কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ১৮

0
277

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৮

জারিফ বাসায় এসে সোফায় গা এলিয়ে দিলো৷ চোখ দু’টো বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো পুরোনো কিছু স্মৃতি………. হসপিটালের বেডে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে রোকেয়া বেগম ( জারিফের মা)ব্লাড প্রয়োজন ছয় ব্যাগ কিন্তু দুই ব্যাগ ব্লাড পাওয়া যায়নি৷
ঠিক সে সময় একটা মেয়ে ডাক্তারকে এসে বললো,আমি যদি এক ব্যাগ ব্লাড ডোনেট করি তাহলে কি পেশেন্টের অপারেশন করতে পারবেন?
‘হুম তাহলে রিক্স নেয়া যেতে পারে। তবে আপনার হেল্থ কন্ডিশন তো ভালো না ম্যাম।
‘ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। দুই চারদিন পরে সেরে যাবে। তবে যার আজ এই মূহুর্তে রক্তের প্রয়োজন সে হয়তো রক্ত না পেলে আগামী দিনের সূর্যদয় দেখতে পারবে না। প্লিজ আর মানা করবেননা। অনেক সময় ধরে খেয়াল করছি রক্তের জন্য সবাই ছোটাছুটি করছে৷
‘জারিফ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছিলো, এই স্বার্থের দুনিয়ায় নিঃস্বার্থ একজান মানবী। যে নিজের কথা না ভেবে অপরিচিত একজন মানুষের কল্যানে এগিয়ে এসেছে। সে একটা সন্তান সহ হাঁটুর বয়সি ছেলের সাথে রিলেশন করবে? জারিফ মনে, মনে স্থীর করলো, যদি এটা হয়েই থাকে তাহলে আমি এই মেয়ের সাথেই রাতুলের বিয়ে দিবো।এমন মেয়ে তো সহজে পাওয়া যায় না৷
জারিফ আর রাতুলের আপন বলতে এই দু’ই ভাই তাদের বাবা,মা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর পর থেকে দুইভাই একে অপরের সুখ দুঃখের সঙ্গী।

রাতুল বাসায় এসে জারিফকে এভাবে দেখে বলে,ভাইয়া কি হলো তোমার? সকালে এতো হ্যান্ডসাম হয়ে বের হলে,আর এখন একদম মনমরা কাহিনি কি?
‘কিছু না একটু টায়ার্ড। আচ্ছা লাবিবার বাসার এড্রেস দে তো।
‘কি করবে?
‘তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো। মেয়েকে আমি আগে থেকেই চিনি অনেক ভালো একটা মেয়ে।
‘হুম আমি জানি কিন্তু তোমার বিয়ে না দিয়ে তো আমি বিয়ে করছি না!
‘আচ্ছা রাতুল তোদের প্রেমটা কিভাবে হলো?না মানে লাবিবাকে মেনে নিতে তোর কোন সমস্যা নেই তো?
‘আমি লাবিবাকে ভালোবাসি ওকে মেনে নিতে আমার কোন সমস্যা নেই। তুমি মেনে নিলেই হয়৷
‘আমার মানা না মানার কি আছে!সংসার করবি তুই তোর যখন আপত্তি নেই আমারও নেই।শুধু পাড়া প্রতিবেশীদের কটু কথা সহ্য করতে হবে?
‘তুমি সেসব চিন্তা করোনা। সবাই বাহবা দেবে উল্টো বলবে এমন মেয়ে আমি কই পেলাম?

জারিফ উঠে রুমে চলে আসলো, ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,যাকে খুঁজে বছরের পর বছর পাড় করলাম সে এখন এক বাচ্চার মা!আবার কয়েকদিন পরে আমার ছোট ভাইয়ের বউ! এটা কি পসিবল? নাকি আমার কোন ভ্রম?

রাতুল বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে লাবিবার আবেগঘন পোস্ট দেখে বলে,হায় আমার নিব্বি প্রেমিকার খুব জ্বলছে। লাবিবার পোস্ট……

“ভালোবাসলে তাকে যে পেতেই হবে এমন তো নয়!
সে থাক না তার মতো।
নাই বা খুঁজলো আমার ভালোবাসার ছন্দ
নাই বা হলো আমার মন খারাপের সাথী
তবে মন খারপে তার কথা ভেবেই আমার মুখে ফুটে ওঠে হাসি…
সে নাই-বা জানলো আমার অভিমানের কারন
তবে তার জন্য আমার কি অভিমান করাও বারণ?
আমার অনূভুতি না হয় অপ্রকাশিতই থাক!
তার না হয় অজানাই থাক,
আড়ালে আবডালে তাকে কেউ এক সমুদ্র ভালোবাসে।
তার আড়ালে লুকিয়ে তার চেয়েও তার কথা বেশি ভাবছে।
প্রকাশ করলেই না অবহেলা বারে…
তার চেয়ে অপ্রকাশিত ভালোবাসাটা অপ্রকাশিত থাক।
আমার গল্প সে হলেও
সে না হয় অন্য কাউকে গল্প বানাক।
তাকে ছুয়ে দেখা না হোক।
হৃদের গভীরে ধারন করে অনুভব করা হোক
ছুঁয়ে দেখতে তো অনেকই পারে
অনুভব তো আর সবাই করতে পারে না।
এতো অপ্রাপ্তির ভীরে সে একান্ত আমার অপ্রকাশিত ভালোবাসা হয়ে থাক।
নাই বা দিলো সে আমায় তার সুখ, দুঃখের ভাগ!!

