কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে পর্ব ২৭

0
1111

#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-২৭
জয়ীতার পরনে কটকটে কমলা রঙের লেহেঙ্গা। পায়ে জুতা নেই। জুতা হাতে। পুরো শরীর ভেজা। স্টেশনে বেঞ্চিতে বসে চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছে। তারমধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। জয়ীতা তবুও উঠছে না। যেমন বসে ছিলো তেমনই আছে। বৃষ্টির পানিতে চায়ের কাপ ভরে গেলেও সেটা খাচ্ছে। আদনান খুব বিরক্ত হলো। কিন্তু জয়ীতাকে কিছু বলতে পারছে না।

জয়ীতার চা খাওয়া শেষ হলে খালি পায়েই দৌড়াতে শুরু করলো। আদনানও পিছনে দৌড়াচ্ছে। জয়ীতা পালাচ্ছে যে এটুকু বুঝতে পারছে। কার সঙ্গে পালাচ্ছে! নিশ্চয়ই ক্যাবলা টাইপ সেই ছেলেটার সঙ্গে। আদনান চিৎকার করে জয়ীতাকে ডাকতে লাগলো। জয়ীতা যেও না, দাঁড়াও।

আদনান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। বিড়বিড় করে বলল,

“দাঁড়াও জয়ীতা। যেও না…

জয়ীতা সামনের সোফায় বসে ল্যাপটপে মুভি দেখছিল। আদনান কে এভাবে অস্থির হতে দেখে বলল,

“আমি তো ঘরেই আছি। আর যাব কোথায় এতো রাতে!”

আদনান বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো। উফ! এতক্ষন তাহলে স্বপ্নে দেখছিল!

জয়ী উঠে এসে লাইট অন করে দিলো। পানির গ্লাসও এগিয়ে দিলো। আদনান পানি নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সবটুকু খেয়ে ফেলল। জয়ী আদনানের মুখোমুখি বসে জিজ্ঞেস করলো,

“ব্যাড ড্রিম?”

“হু। ”

“কী দেখলেন? স্বপ্নের কথা বলে দিলে সেটা নাকি আর ঘটে না। ”

আদনান নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“দেখলাম আমার বউ বৃষ্টিতে ভিজে চা খাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে চায়ের কাপ ভর্তি হয়ে যাচ্ছে তবুও সেটা গিলছে। চা খাওয়া শেষ করে খালি পায়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। ”

জয়ী প্রথমে হু হু করে খানিকক্ষণ হাসলো। তারপর বলল,

“আমার সঙ্গে ফাজলামি করছেন আবার? ”

“না। ”

“এসব উদ্ভট ফালতু স্বপ্ন কেন দেখলেন? একটু ভালো স্বপ্ন দেখতে পারতেন!”

“কিরকম ভালো স্বপ্ন? ”

“আমি খুব ভালো ভালো সিনেমা বানাচ্ছি। চারদিকে শুধু আমার জয়জয়কার। লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে। ছেলেরা পাগল হয়ে আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে। ”

“তুমি তো ম্যারিড। তোমার পিছনে ছেলেরা পাগল হয়ে দৌড়াবে কেন?”

“আমার সিনেমা দেখে পাগল হয়ে যাবে।”

“তুমি কী টাইপ সিনেমা বানাতে চাচ্ছো যেটা দেখে সবাই পাগল হয়ে দৌড়াবে?”

“শুনবেন?”

জয়ীতা পা উঠিয়ে আটঘাট বেঁধে আদনানের সঙ্গে গল্প করার জন্য বসলো।

আদনান বলল,

“আমার খুব খিদে পেয়েছে। কিছু একটা খাওয়া দরকার। ”

“রাতের ভাত আছে গরম করে দেব?”

