#খোঁজ ১৬_তম_পর্ব
লেখক মোঃ কামরুল হাসান
মাথায় আঘাত নিয়ে কোনভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বাড়িতে যাবার জন্য হাঁটতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। দু’চোখে আঁধার দেখতে লাগলাম। তবুও চেষ্টা করলাম হেঁটে যাওয়ার জন্য কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরে আর তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম রাস্তায়। উঠে বসার চেষ্টা করেও পারলাম না।
বুঝতে পারলাম বাড়িতে যাবার শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি। আশেপাশে কোথাও কেউ নেই যার কাছে সাহায্য চাইতে পারি। রাস্তায় শুয়ে থেকেই বুঝতে পারলাম, আমার মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে! তাই আমার শরীরটা ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে আসছে। আমি বুঝতে পারছি চোখের সামনে সবকিছু আস্তে আস্তে আঁধার কালো হয়ে আসছে! এরপর আর কিছু মনে নেই আমার।
যখন আমার জ্ঞান ফিরে এলো তখন নিজেকে একটা ক্লিনিকে আবিস্কার করলাম। বাবা ও তার বন্ধু ডাক্তার ইমরানকে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমার জ্ঞান ফিরে আসতেই বাবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।আমি যাতে দেখতে না পাই সেজন্য তিনি আমার থেকে পিছন ফিরে নিজের চোখের জল মুছে নিলেন।
আমার কাছে এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা বলতে পারেন। কারণ আমার জ্ঞান বুদ্ধি হবার পর আজই প্রথম আমি বাবাকে এতোটা আবেগপ্রবণ হতে দেখলাম। আমি তো সবসময় ভেবে এসেছি। তিনি একজন অতন্ত্য কঠিন হৃদয়ের মানুষ! আজ তিনি আমার এই অবস্থা দেখে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি দেখে আমিও কিছুটা অনুতপ্ত। নিজেকে কোথায় যেনো খুব অকৃতজ্ঞ সন্তান বলে মনে হলো।
মনের মাঝে একটা অনুশোচনা এসে ভর করে হৃদয় মাঝে খোঁচাখোঁচি শুরু করতে লাগলো। ভাবলাম আমি হয়তো এতোদিন ভুল বোঝে বাবাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেইনি। আমি যে ধারণা এতোদিন ধরে মনের মধ্যে পোষণ করে আসছি। হঠাৎই আজ মনে হচ্ছে, তা সঠিক নয়! হাজার হলেও তিনিই আমার বাবা! তাই তো সন্তানের সামান্য আঘাতও তার হৃদয়কে তছনছ করে দিয়েছে। সেই আঘাতে তার হৃদয়ের সকল কাঠিন্য ভেঙেচুরে দূর করে দিয়ে গেছে!
আজ আমার উপলব্ধি হচ্ছে তিনি বাইরে থেকে যতোটা কঠিন প্রকৃতির দেখতে। ভিতরে বোধহয় ঠিক ততোটা নন! আমার আজ বারবার তাই মনে হলো। আমার এই অসুস্থতার জন্য পরিবারের সবার থেকে বাবা-ই বেশি দুঃখ পেয়েছেন।
পুলিশের কাছে ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট এলো। এবার সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে মায়ার বাবার সাথে তা মিলে গেল। তাহলে পুলিশ এতোদিন যার মৃত দেহকে অদিতির বলে মনে করে ছিলো। আসলে সেটা হলো নিরীহ একজন কাজের মেয়ের! কিন্তু এই কাজের মেয়ে কি এমন অপরাধ করেছিলো? না-কি শুধু শুধুই তাঁকে নিজের প্রাণটা খোয়াতে হয়েছে?
যাইহোক পুলিশ অফিসার মায়ার বাবাকে কঠিন সত্যি কথাটাই জানালেন। স্বাভাবিক ভাবেই এমন কথা শুনে মায়ার বৃদ্ধ পিতা একেবারে ভেঙে পড়েন। তিনি আহাজারি করে বললেন, স্যার আমার মেয়েটা কে কেন ওরা মেরে ফেললো? আমার মেয়ে কি এমন অপরাধ করেছিলো? যার জন্য তার প্রাণ নিয়ে নিলো!
