কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩২

0
1121

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩২(১)
#নন্দিনী_নীলা

দুইদিন গ্রামে কাটিয়ে তৃষ্ণা, জায়ান বাসায় এসে পৌঁছেছে। বকুল তৃষ্ণা’দের সাথে যাওয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করেছিল কিন্তু ওর মা যেতে দেয় নাই। তৃষ্ণা, জায়ান ও নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বকুলের মা রাজি হয়নি। রাজি না হওয়ায় একমাত্র কারণ হলো ওদের এখন সরিষা নিতে হবে এই সময় মেয়ে চলে গেলে উনি একা কাজ করবে কি করে। মেয়ে থাকলে তো একটু সহায়তা হয়। ছেলে ছেলের ব‌‌উ তো বাড়ি ফেলে চলে গেছে এখন বাড়ির সব কাজ উনা’কেই একা করতে হয়। তৃষ্ণা ও ব্যাপার’টা বুঝতে পেরে বোনকে বলেছে কয়েকদিন পরে উর্মির বিয়ে, তখন ওকে নিতে গাড়ি পাঠাবে ও যেন তখন যায় এখন না। বকুল গাল ফুলিয়ে চেয়েছিল শুধু। শহরে যাওয়ার কারণ এবার জোভান ছিল। অনেক দিন ধরেই তার কোন পাত্তা নাই। কত ভালবাসা না তখন দেখাই ছিল এখন সব ফুস হয়ে গেছে। এতো দিন হয়ে গেল তার খবর নাই। কিন্তু নিজেও যেতে পারল না। তাই মন খারাপ করে বসে আছে উঠানে।
” বকুল ক‌ইরে…” বকুলের মা ডাকছে।
” আম্মা কি হ‌ইছে? দেখ না ব‌ইসা র‌ইছি। ডাকো ক্যান?”
” তেজ দেখাস কারে তুই‌‌। কাজে হাত লাগা। দেখস না সরিষা তুলতাছি তুই দেইখাও ব‌ইসা র‌ইছিস উঠ ক‌ইতাছি।”
” দেখ আম্মা আমার ভাল লাগতাছে না তুমি করতে পারলে করো। নয়তো আব্বা রে ডাইকা আইনা করাও। আমারে ডাকবা না।”
” ঝাড়ুর বাড়ির খাইবার না চাইলে তাড়াতাড়ি আয়। ক‌ইছি না কয়দিন পর নিয়া যাইব তাও সং এঁর মতো বসে আছিস।”
” আমার আজকেই যাইতে মন চাইছিল তোমগো লিগা যাইতে পারলাম না। এই কয়ডা কাজ তুমি করবার পারবা না। আমারে লাগে সব কিছুতে। বুবুর নাগাল আমারো বিয়া হ‌ইয়া গেলে তুমি কি কাজ না ক‌ইরা খাইবা?”
” মাইয়া মানুষের এতো মুখে মুখে তর্ক করা লাগে না। তোর যা স্বভাব তুই দুইদিন ও শশুর বাড়ি টিকতে পারবি না। আমার তৃষ্ণা তো তোর মতো মুখে মুখে তর্ক করে না। শান্ত শিষ্ট আছিল তাই তো এতো বড়ো ঘরে বিয়া দিতে পারছি। সুখে সংসার করছে।”
বকুল ভেংচি কেটে ঝাড়ু হাতে নিল। অতঃপর কাজ করতে লাগল বাধ্য হয়ে।
_________________________

