কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে পর্ব ১৪

0
1301

#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-১৪
জয়ীতা ফিরলো কাকভেজা হয়ে। কাদা পানিতে মাখামাখিও হয়ে গেল। ঘরে ঢুকেই সৌমিকে বলল,

“খাবার দাবার রেডি করে রাখ। খুব খিদে পেয়েছে। ”

“এতো ভিজলি কিভাবে? ”

“বৃষ্টিতে, আর কিসে!”

“আন্টি কিন্তু চলে গেছে। ”

“আচ্ছা।”

জয়ীতা জুলিনাকে নিয়ে চিন্তিত হলো না। জুলিনা এখানে ওদের সঙ্গে যত আনন্দেই থাক নিজের শেকড় ভুলবে না। ঠিক ই চলে যাবে।

জয়ীতা গোসলে বেশীক্ষন সময় নিলো না। বেরিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই খেতে বসলো। সৌমি ওর ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“এই দেখ!”

জুলিনার নতুন রুপের ছবি দেখে জয়ীতা হাসতে শুরু করলো। হাসি থামিয়ে বলল,

“ভদ্রমহিলার মধ্যে আলাদা একটা ব্যাপার আছে। বল তো সেটা কী?”

সৌমি একটু ভেবে বলল,

“উমম! ফটর ফটর করে কথা বলে?”

“উঁহু। সেটা তো তুই আমিও বলি। ”

“তাহলে? ”

“কে, কী ভাবলো সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। অথচ আমাদের একটু বড় হবার পর থেকেই ভাবতে হয় সমাজ কী বলবে, কী ভাববে!”

“সেটা ঠিক৷ এইজন্যই কী তোর ওনাকে ভালো লাগে?”

জয়ীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“আমার কথা আর বলিস না। কাকে কখন ভালো লাগে; কাকে খারাপ লাগে নিজেই বুঝিনা। ”

সৌমি হঠাৎ বলে ফেলল,

“অনীশ কিন্তু সত্যিই তোর জন্য ফিদা ছিলো। ”

জয়ীতা খাওয়া থামিয়ে বলল,

“কী করে বুঝলি?”

“আমি খেয়াল করেছি।”

জয়ীতা হাসলো। সৌমি জিজ্ঞেস করলো,

“হাসছিস কেন?”

“এমনি। ”

খাওয়া দাওয়া শেষে জয়ীতা ব্যাগ গোছাতে লাগলো। গন্তব্য কক্সবাজার। একটা ওয়েব ফিল্মের শ্যুটিং এর জন্য যেতে হচ্ছে। সৌমি বলল,

“জয়ী আমাকেও নিয়ে চল। ”

“উঁহু। ”

“কেন? এবার এমন করছিস কেন?”

“সবজায়গায় তোকে নিয়ে যাই। তাই এবার ভাবছি একা যাব। তুই বরং অন্য একটা কাজ করবি। ”

“কী কাজ?”

জয়ীতা সৌমির ফোন টা হাতে নিয়ে ওর ফোন থেকে একটা নাম্বার তুলে দিয়ে বলল,

“অনীশের সঙ্গে যোগাযোগ কর।”

“কেন?”

“তোর মনে হয় ক্যাবলা ছেলে পছন্দ। অনীশ কিন্তু পিওর ক্যাবলা। ”

সৌমি লজ্জা পেল। বলল,

“যাহ! খালি ফাজলামি! ”

জয়ী হেসে বলল, সিরিয়াসলি।

জামাকাপড় গোছাতে গিয়ে জয়ী হঠাৎ আতঙ্কিত গলায় বলল,

“এখানে আমার ডায়েরি টা ছিলো। এখন খুঁজে পাচ্ছি না।”

সৌমি বলল,

“ভালো করে খুঁজে দেখ। পাবি। ”

জয়ীতা কোনাকানি সব খুঁজেও পেল না। সব জামা কাপড় বের করার পর ডায়েরির মলাট টা শুধু খুঁজে পেল। ভেতরের কাগজগুলো নেই। জয়ী দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলল,

“কোথায় যেতে পারে বলতো?”

