#কে!!
#১৩তম_পর্ব
হাবীবের কথা শেষ হতে না হতেই একটি ফোন এলো নির্ভীকের মোবাইলে। মোবাইলটা বের করতেই দেখলো আননোন একটা নাম্বার। নির্ভীক ফোনটা রিসিভ করতেই শুনতে পায় নীতির গলা। আড়ষ্ট কন্ঠে নীতি বলতে থাকে,
– হ্যালো, হ্যালো।
– নীতি? নীতি তুই ঠিক আছিস? নীতি কোথায় আছিস তুই? নীতি?
– নির্ভীক আ…..আমাকে বাঁচা, আমি জানি না কোথায় আছি। কিন্তু আমাকে বাঁচা
নীতির কথাগুলো আটকে আটকে যাচ্ছে। কাঁপা স্বরে নির্ভীককে সে কথাগুলো বলছে। নির্ভীকের বুঝতে বাকি রইলো না খুব বড় বিপদে রয়েছে নীতি। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে,
– তুই এমন করছিস কেনো নীতি? প্লিজ শান্ত হ, প্লিজ। আমাকে বল কোথায় আছিস? আমি এখনই আসছি।
– স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধ আমাকে এখানে রেখেছে। আমি ওকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ও খুব ডেঞ্জারাস। জানিস
নীতি কথাটা শেষ করার আগেই শুনতে পেলো,
– বাবুইপাখি, বাবুইপাখি কোথায় তুমি? লুকোচুরি খেলো না প্লিজ। বাবুইপাখি
কথাটা শোনা মাত্র নীতি চুপ হয়ে গেলো। নীতির কথাগুলো গলাতেই আটকে গেলো। তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দেয় সে। এই তিনদিনে সারাবাড়ি খুজে শুধু এই ফোনের সন্ধানটি মিলেছে তার। এই ফোনটি স্নিগ্ধ অফিস রুমের সাথে আছে। অফিস রুমে নীতির ঢোকার কোন পারমিশন নেই। আজ তবুও চামেচুমে ঢুকে পরেছে। কিন্তু এখন যদি স্নিগ্ধ তাকে এখানে দেখে ফেলে তবে এটা তার জন্য শুভ কিছু হবে না। স্নিগ্ধ এর আসল রুপ বেশ ভালো করেই দেখা হয়ে গেছে। প্রতিটা মূহুর্ত নীতি ভয়ে থাকছে, একটাবার চোখের আড়াল হতে দিচ্ছে না তাকে। স্নিগ্ধ এর সবকিছুই একটু মাত্রাতিরিক্ত, সামনে বসে থেকে খাওয়ানো, কোনো কারণ ব্যাতীত চোখের সামনে বসিয়ে রাখা; নীতি বেশ হাপিয়ে উঠেছে। পালাতেও পারছে না। স্নিগ্ধ পারলে বাথরুমেও নীতির সাথে ঢুকে পড়ে। এই তিনদিনে চার থেকে পাঁচ বার নীতির গায়ে হাত তুলেছে শুধু তাই নয়, আত্নহত্যা করার ভয় ও দেখাচ্ছে নীতিকে। স্নিগ্ধ এর কথা শুনার পর থেকেই নীতির বুকটা ধুকপুক করতে থাকে। রুম থেকে বের হতে হবে এখনি। নয়তো অনেক বড় বিপদ হবে। চুপিচুপি অফিস রুম থেকে বের হয়েই নিজের রুমে ঢুকে পড়লো নীতি। ঠিক তখনই পেছন থেকে স্নিগ্ধ তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– কোথায় ছিলে বাবুইপাখি?
ভয়ে গলা শুকিয়ে এসে লছে নীতির। স্নিগ্ধ কি তবে বুঝে গেছে। কাঁপা স্বরে বলতে থাকে,
– এখানেই ছিলাম, বারান্দায়
– মিথ্যে কেন বলছো? নির্ভীক বুঝি বারান্দায় থাকে?
স্নিগ্ধ এর কথায় নীতির অবস্থা যেনো আরো খারাপ হয়ে গেছে। কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। নীতি আমতাআমতা করে বললো,
– না আ….সলে
– এবার তোমাকে এই ভুল শাস্তি পেতে হবে সোনা
– কি শাস্তি?
– সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবে
বলেই আরো জোরে চেপে ধরলো নীতিকে স্নিগ্ধ। নীতির মনে হচ্ছে আত্নাটা খাঁচাছাড়া হয়ে যাচ্ছে তার। না জানি কি শাস্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য______
বিকেল ৪টা,
স্নিগ্ধ এর চেনা জানা সব আস্তানায় খোঁজ নেয়া হয়ে গেছে হাবীবের। তখন নির্ভীকের ফোন ট্রাক করে নীতির সব কথা শুনতে পারে সে। কিন্তু সমস্যাটা হলো স্নিগ্ধ এর বাড়ি কিংবা আস্তানা কোনো জায়গায় নীতির কোনো চিহ্নটুকু পায় নি হাবীব। নির্ভীক পাগলপ্রায় হয়ে ছুটছে। এখন একটা শেষ চেষ্টা করে দেখবে হাবীব। নির্ভীকের ফোনে নীতি যে নাম্বার থেকে ফোন করেছে তার নাম্বারটা উঠে আছে। হাবীব নাম্বারটার অবস্থান বের করার জন্য ট্রাই করছে। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ। অনেকবার ট্রাই ও করেছে ফোন দেওয়ার কিন্তু ফোনটা কানেক্ট হচ্ছে না। কোনোভাবেই স্নিগ্ধর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না হাবীব। কোনো একটা উপায় যদি পেতো। নির্ভীকের নিজের কাছে অসহায় লাগছে। নীতির কথাগুলো যেনো বুকে তীরের মতো বাঁধছে যেনো, কবে দেখা পাবে তার। নীতি ই পারে তার অশান্ত মনকে শান্ত করতে।
★★★★★★★
রাত ৮টা,
একটা চেয়ারে মুখে কাপড় দিয়ে একটি লোক বাধা। তার সামনে স্নিগ্ধ বসা, হাতে রিভালভার। বেশ ঠান্ডা গলায় বলে,
– বেশি জানাটা মানুষের জন্য কখনোই ভালো না। তুমি একটু বেশি জেনে গেছিলে, হাবীবের বাচ্চার সাথে মিলে আমাকে ধরার কথা চিন্তা করছিলে। কিন্তু কি হলো, হাবীব তো এখন তোমাকে খুজেই পাবে না নির্ভীক। নীতি, তুমি এমন একটা মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে পারলে? যে তোমাকে বাঁচানোর ক্ষমতাও রাখে না।
নির্বিকার হয়ে নীতি দেখে যাচ্ছে শুধু। তার একটা ভুলের জন্য নির্ভীককে আজ এতোটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। স্নিগ্ধের বাসার কাছে চলে এসেছিলো নির্ভীক। বাসায় ঢুকেও পড়েছিলো নীতির সাহায্যে; যেই না মেইন ডোর দিয়ে বের করে নিবে নীতিকে অমনি অতর্কিতে হামলা করে স্নিগ্ধ। নেশার বাজে রকম ডোজ দিয়েছে তাকে। চোখটুকু খুলতে পারছে না সে। স্নিগ্ধ এর টর্চারগুলো স্বাভাবিক নয়। সে তার শত্রুকে তিলে তিলে মারে। নির্ভীকের ক্ষেত্রেও তাই করেছে। নির্ভীকের শ্বাসরোধ করে রেখেছে, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। নীতির চোখ বাঁধ মানছে না। কেঁদেই চলেছে সে। স্নিগ্ধ তখন নীতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি কাঁদছো কেনো বাবুইপাখি? ওর জন্য? অন্য ছেলের জন্য কেনো কাঁদছো তুমি? ও তো তোমার যোগ্য ই না।
– ও…ওকে ছেড়ে দেও না স্নিগ্ধ। আমি ভুল করেছি ও তো করে নি।
– তোমাকে নিয়ে পালানোর কথা চিন্তা করছিলো সে। আমি তাকে ছেড়ে কিভাবে দেই বলো। আর তুমি তো আমার মতোই, ও তোমার যোগ্য না বাবুইপাখি।
কথাটা শুনে বেশ হকচকিয়ে যায় নীতি। স্নিগ্ধ হাতের রিভালভারটা নির্ভীকের দিকে তাক করে বলে,
– আমি আর খুন করতে চাই নি, তুমি আমাকে বাধ্য করেছো বাবুইপাখি। এখন এই বাধাটাকে সরিয়ে ফেললেই আমরা এক হয়ে যাবো, পুরো এক।
