#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam
যুথির কথা শুনে সকলেই মিটমিটিয়ে হাসে। তাছলিমা বানু যুথির দিকে খা’ইয়া ফা’লা’মু টাইপ করে তাকায়। কিন্তু এ কি মেয়েটা নিঃসংকোচে কি সুন্দর করে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু হয়নি।কিছু বলেও নি।
এবার সকলের দিকে তাকায় কতো বড় সাহস এদের এক দিন ও হয়নি উড়ে এসে জুড়ে বসা মেয়ের কথায় হাসছে এরা। তাকিয়ে দেখে তার ছেলের বউ লিমা ও হাসছে আর মুখে খাবার দিচ্ছে ।
লিমা মুখে খাবার দিতে দিতেই শ্বাশুড়ির দিকে চোখ যায়।তার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মুহূর্তের মাঝে লিমার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে খাওয়ায় মন দেয়।
সকলেই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। যুথির এক পাশে দাদি আর অন্য পাশে দিনা বসেছে। দিনার সামনে আবার ইশান বসেছে। খাওয়ার মাঝে দুইজনের চোখে চোখে হাজার ও কথা হয়ে যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সকলেই বসার ঘরে গিয়ে বসে। তাছলিমা বানু হাত ধুতে ধুতে বলে উঠে,,, এটা কোনো রান্না হলো? না দিয়েছে ভালো করে তেল মশলা। স্বাদ হয়নি একটুও।
তাও তো কম খাওনি বউমা।সকলের চেয়ে মাছ,মাংস তুমিই বেশি পরিমাণ নিয়ে খেয়েছো।শুধু শুধু বদনাম কেন করছো? আমাদের সকলের কাছেই খাবার খুব ভালো লেগেছে। আর তোমার খাওয়ার ধরণ দেখে মানুষ না খেয়েও বলে দিতে পারবে খাবার কেমন হয়েছে। কথাগুলো ইরহানের দাদি তাছলিমা বানু কে উদ্দেশ্য করে বলে।
তাছলিমা বানু থতমত খেয়ে যায়।তাও বলে উঠে থাক হয়েছে আপনাকে আর এই মেয়ের মামার বাড়ির হয়ে ঢাক,ঢুল পিটাতে হবে না।
শ্বাশুড়ি আম্মা আপনার রান্না অনেক সুস্বাদু তাই না? আমার ও মামার বাড়ির রান্না খেতে খেতে আর ভালো লাগছিলো না বুঝলেন? এখন থেকে আপনার হাতের মজাদার খাবার খেতে পারবো সবসময়। ভাবতেই তো আমার মনে আনন্দ লাগছে। প্রতিদিন কিন্তু আপনার হাতের সুস্বাদু খাবার খাবো শ্বাশুড়ি মা।
আমি কেন তোমায় রান্না করে খাওয়াবো মেয়ে? আমাকে কি তোমার রাধুনি মনে হয়?
এমা ছিঃ ছিঃ এসব কি কথা শ্বাশুড়ি মা? রাধুনি কেন মনে হবে?
তাহলে বলছো কেন রান্না করে খাওয়ানোর কথা? রান্না তো তুমি করে খাওয়াবে।
আমার রান্না আপনার মুখে যাবে? ব/দ হজম হয়ে যাবে শ্বাশুড়ি মা। একটু আগে যে খেয়ে বললেন রান্না ভালো হয় নি।ঐগুলা আমার মামি রান্না করেছে। আর আমিতো সব রান্না আমার মামির থেকেই শিখেছি। তাই আমার রান্না তো ঐরকম ই হবে।
তাছলিমা বানু বলে উঠে বাড়িতে পা না রাখতে রাখতেই বড়দের মুখে মুখে কথা বলছো মেয়ে? আর আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আমার সাথে এই মেয়ে কিভাবে কথা বলছে।
আমি যে শ্বাশুড়ি হই এইটা তার মাথায় আছে? এই শিক্ষা দিয়েছে এই মেয়ের পরিবার? শ্বাশুড়ির মুখে মুখে কথা বলে। কথা গুলো ইরহানের দাদি কে উদ্দেশ্য করে বলে তাছলিমা বানু।
তাহলে তো বলতে হয় তোমার পরিবার ও তোমায় ভালো শিক্ষা দেয় নি তাছলিমা। আমার সাথে তুমি কবে ভালো ব্যবহার করেছো? সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে গেছো।মনে আছে কবে আম্মা বলে ডেকেছো?
