খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩

0
1507

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam
“আসসালামু আলাইকুম নকল শ্বাশুড়ি আম্মা।”

কথাটা বলে যুথির মুখে যতোটা হাসি আছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অ’বা’ক’ত্ব বসার ঘরে উপস্থিত থাকা সকলের মুখে।

তাছলিমা বানু ব্রু কোচকে ফেলে তারপর স’ন্দি’হা’ন গলায় বলে উঠে, নকল শ্বাশুড়ি আম্মা মানেে?

যুথি তার ছোট দুই জা এর দিকে তাকালো দুইজন ই কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকিয়ে আছে যুথির দিকে। চোখের ভাষা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা যুথিকে একদম পছন্দ করছে না। তাতে যুথির কি ?

যুথি আবার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,,, আপনি তো আসল না। ডু’প্লিকেট হিসাবে আমার শ্বশুর আব্বা নিয়ে এসেছে। তাই নকল বলছি।কিছু মনে করবেন না কেমন?

আমার খুব ভালো লেগেছে আমি এটা বলেই ডাকবো।কতো মাথা খাটিয়ে তারপর এই নামটা দিয়েছি জানেন? আমি ভালোবেসেই এই নামে ডাকবো।আপনি কিছু মনে করবেন না। মনে মনে বলল তুই মনে করলেও আমার কি?

ইমনের বউ লিমা বলে উঠে ছিঃ কি নাম এগুলো।

কিরে ইরহান তোর বউকে যে নিয়ে আসবি আমাদের বললি না তো।বাহ্ মাকে ছাড়াই দেখি এখন সব সিধান্ত নিতে পারিস। ওকে যে আনতে যাবি একবার বলেও গেলি না। আমি মানা করতাম নাকি আনতে?

ইরহান মায়ের মুখের দিকে তাকায় কি সুন্দর অভিনয় করে। ইরহান ও না জানার ভান করে থাকবে দেখবে কতো নিচে নামতে পারে এরা।

মা আসলে,,,,,

থাক আর কিছু বলতে হবে না। তোরা সবাই এখন বড় হয়ে গেছিস। মা কে আর কি প্রয়োজন? ভালো করেছিস।

আরে ন’কল আম্মা আপনার বড় ছেলের তো কোনো দোষ নেই। উনি জানতেন না৷ আমি যে আসবো। আপনাদের মতো এখনই জানলেন। আসলে শ্বশুর বাড়ির ভাত খাই না বলে পেট ভরছিলোনা।আপনারাতো আমাদের গরিব ঘরে যাবেন ও না আনার জন্য। আর আপনার ছেলের আশায় বসে থাকলে আমার সংসার করাই হতো না তাই নিজে নিজে চলে আসছি।

যুথির কথা শুনে তার দুই জা মুখ বাকিয়ে বলে,,,কেমন বে’হায়া মেয়ে মানুষ নিজের শ্বশুর বাড়িতে নিজেই এসে পরেছে তাও আবার প্রথমবার। আর আমাদের সময় কতো বরযাত্রী গিয়েছিলো জানো?

সেসব কথা না হয় বাদ ই দিলাম তোমার দিকে একবার ভালো করে তাকাও ছিঃ ইয়াক কি নোংরা।

লিমার কথা শুনে যুথি নিজের দিকে তাকায় হেঁটে আসার দরুন পায়ে ময়লা লেগে আছে। তাছাড়া কালো বোরখায় একটু বেশি ই বোঝা যায় ময়লা।

তো কি হয়েছে একটু মাটি লেগেছে ঝাড়া দিলেই চলে যাবে।

কি নোংরা তুমি মেয়ে। আম্মা আর কাউকে পেলেন না বাড়ির বউ করার জন্য? শেষ মেষ কিনা এই ক্ষে’ত মার্কা মেয়েকে বাড়িতে আনতে হলো?

আমি ক্ষে’ত? তো ভালো তো সেই ক্ষে’ত এ ফসল উৎপাদন হলেই মুখে খাবার জোটে ভুলে যাইওনা গো তোমরা।আর আমার শরীরে মাটি দেখে ছিঃ ছিঃ করছো? তোমরা কি মরবে না?

তোমরা মরলে কি তোমাদের সিমেন্ট দিয়ে মাটি দিবে? হুু বলো বলো!

