#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৭(১)
#নন্দিনী_নীলা
অবশেষে আয়ানের পরিকল্পনা সফল হলো। উষসী কে মারতে সফল হয়েছে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেও অনেক যুদ্ধ করেছে উষসী। বাঁচার যুদ্ধ। নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারে নি। আয়ান পারতে দেয়নি। যে নার্স ওর দেখাশোনা করতো সেই ছিল আয়ানের টাকা খাওয়া। সেই আয়ানের সাথে হাত মিলিয়ে উষসীর প্রান কেড়ে নিলো। জায়ান কে কল সেই নার্সই দিয়েছিল।
জায়ান আর তৃষ্ণা আধা ঘন্টার মধ্যে হসপিটালে গিয়ে উপস্থিত হয়। সেখানে গিয়ে উষসীর নিথর দেহটা পায়। জায়ান নিজেও স্তব্ধ। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উষসীর সাথে ওর একটা ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক ছিল। সব কিছু উষসী ওকে শেয়ার করতো। ওর সব সমস্যায় হেল্প করতো। এভাবে চলে যাবে ও বিশ্বাস করতে পারছে না।
এদিকে আয়ান তখন সেই নার্সের সাহায্যে উষসীর কাছে এসে নাটকীয় কান্না শুরু করে দেয়। যেন উষসীর মৃত্যু তে সব চেয়ে বেশি দুঃখ সেই পেয়েছে।
তৃষ্ণা তো বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। জায়ান এই খবর উষসীর পরিবারের সবাইকে কিভাবে দেবে সেই টেনশনে আছে। দুইদিন হসপিটালে ছিল ওরা সবাই আশা করেছিল উষসী সুস্থ হয়ে যাবে। উষসীর বাবা
খুব রাগী মানুষ তার মেয়ের এই পরিনতি জানলে তিনি কি করবেন সেটা ভাবতে পারছে না জায়ান।
জায়ান নার্সের দিকে তাকিয়ে বলল,” ডক্টর কোথায়?”
নার্স শুকিয়ে আসা গলায় চমকে বলল,” ডক্টর কে কল করা হয়েছে তিনি দ্রুত আসছেন।”
” বিকেলেও তো ডক্টর বলল উষসীর অবস্থা ভালো। তাহলে এসব কিভাবে হলো? আর এমন সিরিয়াস পেশেন্ট রেখে ডক্টর বাসায় গেল কিভাবে? এ্যানসার মি।”
নার্স কথা বলতে পারছে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
” কোন সন্দেহ জনক কিছু হয়ে থাকলে কেউ পার পাবেন না। ভুলে যাবেন না আমরা কোন ফ্যামিলির।”
আয়ান তখন বলে উঠল,” নার্স আমাকে আমার রুমে দিয়ে আসেন। আমার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।”
নার্স তাড়াতাড়ি আয়ান কে ধরে তার রুমে নিয়ে আসলো। একে একে অনেক নার্স এসে ভীড় করলো রুমটাতে। জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে রুমের বাইরে এসে দাঁড়ালো। তৃষ্ণা কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
জায়ান বাড়িতে কল করে সবাইকে জানিয়ে দিলো।
তৃষ্ণা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কয়দিনে কি সুন্দর দুজনে মিলে গেছিল। বড় বোনের মতো ওকে উপদেশ দিতো কত গল্প করেছে কয়দিনে। কি ভালো ছিল। তৃষ্ণা পুরোনো কথা গুলো মনে করছে শুধু।
এদিকে অনেকক্ষণ চলে গেল উষসীর নার্স আসলো না আর। আয়ানকে রেখে আসতে এতো সময় লাগছে কেন? জায়ান ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ চোখে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে।
তৃষ্ণা দরজায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। জায়ান আয়ানের রুমে ঢুকে দেখে আয়ান অক্সিজেন মাস্ক মুখে দিয়ে কাঁদছে। জায়ান কেবিনের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,” নার্স কোথায়?”
আয়ান চমকে চোখ মেলে তাকালো। আর আমতা আমতা করে বলল,” সে তো আমাকে রেখেই চলে গেছে! কেন কি হয়েছে?”
জায়ান আয়ানের কাছে এসে বলল,” তুই কিছু করিস নি তো এসবে তোর কোন হাত নেই তো?”
