#কোনো_এক_শ্রাবণে
পর্ব-৫
– শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)
নতুন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছে ঋতু। বেশি না একটা রিসিপশনিষ্টের পোষ্ট। যদিও তার কোয়ালিফিকেশন অনুযায়ী এ চাকরি কিছুই না।তবুও বর্তমানে ঠেকার কাজ সারতে আসা। আগের চাকরিতে বহাল থেকেই এখানে আসা।এই অফিসটা কাছে আর মালিবাগে। এই সময়ে বাড্ডায় গিয়ে বাসে আসা যাওয়া করে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব না।
কিন্তু এই অবস্থায় চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি কেননা বাচ্চা হবার পর ম্যাটারনিটি লিভ থাকবে তখনের জন্য সমস্যা হয়ে যাবে।দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে! গতকাল রাতের ঘটনার পর ঋতু সিটিয়ে গিয়েছে।তার স্বামী নামক মানুষটার অত্যাচার আর কতদিন সহ্য করতে হবে জানা নেই তার।
ঋতু ইন্টারভিউ দিয়ে বের হয়েই বুঝতে পারলো তার জন্য এই চাকরিটা না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। একদিনের ছুটি নিয়েছিলো অফিস থেকে এখন চাকরির ইন্টারভিউ এর জন্যই। ভাবলো মন খারাপ করে থাকার চেয়ে ভালো রিক্সায় ঘুরে বেড়ানো। হেঁটে হেঁটে মোড়ে এসে একটা রিক্সা নিলো সে ধানমন্ডি যাবে। রওনা হলো সেদিকে।
সারাদিন নিজের মতো ঘুরে বাসায় গেলো ঋতু গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গেটের দিকে।গাড়িটা তার চেনা।বুকটা ধ্বক করে উঠলো।সিড়ি দিয়ে উপরে গিয়ে দেখলো বিছানার এক কোণায় তার শাশুড়ি বসে আছে আর সামনে চেয়ারটায় সেদিনের লোকটা।
-আপনি এখানে কি করছেন?
নাফি হেসে তাকালো ঋতুর দিকে।
– তেমন কিছুই না খালাম্মার সাথে গল্প করছিলাম।
– আপনি এখন আসতে পারেন।
– জ্বি।
নাফি উঠে চলে গেলো।নাফি যেতেই ঋতুর শাশুড়ি বলল -ছ্যারাটা আইজকাও আইসা রাস্তার ওপারে দাড়ায় ছিলো। আমিই উপরে আইতে কইছি।
– কেন মা? শুধু শুধু কেন ডাকছেন? আপনে জানেন না যদি উনি জানতে পারে তাহলে কি কাহিনীটা করবে?
– শোন তুই বস তোর সাথে কয়েকটা কথা কমু।
– আমারে আগে খাইতে দেন আমার অনেক ক্ষুদা লাগছে।
ঋতুর পাতে পটলের তরকারি তুলে দিতে দিতে তার শাশুড়ি বলতে লাগলেন – আজকের চাকরির কি হইলো?
দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঋতু।
মনে হয় হবেনা মা।
– এখন তাইলে কি করবি?
– দেখি।
——————————–
সময় সময়ের মত পেরিয়ে যায়।বর্ষা যায় শীত আসে আর জীবন তার নিজ গতিতে এগোয়।কখনো কখনো মানুষ ভাবতেও পারেনা তার জন্য কি অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে।তবুও মানুষ বাঁচে। নতুন স্বপ্ন দেখে।সুসময়ের অপেক্ষা করে।ভালোবাসার অপেক্ষা করে। কেও পায় কেওবা হারায়।তাতে কার কি এসে যায়? যায় বুঝি!
ওয়াশিংটনের একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে মাহাপারা।তার এম এ শেষ এখানে।তিন বছর হয়ে গিয়েছে দেশ ছেড়ে এসেছে। আবার সময় এসেছে দেশে ফেরার।তার মাতৃভূমি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আর মাত্র ১৫ দিন রয়ে গিয়েছে তার বাড়ি ফেরার। আজ একটি বিশেষ কাজেই তার এখানে আসা।
সামনের চেয়ারটায় স্মরণ এসে বসলো।
-কেমন আছো মাহাপারা?
-ভালো স্মরণ ভাই।
-দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া শেষ?
-প্রায় শেষ। আমাকে হঠাৎ এত জরুরী তলব?
