#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam
যুথি কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইরহান সুন্দর করে যুথির মাথার ঘুমটা টা আরেকটু ঠিক করে দেয়।
যুথির ও মনে মনে আশা ছিল তার বরকে পাশে রেখে দুইজনে একসাথে হাতে হাত রেখে নতুন জীবনে পা দিবে।কিন্তু ফোনে বিয়ে পড়ানো হওয়ায় এসব স্বপ্ন যুথি মন থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলো।সবার তো সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। সেইটা ভেবেই যুথি তার মন কে বোঝ দিতো।
যুথির মনের চাওয়া টা হুট করেই যে ইরহান পূরণ করে দিবে তা সে কল্পনা ও করতে পারেনি।
কাজী সাহেব যুথি আর ইরহানের বিয়ে পরাতে থাকে। যুথির একটা হাত ইরহানের হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে রাখা। আশে পাশে কি হচ্ছে সেই দিকে যুথির খেয়াল নেই সে একমনে তার মানুষ টার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইরহানের দিকে তাকিয়েই আরো একবার নিজেকে ইরহানের নামে লিখে দিলো যুথি।প্রথম বার যতোটা অসহায় মনে হয়েছিলো নিজেকে যুথির আজ ততোটাই সুখী মনে হচ্ছে নিজেকে এই মানুষ টা কে পেয়ে।
বিয়ে পড়ানো শেষ করে দোয়া ধরবে কিন্তু যুথির সেইদিকে কোনো হেলদোল নাই।সে চোখ ভরে ইরহান কে দেখতে ব্যস্ত।
ইরহান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে নিজের বাহু দিয়ে যুথি কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,, এই যে ম্যাডাম এমন করে লোকের সামনে দেখতে হবে না। আপনারই তো বর। বাড়ি গিয়ে সামনে বসে মন ভরে দেখে নিয়েন ঠিক আছে? এখন আপাতত দোয়া টা ধরেন।বলেই হাত দেখিয়ে ইশারা করে।
ইরহান যুথির কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। সকলের সামনে কেমন করে তাকিয়ে ছিলো।সবাই কি ভাবছে ধ্যা’ত। মনে মনে বলল তুই দেখি বড় নি’র্ল’জ্জ হয়ে গেছিস যুথি।
তারপর দোয়া শেষে সকলেই বের হয়ে আসে। সকলে মিলে ইরহান কে ধরে তাদের খাওয়ানোর জন্য। একেই তো এতোদিন পর দেশে ফিরলো তারউপর আবার দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে ও করলো।
ইরহান বলেছিলো বাড়ি যাওয়ার কথা কিন্তু ওরা বাড়ি যাবে না। বাইরেই খাবে বলে জানায়।অগত্যা আর কি করার সকলের আবদার তো আর ফেলা যায় না। ইরহান ও ফেলতে পারেনি। সকলকে নিয়ে চলে যায় খাবার খায়,গল্প গুজব করে। তারপর বিদায় নিয়ে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
ইরহান ও যুথিকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসে। হাত, মুখ ধুয়ে জামা কাপড় পাল্টে নেয়।
যুথি জিজ্ঞেস করে চা খাবে কি না।
খেলে মন্দ হয় না যুথি রানী। মাথাটা ধরে আছে।কিন্তু তুমিও তো ক্লান্ত এখন থাক করতে হবে না।
কি বলেন এসব? আপনার মাথা ধরেছে সেইটা আপনি আমায় এখন বলছেন? আমি এখনই আপনার জন্য আদা দিয়ে চা নিয়ে আসছি।আপনি চুপচাপ বসেন। এসে মাথা মাসাজ করে দিবো।
থাক যুথি।কিছু সময় পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।
এতো কথা বলছেন কেনো? চুপচাপ বসে থাকেন আমি কয়েক মিনিট পরই আসছি। উনি কষ্ট পাচ্ছে আর আমি বসে থাকবো।
যুথি তারাতাড়ি গিয়ে ইরহানের জন্য চা নিয়ে আসে। ইরহান কে চা দিয়ে নিজের হাতে একটু মাথা ব্যাথার মলম নিয়ে ইরহানের পাশে বসে। তারপর সুন্দর করে মাসাজ করে দিতে থাকে।
যুথি?
যুথি ইরহানের মাথায় মাসাজ করতে করতেই উত্তর দেয় হু?
আজ তো আমরা বিয়ে করলাম।
হুম।
হিসেব মতে বিয়ের পর কি হয়?
কি হয়?
বাহ রে বউ আমার দেখি কিছুই বুঝে না। বিয়ের পরে আজ হিসাব মতে তো আমাদের বা,,,
ইরহান কে আর কিছু বলতেই দেয়নি যুথি। পুরো কথা শেষ হবার আগেই মুখে হাত দিয়ে আঁটকে দেয়। আর কিছু বলিয়েন না প্লিজ।
ইরহান যুথির হাতের তালু তে নিজের অধরের ছোঁয়া দেয়।
যুথি তারাতাড়ি হাত সরিয়ে নেয়। ইরহানের দিকে তাকাতে পারছে না। লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা যুথির।ইচ্ছে করছে এক ছুটে রুম থেকে পালিয়ে যেতে।
যুথির অবস্থা দেখে ইরহান শব্দ করে হাসে।তারপর বলে এবার অজ্ঞান হয়ে যেও না প্লিজ। আমি এখন কিছুই করবো না।সময় নাও। আগেতো ফোনে আমাকে চিনেছো।এবার সামনা সামনি চিনো,আমার সাথে ভালো করে সহজ হও,জড়তা কাটুক। ততোদিন না হয় আমরা প্রেম করি কি বলো?
