#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৪
ইরহা অফিস থেকে বের হয়ে,পাঁচ মিনিট হেঁটে বাসে উঠলো। সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আজকের দিনটা খারাপ কাটেনি৷জীবনের সমীকরণ কখন কোন মোড়ে এসে হুট করে পাল্টে যায় কারো জানা নেই। জীবন যেনো এক প্রহেলিকা।সম্পর্কের সুঁতো কখন টানাটানি চলে আর কখনো ছিড়ে যায় বলা দায়! অদৃশ্য এক সুঁতোয় বাঁধা আমরা সবাই যে সুতোর নাম কারো কাছে মায়া,কারো কাছে ভালোবাসা তো কারো কাছে প্রেম। বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাতের প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে।বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নওশাবাকে কোলে নিয়ে চুমু খেতেই ইরহার চোখ টলমলে হয়ে উঠলো। মেয়েটা সারাদিন মা’কে কাছে পায় না৷ আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে নওশাবাকে।
ফরিদা বেগম বললেন, আগে খাবার খেয়ে নে৷ নানুমনিকে আমার কাছে দে।
নওশাবাকে ফরিদা বেগমের কোলে দিয়ে হাতের উল্টো পিঠে নিজের চোখের জল মুছে নিলো৷
‘মা’রে টিকে থাকতে হলে এতোটুকু লড়াই তো করতে হবেই! জীবন তো আর এতো সোজা না। নদীর মত বাঁকে বাঁকে মোর। তবে সব মোর কাটিয়ে নদী যেমন সাগরের মোহনায় পৌঁছে যায়,ঠিক মানুষ লড়াই করতে, করতে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়৷ শুধু ওই আঁকাবাঁকা মোড়গুলো ধৈর্য ধরে পার করতে হয়।
‘ইরহা খাবার খেয়ে নওশাবাকে নিয়ে লাবিবার কাছে আসলো৷ লাবিবা তখন বসেছিলো আনমনা হয়ে৷
‘কিরে লাবু কি ভাবছিস?
‘আমি কিভাবে এতো বড় ভুল করলাম আপু! আমাকে তোমরা ক্ষমা করবা তো?
‘বাদ দে আর শোন ওই রাতুলের নাম্বার দে। আমি কল করে কথা বলি।
‘কিছু বলতে হবে না আপু। যা হচ্ছে হোক সবাই সবার মত ভালো থাকুক।
‘লাবু তুই কি আমার প্রতি রেগে আছিস?
‘তুমি বোন হিসেবে আমাকে পরামর্শ দিয়েছো যেটা তোমার দ্বায়িত্ব।
‘শোন জীবনের তিক্ত অতীত আমাকে সব কিছুতে তিক্ততা দেখায়। তবে রাতুলের সাথে দেখা করবো আমি।
ফরিদা বেগম বলে, এসেছিলো আজ দুই ভাই। তোর ভাইয়ার সাথে কথা বলে গেছে।
‘লাবিবা বলে এসেছিল দু’ভাই মানে?
‘হুম রাতুল আর জারিফ।
‘জারিফ মানে ওই অসভ্য লোকটা?
‘অসভ্য কেন বলছিস ছেলে দুটো’ অনেক ভালো।সেদিন না বুঝে ছেলেটার সাথে ওসব করা ঠিক হয়নি।
‘না বুঝে মানে?
