গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_১০
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত
মারুফ অনেকক্ষণ ধরে পৃথিশাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু স্যুপ দেখে পৃথিশা কোনভাবেই খেতে চাচ্ছেনা।শেষে মারুফের ধমকে চোখ-মুখ ফুলিয়ে রেখে দিয়েছে।
মারুফ মুখ চেপে ধরে পৃথিশাকে পুরো স্যুপটা খায়িয়ে দিলো।কিন্তু সমস্যাটা বাঁধলো যখন শেষ চামচ খাওয়ানোর পর পৃথিশা বমি করে পুরো খাবারটা ফেলে দিলো। মারুফের গায়েও বমির কিছু অংশ ছিটকে লেগেছে।
মুখ চেপে ধরে কাশতে কাশতে কেঁদে দিলো পৃথিশা।প্রতিবারই এমন হয় না খেয়ে থাকলে।মারুফ এগিয়ে এসে পৃথিশার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো। পকেট থেকে রুমাল বের করে পৃথিশার মুখটা মুছিয়ে দিয়ে পানি খায়িয়ে দিলো।
নার্সকে ডেকে বিছানার চাদরটা পাল্টিয়ে দিতে বললো।সেই সাথে পৃথিশাকেও হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতে বললো। সেই সাথে নিজেও শার্ট পাল্টাতে চলে গেল।হসপিটালে থাকতে হবে তাই আগেভাগেই এক্সট্রা ড্রেস নিয়ে রেখে দিয়েছিল।
ফ্রেশ হয়ে এসে পৃথিশাকে মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখে মারুফ তাকে জিজ্ঞেস করলো,”কি হলো এখনও মুখ ফুলানো যে?খারাপ লাগছে?”
পৃথিশা গম্ভীর স্বরে বলল, “ওই নার্স আমার কাছে আপনার নাম্বার চেয়েছে।”
মারুফ ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর তার সময়টা বোধগম্য হলো।পৃথিশার দিকে উত্তপ্তকর হাসি নিক্ষেপ করে বললো,”দিয়ে দিতি!”
চোখ-মুখ কুঁচকে মুখ ঝামটা দিয়ে মারুফকে বলল, “হে এখন তো আমাকে আর ভালো লাগবে না।বুড়ি হয়ে গেছিনা আমাকে কেন ভালো লাগবে।”
মুখ শক্ত করে পৃথিশার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মারুফ। জোর করে পৃথিশাকে শুয়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমাতে বলল।ক্লান্ত থাকায় বালিশে মুখ গুজে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল পৃথিশা।
?
মারুফের কাকী অর্থাৎ যিনি অন্য একজন মেয়ের সাথে মারুফের বিয়ে ঠিক করেছিলেন মারুফ ফিরে আসার কথা শুনে তিনি আবারও হাজির হয়েছেন তাদের বাড়িতে। প্রথমে এসেই মারুফের মা রিনা খাতুনকে হাত ধরে মাফ চেয়ে তার মন গলিয়ে নিলো।রিনা খাতুনও অতিরিক্ত ভালো মানুষ হয়ে তার উদ্দেশ্য ধরতে না পেরে ক্ষমা করে দিলো।এবার তিনি রিনা খাতুনকে বোঝাতে লাগলেন বিয়ে করার উপকারিতা!
তার কথার মূল উদ্দেশ্য এটাই যে তার মেয়েকে বিয়ে করলে মারুফের জীবনটা সুখে ভরপুর হয়ে যাবে।এমনকি রিনা খাতুনকেও কোন কষ্ট করতে হবে না। একপ্রকার রিনা খাতুনের ব্রেন ওয়াশ করেই তিনি বাড়ি থেকে বিদায় নিলেন।
মারুফের কাকীর কথা শুনে রিনা খাতুন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।মারুফের বিয়ে হয়ে গেছে পৃথিশার সাথে তাও আবার কাল রাতেই।এতে তার কোন আপত্তি নেই বরং খুশিই হয়েছেন।কিন্তু মুখের উপর মারুফের কাকীকে কীভাবে নিষেধ করবেন তা তিনি বুঝে পাচ্ছেন না। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বড় বোন বিভাকে ফোন দিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন তিনি।
বিভা খাতুন সব শুনেই ঝাঁঝিয়ে বলে উঠেন, “তোর মাথায় কি বুদ্ধি-সুদ্ধি নাই।সরাসরি না করে দে।এত দরদ দেখানোর দরকার নাই।”
রিনা খাতুন সন্দিহান কন্ঠে বলেন, “সরাসরি কেমনে নিষেধ করবো আপা।সরাসরি না বলা যায় নাকি।”
বিভা খাতুনের সাথে সলা-পরামর্শ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মারুফ-পৃথিশার বিয়ের খবর খুব দ্রুতই সবাইকে জানাতে হবে।নাহলে আরও সমস্যা বাঁধবে।আবার ওদের চলা-ফেরা অনেকের চোখে দৃষ্টিকটুও লাগতে পারে।তাই যতদ্রুত সম্ভব সব ঠিক করে নিতে হবে।
পৃথিশার মা-বাবার সাথে কথা বলে তিনিই পরশু দিনই তাদের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার কথা তুললেন।পৃথিশার বাবা-মায়ের সম্মতিতে বড় বোনের সাহায্যে তিনি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেন।
?
