কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে পর্ব ১০

0
1190

#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-১০
জয়ীতা আজ নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তাসিন ছুটে এসে জয়ীতাকে ধর‍তে চাইলে আদনান থামালো। তাসিন আর গেল না। আদনান কঠিন চোখে জয়ীতার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ীতা নিজেকে সামলে নিয়ে আদনানের দিকে তাকালো। আদনান তখনও কঠিন মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জয়ীতা মুচকি হেসে গেট দিয়ে বেরিয়ে এলো।

আদনান আজ জয়ীতার উপর ভীষণ বিরক্ত হলো। নওশিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“দারোয়ান চাচাকে বলে দিস ওনাকে যেন আর ঢুকতে না দেয়।”

নওশিন বলল,

“ওঁর সঙ্গে এতোটা রুড হলে পাগলা মামী আমাদের আস্ত রাখবে?”

আদনান নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“তাহলে দারোয়ান চাচাকে বলিস পাগলা মামীকেও যেন ঢুকতে না দেয়।”

আদনান আর দাঁড়ালো না। হন হন করে চলে গেল।

তাসিন নওশিন কে বলল,

“ছেড়ে দে। জানিস ই তো ওর ঘুম ভাঙালে কিরকম ক্ষেপে যায়!”

নওশিন বিরক্ত গলায় বলল,

“জয়ীতাও একটু বেশী বেশী বুঝলি! ওতো আমাদের থেকেও বড়।”

“হু। আচ্ছা বাদ দে। যা হবার হয়েছে।”

****
জয়ীতা রাস্তায় নেমে টের পেল যে পায়ে ব্যথা লাগছে। তবুও সেটা পাত্তা দিলো না। আদনানকে বিরক্ত করতে চেয়েছিল সেটা করা হয়ে গেছে এতেই ও খুশি। বেচারার মুখের দিকে তাকানো পর্যন্ত যাচ্ছিলো না। জয়ীতা আপনমনেই হেসে ফেলল। কেন যেন ওর মনে হচ্ছে আদনান হলো সাইমুনের আরেক ভার্সন। যার নিজের অবস্থান নিয়ে অহংকারের শেষ নেই!

যাকগে! আদনান যেমন হয় হোক, ওর কাজ তো শেষ। এই ব্যটার সঙ্গে ওর আর জীবনেও দেখা হবে না। আর জুলিনা ভদ্রমহিলার সঙ্গও ত্যাগ করতে হবে।

জয়ীতা বাড়িতে ঢোকার আগে ফেসবুকে লগইন করে তাসিন, নওশিন দুজন কে ব্লক করলো। তারপর জুলিনাকে ব্লক করে সিম টা খুলে রাস্তায় ফেলে দিলো।

আদনানের সঙ্গে যুক্ত কোনো লোকের সঙ্গেই ও টাচে থাকবে না।

****
আদনানের ঘুম ভেঙেছে আজ দেরিতে। রাতে ঘুমাতে দেরি হওয়ায় এই অবস্থা। আজ আর প্র‍্যাকটিসে যাবে না। এখন ঘন্টাখানেক দৌড়, আর ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করবে। আদনান বাইরে যাবার জন্য যখন বের হবে তখন নওশিনের সঙ্গে দেখা হলো। আদনান হেসে বলল,

“গুড মর্নিং। ”

“গুড মর্নিং ভাইয়া। ম্যুড ভালো? ”

“মামীর টপিক বাদে যেকোনো টপিকে কথা বলতে পারিস।”

নওশিন একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলো। আদনান কাগজ টা হাতে নেবার সময় দেখলো যে ভেতরে টাকাও আছে। আদনান জিজ্ঞাসু চোখে নওশিনের দিকে তাকালে নওশিন বলল,

“পড়ে দেখো। ”

আদনান কাগজ টা খুলল। সেখানে লেখা,

ডিয়ার নাকে কাঁদুনি,

মানুষ বড় হলে পুরোনো স্মৃতি ভুলে যায় তাই না? নাকি ভুলে যেতে হয়! আমি কিন্তু আমার ছয়শ বিশ টাকার কথা এখনো ভুলিনি। আর আপনি এতো টাকার মালিক হয়েও ভুলে গেলেন! ছিঃ ছিঃ! কথা ছিলো আমার টাকা ফেরত দিবেন অথচ সেটা তো করলেন ই না উল্টো আমাকে ভুলে গেলেন। কোনো ব্যাপার না, এসব ছোট ছোট ভিক্ষা দেবার অভ্যাস আমার আছে। আমি ওই টাকা ভিক্ষা দিলাম। আর হ্যাঁ ওই দিনের ফল, চকলেটের টাকাও দিয়ে দিলাম। আপনার ফল, চকলেট, ফুল এগুলো খাওয়ার জন্য আমি মরে যাচ্ছি না।

——জয়ীতা

আদনান চিঠি হাতে নিয়ে বসে পড়লো। নওশিন কোনো প্রশ্ন করলো না। আদনান কিছু সময় পর বলল,

