#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৯
#Jhorna_Islam
দুপুর বারোটার দিকে ঘুমিয়ে উঠতে উঠতে বিকেল হয়ে গেছে। দাদিও ডাক দেয় নি যার কারণে গোসল করতে পারেনি যুথি। যুথি আবার গোসল না করে একদিন ও থাকতে পারে না । শরীর চুলকায় কেমন অ’স্বস্থি লাগে।রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারে না।
তাই তিনটার দিকে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে নিয়েছে। ইরহান আজকে গোসল করতে মানা করেছিলো যুথি শুনেনি। বলেছিলো একদিন গোসল না করলে কিছু হবে না। আজ না হয় হাত মুখ ধুয়ে দাও। আর বেশি খারাপ লাগলে গামছা দিয়ে না হয় শরীরটা মুছে দাও গোসল করো না।এসময়ে ঠান্ডা লাগানো ঠিক হবে না।
সেই যে যাই বলুক যুথি কি শোনার মেয়ে নাকি? দাদি ও বলেছে গোসল যখন করবি কর।কিন্তু চুলটা ভিজাইস না।যুথি গোসল করতে গিয়ে সকলের বারণ ভুলে গেছে। আরামসে গোসল সেরে আসে। গোসল করে যেনো সে অনেক কিছু অর্জন করে ফেলেছে।
শীত এখনো রয়েছে। গ্রামে একটু বেশিই শীত শীত ভাবটা থাকে। খাওয়ার পর উঠলে তো আরো শীত করে। যুথি খেয়ে উঠার পর যেমন দ্বিগুণ শীতটা বেড়ে গেছে।
বাইরে তাকিয়ে দেখে হালকা রোদ আছে। তাই আর দেরি না করে ভিডিও কলে ইরহানের সাথে কথা বলতে বলতে পুকুর পাড়ে চলে যায়। এইখানে রোদটা ভালো ভাবে পরছে।তাই আরাম করে বসে বিকেলের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখাতে থাকে।আর তার প্রাণ প্রিয় স্বামীর সাথে কথা বলতে থাকে। চুল গুলো ও ছেড়ে রাখা। ভালো করে মুছে আসলেও ভিজা ভিজা ভাব আছে তাই ছেড়ে রেখেছে।
হালকা হালকা ভাবে শরীরটা ঝাঁকুনি দিচ্ছে। ইরহান হয়তো তা বুঝতে পারছে।তাই ফোনেই বকাবকি শুরু করে দেয়,,,,
আমি মানা করেছিলাম না তোমায় গোসল না করতে? ঠান্ডা টা লাগুক পরে বোঝাবো মজা।
লাগবে না ঠান্ডা।
হ্যা আপনি তো সব জানেন।তারপর যুথি কে ন’কল করে বলে,, লাগবেনা ঠান্ডা।
যুথি ইরহানের কথায় মুখ ভেংচি কাটে।
এইই বাচ্চার আম্মু একদম মুখ ভেংচি কাটবেনা বলে দিলাম।
কেন কাটবো না? একশোবার কাটবো বলেই আবার ভেংচি কাটে।
আমি পাশে থাকলে বুঝাইতাম কেন কাটবে না।
কচু’ বুঝাইতেন।
ইরহান আর যুথি আরো নানান কথায় হাসতে থাকে।
———–
অন্যদিকে ইশান এখনো কানে ফোন হাতে স্ত’ব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইটা সে কি দেখছে? নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
ফোনের অপর পাশের মানুষ যে অনবরত কথা বলে হ্যালো হ্যালো করে চলেছে সেই দিকে তার হুঁশ নেই। তার চোখে যে নে’শা লেগেছে। যা তাকে চুম্বকের মতো সামনে বসে হাসতে থাকা রমনীর দিকে টানছে। চোখ ফেরানো দা’য় হয়ে গেছে।
