#কৃষ্ণপক্ষের_চাঁদ
#পর্ব :১২
#JannatTaslima(writer)
.
.
.
পৃথিবীর সব থেকে আজব থিউরি হলো জীবন।এই কদিন আগ পর্যন্ত এই ঘরের ভিতরটা ছিলো আমার কল্পনাতীত।দুইবার এ ঘরের দরজা অব্দি এলেও অন্দরে প্রবেশ করার আকাঙ্ক্ষাটাও মনে উদয় হয় নি।অথচ ভাগ্যের জোরে এখন এটা আমার ঘর।এটাই হয়তো জীবন।শুধু এ ঘর না এ ঘরের একমাত্র অধিবাসীও এখন আমার। আজব হলেও সত্য, যে মানবকে স্বভাবজাত কারণে প্রতিবারই এড়িয়ে চলতাম, সে মানবটাই এখন আমার ব্যক্তিগত কেউ।যাকে আমি নিজের অসহ্য অভদ্র সহযাত্রী উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম।সেই আজ আমার জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত সহযাত্রী।আমার কর্ণকুহুরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো,সেই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দগুচ্ছ।বিশেষ করে সেদিনের সেই অস্পষ্ট কথা মালা,
–আমি ওনাকে বিয়ে করো,,,,,,,,,,,,,,,, প্রথমে বাক্যটা এরুপ অস্পষ্টাকারে শ্রবণ হলেও।পরবর্তীতে যখন মর্মার্থ সুস্পষ্ট বোধগম্য হলো, আমি হতবাক না হয়ে পারলাম না।শুধু যে আমি হয়েছি তা না,উপস্থিত সকলের এই একই ব্যাধি হয়েছিল। অবাক হওয়ার ব্যাধি।ওনি সবার ব্যাধি নিরাময়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আরো স্পষ্ট ভঙ্গিতে বললেন,
–আমি আধারিকা কে বিয়ে করবো।
–কী বলছো এসব চন্দ্র? মাথা ঠিক আছে তোমার?
–হ্যা বড় মামা,আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে বলছি,আমি আধারিকা কে বিয়ে করতে চাই।
সানজুর বাবা অর্থাৎ চন্দ্রের বড় মামা বড়ই হতবাক হলেন,একমাত্র বোনের ছেলে একমাত্র ভাগিনার এমন সিদ্ধান্ত সকলের নিকট তার মাথা হেট করে দিলো।ইনিতো সেই ব্যক্তি যিনি কয়েক ঘন্টা পূর্বেও আমার চাচাদের নিকট নিজের বোন জামাই আর ভাগিনার মহত্ত্ব গাইতে ব্যস্ত ছিলেন।সামনে দাড়িয়ে আমার সাথে আলম ভাইয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।পরন্তু, চন্দ্র এ কী বলল?আমি এখন নিরব দর্শক হয়ে রইলাম।কারণ এমন আকস্মিক কিছুর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।কেউ কিছু বলার আগে তিনি আবার বলে উঠলেন,
–তুমি কী পাগল হয়ে গেছো চন্দ্র? তুমি কাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো।যার নামের সাথে অন্য কারো নাম জুড়ে গেছে।আর যেটাকে নাম না বদনাম বলে।আর আসিফ তোমার ছেলেকে বুঝাও,ও এখানে বিয়ে খেতে এসেছে বিয়ে করতে নয়।