সেই যে সকালে ঘুম থেকে জেগে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। এরপর আর ফিরে আসেনি আমার মা মরা মেয়েটা! বলেন তো স্যার! আমাকে এখন কে দেখবো? পৃথিবীতে আপন বলতে ঐ একটা মেয়েই আছিলো আমার! মা আমার বাড়ি বাড়ি কাজ করে এই বৃদ্ধ পিতার মুখের খাবার ও ঔষধ কিনার টাকা যোগাড় করতে ব্যস্ত থাকতো। এই কথা ছাড়া তার তো আর কোন দিকে খেয়াল করার সময় ছিলো না স্যার!
তবুও কেন মেয়েটার সাথে এমন হলো স্যার? এই অসহায় বৃদ্ধ পিতাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা পুলিশের লোকজন জানে না! তবুও অনেক চেষ্টা করে তাঁকে শান্ত করা হয়। মেয়ের ফটোটা বুকের মাঝখানে চেপে ধরে মায়ার বাবা থানা থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলো।
কিন্তু পুলিশ অফিসার তাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, চাচা! আপনি কি আপনাদের মেয়ের খুনিকে শাস্তি দিতে চান না? বৃদ্ধ চোখের জল মুছে বলে, কি হবে আর! আমার মেয়ে কি ফিরে আসবে? বৃদ্ধের এমন প্রশ্নের জবাবে অফিসার দুঃখ প্রকাশ করে বলে, তা জানি সম্ভব নয়! কিন্তু তবুও যে আপনার মেয়েকে এমন নৃশংস ভাবে খুন করলো। তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হোক সেটা আপনি চান না?
হয়তো সে শাস্তি পেলে আপনার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে! বৃদ্ধ পুলিশ অফিসার কে জিজ্ঞেস করে কি করলে সে শাস্তি পাবে? অফিসার বলে, আমি যা জানতে চাই দয়া করে তাই আমাকে খুলে বলবেন?
বৃদ্ধ পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে থাকে। অফিসার জিজ্ঞেস করে, আপনার মেয়ের কি বিয়ে হয়েছিলো? হয়েছিল! কিন্তু সংসার বেশিদিন টিকেনি। কেন মায়ার স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে?
নাহ্! তবে কি হয়েছিল? বলতে গেলে মায়াই একরকম তার কাছ থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজে বের করেছে।
পোলাডা মাতাল ছিলো। শুধু তাই নয়, সে আরও নানান ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো। সংসারে কোন টাকা পয়সাও দিতো না। উপরন্তু টাকার জন্য মায়াকে মারধর করতো! এটা সেটার জন্য মাঝেমধ্যেই তাঁকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যেতো। এই সব দেখে মায়া তাঁকে ছেড়ে চলে আসে। কিন্তু মায়ার পিছু সে সহজে ছাড়তে রাজি হয়নি। একদিন মায়া পাড়ার লোকজন ডেকে তাঁকে অনেক মারধর করায়! তাকে মারধর করার কোন উদ্দেশ্য মায়ার ছিলো না। কিন্তু পরিস্থিতি তখন এলাকার মানুষের হাতে চলে যায়।
এরপর সবাই মিলে তাঁকে শাসিয়ে বলে, মায়ার আশেপাশে তার ছায়াও যেনো আর কখনো দেখা না যায়। আমি তাই দেখে মনে মনে খুব ভয় পেয়েছিলাম স্যার। গুন্ডা বদমাশ লোক, বলা তো যায় না কখন কি করে বসে? সে যদি মায়ার কোন ক্ষতি করে বসে। সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের যা চিন্তা হয় আর কি? কিন্তু সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে সে আর কখনো মায়ার কাছে ফিরে আসেনি, স্যার!
লোকে বলতো সে কোথাও গিয়ে হয়তো মরে পড়ে আছে। তাই আর কোথা থেকে আসবে? বৃদ্ধ হঠাৎ বলে উঠে স্যার! সে হয়তো মরেনি। এতোদিন পরে এসে আমার মেয়ের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। স্যার ঐ লোকটাই মারেনি তো মায়াকে?
