#কোকিলারা
#পর্ব-০৩
#লেখিকা- মোর্শেদা হোসেন রুবি
-” আস্তে কথা বলো। না চেঁচিয়েও তো কথা বলা যায়। নাকি যায় না? কোনটা তোমার স্বার্থ ? ”
-” কোনটা আমার স্বার্থ মানে ? আমার পছন্দ-অপছন্দ, ভাললাগা-মন্দলাগা এগুলো তবে কী ? এগুলোর বুঝি কোন মূ্ল্যায়ন নেই ? যার সাথে সারাজীবন সংসার করব সেই লোকটাকে আমি নিজে ঠিক করতে পারব না, এটা ঠিক করে দেবে আরেকজন ? এটা কেমন যুক্তি ? ” কথাটা বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো আমার । অভিমানে বুক ভার হলো। লোকটাও হয়ত কিছুটা উপলব্ধি করতে পারল ব্যপারটা। আর নয়ত সে আমার যুক্তির কাছে পরাস্ত। ঠিক জানিনা। এমন সময় দরজায় টোকা পড়তে উঠে গেল সে। বাইরে থেকে ওর নাম ধরে কেউ ডাকছে। সম্ভবত আমার ছোট ননদ হিয়া। রাত বিরেতে ঐ মেয়েটাই এসে ‘খালিদ ভাইয়া’ বলে ডাকাডাকি শুরু করে। চোখ মুখ ডলে স্বাভাবিক হলাম। চট করে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসলাম যেন ওর চেহারা আমার নজরে না আসে। দেখলেই কিছু না কিছু বলতে হবে নতুবা হাসতে হবে। আমার এখন কারো সাথে কথা বলার মুড নেই। দরজা খোলার শব্দ পেলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। কণ্ঠস্বরেই বুঝলাম হিয়া এসেছে। অকারণে হাতের তালুতে লোশন ঢেলে হাতে মাখাতে লাগলাম যেন সে আমাকে ব্যস্ত মনে করে।
” ভাবি ? আব্বু নিচে তোমাকে ডাকছেন।” পেছন থেকে বলল হিয়া। প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো আমার। ইস্, শেষ পর্যন্ত আমারই ডাক পড়লো। এদের কাণ্ডজ্ঞান সত্যিই কম। এত রাতে কেউ কাউকে ডাকে ! বিরক্তিটা চাপতে পারলাম না।
দ্রুত ঘাড় ফিরিয়ে বললাম, ” ইস্, এত রাতে আবার নিচে যাব? কাল সকালে গেলে হয়না ? ” বলার সময় আমার কণ্ঠের ঝাঁঝটুকু লুকাতে পারলাম না। আসলে এটা আমার কথা বলার সাধারণ ভঙ্গি। ঝাঁঝ না মেখে কথা বলতে পারিনা। হিয়া হয়ত ভুল বুঝতে পারে। বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। তবে হিয়া আমার উষ্মা কতটা টের পেল জানিনা, আমি নিজে ওর কণ্ঠের উষ্মা বিলক্ষণ টের পেলাম। বিশেষ করে শেষ বাক্যটা।
” উপায় নেই ভাবি। তোমার ছোট বোন হেনা আর ভাই সাজিদ এসেছে। বুঝতেই পারছ, তোমাকে বিরক্ত না করে উপায় ছিলনা।” বলেই হিয়া আর দাঁড়াল না। নিচে চলে গেল। আমি এবার ত্রস্তে নড়েচড়ে বসলাম। আপন মনেই বললাম, ” এত রাতে হেনা আর সাজিদ ? কী ব্যপার ? বলতে বলতেই চকিতে ঘড়ি দেখলাম। পৌণে বারোটা। উঠে দাঁড়াতে গিয়েও হঠাৎ কী ভেবে চট করে খালিদের দিকে তাকালাম, ” এই যে, আপনি ফোন করে কিছু বলেছেন নাকি বাপিকে? ”
দরজা খুলে দিয়েই খালিদ পিসির সামনে বসে পড়েছিল। রোজ রাতেই বসে। আমার এ কথায় সে ঘুরে বসে ব্যাকরেস্টে কনুই ঠেকিয়ে বলল, ” আমার পরিমিত জ্ঞান অন্তত তোমার চেয়ে ভাল। তোমার সমস্যা তোমার সাথে আলাপ না করে আগেই তোমার বাপিকে ফোন দিয়ে তুলকালাম করার মানসিকতা আমার নেই। এতটুকু জ্ঞান ভালই আছে আমার। ” বলেই ফের সোজা হয়ে পিসিতে ডুব দিল। আমি পেছন থেকে বললাম।
-” তাহলে ? ”
-” আশ্চর্য, এখানে বসেই হিসেব কষবে, না কি নিচেও যাবে ? আচ্ছা কুঁড়ে তো দেখা যায় ? ” খালিদ ফের ঘাড় ফিরিয়ে ছোটখাট ধমক দিলো আমাকে। ওর কথাটা শুনে এবার আর জ্বলে উঠলাম না। কেবল বিরক্তিভরা চাহনী দিয়েই সোজা নিচে ছুটলাম। এ বাড়ির ড্রইংরুম নিচতলায় একেবারে গেটের কাছে। আমাকে অনেকটা পথ প্রায় দৌড়ে পেরোতে হল। সেখানে ঢুকেই দেখলাম হেনা আর সাজিদের সাথে কথা বলছেন আমার শ্বশুর। আমাকে দেখেই সাজিদ দ্রুত দাঁড়িয়ে গেল। ওর চোখ মুখ লাল। বুকটা ধ্বক করে উঠল। বাপির কিছু হলো না তো ? ব্যাগ্র ভঙ্গিতে গিয়ে ওর কাঁধে হাত ছুঁয়ে বললাম, ” কী হয়েছে রে ? ”
