#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৫
রবিন এমন ভাবে লামার মুখ চে’পে ধরেছে যে র’ক্ত বের হতে লাগলো৷
লামা মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতে পারছে না ব্যাথায় চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো৷
এমন সময় রবিনের ফোনটা বেজে উঠলো, রবিনের ফোনের রিংটোনের আওয়াজ কানে যেতে রবিন লামার মুখ থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বেড সাইড টেবিল থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বোন দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে কল৷ রবিন মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখে বিছানায় বসলো৷ কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে আসে লামার কাছে৷ লামার গালে চুমু দিয়ে বলে, জান তোমাকে কতবার বলেছি আমার সামনে ওই মেয়ের নাম মুখে আনবা না৷ তবুও কেন আনো। টিস্যু দিয়ে র’ক্ত মুছিয়ে দিয়ে বলে,আমি আইসক্রিম আনিয়ে দিচ্ছি তোমার ভালো লাগবে।
‘লামার ভেতরে কেমন অজানা একটা ভয় ঢুকলো। আজানা ভয় হুট করে লামার অন্তরটাকে আবৃত্ত করে নিলো। রবিন বাহিরে চলে যেতেই লামা নিজের ফোন থেকে নিজের ছোট বোনকে কল করলো, লিজা প্রথমে কল রিসিভ করলো না। কয়েকবার কল দেয়ার পর রিসিভ করে বলে,তোমার জীবন তো শেষ করেছো এখন আমাদের জীবন কেন নষ্ট করতে চাইছো? নিজের মত থাকো আমাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।
লামা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,লিজা একবার আমার কথাটা শুনবি?
‘আর কি বলার আছে তোমার?তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ ঝুলে পরতো। তুমি দেখে বেঁচে আছো।
‘লামা আর কিছু না বলে,কল কেটে দিলো।পৃথিবীতে যত আপন আর নিজের মানুষ ই থাকুক না কেন,কারো পাপের ভাড় কেউ নেয়না। বরং সবাই নিজেকে সরিয়ে নেয়। লামার ইচ্ছে করছে কাউকে কিছু বলতে কিন্তু তার কথা শোনার মত আজ কেউ নেই। কত পুরুষকে নিজের রুপের জাদুতে তৃপ্তি দিয়েছে আর আজ তার রুপই তার জন্য কাল হলো।
✨
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক্সারসাইজ করতে বের হয়েছিল জারিফ৷ পাশের পার্কে অনেক সময় এক্সারসাইজ করে একটা ওয়াটার পট থেকে নিজের চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজে কিছুটা পানি পান করলো। পার্কের একটা বেঞ্চে বসতেই খেয়াল করলো, একজন বয়স্ক লোক মন মরা হয়ে বসে আছে।
জারিফ একটু সামনে এগিয়ে বলে,আঙ্কেল কিছু নিয়ে চিন্তিত?
‘কি বলবে রে বাবা, আমার তিনটা ছেলে সব চাকরির জিবি। তোমার আন্টিও নাই সে আমাকে একা রেখে অনেক আগেই চলে গেছে। এখন কোন ছেলের বাসায় আমার ঠাই নাই। এবাসায় গেলে ওরা বলে,আমাদের বাসায় সমস্যা হয়। ও বাসায় গেলে বলে,সব সময় কি এক ছেলের ঘাড়েই বসে খাবেন! আর ছোট ছেলের বউ বলে,আমি একটা পুরুষ মানুষের সাথে একি বাসা শেয়ার করতে পারবোনা।
নিজের ছেলেদের কাছে বোঝা এখন আমি। অথচ আমি দিনরাত কত পরিশ্রম করে এদের মানুষ করেছি। সারাদিন অফিস করতাম রাতে পাইকারি ফলের ব্যাবসা করতাম। নিজে কোনদিন ভালো একটা শার্ট কিনে পরি নাই।অথচ ছেলেদের কোন শখ অপূর্ণ রাখি নাই। এহন মনচায় না কোন ছেলের বাসায় যাই। তিন বেলার দুই বেলা খাই।সেই খাবারও যদি চোখমুখ কালা কইরা দেয়। তহন আর গলা দিয়া নামে না। এই বয়সে কই যামু কি করবো!
‘আঙ্কেল কিছু মনে না করলে আমাদের বাসায় যাবেন? আমার বাবা,মা কেউ নেই। আমরা দুই ভাই আমাদের সাথে থাকবেন?
‘না,বাবা আজকে একলা আছো তাই নিতে চাইছো, কাল যখন বিয়েশাদি করবা, তোমাগো বউদের কষ্ট হয়ে যাবে।দেখি এই ঠেলাঠেলি করতে করতে কয়দিন বাঁচি।ছোট পোলার বউ যেখানে বলে, একটা পুরুষ মানুষের সাথে কিভাবে থাকবে,তারপর আর বেঁচে থাকা না থাকা সমান। আমার ছেলের বউ মানে আমার মেয়ে। বাপেরে কেউ এমন কথা বলতে পারে?
‘আঙ্কেল চলুন আমার সাথে। দেখা যাক কি হয়।
✨ইরহা নাস্তা বানিয়ে,নাওশাবাকে খাবার খাইয়ে,নিজে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো।অফিস ঢুকতেই প্রথমে বিথীর সাথে দেখা। বিথী বলে আজ অফিস হাফ ডে হবে।
‘কেন?
