গর্ভধারিণী শেষ পর্ব

0
490

#গর্ভধারিনী
পর্ব—১৩ এবং শেষ পর্ব
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

দোয়াতের বাড়িতে গিয়ে আম্মা আর মর্জিনা ফুপুর মাথায় যেনো বাজ পড়লো।আম্মা এমন একটা সংবাদ পেলো যেটা সে কখনোই আশা করেনি।আর সেটা হলো দোয়াতকে কয়েকবছর আগেই খু ন করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।তবে কে আর কিভাবে খুন করেছে কেউ বলতে পারে না।দোয়াতের মা আম্মাকে এককটা ঘড়ি দেখিয়ে বললো।

—এই ঘড়িটা আমরা নদীর পাড়ে দোয়াতের রক্তাক্ত জামার কাছে পেয়েছিলাম।আমরা জানি এটা তারই ঘড়ি যে দোয়াতকে খুন করেছে।

—কিন্তু আপনি এটা পুলিশের কাছে কেনো দিলেন না,হয়তো পুলিশ এই ঘড়ির মাধ্যমেই আপনার ছেলের খুনিকে খুঁজে বের করতে পারতো।
(মর্জিনা ফুপুর প্রশ্ন!)

–হ্যাঁ,পারতো বটে।কিন্তু আমি যে সেটা চাইনি কখনো।এখনো চাই না আমার ছেলের খুনি প্রকাশ্যে আসুক।

—অদ্ভুদ কথা বলছেন,আপনি মা হয়ে চান না আপনার ছেলে সুবিচার পাক?

—ছেলে….কে ছেলে….ঐ কুলাঙ্গারটা…?ও আমার ছেলে নয়,আর তোমরা দয়া করে ওর নাম উচ্চারণ করো না আমার সামনে।

—আপনি এভাবে কেনো বলছেন,সে কি কোনো…

—বলেছি না,আমি ওর বিষয়ে একটাও কথা বলতে চাই না।তবে হ্যাঁ,যদি কোনোদিন ঐ খুনির দেখা পাই তাকে একটা ধন্যবাদ অবশ্যই দেবো আমি যে কিনা আমাকে একটা কুলাঙ্গারের মা হিসেবে বেঁচে থাকার থেকে চিরজীবনের জন্য নিস্তার দিয়েছে।

আম্মা এতোক্ষণ চুপ করে মর্জিনা ফুপু আর দোয়াতের মায়ের কথা শুনছিলো।অবশেষে সে তার মুখ খুললো।

—আজ থেকে আট বছর আগে আপনার ছেলে যার সাথে জঘন্য কাজটা করেছিলো সে আর কেউ নয়,আমি।আমি সেই,যাকে একদিন আপনার ছেলের লালসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে হয়েছিলো,সেই জ্বলন আজও ঘোচিনি আমার।

—কি বললে মা?তার মানে তুমিই সেই আদিবা…যাকে আমার ছেলে…

—হ্যাঁ,আমিই আদিবা।

—জানো তো,আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো।তুমি এসেছো আমার বাড়িতে,

—আমাকে যে আসতেই হলো,এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।

—কিন্তু এতোগুলো বছর পরে তুমি দোয়াতের খোঁজ করতে কেনো এসেছো,ওর কাছে কি এমন কাজ আমার?

—আপনি চিন্তা করবেন না।আমি যা জানার জেনে গেছি।আর আমি এটাও বুঝতে পেরেছি কে খুন করেছে আপনার ছেলেকে।

আম্মার কথা শুনে ভদ্রমহিলা নির্বাক।সে নিজেও বুঝতে পারছে না আম্মাকে কি বলবে।আম্মা আর সময় নষ্ট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।মর্জিনা ফুপু আম্মাকে উদ্দেশ্যে করে প্রশ্ন করে।

—তখন কি বললে তুমি,তুমি জানো কে দোয়াতকে খুন করেছে?

—আগে জানতাম না,কিন্তু এখন জানি!

—তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি,

—ঐ ঘড়িটা কার জানো তুমি….?