-একচুয়ালি আপনার আম্মার দেয়া কিছু জিনিস আমার কাছে রয়ে গিয়েছে।সেগুলো দিয়ে দিতেই আপনাকে ডাকা
– কেনো দিতে চাচ্ছো তোমার কাছেই রাখো না। আর তাছাড়া সব তো তুমি বাসায় গিয়েও দিতে পারতে।
মাহাপারা মৃদু হাসলো –
আপনার স্ত্রী তা পছন্দ করতেন না। আর ধন্যবাদ বাসায় না জানানোর জন্য যে আমি আপনাদের সাথে থাকিনা গত ২ মাস যাবত।
ধন্যবাদ স্মরণ ভাই। আপনি,ছোট খালা দুজনেই অনেক করেছেন আমার জন্য।
– মাহাপারা প্লিজ তুমি এইরিনার কথায় কিছু মনে করোনা।
– আমি কিছু মনে করিনি স্মরণ ভাই।এই গুলো রাখুন প্লিজ। আমার তাড়া আছে।
স্মরণের হাতে একটা ব্যাগ দিলো মাহাপারা।
-এতে আপনার আম্মার দেয়া হীরের আংটি আর সিলভারে রুবি বসানো গহনার সেটটা আছে। আর বালা জোড়া তো আপনার স্ত্রী কে আগেই দিয়ে এসেছি।
স্মরণ হুম বলতেই মাহাপারা উঠে দাড়ালো।
ভালো থাকবেন বলেই বেড়িয়ে পড়লো।রাস্তায় মৃদু মন্দ বাতাসে মাহাপারার শাড়ির আঁচল উড়ছে। ক্যাবের জন্য দাড়িয়ে আছে সে। ফিরোজা রঙের শাড়িটায় বেশ মানিয়েছে তাকে।ক্যাব আসতেই উঠে বসলো মাহাপারা।
স্মরণ বসে বসে ভাবতে থাকলো সেদিন রিচমন্ড থেকে ফেরার পরের ঘটনা।
——————————-
দোলা শাড়ি সিলেক্ট করে উঠতে পারছে না।একটার পর একটা বের করেই যাচ্ছে। আয়নার সামনে ট্রায়াল দিচ্ছে। কিন্তু একটাও তার ভালো লাগছেনা। তারপর জলপাই আর কমলার মিশেল একটা সুতি শাড়ি বের করলো ট্রায়াল দিতে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই বাহিরে তাকালো শীত প্রায় এসে পরে পরে করছে।তবুও হুটহাট বলা নেই কওয়া নেই এক পশলা শ্রাবণের বর্ষন ছুঁয়ে যায় শহরটাকে। বিছানার উপর রাখা সমরেশ মজুমদারের “উত্তরাধিকার” বই টার পাতা গুলো উড়ে যাচ্ছে বার বার শব্দ হচ্ছে কিন্তু দোলা যেনো আকাশ থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। নিজের মাঝেই হারিয়ে গিয়েছে দোলা।
মায়ের ডাকে সাড়া দিলো দোলা। আজ শনিবার কলেজ বন্ধ হওয়ায় বাসায়ই আছে। রান্নাঘরের দিকে যেতেই রুবাবা জিজ্ঞেস করলেন দুপুরে কি খাবে? দোলা সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললো কিছুই না।কারণ সে আজ বাহিরে খাবে।
-হঠাৎ বাহিরে?
-এমনি মা। আসলে অনেক দিন ধরে বাহিরে কোথাও খাওয়া হয়না তাই। মিষ্টি করে হাসলো দোলা।
রুবাবা আজ কয়েক মাস ধরেই খেয়াল করছেন দোলার মধ্যকার পরিবর্তন।তার চির গম্ভীর মেয়েটা এখন কত হাসিখুশি থাকে। ওর চোখের নিচের কালী গুলোও হালকা হয়ে গিয়েছে।বেশ উৎফুল্ল লাগে দেখতে। থুথু দিলেন রুবাবা।তার এই বাচ্চাটার খুশি যাতেই থাকুক কারো নজর যেনো নজর না লাগে।মায়ের নজরও বাচ্চার গায়ে লাগে।
দোলা শাড়ি পরে হালকা করে সেজে নিচ্ছে। আজ দু মাস যাবত তার মন টা সবসময় ভালো থাকে।নিজেকে কিশোরী সেই দোলার মত মনে হয় যে আগে উৎফুল্ল থাকতো সর্বদা।
গল্পের বই পড়া আবার শুরু করেছে দোলা। আজ জাদিদের সাথে লাঞ্চে যাবে দোলা। আজ জাদিদের সাথে তার মেয়েও আসবে। সেদিনের ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ঘুরে আসার পর থেকেই জাদিদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে দোলার। একাকিত্ব টা কেটে গিয়েছে। হয়তো সম্পর্ক আরো এগোবে মোড় নিবে অন্যদিকে।তবুও দোলার মনে অজানা ভয়।বাবা তার জন্য পাত্র ঠিক করে রেখেছেন আর। আর এদিকে জাদিদ।এখনো শিওর না তবুও যদি আবার আগের মত হয়!