সাজিদ মুখ নামিয়ে ফেলে বলল, ” তুমি একটু বাসায় চলো আপু।”
-” বাপির কিছু হয়েছে ? ” আমার উদ্বিগ্নতা চরমে উঠল এবার। সাজাদ কিছু বলার আগেই আমার শ্বশুর বলে উঠলেন,” বৌমা, তুমি ওদের এত প্রশ্ন না করে বরং একটু কষ্ট করে ওদের সাথে যাও। তুমি বাড়ির বড় মেয়ে। এই মুহূর্তে তোমাকে ওদের দরকার। আর শোনো, রুনাকে বেশি বকাঝকা করোনা। এ যুগের ছেলেমেয়ে তো, আবেগটা বড্ড বেশি । ওকে তুমি বোঝাবে, বুঝলে ? তুমি হলে বড় বোন। তোমার দায়িত্বটা বেশি।”
বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে একবার শ্বশুরকে দেখে হেনার দিকে তাকালাম। সেও মুখ নামিয়ে রেখেছে। হলো টা কী ? কী করেছে রুনা ? তবে এবার আর কোন প্রশ্ন করলাম না। যা জানার বাড়ি গিয়েই জানব।
একছুটে দোতলায় চলে এলাম। রুম খালি। খালিদ রুমে নেই। হয়ত বাথরুমে বা বারান্দায় গেছে। যাকগে যেখানে খুশি। এত ডাকাডাকির মধ্যে আমি নেই। শ্বশুরকে বলেই ভাগব। দ্রুত হাতে পার্সটা গুছিয়ে কেবল শালটা গায়ে জড়ালাম। নিচে নেমে দেখলাম ইতোমধ্যে খালিদ শার্ট বদলে নিচে নেমে গেছে। মনে মনে একটু আশ্চর্যই হলাম। কারণ ওকে এখনও কিছু বলা হয়নি। হয়ত সেও বোনের মারফত জেনেছে।
খুব বেশি কিছু ভাবার সুযোগ পেলাম না। খালিদ নিজেই গিয়ে কোত্থেকে এক ক্যাব যোগাড় করে আনলো। গাড়িতেও তেমন কোন কথা হলো না। খালিদকে দেখলাম পরিচিত কোন এক ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। কিছুটা বিরক্তও হলাম, এত রাতে ডাক্তার দিয়ে কী করবে ও। তবে এবারও নিরবই রইলাম।
বাড়ির গেটে ক্যাব থামতেই ছুট লাগালাম ভেতরে। ড্রইংরুম পেরিয়ে সোজা আম্মুদের ঘরে। সেখানে আম্মুকে বহাল তবিয়্যতে বসে থাকতে দেখে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল আমার। ধপ করে দরজার পাশে রাখা টুলটার উপর বসে পড়লাম। পরক্ষণেই লক্ষ্য করলাম, বিছানায় বাপি শোয়া। তাঁকে দেখাচ্ছে অর্ধোন্মৃতের মত। বাপিকে ঐ অবস্থায় দেখে হাত পা অসাঢ় হয়ে এলো। বাপি আমার অসম্ভব প্রিয় একজন মানুষ। তার এই অবস্থা আমার পক্ষে সহ্য করা যে কতটা কষ্টকর তা কেবল আমিই জানি।
আম্মু হঠাৎ চাবি দেয়া পুতুলের মত উঠে এসে আমার হাত ধরে টেনে আমাকে হেনার ঘরে আনলেন। আম্মুকে কিছু বলতে যাবার আগেই বিছানায় রুনাকে অর্ধচেতনের মত শুয়ে থাকতে দেখে থেমে গেলাম। অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,” কী হয়েছে রুনার ? ও এভাবে শুয়ে আছে কেন ? আর বাপি কী অসুস্থ ? ” আমার প্রশ্নের তোড়ে আম্মু হঠাৎ মুখে আঁচল চেপে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। গুঙিয়ে বলতে লাগল, ” কী পাপ করেছি আমি ? কেন এমন হল আমার ? আমি এখন কীইই করব রে আনা ? আমাকে তোরা মেরে ফেল। মেরে ফেল আমাকে। আমি কী এসব দেখার জন্যেই তোদের পেটে ধরেছিলাম? কান্নার চেয়ে আম্মুর বুক চাপড়ানো আর আহাজারিটাই বেশি। দু’হাতে তাকে সামলাতে গিয়ে মনে হল আম্মু দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যাবেন। দ্রুত তাকে টেনে বিছানায় নিয়ে বসালাম। নিজের কাঁধে আম্মুর মাথাটা চেপে ধরে ফের রুনার দিকে তাকালাম। হালকা একটা ভয় কাজ করল এবার। কী হয়েছে রুনার ?