শেষোক্ত বাক্যটি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন তিনি। চন্দ্র আবার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জবাব দিলেন,
–নাম বা বদনাম জুড়ে যাওয়ার কথা যদি বলতে হয়,তাহলে আধারিকার নামতো আমার সাথেও জুড়ে গেছে।সবাইতো এটাও বলছে, আধারিকা আমার সাথে পালিয়ে গিয়েছিলেন।ওর নাম আলমের সাথে জুড়ে যাওয়ার কারণে আলমকে যখন ওর বিয়ে করতে হবে।সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমাকেও ওর বিয়ে করতে হবে।
তখন একজন মুরুব্বি বাকা হেসে বললেন,
–এই যুগের ছেলে মেয়েদের কোনো আদব কায়দা জানা নেই। কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না।
অনেকেই তার সাথে তাল মিলালেন।চন্দ্র আবারও নিজের ব্যাক্তিত্বানুসারে নিঃসংকোচে ব্যাখ্যা করলেন,
–কথা বলা যদি শিখতে হয়।তাহলে শুধু আমার না এখানে উপস্থিত প্রত্যেকের কথা বলার ধরন শেখা উচিত।আপনারা বড়রা যা করবেন তাই আমরা শিখবো।আপনারাই যদি গুরুজন হয়ে এভাবে সকলের সামনে প্রমাণ ছাড়াই কোনো মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলেন,ইশারা ইঙ্গিতে তাকে চরিত্র হীনা উপাধি দেন।তাহলে আমরা ছোটরা কী শিখবো।যদিও নৈতিকতার বিচারে খুনিকে-ও নিশ্চিত না হয়ে খুনি বলা ঠিক না।
এবার মেম্বার সাহেব মুখ খুললেন,
–তুমি কী বলতে চাইছো?আমরা এখানে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে বিচার করতে বসে গেছি।এই মেয়ে যে ধর্ষিত হয়েছে এর প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।
–আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, ওনাকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে তার কোনো প্রমাণ আপনাদের কাছে নেই।ধর্ষণ প্রমাণ করার সব থেকে বড় হাতিয়ার হলো মেডিকেল রিপোর্ট। যা ধর্ষণ হওয়ার ৪৮ ঘন্টার ভিতরেই নিতে হয়।এরপর নিলে সমস্যা দেখা দেয় কারণ এর ভিতর গোসল ও অন্যান্য কারণে পানি ব্যবহার করলে ধর্ষনের আলামত নষ্ট হয়ে যায়।কিন্তু আধারিকার সাথে ঘটা ঘটনার তো আড়াই মাস পেরিয়ে তিন মাস হতে চললো।এখন আপনারা কীভাবে বলতে পারেন সে ধর্ষিতা।
মেম্বার এবার তথমথ সুরে বললেন,
–তাহলে এই মেয়ে যে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল।আর এ বাড়ির সবাই ও তো বলছে এরকম ঘটনা এ বাড়িতে ঘটেছে।
চন্দ্র এবার ভ্রুকুটি করে বললেন,
–তাহলে কী আপনি বলতে চাইছেন আধারিকা ধর্ষিত হয়েছে?
মেম্বার সাহেব গর্বের সাথে স্বীকার করলেন,
–অবশ্যই, আমরা সবাই এ জন্যই তো এখানে, কী বলেন ভাই সাহেবরা?