“নওশিন এক কাজ কর। জয়ীতার নাম্বারে একটা ফোন কর তো, আমি কথা বলব।”

নওশিন বিনাবাক্য জয়ীতার নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু ফোন বন্ধ। নওশিন বলল,

“জয়ীতার ফোন বন্ধ ভাইয়া।”

আদনান চুপ করে রইলো। আজ বিকেলে ওর যাবার তাড়া না থাকলে জয়ীতার সঙ্গে দেখা করে যেত। এখন সেটা সম্ভব না। অপেক্ষা করতে হবে।

***
আদনান চলে গেল বিকেলে। যাবার আগে সিদ্ধান্ত নিলো ফিরে এসে সবার আগে ও জয়ীতার সঙ্গে দেখা করবে। মেয়েটা ও’কে ভুল বুঝছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। আদনান যাবার পর জুলিনা নওশিন কে ফোন করে বলল,

“আদনান কই?”

“ভাইয়া তো চলে গেছে।”

“একা গেছে নাকি ওই অ*সভ্য মডেল টা’কে নিয়ে গেছে?”

“একাই গেছে।”

“তোর ভাইয়ের হাবভাব কিন্তু খুব একটা সুবিধার না। দেখছিস আমার কথারে দুই আনার দাম দিলো না। আমারে দাম দিক না দিক, জয়ীতা মেয়েটারে এতো অপমান করার মানে কী? ও কী নিজেরে নায়ক ভাবে? ওর মতো বহু নায়ক দেখছি। তোরা জানিস নায়ক মান্না আমার পরিচিত ছিল। সে আমারে কতো বলছে আসো জুলি তোমার সঙ্গে একটা সিনেমা সাইন করি। ”

নওশিন চুপ করে শুনতে লাগলো। জুলিনা আরও বলতে লাগলো,

“তোর ভাইরে কিছু বলার নাই। কাঠের ব্যাট নিয়া কয়টা দিন একটু দৌড়ায়েই তার এই অবস্থা! আমারে সে চিনে না! ”

নওশিন আমতা আমতা করে বলল,

“আসলে মামী ভাইয়া একটু ব্যস্ত ছিলো এইজন্য…..

“যা ছেমরি। আমার সঙ্গে এমনে কথা বলবি না। ব্যস্ত ছিলো! তোর ভাই দেখ ওই প্লাস্টিকের চেহারা ওয়ালা মেয়েগুলোর সাথে ব্যস্ত ছিলো। ”

নওশিনের এবার বিরক্ত লাগলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জুলিনা বারবার আদনানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট ই দিচ্ছে। নওশিন চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিলো। তারপর বলল,

“শুনুন মামী, ভাইয়া কাকে বিয়ে করবে না করবে সেটা ভাইয়া ঠিক করুক। আপনি বরং অন্য কাজে মন দিন।”

“তোর ভাই কী ঠিক করবে! মনে নাই একটা গরুরে ঠিক করছিল!”

“ভাইয়ার সমস্যা ভাইয়া বুঝুক। ”

জুলিনা এতক্ষনে নওশিনের গলার আওয়াজ টের পেল। মেয়েটা যে রেগে কথা বলছে সেটা এতক্ষনে বুঝলো। বলল,

“ওই তুই আমার সঙ্গে এমনে কথা বলিস ক্যান? তোরে ট্রেনিং দিয়া রাখছে। ওই ফালতু প্লাস্টিকগুলার সাথে মেশার ফল দেখছস!”

“আপনি তো বিনা কারনেই ভাইয়ার উপর রাগারাগি করেন। আর জয়ীতা কে! ওরও তো সমস্যা আছে। কাল রাতে এখানে এসে সিনক্রিয়েট করলো কতো….

জুলিনা নওশিনের সঙ্গে হঠাৎই তর্ক বন্ধ করে দিলো। বলল,

“যাহ! তোদের আর ফোনই করব না। তোদের উকুন খাইয়া ফেলুক। বজ্জাত মেয়ে।”

জুলিনা ফোন রেখে দিলো। নওশিন সবসময় জুলিনার বকাবকি শুনে। আজ কী হলো! এখন ওর নিজেরই খারাপ লাগছে।

***
আদনান সিরিজ শেষ করে ফেরার পর জয়ীতাকে যেমন খুঁজে পেল না, তেমনি জুলিনাকেও খুঁজে পেল না। জুলিনাদের বাড়ি শুধু ওর মা একাই আছে। কেউ খোঁজ করতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে আর বলে যে জুলেখা মরছে। ওরে বুড়িগঙ্গায় ফালায়ে দিছি। জুলিনার ফোন নাম্বার টাও অফ।

অন্যদিকে জয়ীতা যে বিল্ডিং এ থাকতো সেখানে গিয়েও কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। জয়ীতা নাকি নতুন বাসায় উঠেছে। ফোন নাম্বার দেয়াও বারন।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here