কৃষ্ণময়ীর অলংকার পর্ব ৯

0
1175

#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ০৯

পলক রেডি হয়ে খাবার টেবিলে এলো। পায়েল অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছিল পলকের আসার। কিছু বলার জন্য উসখুস করছে সে।
দু লোকমা মুখে দিতেই পায়েল আমতা আমতা করে বলল,
“পলক তোর সাথে জরুরী কথা ছিল।”
পলক খাবার চিবাতে চিবাতে বলল,
“কি বলবে মা? বলে ফেলো তাড়াতাড়ি। অফিসে আজ কাজের চাপ অত্যাধিক।”
পায়েল ভেতরে সাহস সঞ্চার করে বলল,
“রাত্রির মা ফোন করেছিল।”
পলক ভ্রু কুঁচকে ফেলল।
” তোমার বান্ধবী তোমাকে কল দিয়েছে। ভালো কথা। কিন্তু সেটা আমাকে বলছো কেন মা?”
“তোর সাথে রাত্রির বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল এখন তো অফিস জয়েন করেছিস। বিয়ে করবি না?”
পলক খাওয়া থামিয়ে দিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে বলল,
“আমি কবে বললাম রাত্রিকে বিয়ে করবো? হ্যা বিয়ে তো আমি অবশ্যই করব। তবে অন্য কাউকে। তোমার রাত্রিকে নয়। সেটা ওকে এবং ওর মা দুজনকেই খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিও।”
“কেন?”
পলক সোজা হয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে বলল,
“একটাই জীবন মা। এই ছোট্ট জীবনে আমি সুখী হতে চাই। সংসারী হতে চাই।ভাল বাসতে চাই। ভালবাসা পেতেও চাই। কিন্তু ওকে বিয়ে করলে এর একটাও আমার কপালে জুটবে না। হ্যা এটা সত্যি ও আমাকে চায়। মারাত্মক ভাবেই চায়।কিন্তু সেটা কেবলমাত্র ওর জেদ। ভালবাসা নয় মা। ওর মত মেয়েরা সংসারের বাঁধনে বাঁধা পরতে চায় না মা। কেবল উড়ো পাখির মত উড়ে উড়ে বেড়াতে চায়। তুমি আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে যেতে বলেছো আমি বিনাবাক্যে সরে গেছি। রাজনীতি আমার জীবনে খুবই ইম্পর্ট্যান্ট ছিল। ইম্পর্ট্যান্ট হলেও সেটা কিন্তু আমার জীবন নয়। জীবনের একটা অংশ মাত্র। কিন্তু বিয়ে? এটা আমার সারা জীবনের প্রশ্ন। আমি তো আমার জীবন কে জেনেশুনে এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিতে পারি না মা। তুমি ওদের বলে দিও পলক তাজওয়ার নিজের জীবনসঙ্গী নিজেই খুঁজে নেবে। সেটা নিয়ে কারো আগ বাড়িয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।”

ভার্সিটি জুড়ে সাজ সাজ রব। লোকমুখে চলছে কানাঘুঁষা। সকলের প্রিয় ছাত্র সংগঠনের সভাপতি পলক তাজওয়ার পদত্যাগ করছেন। যার আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয়েছে আজ। আয়োজিত জনসভায় ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে হাজারো ছাত্রছাত্রী।
তপা নির্লিপ্ত নয়নে চেয়ে দেখছে তার এতগুলো দিনের চেনা মানুষটার বিদায়বেলার আয়োজনে মেতে উঠা ছাত্রদের। সত্যি সত্যি লোকটা চলে যাবে? ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল তপার। কিন্তু তারই বা কি করার আছে? কেনই বা মন খারাপ হচ্ছে? কে হয় সে তপার? আত্মীয়? বন্ধু? না তো। কোনোটাই নয়। তবে কিসের এই বিরহ? কিসেরই বা বিষাদময় অনূভুতি?