আয়ান শুকিয়ে আসা ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,” কি বলছো এসব। আমি এসব করব কেন? আমি কি জানি না ওর বাপ কেমন। আমাকে ছিঁড়ে খাবে ওর কিছু করলে। আমি জেনে বুঝে কেন কিছু করতে যাব।”
জায়ান কি যেন ভেবে বলল,” নার্স টাকে সন্দেহ হচ্ছে। এখন নিখোঁজ তার মধ্যে ঝামেলা আছে।”
আয়ান বলল,” নার্স কেন উষসী ক্ষতি করবে ভাবো। তার কি লাভ এতে?”
” তার লাভ না থাকলেও তোর লাভ আছে। যদি এর পেছনে তোর হাত থাকে। আমি ভুলে যাব তুই আমার ভাই একবার ক্ষমা করেছি। বলে ভাবিস না এবার আর ক্ষমা পাবি।”
বলেই জায়ান হনহনিয়ে বেরিয়ে এলো কেবিনে থেকে। আয়ান অক্সিজেন মাস্ক খুলে উঠে বসে রাগে ফুঁসতে লাগল। এতো দিন তোকে ভাই বলে ছেড়ে দিয়েছি জায়ান। অনেক তোর ধমক অবজ্ঞা শুনেছি আর না এবার তোর জায়গা হবে আমার। আর আমি মাথা নিচু করে থাকব না।
আয়ান ভাবছে নার্সকে তো পালিয়ে যেতে বললাম কিন্তু ওই মেয়ে বাই এনি চান্স ধরা পরে গেলে আমার নাম বলে দিবে। ওকে শুধু পালাতে দিলে হবে না। ওর মুখ চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। জায়ানের পক্ষে ওকে খোঁজে পাওয়া ব্যাপার না কিন্তু ও যদি বেঁচে ই না থাকে তখন আর ওকে খোঁজে পেয়ে লাভ কি হবে?
আয়ান প্রতিশোধ আর স্বার্থের লোভে আস্তে আস্তে কতটা নিচে নেমে যাচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছে না। ও বুঝতে চাইছে ও না। ও শুধু চাচ্ছে জায়ান কে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। জায়ানের সব ক্ষমতা নিজের দখলে নিতে।
তৃষ্ণা জায়ানকে ছটফট করে এদিকে ওদিকে কাউকে খুঁজতে দেখে এগিয়ে যায়।
” কি হয়েছে এমন করে কাকে খোঁজেন?”
” প্রথমে যে নার্স টা এখানে ছিল তাকে দেখছি না যে। দেখছো তাকে?”
তৃষ্ণা কাঁদছিল কোন দিকে এতোটা নজর দিয়ে রাখছিল না। তাই মনে করতে পারছে না।
” কি দেখেছো কি?”
” আমি খেয়াল করিনি।”
জায়ান ফোন কানে ধরে লিফটের কাছে চলে গেল তৃষ্ণা উষসীর কাছেই রইলো। তখনি কাঁদতে কাঁদতে একজন অপরিচিত মহিলা এগিয়ে এলো এদিকেই তার পেছনে আসছে চারজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা। তৃষ্ণা তাদের দেখে দরজার পাশে থেকে সরে দাঁড়ালো। উনারা কি উষসী ভাবির বাড়ির লোক তৃষ্ণা ভাবছে। তখনি জেসমিন বেগম, জোভান, জায়ানের বাবা সবাই এসে উপস্থিত হলো। সবাই এলোমেলো হয়েই এসেছে। এদিকে ফজরের আজান কানে ভেসে এলো তৃষ্ণার। রাত দুইটার পর এখানে এসে পৌঁছেছিল ও আর জায়ান। আর এখন সারে চারটা বাজে। বাড়ির একজন সদস্য ও নাই। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে। আজকের সকালটা তার জন্য ছিল না। ছিল না এই সুন্দর ভূবন দেখা। তৃষ্ণা ডুকরে কেঁদে উঠল।
তৃষ্ণা কান্না থেমে গেল হঠাৎ একটা লোক হঠাৎ জায়ানের বাবার কলার চেপে ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করলো। তৃষ্ণা ভয়ে ভীত হয়ে পরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে।
আরেকজন লোক তিনি আয়ানের কেবিনে গিয়ে আয়ানকে ঘুসি মেরে কেবিনের বাইরে ফ্লোরে ফেলে দিলো।
এসব কি হচ্ছে কিছুই তৃষ্ণার ছোট মাথায় ঢুকছে না।
জোভানের থেকে জানতো পারল একজন উষসীর বাবা আর দুজন উষসীর ভাই।
তারা তাদের মেয়ের মৃত্যুর পেছনে ওদেরকে দোষারোপ করছে।
তৃষ্ণা ভাবছে মেয়ের মৃত্যু তে কোথায় কষ্ট পাবে তা না কে কি করেছে সেসব ভেবে মারামারি করছে এরা কেমন ভাই বাবা? মেয়ের প্রতি তাদের এ কেমন ভালোবাসা?