এই রুমটা একসময় আমার ছিল । বিয়ের আগে আমি একা থাকতাম এখানে। হঠাৎ কেউ একজন বাপির কানে মন্ত্র গুঁজে দিয়ে বলল, সাবালিকা মেয়েদের নাকি ঘরে একা রাখতে নেই। নানান ধরণের সমস্যা হয়। বাপি কথাটা আম্মুকে শেয়ার করলেন। তারপর থেকে রুমটাতে হেনা আর রুনার খাট ঢুকল। তবে আমি সবার বড় বলে আমার বিছানা বরাবরই আলাদা। রুমের অপরপাশে সেমি ডাবল বিছানাটায় হেনা আর রুনার শোবার ব্যবস্থা। ব্যপারটা এমন না যে বাড়িতে রুমের অভাব। বাপি অনায়াসে আমাকে আলাদা রুমেই থাকতে দিতে পারতেন কিন্তু ঐ যে বললাম, মন্ত্র। সেই মন্ত্রবলে আমি একা থাকতে পারিনি। এটা ছাড়াও আমার মধ্যে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাবার একটা প্রবণতা ছিল। যদিও এটাকে আমি কখনোই ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি কিন্তু বাপি যেন এটার সুযোগ নিয়েই আমার একা থাকা বন্ধ করলেন। তাতে অবশ্য আমার ব্যক্তিগত জীবন যাপনে খুব বড় ধরণের কোন সমস্যা তৈরী হয়নি। হেনা আর রুনার সামনেই আমি রাজিবের সাথে কথা বলেছি ঘন্টার পর ঘন্টা। সবার বড় বোন বলে এ বাড়িতে একটা অলিখিত ক্ষমতা আমার সবসময়ই ছিল। আমার কথার উপর কথা বলবে এমন সাহস সাজিদ, হেনা বা রুনা কারোরই ছিল না। তবে রুনা আমার পিঠাপিঠি বলে ও মাঝেমধ্যে একটু বিদ্রোহ করত। রুনার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য মাত্র তিনবছরের। সে তুলনায় হেনা আর সাজিদ অনেক ছোট।
ইতোমধ্যে আম্মু অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। আমাকে দেখার পর আবেগের প্রাথমিক যে ঝাপটাটুকু ছিল সেটা কেটে গেছে। তবে তার চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝরছে । কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন,” আমাদের মান- সম্মান সব শেষ হয়ে গেল রে আনা। আমি এখন কী করব, বলতে পারিস ? তোর বাবা আমাকে বলে, রেহানা এক গ্লাস পানিতে বেশি করে বিষ মেশাও। চলো দুজনে মিলে খেয়ে মরে যাই। তাহলে আর কিছু দেখতে হবেনা। ঐদিকে তোর নতুন শ্বশুরবাড়ি। কী জবাব দেব ওদেরকে আমার মাথা কাজ করেনা। তবু তো সাজিদের বুদ্ধিতে তোকে মিথ্যা বলে ডাকিয়েছি।”
আমি শূণ্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম আম্মুর দিকে। হেনা পাশ থেকে বলল,” খালিদ ভাই বাপির সাথে কথা বলছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সব জেনেও গেছেন উনি।” আমি এবার ওর দিকেও তাকালাম। নিজেকে বেশ বোকা বলে মনে হচ্ছিল আমার। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে গেছি। হেনার দিকে তাকালাম। চুপ করে রুনার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার বয়স এখনও অনেক কম। মাত্র এসএসসি দেবে। অথচ ওর আজকের আচরণটা একদম বড়দের মত। মন বলছে, বাড়িতে যে ঘটনাটা ঘটেছে তা ওর সামনে ঘটা উচিত ছিল না। পুরো বিষয়টাকে ও কীভাবে দেখছে কে জানে।
অস্বস্তি চেপে বললাম,” কী হয়েছেটা কী আম্মু ? আমাকে সবটা খুলে বলবে প্লিজ ? রুনা কী করেছে যে সবাই এত আপসেট ? ”
আম্মু এবার রুনার দিকে তীব্র ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ” তোর বোন কুমারি মা হতে চলেছে। আরো শুনবি ? ঐ ছেলে এখন দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে তোর বোন ঘুমের ঔষধ খেতে যাচ্ছিল। হেনা দেখে ফেলেছে। ” বলেই নিঃশব্দ কান্নায় ভেঙে পড়লেন আম্মু।
আমি অসাঢ় কণ্ঠে জানতে চাইলাম, এসব কবে হলো ? মানে কবে টের পেল হেনা ?”
