#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-২৪
আদনান শক্ত করে জয়ীর হাত ধরে আছে। জয়ীর মা জুলিনার দিকে তাকালো। কৃতজ্ঞতায় তার চোখে পানি এসে গেছে। জুলিনারও খুব ভালো লাগছে। ওরা এসেছে আদনান আর জয়ীতাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে। গাড়ি করে সবাই এসেছে ঠিকই কিন্তু গাড়ির বাইরে বেরোয় নি। ফটো তোলার জন্য সবাই যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তাতে ওদের জায়গা হবে না।
জুলিনা গর্বিত গলায় বলল, দেখলা আপা বলছিলাম না বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। একজন আরেকজনের সঙ্গে চিপকে আছে কিভাবে!
জুলিনা আরও কিছু মিথ্যা বলল জয়ীর মা’কে। বলল,
“আরে সেদিন বাসায় যাবার পর জয়ী তো ঠিকঠাক আমারে চিনতেই পারলো না। সারাক্ষন দেখি আদনানের সাথে চিপকে থাকে। ”
জয়ীর মা খুশিতে গদগদ হলেন। এমনই তো চেয়েছেন। মেয়েটা অল্প বয়সে ধাক্কা খেয়ে যেভাবে ঘাড়ত্যাড়া হয়েছে তাতে চিন্তার শেষ ছিলো না। এখন যে বিয়েশাদি করে ঠিকঠাক হয়েছে সেই অনেক।
***
জয়ীর মেজাজ টা আজ খুব খারাপ। তার মধ্যে আদনান ওর হাত এমন ভাবে চেপে ধরেছে যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে। আরে পালিয়ে যাবার হলে আগেই যেত। মেজাজ খারাপ হবার অনেক গুলো কারণ আছে। প্রথম কারণ হলো সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রোডিউসারের ফোন পেল। প্রোডিউসার ও’কে খুবই তেল দিতে লাগলো। এর আগের প্রজেক্টে ও’কে দেখে এমন ভাব করলো যেন ও অস্পৃশ্য। কিন্তু আজ ফোনে একদম মধু ঝরিয়ে মৌমাছির চাক তৈরী করে ফেলল। বিয়েতে কেন দাওয়াত দেয়া হলো না সেসব নিয়েও খুব আক্ষেপ করলো। জয়ীর একবার ইচ্ছে করলো জুলিনার মতো বলে ফেলতে, বেকুব ব্যটা থাম। নাহলে থা/পড়ায়ে তোর দাঁত ফালায়ে দেব। কিন্তু এসব ওর পক্ষে বলা সম্ভব না। কারণ ও তো আর সত্যিকারের পাগল না।
মেজাজ খারাপের আরেকটি কারণ হলো ও’কে শাড়ি পরতে হলো। মা ফোন করে সকাল থেকে জ্বালিয়ে মেরেছে রীতিমতো। তার উপর দলবল সহ এসেছে সি অফ করতে। জয়ী কঠিন গলায় বলল,
“সবাই মিলে দলবলে আসলে কেন? আমরা তো কয়েকদিনের জন্য খেলতে যাচ্ছি। কয়েক বছরের জন্য যাচ্ছি না!”
বলে নিজেই বোকা হয়ে গেল। খেলতে যাচ্ছে আদনান। ও তো আর যাচ্ছে না। তবুও এরকম বলায় একটু লজ্জা পেল। তাসিন, নওশিন ওর বলার ধরন দেখে হেসেও ফেলেছে। আদনান অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো। নিশ্চয়ই ও’কে না দেখিয়ে হেসেছে।
***
আদনান হাতটা আরেকটু চেপে বলল,
“কপাল সোজা করো তোমার। কপাল কুঁচকে আছে তো। ”
জয়ী ফিসফিস করে বলল,
“ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দে কপাল কুঁচকে আছে। বিরক্তিকর! ”
আদনান হাত টা আরেকটু চেপে ধরে বলল,
“এই ছবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রিকা সব জায়গায় ই যাবে। নরমাল হও।”
“সেতো বুঝলাম। কিন্তু আমার হাতটা কী লবন, মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খাবেন? যেভাবে চেপে ধরেছেন!”
জয়ীতা হাসিমুখেই আদনান কে কথাগুলো নিচু গলায় বলল। আদনান সেকথার জবাবে যেমন কিছু বলল না তেমনি হাত ও ছাড়লো না জয়ীর।
অবশেষে সব ঝামেলা ঝক্কি শেষ করে ভেতরে গেল।
***
গাড়িতে পাশাপাশি বসেছে জুলিনা আর তাসিন। তাসিন মাঝখানে, অন্যপাশে নওশিন। তাসিন ফোনে কিছু একটা দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। জুলিনা একাই নিজের মতো বকবক করে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের কোনো উন্নতি নেই। এতো জ্যাম, চারদিকে ময়লা তার উপর আছে পাখির পায়খানা। পাখিগুলো উড়তে উড়তে পায়খানা করে যায়। কী বিশ্রী অবস্থা! খালি রাস্তায় যে একটু হাটবে তার উপায় পর্যন্ত নেই।
এসব লেকচার বাদ দিয়ে তাসিন যে অন্যদিকে ব্যস্ত সেটা জুলিনার অনেকক্ষন পর খেয়াল হলো। নওশিন গাড়িতে বেশীক্ষন চড়তে পারে না। মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তাই চোখ বন্ধ করে সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে আছে।
তাসিনের মোবাইলে উঁকি দিয়ে জুলিনা দেখার চেষ্টা করলো কী করছে। তাসিন হঠাৎ খেয়াল করে অপ্রস্তুত গলায় বলল,
“কিছু বলবেন মামী?”