অফিসার বৃদ্ধের কথার জবাব দিতে গিয়ে বলে, হলে হতেও পারে! অফিসারের কথা শুনে বৃদ্ধ যেনো হঠাৎই অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে! সে চোখেমুখে রাগ নিয়ে হাতজোড় করে বলে, মায়ার স্বামী যদি এর পিছনে থেকে থাকে। তবে স্যার ওঁকে এমন শাস্তি দিবেন। যেনো আমার মেয়ের আত্মা তা দেখে শান্তি পায়। পুলিশ তাঁকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় যে, তাঁকে উচিত দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
পুলিশ মায়ার মোবাইল নাম্বার চাইলে মায়ার বাবা বললেন, এখন তো আমার মুখস্থ নেই স্যার! তবে মায়া ক্যালেন্ডারে একজায়গায় লিখে রেখেছে। যদি আমার দরকার হয় তার জন্য। কিন্তু স্যার! কল দিলে তো তাতে কল যায় না। আচ্ছা ঠিক আছে বলে অফিসার মায়ার বাবার সাথে একজন কনস্টেবল পাঠিয়ে দিলো নাম্বারটা নিয়ে আসার জন্য।
কনস্টেবল নাম্বারের সাথে মায়ার বিয়ের ছবিটাও সাথে করে নিয়ে এলো। অফিসার তাই দেখে বললেন, মায়ার সাথের লোকটাই তবে মায়ার স্বামী!
পুলিশ মায়ার সাথে সেই বাড়িওয়ালার ফোনে কোন যোগাযোগ হয়েছে কি-না তাই অনুসন্ধান করতে চেয়ে ছিলো। তারা তা খুঁজেও বের করলো। কল রেকর্ড বলছে মায়ার সাথে বেশ কয়েকবার বাড়িওয়ালার যোগাযোগ হয়েছে।
পুলিশ আবার সেই বাড়িওয়ালার দরজায় গিয়ে হাজির হলো। এদিকে আমি এখনো ঠিক তেমন ভাবে সুস্থ হয়ে উঠিনি। এমন সময় লিটু ফোন করে বলে, তোর শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম আমার শ্বশুর বাড়িতে কেন?
লিটু দরকার আছে বলে কাজের অজুহাতে ফোন কেটে দিলো। আগামীকাল শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা। আমাকে যে কেউ আঘাত করেছে তা বলতে চেয়েও আর বলতে পারলাম না।
গভীর রাতে হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভেঙে গেছে! জেগে উঠে বুঝতে পারলাম বাথরুমের বেগ পেয়েছে। তাই বাথরুমের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ করেই কারও উত্তেজিত কন্ঠে আমি চমকে উঠে ভাবলাম, পরে বুঝতে পারলাম বাবা! কিন্তু এতো রাতে বাবা কার সাথে এতোটা উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে? তাই বুঝতে পারলাম না।
বাথরুমে যাওয়ার আগে তাই শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। দেখলাম বাবা বারান্দার রেলিঙের উপর ঝুঁকে পড়ে কাউকে অবিরত শাসিয়ে যাচ্ছেন।
আমি যা শুনতে পেলাম তা হলো এই, শোন তোমাকে আমি প্রশ্রয় দিয়ে অনেক ভুল করে ফেলেছি! তা এখন আমি হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি! তোমার কি খুব ক্ষমতা বেড়ে গেছে? তুমি নিজেকে আমার চাইতে ক্ষমতাবান মনে কর! তুমি কোন সাহসে এই আক্রমণ করার সাহস পেলে? কে দিয়েছে তোমাকে এতো সাহস! মনে রেখো যার উপর তুমি আক্রমণ করেছো। সে আমার নিজের ঔরসজাত সন্তান!
তার যদি কোনো কিছু হয়ে যেতো তবে তোমাকে আমি মাটিতে পুঁতে ফেলতাম। তোমার ভাগ্য ভালো যে ওর এখনো কিছু হয়নি! এরপর আর কখনো তুমি আমার সামনে আসবে না! কারণ তোমাকে আমি আর কোনদিন আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না!
অপরপ্রান্তের লোকটা হয়তো বাবাকে কিছু বোঝাতে চাইলেন। কিন্তু তবুও বাবা কিছুতেই সেটা মানতে রাজি হলেন না। বললেন, শোন তুমি আমাকে শিখাতে এসো না। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করো না। তুমি যাই বল না কেন? কাজটা যে তুমিই করেছো! তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
আর কখনো তুমি আমার নিকটে কোন সাহায্য চাইতে এসো না। আমি তোমাকে আর কোনদিন কোন সাহায্য করবো না। আজ তোমাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে নিজের ছেলেটা কে হারাতে বসেছিলাম! কথাটা মনের মধ্যে গেঁথে রেখো। আর কখনো কোন রকমের যোগাযোগ করতে চেষ্টা করবে না!