জায়ান এখানে নাই থাকলে হয়তো তার উপর ও আক্রমণ হতো। ডক্টর এসেছে এবার ডক্টর কে মারতে চাইছে। সবাই দুঃখী মুখ করে আসলেও উষসীর বাবা আর ভাইয়ের কাজে সবাই অসন্তুষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জোভান আর উষসীর ছোট ভাই ও কয়েকজন ওয়ার্ড বয় মিলে তাদের রেষারেষি থামিয়ে দূরে সরিয়ে আনে। আর বুঝায় এটা একটা হসপিটাল এখানে হাজারো পেশেন্ট আছে। যা করার বাইরে গিয়ে করতে এখানে এসব করলে অন্য পেশেন্ট এর সমস্যা হবে।
জায়ান আসে অনেকটা সময় পর। সবাই জায়ানের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। জায়ান সবাইকে ইগনোর করে ডক্টরের কেবিনে গিয়ে উপস্থিত হয় আর সেই নার্সের সন্ধান দিতে বলে।
” আপনাদের নার্স টা হঠাৎ উধাও হলো কেন?”
ডক্টর বলল,” কি বলছেন উধাও হবে কেন? হসপিটালেই কোথায় আছে হয়তো।”
” আমি সি সি টিভি চেক করে আসলাম। আজ রাতের কোন ফুটেজ নাই। ক্যামেরা অফ করা আছে। এমনটা কেন বলেন তো আমাদের পেশেন্ট ভালো থেকে হঠাৎ মৃত্যু হলো। সব কিছুই কিন্তু ধোঁয়াশা লাগছে।”
ডক্টরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। তিনি একজন কে কল করে তার কেবিনে ডাকলো। জায়ান রাগে ফুঁসছে অনবরত।
” আপনি আমাদের ভুল বুঝবেন না। এসব কি হচ্ছে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। আর পেশেন্ট দেখে বুঝলাম তিনি শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। কিন্তু এমনটা কিভাবে হলো! অক্সিজেন তো তার কেবিনে ছিল সেটা আজ রাতে শেষ ও হয়নি। হবার কথাও না। সিলিন্ডার ভর্তি অক্সিজেন তাহলে তার শ্বাস রুদ্ধ হলো কীভাবে!”
” ওই নার্স এর পেছনে আছে আমি সিউর। আর কে আছে আমি জানি না। কিন্তু আমার সন্দেহের তালিকায় আপনিও আছেন ডক্টর। আপনারা যদি কারো সাথে হাত মিলিয়ে এই কাজ করে থাকেন তো এর ফল ভালো হবে না। এই হসপিটালে বন্ধ করা কিন্তু আমার বা হাতের কাজ মাইন্ড ইট।”
ডাক্তার ও ভয়ে ঘামতে লাগলো। তিনি ও উষসীর পার্সোনাল নার্সকে খোঁজ করতেন লোক লাগালো।
ভোরে উষসী কে রিলিজ করিয়ে গাড়ি নিয়ে উঠে। এখন এই লাশ নেওয়া নিয়ে আরেক দফা ঝগড়া। উষসীর পরিবার কোনভাবেই লাশ জায়ান দের নিতে দিবে না। এই নিয়ে আবার তর্ক লেগে গেল।
জায়ান রেগে বলল,” উষসী আমাদের বাড়ির বউ। সো আমাদের বাসায় ই যাবে।”
জায়ান কথা শেষ করতে পারল না উষসীর বড় ভাই ক্রোধে এসে জায়ানের নাক বরাবর ঘুসি মেরে বসলো। সবাই জায়ান বলে চিৎকার করে উঠল।
জায়ান রাগে রক্ত বর্ণ চোখে তাকালো উষসীর ভাই এর দিকে। সে রেগে আবার আঘাত করতে আসলে জায়ান শুধু একটা কথাই বলল,” মারামারি করতে লাগলে তুমি আমার সাথে পারবে না। তাই আমার সাথে লাগতে এসো না। উষসীর জন্য তোমাদের মন মেজাজ ভালো নেই তাই ক্ষমা করে দিলাম। আমার গায়ে হাত দেওয়ার ভুল করো না।”
তিনি ক্রোধের সাথে বলল,” তোরা সবাই মিলে আমার বোনকে মারছিস। তোদের সবকটা কে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।”
” আসল দোষীকে খোঁজে বের করো। রাগের মাথায় ভুল জায়গায় দোষারোপ করো না। সময় লস এতে তোমার ই হবে। এখন দুঃখের সময় ঝামেলা রাগারাগী না করে যে চলে গেছে তার জন্য কিছু করো। এসব পরেও করতে পারবে।”
জায়ান গাড়িতে উঠে বসলো সবাই জায়ান দের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। তৃষ্ণা জায়ানের ঠোঁটের কোনে থাকা রক্ত মুছে দিয়ে বলল,” ওনারা সবাই আপনাদের দোষারোপ কেন করছে?”
