#খোঁজ ১৮তম_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান
পুলিশ অফিসার না শোনার ভান করে আবারও জিজ্ঞেস করলেন,আপনার বন্ধুর নামটা যেনো কি বললেন? হাবিবুর রহমান সাহেব আবারও বললেন, সৈয়দ শামসুল আলম!
অফিসার দ্বিধা ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি আপনার বন্ধু? জ্বি বাল্যকালের বন্ধু! আচ্ছা সে যাইহোক, তিনি কিন্তু একজন নাম করা ব্যবসায়ী মানুষ! তা তো অবশ্যই আপনি জানেন? তার বিরুদ্ধে এ-সব কাজে জড়িত থাকার অভিযোগটা একেবারে মামুলি কোন কথা নয় কিন্তু! বললেই কিন্তু লোকে তা বিশ্বাস করতে চাইবে না! কথাটা একবার ভেবে দেখেছেন তো? হাবিবুর রহমান চিন্তিত হয়ে অফিসারের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
অফিসার বলে চললেন, তারপর ধরুন অদিতি নামের যে মেয়েটা নিখোঁজ হয়েছে। যার জন্য এতো সব ঘটনা একের পর এক ঘটে গেছে। সে কিন্তু তার বড় ছেলের বউ! সেটা নিশ্চয়ই আপনি ভালো করেই জানেন? আর একজন ছেলের বউ কে তার শ্বশুর কেন অপহরণ করতে যাবে? তাও আবার উনার মতো একজন মানুষ!
কি কারণে এই জঘন্য কাজ করবেন তিনি? সমাজে তার মান সম্মান যে এতে করে বিনষ্ট হয়ে যাবে! সেই বোধবুদ্ধি কি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন বলে আপনার মনে হয়? অফিসার হাবিবুর রহমানের দিকে প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দিয়ে জবাব পাওয়ার আশায় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
হাবিবুর রহমান সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে কন্ঠটা একটু পরিষ্কার করে জবাব দিলেন, জ্বি অবশ্যই আমি তা জানি! অফিসার একটু চিন্তা করে বলেন, তবে তা আপনাকে প্রমাণ করে দেখাতে হবে, যে উনি তার পুত্র বধূর অপহরণের সাথে জড়িত! পারবেন তো প্রমাণ করতে?
হাবিবুর রহমান সাহেব পুলিশ অফিসারের এই কথাতে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে বললেন, স্যার! আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না যে, আলম তার পুত্রবধূকে অপহরণ করিয়াছে নাকি? এমনকি আমি তার পুত্র বধূকে কখনো সামনে থেকেও দেখিনি পর্যন্ত! আলম যখন যে ভাবে আমাকে বলেছে। আমি শুধু তা আজ্ঞাবহ দাসের মতো পালন করে গেছি।
অফিসার কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তা কোন প্রশ্ন না করেই আপনি কেন হুকুম গুলো পালন করে গেছেন? কিসের লোভ আপনাকে এই কাজে সাহায্য করার জন্য বাধ্য করেছে? হাবিবুর রহমান জবাব দিলেন, কোন লোভে পড়ে নয় স্যার!
অফিসার এবার একটুখানি হেসে জিজ্ঞেস করলেন, তবে কিসের জন্য এই কাজে তাঁকে আপনি সাহায্য করলেন? হাবিবুর রহমান সাহেব জবাব দিলেন, সে অনেক কথা স্যার! যাইহোক আপনি বলুন! আপনার কথা শোনার মতো যথেষ্ট সময় আমার হাতে আছে।
পুরো ঘটনা না শুনলে কেমন করে বুঝতে পারবো আপনি তার মতো সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান নষ্ট করার জন্যই মিথ্যা কথা বলছেন না? না স্যার! তা করবো কেন? অফিসার এক গ্লাস পানি পান করে বলেন, নিজে বাঁচার জন্য। এমনকি হয়তো তার সাথে আপনার পুরোনো কোন শত্রুতা আছে। তার প্রতিশোধ আপনি এভাবে নিতে চাচ্ছেন?