এই মেয়ে এতো রূপবতী হলো কবে ভেবে পাচ্ছে না ইশান।শরীরের রং পুরোই পাল্টে গেছে। শরীর যেমন উজ্জলতা ছড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য আগের থেকে অনেক টা ভালো হয়েছে। একটু মোটা হওয়ার দরুন যেন বেশিই ভালো লাগছে।
হুট করে কেউ আগের যুথি আর এখনকার যুথিকে দেখলে অবাক হয়ে যাবে অনেকটাই।যেমন এখন ইশান হচ্ছে।
পাশাপাশি বাড়িতে থাকলেও এতোদিন দেখা হয়নি ইশানের যুথির সাথে। অনেক দিন আগে দেখেছিলো সে। ঐসময় তো এতোটা সুন্দর ছিল না।আর না ইশানের ন’জর কাড়তে পেরেছিলো যুথি।
যুথিকে দেখে ইশানের মন নড়বড়ে হয়ে গেছে। একটা কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এই মেয়ে টা কে তার চাই।একদিনের জন্য হলেও একে নিজের করতে হবে। এতোদিন ঝিনুকের খোলস থেকে মুক্তা বেরিয়েছে।
যুথির সারা শরীরে দূর থেকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। কেউ এখন ইশানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারবে ইশানের মনে কি চলছে। চোখ দিয়েই যেনো যুথির পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছুয়ে দিচ্ছে।
নারীর নেশায় ধরেছে ইশান কে। তার মাথায় এখন এটাও নেই কার দিকে সে ন’জর দিচ্ছে। যার দিকে সে ন’জর দিচ্ছে সে সম্পর্কে তার কি হয়।তার এখন একটাই লক্ষ এই মেয়েটার শরীরটা নিজের করে পাওয়া।
সময় জ্ঞান ভুলে ইশান এক দৃষ্টিতে যুথির দিকে তাকিয়ে আছে।
যুথি ইরহানের সাথে কথা বলার মাঝেই তার দাদি তাকে ডাকতে ডাকতে এদিকেই এগিয়ে আসছে।
তুই এই অসময় চুল ছেড়ে এখানে কেনো বসে আছিস বু?
রোদ পোহাচ্ছি দাদি।
আমি বারণ করেছিলাম চুল না ভিজাইতে।তুই কারো কথাই শুনিস না।
উফফ দাদি কিছু হবে না আমার।
এই অসময়ে এখানে বসে থাকিস না। ঘরে চল কতো কিছুর বা*জে ন’জর আছে জানিস? এখন অসময়ে ঘরের বাইরে থাকা ঠিক না।
একটু পর চলে যাবো দাদি। তারপর দাদির দিকে তাকিয়ে দেখে দাদির হাতে বোরখা।
তোমার হাতে বোরখা কেন দাদি? কি করবা? কোথাও যাইবা নাকি?
ওহ আসল কথাই তো ভুলে গেছি। আমার একটু ঐ বাড়িতে যেতে হবেরে। কয়েক টা জিনিস রয়ে গেছে। আনতে হবে।
এখন যাইবা?
হুম সন্ধার দিকে আইসা পরবো।বেশি সময় থাকবো না। যাবো আর আসবো।
ঠিক আছে যাও তুমি। তারাতাড়ি আইসা পইরো।
আচ্ছা বু।
আলমারিতে টাকা আছে ভাড়া নিয়ে যাও।নয়তো আসতে রাত হয়ে যাবে।
আচ্ছা আমি গেলাম।তুই সাবধানে থাকিস।আর ঘরে চলে যা।
দাদি চলে যাওয়ার পর যুথি আবার ইরহানের সাথে কথা বলতে থাকে।
ইশান ও হাতের ফোন পকেটে রেখে আরো এগিয়ে আসে। মনে মনে বলে বাহ্ সময় সব সময় আমাকে সুযোগ করে দেয়। এই দিকে এই বু’ড়ি চলে গেছে অন্য দিকে ইশানের বাড়িতে ও কেউ নেই। মনে মনে পৈ’শা’চি’ক আনন্দ পাচ্ছে ইশান।
যুথির এখনও বেশ শীত করছে। কিছুটা কাঁপছে।
ইরহান দেখে বলে,,শীত করছে?
