কেন আমি ডাকি তারে- পর্ব ১৫

0
803

কেন আমি ডাকি তারে -১৫

নিতু ঘুমাচ্ছিল। রেহান উঠে তৈরি হয়ে অফিসে বের হয়ে গেল। আজ আর অপরাধবোধ লাগছে না৷ দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে কাছাকাছি থাকলে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়, এটাই স্বাভাবিক। মনের দিক থেকে ভালোবাসা না থাকলেও হয়৷ আর রেহান তো নিতুকে অপছন্দ করে না। বরং বেশ পছন্দ করে। নিতুও মনে হয় তাকে অপছন্দ করে না৷

রেহান অফিসে চলে যাওয়ার পরে নিতু উঠল ঘুম থেকে৷ গতরাতের বিষয়টা স্পষ্ট মনে আছে। রেহান কাছে আসায় একটুও খারাপ লাগে নি, বিষন্নতা কেটেছে!

ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো নিতু। বাসায় সবাই নিতুকে খুবই ভালোবাসে। নিতুর প্রতিমুহূর্তে মনে হয়, এরকম সম্পর্কটা যদি সত্যি হতো! কয়েকদিন পরে নিতু চলে যাবে, এটাই সত্য।
সবার সাথে যতই ভালো সম্পর্ক হোক, রেহান যতই সাপোর্ট করুক! ওর গার্লফ্রেন্ড অপেক্ষা করে আছে। রেহান এত কেয়ারিং একটা মানুষ, ওকে নিশ্চয়ই সায়রা হারাতে চাইবে না।

★★★

লাঞ্চের সময় সায়রা ফোন করল রেহানকে।
রেহান, আজ আসো, প্লিজ, একসাথে লাঞ্চ করি।

রেহান বলল, হঠাৎ?

এমনিই, তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।

রেহানের একদম ইচ্ছে করছিল না, তবুও বের হয়ে রেস্টুরেন্টে।

সায়রা অলরেডি টেবিল বুক করে সব অর্ডার করে দিয়েছে।

তোমাকে ফ্রেশ লাগছে রেহান, ভীষণ হ্যান্ডসাম!

তুমি একথা বলছ!

কেন, বলতে পারি না?

তোমার ইদানিং ব্যস্ততা বেড়েছে অনেকটাই।

হুম, একটা সুখবর দেই, আমার জব হয়েছে। বললাম না ট্রেইনিং, ওটাই।

হুম, কি জব? কী কোম্পানি?

সায়রা একটা কার্ড বের করে দিলো।

কি পোস্ট?

এক্সিকিউটিভ। আমার কাজ এম ডি এর সাথে।

দেখো সায়রা, এধরণের প্রাইভেট জবগুলোতে স্মার্ট মেয়ে নেওয়া হয় অনেক কারণ থাকে। অনেকটা শো অফ করার জন্য অথবা আরো অনেক কিছু৷ তোমার তো পড়া শেষ হয় নি। কি দরকার এগুলো করার!

রেহান, তোমার কাছ থেকে আমি এটা আশা করি নি। তুমি এত ছোটো মনের, আমি ভাবতেই পারি না। সবাই তোমার বউয়ের মত বউ সেজে বসে থাকতে পারে না।

রেহান বলল, আমার বউয়ের কথা আসল কেন এখানে?

বাবাহ, তুমি দেখছি খুব পসেসিভ! কি ব্যাপার! সেদিন আমাকে রেখে চলে গেলে, বউয়ের সাথে খুব জমছে, তাই না!

রেহান ওয়েটারকে ডেকে বলল, বিলটা দিয়ে দাও।

সায়রা বলল, আমি পে করব। তোমার দিতে হবে না।

রেহান উঠে বলল, দেন ওকে। আসছি।

সায়রা বলল, আমি তোমাকে বিশ্বাস করে বসে আছি রেহান। আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা কোরো না।

রেহান বলল, এসব কথার মানে কি!

সায়রা বলল, কোনো মানে নেই!