রাতুল কমেন্ট করলো রুপা আইডি দিয়ে, আপু দুনিয়া আপডেট হয়ে গেছে, এখন কেউ কারো দুঃখের ভাগ এমনিতেও নেয়না। এসব আবেগ এখন সস্তা খুচরা মূল্যে বিক্রি হয়।
রাতুল মনে, মনে বলে,তুমি পুড়বে আমি তোমাকে পোড়াবো! যে দহনে জ্বলছি সে দহনে তোমাকেও জ্বালাবো সুইটহার্ট।


আজকের ঘটনা ইরহাকে বেশ আঘাত করেছে। কি করবে এই কথাটি তার ভাইকে বলবে?নাকি বাড়তি অশান্তি আর পেরেশানিতে ফেলার দরকার নেই কাউকে।
মলিন মুখে বাসায় ঢুকে আগেই ফ্রেশ হয়ে নওশাবাকে কোলে তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আদর করে দিলো।
কথায় আছে মায়েরা সন্তানের মুখ দেখে বলতে পারে,তার সন্তান কেমন আছে? ফরিদা বেগম আরহার কাছে এসে বলে,কিরে মা তোর কি মনটা কোন কারণে খারাপ?মুখটা কেমন শুকনো লাগছে।
‘খুব খিদে পেয়েছে মা’ খেতে দাও।এরজন্যই মুখ শুকনো দেখাচ্ছে।
‘এতো বড় কবে হলি ইরহা? নিজের মায়ের কাছেই দুঃখ লুকাতে শিখে গেছিস!
‘নিজের কষ্টটা আর লুকাতে পারলোনা। এতো ক্ষণের আটকে রাখা অশ্রুগুলো অঝোর ধারায় ঝড়ে পরতে লাগলো।
ফরিদা বেগম ইরহার মাথায় হাত রেখে বলে,কি হয়েছে আমাকে বল মা’
‘ইরহা সবটা বললো ফরিদা বেগমকে। ফরিদা বেগম নিজের আঁচল দিয়ে মেয়ের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,থানায় জিডি করে রাখবো ওর নামে, এতো বড় সাহস আমার মেয়েকে রাস্তায় অপমান করার চেষ্টা করে!নাদিম আসুক আজ বাসায়। আর তুই আরো স্ট্রং হ।নরম মানুষকে সবাই আঘাত বেশি করে,তুই নরম না তুই হলি ইট।কোথায় জেনো পড়েছিলাম, আমি মাটি ছিলাম তোমারা আমাকে পুড়িয়ে, পুড়িয়ে ইট বানিয়েছো, এখন আমাকে ভাঙ্গা এতো সহজ না!!
কেউ ভাঙ্গতে আসলেও তার শক্তি ব্যায় করতে হবে। তাই নিজেকে আরো শক্ত কর।
‘মা একটা সুখবর ও আছে, আমার চাকরি হয়ে গেছে পরশু দিন থেকে জয়েনিং।
‘যাক আলহামদুলিল্লাহ একটা কিছু তো ভালো হলো। এখন আস্তে আস্তে সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।
মা মেয়ের কথার মাঝেই লাবিবা এসে বলে,ভাইয়া কল করেছিল, বলেছে আজকে ভাবির বাসায় যাবে তাই টেনশন করতে না।
‘তোর মোবাইলে কেন কল দিলো?
‘তোমাকেই নাকি দিয়েছিলো তুমি রিসিভ করছো না তাই আমাকে দিলো।

ইরহা বললো তাহলে আজ একসাথে খাবার খেয়ে সবাই একসাথে ঘুমাবো। সবাই মিলে আগের মত রাত জেগে আড্ডা ও দেবো।

✨রবিন নিজের অফিসে এসেছে প্রায় সপ্তাহ খানিক পর। এতোদিনে ব্যাবসার অবস্থা শোচনীয়। অফিসের স্টাফদের সাথে রাগারাগি করে বাসায় ফিরে আসলো। বাসায় এসে চিৎকার করে লামা কে ডাকতে লাগলো।
শেফালী বেগম নিজের রুম থেকে বের হয়ে বলে,লামা তো বাসায় নেই?তোর কোন বন্ধুর বার্থডেতে গিয়েছে। তোকে কিছু বলেনি?
‘রবিন আর কোন কথারে উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে আসলো। বেডে বসে মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। কি ভাববে নিজের গাতে নিজের সুন্দর সংসারকে শেষ করে দিয়েছে। এখন হয়তো নিজেকে শেষ করতে হবে! আর নয়তো অন্য কাউকে।


সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বরাবরের মতই ছাদে যেয়ো গাছ গুলোতে পানি দিলো। কিছুক্ষণ সকালের স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ করে নিচে চলে আসলো, কিচেনে যেয়ে চা করে এনে বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক বসালো। চুমুক দিতেই মনে পরলো ও বাড়িতে সকালের ব্যাস্ততা। জীবন কত অদ্ভুত সাজানো সংসার মূহুর্তে তছনছ হয়ে গেলো। অতি আপন মানুষটা কেমন পর হয়ে গেলো!একটা মেয়ে খুব যত্ন নিয়ে নিজের সংসার সাজায়। তিন বছরে একটু একটু করে সাজানো সংসার একটা সাইনে শেষ করে এসেছে।মেয়ারা নিজেদের সংসারকে খুব ভালোবাসে নিজেকে সারাদিন ক্ষয় করে সংসার গুছিয়ে নেয়। আজ সেই সংসার আন্য কারো। চাইলেই কি সে মায়া ত্যাগ করা যায়?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here