বাসায় আসতেই জায়ান আর আয়ানের মধ্যে তর্কাতর্কি লেগেছে। তৃষ্ণা দূরে দাঁড়িয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। বাসার প্রত্যেকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আয়ান ক্রোধে ফেটে এগিয়ে এসে জায়ানের কলার চেপে ধরে বলল,,” তুই চক্রান্ত করে আমাকে জেলে পাঠাই ছিস। নিজে ব‌উ নিয়ে ফুর্তি করে ঘুরে বেড়াস আর আমাকে ওই জেলে বন্দি করে রাখিস। তোর সব অত্যাচার সহ্য করেছি আর না। নিজে উল্লাস করবি আর আমি শুধু সাফার করব তাই না। আর না। এই আয়ান আর কিছু মুখ বুজে সহ্য করবে না।”
জায়ানের চোখ রাগে রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। সবাই জায়ানের মুখমন্ডল দেখে ভয়ে সিটিয়ে যায়। জেসমিন বেগম দৌড়ে এসে আয়ান কে টেনে সরিয়ে আনতে চায় জায়ানের থেকে কিন্তু আয়ানকে সরানো যাচ্ছে না। আয়ানের বাবা বাসায় নাই। দুইজন গার্ড এসে টেনে সরাতে যাবে জায়ান হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় তাদের। তারা মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ায়।
হাত মুঠো করে এক ঘুসি মারে আয়ানের নাক বরাবর আর আয়ান ছিটকে ফ্লোরে পরে যায়। জায়ান আবারো এগিয়ে লাথি মারে পেটে। মুখে কোন কথাই বলে না। জেসমিন বেগম জাপ্টে ধরে ছেলেকে আটকায়।
” ওকে ছেড়ে দে বাবা‌। ও মরে যাবে। ওর শরীরের দিকে একবার তাকায় দেখ ছেলেটা জেল খেটে একটু খানি হয়ে গেছে আর মারিস না।”
” ওর সাহস কিভাবে হলো আমার দিকে আঙুল তোলার। আমার গায়ে হাত বাড়ায় কোন সাহসে? এক ঘুসি’তে মাটির সাথে মিশে যায় ও আসছে জায়ানের দিকে আঙুল তুলতে এতো স্পর্ধা।”
হুংকার দিয়ে বলল জায়ান। আয়ানের নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত ঝরছে। জায়ান রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তৃষ্ণা আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে ঢোক গিলে। আয়ান হঠাৎ ওর দিকে তাকাল‌। এই অবস্থায় ও কেমন নোংরা চোখে শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা নিজের শাড়ির আঁচল টানতে টানতে রুমে চলে এলো।
জেসমিন বেগম ছেলেকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিল। লিয়াকে দিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে নাকের রক্ত মুখে দিল। আয়ান শক্ত হয়ে বসে বলল,, ” দেখেছ কেমন পশুর মতো মারল ও আমায় মানুষ মনেই করে না। সবসময় নিজ স্বার্থে শুধু ইউজ করে আর সব ঝড় এনে আমার কাঁধে ফেলে। আর কিছু বলতে গেলেই এভাবে মারে। গায়ের জোর দেখায়। আমার কি গায়ের জোর নাই? চাইলে আমিও মারতে পারতাম কিন্তু ওকে আমি মারতে পারি না ও আমার ভাই। আমরা যমজ ভাই এটা ও ভুলে গেলেও আমি ভুলি না কখনো।”
জেসমিন বেগম কিছু বলল না।
আয়ান মনে মনে বলল,” গায়ের জোরে জায়ানের সাথে না পারলেও বুদ্ধির ক্ষেত্রে আমিই সেরা। আমার বুদ্ধির কাছে জায়ান তো শিশু।”
বলেই শয়তানি হাসি দিল।
____________________________

