#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৯
#Jhorna_Islam
দুইজন অহংকারী মানুষ কখনো এক সাথে মিলে মিশে থাকতে পারে না। কেউ কারো একটু শান্তি সহ্য করতে পারে না। তেমনটার বে’তি’ক্র’ম নয় ইমন ও ইশানের বউ লিমা ও দিনা।
একজন আরেকজনের বসে থাকা বা কাজ না করা সহ্য করতে পারে না। প্রথম প্রথম খুবই মিল মো’হা’ব্ব’ত ছিলো দুইজনের মধ্যে। মানুষ লিমা আর দিনা কে দেখলে মনে করতো দুই বোন ওরা।দুইজন দুইজন কে চোখে হারাতো প্রায়।
ধীরে ধীরে দুইজনের আসল রূপ বেরিয়ে আসছে।এটা ওটা নিয়ে সারাদিন ই দুইজনের মধ্যে ত’র্কা’ত’র্কি লেগে থাকে। সংসারের কাজ নিয়ে প্রতিদিন দফায় দফায় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে।
এই যেমন আজকে ও তার বে’তি’ক্র’ম হয় নি।লিমা আজ ঘুম থেকে একটু সকালে উঠে গেছে। কিন্তু দিনার উঠতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। দিনা ঘুম থেকে উঠেনি দেখে লিমা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেও একটা কাজ করেনি।এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দিকে যে সকালের খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে সেটা দেখার প্রয়োজন মনে করছে না।
লিমার কথা হলো সে কেনো একা একা সব কাজ করবে? সংসার টা তো তার একার না।সে এদিকে গরুর মতো খাটবে আর দিনা ঘুম থেকে উঠে খাবে সে এটা কখনোই হতে দিবে না। সংসারটা দুইজনের তাই দুইজন ই সমান সমান কাজ করবে।
তাছলিমা বানু ঘুম থেকে উঠে এসে দেখে বসার ঘরে লিমা মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইছে আর নখ কাটছে।তাছলিমা বানু লিমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। লিমার এদিকে হুঁশ নেই সে তার কাজে ব্যস্ত।
লিমা কে কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে যায় তাছলিমা বানু। সকাল সকাল ঝামেলা চাচ্ছে না।পেটে প্রচুর খিদে। তাই চুপচাপ রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।
রান্না ঘরে গিয়ে দেখে এখনো পর্যন্ত রান্না হবে দূরে থাক চুলায় আগুন ও জ্বলে নি।
তাছলিমা বানু রান্না ঘর থেকে রা’গে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে আসে। লিমা এখনো গুনগুন করছে। তাছলিমা বানু যে পাশে এসে দাড়িয়ে আছে দেখেনি।লিমার কান্ড দেখে আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়। তাছলিমা বানু কিছু না বলে টেবিলের উপরে রাখা স্টিলের গ্লাস ঠাস করে নিচে ফেলে।
হঠাৎ করে হওয়া শব্দে লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে পরে লিমা।নিচে গ্লাস গড়াগড়ি খেতে দেখে স্বস্থির শ্বাস নেয়।ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বুকে থুথু দিয়ে সামনে তাকাতেই দুটো ভয়ংকর চোখের দিকে দৃষ্টি মিলিত হয়ে যায়।
“রান্না বাড়া বাদ দিয়ে র’ঙ্গ’লি’লা করতেছো বসে বসে?”
মা আসলে,,,,
কয়টা বাজে জমিদারের মেয়ে? বাড়ির কাজ কাম ফেলে সংগীত গেয়ে আসর জমানোর জন্য এ বাড়ি এসেছো নাকি?
ততক্ষণে বসার ঘরে সকলেই উপস্থিত হয়। দিনা ও এসে দাঁড়ায়।
লিমার কাচুমাচু মুখ দেখে মনে মনে দিনা পৈ’শা’চি’ক আনন্দ পায়।বেশ হয়েছে আরো বকুক।
ইমন বলে,,কি হয়েছে মা লিমা কে বকছো কেনো? কি করেছে ও?
আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন? তোর আদরের বউকে জিজ্ঞেস কর।
ইমন এবার লিমা কে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে লিমা? কি করেছো তুমি মা এতো রে’গে আছে কেনো তোমার উপর?
