#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-২৫
আদনান জয়ীতাকে বলল,
“তুমি আবার কাউকে বলতে যেও না ক্রিকেট পছন্দ না। ”
“তাহলে কী বলতে হবে? ক্রিকেট খুব পছন্দ?”
“খুব পছন্দ না বললেও হবে। তবে ক্রিকেট বোঝো, জানো এটুকু বললেই হবে। কেউ তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করুক সেটা আমার ভালো লাগবে না। ”
“আচ্ছা।”
আদনানের আরেকটা কথা জয়ীকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সংকোচের কারণে বলতে পারছে না। ওর খুব বলতে ইচ্ছে করছে যে, জয়ীতা তুমিও অন্যদের বউ দের মতো গ্যালারিতে বসে আমার খেলা দেখবে! আমার অনেক দিনের ইচ্ছে কেউ একজন আমার জন্য এভাবে বসে থাকুক। কিন্তু বলতে পারবে না। এসব বলা যায়ও না বোধহয়। ছ্যাচড়ামির চূড়ান্ত লেভেলে পৌছে যাবে বিষয় টা।
জয়ীতা আদনান কে চুপ করে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“আর কিছু করতে হবে।”
“না আর কিছু করতে হবে না। ”
কিন্তু জয়ীতাকে যা শেখানো হলো ও করলো তার উল্টো। আদনানের টিমমেট দের সঙ্গে প্রথম আলাপেই ও বলল, ক্রিকেট ওর একটুও পছন্দ ছিলো না আগে। দেখলেই ঘুম পেত। আদনান খানিকটা বিরক্ত হলেও বাকীরা সবাই পজিটিভ ভাবে নিলো। টিমমেট দের কারো কারো স্ত্রী জানালো যে ক্রিকেট তাদেরও খুব একটা পছন্দ ছিলো না। এমনকি এখনো পছন্দ না, শুধু হাজবেন্ড কে সাপোর্ট করবে বলেই সঙ্গে আসে।
আদনান ভয় পেয়েছিল যে জয়ী হয়তো সকলের হাসির পাত্র হবে। কিন্তু ওর অনেস্ট কনফেশন সবাই ভালোভাবেই নিয়েছে। আদনান খানিকটা নির্ভার হলো। এমনিতে মিথ্যা বলা ওর স্বভাবে নেই। যারা মিথ্যা বলে তাদের একরকম এড়িয়েই চলে। তবুও জয়ীকে মিথ্যা বলতে বলেছিল যেন কেউ ও’কে নিয়ে কিছু না বলে। কিন্তু এখন মনে হলো সত্যিটা বলেই ভালো করেছে। একজন একটা জিনিস না জানলে কিংবা পছন্দ না করলে সেটা তো দোষের না।
***
জুলিনা হঠাৎ করেই তাসিনের পিছনে লাগলো। আগে কাজ ছাড়া ওদের বাড়িতে তেমন আসতো না। কিন্তু এখন হঠাৎই বাক্স,প্যাটরা নিয়ে হাজির হয়েছে। এসে বলল,
“তোদের কাছে থাকব। তোদের টেনশনে জয়ী ভালোভাবে ঘুরতে ফিরতে পারবে না। তাই আমি থাকব। ”
ওরা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিলো। যদিও জুলিনার মতো মানুষের সঙ্গে থাকা মানে অসুস্থ হয়ে যাওয়া তবুও না মেনেই বা কী উপায়!