বাবা ফোন কেটে দিতেই আমি আমার রুমের মধ্যে চলে এলাম। বাবার কথা গুলো আমার কানে বারবার প্রতিধ্বনি তুলছে। বুঝতে পারলাম না আমার উপর যে আক্রমণ করেছে। তেমন লোকের সাথে বাবার কি সম্পর্ক থাকতে পারে? আমার উপর আক্রমণ করার পরেও শুধু কথা বলেই তাকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তো আমার বাবা নন। কিন্তু কেন তাঁকে বাবা ছেড়ে দিলেন?
তার সাথে বাবার কি এমন ঘনিষ্ঠতা? আর কি কারনেই বা সে আমার উপর আক্রমণ করেছে? আমি তো জানা মতে কারও কোন অনিষ্ট করিনি!যাইহোক শুধু এইটুকু বুঝতে পারলাম যে আমার উপর আক্রমণ করেছে সে বাবার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু! তাই তিনি তাকে খুব কিছু করতে পারলেন না।
তাই তো বুঝতে পারছিলাম না, এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল। কিন্তু তবুও কেন বাবা একবারও পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা বলেননি?
এখন আমি বেশ বুঝতে পারছি। বাবা শুধু আমার আঘাত পাওয়ার যন্ত্রণা দেখেই ভেঙে পড়েনি। তার সাথে মিশে ছিলো নিজের কৃতকর্মের অনুশোচনাও!
পরদিন লিটুর ওখানে গেলাম। আবার আমাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্বশুর বাড়িতে যেতে হচ্ছে। লিটু জিজ্ঞেস করে তোর মাথায় কি হয়েছে? যা ঘটেছে তাই খুলে বললাম ওঁকে। লিটু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। তারপর বলে কেউ হয়তো চাইছে না, তুই বেঁচে থাক! তাই তোর উপর এই আক্রমণ করেছে কেউ।
আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি করে বুঝতে পারলি সেটা? লিটু কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো।
আচ্ছা যাইহোক, তোকে যে জন্য ডাকা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম কি কারণে? লিটু বলে আমার মনে হচ্ছে তোর শ্বাশুড়ির কাছ থেকে আমাদের আরও কিছু জানার আছে। আবারও জিজ্ঞেস করলাম কি জানার আছে?
লিটু হেসে বলে, তোর শ্বাশুড়ি এখনো আমাদের কাছে অনেক কিছুই হয়তো গোপন করছে? বারবার আমরা যা প্রমাণ করেছি, তিনি শুধু তা স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু যা এখনো আমরা প্রমাণ করতে পারিনি। তা হয়তো তিনি তার ঝুলিতে অনেক যত্ন করে তুলে রেখেছেন? কোনদিন আগ বাড়িয়ে কোন কথা তিনি বলেননি। সেদিন হয়তো তুই তোর বউকে চিনতে ভুল করে ছিলি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সেই একই ভুল কি তিনিও করেছিলেন!
নাকি তিনি কোন কারণে ব্যাপারটা চেপে গেছেন? একটা জিনিস খেয়াল করলে এখনই তুই বুঝতে পারবি। জিজ্ঞেস করলাম কি? সেদিন তোর শ্বাশুড়ি তার মেয়ে মনে করে যেমন ভাবে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি ভাবে অতি দ্রুতই তিনি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন এতো তারাতাড়ি এতো বড় সান্ত্বনা তিনি কোথায় খুঁজে পেলেন?
তবে কি তিনি সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন মৃত দেহটা অদিতির নয়? লিটু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
যদিও এই কথাটা প্রথমে আমার মাথাতেই এসে ছিলো। কিন্তু ওনাকে আর এনিয়ে বিরক্ত করতে চাই নি আমি! তাই কাউকে কিছু বলিনি, এমন কি লিটুু কেও! আমি তাই চুপ করে লিটুর পিছু পিছু চললাম।
আমার শ্বাশুড়ি লিটু ও আমাকে একসাথে দেখে বেশ আশ্চর্যই হলেন। এটা তার চোখ মুখ দেখেই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হলো না।
লিটু ভিতরে গিয়ে বসে পড়ে কোন ভণিতা না করেই বললো, শুনুন আন্টি! আপনি হয়তো আমাদের দু’জন কে একসাথে দেখে খুব অবাক হয়েছেন। আপনার মতো আমরাও একটা জিনিস জেনে খুব অবাক হয়েছি! আমার শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন, কি? লিটু উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, অদিতি মরেনি! এখনো সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই সে বেঁচে আছে।
শ্বাশুড়ি আম্মা এমন কথা শুনে খুশি হবার বদলে বললো, কি বলছো তোমরা? অদিতি বেঁচে আছে! লিটু হেসে বলে, কথাটা কিন্তু আমাদের আগেই আপনি জানতেন? তাই না আন্টি! এবার তিনি ফোঁস করে উঠে জিজ্ঞেস করলেন কি বলতে চাও তুমি! আমি আগে থেকেই জানতাম মানে?