—ও হ্যাঁ,উনি তো একটা ঘড়ি দেখিয়েছিলেন,আর এটাও বলেছিলেন ঘড়িটা তার ছেলের লাশের পাশেই পাওয়া যায়।উনি বিষয়টা পুলিশকেও জানায়নি যাতে পুলিশ আসল খুনিকে খুঁজে না পায়।

—কিন্তু আমি তো খুঁজে পেয়েছি।দোয়াতের খুনি আর কেউ নয়,আকাইদের আব্বা দোয়াতকে খুন করেছে।

—ভাবী,তুমি এগুলো কি বলছো?আকাইদ ভাইজান দোয়াতকে চিনতো তার মানে,আর উনি তাকে খুনই বা করতে গেলেন কেনো?

—আমার কাছে এখন সবটা জলের মতো পরিষ্কার।চলো তোমায় যেতে যেতে বলছি।






এদিকে আমাকে নিয়ে ঐ লোকটা বাড়িতে উপস্থিত হয়।লোকটা মর্জিনা ফুপুকে না পেয়ে বিপাকে পড়ে গেলো।অবশেষে সে আব্বার হাতে ধরা পড়ে।আব্বা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো।আমায় কোথা থেকে পেয়েছে,কেনো নিয়ে এসেছে?আব্বার প্রশ্নবাণে লোকটা একপ্রকার কোনঠাসা হয়ে পড়ে,এরপর সত্যিটা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে মর্জিনা ফুপুই সবটা করিয়েছে তাকে।আব্বা সমস্ত কথা শুনে লোকটাকে ছেড়ে দেয় আর আমাকে বলে ঘরের ভেতরে যেতে।আমি ঘরের ভেতরে গেলাম।আব্বা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো,কেনো দিলো আমি জানি না।তবে আমার একটু একটু ভয় হতে লাগলো।কিছুক্ষণ পরে আব্বা হাতে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে,তারপর দরজাটা আবারও বন্ধ করে দিলো।এবার আমি সত‌্যি সত্যি খুব ভয় পেয়ে গেলাম।ভয়ার্ত কন্ঠে আব্বাকে উদ্দেশ্য করে বলি।

—একি আব্বা তোমার হাতে কি এটা,তুমি এইডা নিয়া ঘরের ভেতরে ঢুকছো কেনো?

—আজ আমি একটা কাজ করবো,যা আমার অনেক আগেই করা উচিত ছিলো,

—কি কাজ ?

—আজ তোকে এই ছুড়ি দিয়ে জ বা ই করবো,কোরবানিতে গরু ছাগল কেমন জ বা ই করে দেখছিস ঠিক সেই ভাবে।

আব্বার কথা শুনে আমার হাত পা ভয়ে কাঁপতে লাগলো।আজ বুঝি আর শেষ রক্ষা হলো না।

—আব্বা কি কইতেছো এসব তুমি?পাগল হইয়া গেছো নাকি?

—চুপ কর,কে তোর আব্বা।আমি তোর কোনো আব্বা না।

—না,মিথ্যা কইতেছো তুমি,তুমিই আমার আব্বা।

—বললাম তো আমি তোর কোনো আব্বা নই,

—তুমি আমার আব্বা না হইলে কে আমার আব্বা বলো।কোথায় সে,

—হ রে,এতোক্ষণে একটা ভালো প্রশ্ন করছিস।তোর আব্বা কোথায়,আমি তোরে তার কাছেই পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।আটটা বছর ধরে সে যে তোর জন্যই জাহান্নামে অপেক্ষা করতেছে।

—আব্বা তুমি কি কইতেছো এগুলা,আমার খুব ভয় করছে।

—এইতো আরেকটু সময়,আজ তোর সব ভয় দূর করে দেবো আমি।প্রথমে তোর আসল বাপরে শেষ করছি,এরপর তোর মারে এখন তোর পালা।

—আমার মারে কেনো মারলা তুমি,কি ক্ষতি করছিলো আমার আম্মা তোমারে বলো?

