খড়কুটোর বাসা সিজন ২ (পর্ব ১৮)

0
347

#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৮
#Jhorna_Islam

যুথি এখনো ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বিমান আরো আগেই চলে গেছে। যুথি বসা থেকে উঠছে না। এতোসময় আওয়াজ করে কান্না করলেও এখন নিঃশব্দে কাঁদছে। আর সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রায় আধা ঘণ্টা হতে চলল একই জায়গায় বসে আছে কোনো নড়চড় নেই।

ইশান ও তার ভাবির পাশে বসে আছে। প্রথম কয়েকবার বলেছে যাওয়ার কথা। কান্না না করতে যুথি কানে তুলে নি। ইশান হয়তো যুথির মনের অবস্থা টা কিছু হলেও বুঝতে পারছে। ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরত্ব হলে কতোটা কষ্ট।
তাই সে যুথি কে সময় দিচ্ছে নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য। কাঁদুক কাঁদলে মন টা হালকা হবে।

ইশানের ও খারাপ লাগছে ইরহান চলে গেছে বলে।ইরহান কে ইশান খুব মান্য করে চলে।খুব ভালোও বাসে।কিন্তু মুখ ফোটে কোনোদিন বলা হয়নি ভাইকে সে ভালোবাসে। নিজের মায়ের পেটের আপন ভাই ইমন কে ও এতোটা বিশ্বাস, ভরসা ও ভালোবাসে না যতোটা ইরহান কে বাসে।
ভাবি কে তার দায়িত্বে রেখে গেছে ইরহান। কতোটা ভরসা করে তাকে।এটা ভাবতেই ইশানের মন টা ভরে উঠে। ভাইয়ের দেওয়া দায়িত্ব টা খুব ভালো ভাবে পালন করবে ইশান মনে মনে ভেবে রাখে। নিজের বড় বোনের মতো আগলে রাখবে।নিজের বোন নেই তো কি হয়েছে যুথি ই তার বোন। ইশান যুথির থেকে একটু দূরে বসে এসবই ভাবছিলো।

ইশানের ভাবনার মাঝেই যুথি নিজেকে ঠিক করে নেয়। তারপর ইশান কে ডাকে। যুথির ডাকে ইশান সাড়া দেয় না। দিবে কি করে সে তো ভাবনার জগতে ছিলো।

এবার যুথি একটু জোরেই ডাক দেয়,,, ইশান।

“– হু হুম ভাবি। বলেই ইশান উঠে দাঁড়ায়। ”

— চলো বাড়ি যেতে হবে।

— হুম।

যুথির কয়েক কদম আগে আগে ইশান হাঁটে। তারপর কিছু একটা ভেবে যুথি কে আগে দেয় যাওয়ার জন্য।

হুট করেই ইশান ডাক দেয় যুথি কে।

ভাবি তুমি ঠিক আছো?

ইশানের কথায় যুথি মুচকি হাসে।মাথা নাড়িয়ে জানায় সে ঠিক আছে। তারপর ইশানের থেকে ন’জর ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে।

তারপর দুইজনই বাসায় এসে পরে। বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকার সময় ই যুথির কলিজা টা মোচড় দিয়ে উঠে। সব জায়গায় ইরহানের স্মৃতি। অনেক কষ্টে নিজের রুম অবধি আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা বন্ধ করে। চোখ বন্ধ করে দরজা ঘেঁষে মেঝেতে বসে পরে। রুমের চার দিকে চোখ বোলায়। সব জায়গায় যেনো লোকটা তার ছোয়া আর চিহ্ন রেখে গেছে।

যুথি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে ইরহানের ব্যবহারকৃত সবকিছু তে হাত বোলায়। পা চালিয়ে গিয়ে আলমারি খুলে। সব জামা কাপড় নেয়নি। একটা টি-শার্ট আর একটা শার্ট রেখে গেছে। যুথি সব গুছিয়ে ব্যাগে ভরে দিয়েছিল। ইরহান আবার খুলে এই দুইটা আলমারি তে রেখে দিয়েছে।

ইরহানের কাজে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল যুথি। জিগ্যেস করেছিলো এই দুইটা রেখে দিচ্ছেন কেনো? নিবেন না?

ইরহান তখন বলেছিল থাকুক এই দুইটা এখানে। কেন রেখে গেছি পরে বুঝতে পারবা।

এখন যুথি সত্যি ই বুঝতে পারছে। টি-শার্ট টা নিজের বুকের মাঝে ঝাপটে ধরে আগলে রাখে। যেনো এটাই ইরহান। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। হাত বাড়িয়ে ইরহানের শোয়ার জায়গাটায় রাখে। কিছু সময় নিয়ে জায়গাটার দিকে তাকিয়ে থেকে এবার যুথি কেঁদে দেয়। নিজের কান্না যেনো বাহিরে না যায় তাই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে থাকে। খুব করে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে। মনে মনে একটা কথাই বাজছে।

“ভালোবাসার মানুষ টা দূরে গেলে এতো কষ্ট কেনো?
মনে হচ্ছে নিজের শরীর টা এখানে পরে আছে কিন্তু আর সব ইরহান যাওয়ার সাথে সাথে নিয়ে চলে গেছে। ”

কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে এক সময় যুথি ঘুমিয়ে যায়।

———————–
ইরহান পৌঁছে সব কিছু গুছিয়ে যুথি কে কল দেয়। যুথি ইরহানের কল পেয়ে কান্নার কারণে কিছুই বলতে পারে না। কথা মুখ দিয়ে বের ই হয় না।

ইরহান যা জিজ্ঞেস করছে যুথি শুধু হুু,হা করে উত্তর দিচ্ছে। কান্না করতে করতে গলা বসে গেছে। চোখ, মুখ ফোলে গেছে। মাথা ধরে আছে।

যুথি কথা বলছে না দেখে ই ইরহান বুঝে গেছে মেয়ে টা অনেক কেঁদেছে। ইরহানের রা’গ হয় কেন এতো কাঁদবে?

যুথি কে বলে ভিডিও কলে আসার জন্য। যুথি রাজি হয় না। তারপর ইরহান এক ধমক দেয় এতেই কাজ হয়। ভিডিও কলে আসার পর যুথি কে ইরহান দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ মুখের অবস্থা কি করেছে মেয়েটা। খাওয়া দাওয়া ও সব মনে হয় ছেড়ে দিয়েছে।

অনেক সময় নিয়ে কথা বলে যুথির মন টা হালকা হয়। ইরহান বার বার করে বারণ করে কাঁদতে। সময় পেলেই যুথির সাথে কথা বলবে।

প্রায় অনেক সময় নিয়ে কথা বলার পর কল কাটে ইরহান।

——————————

ইরহান যুথির দেওয়া দাদির চিঠিটার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। ব্যাগ থেকে জামা বের করতে গিয়ে পায়ের কাছে পড়ায় দেখতে পায়। তাও প্রথমে বুঝতে পারে নি এটি কি।পরে মাথায় আসে এয়ারপোর্টে যুথি এটা দিয়ে বলেছিলো দাদি তার জন্য লিখে গেছে।

দাদি কি লিখে গেছে এটায়? বসে বসে ভাবছে ইরহান। খুলতে ইচ্ছে করছে না যদি খারাপ কিছুর মুখোমুখি হতে হয়। অজানা সত্যের মুখোমুখি হতে হয়।

না খুলেও থাকতে পারছে না। চিঠিতে কি লিখা আছে জানার জন্য ছটফট করছে মন।

অনেক ভেবে চিন্তে খুলেই ফেলে চিঠি টা। দাদি আগের দিনের মানুষ হলেও পড়ালেখা একটু আধটু জানতো। অসুস্থ অবস্থায় ই চিঠি টা লিখেছে লিখার ধরণ দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে।

অনেক মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পরতে শুরু করে ইরহান। পড়া শেষ হলে আবার পরে। কয়েকবার পরে। পরে আবার চোখ বুলায় তাতে।

চোখ দুটো ছলছল করছে। নিজের চুল টেনে ধরে বসে থাকে চিঠি টা হাতে নিয়ে।

সময় গড়াতে থাকে ইরহান একই ভাবে বসে থাকে। তারপর উঠে গিয়ে একটা লাইটার নিয়ে চিঠিটা জ্বালিয়ে দেয়। চিঠি টা পুড়ে ছাই হয়ে যায় মুহূর্তের মাঝে। ইরহান সেই ছাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে।

নিজেকে কোনো ভাবে শান্ত করতে পারে না। এদিক ওদিক কিছু সময় পায়চারি করে। এক গ্লাস পানি পান করে।

নিজের ভিতর টা অনেক অস্থির লাগছে।চিঠির কথা গুলো মাথায় ঘুরছে।নিজেকে কোন মতেই শান্ত করতে পারছে না ইরহান।

যুথির সাথে কথা বলা দরকার। ফোন হাতে নিয়ে কল দিতে গিয়ে মনে পরে অনেক রাত হয়ে গেছে। মেয়েটা এখন ঘুমোচ্ছে।তাই আর কল দেয় না। কিন্তু এখন তো ইরহানের ঘুম আসবে না কিছুতেই।

বাহিরে গিয়ে ঘুমের টেবলেট কিনে আনে। তারপর সেখান থেকে একটা খেয়ে চুপচাপ শুয়ে পরে।

শুয়ে শুয়ে মা কে ডাকতে থাকে মা,,, মাগো। তোমার মনে অনেক কষ্ট ছিলো। অনেক কষ্ট পেয়েছিলে তাই না মা?

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে যুথি রানী। আমার মনে হচ্ছে আমি পা’গল হয়ে যাচ্ছি। আমি নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছি না। তুমি আমায় একটু সামলে নাও যুথি। এই মুহূর্তে আমার তোমাকে খুব করে দরকার। খুব দরকার আরো নানা ধরনের কথা বিরবির করে ইরহান ঘুমের দেশে পারি জমায়। চোখের কোণ টা ভিজে আছে।

যুথি থাকলে হয়তো ইরহানের কষ্ট টা একটু লাঘব হতো। যুথির বুকে মাথা রেখে নিজের অশান্ত মনটা শান্ত করতে পারতো।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here