হুম।
যাও ঘরে যাও এখানে আর থাকতে হবে না।
আমার কম্বল লাগবে!
আচ্ছা এইখান থেকে কেউ গেলে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। মনে হয় না তো এখন কেউ যাবে। পরে যেতে যেতে শীতই চলে যাবে। এক কাজ করো আমি টাকা পাঠাই একটা কিনে নাও।
নানা আমার বিদেশি কম্বল লাগবে। মানে সৌদিআরব এর কম্বল।
এটা কোন কথা? কম্বলের মাঝে কি পার্থক্য?
আপনি বুঝেন না আমি কিসের কথা বলছি? আমার বাবুর আব্বুকে লাগবে আমার বলেই ঠোঁট উল্টায়।
ইরহান সরু দৃষ্টিতে কিছু সময় যুথির দিকে তাকিয়ে রয়। তারপর বলে খুব দুষ্টু হয়েছো না? যাও কিছু সময় পর ই আজান দিয়ে দিবে।এই সময় এমন ভাবে থাকাটা সত্যিই ঠিক না দাদি ঠিকই বলেছে। সাবধানে ঘরে যাও। ঘর থেকে আর বের হইও না। আমি এখন রাখি কাজ করবে হবে যুথি রানী। সন্ধার পরে আবার কল দিবো।
আচ্ছা তাহলে। আপনি চিন্তা করবেন না আমি এখনই ঘরে চলে যাচ্ছি।
ইরহান কল কাটলে যুথি উঠে দাঁড়ায় ঘরে যাওয়ার জন্য। এতো সময় কথার খেয়ালে থাকলেও এখন মনে হচ্ছে কেউ আশে পাশে আছে।যুথির দিকে তাকিয়ে আছে।
যুথি চারপাশে চোখ বুলায়।
ইশান আগেই আম গাছের আড়ালে চলে গেছে। এইখানে কিছু করা যাবে না। পুকুরের ঐ পাশে লোকজন রয়েছে।
যুথি কাউকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে একটু ভয় পায়।এইটা ভেবে কোনো অ’শ’রী’রী না তো। অন্য সময় হলে ভয় পেতো না এখন তো সে আর একা না। তার ভিতর একটা ছোট্ট প্রাণ এর অস্তিত্ব রয়েছে। হাতটা আপনা আপনি পেটে চলে যায়।
ঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলে ধুর আমার এখানে আসাই ঠিক হয় নি।তারপর মনে মনে নানান দোয়া দুরুদ পরতে পরতে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়।
ইশান ও যুথির পিছনে পিছনে যেতে থাকে।
যুথি ঘরের সামনে এসে পিছনে ঘুরবে তার আগেই তার মুখ কেউ চেপে ধরে। যুথি মুখের থেকে হাত সরানোর জন্য জোড়া-জাড়ি করতে গিয়ে হাত থেকে মোবাইল টা পরে যায়।
এখনো বুঝতে পারছে না কে তাকে এমনভাবে ধরেছে।অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই ছুটতে পারছে না। যুথি হাত পা ছোড়াছুড়ি বাড়িয়ে দেয়। আর মুখ দিয়ে উমমম উমমম করতে থাকে।
এতে করে ইশান বিরক্ত হয়ে যুথির কাধে আ’ঘা’ত করে। সামান্য টে’ক’নি’ক যানা আছে।কাঁধের আঘাতে যুথি অ’জ্ঞান হয়ে যায়। পিছনের দিকে ঢলে ইশানের উপরই পরে।
ইশান যুথিকে ধরে কোলে তুলে নেয়। তারপর নিজেদের বাড়ির দিকে যেতে থাকে।
যুথির শরীর থেকে একটা গ’ন্ধ আসছে।ইশান নাক দিয়ে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,,আহ্ ফুলের কি সুবাস। মধু নিশ্চই আরো মজাদার হবে।
পিছনে যুথির ফোন নিচে পরে আছে।
#চলবে,,,,,,,,,