গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_০২
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত
পৃথিশা ধরা গলায় বলে উঠল,
“দেখ আপাই,লোকটার মনে হয় মেয়ে হয়েছে!”
নীতি অবাক স্বরে বলে উঠল, “আরে তুই তো দেখছি কিছুই জানিস না!এটা তো মারুফের চাচাতো ভাইয়ের বউ আর মেয়ে।”
পৃথিশা চোখ মুছে নীতির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলল,”তাহলে ওরা ওনার রুমে কেন?”
নাতি বিরক্তি নিয়ে বলতে শুরু করলো,”আরে মারুফকে তো বিয়ের আগে রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।পরেরদিন মারুফের মা নিজের কপাল চাপড়ে কান্না করতে বলছিলো সে নাকি তার ছেলের সুখ কেড়ে নিয়েছে।মারুফের কাকীর সাথে তো তিনি সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে,কারন নেহার নাকি আরো কিছু ছেলের সাথে আগে সম্পর্ক ছিল।সেগুলো মারুফের কাকী জানার পরও লুকিয়ে গেছে।”
পৃথিশার হতভম্ব হয়ে সবটা শুনলো।একবুক আশা নিয়ে নীতির দিকে চেয়ে বলল,”তাহলে ওনি কোথায় এখন?”
নীতি দুষ্টুমি করে বলল,”এই ‘ওনি’ টা কে রে।আমিতো তো ওনি নামে কাউকে চিনি না!”
পৃথিশার মুখটা রক্তিম হয়ে গেলো।লজ্জায় গাল দুটো ফুলে লাল হয়ে গেলো।নীতি হেসে দিয়ে পৃথিশার গাল টিপে দিল। পৃথিশা আবারো জিজ্ঞেস করলো,”আপু বলোনা!ওনি কোথায়?”
নীতি বিষন্ন স্বরে বলে উঠল,”মারুফ কোথায় তা কেউ জানে না!মারুফ পালিয়ে যাওয়ার পরেরদিন বিজ্রের নিচে একটা লাশ ভাসতে দেখা গিয়েছিল।কিন্তু ওটা মারুফের লাশ ছিল না।ও কোথায় এটা কেউ জানে না!”
পৃথিশার বুক ধক্ করে উঠলো।লোকটা কোথায় চলে গেছে তাকে ছেড়ে!ওই রাগী লোকটাকে ছাড়া পৃথিশা কীভাবে থাকবে এখানে,কীভাবে!
?
ফোলা ফোলা চোখে পৃথিশা যখন রাতে খাবার টেবিলে বসলো তখনই তার মা সুমিতা বেগম আন্দাজ করে ফেলেছেন কি হয়েছে।পৃথিশার খাওয়া শেষ হলে তার হাত টেনে ছাঁদে নিয়ে যান।মায়ের এমন কাজে পৃথিশা অবাক হয়ে যায়।আরো বেশি অবাক হয় যখন সুমিতা বেগম জিজ্ঞেস করেন,”কিরে মারুফকে ভালোবাসিস?”
পৃথিশাকে অবাক হতে দেখে সুমিতা বেগম আবারো বলে উঠেন,”অবাক হলি নাকি?আমি কীভাবে সব জানি?শুন তাহলে,মারুফ যাওয়ার আগে সবার কাছে আলাদা আলাদা চিঠি দিয়ে গেছে।আমাকে আর তোর বাবাকেও একটা চিঠি দিয়েছে।সেখানেই বলা ছিল যে তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস।তোর বাবা বেশ আফসোস করেছিল।তখনই আমরা তোর এভাবে হুট বিদেশে যাওয়ার কারন বুঝতে পেরেছিলাম। তোকেও একটা চিঠি দিয়েছিল তোর বুকশেল্ফের মধ্যে আছে।”
পৃথিশা নিচে যাওয়ার শক্তি পেল না।সুমিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরে সেখানেই কান্নায় ভেঙে পড়ল।সুমিতা বেগম পৃথিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,”পাগলী মেয়ে,আমাকে বললেই তো আমি ব্যবস্হা করতে পারতাম।অকারণে তোরা দু’জন কষ্ট পাচ্ছিস!”
পৃথিশা মাকে ছেড়ে দৌড়ে নিচে চলে এলো।এলোমেলো পায়ে নিজের রুমে ঢুকে বুকশেল্ফটা হাতড়াতে থাকলো।অবশেষে একটা বইয়ের ভাঁজে কালো রঙের চিরকুট খুঁজে পেলো।কাঁপা হাতে ধীরে ধীরে কাগজটা খুলল সে।চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে বারবার।ওড়না দিয়ে চোখ মুছে চিঠিটা পড়া শুরু করলো সে,
-“এই পৃথি,কত বছর পর চিঠিটা তোর হাতে পৌঁছালো?কিংবা চিঠিটা আদৌ তুই পাবি কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।শুন,আমি না তোকে ভালোবাসি।জানি কখনও তোকে মুখে বলিনি,তুই-ও বলিসনি। কিন্তু আজ না বলে থাকতে পারলাম না।তোর মনে আছে, একদিন তুই স্কুলে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ অনুষ্ঠানে লাল শাড়ি পড়ে বউ সেজেছিলি।সেদিন থেকে আমি কৈশোর স্বপ্ন দেখতাম তুই লাল শাড়ি পড়ে আবারো বউ হবি,আমার বউ! পৃথি শোন,আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি?আমি তোকে আমার বউ করে নিতে আসব,আমার বউ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি?”
