#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam
ইশান বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। তার কান্না কিছুতেই থামছে না।
ইরহান ইশানের কান্না আর স’হ্য করতে পারলো না। ধমকে উঠলো। তোর এই ফেচফেচানি কান্না থামাবি? নয়তো ফোন রাখ আগে বসে বসে কান্না কর।কান্না শেষ হলে আবার কল দিস।
ন-না না আমি আর কাঁদবো না।
হুম। কান্না থামিয়ে এবার সব খুলে বল কি হয়েছে।
বাবা জানো কি করেছে ভাইয়া? বাবা এটা কি করে করতে পারলো? ইমন ভাইয়ের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। কিছু রাখেনি আমাদের জন্য।
তোর কোথাও ভুল হচ্ছে। বাবা শুধু আমাকে কোনো সম্পত্তি দিবে না। তুই তো কিছু করিস নি।আমি বাবার অবাধ্য সন্তান। মন রক্ষা করতে পারিনি।তাই আমাকে দিবে না।
তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ভাইয়া।বাবা শুধু তোমাকে না আমাকে ও ঠকিয়ে দিয়েছে। সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন ইমন ভাই কে।কিছু নেই এখন আমাদের। সব ইমন ভাইয়ের।বাবা নিজের মুখে স্বীকার করেছে। আমি দলিল ও দেখেছি। আমি ব্যবসা করতে চেয়েছিলাম তার জন্য টাকা প্রয়োজন। তাই বলেছিলাম টাকা দিতে।নয়তো আমার ভাগের সম্পত্তি ব’ন্ধ’ক রেখে টাকা দিতে। তখন ইমন ভাই সব বলল। শুধু এটা বলে নি জানো কি বলেছে? বলে আমাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছে এই অনেক। তারপর সব কথা খুলে বলে ইশান।
ইশানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় ইরহান। ঐ লোকটা এমন কি করে করতে পারলো? ইরহান না হয় দোষ করেছে। ইশান তো কোনো দোষ করেনি তাহলে?
ভাই আমি এখন কি করবো? ভেবেছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দিনা কে নিজের করে ওর মায়ের কাছে আবার চাইবো। কিন্তু দেখো বাবা কি করলো। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিলো। এমনিতেই দিনার মা আমাকে সহ্য করতে পারে না। তারউপর এসব শুনলে আরো পারবে না। দিনা কে আর এই জীবনে মনে হয় আমার আর পাওয়া হবে না ভাই। ইরহানের ভাবনার মাঝেই কথা গুলো বলে ইশান।
ইরহান কি বলবে কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।
আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না ভাই।চোখে সব অন্ধকার দেখছি। ভাই তোমাকে একটা অনুরোধ করি?
কি-কি?
আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও ভাই। নয়তো ম’র’ণ ছাড়া আমার আর উপায় নেই। দিনা কে আমার আর পাওয়া হবে না। আর অন্যকারো হয়ে যেতে আমি দেখতে ও পারবো না।
চুপ কর।কিছু হবে না। তোর ভাই আছে না? এখানে আসতে হবে না।সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়া টা কোনো সমাধান না। ওরা যা করছে তার বিপরীতে নিজেকে গড়ে তুলে ওদের কে দেখিয়ে দিতে হবে তুই ও পারিস।
আমি কি করবো ভাই?
তুই ব্যবসা করতে চাইছিস না? তাই করবি তুই।আমি তোকে সাহায্য করবো।সব টাকা আমি দিবো। কিন্তু তোকে কাজটা নিষ্ঠার সাথে মনোযোগ দিয়ে করতে হবে, তাহলেই তুই সফল হবি। যতো টাকা লাগে আমি দিবো।তুই ব্যবসা দাড় করা। আর দিনার বিষয় টা চিন্তা করিস না। সে তোর ভাগ্যে থাকলে ঠিক পেয়ে যাবি। নিজের মনোবল ঠিক রাখ তুই। প্রবাস আসা লাগবে না। ঐ খানেই কিছু কর।কারণ এমনিতেই ওদের এক মেয়ে ওদের থেকে অনেক দূরে এসে পরেছে। এখন অন্য মেয়ে কে নিজের কাছাকাছি ই রাখার চেষ্টা করবে।তাই তুই ব্যবসা শুরু কর।
ভাই তুমি আমায় এতোগুলা টাকা,,,,,
ভাই ডাকিস না আমায়? তোর আর আমার র/ক্ত তো একই। সবাই তো আর বে’ঈ’মা’নী করে না।হাজারে একজন ভালো ও পরে।তুই সেই হাজারের মাঝে একজন ভালো। আমার ভাই তুই।
ইশান ইরহানের কথায় কাঁদে। নিজের মায়ের পেটের ভাই না হয়েও কতো দায়িত্ব নিচ্ছে। আর নিজের ভাই? সে স্বার্থের কা’ঙা’ল। একবার তার মুখে ও আটকালো না বলতে। আর কি করেই বা পারলো নিজের নামে সব কিছু লিখিয়ে নিতে?
ভাই বাবা যে এতো বড় একটা অন্যায় করলো খারাপ লাগছে না তোমার?