শুভ্র পাঞ্জাবিতে নিজেকে সজ্জিত করা মানুষটি ধীরে ধীরে উঠে গেল মঞ্চে। যা কেবল এবং কেবলমাত্র তারই জন্য সাজানো। তার পদস্পর্শ পেয়ে যেন মঞ্চটাও আজ ধন্য হয়ে গেল। তপা এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল শুভ্র পাঞ্জাবি পরিহিত মানুষটির দিকে।
তাকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হলে মৃদু হেসে মাউথ স্পিকারে হাত দিয়ে তার লেবেলে নিল সে। গলা ঝেড়ে শান্ত কণ্ঠে সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল।
“আসসালামু আলাইকুম আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং প্রিয় ভাই বোনেরা। অসময়ে আপনাদের এভাবে একত্রিত করার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। কিন্তু কি করব বলুন। বিদায়ী ঘন্টা বেজে গেছে। চলে যাওয়ার আগে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের একবার একযোগে দেখার বড্ড ইচ্ছে ছিল। তাই তো এই আয়োজন। আমি বিশ্বাস করি একজন মানুষের সার্থকতা নিহিত থাকে তার কর্মে। আমি চেষ্টা করেছি আমার সবটুকু দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে। তাদের সমস্যার সমাধান করতে। কিছু সময় পেরেছি। আবার হয়তো বা কিছু সময় পারিনি। আমার চোখের সামনে হওয়া অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ আমি করেছি। এজন্য অনেকের সাথে ঝগড়া, মারামারিতে জরিয়ে গেছি। যাদের সাথে এতটুকু অন্যায় আমি করেছি তারা দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার ইচ্ছে ছিল রাজনীতির সাহায্যেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। না চাইতেও সরে যেতে হচ্ছে আমার স্বপ্নের সিঁড়ি থেকে। কিন্তু আমি নেই বলেই এটা ভাববেন না আমি আর আসব না। হ্যা আমি আসব এখানে। এই ভার্সিটি আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানে না আসলে বাঁচব কি করে? কারো কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করার। আমার জায়গায় যে আসবে তাকেও আমার মত করেই ভালবাসুন। সবাই অনেক স্বপ্ন নিয়েই এই পথে পা বাড়ায়। সেই মানুষটিকেও তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করুন। সর্বোপরি নিজেরা ভাল থাকুন। নিজেকে ভালবাসুন, নিজের পরিবারকে ভালবাসুন, দেশকে ভালবাসুন। জীবন দিয়ে হলেও নিজের দেশকে রক্ষা করুন। আল্লাহ হাফেজ।”
বক্তব্য শেষ করে নিজের জায়গায় গিয়ে চুপ করে বসে পড়ল পলক তাজওয়ার। সামনে সহস্র শিক্ষার্থী তাদের প্রিয় ভাইয়ের বিদায়বেলার বেদনাদায়ক মূহুর্তের সাক্ষী হিসেবে বসে আছে। তপা রয়েছে মাঝামাঝি জায়গায় একটা চেয়ারে বসে। পলক হয়তো তাকে দেখতে পায় নি। কিন্তু তপা দেখছে খুব ভাল করে।
লোকটা সেই যে মাথা নিচু করেছে তার তোলার নামই নিচ্ছে না। আচ্ছা সে কি কাঁদছে? তপার ভেতরে উথাল-পাথাল ঢেউ শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। তবে কি তার মনের কোণেও তৈরী হচ্ছে সুপ্ত অনূভুতি?

সজলের ফোন পেয়ে পলক হন্তদন্ত হয়ে ছুটল সিঁড়ির দিকে। দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির কাছে পৌঁছাতেই দেখল তপা মাটিতে পড়ে আছে। সজল পাশে বসে মাথা চেপে ধরে রয়েছে। পলক দৌড়ে গিয়ে তপার পাশে বসলো। সজলের হাত সরিয়ে দেখল কপালের অনেকটা জায়গা কেটে গেছে। সেখান থেকে দ্রুত বেগে গড়িয়ে পড়ছে গাঢ় লাল রঙা তরল পদার্থ। তপা নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেছে।
পলক দিকবিদিকশুন্য হয়ে দু’হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিল। দৌড়ে এগিয়ে গেল গেইটের দিকে। শুভ্র পাঞ্জাবির বুকের কাছটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার।