দিনের বেলা সব ঠিক থাকে। ওরা ওদের মতো ইউনিভার্সিটি তে যায়, জুলিনাও ওদের মতো ঘুরে বেড়ায় টইটই করে। কিন্তু রাতের বেলা সমস্যা।
তাসিন, নওশিন দুজনের ঘর আলাদা। নওশিন আদনানের মতোই ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করে। জলদি খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাসিনের একটু রাত জাগার অভ্যাস। খাওয়ার পর রাত জেগে বন্ধুদের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আড্ডা দেয়। জুলিনা আসার পর প্রথম দিন দেখলো জানালার পাশে ছায়া। ওর ঘরে লাল আলোর ড্রিম লাইট জ্বলে। ও ফোন টা রেখে নিঃশব্দে দরজা খুলতেই জুলিনা লাফিয়ে চিৎকার করে উঠলো। তাসিন জিজ্ঞাস করলো,
“কী ব্যাপার মামী?”
“কিছুনা। ঘুম আসছিল না তাই বারান্দায় হাটছিলাম। ”
তাসিন বুঝতে পারলো যে জুলিনা ওর ঘরে আড়ি পাততে এসেছে। ও ব্যাপার টা নিয়ে বেশী মাথা ঘামালো না। ও ঘরে চলে গেল। তবে জুলিনা খুব মাথা ঘামালো। শুধু মাথা ঘামিয়েই শান্ত হয় নি। মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে ফেলল। এই মেয়েগুলো এমনিতেই হাবাগোবা। মদখোর, গাঞ্জাখোর কাউকে জুটিয়েছে। সেটা ও’কে খুঁজে বের করতেই হবে।
***
আদনান আর জয়ী এখন মানালীতে আছে। মানালীর পরিবেশ, আদনানের টিমমেট দের আতিথেয়তা সবমিলিয়ে জয়ীর দিনগুলো ভালোই কাটছে। প্রতি রাতেই কেউ না কেউ ডিনার ট্রিট দিচ্ছে। জয়ী আদনান কে বলল,
“দেখছেন আপনার কতো টাকা বেঁচে যাচ্ছে। ”
আদনান গম্ভীর গলায় বলল,
“দেখলাম। ”
জয়ী এক চোখ টিপে বলল,
“আপনার শুকরিয়া করা উচিত। ”
আদনান আবারও গম্ভীর গলায় বলল,
“শুকরিয়া। ”
জয়ী আদনান কে ভালো করে লক্ষ্য করে বলল,
“এরকম কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের মতো শুকরিয়া বলছেন কেন!”
“না আমি আসলে হিসাব করছিলাম যে তুমি যে টাকা বাচাচ্ছো সেটা দিয়ে কী করব! বসুন্ধরায় একটা প্লট কিনে ফেলব। নাকি মেট্রোরেল বানিয়ে ফেলব তোমার বাসার সামনে। ”
জয়ী চোখ পাকিয়ে বলল,
“আপনি আমার সঙ্গে এমন রসিকতা করবেন না। আমি রসিকতা পছন্দ করি না। ”
আদনান এবার হেসে ফেলল। বলল,
“আচ্ছা করব না। ”
***
আদনানের না বলা কথাগুলো জয়ী কিভাবে যেন বুঝে গেল। যেদিন ওর ম্যাচ শুরু হবে সেদিন জয়ী খানিকটা ইতস্তত করে বলল,
“আমি কী করব?”
