দিয়ে হাঁটা শুরু করলো সে।
পেছন থেকে কাঠকাঠ কন্ঠে আওয়াজ এলো,”আর এক পা বাড়ালে ঠাটিয়ে চড় মারবো বেয়াদব!”
পৃথিশা তেড়ে আসলো।মারুফের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলল,'”ওহ্ আপনার কথা না শুনায় এখন আমি বেয়াদব।আসলে আমারই ভুল হয়েছে আপনার মতো কাঠখোট্টা লোকের জন্য সাত সাতটা বছর অপেক্ষা করা।এখন তো মনে হচ্ছে কোন সুন্দর ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলাই উচিত ছিল।”
মারুফ রাগে নিজের কলার ছাড়িতে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখলো।পৃথিশা নাক টেনে কাঁদতে লাগলো।

নিস্তব্ধতায় ভরপুর রাত, মাঝে মাঝে এক-দুইটা পাখি ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাচ্ছে। দুজনের মধ্যে কেউ কোন কথা বলছে না।কিছুক্ষণ পর হুট করেই মারুফ কাতর স্বরে বলে উঠল, “আই মিস ইউ পৃথিরানী! ”
ব্যস!পৃথিশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।নিজেকে সামলাতে পারলো না।
মারুফ পৃথিশার ডান হাত মুঠ ধরে বলল, “আমার বউ হবি পৃথিশা?”
কান্নারত চোখে তাকিয়ে পৃথিশা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।কান্নার কারনে ইতিমধ্যে তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে।মারুফ পৃথিশাকে টেনে নিয়ে বলল, “কাজী অফিসে চল তাড়াতাড়ি।”
পৃথিশা কান্না থামিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল, “আম্মু-আব্বুকে তো জানাতে হবে।তাদের ছাড়া বিয়ে করব কীভাবে?”
মারুফ হেসে বলল, “আমি আজ দুপুরে ফিরেই সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দিয়েছি।সবাই মেনে নিয়েছে।এখন চল তাড়াতাড়ি।সবাই ওখানেই আছে।”
পৃথিশা আবারো জিজ্ঞেস করলো, “বাড়িতে কেন হচ্ছে না বিয়ে?”
মারুফ ধৈর্যহারা হয়ে বলল, “আরে ভাই তোর কুটনী চাচী আছে।তাদের নিয়ে অন্তত শান্তিতে বিয়ে পড়ানো যাবে না।আয় তাড়াতাড়ি।”

মারুফ টানতে টানতে পৃথিশাকে নিয়ে যাচ্ছে।পৃথিশা পেছনে বাধ্য মেয়ের তো হাঁটছে।মেইন রাস্তায় পাড় হওয়ার সময় মারুফ যখন পৃথিশার হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন পৃথিশা আবারো বুঝেছে সে ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি!”

?

কাজী অফিসে গিয়ে অনেকটা ঘোরের মধ্যেই ছিল পৃথিশা।যন্ত্রের মতো রেজিষ্টার পেপারে সাইন করে দিয়েছে।যখন কবুলটাও ঘোরের মাঝেই বলে দেয় সে।সবটা তার কাছে এখনো স্বপ্ন।
মারুফের মা ও পৃথিশার বাবা-মা কথা বলে ঠিক করলো একমাসের মধ্যেই তাদের অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেয়া হবে।মারুফের বাবা না থাকায় তার মাকেই সব দিক সামলাতে হচ্ছে।
সেখানে থাকার এক পর্যায়ে পৃথিশাকে এক কোণায় টেনে নিয়ে মারুফের মা বললেন,”আমায় ক্ষমা করেছিস তো পৃ!”
পৃথিশা অবাক হয়ে বলল, “ছিহ্ খালা আপনি এসব কি বলছেন।আপনাকে ক্ষমা করার আমি কে?”
মারুফের মা অপরাধবোধ নিয়ে বললেন, “আমার ভুলপর জন্যই তো তোদের এতদিন কষ্ট করা লাগলো।আমি যদি তখন মারুফের কাকীর কথায় রাজী না হতাম তাহলে কিছুই হতো না!”
পৃথিশা তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “খালা যা হয় ভালোর জন্যই হয়।হয়ত আমাদের নসিবে এটাই ছিলো।”
মারুফের মা পৃথিশাকে জড়িয়ে ধরলেন।

?

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চা খাচ্ছে পৃথিশা। কিছুক্ষণ আগে মারুফ তাকে টঙের দোকান থেকে চা এনে দিয়েছে।পৃথিশা মারুফকে খেতে বলেছিল কিন্তু সে নেয়নি।কেন নেয়নি তার কারনও পৃথিশা ভালোমতেই জানে। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে পৃথিশা বলে উঠল, “আপনি বদলাননি তাইনা মারুফ ভাই।”
মারুফ হুংকার দিয়ে বলে উঠল, “এ্যাই মেয়ে এ্যাই!আমি তোর ভাই লাগি?কিছুক্ষণ আগে বিয়ে হলো আমাদের সে এখনো ভাই ভাই করছে।”
চুপসে গেলো পৃথিশা।নিচু স্বরে বলল, “আসলে আগের অভ্যাস তো!”
মারুফ গমগমে স্বরে বলল, “হুম।অভ্যাস করে ফেলবি!”
মারুফ হুট করে বলে উঠলো,

-“জানিস পৃথি!মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগতো,মাথা ফাঁকা হয়ে যেতো।তোদের ছেড়ে দূরে থাকতে অনেক কষ্ট হতো।নিজেকে সামলাতে পারতাম না।ঘুমের ঔষধ খেয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়তাম।রাগের বসে নিজের ক্ষতি করতাম।খুব কষ্ট হতো খুব।”

পৃথিশার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।সে নিজেও তো এমন কষ্টের সময় পার করেছে। মারুফ এগিয়ে এসে পৃথিশার গালে দুহাত রেখে কপালে চুমু খেলো।
কিছুটা আবেশ, কিছুটা ভালোবাসার উষ্ণতায় পৃথিশার দুই গাল বেয়ে সুখের অশ্রুকণা ঝড়ে পড়লো!

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here