তৃষ্ণা আজ অনেক দিন পর সেই পাগলটার রুমে কাছে এসে উঁকি ঝুঁকি মারছে। বাইরে থেকে তালা দেওয়া তাই ভেতরে যাওয়ার সুযোগ নাই ও এটা ভেবেই এসেছে। বাইরে থেকেই রুমটা দেখতে। কিন্তু আজ ওর জন্য এক চমক রেডি ছিল এখানে। ও না আসলে জানতেই পারত না। আজ দরজা তালা দেওয়া নাই‌। তালা ঝুলিয়ে রাখা শুধু। মনে হয় তালা দিতে ভুলে গেছে। সেদিনের সেই ভয়াবহ কান্ডের কথা মনে হতেই ও ফিরে আসতে চায় কিন্তু আরেকবার ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে’টাকেও দমাতে পারছে না।
এদিক ওদিক তাকিয়ে তৃষ্ণা দরজার ছিটকিড়িতে হাত দেয়।
ওর হাত পা কাঁপছে ভয়ে। তবুও সাহস দেখাতে ভুল করছে না। দরজাটা ঠাস করে খুলে নিজের গলা উঁচু করে মাথা ঢুকিয়ে উঁকি মারে। দেখতে পায় পাগলটা হাতে খাতা কলম নিয়ে কি যেন লিখছে। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে লাল চোখ মেলে ওর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালে। চাহনি দেখেই তৃষ্ণার হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠল। ও তাড়াতাড়ি দরজা থেকে মাথা সরিয়ে নেয়। আর দ্রুত দরজা আটকাতে যায়। ভয়ে ওর হাত অস্বাভাবিক মাত্রায় কাঁপছে।এদিকে পাগলটা ছুটে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। তৃষ্ণা ভয়ে পিছিয়ে গেছে। দরজা না আটকে পালাতে যাবে তার আগেই পাগলটা ছুটে এসে তৃষ্ণার আঁচল টেনে ধরে। তৃষ্ণা হার্ট ফেল করবে এমন করে বুকে হাত দিয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। নিজেকে বকছে অনবরত কেন আসতে গেল এই বিপদে আজ আর রক্ষে নাই। এই পাগলের হাত থেকে তো নাই ই আর জায়ান জানলে কি করবে আল্লাহ তাআলা জানেন।
” ঐই মিষ্টি ব‌‌উ আয় না আমার কাছে।”
তৃষ্ণা পাগলটার এতো সুন্দর কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে গেল। বিস্মিত নয়নে ফিরে তাকালো পাগলটার দিকে। পাগলটা গোল গোল চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও চাইতেই হাসল দাঁত বের করে। তৃষ্ণার বমি আসতে চাইল পাগলটার দাঁত কালো কুচকুচে হয়ে গেছে কত কাল ধরে দাঁত ব্রাশ করে না যে। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগল। ও কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। পাগলটা ওর হাত ধরে চুমু দিয়ে বলল,,” কি সুন্দর আমার জায়ানের ব‌উ। পরীর মতো ব‌উ।”
তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে আজ হিংস্রতা দেখাচ্ছে না কেন? এতো সুন্দর করে কথা বলছে কেন? স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে পাগলটার শান্ত চোখে দিকে। জায়ানের ব‌উ জেনেই কি এতো সোহাগ করছে? জায়ানের প্রতি এই পাগলের এতো টান কেন?
তৃষ্ণা ভয় কেটে গেছে পাগলটার ভালো আচরণ পেয়ে ও কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। পাগলটা ওকে নিয়ে নিজের রুমে এলো। রুমের অবস্থা এতো নোংরা যে ওর দম আটকে আসতে চাইল। কিন্তু তার সাথে ওর খারাপ ও লাগল। ইশ কি নোংরা জায়গায় উনি থাকেন। একটু পরিষ্কার করার মানুষ ও নাই। আহারে খুব মায়া লাগছে ওর। পাগলটার বিছানা পরিষ্কার ও একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসল।
পাগলটা মাথা চুলকে বলল,,” তুই তো খুব সুন্দর ঠিক আমার মতো।”
বলেই খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল। তৃষ্ণা পাগলটার হাসির শব্দ ভয়ে ঘামতে লাগল। যত‌ই ভালো আচরণ করুক তিনি পাগল তারে দেখে ওর ভয়টাই বেশি আসছে।
তৃষ্ণা উঠে চলে আসতে যাবে পাগলটা হাত টেনে ধরে বলল,,” যাইস না আমার সাথে থাক। তোর সাথে অনেক গল্প করব। কেউ আমার কাছে থাকে না গল্প করে না। আমার খুব কষ্ট হয়। ওইদিন তোরে মারছিলাম বলে চলে যাচ্ছিস তাই না?”
চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পাগলটার জল পরছে তৃষ্ণা এমন অবস্থা দেখে নিজেও কান্না করে দিল। খুব বেশিই মায়া লাগছে পাগলটার জন্য। কি অসহায় আবদার করছে।
কিন্তু কেউ চলে আসে যদি। আর এখানে ওকে দেখে নেয়! কি হবে তখন?

#চলবে…..