“কী করছিস?”
তাসিন একই সঙ্গে অপ্রস্তুত যেমন হলো তেমনি নার্ভাসও হলো। ফট করে বলল,
“চ্যাট।”
“কার সঙ্গে? ”
“একটা মেয়ে?”
“মেয়েটার নাম কী?”
“ইমন। ”
“ইমন মেয়েদের নাম হয়? ”
“তাসিনও তো ছেলেদের নাম হয়। ”
“হ্যাঁ। কিছু বেক্কল আছে এমন নাম রাখে। ”
এরপর স্বভাবসুলভ নিজের ফর্মে গিয়ে বকবক করতে লাগলো। তাসিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তবে জুলিনা ব্যাপার টা বিশ্বাস করে নি। বরং ও একটা কাজ খুঁজে পেয়েছে। এই ইমন সালোয়ার কামিজ পরা, নাকি শার্ট প্যান্ট পরা সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
***
জয়ীর ঘর টা ভালো লাগলো। এই হোটেল টা বারো তলার। ওরা আটতলায় রুম নিয়েছে। এর আগে বহুবার বহু জায়গায় ঘোরা হলেও এতো দামী হোটেলে কখনো থাকে নি। তখন সবসময়ই বাজেট ইস্যু নিয়ে ভাবতে হতো। হোটেল রুম টা ছোটো খাটো একটা ফ্ল্যাটের মতো। ছোট্ট ড্রইং কাম ডাইনিং, কিচেন, বাথরুম আর বেডরুম। ”
আদনান জয়ীর মুখ দেখেই বুঝলো রুম পছন্দ হয়েছে। তবুও জিজ্ঞেস করলো,
“পছন্দ তো?”
জয়ী কপাল কুঁচকে বলল,
“খারাপ না। চলবে।”
আদনান নিঃশব্দে হাসলো।
জয়ী বিছানায় পা উঠিয়ে বলল,
“আপনি সারাক্ষন আমার হাত ওরকম শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন কেন? আমার কী পাখা আছে নাকি যে ছেড়ে দিলেই উড়ে যাব। ”
আদনান সিরিয়াস গলায় বলল,
“কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি এয়ারপোর্ট থেকে তুমি দৌড়ে পালাচ্ছো। এইজন্য। ”
জয়ী ঠান্ডা গলায় ই জিজ্ঞেস করলো,
“আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন?”
“হ্যাঁ। একটু করছি। আসল ব্যাপার হলো আমি তোমাকে খানিকটা ভয় পাই। উঁহু তোমাকে না, তোমার পা’কে। হুটহাট ধড়াম করে যদি রাস্তায় পড়ে যাও লোকে বলবে আদনান ফয়সালের বউ হাটতে পারে না। ”
জয়ী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। বলল,
“আমি এখন অনেক টায়ার্ড। ফ্রেশ হয়ে এসে আপনার কথার জবাব দেব। ”
এই বলে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে গেল।
আদনান বলল,
“আচ্ছা। ”
জয়ী যাওয়ার পর আদনান জামাকাপড় গুলো বের করে কাবার্ডে রেখে দিলো। জয়ীর কসমেটিকস গুলোও গুছিয়ে রাখলো সুন্দর করে। হঠাৎ জয়ী ওয়াশ রুম থেকে ডেকে বলল,
“শুনছেন…
“হ্যাঁ। ”
“একটু আমার ফোন টা দেখুন তো। মা ফোন করেছে কী না। ”
আদনান সরল মনে ফোন দেখতে গেল। ওখানে যে ওর জন্য জয়ীর করা বদমায়েশী অপেক্ষা করছিল সেটা ও জানতো না। ফোনে পাসওয়ার্ড অবধি দেয়া নেই। লক স্ক্রিন সরাতেই দেখলো ডায়ালে ওর নাম্বার টা। নাম্বার টা গুন্ডা নামে সেভ করা। জয়ী আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“ফোন করেছিল?”
আদনান স্বাভাবিক গলায় বলল,
“না। ”
জয়ী মুখ চেপে হাসলো। জুলিনার মতো ওরও ইচ্ছে করলো আদনানের আলাদা একটা নাম দিতে। তাই দিয়েছে গুন্ডা। অবশ্য আদনান গুন্ডা না মিচকে শয়তান। তবে গুন্ডা দিতেই ভালো লাগলো।
আদনান কোনো রিয়েকশন দেখালো না। যেখানে সব মেয়েরা ও’কে হিরো ভাবে, আর ওর নিজের বউ কী না ও’র নাম্বার গুন্ডা নামে সেভ করে রেখেছে। এর রিয়েকশন ই বা কী হতে পারে।
চলবে…
(পাঠক, বোর লাগছে? একটু লাগলেও কিছু করার নাই। এই লেখাটা আগডুম বাগডুম টাইপ ই হবে। আর হ্যাঁ আর কয়েক দিন পর ই কিন্তু বৃষ্টিলেখার প্রি অর্ডার শুরু হবে।)