‘ফরিদা বেগম সবটা ইরহাকে বললো।
‘ইরহা বলে ইশশ বেচারা। তারই তো দোষ বলে,আপনার বেবি সহ মেনে নিতে ও সমস্যা নেই।
‘লাবিবা হেসে বলে,বেশ তো ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যা। বেচারা বিয়ে করে নাই। তার মনের মত মানুষ ই নাকি খুঁজে পায় না৷ একটা মেয়েকে একবার হসপিটালে পছন্দ হয়েছিলো। তবে তাকে আর খুঁজে পায়নি।
‘দেখছো আম্মু তোমার বাচ্চা মেয়ের এখনি কত দরদ শ্বশুর বাড়ির জন্য। এরে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দাও।
‘লাবিবা লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলো।
‘ওরেহহহ আমার পিচ্চি বোন লজ্জা পেতেও শিখে গেছে। দাঁড়া ভাইকে বলে বিদায় করার ব্যাবস্থা করছি।
সবাই চলে যেতেই লাবিবা নিজের মোবাইল অন করলো। অন করার সাথে সাথে মেসেজ আর মেসেজ। লাবিবা হেসে দিয়ে বলে, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়া। আরো জ্বলো বাবু। তোমাকে তো আরো একটু জ্বলতেই হবে রাতুল বাবু৷
‘ইরহা নওশাবাকে ঘুম পারিয়ে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় আসলো। জারিফের নাম্বার কল করে মনে, মনে কথা সাজাচ্ছে।
‘জারিফ অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলো। মোবাইলের রিংটোনের শব্দে কাজের মনোযোগ বিছিন্ন হয়। ভ্রু কুঁচকে মোবাইল নিয়ে দেখে লাবিবা দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে ফোন। ফোন কেটে দিয়ে সাথে সাথে কল ব্যাক করে বলে,কি অবস্থা পিচ্চি?
‘আমি পিচ্চির বড় বোন।
‘মানে?
‘আচ্ছা আপনি জানেন লাবু কোন ক্লাসে পড়ে?
‘রাতুলের সাথেই পড়ে।
‘উহু সামনে এইচএসসি দেবে।
‘কিহহহহ এতোটুকু বাচ্চা মেয়ের আবার বাবু আছে!
‘নাহহ জনাব মাথা মোটা মাহশয়। এই নাম্বারটা কার?
‘লাবিবার।
‘কে বলেছে এটা লাবিবার নাম্বার! এটা লাবিবার বোন ইরহার নাম্বার৷
‘তারমানে বাচ্চা, ডিভোর্স সব আপনার?
‘হ্যা। সরি বলবো না কারণ ভুলটা আপনার। আপনার জন্য আপনার সাথে এসব হয়েছে।
‘আপনাকে সরি বলতে হবে না আপনার জন্য সাত খু’ন মাফ।
‘আরেকদিন দেখা করতে পারি আমরা।
‘আমার নাম্বার আপনাকে কে দিলো?
‘সব উপর থেকর ঠিক করা না হলে আপনার নাম্বার আমার কাছে কিভাবে?
‘আপনি মাথার ডাক্তার দেখান দ্রুত আপনার মাথায় সমস্যা আছে৷ লাবুর নাম্বার লাস্টে সিক্স আমার নাইন। বাকি সব সেম।
‘বাদ দেন সেসব আগে বলেন, দেখা করছেন কবে? কত কথা বলার আছে, না বলা কথাগুলো বলতে চাই৷।
‘আজাইরা আলাপ আমার সাথে করবেন না৷
‘ইশশ কি যে বলেন আপনার সাথে করবো প্রেমের আলাপ কোন আজাইরা আলাপ না।
‘আপনি তো ভারী অসভ্য।
‘হ্যা তা ঠিক বলেছেন আমার ওজন ৭০কেজি ভারী অসভ্য-ই আমি।
‘দ্রুত মাথার ডাক্তার দেখান নয়তো আমার বোনকে আপনাদের বাসায় বৌ করে পাঠাবো না।কোন পাগল ফ্যামেলিতে আমার বোন দিবো না।
‘আপনি এসে পরলেই হবে ডাক্তার লাগবে না৷ ওই যে গান আছে না৷বলতেই ইরহা কল কেটে দিলো৷
জারিফ দূর গানটাই শুনলো না। Mareez-e-Ishq hoon main kar dawaa..
Haath rakh de tu dilpe zara.
রাতুল স্টাডি রুম ক্রস করার সময় জারিফের গান শুনে বলে ভাইয়া তুমি গান গাইছো! তারমানে কি সামথিং সামথিং?