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩২(২)
#নন্দিনী_নীলা

তৃষ্ণা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে বিছানায়। জায়ান ওয়াশরুমে থেকে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। তৃষ্ণা হাত মুঠো করছে তো খুলছে। জায়ান তৃষ্ণার চিন্তিত মুখে দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা এতোটাই অন্যমনষ্ক যে টের ও পায়নি জায়ান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান
প্যান্ট শার্ট পরে রেডি হয়ে নিল বাইরে যাওয়ার জন্য। তৃষ্ণা অন্যদিন হলে জায়ান পোশাক পরিবর্তন করছে ও দৌড়ে লজ্জা বারান্দায় চলে যেতো। আজ থম মেরেই বসে আছে। জায়ান ফোন পকেটে ঢুকিয়ে তৃষ্ণা সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,,”
what happened?”
তৃষ্ণা লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তৃষ্ণা ঢোক গিলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল জায়ানের দিকে।
জায়ান তৃষ্ণার দুগালে হাত রেখে কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,,” কি হয়েছে তোমার?”
তৃষ্ণা এদিক ওদিক চোখের পলক ঘুরিয়ে বলল,” ক‌ই কিচ্ছু হয়নি তো।”
” মিথ্যা বলবে না। অনেক ক্ষণ ধরেই দেখছি অন্য মনষ্ক হয়ে আছ। বলো কি হয়েছে?”
” সত্যি কিছু হয়নি।”
” লুকানোর চেষ্টা করছ”
” নাহ।”
” লেট হয়ে যাচ্ছে তাই ছেড়ে দিচ্ছি রাতে এসে সব শুনব।”
বলেই জায়ান তৃষ্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। তৃষ্ণা জায়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল।
পাগলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল লুকিয়ে জানতে পারলে কি হবে? কি বলে সামলাবে ভাবতে পারছে না। জায়ান বাসায় এসেও ওকে চেপে ধরবে জানার জন্য।
তৃষ্ণা টেনশনে রান্না ঘরে এসে দেখল একটা মহিলা মাছ কাটছে। লিয়া মহিলাটা কে বলে দিচ্ছে কিভাবে কাটবে। পিস কত বড়ো রাখতে হবে।
তৃষ্ণা কে দেখেই লিয়া বলল,,” বাবার বাড়ি গিয়ে কেমন লাগল?”
” অনেক ভালো লেগেছে। তুমি কেমন‌ আছ?’
” ভালোই আছি। তোমার কিছু লাগবে?”
” চা খাব একটু। সমস্যা নাই একাই করতে পারব।”
” দাঁড়াও আমি করে দিচ্ছি।”
লিয়া উঠে ভেতরে চলে গেল। তৃষ্ণা ও পেছনে পেছনে এলো।
” আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?”
লিয়া পানি গরম দিয়ে বলল,,” কিসের উত্তর?”
তৃষ্ণা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,,”এই বাসায় একটা পাগল আছে বন্দি। তার সম্পর্কে কিছু জানো?”
লিয়া আঁতকে উঠে তাকাল তৃষ্ণার দিকে।
” তুমি জানলে কি করে?”
” আমি তার সাথে কথা বলেছি আজ। তার রুমে গিয়েছিলাম।”
লিয়া তৃষ্ণা কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে শরীর চেক করে বলল,,” বলো কি তোমায় আঘাত করে নি তো?”
” প্রথম দিন করেছিল। আজ করেনি উল্টো আরো আদর করেছে।”
লিয়া চোখ কপালে তুলে বলল,” আগেও গিয়েছিলে?”
” হুম সেদিন উনি দেখেছিল। আজ গিয়েছি কেউ জানে না।”
” আর যেও না।এই দেখ আজ সকালে রুম পরিস্কার করতে গিয়েছিলাম। আমার কি অবস্থা করেছে।”
লিয়া হাত দেখাল। খামচি দিয়েছে। মাথার এক পাশ দেখাল কেটে গেছে মনে হয় কিছু ছুঁড়ে মেরেছিল।
” ভয়ংকর পাগল। তুমি ওখানে যাও?”
” কেউ যাওয়ার সাহস করে না সবাইকে আঘাত করে। কিন্তু আমি মায়ার পরেই যাই খাবার দিয়ে আসি আর রুম পরিস্কার করি।”
” বাসার কেউ তার দেখভাল করে না?”
” নাহ। দায়ে পরে রেখেছে না হলে বাসায় ও রাখত না।”
” এই বাসার সাথে উনার সম্পর্ক কি?”

