#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-২৩
আদনান কে এতো এতো ফল, চকলেট, ফুল আনতে দেখে নওশিন চোখ কপালে তুলে ফেলল। বলল,
“কী ব্যাপার ভাইয়া? বাসায় কেউ আসবে নাকি? কতজন আসবে?”
আদনান হাসলো। জুলিনাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ভালো করে সবকিছু দেখে বলল, ওমা! বিয়ের পর ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে নাকি!
আদনান একটু লজ্জিত হলেও নিজেকে সামলে নিলো। বলল,
“জয়ীতা বলল তাই নিয়ে এসেছি।”
জুলিনা বিস্মিত গলায় বলল,
“জয়ীতা এতো ফল দিয়ে কী করবে! ওর চৌদ্দ গুষ্টির কী একসঙ্গে পাতলা পায়খানা হইছে। ”
নওশিন হাসলো। জয়ী তখনও ডাইনিং রুমে আসেনি। ওর মা ফোন করেছে তার সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। আদনান আর দাঁড়ালো না। ভেতরে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
জয়ী বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল। কেয়ারটেকার আর ড্রাইভার মিলে যে ব্যাগভর্তি করে জিনিসপত্র এনেছে সেটা ওর চোখে পড়েছে। ভেবেছে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বোধহয়। কিন্তু জুলিনার ডাকাডাকিতে গিয়ে দেখলো এলাহি কান্ড। জুলিনা জয়ীকে দেখে বলল,
“কিরে তোর চৌদ্দ গুষ্টি নাকি কলেরায় আক্রান্ত হইছে? আদনান রে দিয়ে এইজন্য এতো ফল আনাইছস! ”
জয়ী বুঝতে পারলো। আদনান ও’কে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করছে। তবে ও শান্ত গলায় বলল,
“না আন্টি, আসলে এসব তো জীবনে খাই নি তাই আনতে বলেছি বেশী করে খাব বলে। ”
নওশিন হেসে ফেলল। জুলিনা অবশ্য অলরেডি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। খেতে খেতে বলল,
“নওশিন আমাকে কিছু ব্যাগ ভরে দিয়ে দিস তো। বাড়িতে গিয়েও খাব। আরেকটা ব্যাগে দিস ভন্ড’র বাসায় দিয়া আসবনে। হাভাতের দল এসব ফল তো জীবনে চোখেও দেখেনি। কিছু চকলেটও দিস। হাভাতের মেয়েরে দেবনে। ”
জয়ী আদনান কে ফল বিষয়ক কোনো প্রশ্ন করছে না। বিকেলে চা’য়ের সঙ্গে ফল খেল। এমনকি ড্রাগন ফ্রুট দিয়ে চা’ বানিয়ে সবাইকে খাওয়ালোও। আদনান প্রথমে সেটা বুঝতে পারলো না। তাসিন ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
“ভাইয়া আজ কিন্তু ভাবী চা বানিয়েছে। ”
আদনান নির্লিপ্ত গলায় আচ্ছা বলে চায়ের কাপ নিলো। চুমুক দিতেই মুখের জিওগ্রাফি পাল্টে গেল। আদনান না পারছে চা’টুকু গিলতে আর না পারছে ফেলে দিতে। আদনানের অবস্থা দেখে তাসিন শব্দ করে হেসে ফেলল। নওশিন বলল,
“ভাইয়া বেসিন ওইদিকে। ”
জয়ী সরল হবার ভান করে বলল,
“চা ভালো হয় নি?”