হাবিবুর রহমান আশ্চর্য হয়ে জবাব দেয়, তা কেন হবে স্যার? আলম আমার জীবনের সবচেয়ে উপকারী একজন বন্ধু! তার মতো মানুষের সাথে আমার শত্রুতার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। আচ্ছা মানলাম, আপনার সাথে তার কোন শত্রুতা নেই। কিন্তু বন্ধুত্বের কোন প্রমাণও তো দেখতে পাচ্ছি না!
এতো বড় জঘন্য কেসে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছেন! তবে তার কি কারণ? অফিসারের কথায় হাবিবুর রহমান সাহেব কিছুটা আশ্চর্য ও ব্যাথিত হলেন! বললেন স্যার আমি তাঁকে এই ঘটনার সাথে ইচ্ছে করে জড়াচ্ছি না! কিন্তু না বলেও থাকতে পারছি না। কারণ চুপ করে থাকলে সব অপরাধের ভার আমার ঘাড়েই এসে পড়বে। অথচ ওঁকে সাহায্য করা ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না!
আলমের নিজের ব্যাক্তিক্ত ও তার সাত পুরুষের মানসম্মান তাঁকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে। কেউই প্রমাণ ছাড়া আমার কথাগুলো বিশ্বাস করতে চাইবে না। সেটা আমি নিজেও ভালো করে বুঝতে পারছি স্যার! তাই প্রথমে আমিও আলমের নাম নিতে চাই নি! কিন্তু এভাবে নিজে কোন দোষ না করেও, শাস্তি পেতেও মন সায় দিচ্ছে না। তাই ওর নাম নিতে একরকম বাধ্য হয়েছি আমি!
আমার আজকের এই গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সা মানসম্মান সমাজের উচ্চবর্গের মানুষের সাথে চলাচলের পিছনে ওর অবদান অনস্বীকার্য! বলতে গেলে আলম আমাকে আস্তাকুড়ের আবর্জনার মধ্যে থেকে উঠিয়ে রাজ প্রাসাদে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আমার লেখা পড়া থেকে শুরু করে ব্যবসা বানিজ্য সবই বলতে গেলে তারই সাহায্যে গড়ে উঠেছে। হয়তো ওর নাম নিয়ে আমি ওর প্রতি কোন অন্যায় করে ফেললাম? কিন্তু তবুও যেনো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক কাজটাই করেছি। সত্যি যা! তা চিরকালই সত্যি। হোক না সেটা যতোটাই তিক্ততায় ভরা!
অনেক ভেবে দেখলাম সে আমার অনেক উপকার করলেও, সত্যিটা আমি গোপন করতে পারি না স্যার! তাহলে বিনা অপরাধেই হয়তো সারাজীবন আমাকে জেলের ঘানি টানতে হবে। এটাও আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না!
অনেকদিন আলমের সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিলো না। সংসারের নানা ব্যস্ততার মধ্যে কাছের মানুষগুলো দিনকে দিন হারিয়ে যেতে থাকে। আমার বেলাতে এর ব্যাতিক্রম হয়নি। হঠাৎ করেই কক্সবাজারের একটি হোটেলে অনেক দিন পরে আলমের সাথে আমার দেখা হয়। সব ভুলে গেছি বলে আলম আমাকে দোষারোপ করে। সত্যিই তো তাই স্যার! আমিও ওর কথায় ভীষণ লজ্জিত হই! তারপর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ওর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
সে-ও এরপর আর আমাকে পুরোনো কথা তোলে আর লজ্জা দেয়না। আমি অনেক অনুরোধ করার পরেও তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারিনি। তখন ওর সামনে নিজেকে বড়োই ছোট মনে হয়। আমার ভুলটা আমি ঠিকই বুঝতে পারি। নিজেকে বড়োই অকৃতজ্ঞ বলে মনে হয় আমার! তাই একরকম জোর করেই আমার ফোন নাম্বারটা দিয়ে বলি কখনো যদি সামান্য দরকার হয়, তবুও সে যেনো আমাকে ফোন করে। যদিও আমি ভেবেছি তার মতো মানুষ কোনদিন কোন সাহায্য চাইতে আমাকে ফোন করবে না! কিন্তু তবুও সেদিন নিজের আত্মগ্লানির উপর কিছুটা প্রলেপ দেবার চেষ্টা করেছিলাম আমি!