ইমন আর ইশানের বউ আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাছলিমা বানু তাদের থামিয়ে দেয়। আহ্ কি শুরু করেছো তোমরা? চুপ থাকো।

ইরহান তোর বউকে তুই নিয়ে যা।

আহ্ আপনারে তো আমার চুমু খেতে মন চাচ্ছে নকল শ্বাশুড়ি আম্মা। আমি যে ক্লান্ত ঠিক বুঝেছেন।

ইরহান এতো সময় এদের কান্ড দেখে গেছে শুধু। তার ভাইয়ের বউরা কি রকম নাক ছি’ট’কা’চছে তার বউকে দেখে। ওদের কথার বিরুদ্ধে কিছু বলতে নিবে তার আগে যুথি নিজেই তাদের কথার উত্তর দিতে দেখে ইরহান আর কিছু বলে নি।ইরহান বুঝে গেছে বউ তার ঠোঁট কাটা স্বভাবের কাউকে যে ছেড়ে কথা বলবে না।

চলো যুথি হাত মুখ ধুয়ে নিবে।

যুথি ইরহানের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর ইরহান কে অনুসরণ করে তার পিছনে পিছনে যেতে থাকে। যেতে যেতে একবার ঘার ঘুড়িয়ে তার জা দের দিকে তাকায়। মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বলে উঠে,,, “এএএএএ ঢংগীদের ঢং দেখলে বাঁচি না। ”

ইরহান যুথি কে নিয়ে চলে গেলে ইমন আর ইশানের বউ শ্বাশুড়ি মায়ের উপর ক্ষি”প্ত হয়ে উঠে,,,,,

আমরাতো কিছু বলতে পারি না আম্মা আপনাকে। জোড়ে কথাই বলতে পারি না আপনার সাথে। আর এই দুই পয়সার ফ’কি’ন্নি কিরকম চে’টাং চে’টাং কথা বলে গেলো আপনি তো একটা টু শব্দ ও মুখ থেকে বের করলেন না আম্মা। আমরা এমন করলেতো আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলতেন সাথে বাপ মা কে ডেকে আনতেন।আর এখন আপনাকে নকল শাশুড়ী আম্মা বলে গেলো গায়ে লাগলো না? আমাদের ও কতো গুলো কথা শুনিয়ে গেলো।

তাছলিমা বানু তার দুই ছেলের বউদের কথা শুনে গর্জে উঠে চুপ করো তোমরা। আমি কি করবো না করবো তা কি তোমরা বলে দিবে? জ’বান টা একটু বেশি চলছে না তোমাদের? ভুলে যেও না কার সাথে কথা বলছো।আমার সাথে কথা বলার সময় মেপে মেপে কথা বলবে। উপরে উঠলে কি করে নিচে নামাতে হয় সেটা আমার ভালো করে জানা আছে। চুপচাপ নিজের কাজে যাও।

দুইজন শ্বাশুড়ির কথায় ভিতরে ভিতরে ফুসছে।তবুও মুখ দিয়ে কিছু বলল না।চলে যেতে নিলে শ্বাশুড়ির কথা শুনে আবার একটু থামে।

যুথি কে নিয়ে কেউ কোনো মজা করবে না বা অপমান করবে না। যাও এবার নিজেদের কাজে। আমি কি করবো সেটা আমি ভালো করেই জানি। আমার চুল গুলো বাতাসে পাকেনি।

ইমন ও ইশানের বউ চলে গেলে তাছলিমা বানু মনে মনে বলে ঐ গা’ই’য়্যা মূ’র্খ মেয়েটাই আমার তু’রু’পে’র তা’স।তোমাদের মাথায় এসব ঢুকবে না বড় লোকের আ’লা’লের ঘরের দু’লালিরা। এই মেয়েকে শুধু শুধু ইরহানের জীবনে জড়াই নি। এই তাছলিমা বানু কোনো কাঁচা কাজ করে না।

নিজের স্বা’র্থের জন্য এই মেয়েকেও সহ্য করে নিতে জানি। বলে মনে মনে হাসে তাছলিমা বানু।

——————————————

ইরহানের রুমে এসে বোরখা খুলে বাথরুমে ঢুকে হাত পা ধুয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসে যুথি। বাড়িটা বেশ রাজকীয় ভাবেই করেছে। গ্রামাঞ্চলের জন্য এই বাড়িটাই অনেক বেপার সেপার।আশে পাশের দুই তিন গ্রামে হাতে গোণা দুই একটা বাড়ি মনে হয় এমন আছে। ইরহানদের বাড়িটা আবার শহর থেকে কিছুটা কাছেই। প্রতি রুমে রুমে বাথরুম করেছে। যুথি কল পাড় খুজলে ইরহান বাথরুম দেখিয়ে দেয়।

বাথরুম থেকে বের হয়ে উড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে যুথি।তাকিয়ে দেখে ইরহান খাটের এক কোণে মাথা নিচে দিয়ে বসে আছে।

— এইই বোকা পুরুষ আপনি আমার বোকা পুরুষ তো? নাকি এয়ারপোর্ট থেকে বদল করে দিয়েছে?

— মানে?