আদনান উঠে গেল। কিছুক্ষন পর এসে জিজ্ঞেস করলো,
“এটা চা ছিলো? ”
জয়ী বলল,
“বাড়িতে এতো এতো ফল এসেছে সেগুলো খেয়ে শেষ করতে হবে তো। তাই সকাল, বিকাল সব সময়ই ফল ফ্রুটস চলবে। ডিনারেও এসব চলবে কিন্তু। ”
আদনান বিড়বিড় করে বলল,
“আমাকে তাহলে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। ”
জয়ীতা সন্ধ্যের পর জানালো আজ ও রান্না করে সবাই কে খাওয়াবে। তাসিন বলল,
“কিন্তু তুমি তো রান্না জানো না। ”
“যা পারি সেটা করব। তোমরা টেস্ট করে দেখবে। ”
নওশিন তাসিনের কানে কানে বলল,
“অনলাইন থেকে খাবার অর্ডার কর। নাহলে দেখবি আজ না খেয়েই থাকতে হবে। ”
তাসিন চাপা গলায় বলল,
“আজ রাতে মজাই হবে। ভাইয়ার আজ বেহাল দশা হবে দেখিস। ”
***
আদনান খবর পেল যে জয়ী রান্না করছে। বুঝলো যে ওর আনা জিনিস এখন ও’কেই অসহ্য হয়ে সহ্য করতে হবে। একবার ভাবলো জয়ীকে বলবে রান্না করার দরকার নেই। কিন্তু ব্যাপার টা খারাপ দেখা যায়। বউ ভালোবেসে রান্না করতে চাইলে না বলতে নেই। খাবার ভালো হবে কী মন্দ হবে সেটা পরের ব্যাপার। আগ্রহ করে রান্না করতে চেয়েছে এটাই অনেক।
আদনান মনে মনে প্রস্তুতি নিলো বউয়ের হাতের প্রথম রান্না টেস্ট করার জন্য। তাসিন, নওশিন অতি আগ্রহে বসে আছে আদনানের বেহাল দশা দেখবার জন্য৷ আদনান বোনেদের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমাকে হেনস্তা হতে দেখবি বলে খুব টগবগ করে ফুটছিস মনে হচ্ছে তোরা।”
তাসিন হেসে বলল,
“ভাবীর রান্নার জন্য এক্সাইটেড আমরা। ”
নওশিন চুপিচুপি বলল,
“অনলাইন থেকে খাবার কেনা হয়েছে। ডোন্ট ওরি। এক, দুই লোকমা খেয়ে একটু প্রশংসা কোরো। বেচারি যেন মন খারাপ না করে। ”
***
প্রথমে টেবিলে এলো ভাত। বড় প্লেটে শিউলি ফুলের মতো সাদা ঝরঝরে গরম ভাত। এরপর এলো সালাদ। ভাগ্য ভালো যে সালাদ টা ভয়ংকর হয় নি। নরমাল সালাদ ই হয়েছে। এরপর আর কোনো খবর নেই রাঁধুনীর। তাসিন, নওশিন কে কঠিন গলায় বলা হলো চুপচাপ বসতে। আদনান একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। ভাত দিয়ে গেছে সাত মিনিট হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত তরকারি টাইপ কিছু এলো না। আদনান তাসিন কে বলল,
“কী করব রে তাসিন? শুধু ভাত সালাদ দিয়ে খেয়ে ফেলব?”
তাসিন বলল,
“একটু অপেক্ষা করো। ”
নওশিন বলল, আমি গিয়ে দেখে আসি কী অবস্থা!