লিমা এবার ইমনের উপর রা’গ ঝাড়ে।সেটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছো তুমি? তোমার মাকে জিজ্ঞেস করো গিয়ে আমার উপর কেনো উনি রা’গ দেখাচ্ছে।
ইশান বলে আরে আজব বলবা তো কি হয়েছে একজন আরেকজন কে দেখিয়ে দিচ্ছে জিজ্ঞেস করার জন্য বলবাতো হয়েছে টা কি।
তাছলিমা বানু দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,তোরা এখন এই সময় কি করতে এসেছিস এখানে?
কি করতে আবার বেলা কি কম হয়েছে নাকি? অবশ্যই খেতে এসেছি। তোমাদের ঝামেলা রাখো এখন পরে আবার শুরু কইরো।আগে খেতে দাও তো প্রচুর খিদে লেগেছে।
কি খাইবা আব্বারা? তোমাদের ন’বাবজা’দা শ্বশুরের আদরের রাজ কন্যারা এখনো চুলায় আগুন ও জ্বালায়নি।
কি? বলেই ইমন লিমার দিকে তাকায়।
লিমা ইমনের তাকানো দেখে বলে,,আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছো কেনো? এই বাড়ির বউ কি শুধু আমি একাই? নাকি আমাকেই শুধু সংসারের ঘা’নি টানার জন্য এনেছো।আমি সকাল সকাল সব কাজ করবো আরেক জন বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে শুধু খাবে বাহ কি দারুণ। আজ থেকে আমি একা একা কিছু করবো না।দুইজন সমান কাজ করবো।কেউ কারো থেকে কম খায় না।
দিনা লিমার কথা শুনে বলে উঠে ভাবি আমাকে খোঁচা মেরে একদম কথা বলবেন না।আমি কিন্তু সহ্য করবো না।
তুই আবার কবে সহ্য করিস ছোটো। এতোদিন অনেক করে খাইয়েছি আর না।
কে আপনাকে বলেছে করে খাওয়াতে?
দুই জা এর মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে গেছে। মাঝখানে ইমন আর ইশান নীরব দর্শক।কিছু বললে যে সব এসে দুইজনের উপর পরবে তা আর বুঝতে বাকি নেই। তাই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
তাছলিমা বানুর আর এসব অশান্তি সহ্য হলো না। জোরে এক ধমক মারে দুটোকে। চুপ একদম চুপ।আর একটা কথা বললে দুটোকে ঘার ধাক্কা দিয়ে এই বাড়ি থেকে বিদায় করবো।
তাছলিমা বানুর কথা শুনে দিনা মুখ সামলাতে পারে নি।বলে ফেলে কেন বাড়ি থেকে বের করবেন? আপনি যেমন আপনার স্বামীর বাড়ি তেমনি আমরাও আমাদের স্বামীর বাড়ি ই।
কি বললে তুমি?