————————–
সন্ধ্যা প্রায়।দোলা বেরিয়েছে।রুবাবা ঘুমাচ্ছে নাফি ভাইয়া স্টাডিতে বসে নেক্সট কেইসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিপা তার ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।সাদা রঙের পেজা তুলোর মত মেঘ গুলো উড়ে যাছে।মনে মনে ভাবছে এই মেঘ গুলো উড়ে কোথায় যাচ্ছে? তাদের কি কোনো বাড়ি আছে? পাখি গুলোর মত তারাও কি নীড়ে ফিরে যায়?
নিপা দোলনাটায় গিয়ে বসলো।দোল খেতে খেতেই নিলয়ের কথা ভাবছে সে। নিলয়কে সে ভালোবাসে।এ ভালোবাসার তীব্রতা কাউকে বোঝানোর জো তার নেই। অন্ধভাবে ভালোবাসা। কিন্তু তার অন্ধ ভালোবাসায় বোধ হয় তার জীবনের কাল হতে চলেছে। আচ্ছা এভাবে কি নিলয়কে বিশ্বাস করা ঠিক হয়েছে তার?কিন্তু নিলয়কেতো সে প্রায় ২বছর যাবত চেনে। তাতে কি? একজীবনে পাশের মানুষটাকে চেনা যায়না আর সে তো বহুদূর। তাহলে কালকের দেখা ঘটনাটা কি সত্যি?
গতকাল নিপা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো খেতে সেখান থেকেই বের হবার সময় দেখছে নিলয়কে।তার পাশে একজন মহিলা তার হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে হাসছে।তাদের দুজনকেই বেশ খুশি মনে হচ্ছে।সামনেই কিডসজোনে একটা বাচ্চা খেলছে যাকে নিলয় বার বার আব্বু বলে ডাকছিলো। বান্ধবীদের সাথে খেতে এসে এ কোন সত্যের মুখোমুখি হলো নিপা? স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে।তার বান্ধবীদের ডাকে ঘোর ভাঙ্গে তার এবং চলে আসে সেখান থেকে।
রাতে নিলয় কে বলতে দোনামোনা করলেও একসময় জিজ্ঞেস করেই বসে নিপা।নিলয় স্পষ্ট এড়িয়ে যায় ব্যাপারটা।নিলয় বলে – আমায় মিস করছিলে হয়তো তাই সবার মাঝেই তুমি আমায় দেখো।
নিপা আর কথা বাড়ায়নি তখনকার মত চুপ হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছে না সে।খোঁজ নেয়া দরকার কিন্তু কে করবে তার হেল্প? ভাবতে ভাবতেই নিপার হঠাৎ আবরারের কথা মনে হলো।হ্যাঁ ওই হ্যান্ডসাম দেখতে ক্যাবলাকান্তকে দিয়েই করাবে কাজটা।দেখতে নিরীহ হলেও তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন লোকটা।ছিঃ যাহ !আপার হবু বরকে কি বলছে সে এসব।একদম ঠিক হচ্ছেনা। দোলনা ছেড়ে উঠে ঘরে চলে গেলো নিপা।কালকেই আবরারের সাথে কথা বলতে হবে।
___________________
স্মরণ লিভিং রুমে বসে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গিয়েছে। এইরিনা কফির মগটা এগিয়ে দিলো স্মরণের দিকে।স্মরণ কফির মগে চুমুক দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বাহিরে সন্ধ্যের আলো নিভছে প্রায়। আকাশে গোধূলির আলো, মেঘ গুলো ছুটে যাচ্ছে একের পর এক। আচ্ছা এই মেঘেদের বাড়ি কই?