সত্যিই একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে মাস ছয়েক পরে আলম আমাকে ফোন করে বলে, আমি তার কোন উপকার করতে চাই কি-না? এমন এক নিঃস্বার্থ বন্ধুর উপকার করতে পারার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। তাই জিজ্ঞেস করলাম, আমি তার কি এমন উপকার করতে পারি? জবাবে সে বলেছিলো যদিও কাজটা সামান্য তবুও তার জন্য এটা অনেক বড় উপকার হবে! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি করতে হবে আমাকে?
আলম বললো, বেশি কিছু নয়, একটা বাড়ি ভাড়া করে দিতে হবে। তার এই কথা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। তার মতো মানুষ এখানে কেন বাড়ি ভাড়া করতে চাইছে? কিন্তু সেটা জিজ্ঞেস করার মতো সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারলাম না। কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করতে না পারলেও, আলম নিজে থেকেই কৈফিয়ত দিতে লাগলো।
বললো, তার পরিচিত একটি গরীব ঘরের ছেলে বড়লোকের এক মেয়ের প্রেমে পড়ে নিজেরাই বিয়ে করে নিয়েছে। কিন্তু মেয়েটির পরিবার কোন ভাবেই এই সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি নয়। এমনকি পরিস্থিতি ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত ছেলেটির প্রাণনাশের আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না! সেই ছেলেটা আবার আলমের অতি স্নেহভাজন একজন! তাকে যে কোন মূল্যে সে মেয়েটির পরিবারের হাত থেকে আগলে রাখতে চায়! তাই একরকম বাধ্য হয়ে আমার কাছে সে ফোন করেছে।
আমি আগে থেকেই জানতাম, আলম তার এই জীবনে এমন বহু পরোপকার করেছে। যেখানে তার কোন ব্যাক্তিগত স্বার্থ নেই! তার জলন্ত প্রমাণ তো আমি নিজেই। তাই তার এই কথার জবাবে আমি তাকে কোন চিন্তা করতে বারণ করি। তাকে সহাস্যে আস্বস্ত করে বলি, বাড়িটা যে কোন সময় সে পেতে পারে। আলম আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, আরেকটা কথা!
জিজ্ঞেস করলাম কি কথা? সে বললো বুঝতেই তো পারছিস ওরা দু’জন পালিয়ে থাকবে? জবাবে আমি হেসে বললাম, তাই হবে। সে বলে এমনকি তোর সামনে ওদের কাজের মহিলা ছাড়া কেউ কখনো যাবে না! বললাম কোন সমস্যা নেই! তাদের কে দেখে আমার তো কোন কাজ নেই! আলম আমাকে আবারও বললো এই কথাটা তোর আর আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। থাকবে তো?
হেসে জবাব দিলাম, তুই কোন চিন্তা করিস না! যেমন বলবি তেমনই হবে। তখন আমার নিজের একটা বাড়ি খালি পড়ে ছিলো। তাই সেটাই আমি বিনা ভাড়ায় তাকে দিয়ে দিলাম। একদিন কাজের একজন মহিলা এসে আলমের নাম করে বাড়ির চাবিটা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো। তারপর একদিন আলম আমাকে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়ে একটা গাড়ি কিনতে বললো। সে ব্যাস্ততার কারণে আসতে পারবে না বলে জানালো।
তাই গাড়িটা আমাকেই কিনে দিতে হবে। গাড়িটা চালানোর জন্য একজন বিশ্বস্ত ড্রাইভারও দেখে দিতে হবে। এমনকি গাড়িটার কাগজ পত্র সেই ড্রাইভারের নামেই হবে। যদিও ওর এই কথা শুনে আমি অনেক বেশি আশ্চর্য হয়েছিলাম। কিন্তু এর কারণ কি জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন অনুভব করিনি! আমি জানি আলম অন্যের উপকার করতে অনেক কিছু করতে পারে। ভাবলাম, হয়তো সেই ছেলেটার প্রতি সে একটু বেশিই স্নেহ প্রবণ! তাই এতোকিছু করছে?