সকলের সম্মতিক্রমে হাঁ জয়ে যুক্ত হলো।চন্দ্র কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,
–এক্সেক্টলি,এই কথাটা আমি আপনাদের মুখ থেকে স্বীকার করাতে চেয়েছিলাম। যে আধারিকা কে ধর্ষণ করা হয়েছে।ওনি এখানে ভিক্টিম।ওনি এখানে বিচারপ্রার্থী।কিন্তু আপনারা ওনাকেই আসামী বানিয়ে দিলেন।যেখানে আলম নামের এই নিকৃষ্ট ব্যক্তি তাকে তার অনুমতির বাইরে টাচ করেছে,ধর্ষণ করেছে। এখানে তার বিচার হওয়া উচিত, তার চরিত্র নিয়ে কথা বলা উচিত। অথচ আপনারা তা না করে আধারিকাকে দোষী বানিয়ে দিলেন।তার চরিত্র নিয়ে আঙ্গুল তুললেন।এটা সত্যিই অনেক লজ্জার।
তার যুক্তিতে উপস্থিত সবাই বোকা বনে গেল।আমি ভাবতে থাকলাম মঈনুদ্দিন স্যার সেদিন অনেক পেশার কথা বললেও, আইন পড়ে যে আর্কিটেক্ট হওয়া যায় এটাতো বলেন নি।সত্যি এই লোকের প্রথম কোনো কথা আমার গাঁয়ে আগুন ধরালো না।বরংচ প্রশান্তি দিলো।
–আমরাতো সবাই এই বিষয়ের একটা সুষ্ঠু সমাধান দিতেই বসেছি(চেয়ারম্যান সাহেব)
–আপনারা কী সমাধান দিচ্ছেন?যে অপরাধী তাকে শাস্তি না দিয়ে, যে ভুক্তভোগী তাকে শাস্তি দিচ্ছেন।এটাই আপনাদের ন্যায়বিচার,এটাই আপনাদের সুষ্ঠু সমাধান।আসলে আমাদের সমাজের নিয়মটা বড় আজব।আমরা মেয়েকে শিক্ষা দেই পর্দা করে চলবে।নম্র ভদ্র হয়ে থাকবে।যাতে কেউ কখনো যেন কোনো বাজে কথা বলতে পারে না,কোনো ছেলে যেন খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতে পারে না।কিন্তু আমরা ছেলেকে শিক্ষা দেই না,যে মেয়ে দেখলে চোখ নামিয়ে রাখবে।তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে,সম্মান দিয়ে চলবে।ইসলামে নারীদের পর্দা ফরজ করার আগে পুরুষদের দৃষ্টি অবনমিত রাখার কথা বলা হয়েছে।কুরআন হাদীসে যেমন নারীকে পর্দা করতে বলা হয়েছে, তেমন পুরুষকে দৃষ্টি সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে।অথচ আমরা সকল নিয়ম কানুন কেবল নারীদের উপর চাপিয়ে দেই।আমাদের এই সমাজে বিচিত্র ধরনের লোকের বসবাস। এখানে কোনো নারী আমাদের সামনে বোরখা পড়ে চলবে।কোনো নারী আবার হাফ নেকেট অবস্থায় বেপর্দা হয়ে চলবে।এর মানে এই নয় যে ওই নারী পর্দা না করার কারণে আমরা ওর উপর ঝাপিয়ে পরবো।ইসলাম আমাদের তা শিক্ষা দেয় না।যেখানে ইসলাম নারীর পায়ের নিচে জান্নাত ঘোষণা করেছে, সেখানে আমাদের কোনো রাইট নেই আমরা তাদের অবমাননা করবো।
আবারো চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
–তার মানেই এইটাই নিশ্চিত তুমি এই মেয়েকেই বিয়ে করবে।
–অবশ্যই করবো যদি তিনি চান। (বলে আমার উপর দৃষ্টি রাখলেন)
তারপর আর কী বাকিটা ইতিহাস। আমার আর চন্দ্রের যুক্তিতে সবাই চুপ হলেও।নিজেদের ঠাট ওতো বজায় রাখতে হবে।আমায় দুটি পথ দেয়া হয়।আলমকে বিয়ে করা নইলে চন্দ্রকে বিয়ে করা।