-” আজই। প্রথমে তো বুঝিনি। এমনিতেও হারামজাদি গত কয়েকদিন ধরেই ভাত খেতে পারছিল না। যা খায় বমি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তোর বাবা বলল, ওর জন্ডিস ফন্ডিস হয়েছে কিনা দেখ। নয়ত ডাক্তার দেখাও। আজকাল ওয়েদার ভাল না। সেই ডাক্তার দেখাতে গিয়েই শুনি…!” আম্মু থেমে গেলেন। সাথে হু হু করে কান্না। আমি নিজেকে বিচলিত হতে দিলাম না। আম্মুর কান্নাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, ” তোমাদের ভুল ও তো হতে পারে। কেবল সন্দেহ থেকেই..!”
” আরে কী সন্দেহ থেকেই! ” আম্মু যেন জ্বলে উঠলেন। “আলট্রাসনো করিয়েছি ওখানে। তার উপর তোর বোনের গতমাস থেকে পিরিয়ড নেই। আর আবার কী লাগে বুঝতে ? এই হারামজাদি পেট বাঁধানোর আগে মরে গেল না কেন। আমার তো মন চায় ওর গলা টিপে মেরে ফেলি।” বলতে গিয়ে আম্মু যেভাবে রুনার দিকে তাকালেন তাতে মনে হলো এখনই ওর গলা টিপে ধরবেন।
আমি কী করব ভেবে পেলাম না। মুখ শুকনো করে রুনার দিকে তাকালাম। মাত্র একদিনেই ওর চোখ মুখ কেমন বসে গেছে। বেচারী রুনা। নিজের কথা ভেবে শিউরে উঠলাম। ভাগ্যিস, আমি এমন কিছু করিনি। কেন যেন সাহস হতো না। গতকাল তো রাজিব পা ধরা বাকি রেখেছিল। বেরোবার পর ট্যাক্সি ভাড়া করেছিল ওর বন্ধুর বাড়ির। বহুকষ্টে ওকে নিবৃত্ত করতে হয়েছিল আমার। ও বারবার বলছিলো, এখন তো তুমি বিবাহিত। সমাজ সংসার কেউ জানবে না। কোন ঝুঁকি নেই। ” রাজিব না বললেও আমি জানি যে আসলেই ততটা ঝুঁকি নেই। একজন অবিবাহিতার বেলায় ধরা পড়ার যে ঝুঁকিটা থাকে বিবাহিতাদের বেলায় সেটা থাকেনা। কোন কিছু হলে সেটা অনায়াসে খালিদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারতাম আমি । খালিদ নিজেরও অস্বীকার করতে পারত না। সেই টেকনিকও আমি জানি। কিন্তু কেন যেন পারিনি। বাপির গেড়ে দেয়া অযাচিত চেতনার ঝাড় থেকে চেতনারা সব ঝরে পড়ে গেলেও টুকটাক যে দুচারটা রয়ে গিয়েছিল এটা তারই একটা। আর যাই হোক, প্রতারণা করতে পারব না খালিদের সাথে।
-” আনা ? ” দরজার বাইরে থেকে খালিদের ডাক শুনে আম্মা প্রায় লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালে আমি ইশারায় তাকে শান্ত করে নিজে বেরিয়ে গেলাম। খালিদ দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। আমার পায়ের শব্দে মুখ ফিরিয়ে বলল, ” এদিকে এসো।” বলেই সে ড্রইরুমের দিকে হাঁটা ধরল। দ্বিধান্বিত পায়ে খালিদের পিছু পিছু হাঁটা দিলাম। টের পেলাম এক অজানা লজ্জা আমাকে ঘিরে ধরেছে। মুখটা কোথায় লুকাব ভেবে পেলাম না। জানি না খালিদ আমাকে কী ভাবছে। ড্রইংরুম একদম ফাঁকা। খালিদ একটা সোফা দখল করে বসে আমাকে ইশারা করল ওর সামনে বসতে। এই প্রথম আমি তার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম। খালিদ নিজেই বলল,” বাপির সাথে কথা হলো আমার। রুনা কী করেছে শুনেছ তো ? ”
জবাব না দিয়ে মুখ নামিয়ে রাখলাম আমি। খালিদ কী বুঝল কে জানে। চাপা ধমকের সুরে বলল, ” আপাতত দয়া করে এসব লাজুকলতা সাজার নাটক বন্ধ করো। তুমি তো প্রগতিশীল নারী। প্রগতিবাদীদের এত লজ্জা শোভা পায়না। রুনা যা করেছে ওটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। তার নিশ্চয়ই দায় পড়েনি তোমার সম্মান বহন করার, নাকি পড়েছে ? তুমি কেন লজ্জা পাচ্ছো ? ”
বাকরুদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম খালিদের দিকে। বুঝলাম, লোকটা আমাকে মওকামত পেয়ে আচ্ছামত সুযোগ নিচ্ছে। ঠিক আছে, আমারও সময় আসবে। রাগ চাপতে কষ্ট হলেও কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে চাপা স্বরে বললাম, “আমাকে যা বলার তা তো বাড়িতেই বলতে পারতেন। এখানে কেন ? না কি সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন ? কে ডেকেছিল আপনাকে ? আমি তো বলিনি যে আমার সাথে চলুন। আপনি সেধে এসেছেন এখানে। এখন আমাকে অপমান করছেন।”
খালিদের চেহারার লালচে ভাব বলল সে আরো কিছু বলবে। কিন্তু সেও বোধহয় বুঝতে পারছে যে এসব কথা বলার সময় এটা নয়। মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, “স্যরি, আসলে এভাবে বলতে চাইনি। আমি শুধু এটুকুই বলতে চেয়েছি যে সম্পর্কের মূল্যায়ন তোমার না থাকলেও আমার আছে। আমি এখন পর্যন্ত এ বাড়ির জামাই। বৈবাহিক সূত্রে এ বাড়ির ভাল মন্দ বিপদাপদের সাথে আমি জড়িত। চাইলেই তা এড়িয়ে যেতে পারিনা। এর সবচে বড় প্রমান যে বাপি রুনার পুরো ব্যপারটাই আমার সাথে শেয়ার করেছেন। অথচ আমাদের বাসায় সবাই জানে, রুনা বাপির উপর অভিমান করে বিষ খেয়েছে। ওর রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে বাপি ওকে বকেছে ইত্যাদী। সবচে অবাক কান্ড কী জানো, তোমার বাপি তোমার খুব প্রশংসা করলেন।”
বলেই খালিদ আমার দিকে তাকাল। আমি নিজেও অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। খালিদ কিছুটা হিসহিসিয়ে বলল, ” জানতে চাইবেনা কী বলেছেন তিনি ? ”
খালিদ অপলকে আমাকে দেখছে বুঝতে পেরে অস্বস্তি দ্বিগুন হলো। খালিদ নিজেই বলল ,” বাপি বললেন, তুমি নাকি তার সবচে ভাল মেয়ে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে নাকি নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছ। আর তার বাকি মেয়েরা নাকি তোমার মত নয়।” বলে সামান্য ঠোঁট ওল্টালো সে। অনেকটা যেন তাচ্ছিল্যের হাসি। তারপরই হঠাৎ থেমে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ” যার বাবা তার মেয়ের সম্পর্কে এতো ভাল সার্টিফিকেট দেয় তার মেয়েকে আমি বাবার কাছে ছোট করব না। আমাকে একটু সময় দাও, আমি সিস্টেমেটিক ওয়েতেই তোমাকে বিদায় দেব। জাস্ট ফিউ ডেইজ। ” বলেই হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল খালিদ।
রাত বাড়লে মায়ের কাছেই জানতে পারলাম খালিদ বাড়ি চলে গেছে। অবাক হওয়া উচিত না তবু হলাম কারণ সে যাবার আগে আমাকে জানাবার ন্যুনতম প্রয়োজনটুকু বোধ করেনি। যাক্, না করুক গে। এটা একদিক দিয়ে বরং ভালই হয়েছে। আমার চাওয়ার আগেই সে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। সত্যিই, কিছু কিছু মন্দ পরিস্থিতি আসলেই ভাল কিছু বহন করে। অন্তত আমার জন্য মুক্তির বারতা এনে দিয়েছে আজকের রাতটা। যদিও রুনার ব্যপারটা কাঁটার মত খোঁচাচ্ছে। মায়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। বাপির প্রেসার প্রথম থেকেই হাই। এই ঘটনা জানার পর থেকে তার বিপি আরো চড়ে গেছে।
