কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ১৭

0
245

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৭

ইরহা রিকশা নিলো বাসার উদ্দেশ্যে, এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠলো। ইরহা রিসিভ করতেই একজন বলল,ম্যাম আপনাকে মেইল পাঠানো হয়েছে আপনি কনফার্ম করুন।
‘ইরহা বলে, কিসের মেইল?
‘ম্যাম জব কনফার্ম লেটার।
ইরাহা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। অবশেষে জব পেলো!

রিকশা করে বেশ কিছু দূর আসার পরে কেউ রিকশা আটকে দাঁড়ালো।
রিকশাওয়ালা মামা বলল,সাহেব রাস্তা ছাইড়া দেন৷
‘ছাড়ার জন্য তো আটকাইনি।
‘সব কিছুর একটা লিমিট থাকে মিস্টার রবিন। আপনি আপনার লিমিট ক্রস করছেন।
‘কি যে বলো না বেবি তোমার সাথে আমার আর কোন লিমিট আছে নাকি৷ তুমি মানেই সবকিছু আনলিমিটেড।
‘ভদ্রতা বজায় রাখুন এটা পাবলিক প্লেস ভুলে যাবেননা।
‘তোমাকে দেখলে আর কিছু মনে থাকে না।
‘রাস্তা ঘাটে কোন ভদ্র মানুষ অসভ্যতা করে না। দয়া করে রাস্তা ছাড়ুন।
‘ইতিমধ্যে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।
রবিন জোড়ে জোড়ে বলে, তুই পরকীয়া থেকে বের হয়ে আমার সংসারে ফিরে আয়। আমি সব ভুলে তোকে আপন করে নেবো। নিজের কথা না ভাব আমাদের মেয়েটার কথা ভেবে অনন্ত আমার কাছে ফিরে আয়।
‘ইরহার চোখে অশ্রু টলমল করছে, কিভাবে সে বের হবে এি বিপদ থেকে। কি করবে সে? চোখ বন্ধ করে জোড়ো নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে বলে,এসব নাটক করে কোন লাভ নেই। আমি এক্ষুনি পুলিশে খবর দিচ্ছি।
‘দেখেন ভাই আপনারাই দেখেন, কোন ছেলের সাথে মিট করে আসছে। আমার সুখের সংসার নষ্ট করে।
ইরহা রিকশা থেকে নেমে ঠাসসসস৷ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। চিৎকার করে বলে,তোর মত পুরুষ মানুস মনে করে, মেয়েরাতো অসহায় যা ইচ্ছে করা যায় তাদের সাথে । আর আপনার কি বলছিলেন এখনকার মেয়েদের একটা দিয়ে হয় না। তা এখনকার পুরুষের হয়?এই যে মানুষটা সে এক সময় আমার হাসবেন্ড ছিলো, কিন্তু আমাকে রেখে দিনের পর দিন অন্য নারীতে মজে ছিলো। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়েও করেছিল,তবে অসুখী তাই আবার আমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।ইরহা রিকশা ভাড়া দিয়ে উল্টো পথে হাটা শুরু করলো। ইরহা চলে যেতেই সবাই রবিন কে ঘিরে ধরলো। ইরহা আর পিছু ফিরলো না। বেশ খানিকটা পথ হেঁটে আসার পর একজন নিজের প্রাইভেট কারের লুকিং গ্লাসে ইরহাকে পর্যপেক্ষণ করে। গাড়ী থামিয়ে দরজা খুলে দিলো। এই মূহুর্তে ইরহা কোন রকম বাকবিতন্ডা না করে উঠে বসলো।
লোকটা ইরহার দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দিলো।
ইরহা টিস্যু নিয়ে নিজের চোখের অশ্রু আর মুখটা মুছে নিয়ে বলে,আপনি এই রাস্তায়?
‘আমি রুপায়ন থাকি তাই এই রাস্তা ধরেই যাতায়াত। তুমি এখানে কেন এসেছিল?
‘একটা কাছে এসেছিলাম। বুঝতে পারিনি এমন কিছুর সম্মুখীন হবো৷
‘আমাকে বলতে কি সমস্যা? সবটা আমাকে খুলে বলো, আমদের ভালোবাসার সম্পর্ক না হয় শেষ তাই বলে কি আমরা ভালো ফ্রেন্ড হতে পারি না?
‘একটা সময় পর আর কিছুই সম্ভব না। আপনার প্রেজেন্ট ওয়াইফ যখন জানবে আপনার এক্স আপনার বর্তমান ফ্রেন্ড তাও সে ডিভোর্সি! তাহলে সেটা ভালো দৃষ্টিতে দেখবে না।
‘আমার ওয়াইফের ভালো খারাপ নিয়ে তোমার এতো চিন্তা? কখন আমার জন্য এর বিন্দু মাত্র চিন্তা করেছো?
‘দেখুন আপনার এমন কথার উত্তর দেয়ার মত মুড আর সময় কোনটাই নেই। দয়া করে আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন।
‘তুমি আমাকে এতোটা পর করে দিলে! অথচ শেষ বার আমাদের কথা হয়েছিল আমরা সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকবো। জীবনসঙ্গী হয়ে না হোক শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে।
‘আপনি আপনার জীবনে সফল। তাই আমার মত শুভাকাঙ্ক্ষী আপনার প্রয়োজন নেই। আর আমি হলাম হতভাগা তাই কারো সুন্দর জীবন কলুষিত করতে পারবোনা।
‘তুমি নিজেকে এতো আন লাকি কেন ভাবছো? একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। যে তোমাকে হারিয়েছে সে আন লাকি৷ সে বুঝতে পারছে সে কি হারিয়েছে। তাই পাগলামি করছে। আমরা তো থাকতে মূল্য বুঝিনা৷ হারিয়ে গেলে বুঝি। হারানো জিনিস তো ফিরে আসে না,তখন আক্ষেপ ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকে না৷
‘আপনার জ্ঞান দেয়া শেষ নাকি আরো বাকি আছে?
‘সরি বেশি বলে ফেললাম। কিন্তু ইরহা তুমি তো এমন ছিলো না।
‘গাড়ী থামান আমি নামবো।
‘এই তো কাছাকাছি চলে এসেছি, তোমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেই।
‘আমি এখানেই নামবো।গাড়ী থেকে নামার আগে ইরহা বললো,জীবনে সব সময় অসহায় নারীদের থেকে দূরে থাকবেন। আপনার বউ, বাচ্চা নিয়ে ভালো থাকবেন৷ ভুলে যান ইরহা নামের কেউ পৃথিবীতে আছে৷
‘আহনাফ ইরহাকে নামিয়ে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার ইরহা তো ছিলো খুব নাজুক একদম কোমল। সেই ইরহা এতো কঠোরতা আর কঠিন কথা কিভাবে শিখলো! সময়ের আঘাত কি তবে, মানুষকে এভাবেই পাল্টে দেয়?আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, ভালোবাসবো। পরিবার আর নিজের প্রয়োজনে বিয়ে করেছি তবে মনের মিল নেই। সম্ভব না মনের মিল হওয়া। ভালোবাসা বোধহয় ভুলে যাওয়ার যে সহজ।যত সহজে ভালোবাসা যায়, তত সহজে ভোলা যায় না৷ অথচ ভুলে যেতে পারলেই আমরা সুখী হতাম।

ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে লাবিবা। অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
অটোর জন্য আশেপাশে থাকাতেই চোখ পরলো রাতুলের দিকে। রাতুল একটা মেয়ে হাতে হাত রেখে এদিকেই আসছে।
রাতুলের হাত অন্য আরেকজনের হাতে আবদ্ধ দেখে লাবুর হৃদয় কেমন করে উঠলো।দৃশ্যটা যেনো হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করে দিলো। সাথে মস্তিষ্কে জুড়ে দিলো কতশত প্রশ্ন। লাবিবার পাশে এসেই দাঁড়ালো রাতুল।
‘লাবিবা আর একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।
রাতুলের পাশে থাকা মেয়েটা বলছে, বাবু বল তো আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে নাকি এই মেয়েটাকে?
‘রাতুল ফিসফিস করে বলে,বর্না বেশি হয়ে যাচ্ছে।ওভার এক্টিং করার দরকার নেই।
লাবিবা অটোতো উঠো বসলো, রাতুল আর মেয়েটাও বসো। মুখোমুখি বসে আছে দু’জনে। মেয়েটার হাত এখনো রাতুলের হাতে। লাবিবা নিজের ফোন বের করলো রাতুলকে শুধু মেসেঞ্জারে ব্লক দিয়ে পোস্ট করলো……….. “শুনো তোমার প্রেমে পরার আগে আমি তোমার ব্যাক্তিত্বে মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ তোমার চেহারা খারাপ হলে আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি কমবে না। কিন্তু যদি ব্যাক্তিত্ব খারাপ হয়ে যায়! তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা মরে যাবে।আর জানোই তো, মৃত জিনিস আর ফেরত আসে না৷।