রেহান চলে গেল। নিতু ফোন করে বলেছে, ও বাপের বাড়ি যাচ্ছে। সেই বিয়ের পরে একবার গিয়েছে, আর যাওয়া হয় নি। যাক। অসুবিধা নাই। ঘুরে আসুক।

কিন্তু অসুবিধা ছিল, রাতে বাসায় ফিরেই রেহান টের পেল।
একটু আগেই ফিরেছিল আজ৷ সমস্ত বাসা খা খা করছে,কোথাও যেন কোনো মানুষ নেই!
রুমটা পরিপাটি করে গোছানো, নিতু নেই। নিতুর কসমেটিকস গুলো ড্রেসিং টেবিলে রাখা। বারান্দায় কোনো জামাকাপড় নেই৷ আলমারির যে পাল্লায় নিতুর পোশাক থাকে, রেহান টেনে খুলে দেখল, সবই গোছানো আছে। অলিভ সফট টাওয়েলটা হাতে নিয়ে রেহান নাকের কাছে নিলো, নিতুর সুবাস নাকে এসে লাগল।
মন কেমন করা মায়া মায়া সুগন্ধ।

রেহান আর দেরী না করে রুম থেকে বের হলো, গাড়ি বের করতে হবে। নিতুকে নিয়ে আসতে হবে।

মা জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছিস?

নিতুকে নিয়ে আসি।

আজই তো গেল।

হ্যা, আমরা বান্দরবান যাব, গোছানোর কাজ আছে।

তবুও, একদিন থাকুক। ওর বাবাও অসুস্থ। আর গেলে তুই জামাকাপড় নিয়ে যা, আজ থেকে কাল নিয়ে আয়।

রেহান মনে মনে ভাবল, জামাকাপড় নিয়ে থাকতে চলে যাবে, বিষয়টা কেমন যেন!

তাই কিছু না নিয়েই বের হয়ে গেল।

নিতুর ভাবী নিতুকে জিজ্ঞেস করল, কি খবর নিতু? রেহান কেমন আচরণ করে?

নিতু বলল, ভালো৷ খুবই ভালো মানুষ৷

ভাবী বলল, ভালো হতো যদি সব স্বাভাবিক হতো, আব্বা থাকতে আবার কত ভাঙাচোরা দেখবেন!

নিতু কথা বলল না।

রেহান আসবে আজ?

তেমন কিছু বলে নি।

কিন্তু নিতু একটা কাজ করেছে, রেহানের একসেট জামা কাপড় ব্যাগে করে নিয়ে এসেছে। কেন যেন মনে হচ্ছে আসতেও পারে।

ভাবী হাসতে হাসতে বলল, যদি সম্পর্ক তৈরি হতো, তাহলে চলে আসত, থাকতে পারবে না৷ প্রথম দিকে তোমার ভাই, মনে নেই!

নিতু হাসল, খুব মনে আছে। মনে মনে ভাবল, সম্পর্ক তো একটা হয়েছে, হয়তো ভালোবাসা না, প্রেম না৷ কিন্তু শারিরীক তো! সেটাও তো একটা টান। নিতু তো এড়াতে পারে নি! রেহান হয়তো এত গুরুত্বও দেয় না। ন্যাচারাল কারণে কাছে আসে।

ভাবী রাতের খাবার বাড়তে বাড়তে বলল, নিতু রেহানের জন্য খাবার রেখে দিই৷ যদি আসে।

নিতু কিছু বলল না, একবার ফোন ও করে নি আসবে না। কিন্তু ডিনারে বসার সাথে সাথেই কলিংবেল বেজে উড়ল।
নিতু আগ্রহ নিয়ে দরজায় তাকালো।

ভাবী নিতুকে বলল, যাও দরজা খুলে দাও।

নিতু বলল, ভাবী কি যে বলো না!

দেখো! ঠিক হয় কিনা!

নিতু দরজা খুলতেই রেহানকে দেখে মিষ্টি করে হাসল। রেহানের ক্লান্ত লাগছিল, নিতুর হাসিটা দেখে ক্লান্তি হাওয়ায় উবে গেল!

কি হচ্ছে এসব!!!

চলবে

শানজানা আলম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here