কেন আমি ডাকি তারে -১৮
গলায় পরা হারটা খুলে বেডসাইড টেবিলে রেখে রেহান নিতুর শাড়ির আঁচলের সেফটিপিন খুলে নিলো। নিতু আঁচল ধরে বলল, রেহান, আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছি, হাতে না৷ আপনি ফান বোঝেন না!! আশ্চর্য তো!
রেহান অপ্রস্তুত না হয়ে বলল, বুঝব না কেন, এটা তো ফান ছিল না।
নিতু একটু লজ্জা পেয়ে বলল, মোটেই না। ফানই ছিল। আমি দেখে নিচ্ছি।
রেহান সরে গিয়ে বলল, ঠিক আছে৷
নিতু আশা করেনি রেহান সরে যাবে৷ ওর পরক্ষণেই মনে হলো, রেহান একটা জটিল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সায়রাকে বিয়ে করার জন্য রেহান এমন অদ্ভুত একটা শর্তে নিতুকে বিয়ে করেছে, সেই সায়রা! এতটাও অগুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়! আর নিতু কিনা রেহানের সাথে একটা মিথ্যে নাটকীয় সম্পর্কে ঢুকতে যাচ্ছে!
নিতু এটা কীভাবে করতে পারল!
নিতু বলল, রেহান, আপনি একটু রুমের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবেন প্লিজ!
রেহান অবাক হলো, প্রথমে ভেবেছিল, নিতু রিয়াক্ট করবে, সেটা তখন করল না কিন্তু এখন কিছু একটা ভেবে রেহানকে বাইরে পাঠাতে চাইছে। রেহান বলল, যাচ্ছি।
সায়রা ফোন করছিল বারবার, তাই রেহান এগিয়ে গিয়েছে, সায়রাও বের হয়ে এসেছে৷
রেহান- বলে সায়রা রেহানের বুকে মাথা গুজল।
রেহান ধরল না সায়রাকে৷ কয়েক সেকেন্ড পরে সায়রাকে সরিয়ে দিলো।
রেহান আমি কি করলে তোমার রাগ কমবে?
আমি ভুলে গিয়েছিলাম, মাত্র আর কয়েকটা মাস।
রেহান বলল, যেটা করেছ, সেটা খুব খারাপ করেছ। আমি স্বাভাবিক হতে পারছি না সায়রা। বেটার আমাকে আর ফোন করো না।
মানে কি, তুমি কী ব্রেক আপ করতে চাইছ?
ব্রেক আপ কিনা জানি না, তবে ব্রেক চাইছি।
আমি এমন কি করলাম, তোমার পাশে অন্য কাউকে আমি কীভাবে সহ্য করব? আমাকে বলে দাও! তুমি পারতে আমার পাশে অন্য কাউকে দেখতে?
রেহান বলল, সব সময়ই দেখে আসছি, তোমার অসংখ্য ছেলেবন্ধু যাদের সাথে তুমি ডে নাইট আউট করো। আমি কখনো অন্যভাবে নিই নি। সত্যি বলতে তোমার শপিং বা টাকার দরকার ছাড়া আমার সাথে ভালো করে কথা বলারও তোমার সময় হয় না!
রেহান এত বড় কথাটা তুমি আমাকে বলতে পারলে!
পারলাম, এর চাইতেও বড় কাজ তুমি করেছ সায়রা। লিসেন, আমার একটা ব্রেক প্রয়োজন। আরো ছয়মাস নিতু আছে, এই সময়টা আমি ব্রেক চাই। নিতু আমার সাথে থাকতে আসে নি। ও চলে যাবে। এর পরে আমি ভেবে দেখব, আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার মন স্যাটিসফাইড হবে কিনা৷ আশা করি আমার থেকেও ভালো এটিএম কার্ড তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
সায়রা ফোন হাতে নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে রেহানকে ত্রিশ হাজার টাকা ব্যাক করে বলল, এই টাকাটার জন্য তুমি এতগুলো কথা বললে আমাকে। আগে কখনো বলো নি।
তুমি ব্রেক নিতে চাও, নাও। কিন্তু আমাকে অপমান করার আগে আমার লেভেল সম্পর্কে তোমার ধারনা করা উচিৎ ছিল৷
ভালো থেকো রেহান। আমরা একটু পরে চলে যাব। সরি এগেইন৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি, এটা মনে রেখো।
রেহান কিছুই বলল বা। সায়রাকে কখনো এতটা বিরক্তিকর মনে হবে, ভাবতেও পারে নি রেহান। সায়রা চলে যাবে শুনে হাপ ছেড়ে বাঁচল মনে হচ্ছে।
নিতু চেইঞ্জ করে বিছানায় বসে রেহানকে ফোন করল। রেহান বাইরে চলে গিয়েছিল। সায়রা হেঁটে হেঁটে আসছে দেখে রেহান এগিয়ে গেল৷ নিতু বারান্দা থেকে দেখল, রেহান সায়রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন যেন নিতুর প্রচন্ড রাগ হলো, রাগের জন্য কান্না পেয়ে গেল। নিতু ভেতরে যেতে পারল না। দূর থেকে রেহান আর সায়রাকে দেখতে লাগল।
রেহানকে ফিরে আসতে দেখে নিতু চট করে রুমে ঢুকে গেল।
রেহান ঘরে ঢুকে সোফায় বসে পেপারটা হাতে নিলো।
নিতু কিছু বলল না, গাল ফুলিয়ে বসে রইল।
রেহান খেয়াল করে পেপারে চোখ রেখে বলল, আকাশে এত মেঘ কেন? কি হলো আবার?
নিতু চোখ মুছে বলল, কিছু হয় নি।
রেহান বলল, বারান্দায় গিয়েছিলে?
নিতু বলল, কেন, বারান্দায় যাওয়া কি নিষেধ?
রেহান বলল, না নিষেধ হবে কেন!
নিতু উত্তর দিলো না। রেহান পেপার রেখে উঠে নিতুর কাছে গিয়ে বলল, রাগ করো না। একটু দরকার ছিল, তাই কথা বলতে গিয়েছিলাম।
নিতু বলল, রাগ কেন করব, আশ্চর্য! রাগ করার কি আছে! আপনি যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তুহিন ফোন করলে কি আপনার রাগ হয়?
রেহান নিতুর চোখে চোখ রেখে বলল, হয়!
নিতু হতভম্ব হয়ে চুপ করে গেল।
চলবে
শানজানা আলম