লিয়া চায়ের কাপ তৃষ্ণার হাতে দিয়ে বলল,,” ধরো তোমার চা। আর ওই রুমে যেও না পাগলের মতিগতি জানি না। বড়ো কোন আঘাত করে বসলে কি হবে ভাবো। আর তুমি ওখানে যাও এটা জেসমিন ম্যাডাম জানলে সর্বনাশ হবে। আর কিছু জিজ্ঞেস করো না।”
লিয়া কাজে লেগে পড়ল।

পাগল হয়েছে বলেই এতো দায়সারা ভাব সবাই তার প্রতি। যখন সুস্থ ছিল তখন নিশ্চয়ই সবাই মাথায় করে রাখত কিন্তু এখন!!
অজান্তেই তৃষ্ণার চোখ ছলছল করে উঠল।
” ভাবি কাঁদছ কেন?”
উর্মি ওদের বেডরুমে বসে আছে।
” তুমি?”
” তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কি হয়েছে তোমার মুখটা শুকিয়ে গেছে যেন।”
” কিছু হয়নি।”
” সত্যি।”
” হুম!”

রাতে জায়ান বাসায় ফিরল না। তৃষ্ণা হাঁসফাঁস করছিল কি উত্তর দিবে সেসব ভেবে। মাঝরাত অবধি জেগে ছিল এরপর তন্দ্রা লেগে গেছে সকালে জাগ্রত হয়ে দেখে জায়ান আসে নাই। বিছানা ফাঁকা ও একাই রুমে। ও ভয়ে ছিল কিন্তু তাই বলে লোকটা বাড়ি আসবে না? কোন বিপদ হলো না তো?
আগে ওর এমন হতো না এখন একটু তেই অনেক বেশি চিন্তা হয়। এটাই বুঝি ভালবাসা? সব সময় মানুষটাকে মনে পরে একটুতেই বিপদ আপদে কথা ভেবে মন উদাস হয়ে উঠে।
জায়ান বাসায় ফিরল এগারোটার দিকে। তৃষ্ণা রুমে থেকেই বের হয়নি। ফ্রেশ হয়ে বেলকনি’তেই চুপ করে বসে ছিল। ব‌ই নিয়ে পড়ছিল। খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল ও খায়নি।
জায়ান এসে তৃষ্ণাকে বেলকনিতে বসে পড়তে দেখে অবাক হয়।
” বাহ আমার ব‌উটা এতো ভালো হলো কি করে? একাই পড়তে বসেছে।”
তৃষ্ণা জায়ানের আওয়াজ পেয়েই ব‌ই রেখে দৌড়ে জায়ান কে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজে দিল।
জায়ান তৃষ্ণার মাথায় হাত রেখে বলল,” কি হয়েছে কাঁদছ কেন?”
” আপনি সারারাত বাসায় আসেন নি কেন?”
” এজন্য এতো কান্নাকাটির কি হলো? আমি এমন কত রাত বাসার বাইরে কাটিয়েছি এজন্য এতো কাঁদতে হয় নাকি পাগলি!”
তৃষ্ণা গাল ফুলিয়ে বলল,” তখন আপনার ব‌‌উ ছিল না। এখন আপনার বউ আছে সে আপনার জন্য অপেক্ষা করে। আপনি না আসলে কষ্ট পায়।”
” ওরে বাবা তাই। এখন থেকে কথা গুলো মাথায় থাকবে মহারানী। আপনার হাজব্যান্ড আর কখনো এমন ভুল করবে না।”
” মনে থাকে যেন।”
” থাকবে জান।”
জায়ান শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে গেল। তৃষ্ণা ভাবছে জায়ান কিছু জিজ্ঞেস করল না। ভুলে গেল নাকি ক্লান্ত বলে এড়িয়ে গেল।
তৃষ্ণা শুধু টেনশনে ছিল এই বুঝি জিজ্ঞেস করে বসবে। তখন কি বলবে টেনশন করছিল। জায়ান গোসল শেষ করে এসেই বলল,,” তৃষ্ণা দ্রুত খাবার নিয়ে আসো প্রচুর পরিমাণে খিদে পেয়েছে। তুমি খেয়েছ?”
” না আপনার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে লাঞ্চ এর সময় হয়ে গেল।”
” আমার জন্য অভুক্ত র‌ইলে।”
” হুম।”
” আচ্ছা যাও দুজনের খাবার দিয়ে যেতে বলে লিয়া কে।”
লিয়া দুজনের খাবার দিয়ে গেল। জায়ান তৃষ্ণাকে নিজের হাতে খেতে দিল না। খাইয়ে দিল।
” আপনি রাতে কেন আসলেন না কোথায় ছিলেন?”
জায়ানের হাত থেকে খাবারের লোকমা পরে গেল।
তৃষ্ণা সেসব দেখল না ও জায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বলল,,” একটু কাজ ছিল। আমার ব‌উ আমার জন্য না খেয়ে থাকে। কি ভালবাসা।”
তৃষ্ণা জায়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,” রাতে আবার কিসের কাজ। এখনো বললেন না আপনি কি কাজ করেন! বলেন না আপনি কিসের চাকরি করেন?”
” হঠাৎ এতো কিছু জিজ্ঞেস করছ কেন?”
” আমার স্বামী কি চাকরি করে আমার কি জানতে মন চায় না?”
জায়ান মুখটা নিমিষেই কঠিন করে ফেলল। তৃষ্ণা জায়ানের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
” আপনি কি রেগে গেলেন?”
” আমি ভাল কাজ করি না তৃষ্ণা। তাই আমার কাজের বিস্তারিত তোমায় দিতে পারব না। তুমি আমার এই নিয়ে প্রশ্ন করো না।”
তৃষ্ণা অবাক সুরে বলল,,” আপনি ভাল কাজ করেন না মানে? কি কাজ করেন?”
জায়ান প্লেট ছুঁড়ে ফেলে দিল। তৃষ্ণা ভয়ে সোফার সাথে লেগে মুখে হাত দিয়ে আছে।
” বললাম না জিজ্ঞেস করো না। দিন দিন অবাধ্য হয়ে যাচ্ছ। ভালবাসতে বলেছি, সাহসী হতে বলছি। কিন্তু আমার অপছন্দের কাজ করতে বলিনি। যা আমি বলতে চাই না তা জানতে চাইছ। আমাকে জোর করার সাহস করবে না। মাথা গরম হয়ে যায় আমার।”
তৃষ্ণা ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। জায়ান লিয়াকে চিৎকার করে ডাকল। সব পরিস্কার করে নিয়ে যেতে বলল।
জায়ান তৃষ্ণাকে রেখেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল ওর মাথা ব্যথা করছে।

