#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৫
#Jhorna_Islam
এতো কিছু করেও শেষ রক্ষা হলো না। দাদি ঠিক সবাই কে ফাঁকি দিয়ে পরোপার চলে গেলো। কেউ আটকাতে পারলো না। মানুষের হায়াত ফুরিয়ে গেলে তাকে শতো চেষ্টা করে ও আঁটকে রাখা যায় না। কোনো ডাক্তার কবিরাজের ও সাধ্যি নেই।
দাদির চলে যাওয়া টা ইরহানের জন্য মা’রা’ত্মক একটা শ’ক। ইরহান কোনো দিন কল্পনায় ও ভাবেনি তাকে একা করে তার দাদি নামের এই বটের ছায়া টা চলে যাবে। অতি শোকে পাথরে পরিণত হয়েছে ইরহান। ডাক্তার এসে জানিয়ে যাওয়ার পর থেকে সে নির্বাক হয়ে আছে।
দাদিকে চিরতরে বিদায় দেয় সকলেই। ইরহান সকল কাজ চুপচাপ সম্পন্ন করেছে। ডাক্তারের কাছ থেকে তার দাদি আর নেই কথাটা শোনার পর থেকে তার মুখে আর একটা কথা ও ফোটে নি। না চোখ দিয়ে একটু পানি বের হয়েছে।
এইদিকে বাড়িতে শোকের ছায়া হলেও ,, তাছলিমা বানু, আর লিমার, ইমনের তেমন একটা ভাবাবেগ দেখা গেলো না। তাদের যেনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না।
ইরহানের বাবা, ঘরের এক কোণে চুপ হয়ে বসে আছে। উনিও ভাবতে পারেনি এসব হবে।
যুথি কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। জীবন থেকে একটা ভালোবাসার মানুষ চলে গেলো। এই বাড়িতে যার হাত ধরে এসেছিল সে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো। দাদিকে নিয়ে হাজারো বিলাপ করছে আর কাঁদছে। দিনা আর দিনার মা যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের অবাধ্য অশ্রু কিছুতেই থামছে না। চোখের সামনে সব স্মৃতি গুলো ভেসে উঠতেছে।
এই বাড়িতে দাদি সব সময় সবার থেকে যুথিকে আগলে রেখেছে। সব সময় পাশে থেকেছে। কতো হাসি ঠাট্টা করেছে।
ইরহান আসার আগে সারাক্ষণ দুইজন নানান ধরনের গল্প গুজব করে কাটিয়েছে।
এখন আর কিলো আমার কইতরি বলে ডাকবে না। স্নেহের হাত মাথায় রাখবে না। সব কিছু ভাবতেই যুথির বুক ফেটে কান্না আসছে।
ইরহান তার দাদি কে চিরতরে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি এসে চুপচাপ কারো সাথে কথা না বলে দাদির রুমে চলে যায়।
যুথির মামি যুথিকে কিছুটা স্বান্ত করে বাইরের কি পরিস্থিতি তা দেখতে এসেছিল। এসে দেখে ইরহান ফিরে এসেছে। ইরহানের মুখের অবস্থা কেমন যেনো হয়ে আছে। উনার কাছে বিষয় টা ভালো লাগেনি।
ছেলেটা তার দাদি কে হারিয়েছে। ইরহান কে তার দাদির ঘরে যেতে দেখে যুথির মামি তারাতাড়ি যুথির কাছে যায়। যুথি তখন জানালার দিকে তাকিয়ে খাটের কোণায় মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। এখন আর কাঁদছে না তবে হি’চকি তুলছে।
যুথির মামি গিয়ে যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তারপর বলে যুথি মা নিজেকে সামলা। জামাই এসেছে।
যুথি মাথা তুলে দরজার দিকে তাকায়। উনি সেটা বুঝতে পেরে বলে,,এখানে না তোর দাদি শ্বাশুড়ির রুমে যেতে দেখলাম। চোখ মুখের অবস্থা একটুও ভালো না। সারাদিন একটুও কাঁদেনি ছেলে টা। তুই ওর পাশে যা। এখন ইরহানের তোকে দরকার। তোকেই সামলাতে হবে। তুই ভেঙে পরলে তো চলবে না।
যুথি মামির কথায় উঠে দাঁড়ায়। ঠিকই তো লোকটা কে এখন তাকেই সামলাতে হবে। এই বাড়িতে ইরহানের সবচেয়ে কাছের আর প্রিয় মানুষ ছিলো দাদি। ইরহান কে এখন আগলে রাখতে হবে। লোকটা তো মনে মনে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে হয়তো।
যুথি তারাতাড়ি দাদির রুমে এগিয়ে যায়। দরজাটা ভিড়ানো। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে যুথি।
ইরহান দাদির বালিশ টা কোলে নিয়ে হাত বুলাচেছ আর জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
যুথি ইরহান কে দেখেই বুঝতে পারলো লোকটা ভালো নেই।তার মানুষ টা একদম ভালো নেই।
যুথি ইরহানের কাছে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়। ইরহান চোখ ঘুরিয়ে যুথির দিকে তাকায়। ইরহানের মুখ দেখে যুথির আবার কান্না পায়। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়। তার এখন ভেঙে পরলে চলবে না।একদম চলবে না। মানুষ টা কে সামলাতে হবে। যুথি তো জানে এই মানুষ টা যতোই কঠোর হওয়ার চেষ্টা করুক না কেনো বাইরে দিয়ে। ভিতর থেকে ততোটাই দূর্বল।
যুথি ইরহানের পাশে বসে। ইরহানের কাঁধে হাত রাখে।
ইরহান ধরা গলায় বলে,,যু-যুথি রা-নী!