‘এতো সহজ না। তবে এ বছরের মধ্যে বিয়ে করেই ফেলবো। চল আজ তুই আর আমি একটা ঝাকানাকা গানে নাচবো।
‘হুট করে তোমার কি হলো বলো তো?
‘রঙ লেগেছে মনে তাই কুকিল ডাকে বনে।
✨ ইরহা ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, সিরিয়াসলি লোকটার মাথায় সমস্যা আছে৷ ধুর গেলাম ভালো কথা বলতে মুডটাই নষ্ট করে দিলো৷ কি বলে ভারী অসভ্য কারন তার ওজন সত্তুর কেজি। বলেই অট্টহাসি দিলো।
✨ শেফালী বেগম রুবিকে বলে, আমার মনটা যেন কেমন করছে রুবি! আমার ছেলেটার কোন বিপদ হবে না তো?
‘জানিনা আমার ও মন বলছে ভাইয়ার সামনে বড় কোন বিপদ আছে। কেন যে নিজের হাতে নিজের গোছানো জীবনটা নষ্ট করলো। ইরহা ভাবির মত একটা মেয়ে পেয়েও কি করো তাকে ছেড়ে লামার মত একটা নোংরা মেয়ের পাল্লায় পরলো!
‘কিছু মেয়ে আছে তাদের পাল্লায় পরতে হয়না, বরং তারা নিজেদের রুপ যৌবন দেখিয়ে প্রলোভিত করে ছেলেদের। ছেলে জাত এসবের প্রতি দূর্বল। সবাই তো নিজের দূর্বলতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না৷ কেউ, কেউ আটকে পরে। আমার ছেলেটাও আটকে পরেছে?
‘মা দোষ শুধু মেয়েটার না। তোমার ছেলেরও। সে কি বাচ্চা? যে প্রলোভন দেখিয়েছে বলে, প্রলোভিত হতে হবে!তোমার জামাই সহ আরো হাজার হাজার পুরুষ বাহিরে মেয়েদের সাথে কাজ করে কই তারা তো এন
এসব করে না। দূর্বলতা তাদের নেই? আসলে সব হলো চরিত্রের দোষ। চরিত্র ভালো হলে সে সব জায়গা ফিট,আর চরিত্র খারাপ হলে সে নর্দমার কিট। জানিনা আবার কোন অপরাধ সে করে।
‘একটা কল কর, বল এখানে চলে আসতে। ওরে বল একটু ভালো পথে আসতে৷
‘বললেও সে শুনবে না। তবুও বলে দেখছি।
✨
দীর্ঘ আট ঘন্টার জার্নি শেষে কক্সবাজার এসে পৌঁছেছে রবিন আর লামা। হোটেল রুমে এসে দু’জনেই ফ্রেশ হয়ে রুমেই খাবার দিতে বললো। রবিন নিজেই লামার পছন্দের সব খাবার অর্ডার করলো।
‘লামা বলে,তোমাকে বুঝতে আমার দেরি হয়ে গেছে জান৷ তুমি যে আমাকে এতো ভালোবাসো বুঝতে পারলে!
‘বুঝতে পারলে কি হতো?
‘তাহলে কি আর জেলে পাঠাতাম! দোষটা কিন্তু তোমারও, তুমি ওই ইরহার জন্য পাগলামি করেছো৷ তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম৷ কি আছে ওর যা আমার নেই! বরং আমি ওর চেয়ে বেশী গ্ল্যামার।
‘রবিন রাগী কন্ঠে বলে চুপ একদম চুপ একটাও কথা বলবে না।
‘তুমি রেগে গেলে কেনো? তারমানে এখনো ওই ইরহার প্রতি তোমার আকর্ষণ রয়েছে?
রবিন লামার মুখ চেপে ধরে বলে একদম চুপ থাক তোর মুখ দিয়ে ওই নাম বের করবি না।
#চলবে