খড়কুটোর বাসা পর্ব ২১

0
1114

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam

মানুষের শরীরের সাথে মনের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। শরীর ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। গত কয়েকদিন ধরে যুথির শরীরটা ও ভালো যাচ্ছে না।

খেলে কিছু সময় পরই আবার প্রচুর খিদে লাগে।যুথির কখনো এমন হয়নি।খাওয়া নিয়ে তার এতো মাথা ব্যাথা ছিলো না। এখন দিনে তিন চার বার ও খায় যুথি।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এতো খেয়ে ও শক্তি পায় না শরীরে।

কোনো কাজে তো এখন মন বসেই না উল্টো শরীর ম্যা’জ ম্যা’জ করে।কাজ করতে গেলে মাথা ঘুরায়। তবে এতো খারাপ লাগার মাঝেও একটা বিষয় হলো যুথির শরীর আগে থেকে বেশ একটু উন্নত হয়েছে।

স্বাস্থ্য টা কিছুটা বেড়েছে।শরীরের রং টা কিছু টা উজ্জল হয়েছে।যুথি এখনো ওর কেমন যেনো লাগে এসব কথা ইরহান কে বলেনি।শুধু শুধু টেনশন করবে।

কিন্তু যুথির শরীরের পরিবর্তন ইরহান ও লক্ষ করেছে। মাঝে মাঝে যুথির দিকে তাকিয়ে বলে দেখেছো আমার ভালোবাসার কতো জোড়? আমার যুথি রানীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজ সকাল থেকে যেন একটু বেশি কেমন কেমন লাগছে যুথির তাই ইরহান যাওয়ার পর স্কুলে আর যায়নি বিছানায় শুয়ে আছে।

তারপর কিছু একটা ভেবে দাদিকে ফোন লাগায়।

যুথির দাদি ফোন রিসিভ করতেই ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর যুথির কথা সব খুলে বলে।সব শুনে দাদি কিছু সময় চুপ থাকেন।

কিছু সময় পর গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,,, এই তুই আমার বু তো?

— এটা আবার কেমন কথা দাদি? আমি আমার অসুস্থতার কথা বলছি আর তুমি আমার সাথে মশকরা করছো?

— মশকরা করবো কেন? সত্যি কথাইতো বলছি।

— যুথিও এবার বলে,,এইই বুড়ি সত্যি করে বলো তুমি আমার দাদি তো?

— আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস?

— মোটেই না। তুমি আমার দাদি নও।আমার দাদি কোথায় তাকে বের করো বলছি।তার নাতনির অসুস্থতা নিয়ে আমার দাদি কখনো মজা করতে পারে না।

— হয়েছে এবার থাম।আমিতো ভাবতাম আমার নাতনি খুবই বুদ্ধিমতি আর চা’লাক।কিন্তু তুই দেখি আসলেই একটা ব’লদ।

— এএ বুড়ি,,,,,

— আরে থাম ছো’রি।এতো এতো উ’প’স’র্গ দেখে যে বুঝতে পারলো না এসব কিসের ল’ক্ষ’ন সে নাকি আবার বু’দ্ধিমতি হুহ্।

— কিসের ল’ক্ষ’ন দাদি?

— তোর মাথার বু’দ্ধিতে দেখি পুরাই জং ধরেছে। তুই মা হতে চলেছিস ছো’রি।আর আমি বড় মা।

যুথির দাদির কথা টা শুনেই হাতটা আপনা আপনি পেটে চলে যায় যুথির।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, এসব তুমি কি বলছো দাদি? সত্যি বলছো?

আমার এতো বছরের অভিজ্ঞতা তো তাই বলছেরে।তোদের ছোট্ট ঘর আলো করে কেউ আসতে চলেছে।

আ- আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বুড়ি।

— কেন বিশ্বাস হইতেছে না? আমিকি পোলাপান জন্ম দেই নাই নাকি।বয়স কি আমার বাতাসে বাড়ছে নাকি চুল গুলো বাতাসে পা’কছে কোনটা?