“না। অন্যকিছু খাব। ”

“নুডলস করে দিতে পারি। এর বেশী আমি পারব না। ”

আদনান জয়ীতার দিকে খানিক সময় তাকালো। তারপর বলল,

“দশ মিনিটে রান্না করা নুডলস বাদ দিয়ে যা পারো তাই নিয়ে এসো। আমার খুব খিদে পেয়েছে। ”

জয়ীতা একটা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কিছু না বলে চলে গেল।

***
আজ সন্ধ্যা থেকেই জুলিনার নাম্বারে ফোন আসছে। এক ভদ্রলোক ফোন করেছে। অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসাটা স্বাভাবিক। কারণ গত রাতে জয়ী ফোন করে জানিয়েছে যে মেট্রিমোনি সাইটে ওর নাম্বার টা দিয়েছে। তাই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। জুলিনাও জয়ীর বুদ্ধি দেখে আনন্দে আহ্লাদিত হলো। সত্যিই তো, নওশিনের নাম্বার দিলেই তো মেয়েটা জেনে যাবে। ও’কে তো কিছুতেই জানানো যাবে না। জুলিনা মনে মনে পুলকিত হলো। আরেকটা সফল বিয়ে দিতে পারলে সোসাইটিতে ওর নাম ছড়িয়ে পড়বে। এরপর সবাই আসবে ওর কাছে দৌড়ে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে। সব জায়গা থেকে মান, সম্মান মর্যাদা লাফিয়ে লাফিয়ে ওর ঘরে আসবে। তখন উত্তরার ভাবী, মিরপুরের ভাবীদের দেমাগও একটু কমবে।

জুলিনার নাম্বারে আবারও ফোন এলো। ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত দুটো বেজে সাইত্রিশ মিনিট। জুলিনার রাতে ভালো ঘুম হয় না। মাঝেমধ্যে পরিশ্রমের কাজ করলে একটু হয়। জুলিনা ফোন রিসিভ করলো। কর্কশ গলায় বলল,

“হ্যালো। ”

ফোনের ওপাশে কেউ একজন গলা পরিষ্কার করছে। গলার শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে গিয়ে কাশতে শুরু করলো। তাও নরমাল কাশি না। কঠিন যক্ষ্মাওয়ালা কাশি।

জুলিনা এক ধমক দিয়ে বলল,

“এই ব্যটা, ফোন করে আমাকে যক্ষ্মার আলামত কেন দিতাছেন। মহাখালী টিবি হাসপাতালে যান। ”

ফোন টা কেটে গেল।

জুলিনা বিড়বিড় করে কিছু গালিগালাজ করলো।

পরের বার ফোন এলো আট মিনিট পর। এবার আগে থেকেই গলা পরিষ্কার করে নিয়েছিল বোধহয়। ফোন করে ভাষণ দেয়ার ভঙ্গিতে বলল,

“হ্যালো। ”

জুলিনাও কর্কশ গলায় বলল,

“হ্যাঁ, হ্যালো। কে?”

“আমি মোহাম্মদ জুম্মন আলী শিকদার। ”

জুম্মন আলীর নাম টা জুলিনা শুনতে পেল কুব্বত আলী। পরিচিত কন্ঠে বলল,

“হ্যাঁ কী চান?”

“আপনি জুলেখা তো?”

জুলিনা নড়েচড়ে বসলো। জুলেখা নাম বলছে যেহেতু তাহলে খুব পরিচিত কেউ। জুলিনা আবারও জিজ্ঞেস করলো,

“কে আপনি? ”

“আমি জুম্মন আলী শিকদার। গাজীপুরে আমার ব্যবসা আছে। আল্লাহর রহমতে টাকা পয়সার অভাব নাই। খুব সুখে রাখছেন আল্লাহ। ছেলেমেয়েরাও খুব ভালো আছে। তারা বিদেশে থাকে স্থায়ীভাবে। আমার জন্য চিন্তা করে। তাদের মা জান্নাতবাসী হবার পর থেকে আমার বিয়ের জন্য খুব চেষ্টা করেছেন। আমিই এতদিন রাজী হইনাই। ”

জুলিনা এবার মেজাজ খারাপ করলো অত্যন্ত রূঢ় গলায় বলল,

“ওই বেক্কল, তুই জানিস কোথায় ফোন করছস? জানস তুই? এটা র‍্যাবের অফিস। কাল সকালে তোর বাসায় র‍্যাব পাঠায়ে তুলে এনে এমন ব্যবস্থা নেব যে এক সপ্তাহে তোর আর হা/গা হবে না। ”