#চলবে…..
#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৭(২)
#নন্দিনী_নীলা
জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন,” তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?”
তৃষ্ণা মাথা দুলিয়ে বলল,” আমি আপনাকে কেন সন্দেহ করবো। আমি তো শুধু উনাদের এমনটা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। আপনি বলতে না চাইলে সমস্যা নাই।”
” দোষারোপ করার কারণ আছে তাই করেছে। উনারা বিরোধী পক্ষ। তোমার শশুর এর বিরোধী দলের নেতা উষসীর বাবা। তাদের মধ্যে অনেক রেষারেষি আছে। রাজনীতিতে বিরোধী পক্ষ মানে শত্রু। কিন্তু আত্নীয় তার জন্য সেটা কমে এসেছিল। এখন আবার এই ঘটনায় তা জাগ্রত হলো।”
“উষসী ভাবি আপনাদের বাড়ির বউ হলো কি করে?”
” উষসী জোর করে বিয়ে করেছিল আয়ান কে। শর্ত দিয়েছি বাবাকে ভোটে নির্বাচিত করবে। আর নিজের বাবাকে পদত্যাগ করাবে। তাই হয়েছিল। আদরের মেয়ের জন্য তিনি মেয়ের শশুর কে জিতিয়ে দিয়েছিল। যাইহোক এসবে অনেক কাহিনী আছে পরে বলব সময় করে।”
তৃষ্ণা জায়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই লোকটা সবসময় এই অনেক কাহিনী আছে বলে আর পরে কাহিনী বলেন না।
” কি হলো ওইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
” ভাবির মৃত্যুটা মানতে পারছি না। সেদিন ও মানুষটা কথা বলছিল হাসছিল আজকেই সেই আর এই পৃথিবীতে নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে। এভাবে কেন চলে গেল।”
জায়ান কিছু বলার মতো পেল না। এই মৃত্যু ওর কাছে স্বাভাবিক লাগছে না। এর পেছনে আয়ানের হাত আছে ও জানে কিন্তু যথার্থ প্রমাণ এর জন্য কিছু বলতে পারছে না। আয়ান কেন উষসীকে মারলো ও কি জানে না এর জন্য কি ভোগ করতে হবে ওদের।
ওদিকে মিহির কল করে টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে উর্মির ক্ষতি করে দিবে। ওই সাহস নিয়ে আমাকে নাকি ও হুমকি দেয় ভাবা যায়। ও উর্মির কোন ক্ষতি করবে না জায়ান জানে। ওর সেই সাহস নাই। শুধু টাকার লোভে এই কাজ করেছে। টাকা মানুষ কে কতটা নিচে নামিয়ে দেয় মিহির কে দেখলেই তো প্রকাশ পায়। গ্রামের শান্ত শিষ্ট বোকা ছেলেটা ও টাকার লোভে জায়ান আহনাফ এর বোনকে কিডন্যাপ করার সাহস করেছে। সত্যি হাস্যকর। ওকে তুরি মেরে আমি ধ্বংস করে দিতে পারি ও নাকি আমাকে হুমকি দিয়ে ভয় দেখাবে।
এদিক টা সামলে তারপর ওদিকে যাওয়া যাবে। উর্মি না হয় তার ভালোবাসার মানুষটির আসল রুপ টা কাছ থেকে ভালো করে দেখুক, চিনুক।
বাসায় এসে থামলো গাড়ি। তৃষ্ণা জায়ানের সঙ্গে ভেতরে গেল। জায়ান তৃষ্ণাকে বলল,” তুমি উষসীর বাবা ভাই মায়ের খাবার তৈরি করতে বলো লিলি কে।”
তৃষ্ণা উষসীর মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ অবস্থা। মেয়ে মারা গেছে মা সেটা কিভাবে মানবে। তার কষ্টটা যেন তৃষ্ণা অনুভব করতে পারছে। লিলি সবার জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এলো। তৃষ্ণা উষসীর মাকে জোর করে একটু পানি খাইয়ে দিলো।
লিয়া সবার জন্য খাবার তৈরি করছে। ওর ও খুব খারাপ লাগছে। তৃষ্ণা এসে বলল,” তুমিও ভাবির জন্য কাঁদছো?”