আমি আলমের কথামতো সব কাজ করে গেছি! আমার মনের মধ্যে কখনো এমন কোন সন্দেহ জাগেনি যে এমন একটা জঘন্য কাজে আমি নিজের অজান্তেই আরেক জনকে সাহায্য করে যাচ্ছি? এমন নিঃস্বার্থ পরোপকারী সম্মানিত বন্ধুর উপর সন্দেহ কেনই বা আমি করবো স্যার? বিশ্বস্ত ড্রাইভারের নামে গাড়িটা কিনে দেওয়ার পরে আরেকটা অনুরোধ করে বসে আমার পরোপকারী বন্ধু।
একটা কাজের মেয়ের ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। পুরনো কাজের মহিলা অসুস্থ! তাই তাঁকে দিয়ে আর কাজ চালানো যাচ্ছে না! ভেবেচিন্তে আমার বাসায় একসময় কাজ করতে আসা পুরনো বিশ্বস্ত কাজের মেয়ে মায়া কে তার কথায় সেখানে পাঠালাম। এতো কিছুর পরও কখনো কোন সন্দেহ জাগেনি মনে। ঐ বাড়িতে আসলে কি হচ্ছে? কারণ আমার জীবনের সবচেয়ে উপকারী বন্ধুর হুকুম, আমার অবশ্য পালনীয় কর্তব্য মনে করেছি। কিন্তু যখন মায়াকে পাঠালাম, আর পরের দিন সেখানে কাজের মেয়ের মৃত দেহ পাওয়া গেল! তখন আমি অস্থির হয়ে আমার বন্ধু কে ফোন করলাম।
কথাটা,শুনে আলমের যেনো আকাশ ভেঙে মাথায় পড়লো। এমন ভাবে আশ্চর্য হয়ে সে জিজ্ঞেস করে, বলিস কি রে? সে উল্টো আমাকেই জিজ্ঞেস করতে লাগলো, ঘটনাটা কেমন করে ঘটলো? কেন ঘটলো? যে সমস্ত কথা আমি তাকে জিজ্ঞেস করবো বলে ভেবেছি। আমাকে অধিক আশ্চর্য করে দিয়ে সে বারবার আমাকেই সেগুলো জিজ্ঞেস করতে লাগলো? তারপর হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে বললো, যা হবার হয়েছে! কিন্তু এসব কথা ভুলেও যেনো আমি কারও কাছে প্রকাশ না করি। তাহলে আমার এবং তার দুজনেরই ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে!
আমি তখন আমার বন্ধুর কথা ভেবে নয়, নিজের কথা ভেবে ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটে দিলাম। পরে জানতে পারি আলম নিজের পুত্রবধূকে নিজেই অপহরণ করিয়েছে! কারণ মেয়েটির পরিবার তাদের সমকক্ষ নয়! তাই আমার এই অদ্বিতীয় পরোপকারী বন্ধুর প্রতি আমার মনের কোণে একধরনের ঘৃণার জন্ম হয়।
যাকে আমি সবসময় গরীবের বন্ধু বলে জেনে এসেছি। সে কেমন করে নিজের পুত্রবধূকে অপহরণ করতে পারলো? এরপর জানতে পারলাম আমার পাঠানো কাজের মেয়ে মায়াকে তারা খুন করেছে! তখন ওর প্রতি ঘৃণাটা আমার মনের মধ্যে আরও জমাট আকার ধারণ করলো। কিন্তু তবুও আমার হাত-প বাঁধা বলে আপনাদের কাছে কিছু বলতে পারিনি।
অফিসার হাবিবুর রহমান সাহেবের সব কথা শুনে বললেন, তাহলে কথা দাঁড়াচ্ছে আপনি যা করেছেন তা আপনার বন্ধু আলমের কথায় করেছেন? আপনি নিজে থেকে কিছু করেন নি? জ্বি স্যার! তবে কি মায়ার খুনটাও আপনার বন্ধুই করেছেন না-কি আপনি?
