খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৮

0
1087

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৮
#Jhorna_Islam

ইশানের একটা কথাই ছিলো তাছলিমা বানুর কানে ব’জ্রপা’ত সৃষ্টি করার জন্য। তাছলিমা বানু কিছু সময়ের জন্য হ্যাং হয়ে যায়। কানের পাশে একটা কথাই বার বার প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে ইরহান আবার বিদেশ উড়াল দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে।

ইরহানের বিদেশ যাওয়ার কথাটা তাছলিমা বানু হ’জম করতে পারছে না। মাথা চ’ক্ক’র মারছে।পড়ে যেতে নিলে ইশান তারাতাড়ি করে ধরে নিয়ে বসায়। তারপর পানি পান করতে দেয়।

তাছলিমা বানু মুহূর্তের মধ্যে গ্লাস টা এক নিশ্বাসে ফাঁকা করে দেয়। কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,, তুই ঠিক শুনেছিস ইশান? ঐ ইরহান আবার বিদেশ যাবে?

— তো আমার কি কানে সমস্যা আছে বলে তোমার মনে হয় মা? যা শোনার নিজ কানে শুনেছি। ছুটি বাতিল করে বাইরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সে।

— আমি এতো করে বললাম।এতো বোঝালাম কই তখন তো সে দেশের বাইরে যেতে রাজি হয় নি। এখন ঠিক ই যেতে চাচ্ছে।

— সেটাইতো কথা মা।তোমার কথায় যদি তখন রাজি হয়ে যেতো তাহলে কি আর এতো ঝামেলা হয়? না বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হতো।সেইতো এখন ঠিক ই যেতে রাজি হয়ে গেছে।

সব ঐ চ’তুড় মেয়েটার জন্য হচ্ছে বুঝলি ইশান?

— ঠিক বলেছো মা ঐ মেয়েটাকে সুযোগ মতো হাতের কাছে পাই জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিবো।

আমি মানুষ চিনতে ভুল করে ফেলেছি ইশান।ঐ মেয়েটাকে আমি চিনতে পারি নি। মুখোশ পরে ছিলো। দেখ পড়াশোনা জানে এটাও আমাদের থেকে লুকিয়ে গেছে। এখন সে দিব্যি বাচ্চাদের পড়াচ্ছে। ঐ মেয়েটার খ’প্প’রে পরে বো’কা ইরহান চা’লাক হয়ে গেছে।

ঐ মেয়েটার কাছ থেকে এসব কিছুর হিসাব আমি নিবো মা।আমার পায়ে ধরিয়ে ছাড়বো ঐ মেয়েকে আমি।

এসব কথা ছাড় এখন ঐ ইরহানের বিদেশ যাওয়া নিয়ে কি করবি? এটা হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই না। ইরহান দেশের বাইরে গেলে ওদের সু দিন ফিরে আসবে। তুই ভাবতে পারছিস ইশান ইরহানের যা বেতন তাতে বেশি দিন লাগবে না ওদের ঘুরে দাড়াতে। যে কোনো মূল্যে এটা হতে দেওয়া যাবে না।

এতোদিন যখন আমার কথাতে যায় নি।এখন আর যেতে দেওয়া যাবে না।

তুই কিছু একটা কর ইশান।ওর বিদেশ যাওয়া আটকা।যেনো যেতে না পারে। ওর এই অভাবের সংসার দেখে আমার তৃপ্তি হয়।আমার কথা শুনেনি তাই এখন ওর দূ’র’ব’স্থা দেখে কি যে ভালো লাগে।

এখন ইরহান কে কিছুতেই আমি বিদেশ যেতে দিবো না। ইশান তুই আর ইমন মিলে কিছু একটা কর।ইরহান যেনো না যেতে পারে।

কি করবো মা? মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। কি করলে ইরহানের বিদেশে যাওয়া আটকাতে পারবো।