আপনাকে যেটুকু সম্মান দেই এই অনেক। বেশি কিছু আশা করেন কোন মুখে? ভুলে যাবেন না আপনি আমার আপন শ্বাশুড়ি নন।সৎ শ্বাশুড়ি।
তাহলে তুমি আমার বড় নাত বউয়ের থেকে বেশি সম্মান আশা করো কোন মুখে? তুমিও ভুলে যেওনা তুমি তার আপন শ্বাশুড়ি নও সৎ শ্বাশুড়ি।
নাত বউ তোর বোন কে নিয়ে ঘরে যা।অনেক রাত হয়ে গেছে। এমনিতেই সারাদিন তোর উপর দিয়ে অনেক ধ’কল গেছে। গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
যুথি দাদি শ্বাশুড়ির কথা মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে দিনা কে নিয়ে চলে যায় ইরহানের রুমে।
—————————
দিনা কে ইশান নিয়ে ওদের গ্রামের কয়েক জায়গায় ঘুরেছে।দুই দিন দুইজন মিলে চু’টিয়ে প্রেম করেছে। হাসি,খুনসুটি তে মেতে ছিলো দুইজন।
দুই দিন পরই দিনা চলে যায়। ওর বাবা এসে নিয়ে যায়। দিনার স্কুল খোলা তাই বেশি দিন থাকতে পারে নি। ইশানের মন খারাপ ছিলো দিনা চলে যাওয়ার সময়। দিনার ও যে মন ভালো ছিলো তা নয়।
ইশান একটা বাটন ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলো দিনা কে কথা বলার জন্য। সব সময় তো দেখা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু দিনা না করে দেয়। তার খুব ভ’য়। বাড়িতে জানলে সব শেষ।
ইশান আর তেমন জোর করতে পারেনি। দিনা অবশ্য বলেছে বাবা কে বলে একটা ফোন কিনার চেষ্টা করবে।
এই কয়দিন না হয় একটু কষ্ট করলো।
———————————
গরম কাল চলে এসেছে। প্রচুর পরিমাণ গরম পরেছে। একটা বৃষ্টি হলে বোধহয় ভালো হতো।কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। রোদের তাপমাত্রা প্রখর। বাইরে বেশি সময় থাকার মতো না।একটু বাতাস নেই।খাল,বিল শুকিয়ে গেছে।
একেই গরমে অতিষ্ট তার উপর আবার আরেক ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। ইমনের রুমের পাখা নষ্ট হয়ে গেছে। তার হাতে এখন টাকা নেই যে নতুন পাখা আনবে। কি যেনো সমস্যা হয়েছে ঠিক ও করতে পারছে না ইমন। লোক লাগিয়ে ঠিক করতে হবে। এখন অসময়ে লোক পাওয়া ও যাবে না ঠিক করানোর জন্য।
এই গরমে পাখা ছাড়া কিছুতেই থাকা যাবে না। লিমা তো প্রায় কেঁদে দেয়। ইমন কোনো উপায় না পেয়ে মায়ের কাছে যায়।
তাছলিমা বানু বিছানায় বসে ছিলো।ইমন গিয়ে জানায় তার রুমের পাখা নষ্ট হয়ে গেছে। পাখা ছাড়া থাকা অসম্ভব। তাছলিমা বানু কিছু সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবে। তারপর বিছানা থেকে উঠে এসে বলে,,আয় আমার সাথে। ইমন মায়ের পিছন পিছন যেতে থাকে।
ইমন তাছলিমা বানু কে ইরহানের রুমের দিকে যেতে দেখে প্রশ্ন করে ঐ দিকে যাচ্ছো কেন মা?
এই রুমের পাখা নিয়ে তোদের রুমে লাগিয়ে নে।
কিন্তু মা? এখানে তো ইরহানের বউ থাকে।
তো কি হয়েছে? চুপচাপ নিয়ে লাগা।
ইমন আর কথা বাড়ায় না। তার পাখা পেলেই হলো।এতোকিছু ভেবে কাজ নেই। মা যখন বলেছে আর কি ভাববে? মা ই সব সামলে নিবে।
ইমন ইরহানের রুমের পাখা খুলতে থাকে। যুথি তখন দাদির রুমে বসে গল্প করছে।
গল্প শেষে রুমে এসে পরে যুথি।খাওয়া দাওয়া আগেই হয়ে গেছে। এখন চিন্তা করলো একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক।অনেক রাত পর্যন্ত আবার ইরহানের সাথে কথা বলতে হয়। ইরহান এখন কাজে আছে।
রুমে ঢুকে পাখার সুইচ টিপে বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখলো পাখা চলছে না।কপাল কোচকে উপরের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো।পাখাই নেই চলবে কি করে?
রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরেই তাছলিমা বানু কে দেখতে পায়। যুথি এগিয়ে গিয়ে জানতে চায় তার রুমের পাখা কোথায়?
তাছলিমা বানু নির্বিকার ভাবে বলে ইমনের রুমে।
ইমনের রুমে মানে? আমার রুমের পাখা ইমনের রুমে কেনো থাকবে?
এতো বেশি কথা বলো কেন মেয়ে? ইমনের রুমের পাখা নষ্ট হয়ে গেছে তাই আমিই বলেছি ইরহানের রুমের টা নিয়ে লাগাতে।তুমি তো একা মানুষ। ওরা দুই জন।আর এমনিতেও তোমার হয়তো গরমে থেকে অভ্যাস আছে। থাকতে তো মামার বাড়ি।
যুথি মুখ খুলতে গিয়ে ও কিছু ভেবে চুপ হয়ে যায়। চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসে।
কিছু সময় যেতে না যেতেই কারেন্ট চলে যায়। সকলে হায় হায় করতে থাকে। বিশেষ করে তাছলিমা বানু আর লিমা।ওরা দুইজন যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান।
কিছু সময় পর পর পানি খাচ্ছে আর পায়চারি করছে।
যুথি হাতের পাখাটা নিয়ে দাদির রুমে চলে আসে।আজ এখানেই থাকবে বয়স্ক মানুষ গরম হয়তো সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু এসে দেখে দাদি নিশ্চিত হয়ে ঘুমিয়ে আছে।
যুথিও শুয়ে পরে পাশে। হাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।এবার বোঝো কেমন লাগে।বুঝতে ও পারবে না ওরা কারেন্ট না থাকার আসল কারণ। আর এমনিতেও এগারোটার উপরে বাজে।আশে পাশের কেউই সজাগ নেই। বাতি নিভিয়ে ঘুমের দেশে পারি জমিয়েছে আরো অনেক আগে।
যুথি মনে মনে হেসে শোয়ে পরে।দাদির মতো ওর ও ঘুমিয়ে গেলে গরম কি ঠান্ডা খবর থাকে না। এমন টা করতো না ভালো ভাবে বুঝিয়ে বললে যুথি দাদির সাথে এসে শুয়ে থাকতো।কিন্তু না তারা তা করেনি।এইবার বুঝুক “যেমন কু’কুর তেমন মু’গু’র। ”
#চলবে,,,,,,