তুমি যাই বলোনা কেন দাদি আমার মনে হয় তোমার ধারণা ভুল। এমন না ও তো হতে পারে তাই না?

হ তোরা এখনকার যোগের মানুষ বুড়া মাইনষের কথা বিশ্বাস করবি কেন?
এখন তো কতো কিছু বের হইছে ঐটা দিয়ে পরীক্ষা করে নে তাহলে।তখন বুঝতে পারবি এই বুড়ির ধারণা ঠিক নাকি ভুল।

আরে টেস্ট করার কথা তো আমার মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো।আহ্ বুড়ি উম্মা! মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

হ হ বুঝি সবই।এসব মাথায় থাকবো কেন? এখন তো মন প্রাণ মাথা জুড়ে একজনেরই বসতি আমার নাত জামাই।

রাখছি এখন পরে কথা হবে।

আচ্ছা বইন সাবধানে থাকিস।আর ঐসব টেস্ট করে আমারে জানাইস।

হুম।

যুথি ফোন রেখে ভাবতে থাকে কিভাবে জিনিস টা আনবে।ইরহান কে এখন বলা যাবে না।পরে নিশ্চিত হয়ে বলবে।দেখবে ইরহানের প’তি’ক্রি’য়া কি।

তাই অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করে প্রে’গ্ন্যা’সি’র কি’ট টা পাশের বাড়ির সীমা যে তার সাথে স্কুলে পরায় তার হাতে আনাবে।সে কাল মার্কেটে যাবে বলেছিলো।

সীমা কে যুথি ফোন দিয়ে বলে দেয় নিয়ে আসার জন্য। সীমা জানায় কাল আসার সময় নিয়ে আসবে।

যুথি কল কেটে পেটে হাত দিয়ে বসে থাকে। কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে তার।নিজের ভিতর অন্য প্রাণের কথা ভাবতেই শরীর শি’র’শি’র করে উঠে।

————————————–

অনেক হলো এমন ভাবে আর না। সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদেশ গিয়ে এবার নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করবে।

ইরহান পরশু দিন চলে যাবে। ভোর চারটার ফ্লাইট। মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কেটে নেয় ইরহান। যুথিকে এখনো জানায় নি টিকিট কাটার কথা।দোকানে কাজের ফাঁকেই কাজটা সেরে ফেলে।বাড়িতে গিয়ে বলবে।

রাতে বাড়িতে গিয়ে দেখে যুথি শুয়ে আছে চুপচাপ। কোনোদিন যুথি ইরহান আসার আগে এমন করে শুয়ে থাকেনি। ইরহান যুথিকে আস্তে করে ডেকে তুলে।

যুথি ইরহান কে দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।

আপনি এসে গেছেন?

তুমি ঠিক আছোতো যুথি রানী?

যুথি কিছু টা ঘাবড়ে যায়।এখন কিছুতেই ইরহান কে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না আর বলা ও যাবে না। তাই এটা ওটা দিয়ে কাটিয়ে যায় কথা।

রাতের শোয়ার সময় ইরহান আমতা আমতা করে যুথিকে জানায় পরশু ভোরে তার ফ্লাইট । আর মাত্র দুইটা দিন তার সাথে আছে।

যুথি কোনো কথা না বলে ইরহান কে ঝাপটে ধরে ইরহানের বুকে মুখ গুঁজে দেয়। ইরহান ও যুথিকে ঝাপটে ধরে রাখে।যুথি যে নীরবে তার চোখের পানি দিয়ে ইরহানের বুক ভাসাচ্ছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই।

দুইজন ই দুইজন কে জড়িয়ে রেখে নির্ঘুম রাত পাড় করে দেয়।

ঐ দিকে ইমন শুনে ফেলে পরশু যে তার ফ্লাইট। কালকের মাঝেই কিছু একটা করতে হবে।প্রতিদিন রাতে ইরহান আসার সাথে সাথে ঘরের কাছে এসে আ’ড়ি পা’তে।