—তোর আম্মা কী করছে শুনতে চাস,শোন তবে,তুই যে আমার ছেলে না তোর আম্মা সেইডা আমার থেকে লুকাইয়া দিনের পর দিন আমারে ঠকাইছে।এরপর যখন জানতে পারলাম তোর বাপ আরেকজন আগে তারে শেষ করলাম।তারে মে রে নদীতে ভাসিয়ে দিলাম।এরপর তোর আম্মারে শেষ করি আর এখন তোর পালা।

আমি ভয়ে চিৎকার জুড়ে দিলাম।অমনি আব্বা গিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরলো।তারপর একটা গামছা দিয়ে বেঁধে দেয়।

—মরবি যখন মরার আগে শুনে নে,তোর আম্মারে আমি দয়া করে বিয়া করছিলাম।কেউ বিয়ার আগেই সর্বনাশ করে দিছিলো তার,কিন্তু সেই লোক তারপর পালাইয়া যায়।আমি সবটা জেনে অনেক সম্পত্তির বিনিময়ে তোর আম্মাকে বিয়া করি।এর কয়েকমাস পরে তোর জন্ম হয়,আমি প্রথমে যে সন্দেহ করি নাই এমনটা নয়।এরপর একদিন জানতে পারি তুই আমার ছেলে নস,কেউ নস তুই আমার।তুই এ জানোয়ারের ফসল।আমি প্রথমেই তাকে খুন করি।এরপর সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকি কখন তোদের দুজনরে শেষ করা যায়।দেখ আজ সেই সুযোগ মিলে গেলো।তোরে এই বাঁচিয়ে রেখে কোনো লাভ নাই আমার,উল্টো তুই চোখের সামনে থাকলে আমি কোনোদিন ঘটা অন্যায়ের কথা ভুলতে পারবো না।

আমি শুধু আব্বার কথা শুনে যাচ্ছি।আমার মুখটা এমনভাবে বেঁধেছে শ্বাসটুক পর্যন্ত নিতে পারছি না,মনে হচ্ছে আব্বা মারার আগেই মরে যাবো।ধারালো ছুরিটা নিয়ে আব্বা আমার দিকে এগিয়ে আসলো।তারপর আমায় নিজের পা দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে।ছুরিটা আমার গলার কাছে ঠেকালো।নিজের মৃত্যুকে যেনো সাক্ষাৎ দর্শন করছি আমি,এই পাষন্ড লোকটার হাতেই আজ শেষ হতে হবে আমায়।নিজেকে সৃষ্টিকর্তার হাতে সঁপে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
ইতিমধ্যে আম্মা আর মর্জিনা ফুপু বাড়িতে ঢুকে পড়ে।ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে সন্দেহ হয় তাদের।প্রানপনে দরজা ধাক্কাতে থাকে তারা।আম্মা আর মর্জিনা ফুপুর অনাকাঙ্খিত আগমনে আব্বা ভীষণ মুশকিলে পড়ে গেলো।আম্মা আর মর্জিনা ফুপু একটু পরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়লো।আমাকে দেখেই আম্মা আকাইদ বলে চিৎকার জুড়ে দেয়।আব্বার আর বুঝতে বাকি রইলো না এ সত্যিই আমার আম্মা।আম্মা মারা যায়নি।আম্মা সেদিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার পরে ডাক্তাররাই হয়তো অন্য একটা লাশ আম্মার লাশ বলে গছিয়ে দিয়েছিলো।মুখ থেতলে যাবার মিথ্যে নাটকটা ডাক্তারদেরই বানানো।যাই হোক আব্বা আম্মাকে জীবিত অবস্থায় দেখে থতমত খেয়ে গেলো।আমাকে ছেড়ে দিয়ে অমনি আম্মার গলাটা চেপে ধরলো।মর্জিনা ফুপুও ঘরে নেই,সে লোক ডাকতে বাড়ির বাইরে গিয়েছে।আমি কিকরে আম্মাকে বাঁচাবো বুঝতে পারছি না।আব্বা এখনো আম্মার গলা চেপে ধরে আছে।

—তুই এখনো মরিস নাই,আজ তোকে তো শেষ করে দেবো আমি,বল আমায় এইভাবে কেনো ঠকালি তুই?কেনো বলিস নি এইটা আমার ছেলে না?

—আমি কিকরে বলতাম,আমি নিজেই জানতাম না তখন কোনোদিন আকাইদ দোয়াতের সন্তান।

—আমার সাথে একদম নাটক করবি না বলে দিলাম,তুই জানতি না তাইলে দোয়াত জানলো কিকরে,ও নিজে বলছে আমায়,এরপরেই আমি শেষ করে ফেলি ওরে।হয়তো ভাবছিলো ওর কথা শুনে আমি তোকে ছেড়ে দিবো।কিন্তু ওর জানটা যে আমার হাতেই যাবে এটা বুঝতে পারি নি।