— আমার বোকা পুরুষ তো এরকম গোমড়া মুখে থাকে না। সে সব সময় হাসি খুশি থাকতে পছন্দ করে। আর আপনি কিভাবে আছেন মুখ টা কে কেমন করে রেখেছেন।

— তোমার এইখানে আসা একদম উচিত হয় নি যুথি।

— যুথি হাত পা তুলে খাটের উপর উঠে বসে। কেন আমাকে ঐ বাড়িতে রেখে এইখানে আরেকটা বিয়ে করে বউ নিয়ে থাকতেন নাকি?

— ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে যার নিজে নিজে চলার বা এক বউয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সামর্থ্য নাই তার আবার দ্বিতীয় বিয়ে।

যুথি ইরহানের মনের অবস্থাটা খুব ভালো করে জানে।তাও মজা করে তাকে একটু মন ভালো করতে চেয়েছিলো। বুঝে গেছে ইরহানকে এখন যাই বলুক মন ভালো হবে না। তাই চুপচাপ ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। তার বোকা পুরুষ টা কে দেখে আর মনে মনে কিছু ভাবে।

————————————————–

গ্রামের দিকে সাধারণত রাত আটটা বেজে যাওয়া মানেই অনেক রাত। সকলে এই সময় খেয়ে দেয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নেয়।

যুথি রুমে যে সেই ঢুকেছে আর রুমের বাইরে বের হয়নি।ইরহান অবশ্য ঐ সময়ই বেরিয়ে গেছে আর ফিরে আসেনি।

এখন রুমের বাইরে গিয়ে দেখে সকলেই খাওয়ার রুমে খেতে বসছে। যুথির ও প্রচুর খিদে পেয়েছে। কিন্তু ইরহান কই ইরহান কে রেখে একা খেতেও পারছে না। তাই চুপচাপ বসার ঘরে বসে। দেখতে পায় ইরহান বাড়িতে ঢুকছে। যুথি উঠে দাঁড়ায় ইরহানকে বলে হাত মুখ ধুয়ে আসতে খেতে বসবে।ইরহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। কিছু সময় পর আসলে দুইজন ই এক সাথে খেতে বসে।

অন্যরা ও মাত্রই খাবার নিয়েছে খাওয়ার জন্য। ইমন আর ইশান তাদের বউদের নিয়ে এক পাশে বসেছে। ইরহান যুথিকে নিয়ে আরেক পাশে।

তাছলিমা বানু সাধারণত ছেলেদের সাথে খায় না।সবার খাওয়া শেষ হলে তারপর উনি খেতে বসেন। এটা সবসময় ই করেন তিনি।

অন্য দুই ছেলের প্লেটে দুইটা মাছের মাথা ও প্লেট ভর্তি করে মুরগির মাংস দিয়েছে এক সাথে।বউদের ও দিয়েছে। যুথি শুধু এদের খাবার খাওয়া দেখছে রা’ক্ষ’সের মতো খাচ্ছে সবগুলো মিলে।সবাই কে সব মাছ মাংস প্লেট ভরে দিয়ে যুথি ও ইরহানের কাছে বাটি নিয়ে আসে তাছলিমা বানু।

ইরহানের প্লেটের এক পাশে মাছের একটা লেজ ও মাংসের দুই টুকরো দেয়।

যুথির প্লেটে মাছের ঝুল আর একটুকরো মুরগির মাংস আর একটা আলু দিয়ে বলে আর নাই এটুকু দিয়েই খেয়ে নেও।
বলে চলে যায়।

ইরহান তার ভাই আর ভাইয়ের বউদের প্লেটের দিকে তাকায়। তারপর নিজের আর যুথির প্লেটের দিকে। মুরগির মাংস রান্না করা পাতিলের দিকে ও চোখ যায় ইরহানের।পাতিলে রাখা মাংস আরো তিনজন খেতে পারবে।

তাছলিমা বানু ভালো করে জানে বেশি কাঁটার জন্য ইরহান লেজ কি মাছের পেটের অংশ ছাড়া খেতে পারে না। তাও এটা উনি ইরহান কে দিলেন।

তাছলিমা বানুর কান্ডে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে যুথি।মুখ খুলে কিছু বলতে নিবে ইরহান বুঝতে পেরে হাত ধরে আঁটকে দেয়।মাথা নাড়িয়ে না করে কিছু বলার জন্য।

ইরহান তার প্লেটের মাংস যুথির প্লেটে তুলে দেয়।তারপর বলে তুমি খাও যুথি আমার একদম খিদে নেই। বলেই ইরহান উঠে চলে যায়।

ইরহানের চলে যাওয়া দেখে কেউ কিছু বলল না এরাতো খেতে ব্যস্ত। অথচ সব কিছু ইরহানের টাকায় আনা।ইমন, ইশান কোনো কাজই করে না।

যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। লোকটার নাকি খিদে নেই সারাদিন যে ভালো করে কিছু খায়নি তা তো আর যুথির জানতে বাকি নেই।

#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here