” হ তার জন্য মন খারাপ হচ্ছে। কত অল্প বয়সেই চলে গেল।”
” তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
” করো।”
” তোমার কি আত্নীয় স্বজন কেউ নাই? তোমার বর কোথায়?”
লিয়া অন্যমনষ্ক হয়ে বলল,” আমি প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। তাই পরিবারের কেউ আমার সাথে সম্পর্ক রাখে নাই। আর আমার বর ছিল এতিম। এই বাসায় কাজ করতো। এইখানেই নিয়ে এলো আমায়। ছিলাম এখানে। বড় সাহেবের সাথে থাকতো সে। তারপর এক ঝড়ে আল্লাহ তারে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিলো। হঠাৎ এক ভোরে তিনি না এসে তার লাশ এলো বাড়িতে। সেবার বড় সাহেবের গায়ে কে জানি গুলি করতে আসে আমার স্বামী বড় সাহেবের জান বাঁচাতে নিজেকে উৎসর্গ করে।”
বলতে বলতে লিলি ও কেঁদে উঠল।
তৃষ্ণা তারে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চাইলো। কিন্তু সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছুই পেল না। কত জটিল এই জীবন সবার জীবনেই নতুন নতুন গল্প।
তৃষ্ণা চলে এলো সেখানে থেকে জায়ান ডেকে পাঠিয়েছে। ও রুমে এসে দেখলো জায়ান সাদা পাঞ্জাবি পরে বসে আছে। চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।
তৃষ্ণা এগিয়ে এসে জায়ানের ভেজা চুল মুছে দিতে লাগল। এজন্য জায়ান ডেকেছে তৃষ্ণা কে। চুলের পানিতে জায়ানের কাঁধ গলার কাছে পাঞ্জাবি ভিজে যাচ্ছে।
তৃষ্ণা বলে উঠল,” আপনি আজ না হয় একাই মুছে নিতেন। ভিজিয়ে ফেলেছেন শরীর। আর নয়তো আগেই পাঠাতেন ডাকতে।”
জায়ান উত্তর দিলো না। তৃষ্ণার পেটের উপর মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তৃষ্ণা ছটফট করে সরে যেতে চাইলো। আচমকা এমন করাতে তৃষ্ণার সারা শরীর কেঁপে উঠল।
জায়ান দুই হাতে তৃষ্ণার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।
” কি হলো আপনার?”
জায়ান মাথা তুলে ফেলল। আর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমার দিকে তাকাও।”
তৃষ্ণা তাকালো জায়ানের দিকে।
” কি হয়েছে আপনার?”
” আমাকে আর আয়ানকে চিনতে তোমার এখনো কি ভুল হয়?”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে তৃষ্ণা চমকালো।
” হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছেন?”
” বলো।”
” আপনাকে আমি চিনতে পারি।”
” কীভাবে?”
” আপনার ওই লাল তিল নাই।”
” আয়ান যদি ওই তিল সরিয়ে আমার মতো হয়ে আসে তখন কি চিনতে পারবে?”
তৃষ্ণা থতমত খেয়ে গেল। ও জানে না চিনতে পারবে নাকি। চুপ করে গেল।
” আমার স্পর্শ তুমি চিনো? আমাকে অনুভব করতে পারো?”
তৃষ্ণা থমকে গেল। ও এসব কিছুই জানে না।
জায়ান তৃষ্ণার দুগালে হাত রেখে বলল,” এর জন্য দায়ী তো আমিই। আমি কি তোমার সেভাবে স্পর্শ করেছি? যে চিনবে!”