ইশান গিয়ে তারাতাড়ি দিনা কে আটকায়।নয়তো আজই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। কেন যে বুঝতে পারছে না এই জায়গা সব মায়ের নামে।
তারপর দুই ভাই মিলে তাছলিমা বানুকে সামলিয়ে বলে,,দুইজন কে কাজ সমান করে ভাগ করে দেওয়ার জন্য তাহলে আর এসব কিছু হবে না।
তাছলিমা বানু সব কাজ দুইজন কে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে রুমে চলে যায়। আজ সকালে আর খাওয়া হলো না।
ইমন আর ইশান ও বাইরে বের হয়ে যায় রোজ রোজ এসব অশান্তি আর ভালো লাগে না। এখন একটা হোটেলে গিয়ে আগে খাবার খাবে তারপর ইরহানের বিদেশ যাওয়া কিভাবে আটকাবে তার পরিকল্পনা করবে।
———————————
ছোট্ট দু- চালা ঘরটায় হয়তো খাবার আর পোশাকের অভাব হতে পারে কিন্তু ভালোবাসা আর বিশ্বাসের একটুও অভাব নেই। ঘরের প্রতিটি কোণায় কোণায় শান্তি বিরাজমান।
সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো কখনো কমে না।দিনকে দিন বেড়েই চলে। সুখ দুঃখে এক সাথে পাশে থাকার নামই তো ভালোবাসা।
রাতের আকাশে অসংখ্য তারা জলজল করছে।জোসনা রাত চাঁদের আলোয় আলোকিত চারদিক।
রাতের খাবার খেয়ে দুইজন আজও ঠিক করে নেয় বাইরে হাটতে যাবে কিছু সময়।
যেই ভাবা সেই কাজ।ঘরে তালা মেরে চাবিটা দরজার নিচে রেখে বেরিয়ে পরে দুইজন।
ইশান আর ইমন এতোসময় ঘরের পিছনেই ছিলো।ওরা জানে ইরহান আর যুথি প্রায় সময়ই রাতে ঘুরতে বের হয়। আজ যখন ঘরের পিছনে দাড়িয়ে কান পেতে কিছু শুনতে চেষ্টা করে তখনই শুনতে পায় দুইজন আজও হাঁটতে বের হবে।
তালা মেরে চাবিটা কোথায় রেখেছে এটা ও দেখে নিয়েছে। যুথি আর ইরহান দেখতে পায়নি ঐদিকটায় অন্ধকার হওয়াতে।
যুথিরা বের হয়ে গেলে দুই ভাই দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। ইমন ঠিক করে গেইটের পাশে দাড়াবে যেনো ওটা আসলে ইশান কে সাবধান করতে পারে। আর ইশান তালা খুলে ঘরে ঢুকবে। উদ্দেশ্য ইরহানের পাসপোর্ট গায়েব করা।
পরিকল্পনা মতো ইমন গিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পরে।আর ইশান তালা খুলে ঘরে ঢুকে। বাতি জালিয়ে এদিক ওদিক চোখ বোলায়।এই ঘরে আর আসা হয়নি ইশানের তাই কোথায় কি আছে কিছুই জানা নেই তার।প্রথমেই বিছানার চাদর ও বালিশের নিচে ভালো করে উলট পালট করে দেখতে থাকে না নেই। তারপর কাঠের আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে খোলার চেষ্টা করে। আলমারিতে কোনো তালা দেওয়া নেই তবে বেশ পুরোনো দেখে খুলতে পারছে না। অনেক সময় নিয়ে চেষ্টা করার পর আলমারি খুলতে সফল হয়।
আলমারিতে রাখা জিনিস পত্র সব কিছু চে’ক করতে থাকে। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। এই দিকে অনেক সময় হয়ে গেছে ওরা যে কোনো সময় এসে পরবে। আলমারি তে না পেয়ে মাথার চুল টানতে টানতে এদিক ওদিক চোখ বোলায়। তারপর চোখ যায় চকির নিচে রাখা একটা টিনের বাক্সে। বুঝতে আর বাকি নেই সব কাগজ পত্র এটাতেই রাখা।
বাক্স বের করে খুলতে নিবে এমন সময় কেউ ইশানের হাত চেপে ধরে।
ইশান ভ’য় পেয়ে যায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে ইমন।
স্বস্থির শ্বাস ছাড়ে ইশান।
তারাতাড়ি বের হ।ওরা গেইটের কাছে চলে এসেছে।
কি বলছো? কাগজ পত্র এখনো নিতে পারিনি এইটাতেই আছে।
আরে রাখ।আগে ধরা পরার হাত থেকে বেঁচে নে।পরে নেওয়া যাবে। বলেই পায়ে ঠেলা দিয়ে বাক্স টা ভিতরে ঢুকিয়ে ইশান কে টানতে টানতে বের করে দরজায় তালা মেরে আড়ালে চলে যায়।
যুথির আজ কেনো যেনো বাইরে থাকতে ভালো লাগছিল না।মনটা উ’শখু’শ করছিলো।তাই ইরহান কে বলে তারাতাড়ি এসে পরে।
ঘরের সামনে এসে তালা খুলে ঘরে ঢুকে। এদিক ওদিক চোখ বোলায় যুথি।তারপর কি যেনো ভাবতে থাকে।
#চলবে,,,,,,,