বেশ কয়েক ঘন্টা পর মিটিমিটি তারার মতো পিটপিট করে তাকাল তপা। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখল পলক তপার হাত ধরে বসে আছে। তপাকে চোখ খুলতে দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল উষ্ঠকোণে। তপা উঠে বসার চেষ্টা করতেই পলক হাত ছাড়িয়ে দুবাহু ধরে সাহায্য করল বসতে। পায়ের দিকে তাকিয়ে তপা আঁতকে ওঠে চেঁচিয়ে বলল,
“একি?”
বলতে বলতে কপাল চেপে ধরল। মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে তার।
মিহি কণ্ঠে বলল,
“পায়ের এই অবস্থা কেন আমার? ব্যান্ডেজ কেন? ভেঙে গেছে?”
পলক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“না। ফ্যাকচার হয়েছে। দুমাস রেস্টে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে। এক্কেবারে বেড রেস্ট। তাহলে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।”
তপা চিন্তিত হয়ে পড়ল। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল। এখন বেড রেস্টে থাকলে কি করে চলবে?
“চিন্তার কিছু নেই তো। ঠিক হয়ে যাবে ডক্টর বলেছে। শুধু শুধু মুখটা হাঁড়ি করে রাখবে না।”
তপা চোখ পিটপিট করে বলল,
“আমি মুখ হাঁড়ি করে রেখেছি? সিরিয়াসলি? আমার মুখ হাঁড়ির মতো?”
পলক ঠোঁট টিপে হাসছে। তপা নিজেই কিছুক্ষণ বিরবির করে থেমে গেল।

নিজের বাসার সামনে এসে তপা ঈষৎ অবাক হলো। ও তো পলক কে ঠিকানা বলে দেয় নি। তবে উনি জানলো কি করে? তপার আকাশ কুসুম ভাবনায় জল ঢেলে পলক মৃদু স্বরে শুধালো,
“এক পায়ে এক মিনিট দাঁড়াতে পারবে?”
তপা আশেপাশে দেখে বলল,
“আমি তো চিলেকোঠায় থাকি। আপনি তাজমহলের সামনে কেন নিয়ে আসলেন?”
পলক মুচকি হেসে বলল,
“কারণ আজ তুমি তাজমহলে থাকবে।”
“আমি কেন এখানে থাকব? এটা কার ফ্ল্যাট তাই তো জানি না। কোন শাহজাহান এসে তার মমতাজের জন্য বানিয়েছে কে জানে। আমি এখানে থাকব কেন?”
পলক ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এত কথা বলতে পারে এই মেয়ে। তুমি দাঁড়াতে পারবে? নয়তো দেখ আমার পকেটে চাবি আছে বের করো।”
“আচ্ছা নামিয়ে দিন। ”
তপা দেয়ালে ভর দিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে চোখ পিটপিট করে দেখছে পলকের কান্ড কারখানা। পলক পকেট হাতড়ে চাবি বের করে তালা খুলে দিল। ভেতরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এসে তপাকে কোলে তুলে নিল। তপা অবাক হয়ে কেবল দেখছে পলক কে। সবকিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এটা কার ফ্ল্যাট? পলক কেনই বা তাকে এখানে নিয়ে এলো?
তপা কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমার রুমের চাবি দাও। আর কি কি নিয়ে আসতে হবে বলো। আমি নিয়ে আসছি এক্ষুনি। ততক্ষণ তুমি একটু বসো। একা একা পাকনামি করবে না। আমি এসে ওয়াশরুমে দিয়ে আসব। ওকে?”
তপা মিনিটখানেক চুপ থেকে শান্ত কণ্ঠে বলল,
“আমাকে আমার রুমে দিয়ে আসুন।”
পলক জানতো তপা এখানে থাকতে রাজি হবে না। এই মেয়েকে সে এ কদিনে হারে হারে চিনেছে।
হাঁটু গেড়ে তপার সামনে বসে বলল,
” তুমি তো একা থাকো। ওয়াশরুম যেতে হলে কিভাবে যাবে? রাতে খাবে কি? সন্ধ্যা তো হয়েই গেছে। এই পা নিয়ে নড়াচড়া করতে পারবে? রাতে মাথার যন্ত্রণা যদি বেড়ে যায়? তখন কি করবে? তার থেকে এখানে থাকাটা ভালো নয় কি? কাল রাতে হসপিটালে মাথার যন্ত্রণায় তুমি কিভাবে ছটফট করেছো সেটা আমি জানি। দেখেছি এই দুচোখে। একা একা থাকতে পারবে না তুমি।”
তপা কিছু না বলে হাত কচলাতে শুরু করেছে। পলকের কতগুলো সত্যি। কিন্তু তাই বলে ও এভাবে একটা অচেনা মানুষের সাথে থাকতে পারে না। লোকে কি বলবে?
“তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো? ভাবছো তোমার সুযোগ নেব? রাত গভীর হলে তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়বো?”
তপা চোখ তুলে পলকের দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে দুবার মাথা নাড়ালো। পলক ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল তপার মুখাবয়ব দেখে। পরক্ষণেই কিঞ্চিৎ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তাহলে চাবি দাও।”
তপা মিহি স্বরে বলল,
“লোকে কি বলবে?”
পলক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তুমি না খেয়ে থাকলে লোকে একবেলা খাবার দেবে? তবে ভাবছো কেন? তাছাড়া তুমি পলক তাজওয়ারের রেসপন্সিবিলিটি। সম্মান হারানোর ভয় পেও না। আমি থাকতে তোমার অসম্মান হবে না। হতে দেব না আমি। তাছাড়া এটা আমার ফ্ল্যাট। এখানে সচরাচর কেউ আসে না। ভয় নেই। তুমি বসো আমি আসছি দুমিনিটে। ওকে?”

