কেন আমি ডাকি তারে -২৪
নিতু আসবে না বলেছে, কেন আসবে না রেহান সেটাও জানে। কিন্তু জোর করতেও পারছে না। নিতু একবারো নিজে থেকে রেহানকে ফোন করে নি৷ হয়তো ওর জানতেও ইচ্ছে করে না রেহান কেমন আছে। রেহান কয়েকদিনে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে।
চার পাঁচদিন পরে রেহানের মা রাতে খাবার সময় বললেন, এতদিন হয়ে গেছে, নিতু আসছে না কেন!
রেহান অস্বস্তি নিয়ে বলল, ওর শরীরটা ভালো নেই মা!
রেহানের মা বললেন, কোনো নতুন খবর আছে? আমাকে জানাবি না! বাপের বাড়ি রেখে আসছিস! ওর আব্বা মারা গেল, এই সময়ে ওর তো যত্ন হবে না!
রেহান বলল, আরে না! এমনিই আছে, কোনো খবর নেই।
ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি কাল একবার যাব, ওকে নিয়ে আসব তাহলে।
রেহানের হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা কতবারই তো নিতু কাছাকাছি এসেছে, ওর কি কনসিভ করার কোনো চান্স হয় নি! তাহলে হয়তো ও যেতে পারত না!
পরক্ষণেই মনে হলো, কি সব ভাবছে, মন না টানলে সেখানে থাকবে কিভাবে নিতু! একবার তো ফোনও করে না। রাতে রেহানের ঘুম হয় না। সারাক্ষণ মনে হয়, নিতু নিশ্চয়ই তুহিন বদটার সাথে কথা বলছে!
রেহান মাঝরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে শুরু করল।
হঠাৎই ফোন বেজে উঠল, নিতু! এত রাতে!!
নিতু, কোনো সমস্যা?
না, কেন?
এখন দেড়টা বাজে৷ তাই!
আচ্ছা। আপনি জেগে আছেন?
হ্যা।
কেন?
এমনিই।
সিগারেট টানছেন?
হুম!
কয়টা ফিল্টার জমা হলো?
রেহান তাকিয়ে দেখে তিনটা, তাই বলল, বাদ দাও!
কাল মা যাবেন তোমাকে নিয়ে আসতে চাইবেন। ওনাকে বুঝিয়ে বলে দিও তুমি আসতে চাও না।
আচ্ছা। আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন, কাল কথা হবে!
-কাল আবার কখন কথা হবে, রেহান মেলাতে পারে না।
রেহানের মা পরদিন নিতুদের বাসায় গেলেন। নিতু ফিরতে চাইছিল না, কিন্তু তিনি বললেন, এত দিন স্বামী রেখে দূরে থাকতে নেই, মন সরে যায় পুরুষমানুষের। তাছাড়া, রেহান মুখ শুকনো করে ঘুরছে, ভালোবাসায় আটকে রাখতে হয় মা!
নিতু মনে মনে বলল, সরেই তো আছে। আর আমাকে ভালোবাসে না। অন্য কাউকে ভালোবাসে।
তবে নিতু রেহানের মায়ের সাথে ফিরে এলো।
রেহানের ফিরতে একটু রাত হলো, ডিনার করে ফিরেছে। ইদানিং বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করে না একদম।
রুমে লাইট জ্বালিয়ে দেখল, নিতু শুয়ে আছে।
প্রথমে ভাবল, ভুল ভেবেছে, পরে দেখল না সত্যি।
নিতু!! ফিরে আসতে হলো মায়ের সাথে? -একটু হেয়ালি করে জানতে চাইল রেহান।
নিতু পাশ ফিরে বলল, হুম।
রেহান টাই আলগা করতে করতে বলল, সরি! ইচ্ছের বিরুদ্ধে কত কিছুই তো করতে হয় আমাদের!
নিতু উত্তর দিলো না।
তুহিন ফোন করে?
হ্যা!
গুড!