যুথি আর কি বলবে? সে বরাবরই ইরহানের করা কাজে আর কথায় মুগ্ধ।
——————————-
যুথি আর ইরহানের সম্পর্ক দিন দিন খুবই গভীর হচ্ছে। ভালোবাসা আস শ্রদ্ধার কোনো কমতি নেই। দুইজন দুইজন কে কাছ থেকে জানছে।বুঝার চেষ্টা করছে।
যুথি তো এখন প্রায় ইরহান কে চোখে হারায়। জড়তা কেটে গেছে। এখন লোকটা কে চোখের সামনে না দেখলে মন কেমন ছটফট ছটফট করে।
যুথি তো প্রতিক্ষনে ক্ষনে ইরহানের প্রেমে পড়ে।এমন লোকের প্রেমে না পড়ে উপায় আছে?
এই যে বিকেলে বাড়ির বাইরে যায় ঘুরার জন্য প্রতিদিন জিজ্ঞেস করবে যুথি রানী তোমার কিছু লাগবে? তোমার কি কিছু খেতে মন চায়? জামা কাপড় লাগবে? কি লাগবে বলো।
যুথির এক উত্তর কিছু লাগবে না। সবই তো আছে।কোনো কিছুর কোনো কমতি রাখেন নি আলহামদুলিল্লাহ। আমার এখন কিছু লাগবে না। লাগলে আমি ঠিক চেয়ে নিবো।
তখন ইরহান বলে,,,চাইবা কিন্তু। একদম লজ্জা পাবে না ঠিক আছে?
যুথি না চাওয়া সত্তে ও এটা সেটা নিয়ে আসবে। বাইরে গেলে প্রতিদিন একটা গোলাপ বা বেলি ফুলের মালা হলেও আনবে।
এর মধ্যে একদিন হুট করেই রাতের বেলা যুথির হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে ইরহান।
যুথি জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে? ইরহান বলে গেইটের বাইরে গেলেই দেখতে পাবে।
গেইটের বাইরে গিয়ে যুথি একটা সাইকেল দেখতে পায়।
এটা তো ইশানের সাইকেল। এটা এখানে কি করছে রাতের বেলা? চো’র নিয়ে যাবে তো।
এটা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তার রানী মা কে তার পিঠে চড়িয়ে রাতের বেলা হাওয়া খাওয়ার জন্য আর ঘুড়ে বেড়ানোর জন্য।
মানে?
মানে হলো আজ আমি আমার যুথি রানী কে সামনে বসিয়ে ঘুড়ে বেড়াবো সাইকেলে চড়ে।
মোটেও না। আমার খুব ভ’য় লাগে।পড়ে গেলে আমার কোমড় শেষ।
ইরহান উঠে যুথিকে ইশারা করে উঠার জন্য। যুথি মাথা নাড়িয়ে না জানায়।
আমার খুব ভ’য় লাগে।
আমার উপর তোমার ভরসা নেই? আমার তো তোমাকে সামনে বসিয়ে সাইকেল চালানোর অনেক সখ।
ঠিক আছে উঠছি বলেই ইরহান কে ধরে সামনে উঠে বসে।
আমাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে বসো। যুথি ইরহানের কথা মতো ইরহান কে ভালো করে ধরে বসে।
ইরহান সাইকেল চালাতে থাকে। রাতের বেলা কেউ ই নাই।ওরা দুই কপোত-কপোতী মনের আনন্দে পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। যুথির প্রথমে ভ’য় লাগলেও এখন খুব উপভোগ করছে।
ইরহান চালাতে চালাতে জানতে চেয়েছে কেমন লাগছে?
খুব,খুব,খুব ভালো। ইসসস কি ভালো লাগছে।আপনি থাকলে আমার এমনিতেই ভালো লাগে। এখন ডাবল ভালো লাগছে।
দুইজন ই তাদের বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে।একে অপরের ছায়া হয়ে গেছে।
————————–
ইরহান যুথি কে নিয়ে ঘুরতে যাবে বলে ঠিক করে। যুথি কে জিজ্ঞেস করে তার পাহাড় নাকি সমুদ্র পছন্দ। যুথি বলে,, দুটোই তো আমার কাছে ভালো লাগে।
এখন যেইটা সব চাইতে বেশি ভালো লাগে ঐটা বলো।
যুথি আলাদা করে বলতে পারেনি।
তাই ইরহান বলে ঠিক আছে। আমি পছন্দ করে নিয়ে যাবো।
বলছিলাম কি এখন না গেলে হয় না?
কেন এখন কি সমস্যা?
আসলে বাড়িতে সকলে আছে। তাদের রেখে এভাবে গেলে তারা কিভাববে? কি না কি মনে করে।
কি মনে করবে? তুমি তোমার বরের সঙ্গে যাবে।তোমার বরের টাকায়।
তবুও,,,
তবুও কি? তুমি কি যেতে চাও না?
যুথি বুঝতে পারে ইরহান যুথির কথায় রে’গে যাচ্ছে। তাই ইরহান কে জড়িয়ে ধরে বলে ঠিক আছে যাবো।এতো রে’গে যেতে হবে না।
শুনো যুথি কে কি ভাবলো কি বলল এটা নিয়ে কখনো নিজের ইচ্ছে, চাওয়া পাওয়া গুলো বিসর্জন দিবে না।
যুথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
#চলবে,,,,,,