অফিসারের কথা শুনে হাবিবুর রহমান সাহেব আঁতকে উঠে বলে, না, না, স্যার! আমি কখনো করিনি। আপনার বন্ধুর হুকুমেও তো করতে পারেন? হাবিবুর রহমান মরিয়া হয়ে বলে, না স্যার! সেরকম কোন হুকুম আলম আমাকে কখনো করেনি। অফিসার জিজ্ঞেস করে, তবে কি মায়ার খুনটা আপনার বন্ধু আলম করেছে? অফিসারের কথায় একটু চিন্তা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি তা ঠিক জানি না স্যার! আমি আলমকে এরপর আর কখনো দেখিনি। আর সেই বাড়িতে কে ছিলো তাও আমি জানি না স্যার!
এবার অফিসার চেয়ারটা টেনে নিয়ে হাবিবুর রহমানের সামনে গিয়ে বসে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, তবে কি জানেন আপনি? শুধু আপনার মুখের কথায় তো আর প্রমাণ হবে না, যে সৈয়দ শামসুল আলম এই জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত! তার জন্য কথা নয় প্রমাণ চাই!
আপনি নিজেই বলছেন, আপনার বন্ধু আলম কে এরপর আর কক্সবাজারে দেখেন নি। আপনার কথা যে আমরা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছি তা কিন্তু নয়! আবার পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারছি না!
হয়তো আপনি এই সবকিছুর দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিন, নয়তো এমন একটা প্রমাণ দেন যা দিয়ে উনাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারি।
হাবিবুর রহমান সাহেব অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলে, স্যার! আলমের সাথে আমার আর দেখা না হলেও ফোনে অনেক বার কথা হয়েছে। এটাই কি যথেষ্ট নয়? অফিসার বললেন, না নয়! কারণ আপনি যেহেতু তার বন্ধু! তখন আপনাদের মাঝে ফোনে কথা তো হতেই পারে। এরচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ চাই!
হঠাৎ হাবিবুর রহমান সাহেব যেনো অন্ধকারে আলোর দেখা পেলেন। তিনি অফিসারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি কারণে এতোকিছু করতে যাবো? যেখানে আপনারা হাজার খোঁজে দেখলেও আলমের ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিলো তা বের করতে পারবেন না। কারণ তাদের সাথে আমার কোনদিন কোন যোগাযোগই হয়নি!
আমার কথাটা একবার বিশ্বাস করে দেখুন স্যার! কোন উপায় কি খোঁজে পাওয়া যায় না?
হাবিবুর রহমান সাহেবের আকুতি মিনতি ভরা কথা শুনে অফিসারের মনের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম নেয়, সত্যি হয়তো লোকটা অন্ধবিশ্বাসের কারণে ফেঁসে গেছে? তাই অফিসার বললেন, একটা উপায় আছে! হাবিবুর রহমান অনেক আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করে সেটা কি স্যার?
অফিসার বলে আপনি আবার তাকে ফোন করবেন। এবং আমরা সেই ফোনকলের কথোপকথন রেকর্ড করবো। তাতে যদি বোঝা যায় সে আপনাকে ব্যাবহার করেছে। তবেই তাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারি। নয়তো নয়।
হাবিবুর রহমান তাতেই রাজি হলেন। অফিসার সেই মতো সব ব্যবস্থা করলেন। আলম সাহেবের নাম্বারে রিং হচ্ছে কিন্তু তিনি রিসিভ করছেন না! পুলিশ চেষ্টা করেই যাচ্ছে।
চলবে,,,