উহু একটুও না। খারাপ লাগছে তবে আমার জন্য না তোর জন্য। তোর সাথে এমন হওয়া একদম ঠিক হয়নি। উনার সম্পত্তির উপর আমার কোনো লোভ নেই। এই অন্যায়টার জন্য ঠিক পস্তাতে হবে দেখে নিস। শুধু সময়ের অপেক্ষা। কেউ কাউকে ঠকিয়ে বেশি দিন টিকতে পারে না। তুই শুধু ভেঙে পরিস না।
আরে নানা ধরনের কথা বলে ফোন রাখে ইরহান। ইশান কয়েকবার ভাই কে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেলেছে। মন তার ভালো হয়ে গেছে কিছু টা। খুশিতে কয়েকবার বলে ফেলেছে ভাই তুমি আমার পাশে থেকো। আমি ঠিক সফল হবো।আর দিনা কে ও আমার করে পাবো ইনশাআল্লাহ।
তুমি আমাকে দিনা কে পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছো।
ইরহান ইশানের কথা শুনে বলে,,,কিছু তো শরম কর ভাই। আমি তোর বড় ভাই হই।আর দিনার দুলাভাই।
ইশান হাসি মুখে ফোন রেখে পিছনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। এখন তার মাকে এখানে আশা করে নি।
তাছলিমা বানু রা’গী চোখে তাকিয়ে আছে । ইশান বুঝে গেছে তাছলিমা বানু ওর কথা শুনেই এমন করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কতোটুকু শুনেছে তা জানে না।
দিনা মেয়েটার সাথে সম্পর্ক আছে?
,””””””””””””’
কি হলো চুপ করে আছিস কেনো? কথা বল।ঐ মেয়েটার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
ওর একটা নাম আছে মা। আর ওকে আমি ভালোবাসি।বিয়ে করবো আমি দিনা কে।
তাছলিমা বানু ইশানের গালে রা’গে চ’ড় মা’রে। হিসহিসিয়ে বলে,, যা বলেছিস বলেছিস।আর মুখ দিয়ে দ্বিতীয়বার এই কথা টা বের করবি না। ঐ মেয়ে কে এখনই ভুলে যা। আমার একদম পছন্দ না। ঐ মেয়ে কে ছেলের বউ হিসেবে আমি কোনোদিন মেনে নিবো না।
এসব তুমি কি বলছো?
যা শুনেছিস ঠিকই শুনেছিস।এখানেই বিষয় টা শেষ কর।আর এক পা ও এগুবি না।
আমি দিনা কে ভালোবাসি তুমি কি শুনোনি? বিয়ে করলে আমি দিনা কেই করবো।নয়তো আর কাউকে না।
ঐ মেয়ে কে তুই এই বাড়িতে তুলতে পারবি না।একটা বিদায় হয়েছে তুই আরেক টা আনার চিন্তা করিস?আমি থাকতে কিছুতেই হবে না। মানবো না আমি।
তোমার মানতে হবে না। আমি ওকে বিয়ে করবো।আর সংসার ও আমি নিয়েই করবো।
তাহলে নিজের পথ দেখ।এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।
ইশান মায়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
এমনিতেও আমার আর এই বাড়িতে কিছু নেই। থাকলাম না এই বাড়িতে। দরকার পরলে গাছ তলায় থাকবো।একটা কথা আজ বুঝলাম তোমরা আসলে সব বে’ঈ’মা’ন। ইরহান ভাই দূরে গিয়ে বেঁচে গেছে।
কথাগুলো বলে ইশান নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে বেরিয়ে পরে বাড়ি থেকে।
তাছলিমা বানু যেনো পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের চোখ কে বিশ্বাস হচ্ছে না।
————————–
ইরহান মন খারাপ করে বসে আছে। যুথি রান্না ঘরে থাকায় বুঝতে পারে নি কি কথা হয়েছে ইরহান আর ইশানের মাঝে।
ইরহানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,, মন খারাপ আপনার?
আমার জন্য ইশান টা ঠ’কে গেলো।
যুথি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
ইরহান সকল কিছু যুথিকে জানায়।
আপনি মন খারাপ করবেন না। আপনার তো কোনো দোষ নেই তাই না? সব তো বাবা আর ইমন করেছে।
একদম বাবা বলবে না। তোমার কি মনে হয় ঐ লোক টা বাবা হওয়ার যোগ্য?
এসব বাদ দেন। আপনি তো সাহায্য করছেন ইশান কে। সব ঠিক হয়ে যাবে।ভালো মানুষের সাথে নিশ্চই ভালো কিছুই হবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আর হ্যা সবসময় সব কিছু নিয়ে নিজেকে দোষী করবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে এমন ভাবে দেখলে একদম সহ্য করতে পারি না।
ইরহান নিজের মুখে হাসি ফোটায়।
এই তো এইবার লাগছে আমার বর।
তাহলে এতক্ষন কার বরের মতো লাগছে?
পাশের বাসার রহিমা আপার বরের মতো। কথাটা বলে যুথি খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
ইরহান ও দুষ্টু হেসে বলে,, ঠিক আছে আরেকজন নিয়ে আসবো যার কাছে আমি মন খারাপ করে থাকলেও তার বর ই মনে হবে আমাকে।
যুথি চোখ রাঙিয়ে তাকায়। মে/রে ফেলবো একদম। অন্যের বর হওয়ার খুব শখ না?
পা’গলি মজা করছিলাম।এভাবে তাকালে তো ভ’য় লাগে।
একদম আমার কাছে আসবেন না।আপনার সাথে কথা নাই। বলেই যুথি রান্না ঘরে চলে যায়।
ইরহান চিললিয়ে বলে,,ঠিক আছে কথা বলতে হবে না। কথা না বলে কাজে করে দেখাবো।
————————–
কারো ধারনার ও বাইরে জীবনে আরেকটা শোকের ছায়া হুট করে নেমে আসবে। জীবন থেকে আরেকজন চিরদিনের জন্য বিদায় নিবে।
#চলবে,,,,,,,