যা ইচ্ছে কর।কিন্তু কোনো ভাবেই যেনো না যেতে পারে।বিদেশি টাকা যখন আমি আর ভোগ করতে পারিনি।ওকেও আর করতে দিবো না।

এখনই তো আর চলে যাচ্ছে না মা।কয়েকটা দিন সময় দাও ভেবে দেখছি কি করা যায়।

হুম ভাব মাথাটা কাজে লাগা। দরকার পরলে ওর পাসপোর্ট গায়েব কর। টিকিট কাটার জন্য যে টাকা জমাবে তা ছিনিয়ে নে কৌশলে। এসব না পারলে হাত পা ভেঙে দে।এটা করলে এই জীবনে বিদেশ কেন হাটতেই পারবে না।ভি’ক্ষা করে খেতে হবে। থালায় প্রথম পয়সাটা না হয় আমিই দিবো। আর ঐ পয়সা টা ও ওর রোজগারের ই হবে।

কথাগুলো বলেই তাছলিমা বানু উচ্চ স্বরে খিলখিল করে হেসে উঠে।

ইশান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে কানে হাত চাপে।মনে মনে বলে,,উফফ মা আমার কানের পোকা সব নাড়িয়ে দিয়েছে।এমন ভয়ংকর ভাবে কেউ হাসে? মুখে কিছুই বলল না নয়তো ঝা’ড়ু দিয়ে দিবে।

——————————

ইরহান রাতে বাড়িতে এসেই যুথির সাথে বিদেশ যাওয়া নিয়ে কথাটা বলতে চেয়েও কোনো ভাবে পারছে না।

এসে থেকে উ’শ’খু’শ করছে কিন্তু মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। বলতে গিয়ে যুথির মুখটা দেখলেই ক’লিজা মো’চড় দিয়ে উঠে। এই মেয়ে টা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে। থাকবে কি করে ইরহান বুঝে পায় না। তাও কিছু করার নেই বিদেশে ইরহান কে যেতেই হবে তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ইরহান তেমন পড়াশোনা ও জানে না যে ছোট খাটো একটা চাকরি এখন করলো পরে ভাগ্যের জোরে ও মেধা দিয়ে পরে ঠিক চাকরি পেয়ে যাবে।

ইরহানের ভাবনার মাঝেই যুথি তার হাত ধরে ঝাঁকি দেয়।
কি হয়েছে আপনার? কি ভাবছেন এতো? এসে থেকে দেখছি উ’শ’খু’শ করছেন।কিছু বলবেন?

এই বোকা পুরুষ আপনার শরীর ঠিক আছে? বলেই যুথি ইরহানের কপালে হাত দেয়।
কই নাতো জর নেই।ঠিকই আছে সব।কি হয়েছে বলেন না কেনো? আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে এবার।

ইরহান যুথির কথায় মুচকি হাসে। মেয়েটা তার একটু নীরবতা দেখে কতো টেনশনে পড়ে যায়। যুথিকে টেনে এনে নিজের পাশে বসায় ইরহান।তারপর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুমু একে দেয়। তারপর বলে,,,,

“আমার কিছু হয়নি যুথি রানী। আসলে একটা কথা বলার ছিল কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। ”

কি বলবেন বোকা পুরুষ বলে ফেলেন তো দেখি।

এভাবে আর কতোদিন চলবে যুথি? আমাদের ও একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে হবে। এভাবে বড় জোর দুই এক মাস চলা যায় এর বেশি না। তারপর এক নিশ্বাসে বলে ফেলে,, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছুটি বাতিল করে খুব শিঘ্রই চলে যাবো।

যুথি এখনো নিশ্চুপ। এক দৃষ্টিতে ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।

ইরহান যুথির মুখ টা দুই হাতে আগলে ধরে। কি হলো যুথি চুপ করে আছো কেনো?