সে রাতের একটা ভুলের জন্য আজ তার পাশে যার থাকার কথা ছিলো সে বহুদূর তার থেকে।
স্মরণ এইরিনাকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কখনো ভেবে দেখেনি।সেদিন মাহাপারাকে বাসায় দিয়ে স্মরণ গিয়েছিল বন্ধুদের সাথে হ্যাং আউট করতে। ড্রিংকস সে আগেও করেছে।এটা আমেরিকাতে নরমাল।কিন্তু এভাবে পাসড আউট হয়নি কখনো। রাতে মাতাল হয়ে পরেছিলো বারে। এইরিনার বাসা কাছে হওয়ায় তাকে তার বাসায় নিয়ে যায় এইরিনা।তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে আবিস্কার করলো এইরিনার বাহুতে। তারপর?
যদিও সে ভুল ভেবে চেপে যেতে চেয়েছিলো সবটা।কিন্তু বাধঁ সাধলো এইরিনা। এইরিনা এই ব্যাপারে তাকে ব্ল্যাকমেইল করলো এরপর তার মাকে গিয়ে বললো।তার মা ছেলের উপর রুষ্ঠ হয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করলেন।তার ঠিক তিনদিন পর মাহাপারাকে এইরিনা সব জানালো।এবং মাহাপারাই এইরিনা আর স্মরণের বিয়ের জন্য তার মাকে রাজি করালো।
তার কিছুদিন পরই স্মরণ জানতে পারে তার বন্ধুর থেকে যে এইরিনা শুরু থেকেই স্মরণকে পছন্দ করতো এবং একসময় ভালো বাসতে শুরু করে এবং স্মরণের বিয়ে ভাঙার জন্য সে ষড়যন্ত্র করে।সেরাতে স্মরণের ড্রিংক স্পাইকড করে এইরিনা।এতবড় ব্যাপার জানার পরেও স্মরণ নির্লিপ্ত রইলো কারণ সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে এইরিনাকে নিয়ে ভালো থাকবে।মেকি ভালো থাকা।
এইরিনা মাহাপারাকে কখনই সহ্য করতে পারতোনা।তবুও তাকে আদর করতো। ঠিক সেই প্রবাদটার মত “কিপ ইউর ফ্রেন্ডস ক্লোজ এন্ড এনিমি ক্লোজার”।
তারপর বিয়ে করে এ বাড়িতে প্রথম দিন এসেই তার প্রথম বক্তব্য ছিলো মাহাপারার উদ্দেশ্যে।
-হেই মাহাপারা তোমার হাতের বালা গুলো নিশ্চই স্মারণের মায়ের? লিগালি ওর ব্যাটার হাফ হিসেবে তা এখন আমার হওয়া উচিৎ নয় কি?
– স্মরণের মা এ কথার প্রতিবাদ জানিয়ে স্মরণের উদ্দেশ্যে বললেন -তোর বউ কে বল বালা জোড়া আমি আমার ভাস্তিকে দিয়েছি। এতে ওর কোনো অধিকার নেই।
তবুও মাহাপারা বালা জোড়া খুলে এইরিনার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলো।এবং তারপর সে এই বাড়িতে তান্ডব শুরু করলো যেন মাহাপারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।কারণ সে শুধু স্মরণের ফুপাতো বোনই না তার এক্স ফিয়ান্সেও। স্মরণ বুঝে পায় না এইরিনার মত মেয়ে যে কিনা বিদেশে জন্ম সে কি করে এমন বাংলাদেশি গোড়াদের মতো আচরণ করতে পারে?
এত অশান্তির জন্য মাহাপারাও আর এ বাড়িতে থাকেনি।নিজের ডর্মে চলে গিয়েছে।
এইরিনার ডাকে ধ্যান ভাঙলো তার –
স্মরণ তোমার ওই কাজিনটার এ দেশ ছাড়তে আর কতদিন বাকি?
– আর ৮দিন রয়েছে এ দেশে।
– এখনো ৮ দিন? উদাস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো এইরিনা।
তারপর ঠোঁটের কোণে হাসি এনে বললো- হানি লেটস গো ফর ডিনার।
– আজ না রিন।নেক্সট উইকেন্ডে। আজ আম্মার শরীর ভালো নেই আর আমিও বেশ টায়ার্ড।
– ওকেই দেন ইউ স্টে এট হোম।
– তুমি কোথায় যাচ্ছো? অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো স্মরণ।
-ফ্রেন্ডসদের সাথে হ্যাং আউটে বের হবো।
-ইউ আর নট গোয়িং এনি হোয়ের। গম্ভীর মুখে কথাটা বলেই উঠে স্টাডির দিকে গেলো স্মরণ।
——————————–
এক বালিশে দুইটি মাথা
ছোট কইরা কেনো কওনাগো কথা?