তপা বিছানায় বসে চোখ বুলিয়ে নিল রুমের আনাচে কানাচে। গোছানো, বেশ পরিপাটি রুম। এলোমেলো ভাবনার মধ্যে হঠাৎ সেদিনের কেক রেখে যাওয়ার ঘটনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল তপার। তবে কি সেদিন পলক ছিল ফোনের ওপারে? তার অর্ডার করা কেকই সে এখানে রেখে গিয়েছিল?

পলক দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখল তপা মাথায় হাত রেখে বসে আছে। এলোমেলো চুলগুলো পিঠ জুড়ে ছড়ানো ছিটানো। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
“নাও তোমার সব জিনিসই নিয়ে এসেছি। এখন ফ্রেশ হয়ে নাও।”
বলে তপার বলার অপেক্ষা না করেই ঝটপট কোলে তুলে নিল। যেন এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। তপা প্রতিবার কোলে তোলার সময় হাত পা শক্ত করে ফেলে। কিন্তু পলক? সে স্বাভাবিক। মনে হয় এটা প্রতিদিন রুটিন মাফিক চলে আসছে। তপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। লোকটা যে আগাগোড়াই এমন এটা এ ক’দিনে খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে ও। তাই বেশি ঘাটাল না ব্যাপারটা।
পলক তপা কে ওয়াশরুমের ভেতরে নামিয়ে বলল,
“পারবে তো?”
তপা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“না পারলে কি এখানেই থাকবেন?”
পলক মৃদু স্বরে ফিসফিস করে বলল,
” তুমি চাইলে। আমার কোনো আপত্তি নেই।”
তপা চোখ পাকাতেই পলক তাড়াহুড়ো করে বলল,
“যাচ্ছি তো। এভাবে তাকানোর কি আছে। আশ্চর্য।”
বের হয়ে দরজা টেনে দিতে দিতে মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
“সাবধানে হ্যা?”
তপা মৃদু হেসে চোখের পলক ফেলে বোঝালো সে সাবধানেই ফ্রেশ হবে।
তপা দরজা ঠেলে চেঁচিয়ে বলল,
“আমার তোয়ালে কোথায়?”
পলক জিহ্বায় কামড় দিল। তোয়ালে আনতে ভুলে গেছে। নিজের তোয়ালে নিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ভুলে গেছি। আমারটা ব্যবহার করো।”
তপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“লাগবে না। আই উইল ম্যানেজ।”
পলক মৃদু হেসে বলল,
“আমার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নেই।”
তপা বিনিময়ে আরও একটুখানি হেসে বলল,
“আমার স্পর্শে যদি আপনি কালো হয়ে যান?”
পলক ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
” তাহলে আমি বারবার তোমাকে ছুঁয়ে দেব।”
তপা বিরক্ত ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে তোয়ালে নিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিল।