রেহান আর কথা বলল না। ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। নিতুকে পাশে নিয়ে আজ অস্বস্তি হচ্ছে। আগে কখনো এরকম হয় নি। ঘুম আসছে না।
কিছুক্ষণ পরে রেহান উঠে গিয়ে ডিভানে শুয়ে পড়ল। নিতু টের পেলো না। সকালের দিকে নিতু দেখল রেহান পাশে ঘুমায় নি। নিতু একবার ভাবল, রেহানকে ডাকবে। পরে ভাবল, থাকুক, রেহান একটু দূরে। হয়তো দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে। তবে আগে এটা ভাবলে বা মনে রাখলে এত কষ্ট হতো না। কই তুহিনের জন্য তো এমন লাগেনি কখনো!
দুদিন রেহান ডিভানেই শুয়েছে। তৃতীয় দিন নিতু গিয়ে পাশে দাঁড়ালো।
-আপনি বেডে আসুন! আমি এখানে থাকি।
-রেহান চোখ না খুলে বলল, না, ঠিক আছে।
-আরে, আসুন তো!
রেহান এবারে তাকিয়ে দেখল, নিতুকে গোলাপি নাইটিতে এত মোহনীয় লাগছে!এটা বান্দরবান যাওয়ার সময় কিনেছিল৷ তখন কত ছেলেমানুষি ভাবনা ছিল, এই কয়েক সপ্তাহে নিতু এত দূরে সরে গেছে৷
রেহান উঠে বসল। নিতুর নাইটির গলার কাছ থেকে ফিতা খুলে রাখা। আচ্ছা নিতু কি ওকে কাছে চাইছে! কিন্তু নিতু তো বলেছে, নিতু মন থেকে কাছে আসে না। এটা প্রাকৃতিক বিষয়! এই বিষয়টা প্রচন্ড অস্বস্তিকর।
-নিতু, তুমি শুয়ে পড়ো।
পরক্ষনেই মনে হলো, নিতু কি এভাবে এই পোশাকে তুহিনকে কল করেছিল।
-নিতু তুহিন ফোন করেছিল?
-না, কেন।
-করবে?
-করতে পারে৷
-পোশাকটা পাল্টে নিও।
নিতু মনে মনে হাসল, রেহান মারাত্মক হিংসুটে! বোঝা যায় না বাইরে থেকে!
নিতু নাইটির উপরের গাউনটা খুলে রেহানের গা ঘেষে বসল। রেহান মনে হচ্ছে কয়েকদিন ক্লিন সেভ করে নি!
ওর গাল ছুঁয়ে দিলো নিতু! স্লিভলেস ইনারে নিতুর টুকটুকে ফর্সা বাহু দেখা যাচ্ছে।
রেহান উঠে বসে, গাউনটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, প্রাকৃতিক টানে আর কাছে আসার দরকার নেই নিতু, দূরে গেলে ভীষণ কষ্ট হয়! তোমার হয়তো হচ্ছে না। আমার হচ্ছে।
নিতু গাউনটা ছুড়ে ফেলে রেহানের কোলে আচমকা ধপ করে বসে পড়ল!
রেহান নিতুকে আলিঙ্গন করে বলল, এভাবে কাছে এসো না নিতু প্লিজ। তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারছি না।
রেহানের মুখটা বুকে চেপে নিতু মনে মনে ভাবল, আমারও কষ্ট হচ্ছে৷ তাই তো কাছে এলাম, কিন্তু সায়রা!! তোমাকে যখন ডাকবে, তুমি আমাকে ভুলে যাবে রেহান!
ওকে তো তুমি ভালোবাসো! নিজেই বলেছিলে!
আচ্ছা এমন কি হতে পারে, শারিরীক টান না, রেহান এখন আমাকে ভালোবাসে!
রেহান নিতুকে এলেমেলো চুমু খাচ্ছিল। নিতু হঠাৎ ভীষণ আবেগে রেহানকে বলল, আই লাভ ইউ রেহান!
রেহান থেমে গেল!
ট্রু?
নিতু ঘাড় নাড়লো।
লাভ ইউ টু নিতু! এটাই সত্য! আর কোনো সত্য নেই!
নিতু রেহানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল।
রেহান নিতুকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো!
আজ আর কোনো দ্বিধা নেই!!
শানজানা আলম
সমাপ্ত