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু পান খাইলা না
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু পান খাইলা না….
গান গাইতে গাইতেই ছাদে কাপড় উঠাচ্ছিলো নসিমা। শাড়ি সরাতেই চমকে গেলো সে। ওমাগো বলেই বুকে থুথু দিলো।
– ওই তুই আমারে দেইখা এমুন করস ক্যা? আমার চেহারাখানা কি ভুতের লাহান?
– নাহ !না, না আপনের চেহারাতো চামচিকার লাহান।হুহ?
– তুই এমন কইরা আর গান গাইবি না।
-ক্যান? ভ্রু কুচকে তাকালো নসিমা।
– তুই এমন গান গাইলে আমার মনডা আকুপাকু করে।
– উহহ মরণ ! আকুপাকু করে। আমি ১০০ বার গান গামু।তাতে আপনের কি? বলেই চলে যাচ্ছিলো নসিমা।
কামাল দ্রুত তার পথ আটকালো।তার দিকে এগিয়ে দিলো একটা পানের খিলি।
-নে মিষ্টি পান।ভালোমত বানায়া আনছি তোর জন্যে। লজ্জায় কাচুমুচু হয়ে কামাল বললো আমিতো জানি তুই পান খাইতে আর গান গাইতে পছন্দ করস।তবে তোর গান শুনলে যদি অন্য কেউ তোরে নিয়া যায় হেই ভয়েই গাইতে মানা করি।
নসিমার চোখের কোনে পানি জমে গেলো। আবেগ ! সে জানে এ গরীবের সস্তা আবেগ।এগুলো কারো নজরে পরেনা।ভালোবাসা প্রেম এগুলো বিলাসিতা বড়লোকদের মানায়।তবুও তার মত এতিমকেও যে কেউ এভাবে ভালোবাসে তা ভাবতেই তার মনে একটা ঢেউ খেলে গেলো। তাকে হারানোর ভয়েও কেউ যে বেঁচে আছে ভাবতেই তার শরীরে শিহরণ জাগে। বিকেলের সোনা আলোয় নসিমার লাল গোলাপী হওয়া মুখটা দেখে কামালের বুকটা খালি খালি লাগলো। খুব করে ইচ্ছে করলো তার নসিমাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু পারলো না।লজ্জায় নাকি চোখের পানি আড়াল করতে সে পানের খিলি হাতে নিয়েই দৌড়ে নিচে নামে।
মনে মনেই ভাবে ইশশ লাল টুকটুকে শাড়ি পরে যদি এই লোকের বউ হওয়া যেতো তবে কতই না ভালো হতো !
——————————-
আমির সার্জারী রুম থেকে বের হয়েই দেখলো শাড়ি পরিহিতা একজন নারী ওয়েটিং রুমের সামনে বসে আছে।এই দেশে আসার পর থেকে বাঙালি বা এশিয়ার অনেক পেশেন্ট এবং পেশেন্টের ফ্যামিলিদের দেখেছে তবে এরকম শাড়ি পরিহিতা কমই দেখেছে।গত তিনদিন ধরে এই মহিলা রোজ আসে হাসপাতালে।শুনেছে তার বন্ধু নাকি এডমিট এখানে এক্সিডেন্ট কেস।ইঞ্জুরি হয়েছে শরীরের কিছু জায়গায়।মেয়েটা এবং তার বন্ধু বাংলাদেশি।তার নিজ দেশের।সহানুভূতিও হলো তাদের জন্য।
দানিয়াল ক্যাফেতে গেলো।এক কাপ ব্ল্যাক কফি লো ফ্যাট নিলো এবং মাহাপারার টেবিলে গিয়ে বসলো।
মাহাপারা তার প্রথম ফ্লাইটের কথা মনে করছিলো।একা এই ভীনদেশে এসে টিকে থাকার লড়াইয়ে সেও একজন। প্রথম ফ্লাইটে পাইলটের এনাউন্সমেন্টেই তার কন্ঠের প্রেমে পরে গিয়েছিলো সে।তার সিটের পাশে বসা হোৎকা মোটা লোকটা প্রায় তাকে ভয় দেখাচ্ছিলো প্ল্যান ক্র্যাশ নিয়ে।যদিও জানতো কিছুই হবেনা তবুও একসময় ভয় থেকে বাচঁতেই ফ্লাইট এটেন্ডেন্স কে সিট চেইঞ্জ করার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।