হসপিটালের সকল ফর্মালিটি শেষ হওয়ার পর পৃথিশা রেডি হচ্ছিল বাড়িতে যাওয়ার জন্য।এতদিন অফিসে অসুস্হতার কথা বলে ছুটি নিয়েছিল।কিন্তু কাল থেকে আবার যেতে হবে।কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও তার মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার উঁকি দিচ্ছে তা হলো মারুফ এতদিন কোথায় থেকেছে?কি করেছে?
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজই মারুফকে প্রশ্নটা করবে।
ফোন কানে নিয়ে কেবিনে মারুফকে কেবিনে প্রবেশ করতে দেখে নিজের নিকাবটা ঠিকমতো বেঁধে নিলো পৃথিশা।মারুফ ফোন রেখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “রেডি?”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো পৃথিশা। পৃথিশাকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?কিছু বলবি?”
পৃথিশা মাথা নাড়লো। ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?মানে এই পাঁচবছর কি করেছেন?”
মারুফ জানতো পৃথিশা এমন প্রশ্নই করবে।ধীর কন্ঠে বলল, “মা বিয়ে ঠিক করে ফেলার পর কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তারপর আমার এক পরিচিত একজনকে বলায় সে আমাকে বলে তার কাছে চলে যেতে।আমি ও নিরুপায় হয়ে কাউকে না জানিয়ে তার কাছে চলে যাই।সেখান থেকেই পড়াশোনাটা শেষ করি।তিনটা টিউশনি করে নিজের প্রয়োজনীয় খরচ মিটাতাম।আর তার বাসায় আমাকে থাকতে দিতো তার ভাগ্নীকে পড়ানোর সুবাদে। পড়াশোনা একবছর পরই শেষ হয়ে যায়।তারপর দেশে থেকেই অনলাইনে কয়েকটা ডিগ্রি কমপ্লিট করি।এটলাস্ট চারবছর পর ভালো হাসপাতালে সাইক্রিয়াটিস্ট হতে পারি।চাকরিটা পার্মানেন্ট হওয়ার একমাস পরেই আমি এখানে ফিরে আসি।”
পৃথিশা অবাক হয়ে সবটা শুনলো।মারুফের বলা শেষ হলে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার ওখানে থাকতে কষ্ট হতো না?আপনি তো নিজের বিছানা ছাড়া অন্য কোথাও সহজে ঘুমাতে পারেন না।আপনার মাথা ব্যাথা হলে আপনি চা খান,ওখানে মাথা ব্যাথা হলে কি করতেন?আপনি তো প্রচুর ঝাল খান তাহলে সে বাড়িতে গিয়ে ওখানকার খাদ্যভাসের সাথে কিভাবে মানিয়েছেন?”
মারুফ মুচকি শেষে বলল, “মাঝে মাঝে পরিস্হিতি আমাদের মানিয়ে নিতে শিখিয়ে দেয়।”
কিছুক্ষণ পর চুপ থেকে মারুফ আবার বলল,”এবার বেরোতে হবে,, তাড়াতাড়ি আয়।”
হসপিটাল থেকে বের হয়ে মারুফ একটা রিকশা ডেকে পৃথিশাকে তুলে দিয়ে বলল,”তুই চলে যা আমার কিছু কাজ আছে এখানে।আমি পরে আসবো।”
তারপর রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলে, “মামা সাবধানে নিয়ে যাবেন।আর রিক্সার হুডটা তুলে দিন।”
রিকশাওয়ালা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মারুফ হাঁটা ধরলো।সে ইচ্ছে করেই রিকশা ভাড়া দেয়নি।সে জানে পৃথিশা সেল্ফ রেসপেক্ট অনেক বেশি।এখানে পৃথিশা সাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও তার সামনে রিকশা ভাড়া দেওয়াটা অপমানের পর্যায়ে পড়ে।
?
বাড়িতে পৌঁছে ঘরের পর্দা-চাদর পাল্টানো,মাছ-মাংস কাটাকাটি দেখে পৃথিশা মাকে এককোণায় ডেকে জিজ্ঞেস করলো এসবের ব্যাপারে।পৃথিশার মা ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে কথা এড়িয়ে গেল।
কারো কাছে কোন উত্তর না পেয়ে পৃথিশা ঘরে এসে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
মারুফের মা খুশি মনেই বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।কিন্তু তার খুশিতে ভাটা পড়লো যখন মারুফের কাকী তার মেয়ে অনামিকাকে নিয়ে তার বাড়িতে এসে উপস্হিত হলো।
চলবে,,