যুথি দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইরহান কে চোখের ইশারায় আসতে বলে। ইরহান যেনো এমন একটা জায়গারই অপেক্ষায় ছিলো তার কষ্ট গুলো ঢেলে একটু হালকা হওয়ার জন্য। দুই হাতে ঝাপটে ধরে যুথির কাঁধে মুখ লোকায় ইরহান।
যুথি ও মানুষ টা কে নিজের সাথে আগলে নেয়। নিঃশব্দে কাঁদছে ইরহান যুথি বেশ বুঝতে পারছে।যুথির কাঁধের অংশ টা ইরহানের চোখের পানি তে ভেসে যাচ্ছে। ক্ষনে ক্ষনে ইরহানের শরীরটা মৃদু কেঁপে উঠছে।
যুথি কিছু বলছে না কাঁদুক কাদলে হয়তো মনটা হালকা হবে।তাই যুথি চুপচাপ ইরহানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
প্রায় অনেক সময় কান্না করার পর ইরহানের কান্না থামে। যুথি এবার বলে,,এভাবে আপনি ভেঙে পরবেন না। দাদি কিন্তু আপনাকে এমন ভাবে দেখতে একদম পছন্দ করতো না।
দাদি তার বড় নাতি কে কতোটা ভালোবাসে জানেন না?
আ-আমাকে আর কেউ বড় নাতি বলে ডাকবে না।
সবাই তো সব সময় থাকে না। আমাদের এই চিরন্তন সত্য টা মেনে নিতে হবে। দাদি আমাদের মনে সবসময় থাকবে। কখনো ভুলবনা।
দাদির জন্য মন ভরে দোয়া করতে হবে। আল্লাহ যে নো তাকে জান্নাতবাসী করে।
আপনি নিজেকে সামলে নিন।
আমার আপন বলতে তুমি আর দাদি।দাদি চলে গেলো। এই বাড়ির মানুষ গুলো আমার আপন হয়েও আপন না। আমি একা হয়ে গেলাম।
হুঁশ এসব বলে না। আমি আছি তো আপনার যুথি রানী। আপনি ভেঙে পরলে আপনার যুথি রানীর কি হবে? তাই আপনাকে শক্ত হতে হবে।
হবেন তো? অন্তত আমার জন্য?
ইরহান যুথির চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে মাথা নাড়ায়।সে সামলে নিবে।
———————————
কথায় বলে বিপদের সময় ই বিপদ লাগে।
ইশান উঠোনের এক কোণে বসে আছে। সেও খুব ভেঙে পরেছে। ইশানের ও কাছের ছিল দাদি। ইশান কে এমন দেখতে দিনার কষ্ট হচ্ছে। তাই সে ইশানের দিকে এগিয়ে যায়। ইশানের কাঁধে হাত রাখে।
ইশান দিনার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে দিনার দিকে তাকায়।
দিনার মা দূরে থেকে সবই দেখে। কয়েকদিন ধরে উনার কাছে নানান লোক বিচার দিচ্ছে। কোনো একটা ছেলের সাথে নাকি দিনা কে দেখেছে কয়েকজন। উনি চুপ ছিলেন। স্কুল থেকেও বিচার এসেছে দিনা ঠিক মতো পড়াশোনা করছে না।
দিনার মায়ের দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে সময় লাগে না। এমনিতেও উনি ইশানের সাথে আরো কয়েক বার কথা বলতে দেখেছে।
দিনা কে এমন ভাবে দেখে অবাক না হয়ে পারছেন না তিনি। রা’গে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ইশান ছেলে টা কে এমনিতেও উনার পছন্দ না।
এগিয়ে গিয়ে দিনার হাতটা ইশানের হাত থেকে ঝটকা মে’রে ছাড়িয়ে নেয়। তারপর দিনার দিকে র/ক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায়। দিনা মায়ের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে যায়।
আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে।দিনা একদম চুপ হয়ে যায়। ভয়ে রীতিমতো শরীর কাঁপছে। আর কিছু বলার তার ক্ষমতা নেই।
ইশান উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই দিনার মা হিসহিসিয়ে বলে উঠে একদম চুপ তোমার মুখে একটা কথা ও শুনতে চাই না। শো’কের বাড়ি তাই কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না।বলেই দিনা কে নিয়ে বেরিয়ে যায় উনি।
#চলবে,,,,,