—আমি সত্যিই কিছু জানতাম না বিশ্বাস করো,

—এখন বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোনো মূল্য নেই আমার কাছে।আজ তোকে আর তোর ছেলেকে নিজের হাতে শেষ করবো আমি।দরকার পড়লে তোদের মেরে জেলে যামু আমি,

আমি আর নিজের মধ্যে নেই।শুধু একটা কথাই জানি যেকরে হোক আম্মাকে বাঁচাতে হবে।হঠাৎ ধারালো ছুরিটা আমার চোখে পড়লো।ছুড়িটা হাতে নিলাম।লক্ষ্য করছি আমার হাত কাঁপছে।কাঁপা কাঁপা হাতে ধারালো চকচকে ছুরিটা সজোরে আব্বার পিঠে ঢুকিয়ে দিলাম।এই দৃশ্য দেখে আম্মা চিৎকার দিয়ে উঠলো।ইতিমধ্যে বাড়িতে লোকজন জড়ো হলো।আমাকে তারা ধরে একটা খুটির সাথে বেঁধে রাখে।আম্মা অনবরত কান্না করেই যাচ্ছে।মর্জিনা ফুপু তাকে স্বান্তনা দিতে লাগলো।






এর বিশ বছর পরে।আজ সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে আকাইদ।পথিমধ্যে এক মধ্যবয়স্ক লোকের সাথে তার দেখা।এতোক্ষণ তার কাছেই নিজের জীবনের সমস্ত বিবরণ বর্ননা করে সে।লোকটার বয়স ৫০ এর ঘরে সবে পা দিয়েছে।আকাইদের থেকে ওর জীবনের ঘটনা শুনে লোকটা নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না।আজ বিশ বছর পরে আকাইদ নিজের গর্ভধারিণী মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে এর থেকে আনন্দের ওর জীবনে আর কি হতে পারে।লোকটার থেকে বিদায় নিয়ে আকাইদ ট্রেন থেকে নেমে যাবে ঠিক তখন লোকটা ওকে পেছন থেকে ডাক দিলো।

–শোনো বাবা,

—বলুন চাচা।

—তুমি তো চলে যাচ্ছো,চলে যাবার আগে একটি বার তোমায় জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে দেই।

লোকটা আকাইদকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো।আকাইদ ট্রেন থেকে নেমে যায়।
একটা বছর বিশেকের মেয়ে ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।আকাইদকে দেখে সে ওর দিকে এগিয়ে আসলো।

—আপনি আকাইদ ভাইয়া তাই তো?

—হ্যাঁ,তুমি কে?

—আমি মানাল।আপনার মর্জিনা ফুপুর মেয়ে।

—ওহহ,আচ্ছা।তুমি চিনলে কিকরে আমায়?

—এমনি দেখেই বুঝেছি।আপনার আম্মাই আমায় পাঠিয়েছেন যেনো আমি আপনাকে রিসিভ করে নিয়ে যাই।

আকাইদ লক্ষ্য করলো মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে।এমন সুন্দর হাসি আগে কখনো দেখেনি আকাইদ।বেশ মনে ধরলো ওর।মানালের দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো,তারপর দুজনে দুজনের হাত ধরে বাড়ির দিকে রওয়না দেয়।

এদিকে ট্রেনের সেই লোকটা যতোদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায় ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।এরপর আবারো ট্রেন ছেড়ে দেয়।একটু পরে বগির ওপাশ থেকে একটা লোক এসে তাকে বললো!

—কি হলো দোয়াত ভাইজান!ছেলেটা কে ছিলো?সারা পথ তো ওর সাথেই গল্প করলেন।

—হ্যাঁ রে খুনের দায়ে ছেলেটা বিশ বছর জেল খেটেছে।অবশেষে আজ নিজের মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে।

–কি বলো এই বয়সে জেলে?

—হ রে,জীবনের গল্পই এতোক্ষণ ধরে বললো আমার কাছে।তবে ও জানে না ওর জীবনের সবথেকে বড়ো খলনায়কটা এখনো বেঁচে আছে।সে মরে নাই।

এই বলে লোকটা নিজের দুচোখ মুছলো,পাশের দাঁড়ানো লোকটা তার কথার তাৎপর্য বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে থাকে।

(?সমাপ্ত?)

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটাকে এতো ভালোবাসা দেবার জন্য।পুরোটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।ধন্যবাদ।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here