তৃষ্ণা তাকালো জায়ানের দিকে। জায়ান তৃষ্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,” উষসীর মৃত্যুর পেছনে আয়ানের হাত আছে। ও কেন এই কাজ করেছে আমি জানি না। তুমি সাবধানে থাকবে। আমি ওকে ভয় না পেলেও তোমাকে নিয়ে ভয়ে থাকি।”
জায়ান বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
________________________
মিহির উর্মির পাশে বসে বলল,” তোমার ভাই তোমাকে সত্যি ভালোবাসে না। তোমাকে কিডন্যাপ করে কোন লাভই হলো না। চারদিন চলে যাচ্ছে তাকে কবে টাকার কথা বলেছি এখনো টাকাও দিলো না। তোমাকেও খোঁজার ট্রাই করছে না। কেমন ভাই গো। ও মনে পরছে ওটা তো তোমার আপন ভাই না। এজন্য হয়তো এতো টান নাই। সব ছিল উপরে উপরে তাই না।”
উর্মির হাত পা বাঁধা একটা চেয়ারে বসা, মুখটাও বাঁধা। ও কথা বলার জন্য উম উম করছে। মিহির উর্মির নিকটে মুখ এনে বলে,” কিছু বলতে চাও নাকি তোমার অকৃতজ্ঞ ভাইকে নিয়ে।”
উর্মি রাগে ফুসফুসে করছে। চোখ দিয়ে যেন ভষ্স করে দিবে মিহির কে। মিহির উর্মির মুখের বাঁধন খুলে দিলো। উর্মি জোরে শ্বাস নিতে লাগল।
” বলো কিছু তোমার ভাইকে নিয়ে।”
উর্মি থুথু মারলো মিহিরের মুখে। মিহির রক্ত বর্ণ চোখে তাকিয়ে মুখ থেকে থুথু মুছে উর্মির গাল চেপে ধরলো।
” ছিহ আমার ঘৃনা হচ্ছে। তোর মতো একটা ছেলেকে ভালোবেসে আমি এতোদিন কষ্ট পেয়েছি। তুই এতো নিচু। টাকার জন্য এমন জগন্য কাজ করলি। আমাকে কিডন্যাপ করলি। ভাই আমাকে বাঁচিয়েছে তোর মতো ছেলের হাত থেকে।”
মিহিরের মন যে কি চাচ্ছে। কি করতে মন চাইছে উর্মি কে ও নিজেই জানে না। শুধু মাত্র জায়ানের ভয়ে সব কিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। নাহলে কি করতো ও নিজেও জানে না। মিহির রুমাল দিয়ে আবার উর্মির মুখ বেঁধে দিলো।
” তোমার মুখ খোলা টাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল। থাকো তুমি এভাবেই।”
বলে মিহির রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বাইরে থেকে শক্ত পোক্ত একটা তালা লাগিয়ে দিলো। ভেতরে বন্দি হয়ে রইলো উর্মি।
উর্মির চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরছে। ও আফসোস এ তাকাতে পারছে না। এমন একজন মানুষ কে ও কীভাবে ভালোবাসলো ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।
মিহিরের মতো নিচু ও নোংরা মন মানসিকতার একজন কে ও পাগলের মতো ভালোবেসে ছিল। ছিহ! কতটা সৎ ভেবেছিল ও মিহির কে। কিন্তু সে যে এতোটা লোভী ভাবতেও পারে নি। উর্মি কে কিডন্যাপ করেছে দ্বিতীয় বার দেখা করার নাম করিয়ে। জোভানের সাহায্যে উর্মিকে দেখা করাতে আনে। উর্মির রাজি হয় যাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তার ডাকে সারা না দিয়ে পারেনি।
সেই সুযোগ টাই কাজে লাগিয়ে নেয় মিহির। জোভান দুজনকে একা রেখে চলে যায়। এদিকে মিহির পেছনে থেকে উর্মির মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে। উর্মি আচমকা এমন কাজে স্তব্ধ হতভম্ব। কথা বলতে ও পারছে না। চাইলে ও পারছে না।
মিহিরের দিকে শুধু হতবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
মিহির ওকে গাড়ি করে বান্দরবান থেকে নিয়ে আসে। আর ওকে এই রুমটায় বন্দি করে রাখে।
#চলবে….