ইরহানের কথায় যুথির হুঁশ ফিরে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,,এসব নিয়ে পরে কথা বলছি।আমার এখন খুব ঘুম পেয়েছে। ইরহান কে আর কিছু বলতে দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পরে যুথি।

ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। সে জানে যুথির ভিতর কি চলছে।একই কষ্ট যে তার ও হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।যতো কষ্ট হোকনা কেন এটা করতেই হবে। ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য বর্তমানে কষ্ট পেতেই হবে।
ইরহান জানে যুথি এখন মন খারাপ করে থাকলেও পরে ঠিক রাজি হয়ে যাবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে নিজেও শুয়ে পরে যুথির পাশে।

এইদিকে ওরা জানতেও পারলো না ওদের ঘিরে কতো বড় ষ’ড়য’ন্ত্র চলছে।

———————————————
প্রতি সপ্তাহের শনিবার ইরহানের ছুটির দিন।ঐদিন দোকান পাট সব বন্ধ থাকে। তাই আজ শনিবার ইরহানের ছুটির দিন।

এই শুক্রবার আর শনিবার যুথিও পড়াতে যায় না। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি।আর শনিবার ইরহান বাড়িতে থাকে বলে যুথি আগে থেকেই বলে নিয়েছে শনিবার যাবে না।

যুথি সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না করে নেয়।আজ ইরহান কে ডাকে নি একটু ঘুমিয়ে নেক তারপর ডাকবে। সকাল দশটার দিকে ইরহানের ঘুম ভেঙে যায়। উঠে তারাতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আসে। যুথি ততক্ষণে ইরহানকে উঠতে দেখে প্লেটে ভাত দেয়।

ইরহান বসতে বসতে বলে কতো দেরি হয়ে গেলো তুমি আমায় ডাকবে না? না খেয়ে আছো।

ইরহানের কথার কোনো জবাব দেয় না যুথি।চুপচাপ খেতে থাকে। তারপর খাওয়ার মাঝেই হুট করে বলে,,আপনি দেশের বাইরে যান বোকা পুরুষ আমার কোনো আপত্তি নেই।

ইরহান শুধু হুম বলে তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পরে। তার যুথি রানীর যে মন খারাপ বুঝতে আর বাকি নেই।

যুথি থালাবাসন ও হাড়ি পাতিল নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে যায় মাজতে।একেবারে মেজে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে আসবে।ঘাটে বসে এক এক করে মাজতে থাকে।

এরই মধ্যে পাশে কেউ বসেছে যুথি বুঝতে পারে। তাকিয়ে দেখে ইরহান। যুথি কথা না বলে চুপচাপ কাজ করে। তার মধ্যে পানির আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে ইরহান মেজে রাখা থালাবাসন ধুয়ে দিচ্ছে।

আরে এসব কি করছেন আপনি?

,– দেখতে পাচ্ছো না? থালাবাসন ধুচ্ছি!

— এগুলো আপনি কেন করছেন? মানুষ দেখে কি বলবে?

— ইরহান সরু চোখে যুথির দিকে তাকিয়ে টুপ করে গালে চুমু দিয়ে বসে। কি বলবে মানুষ? ইরহান ইচ্ছে করে যুথির সাথে এমন করছে যেনো তার মন ভালো হয়ে যায়।

— ইরহানের করা কাজে যুথি আ’হা’ম্ম’কের মতো তাকিয়ে বলে,,,, মাথা কি পুরাই গেছে আপনার? ঐ পাড়ে মানুষ জন রয়েছে দেখতে পাচ্ছেন? ছিঃ কি ভাববে লোকে?

— কিছুই ভাববে না। আমার থেকে দেখে শিখবে কি করে বউ কে ভালোবাসতে হয়।

— কচু শিখবে নি’র্ল’জ্জ লোক!

ইরহান যুথির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,,

“তোর মনের গহীন জলে ফেলবো প্রেমের ব’রশি!
মাছের মতো ঠো’কড় দিবি দেখুক পাড়া প’রশি।”

#চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here