জুম্মন আলী ফোন টা কেটে দিলো।

***
জয়ীতা বুঝতে পারছে যে ও আগের থেকে ভালো মেয়ে হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন। এই যে আদনান ও’কে খাবার বানিয়ে নিয়ে আসতে বলল এতে ওর রাগ হলো না। আজ বিকেলে লিজাকে দেখতে গিয়েও ভীষণ ভালো ব্যবহার করলো। না চাইতেও মায়ের সব কথা শুনছে। এসব তো ভালো লক্ষন না। এতো ভালো হওয়া আসলে ঠিক না। ও যখন ভালো মেয়ে ছিলো তখন দুনিয়া উঠেপড়ে লেগেছিল খারাপ বানাতে। সেসব তো চাইলেও ভোলা যায় না।

“ভাবী কী করছ?”

জয়ীতা চমকে উঠলো। তাসিন হি হি করে হেসে উঠে বলল,

“কী ব্যাপার ভয় পেলে?”

“একটু।”

“এতো রাতে কী করছ?”

“তোমার ভাইয়ার নাকি রাক্ষুসে খিদে পেয়েছে। নুডলসে চলবে না তাই একটু খাবার বানাচ্ছিলাম। ”

তাসিন ভালো করে দেখতে লাগলো। জয়ীতা এই রাতে ভালোই খাবার দাবার বানিয়েছে। ডিম, দুধ, কিশমিশ দিয়ে একটা ডেজার্ট আইটেম। পাতলা গোল করে আলু কেটে বেসনে ডুবিয়ে ভেজে একটা আইটেম করেছে। অমলেট করে পাউরুটির ভেতরে দিয়ে বেসনে ডুবিয়ে ভেজে নিয়েছে। তাসিন সবগুলো খাবার থেকে একটু একটু খেল। বলল,

“তুমি তো দারুন রাধুনি। ”

জয়ী হেসে বলল,

“রাত জাগলে খিদে পায়। তখন হাতের কাছে যা পাই তাই বানিয়ে খাই। ”

“ভাইয়ার খুব পছন্দ হবে দেখো। ”

জয়ীতা হাসলো। পছন্দ না হলে কী! এই রাতে আর কিছু বানাতে পারবে না। এগুলো খেলে খাবে, না খেলে না।

*-**
আদনান সব আইটেম ই একটু একটু খেল। তবে ডেজার্ট টা একটু বেশি খেল। কিন্তু প্রশংসা বা নিন্দা কোনোটাই করে নি। জয়ীতা আর কিছু জিজ্ঞেসও করে নি।

খাওয়া দাওয়ার পর আদনান বলল,

“এখন ঘুমাই। কাল শুনব তোমার প্ল্যান। ”

“আচ্ছা।”

ঘুমাতে গিয়ে আদনান দেখলো ওর পাশে একটা টেডি বিয়ার। জিজ্ঞেস করলো,

“এটা কী।”

“ওটা আপনার। ওটা জড়িয়ে ধরেই তো ঘুমাচ্ছিলেন। ”

আদনান আহত গলায় বলল,

“মানে? কেন?”

“আমি আসলে চেক করছিলাম যে সমস্যা টা কার!”

“কী সমস্যা? ”

“প্রায় ই দেখি আমি আপনার গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছি। আর আপনিও জড়িয়ে ধরে আছেন। ব্যাপার টা দেখে খুব লজ্জা পেয়েছি কারণ আমার ঘুমানোর স্টাইল একটু খারাপ। কিন্তু তাও রোজ রোজ এরকম হবার কথা না। তাই আজ চেক করলাম। টেডিটা পাশে রাখার পর দেখলাম আপনি ওটাকে ধরেই ঘুমাচ্ছেন। তার মানে সমস্যা আমার না, আপনার।

আদনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“কী সমস্যা?”

“ক্যারেক্টারে সমস্যা। ”

আদনান আহত গলায় বলল,

“কী?”

“হু। ওইদিন সকালে যখন চুমু খেয়েছেন তখনই বুঝেছি। ”

আদনান মৃদু হেসে বলল,

“সেদিন সকালে চা না পেয়ে চুমু খেয়েছিলাম। ভাবছি চা এবার ছেড়ে দেব। শরীরের জন্য হার্মফুল তো! কী বলো?

চলবে…

(বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখার প্রি অর্ডার চলছে। প্রি অর্ডার করে ফেলুন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here