মা’কে ভারাক্রান্ত মুখে ঘরে ঢুকতে দেখে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, ” এত ভেবে নিজের শরীরটা খারাপ করোনা তো মা। আমি কাল ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে সব শেষ করে আসব। অল্প বয়সের মেয়ে। একটা ভুল করে ফেলেছে। এটা নিয়ে তোমরা এত ভেঙে পড়ছো কেন। বাইরে গিয়ে দেখো আজকাল কী হচ্ছে। মেডিকেলের আউটডোরে একঘন্টা দাঁড়ালেই বুঝবে বাংলাদেশ কোথায় চলে গেছে। তোমার মেয়ে একা না। দেশের পরিস্থিতিই এখন এমন। এটা নিয়ে আজকাল আর কেউ তেমন আপসেট হয়না।”
আম্মু কোন কথারই জবাব দিলেন না। আমি নিজেই সেধে আম্মুকে যতভাবে সম্ভব সান্ত্বনা দিয়ে নিজের বিছানায় বসেই মুনকে ফোন দিলাম। ভাল করেই জানি ও এখনও জেগে আছে। সারারাত নেট ব্রাউজ করে ভোরে ঘুমাতে যায় সে। একটা সময় ওর সাথেই চ্যাটিং করে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতাম। রাজিবের সাথে সম্পর্ক হবার পর ওটা কমে গেছে। তখন থেকেই পুরো সময়টা চলে গিয়েছিল রাজিবের দখলে।
ভাবতে ভাবতেই রিসিভ হল ফোনটা। মাত্র একটা রিং হতেই মুন ধরেছে ফোনটা।
” কীরে দোস্ত, এত রাইতে ? তোর জামাই কই ? ”
” ও ওর বাড়িতে। আমি আম্মার এখানে। ” আলাপ সংক্ষিপ্ত করার ইচ্ছে থেকেই এভাবে বললাম। নয়ত এটা নিয়েও কতক্ষণ গ্যাঁজাবে মুন।
” কস কী ? তাইলে তো আজকে তুই পুরা বিন্দাস। রাজিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করসিলি?” ওপাশে মুনের উৎফুল্ল কণ্ঠস্বর আমাকে প্রানবন্ত করতে ব্যর্থ হলো।
” রাজিবের প্রসঙ্গ থাক, ওটা নিয়ে পরে কথা বলব। আপাতত প্রি-ম্যাচিওরড সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করতে চাচ্ছিনা, বরং যে সমস্যা পেকে ঝুনা হয়ে মাথার উপর পড়ার পাঁয়তারা করছে সেটার সমাধান দে।”
” কেস কী দোস্ত ? এক ফুল দো মালির ঘটনা ঘটতে চলসে নাকি ? ”
” উফ, তুই কী থামবি ? পুরো কথা না শুনেই সবসময় ঠাট্টা। সমস্যাটা আমাকে নিয়ে না। ”
” তাহলে? ”
” রুনাকে নিয়ে। কাজ বাড়িয়েছে সে। এখন বাপি অার আম্মু সব জেনে মরার দশা। বাপির বিপি হাই আর আম্মুর লো। রুনাকে ইঁদুর মারা ঔষুধ খাওয়াবার পাঁয়তারা চলছে।”
” বলোস কী। রুনাও শেষ পর্যন্ত এই ভুল করল ? ”
” কাউকে বিশ্বাস করা কী ভুল ? ” রেগে গেলাম আমি। মুন তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ” আরে সেই ভুল তো বলিনি গাধা। প্রেম করা ভুল হবে কেন। বসন্ত এলে কোকিল তো অটোমেটিকালি ডাকে। ওরে কারো শিখাতে হয়না যে, এটা বসন্তকাল, এখন তুমি ডাকো। সে নিজেই তার সর্বাঙ্গে বাসন্তি হাওয়ার পরশ অনুভব করে আর মনের আনন্দে কুউউ কুউউ করে। আমরা সবাই হলাম গিয়ে সেই কোকিলের দল। আমাদের শরীরে যখনই যৌবন আসা শুরু করে তখনই কোকিল প্রেমিরা আমাদের ঘিরে ফেলে আর আমরা তাদের পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করে দেই, কুউউ কুউউ। বোকামি বলতে আমি বুঝিয়েছি, নিজেকে সেইফ রাখাটা ওর দায়িত্ব ছিল। মানে জলে নামব কিন্তু শরীর ভেজাব না। প্রটেকশনের কথা বলছি বেকুব। ”