“না থাক যেতে হবে না। ”
জয়ীতা এবার নিয়ে এলো পায়েশ। আদনান আবারও বোনেদের দিকে তাকালো। জয়ী বলল,
“আর মাত্র দুই মিনিট। ”
আদনান হেসে বলল,
“কোনো ব্যাপার না। আমাদের একদম ই ক্ষিধে নেই। ”
জয়ীতা যেতেই আদনান বলল,
“পায়েস দিয়েই ভাত খেতে শুরু করব? পায়েস, সালাদ, ভাত, ডাল, দারুণ কম্বিনেশন। ”
নওশিন মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। তাসিন ফটাফট ছবি তুলতে লাগলো। ম্যাসেঞ্জারে স্টোরিতে পোস্ট করতে হবে।
জয়ীতা অবশেষে ভাত দিয়ে খাওয়া যায় এমন আইটেম নিয়ে এলো। চিকেনের একটা প্রিপারেশন। দারুন স্মেলে সবাই বুঝলো যে খাওয়া যাবে। কিন্তু চিকেনের চেহারা দেখে ওদের মুখের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। লাল চিকেনের উপর ছোট ছোট করে আপেল কেটে দেয়া। আদনান একবার জয়ীতার দিকে তাকালো। রান্নাঘরে এতো যুদ্ধ করেছে যে ক্লান্ত লাগছে। আদনানের মায়াও হলো। সেই মায়া থেকেই বোধহয় প্লেটে খাবার নিলো। ইশারায় বোনেদেরও নিতে বলল। ভয়ে ভয়ে একটু মুখে দিলো। অল্প একটু মুখে দেয়ায় টেস্ট ভালোভাবে না বুঝলেও এটুকু বুঝলো যে অখাদ্য হয় নি। বরং খাদ্যই হয়েছে। জয়ীতা দাঁড়িয়ে আছে ফিডব্যাক এর জন্য। তাসিন, নওশিনও খেল। নওশিন ই প্রথম বলল,
“দারুন তো। ”
আদনান আরেকটু খেল। টক, মিষ্টি, ঝাল আর আপেল ফ্লেভার মিলিয়ে মন্দ না। ভালোই বলা চলে। দশে আট পাবে। উঁহু আট বেশী হয়ে যায়। সাত ঠিকঠাক। দেরি করে খাবার দেয়ায় এক মার্ক কাটা।
জয়ী জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন হয়েছে?”
আদনান বলল,
“এতো টা এক্সপেক্ট করিনি। চোখে রীতিমতো পানি এসে যাচ্ছে। ”
জয়ী চোখ পাকালো। তাসিন বলল,
“ভালো হয়েছে ভাবী। ‘
জয়ী বলল,
“তাহলে আর চিন্তা নেই। ফলগুলো আর নষ্ট হবে না। সব বেলাতেই চলবে। ”
আদনান আর কিছু বলল না। চুপচাপ খেতে লাগলো। বউ প্রথম রেঁধেছে। অখাদ্য হয় নি সেটাই ভালো। নাহলে মিথ্যে করে হলেও প্রশংসা করতে হতো।
চিকেনের আইটেম খাওয়া গেলেও ডেজার্ট আইটেম খাওয়া গেল না। অতিরিক্ত মিষ্টির কারনে।
জয়ী ওর প্রথম রান্না জুলিনাকেও পাঠালো। সাথে চিরকুটে লিখলো,
“একদম জয়ী স্পেশাল রান্না। ইউটিউব ঘেঁটে রান্না করা। অসৎ মহিলাদের মতো অনলাইনে অর্ডার করা না। ”
***
জয়ী ঘরে ঢুকতেই আদনান বলল,
“আমরা কাল সকালে যাব। সব গোছানো শেষ তো?”
জয়ী হাতে ক্রিম লাগাতে লাগাতে বলল,
“এখানে আমার কাজ আছে। আমি কাল থেকে চকলেট খাওয়া শুরু করব।”
আদনান হেসে বলল,
“তুমিই তো একদিন বলেছিলে যে তোমার এগুলো লাগবে?”
“যখন বলেছিলেন তখন তো পাঠান নি। ”
“তখন তো তুমি আমার বউ ছিলে না তাই পাঠাই নি। ”
জয়ী আদনানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আচ্ছা!”
“হু। এখন ফুল, ফল, চকলেট যা চাইবে সব পাবে। ভালোবাসা চাইলে সেটাও পাবে।”
আদনান কথাটা বলল স্বাভাবিক গলায়। কোনো ভান, কিংবা ঠাট্টার রেস মাত্র নেই। এই কথার জন্য জয়ীর কোনো রিয়েকশন হচ্ছে না। বুকের বা পাশে একটু কেমন কেমন করে উঠলো। সেখানেই কী তবে হৃদয় আছে!
চলবে….