“তুই মনে হয় বাসা থেকে আনিস ই নি। শুধু মলাট টা এনেছিস।”

জয়ীকে চিন্তিত দেখালো। সৌমি বলল,

“যাহ হয়েছে ভালো হয়েছে। ওই ডায়েরিতে ভালো কিছু ছিলোও না। অতীত কে আঁকড়ে ধরে থাকা উচিতও না। ”

জয়ী কিছু বলল না। ওই ডায়েরিটা ওর জীবনে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও না। ঢাকায় আসার পর কিনেছিল। ডিপ্রেশনের সময়টায় এক বড় আপু বলেছিল ডায়েরি লিখতে। সব দুঃখ, কষ্ট লিখে রাখতে। সামনের জীবনে ভালো থাকতে কাজে লাগবে।

জয়ীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ডায়েরি হারিয়েছে হারাক। সত্যিই তো, ওগুলো আঁকড়ে ধরে থেকে কী ই বা হবে। সবাই ই সবার মতো ভালো আছে। পুরোনো ব্যাপার মনে করে ও বা কেন খারাপ থাকবে!

***
আদনান আধছেঁড়া ডায়েরির পাতাগুলো পড়ছে। একবার পড়া শেষ হলে আবার পড়তে শুরু করলো। ডায়েরির কিছু অংশ নেই। হয় যার ডায়েরি সে ছিড়ে ফেলেছে, নয়তো যে দিয়েছে তার হাত থেকে ছিড়েছে।

এই ডায়েরি টা জয়ীতার। জয়ীতার সঙ্গে আদনানের জীবনের অনেক টা মিল আছে। ওদের জীবনে ভালোবাসা টা এসেছিল একই সময়ে। প্রতারিত হবার কারণ টাও অপ্রত্যাশিত। বাদবাকি মিলগুলো অন্যরকম।

আদনান জুলিনাকে ফোন করলো। রাত এখন সাড়ে তিনটা। জুলিনার ফোন না ধরার সম্ভাবনাই বেশী। তবুও ফোন করে পাওয়া গেল।

জুলিনা ফোন ধরে বলল,

“হ্যাঁ আদনান বল। ”

“তোমার পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই। ”

জুলিনা একটু ভেবে বলল,

“ভেবে বলছিস?”

“হ্যাঁ। ”

“রাত জেগে এতক্ষন ধরে। ”

“হুম। ”

জুলিনা ফোন রেখে দিলো। একটু পর আবার ফোন করলো। করে বলল,

“সেদিন এক মেয়ের সঙ্গে পেপারে কী কী যেন লেখা দেখলাম। ”

“ওসব রিউমার।”

জুলিনা আবারও ফোন রেখে দিলো।

বাকী রাত টুকু জুলিনা জেগেই কাটালো। সঙ্গে আদনান কেও জাগিয়ে রাখলো। একটু পর পর একেকটা প্রশ্ন করার জন্য ফোন করেই যাচ্ছে।

****
নওশিন কফির মগ এগিয়ে দিতে দিতে বলল,

“তুমি তাহলে সত্যিই বিয়ে করবে?”

আদনান পত্রিকা পড়ছিল। কফির মগ হাতে নিয়ে বলল,

“আমি কী তোদের কখনো বলেছি যে বিয়ে করব না?”

তাসিন বলল, না তবে আমরা ভেবেছিলাম তুমি হয়তো চিরকুমার ই থাকবে।

আদনান হেসে ফেলল। নওশিন বলল,

“ভাইয়া অস্কারের কী হবে?”

“অস্কার ওর মতোই থাকবে। ”

“কিন্তু জয়ীতা তো বলেছে…. উফ সরি জয়ীতাকে এখন থেকেই ভাবী ডাকি কী বলিস তাসিন?”

তাসিন বলল, হ্যাঁ তাই ই ডাকা উচিত।

আদনান হেসে বলল,

“দিল্লী বহুত দূর। সেই অবধি আগে পৌছা তো।”

তাসিন বলল,

“দিল্লী যাওয়া নিয়ে টেনশন করিস না। সেই ব্যবস্থা মামী করে দিবে। ”

নওশিন বলল,

“ভাইয়া একটা প্রশ্ন করি।”

“জয়ীতাকে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ এক্ষুনি বলতে পারছি না। তবে তোদের বলব। আমার মতামতের জন্য কোনোভাবেই মামী দায়ী না। আমি মন থেকেই নিজের মতামত দিয়েছি। ”

নওশিন হেসে বলল,

“আচ্ছা।”

আদনান চলে যাবার পর তাসিন বলল,

“এরা দুজন দুই রকম। কিভাবে নিজেদের সামলায় আল্লাহ জানে!”