-” মানে, কীভাবে ? ”
-” এবার গাধামী কে করছে ? শালা, এইডাও তোরে বুঝানো লাগবে? ”
-” তুই প্রচুর ফালতু কথা বলছিস মুন। আসল কথা বলার সুযোগই পাইনি আমি। আগে বল, তোর প্যাচাল শেষ হয়েছে ? আমি কিন্তু সাংঘাতিক টেনশনে আছি। তোর এসব রসের আলাপ আমার ভাল লাগছে না।”
” চিন্তা করিস না দোস্ত। মুন মানে চান। আর চাঁদ মানেই অন্ধকারে আলো। তুই কালকে রুনাকে নিয়ে সোজা ধানমন্ডি চলে আয়। আমার পরিচিত এক গাইনি ডাক্তার আছে। কালকেই সব খাল্লাস করে ফেলব। ”
” আশ্চর্য, ঐ ছেলেকে কিছুই বলব না ? ”
” বলে যে কোন লাভ হয়না তা তো নিজের চোখেই দেখছোস। শান্তাটার অবস্থাই দ্যাখ, জামাইটা বিদেশে থাকে বলে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ফুর্তি করছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর ঐ *** বাচ্চা বয়ফ্রেন্ড হাওয়া। তবু তো শান্তার কপাল ভাল যে পরের মাসেই জামাই বাংলাদেশে চলে এসেছে। এখন বয়ফ্রেন্ডের নমুনা ওর জামাইয়ের ঘাড়ে। শান্তার থার্ড বেবিটা ওর জামাইয়ের বাকি দুই মেয়ের সাথেই মানুষ হচ্ছে। আর ওর শ্বাশুড়ি বুড়ি তো মহাখুশি, এতদিন পর পুত্রসন্তানের মুখ দেখেছে তারা। হা হা হা। ” ছেলেদের মত উচ্চস্বরে হেসে উঠল মুন। বিরক্ত লাগলেও চুপ করে রইলাম আমি। শান্তার ঘটনার সবটাই জানি আমি। অন্যান্য দিন হলে এটা নিয়ে অর্ধরাত পর্যন্ত গসিপ করতে পারতাম। কিন্তু আজ ইচ্ছা বা এনার্জি কোনটাই নেই। বিশেষ করে বাপির অসুস্থতা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আম্মুর কান্না তো থামছেই না। যতক্ষণ রুনাকে এই জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে না পারব ততক্ষণ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবো না।
অল্প কিছু কথা বলেই ফোন রেখে দিলাম। তার একটু পরেই খালিদের নম্বর থেকে ফোন এল। রিসিভ করে কানে চাপতেই সে বলল,” তোমার ফোন এনগেজড দেখাচ্ছিল। কার সাথে কথা বলছিলে ? ”
” বললে তো বিশ্বাস করবেন না। কাজেই বলে লাভ নেই।”
” হম, তা ঠিক। তুমি যা’ই বলো না কেন। আমার বিশ্বাস হবেনা।”
” তাহলে বাদ দিন।”
” না, বাদ দেব না। আমাকে জানতে হবে যে কোন প্রানে পারো তোমরা ? কী মনে করে বাড়িতে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পরও নিজে ঐ পথে পা বাড়াচ্ছ। সত্যি করে বলো তো, তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলে না? ”
রাগে আমার মুখে কথা আটকে গেল। কঠিন করে কিছু বলতে গিয়েও বাপির অবস্থা আর বাড়ির পরিস্থিতি ভেবে সহ্য করে গেলাম। মৃদু অথচ দৃঢ় স্বরে বললাম, ” না।” এতেই থমকে গেল খালিদ। হয়ত বোঝার চেষ্টা করছে আমি সত্য বলছি না মিথ্যা। কিছুক্ষণ পর সশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” আল্লাহই জানে। যাই হোক, তোমাদের এখান থেকে চলে আসার সময় রাস্তায় গাড়িতে বসেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। ভাবলাম কথাটা তোমাকে বলা দরকার। আমি ঠিক করেছি, আগামীকালই একটা স্থির সিদ্ধান্তে আসব আমি। মানে পেপারস রেডি করে আইনগত ভাবে মুক্তি দেব