পোস্ট করে নিজের মোবাইল আবার ব্যাগে রেখে দিলো। রাতুল নিজের ফোন বের করলো,ফেবুতে ঢুকে পোস্ট-টা দেখে মনে মনে একটু আনন্দিত হলো, রাতুল পোস্ট করলো……. যে অকারণে ছেড়ে যায় , সে অকারণেই ভুল বোঝে হাতে, হাত রাখলেই কেউ চরিত্রহীন হয়ে যায় না। কিছু জিনিস দূর থেকে খালি চোখে দৃষ্টি কটু মনে হলেও সামনে তা স্বচ্ছ জলের মত পবিত্র হতে পারে?
লাবিবা ভাড়া মিটিয়ে নেবে যায়।
রাতুল বলে,বর্না আমার মনে হয় কেউ জ্বলছে ভেতরে, ভেতরে।
‘এবার আমাকে ট্রিট দে।
‘সর তোকে কিসের ট্রিট দেবো! বোন হয়ে ভাইয়ের প্রেম বাঁচাতে এতোটুকু করতেই পারিস।
‘ভালোয় ভালোয় ট্রিট দে, নয়তো,ভাবিকে কল করে সবটা বলে দেবো।
‘দেবো তোকে ট্রিট তার আগে ভাইয়ার জন্য একটা মেয়ে খুঁজে দে। সে বিয়ে না করলে আমার বিয়ে বন্ধ।
‘রিন্তি আপুকে দেখতে পারিস।
‘ঠিক বলেছিস আজকেই ভাইয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো৷
‘এবার আমাকে ডাবল ট্রিট দে।
‘চল ট্রিটের নিচে তোকে চাপা দিয়ে রাখবো।

নিশাতের মনটা ভিষন খারাপ হয়ে গেলো,নিজের বাসায় আজ তার পরিচয় মেহমান! এই কথাটা তাকে আঘাত করেছে খুব করে। নিজের ফোন বের করে নাদিমকে কল করলো।
‘নিশাতের কল দেখে সাথে, সাথে কেটে কল ব্যাক করলো।
‘রিসিভ করে নিশাত ভারি কন্ঠে বলে,কতদিন এ বাসায় ফেলে রাখবে আমাকে? এখনো নিতে আসো না কেন?
‘এই তোমার কি হয়েছে বলো তো? সবে তো চারদিন হলো তুমি না বললে সপ্তাহ খানেক থাকবে।
‘আমি থাকতে চাইলেও তুমি কেন থাকতে দেবে!তুমি বলবা নিশাত তুমি ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো এতোদিন। রাতে একাএকা ঘুম আসে না। তাড়াতাড়ি চলে এসে মিষ্টি বউ।
‘আজকে আমার বউটার মন খারাপ কেন? তার এই ভারি, ভারি কথার কারন কি? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?
‘কে কি বলবে!তুমি কি আমাকে মিস করো না?
‘কেন সিস করবো না! অনেককক মিস করি। তোমার রাগারাগি, তোমার দুষ্ট ভালোবাসা, অভিমান সব মিস করি।
‘তাহলে আজই এসে আমাকে নিয়ে যাও। আমি আর থাকবো না তোমাকে ছাড়া।
‘আচ্ছা অফিস আটটায় শেষ হবে। সোজা তোমাকে নিতে আসবো। এবার একটু হাসো।
‘তুমি আসো তবেই হাসবো।কথা শেষ হওয়ার আগেই রুপা এসে বলে,ফুপ্পি, ফুপ্পি বাবা তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছে দেখবে চলো।
‘আচ্ছা রাখি সাবধানে এসো।
নাদিম আর কিছু বলতে পারলো না। তবে ভাবতে লাগলো, কারন নিশাতের কথাগুলো কেমন দুঃখী, দুঃখী শোনালো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here