তৃষ্ণা মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে লিয়া মাথা নিচু করে সব পরিষ্কার করে চলে আসে। জায়ানের সামনে তার কথা বলার সাহস নাই কিন্তু তৃষ্ণা কে কাঁদতে দেখে তার খুব খারাপ লেগেছে।

জায়ান বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে শুধু।
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে কাঁদছে ওর চোখে জলে শাড়ি ভিজে যাচ্ছে। জায়ান হঠাৎ ওর সামান্য কথায় এমন রুডো ব্যবহার ও মানতে পারছে না। চোখের জল বাঁধ মানছে না।
জায়ান চট করেই বিছানা থেকে উঠে পড়ল আর তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো।
” উফ কাঁদছ কেন?”
তৃষ্ণা জায়ানের থেকে হাত সরিয়ে নিতে চাইছে।
জায়ান তৃষ্ণার কাজে আরো শক্ত করে হাত ধরে বলল,,” কাঁদবে না একদম আর আমার ধমক খেয়ে একদম দূরে যাওয়ার ট্রাই করবে না। আমি বকবো আবার আমিই আদর করব। আমার ভালবাসা গ্রহণ করলে আমার রাগ কেউ গ্রহণ করতে হবে। আমার ভাল দেখে কাছে এসেছ আমার খারাপ গুন দেখেও পাশে থাকতে হবে। সোজাসাপ্টা বলি সব পরিস্থিতিতেই সঙ্গ দিতে হবে। একদম আমাকে ভয় পাবে না আবারো বলছি।”
” আপনাকে অনেক ভয়ংকর লাগছে। আপনি এতো রাগ দেখাচ্ছেন কেন?”
” আর আমার কথার অবাধ্য হবে না। যেটা না বলব সেটা না। তাহলেই রাগ দেখবে না।”

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here