লম্বা চুলে চিরুনী চালাতে চালাতে তপা কৌতূহলী গলায় বলল,
“আপনি কি এখানেই থাকেন?”
পলক হা করে তপার চিরুনী করা গিলছিল। তপার কথায় হকচকিয়ে গেল। কোনো মতে নিজেকে সামলে বলল,
“হ্যা। না মানে থাকি তবে সবসময় না। যখন প্রয়োজন হয় তখন। তাছাড়া মা বাবার সাথেই থাকি।”
তপা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি এমন প্রয়োজন হয় যে এভাবে একা থাকতে হয়?”
পলক হেসে বলল,
” যখন তোমার মত কেউ হাত পা ভেঙে, মাথা ফাটিয়ে হসপিটালাইসড হয় তখন তাকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিয়ে এখানে নিয়ে আসি। নেতা মানুষ তো। সেজন্য এখানে থাকতে হয়।”
‘নেতা’ শব্দটা শুনে তপা নড়েচড়ে বসল। পলকের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল,
“আপনি পদত্যাগ কেন করলেন?”
পলক মলিন কণ্ঠে বলল,
“মা অনেক আগে থেকেই রাজনীতি থেকে সরে যেতে বলেছিল। আমিই যাই নি। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দিনদিন। একা ব্যবসা সামলাতে পারছেন না। আর দুটো একসাথে ব্যালেন্স করা তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই একটা ছেড়ে দিলাম।”
“কষ্ট হচ্ছে না?”
পলক কেবল মলিন হাসল।

চিরুনী করা শেষে তপা বিনুনী বাঁধতে শুরু করল। পলক নিষ্পলক চেয়ে রইল সেদিকে। তপা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি দেখছেন বলুন তো?”
পলক ঘোর লাগা কণ্ঠে বিরবির করে বলল,
“তোমার চুলগুলো ভীষণ নেশালো কৃষ্ণময়ী।”
তপা চমকে উঠল। কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“কি বললেন?”
“কই কিছু না তো। তুমি রাতে কি খাবে বলো তো? ভাত নাকি অন্যকিছু?”
বলে হনহন করে ছুটে গেল রান্নাঘরের দিকে।
তপা ভ্রু কুঁচকে পলকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
“সামথিং ইস ভেরি ফিসি।”

নৈশভোজের পর তপা পলকের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল,
“মিস্টার তাজওয়ার আপনার সাথে একটু কথা ছিল।”
পলক তপার ঔষধ বের করতে করতে বলল,
“কি কথা?”
তপা কোনো ভণিতা না করে বলল,
“কয়েক মাস যাবত আমার ফোনে একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসছে। আমি কল দিলে নাম্বারটা বন্ধ পাই। আপনি কি আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন?”
পলক ততক্ষণে ঔষধ বের করা রেখে দিয়েছে। নিচু স্বরে বলল,
“কিভাবে সাহায্য করব?”
“লোকটার হাত ভেঙে দিয়ে। যাতে আর টাইপ করতে না পারে ।”
পলক আচমকা অপ্রস্তুত হয়ে কেশে উঠল। ঔষধ গুলো তপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“খেয়ে নাও। আমি আসছি।”
তপা পলকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
“আমি বোকা নই মিস্টার তাজওয়ার। নই আমি বোকা।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here