‘আজ স্যারের ওয়াইফের বার্থডে তাই দুপুরের পর ছুটি আর সন্ধ্যা গেটটুগেদারের আয়োজন করেছে। আমি তো সন্ধ্যায় আসতে পারবো না৷ আমার ছোট মেয়ে আছে৷
‘তুমি বিবাহিতা?
‘নাহহ ডিভোর্সি।
‘ওহহহ, বর্তমানে ডিভোর্স এতো বেড়েছে!সে-সব ছাড়ো তোমাকে দেখলে কিন্তু বোঝা যায় না।
‘চলো কাজে মনোযোগ দেই।
ইরহা কাজ করছিলো, এমন সময় সবাই গুড মর্নিং স্যার বলে, দাঁড়িয়ে গেলো। ইরহাও দাঁড়ালো কিন্তু সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। আহনাফ নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে, অবাক দৃষ্টিতে ইরহার দিকে তাকিয়ে আছে। অফিসে নতুন একজন জয়েন হয়েছে সেটার খবর ছিলো কিন্তু সেি একজন যে ইরহা সেটা কল্পনাও করেনি।
আহনাফ দ্রুত নিজের কেবিনে যেয়ে ল্যান্ড লাইনে কল করে, ইরহাকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠালো৷
ইরহা ভেতরে ঢুকতেই আহনাফ বলে,সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না,তুমি আমার অফিসে!
‘যদি জানতাম এটার ওনার আপনি তাহলে হয়তো আসতাম না।
‘এভাবে কেন বলছো! পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ ভিন্ন।এখানে এসব মিক্সড করার দরকার নেই৷
‘আমি জলন্ত অগ্নি শিখাকেও বিশ্বাস করবো তবুও কোন পুরুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আসবে না৷ হ্যা আমি এটাও মানি সব পুরুষ খারাপ না। কিন্তু আবার এটাও জানি যে দু’দিন আগেও বলেছে তোমাকে এখনো ভুলতে পারিনি, তার আশেপাশে থাকতে আমার অস্বস্তি হবে।তাই আগামীকাল পদত্যাগপত্র পেয়ে যাবেন।
‘ইরহা আমি মানছি, এটা আমি এখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি, জীবন হয়তো পারবোও না৷ প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অনুভূতি কখনো ভুলার মত না। কিন্তু তারমানে এটাও না আমি আমার ওয়াইফকে ভালোবাসি না! আমার বাচ্চা আছে সংসার আছে আর আমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট তোমাকে দিতে হবে না। তুমি জানো আমি কেমন?
‘সবটাই জানি, তবে এটাও জানি আমি যেমন মেয়ে হিসেবে কখনো মানতে পারতাম না, আমার হ্যাসবেন্ডের এক্স তার-ই অফিসে জব করে, ঠিক আপনার ওয়াইফও পারবে না এটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে। জানেন তো আমরা মেয়েরা নিজের স্বামীর পাশে মাঝে,মাঝে নিজের ছাঁয়াও সহ্য করতে পারি না৷ তাই আমাকে আটকাবেন না আশাকরি।
ইরহা অফিস শেষ করে বের হলো। তখন দুপুর তিনটা বাজে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য।
হুট করে ইরহার সামনে একটা গাড়ী থামলো, জারিফ গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে ম্যাম কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে হেল্প করতে চাই।
‘আমি কি আপনার কাছে কোনরকম হেল্প চেয়েছি?
‘নিজের মানুষের কাছে চাইতে হয়না৷ চেয়ে তো নিবেন অন্যদের থেকে আমি যেহেতু নিজের মানুষ তাই স্ব-ইচ্ছেতে দিতে চাইছি৷
‘দেখুন আপনার কি মনে হয় আমি কোন ষোল, সতেরো বছরের নিব্বি? আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর তাই এসব কথা বলে,নিজেকে ব্যাক্তিত্ব হীন করবেন না।
‘আহা বিয়াইন সাহেবা আপনার আমার সম্পর্কই মজার সম্পর্ক।আচ্ছা সরি মজা করার জন্য। চলুন এবার আপনার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা আছে৷
‘আপনি সুস্থ কথাও বলতে পারেন?
‘গতকালকের আগে কখনো,অসুস্থ কথা বলেছি এই কথাটা শুনতে হয়নি।
‘ইরহা গাড়ীতে বসলো, পাশের সিটে জারিফ। ড্রাইভার গাড়ী ড্রাইভ করছে।
‘আপনি কি বলতে চাইছিলেন?
‘লাবিবা এতো ছোট, বিয়েটা এখন ঠিক করে রাখি ওর এইচএসসি পর না হয়।
‘হ্যা এটা আমরাও ভেবে রেখেছিলাম।
‘আপনার বেবিটা অনেক কিউট।
‘ধন্যবাদ, কিন্তু আপনি কোন কথার মধ্যে কোন কথা নিয়ে আসছেন!
‘সরি, হুট করে মনে আসলো বেবির কথা, তাই বলে ফেললাম।
#চলবে