————————

পরের দিন ইরহান যুথির সাথেই সময় কাটিয়েছে।এই সময়টুকু দুইজন দুইজনের সাথে কাটাবে ঠিক করে ইরহান।যুথিকে ইরহান তার দাদির বাড়িতে রাখবে বলে ঠিক করে। এখানে একা রাখা যাবে না।

ইরহান বাড়িতে থাকবে না।তার উপর ঐ লোক গুলোর উপর ইরহানের একটুও বিশ্বাস নেই।যদি কিছু করে বসে যুথিকে।যুথি তো ওদের কম কথা শোনায় নি।

কিন্তু যুথিকে ইরহান কিছুতেই রাজি করাতে পারছে না দাদির কাছে চলে যাওয়ার জন্য। যুথির এক কথা সে তার স্বামীর আর শ্বশুরের ভি’টা ছেড়ে এক পা ও নড়বে না।অনেক বুঝিয়ে ও যুথি কে রাজি করাতে পারেনি ইরহান এখান থেকে যাওয়ার।

তাই যুথির দাদি কে রাজি করাবে এখানে এসে থাকার জন্য। উনার আর কাজ করতে হবে না। যুথির সাথে থাকবে।

তাই বিকেলে ইরহান যুথির দাদি কে পরের দিন যেনো এই বাড়িতে চলে আসে তার জন্য রাজি করাতে যায়।ঐ দিক দিয়ে একটু দোকানে ও যেতে হবে।এই মাস শেষ হয়েছে দুই দিন আগেই।বেতন নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে দিয়ে যাবে যুথিকে।

অন্য দিকে যুথিকে ইরহান বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছু সময় পরই সীমা এসে প্রে’গ’ন্যা’ন্সি’র কি’ট টা দিয়ে যায়।

যুথি কি’ট নিয়ে পরীক্ষা করে থো’ম মেরে বসে থাকে।চোখের পানি তার ছলছল করছে। দাদির কথাই সত্যি হলো সে তার বোকা পুরুষের সন্তানের মা হতে চলেছে।

যুথির মনের আনন্দ আর দেখে কে তার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করে। বিকাল টুকু তার উ’ত্তে’জ’না’তেই কেটে যায় কখন তার বোকা পুরুষ বাড়িতে আসবে কখন সে সুখবর টা দিবে।লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম।

সন্ধায় ইরহানের যত্নে তুলে রাখা তার মায়ের শাড়ি বের করে যুথি। এটা পরে আজ সে সাজবে।তার বোকা পুরুষের জন্য সে মন ভরে সাজবে। শাড়ী টা সযত্নে শরীরে জড়িয়ে নেয় যুথি।ইরহানের দেওয়া সেই মালাটা গলায় পরে।হাতে রেশমি চুড়ি। খোপায় কুড়িয়ে আনা বকুলফুলের মালা জড়ায়।চোখে মোটা করে কাজল দেয়।তারপর ছোট্ট একটা আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই লাজুক হাসে।তার বোকা পুরুষ আজ তাকে দেখে পুরাই অবাক হয়ে যাবে।

ইরহান দোকানের মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার সদাই করে নেয়। রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় একটা সি.এন.জি ডেকে উঠে পরে।

ইমন ও পিছনে আছে ইরহান কে এতোসময় পিছনে পিছনে ফলো করেছে। আজ কিছু একটা করবে এটাই শেষ সুযোগ। উদ্দেশ্য ফাঁকা রাস্তায় ইরহানের সি.এন.জি টা কে কোনো ভাবে খা’দে ফেলা।এতে ইরহান ও শেষ আর কেউ সন্দেহ ও করবে না।

মাঝ রাস্তায় অন্ধকারে গিয়ে কিছুর সাথে ধা’ক্কা লেগে সি.এন.জি খা’দে পড়ে যায়।পড়ার আগে শুধু দুই একটা আ’র্ত’না’দ ভেসে আসে।

#চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here