****
আদনান পরের সপ্তাহে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গেল। আর জয়ীতা তখনও আটকে আছে কক্সবাজার। এদিকে জুলিনা চলে গেল জয়ীতাদের বাড়িতে। জয়ীতা এখনো অবধি জানে না যে ওর বিয়ে নিয়ে সবার ঘুম বন্ধ হয়ে গেছে। জুলিনা জয়ীর মা, বাবা, ভাই সবাই কে রাজী করিয়ে ফেলল। এবার জয়ীতার পালা। জয়ীতার মায়ের খুব ভয়! এর আগে মেয়ের বিয়ে নিয়ে এতো ভয় লাগে নি, কিন্তু এবার কেন লাগছে বুঝতে পারছেন না। জুলিনা আশ্বস্ত করে বলল,

“আপাগো এতো চিন্তা কইরো না। এই বিয়ে খুব ভালো হবে। দুজনেই পোড় খাওয়া। আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো হবে। ”

জয়ীতার মায়ের ভয় তবুও কাটে না। জুলিনা খানিকটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করে না। জয়ীতার উপর ও রাগ হয়। ভাগ্যিস তখন জয়ীতার সঙ্গে আলাপ ছিলো না, থাকলে ও’কে দিয়ে সাইমুন হা/রা/মজাদা কে দুটো থাপ্পড় দিতে পারতো। তাহলে মেয়েটার মাথা থেকে ওইসব ভুত নেমেও যেত।

***
জয়ীর দিন কাটে ব্যস্ততায়। সকালে খাবার খায় গাড়িতে যেতে যেতে। সন্ধ্যেবেলা সময় পেলেও সেটা কেটে যায় বিশ্রাম নিতে, পরের দিনের কাজের শিডিউল চেক করতে। টানা কাজ করে নিজেও ক্লান্ত হয়ে গেল। এভাবে কাজ করার অভ্যাস নেই ঠিকই কিন্তু মুখে কিছু বলছেও না। সুজয় সরকার ওর কাজের প্রতি ডেডিকেশনে মুগ্ধ। ও’কে দেখে ভেবেছিল পারবে না। কিন্তু ও শুধু ভুল প্রমান করে নি, বরং রিতীমত মুগ্ধও করেছে।

জয়ী আজ হাফবেলা ছুটি পেয়েছে। লাঞ্চের পর যাবে। সকালে বেশী সময় ঘুমাতে চাইলেও হলো না। এই ক’দিনে তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস হয়ে গেছে। জয়ী চা খেল হোটেলের রুমে বসেই৷ এখানের জানালা থেকেই সমুদ্র দেখা যায়। সকালের নরম আলো টা ভালোই লাগছে৷ গতকাল বৃষ্টি থাকায় আবহাওয়াও ঠান্ডা। জয়ী বেরোলো ব্রেকফাস্ট করবে বলে। আজ রিলাক্সে খাবে। যদিও একা খেতে একটু খারাপ লাগবে। কী আর করার!

খাবার অর্ডার করে অপেক্ষা করছে। সামনেই আজকের পত্রিকা রাখা। জয়ী পত্রিকা হাতে নিলো। উপরে ছোট করে একপাশে লেখা, বিয়ের পীড়িতে আদনান ফয়সাল!

জয়ী পাতা উল্টে পুরো খবর টা পড়লো। খুব শিগগিরী বিয়ে করছেন আদনান ফয়সাল। শত শত তরুণীর হৃদয় ভেঙে পরিবারের পছন্দকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।

জয়ী বিড়বিড় করে বলল, বাব্বা!

পরিবারের পছন্দ করা পাত্রী যে আসলে ও নিজেই সেটা এখনো পর্যন্ত ও জানেই না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here