যেই না রিভালভার চালাতে যাবে স্নিগ্ধ। অমনি ই নীতি পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। বেশ হাতাহাতি ও হয়। ততক্ষণে হাবীব ও চলে আসে ওই জায়গায়। স্নিগ্ধ এর বাড়িটা নদীর উপরে। খুব কষ্টকরে এই বাড়ির খোজ পেয়েছে হাবীব। এটা যেনো শহরের থেকে বেশ বেশ দূরে। স্নিগ্ধকে হাবীবের লোকেরা ঘিরে ফেলে। একটা পর্যায়ে যখন আর কোনো উপায় খুজে পায় না স্নিগ্ধ। যখন হাবীব নির্ভীককে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তখন স্নিগ্ধ নিজের হাত ছাড়িয়ে থাইগ্লাসের কাছে চলে যায় স্নিগ্ধ। নীতিকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
– তুমি আমাকে এভাবে ধোকা দিলে নীতি? তুমি যখন আমাকে মারতেই চাও তবে সেটাই হোক বলে মাথায় বন্দুকটা চালিয়ে দেয় স্নিগ্ধ। অমনি থাই গ্লাস ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায় সে।
ঘটনার আকর্ষিকতায় নীতি হতবাক হয়ে যায়। এমন কিছু হবে কল্পনায় ও ছিলো না নীতির। আসলেই লোকটা মরে গেলো! সে তো কখনোই চায় নি লোকটা মারা যাক। আসলেই কি তবে জাল ভেদ করলো নীতি। স্নিগ্ধ এর হাত থেকে ছাড়া পেলো তবে!!
পনের দিন পর,
সামনা সামনি বসে আছে নির্ভীক এবং নীতি।নির্ভীক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। ওর অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। কিন্তু ঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি করায় বেঁচে গিয়েছে সে। নির্ভীকের সামনেও নীতি যায় নি এতোদিন। ধীর কন্ঠে নির্ভীক বলে,
– তুই এখনো ওই ট্রমা থেকে উঠতে পারিস নি তাই না?
– কোন ট্রমা?
– স্নিগ্ধ
নীতি কোনো কথা বলে না। চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। নির্ভীক ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাতজোড়া আলতো করে ধরে বলে,
– দুঃস্বপ্ন ছিলো, কেটে গেছে। এখন নতুন করে বাঁচতে শেখ নীতি।
– কিভাবে বলতে পারিস?
– নতুন কাউকে আকড়ে
– কাকে আকড়াবো বলতে পারিস?
– আমায় বুঝি চোখে পড়ছে না? অনেকদিন তো ফাতরামি করলাম এবার ভালোবাসতে চাই নীতি। একটা সুযোগ দে।
নীতি নির্ভীকের কিথায় কিছু উত্তর দেয় না। হ্যা নির্ভীককে ভালোবাসতো সে। কিন্তু যা হয়েছে তাতে কি আবারো কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে। আবার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে,
– আর তুমি তো আমার মতোই, ও তোমার যোগ্য না বাবুইপাখি।
না সে স্নিগ্ধের মতো না, একদম ই না। কিন্তু সেও তো অন্যায় কম করে নি। সেদিন দুটো ছেলের একটিকে সে খুন করেছিলো যে নির্ভীককে খুব মেরেছিলো। হয়তো স্নিগ্ধ কথাটা জানতো। কিন্তু কি করবে নীতি, ছেলেয়া নির্ভীকের গায়ে হাত তুলেছিলো। তাই সহ্য করতে পারে নি। স্নিগ্ধ যখন ওই ছেলেটার কাছে লোক পাঠিয়েছিলো তখন অলরেডি সে মৃত ছিলো। তবে কি নীতি ও স্নিগ্ধের মত হয়ে গেছে!! আচ্ছা নির্ভীক জেনে গেলে?
নীতি কিছু বলতে গেলেই তার ফোনটা বেজে উঠে। মোবাইলের স্ক্রিনে প্রাইভেট নাম্বার ভেসে উঠে। বেশ খানিকক্ষন ভেবে প্রাইভেট নাম্বার দেখে কৌতুহলের বশে ফোনটা ধরে নীতি। ফোনটা ধরতেই শুনে,
– বাবুইপাখি, আমাকে মিস করছো বুঝি।
কন্ঠটা শুনেই হাত পা কেঁপে উঠে নীতির। মুখ ফসকেই বেরিয়ে যায়,
– কে!!
||সমাপ্ত|
মুশফিকা রহমান মৈথি