আদনান ধরেই নিয়েছে যে জয়ী যাবে না। যেহেতু ওর খেলায় আগ্রহ নেই তাই ও’কে যেতেও বলে নি।
আদনান বলল,
“তুমি ঘুরতে যেতে পারো একা একা। শপিং করো, ঘুরে বেড়াও সময় কেটে যাবে। ”
“বাকীরা সবাই ফ্যামিলি বক্সে বসে খেলা দেখবে আর আমি ঘুরতে যাব। ছিঃ ছিঃ! ব্যাপার টা খারাপ দেখায় না।”
“কিন্তু ক্রিকেট তো তোমার পছন্দ না। ”
জয়ীতা আঙুলের আংটি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। বলল,
“ক্রিকেটারের সঙ্গে যতদিন আছি, পছন্দ না হলেও পছন্দ করতে তো হবেই। ইটস নরমাল। কতোকিছুই তো পছন্দ না, তবুও তো মেনে নিতে হয়। ”
আদনান হাসলো অন্যদিকে তাকিয়ে। কী সুন্দর করে কথাগুলো বলল! ওর নিজের পছন্দ না হলেও আদনানের প্রফেশন কে রেসপেক্ট করছে। এটাই অনেক। আদনান তো এরকমই চেয়েছিল। জোর করে কোনো কিছু না চাপাতে। তবুও এটলিস্ট ওর প্রফেশন, ভালোলাগা এগুলো সম্মান করুক।
জয়ীতা ফ্যামিলি বক্সে বসে পুরো ম্যাচ দেখলো। আদনান ভয়ে ছিলো যে জয়ীতা হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে। চারদিকে এতো ক্যামেরা! টিভি, মিডিয়া সব জায়গায় বিষয় টা নিয়ে ট্রল হবে। কিন্তু ও’কে অবাক করে দিয়ে জয়ীতা পুরো ম্যাচ দেখলো। এমনকি আদনান দ্বিতীয়বার যখন ছয় মেরেছে তখন জয়ীতা নিজেই উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছে।
***
জুলিনা এক জায়গায় স্থির থাকার মানুষ না। তাসিন, নওশিন দের ওখানে দুদিন থেকেই বাড়িতে গেল৷ জয়ীতাদের বেড়ানো টা নষ্ট করবেনা বলে ওদের কিছু জানায় নি। তবে নিজে সুযোগের অপেক্ষায় আছে। জুলিনার সেই সুযোগ এসেও গেল।
সকালে বেরিয়ে কলাবাগান গিয়েছিল কী একটা কাজে। সেখান থেকে একটু দূরে গেল আখের রস খেতে। পানশীর অপজিটে আখের রস নিয়ে এক ভদ্রলোক বসে। জুলিনা তার কাছে গিয়ে বলল,
“বুড়া মিয়া এক গ্লাস আখের রস দাও। দাঁড়াও পানি আমি দিচ্ছি। মাম পানি ছাড়া আমি কিছু খাই না। ”
লোক টা আখের রস প্রস্তুত করছে। এমন সময় জুলিনার চোখ গেল এক কপোত কপোতির দিকে। ধানমন্ডি ব্রিজ থেকে হেটে আসছে। কাছাকাছি আসতেই দেখলো নওশিন কে। জুলিনার চক্ষু চড়কগাছ। এতো দিন ও তাসিনের পিছনে ঘুরছিল। আর এখন দেখছে নওশিন ছেলে নিয়ে ঘুরছে। তাও আবার সুস্থ ছেলে না। কানে দুল, আই ভ্রু তে দুল,ঝুটি বাধা চুল। হাতে কালো, লাল, হলুদ সুতা। পিঠে একটা ঝোলা টাইপ। দেখেই মনে হচ্ছে গাঞ্জাখোর। জুলিনার ইচ্ছে করছে গিয়ে দুটো ঘুষি মেরে ঝুঁটি টা কেটে দিতে। নওশিন ও’কে এখনো দেখে নি। ছেলেটা এবার হাসলো। হাসতেই ওর মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ছেলেটার একটা দাঁতও সোজা না, সবগুলো হ্যাংলা দাঁত। সেই দাঁত দিয়ে হেসে নওশিনের মতো সুন্দরী মেয়ের পাশে হাটছে একটু লজ্জাও করছে না। জুলিনা ঝড়ের গতিতে ছুটে গেল। নওশিন ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
“মামী আপনি এখানে? ”
জুলিনা নাকে কাপড় চেপে বলল, ইশ! কী গন্ধ! এই ছেলে কয়দিন গোসল করো না? গন্ধে নাড়িবুড়ি বের হয়ে আসতেছে। এই ছেমড়ি তুই এই ছেলের সঙ্গে হাটিস ক্যামনে?”
ছেলেটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। নওশিন লজ্জা পেল।
চলবে…..