পৃথিশা শরীর নেতিয়ে পড়লো,তার শ্বাস আটকে আসতে চাইছে,চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছে। চিঠিটা বুকে চেপে ধরে বলল, “আমি অপেক্ষা করব মারুফ ভাই,আমি আবারো বউ সাজার অপেক্ষা করব।”
?
ছয়মাস হয়ে গেছে পৃথিশা বিদেশ থেকে ফিরেছে।বাসায় বসেই দিন কাটাচ্ছে সে।খুব কম বাহিরে যায় এখন,কথাবার্তাও কমিয়ে দিয়েছে।একপ্রকার ঘর নিজেকে ঘরে বন্দী করে রেখেছে নিজেকে। এর মধ্যেই আবার একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।পৃথিশার ছোট চাচী পৃথিশার জন্য সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে।পৃথিশা এখনো সে কথা জানে না।পৃথিশা মা ভয়েই মেয়েকে এই কথা বলেননি,জানলে যে তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে সেটা তিনি ভালোমতোই জানেন।
নিজের ঘরে বসে উপন্যাস পড়ছিল পৃথিশা।উপন্যাসের নাম “পথের পাঁচালী”, উপন্যাসটা তার বেশ কয়েকবার পড়া হয়েছে।তবে যতবার পড়েছে সবসময়ই দুর্গার মারা যাওয়ার আগ মূহুর্তে পড়া সে বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যান্য মানুষের কাছে দুর্গা মৃত হলেও,তার কল্পনায় এখনো জীবিত।পৃথিশা জানে এমন করলে উপন্যাস পড়ার মজাটা নষ্ট হয়ে যায়,কিন্তু সে তো দুঃখের সমাপ্তি সহ্য করতে পারে না!
কিছুক্ষণ পরই পৃথিশার মা রুমে ঢুকে তাকে একটা সুতির থিপ্রিস দিয়ে বলল,
“এই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে তো!”
পৃথিশা বইয়ে বুকমার্ক রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,”কেন মা?কোথাও যাবো নাকি?”
পৃথিশার মা ঢোক গিলে পৃথিশাকে বললেন,”তুই আগে তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
পৃথিশার মা চলে গেলে পৃথিশা কিছুক্ষণ বিছানায় মরার মতো শুয়ে থাকে।তারপর উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হতে লেগে পড়ে।কিছুক্ষণ পর পৃথিশার চাচাতো আনিকা বোন এসে তাকে বসার ঘরে নিয়ে যায়।সেখানে অনেক লোকজন দেখে পৃথিশা অবাক হয়ে আনিকার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে,’এসব কি?’
আনিকা ফিসফিসেয়ে বলে উঠে, “ছোট চাচী তোর জন্য সম্বন্ধ এনেছে।তোকে বলেনি কেউ?”
পৃথিশার রাগে গা জ্বলে উঠে।মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই পৃথিশা দেখে সুমিতা বেগম অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন।পৃথিশার দৃষ্টি নরম হয়ে এলো।অভাবের সংসারে ছোট চাচা একটু বেশি টাকা খরচ করে,তাই ছোট চাচীর দাপট-টাও বেশি।ছোট চাচী তার কথা দ্বারাই যেকোন মানুষকে আহত করতে পারবে।সেই জায়গায় সুমিতা বেগমের কিছু করার নেই!
মুখ শক্ত রেখে পৃথিশা তাদের সামনে গিয়ে বসলো।ছেলে আসেনি কিন্তু তার পরিবার এসেছে।ছেলের খালা পৃথিশার ঘোমটা ফেলে তার চুল হাতিয়ে হাতিয়ে দেখতে লাগলেন।কিছুক্ষণ এটা-সেটা দেখা আর জিজ্ঞেস করার পর বলল,
-“মেয়ের গায়ের রং তো শ্যামলা,এমন মেয়েকে কি আমাদের ছেলের পাশে মানাবে নাকি?তবে আপনারা যদি কিছু উপহার-সামগ্রীর ব্যবস্হা করতে পারেন তাহলে আমরা কথা আগাতে পারি!”
চলবে,
ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।আপনাদের মতামতের ও রেসপন্সের আশা করছি ??