এবার লিটু কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, আন্টি আপনি ভুলে যাবেন না, কার সাথে কথা বলছেন? আপনি আমার বন্ধুর শাশুড়ি তাই বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করছি।নয়তো অফিসার হয়ে থানায় নিয়ে যেতাম। আর আপনি যদি চান তবে তাই হবে!
এবার শাশুড়ি নরম কন্ঠে জবাব দিলেন ঠিক তা না! তবে বলুন দেখি, সেদিন আপনি বুঝতে পারেননি সেটা যে অদিতির দেহ ছিলো না? তিনি নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন। লিটু এবার জিজ্ঞেস করে তবে কথাটা কেন আমাদের কাছে লুকিয়ে রেখেছেন?
এবার তিনি জবাব দেওয়ার আগে চোখের জল মুছে নিলেন। তারপর বললেন, কি হতো জানিয়ে? লিটু ও আমি কৌতুহলী হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি। অদিতির সংসার বাঁচাতে আমি এতোকিছু করলাম। কিন্তু সেই অদিতির ভবিষ্যৎ যখন অন্ধকার দেখতে পেলাম। তখন ভাবলাম এই ভালো হলো।
কারণ অদিতি কে মাঝে মাঝে আমার সাথে ঐ পাষণ্ড দেখা করার সুযোগ দিতো। তাও মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। অদিতি যখন বললো তার আর ফিরে আসার মতো মুখ নেই। ফিরে আসার পথ নেই! তখন আমি বুঝতে পারি অদিতি আমাদের চিরদিনের জন্য ছেড়ে যাচ্ছে।
তখনই বুঝতে পেরেছিলাম সে এখন থেকে বেঁচে থেকে মৃতের মতো হয়ে গেছে! লা*শটা দেখে আমি প্রথমে অদিতিই ভেবেছিলাম। কিন্তু হাতের দিকে আমার চোখের দৃষ্টি পড়তেই বুঝতে পারি ওটা অদিতির মৃত দেহ নয়!
লিটু এবার অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনার কি একবারও মনে হয়নি কথাটা আমাদের জানানো উচিৎ ছিলো? আমার শাশুড়ি লিটুর এই কথায় হেসে বলে, তাতে মিতুলের প্রাণ খোয়াতে হতো! অদিতি বারবার করে আমাকে অনুরোধ করেছে। এই কথাগুলো যেনো কোনভাবেই কেউ জানতে না পারে। কারণ সেই পাষণ্ড বারবার সাবধান করে দিয়েছে। এর অন্যথা হলে মিতুল আর থাকবে না।
অদিতি তাই সবসময় এই ভয়ে তটস্থ থাকতো! লিটু বলে আচ্ছা ঠিক আছে। এবার তাদের ঠিকানাটা দেন। আসলামের আস্তানা আমরা খুঁজে বের করে আপনার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসবো। এবং আসলামকে উচিত দন্ড দেওয়ার ব্যাবস্থা করবো।
এই কথায় আমার শাশুড়ি হেসে উঠে বলে, একটা মৃত লোককে আপনারা কেমন করে শাস্তি দিবেন! লিটু জিজ্ঞেস করে মানে কি? আসলাম বেঁচে নেই? নাহ্! আসলাম কে যে মেরেছে সেই নাকি অদিতি কে আটক করে রেখেছে! অদিতি আমাকে তাই বলেছে।
লিটু অবাক জিজ্ঞেস করে, তবে কে সে? আমার শাশুড়ি হতাশা ভরা কন্ঠে বলে, আমি জানি না! এমনকি অদিতিও এখন পর্যন্ত তাকে দেখেনি। তবে আমি একটা গাড়ির নাম্বার আপনাদের দিতে পারি। যেটা আমি কয়েক বার দেখে মুখস্থ করে রেখেছি।
লিটু নাম্বারটা টুকে নেয়।
চলবে,,,,