তোমাকে। সাধারণত বরের পক্ষ থেকে ডিভোর্স করার সময় এফিডেবিটে মেয়েটার চরিত্র হনন করে কিছু নোংরা কথা কমনলি লেখা হয়ে থাকে। আমি সেসব কিছু করব না। জাস্ট সোজা সাপ্টা লিখে দেব যে, তোমার সাথে আমার মনের মিল হচ্ছে না। ব্যাস্, কথা শেষ। এরপর তোমার পরিবারকে কীভাবে কী বোঝাবে তুমি জানো। আমি আমার পরিবারকে সামলে নেব। আর হ্যাঁ, তোমার আর এখানে ব্যাক করার দরকার নেই। কাল আমি তোমার কিছু কাপড় হিয়াকে দিয়ে পাঠিয়ে দেব। আজ থেকে তুমি ওখানেই থাকবে। এতে করে তোমার নিজেরও দুটো বড় বড় লাভ হবে। এক, তোমার পরিবার জানবে তোমাদের পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণেই তোমার বিয়ে ভেঙে গেছে। এতে তোমার নিজের কোন দোষ নেই। বরং তখন তারা তোমার বয়ফ্রেন্ডকে মেয়ের জামাই হিসেবে লুফে নেবে। আর তুমিও বাবার প্রিয়পাত্রী হয়েই রইলে। উল্টো কিছু বাড়তি অনুকম্পাও মিলবে তোমার। দুই, আমার মত ক্ষেতকে তোমার রোজ রোজ সহ্য করতে হবেনা। আর আমার দশ মন ওজনের সম্মানও তোমাকে বহন করতে হবেনা। তুমি হবে নির্দায়, নির্ঝঞ্জাট। কী, ঠিক আছে না ? রাস্তায় অর্ধেকটা ভেবেছি, বাকিটা বাড়ি ফিরে শুয়ে শুয়ে ভেবে বের করলাম বুদ্ধিটা।”
আমি স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো কেবল শুনে যাচ্ছিলাম। এবার বললাম, ” আর আপনার বাসায় কী বলবেন ? তারা তো আমার কথা জানতে চাইবে।”
-” সমস্যা নেই। তাদরকে অাপাতত কিছু বলার দরকার নেই। আম্মু জানে তোমার বোন রেজাল্ট খারাপ করার জন্য বিষ খেয়েছে। সে নিজেই বারবার বলছে, তোমার সেখানে কিছুদিন থাকা দরকার। সুযোগটা লুফে নিয়েছি আমি। ঘরে ফিরেই আম্মুকে সোজা বলে দিয়েছি যে, তোমাকে সাত/আটদিনের জন্য বাপের বাড়ি রেখে এসেছি। তোমার বোন আর বাবা দুজনই অসুস্থ।আম্মু রাজি। ”
” ওহ্, আচ্ছা। ঠিকআছে। রাখি তাহলে।” স্বাভাবিক গলায় বললাম আমি। অমনিই খালিদের ” এক মিনিট ” শব্দটা শুনে আবারও সচকিত হলাম।
খালিদ এবার মৃদু স্বরে বলল,” একটা সত্যি কথা বলি ? ”
আমি জবাব দিলাম না।
খালিদ বলে গেল, ” বাহ্যত তোমার কাজটা দেখতে খারাপ হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আনা। ”
আমি এবারও কিছু বললাম না। বুঝতে চেষ্টা করছি খালিদের কথা কোনদিকে যাচ্ছে। খালিদের কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সে চাপা স্বরে বলল, “অন্তত বাইরের বিষ যে তুমি আমার বংশে ঢুকিয়ে দাওনি বা আমার বংশধারাকে বিনষ্ট করোনি সে জন্য তোমার প্রতি হাজারবার কৃতজ্ঞ আমি। আজকের দিনে কতশত নারী যে স্বামীর ছত্রছায়ায় থেকে এই কাজটা করছে তার জরিপ করলে পাগল হয়ে যেতে হবে। আল্লাহর হাজার শোকর যে আমার কাঁধে পরের জোয়াল চাপেনি। অবিবাহিত থাকার সময় বিবাহিত বন্ধুদের মুখে ওদের ক্ষেদোক্তি শুনতাম। তারা অনেকেই তাদের স্ত্রী’দের বিশ্বাস করতো না। তখনও বিষয়টার ভয়াবহতা সেভাবে বুঝতাম না।
আজ নিজের বেলায় সেটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছি যে পরকীয়া কতটা নারকীয়। জীবনে এই প্রথম আজ নিজ হাতে ইসলামের অন্তত একটি বিধান কায়েম করার সাধ জাগছে মনে। যার নাম রজম।
চলবে