কোনো ক্লাসেই সিট খালি না থাকায় তারা সিট দিতে পারেনি। আবার আগের সিটে গিয়েই বসেছিলো।তবুও লোকটা থামছিলোই না। বেচারি বুঝতেই পারছিলো ছোটোলোক গোছের লোকটা জীবিকার জন্যই আমেরিকা যাচ্ছে।একসময় বিরক্ত হয়ে সে ঝাড়ি দিয়েই উঠে যায়। ফ্লাইটের তিনজন পাইলটের একজন চলে আসে এবং তাকে বলে শান্ত হতে এবং তার জন্য যেহেতু এই মুহুর্তে কোনো সিট এক্সচেঞ্জ করা যাচ্ছে না তাই তার জন্য রয়েছে ককপিট। অবাক হয়েছিলো মাহাপারা।তবে দারুণ অনুভুতি ছিলো তা।যদিও টার্কি পৌঁছানোর পর আর কোনো ঝামেলা হয়নি।
একি স্বরে আবার কেউ যেনো তাকে ডাকলো।
চমকে উঠেছিলো।তবে নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে সামনে তাকালো মাহাপারা। লম্বায় প্রায় ৬ ফিটের কাছাকাছি লোকটা তার দিকে তাকিয়ে আছে এবং তার টেবিলে বসার জন্য অনুগ্রহ করছে। চেহারা হাস্যজ্বল এবং ভারীক্বি, দারুণ দৈহিক গটনের অধিকারী লোকটা তার সাথেই কথা বলছে।মাহাপারা হেসে তাকে বসতে বললো।
——————————-
শফিক সাহেব সাইট ভিজিটের জন্য গিয়েছেন।একজন সফল রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে বেশ।তারপরে তার বিজনেসের হাল তার দ্বিতীয় কন্যা নিপার হাতে দিবেন বলে ঠিক করেছেন।এবং এডভাইজিং কমিটির হেড হিসেবে থাকবে নাফি।যদিও নাফি তার ওকালতি নিয়েই সন্তুষ্ট। আবরারের সাথে নিপার বিয়ে হলে তিনি চিন্তা মুক্ত হবেন কিছুটা।
নিপা অনেকক্ষন ধরেই সুযোগ খুঁজছে ক্যাবলাটার সাথে কথা বলার।কিন্তু এই মহামানব তো বেজায় ব্যস্ত। নিপা কথা বলতে গেলেই অন্য দিকে চলে যায় যেনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার থেকে।কিন্তু নিপাতো জানেনা আবরার সত্যিই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।নিপার চোখের দিকে তাকাতে পারেনা সে। আর সামনে দাড়াতেই কেমন একটা অস্বস্তি চলে আসে তার মাঝে।নিপার ঠোঁটের হাসিটা দেখলেই তার হার্টবিট গুলো থেমে থেমে যায়।এই বুঝি পরপারে চলে গেলো। আজও দ্রুত কাজ শেষ করেই বেড়িয়ে পরলো আবরার।যার বড় বোনের সাথে তার বিয়ে ঠিক তার প্রতি এমন অনুভূতি থাকা ঠিক না।এটা শুরু থেকেই দমন করতে হবে।নাহলে পরে বিপদ হবে।
নিপা বিরক্ত গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু উনিতো রাজকুমার ওনার সাথে কথা বলতেতো আপয়েনমেন্ট লাগবে।বিরক্ত হয়ে নিপা প্ল্যান চেইঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিলো।
চলবে…!
Shahazadi Mahapara’s Inscription
( ৫ পর্ব পর্যন্ত দেয়া হয়েছে গল্প। অথচ পাঠক প্রতিক্রিয়া পাইনি কোনো৷ গল্প টা কেমন লাগছে৷ ভালো খারাপ কিছুতো কমেন্ট করুন আপনারা। আশ্চর্য লাগে আমি লিখেই যাই পোস্টও করি অথচ কারও থেকে রেস্পন্স পাই না। বাকি দুটো গল্পের ক্ষেত্রেও। তাই আমার নিজেরও লিখতে ইচ্ছে করে না।)