আলম ভাইকে বিয়ে করার ইচ্ছেতো আমার কস্মিনকালেও ছিলো না। আর রইলো চন্দ্র এ বিষয় নিয়েতো আমি বেশ দ্বিধায় পরে গেলাম।মাকে তখন এমনিই তাচ্ছিল্য করে সান্ত্বনা দিয়ে ছিলাম, “মেয়েদের একদিন বাপের বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়”।আমিতো ভেবেই নিয়ে ছিলাম, আজ আমার জীবনের শেষ দিন হলেও আমি এ বিয়ে করবো না।দরকার পরলে চিরদিনের জন্য এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।সেই তাচ্ছিল্য বাণী যে এভাবে সত্য হয়ে যাবে।তা আমার চিন্তার উর্ধ্বে ছিলো।চাচা চাচীদের আপত্তি থাকলেও, মায়ের এ বিয়েতে সম্মতি ছিলো।নানাবিধ বাক বিতন্ডার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আমার আর চন্দ্রের বিয়ে হয়ে গেলো।সানজুর বাবা মুমিনুল হক এ বিষয় নিয়ে বেশ ক্ষিপ্ত ছিলেন।বলতে গেলে তিনি এ বিয়ে মেনেই নেন নি।চাচারা আমায় চন্দ্রের সাথে বিয়ে দিতে না চাইলেও, সেই মান-সম্মানের ঠানে দিতে হলো।লোক দেখাতে এতো লোকের সমাগম করে যে তাঁরা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন।তা তাঁরা হাড়ে হাড়ে ঠের পেয়েছেন সেদিন।চাচীরাতো প্রলাপ গাইতে শুরু করে দিলেন, এতো দিন খাইয়ে পরিয়ে,শেষে তাদের এইদিন দেখতে হলো।আমিও সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম, ” চাচী আমাদের খাওয়াতে তোমাদের এতো কষ্ট হয়।তাহলে বাবার বাজারে তিনটা দোকান আর দাদার সম্পত্তির ভাগ আমাদের বুঝিয়ে দিন।আমরা নিজেরা নিজেরা চলতে পারবো।”তখন ছোট চাচা এসে ধমকে চুপ করিয়ে দিলেন। তবে আমায় নয় চাচীকে।ঔদিন আমি বুঝতে পারলাম। তুমি যতক্ষণ চুপ থাকবে, ততক্ষণ সবাই তোমাকে পায়ের নিচে ফেলে রাখতে চাইবে।আর তুমি যখন বলতে শুরু করবে, তখন তাঁরা তোমার পায়ে পরে থাকতে চাইবে।এইসব চরিত্রের মধ্যে একটা চরিত্র আমায় বড় অবাক করলো।সেটা হলো আন্কেল আমার বর্তমান শশুরের,সানজুর বাবা সহ আরো অনেকেই তাকে চন্দ্রকে বাধা দিতে বলেছিলেন।কিন্তু তিনি নির্বাক ছিলেন। একবার শুধু বলেছিলেন,”আমার ছেলে কোনো ভুল কাজ করছে না।এই মেয়ের জায়গায় আমার মেয়ে চাঁদনি বা সানজু মামণিও থাকতে পারতো।তাই এখানে বাধা দেওয়ার প্রশ্ন আসে না।”আসার সময় আলম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, কিছু জিনিস সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
নবজন্মা তালোয়ার প্রতীকী খ্যাত চাঁদের পানে চেয়ে এসবই ভাবছিলাম।সেবেলাই আমার পিছনে আরেক চাঁদ এসে দাঁড়ালো।হ্যা আমার কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ, ‘চন্দ্র’ দাঁড়িয়ে আছেন আমার পিছনে।তার ব্যবহৃত বিশেষ সুগন্ধি আমায় জানান দিচ্ছে।তিনি অফিস থেকে এসেছেন এইমাত্র।
–কী ব্যপার জানালায় দাঁড়িয়ে আছো যে?পড়তে বসো নি?
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–আমার সন্ধ্যে বেলা পড়তে ভালো লাগে না।গভীর রাতে পড়তে ভালো লাগে।
ওনি শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললেন,
–তাই নাকি।
আমার তার সামনে থাকতে কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছিল, তাই ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,
–আপনি ফ্রেশ হন আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসি।
ওনি নিম্নদৃষ্টি রেখেই বললেন, ‘আচ্ছা’।
এই চার পাঁচ দিন ধরে এটাই আমার রুটিন হয়ে গেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওনার জন্য চা বানানো।চাঁদনির কাছে শুনলাম ওনি কারো হাতে চা খান না।নিজে নিজে বানিয়ে খান।আমিতো প্রতিদিন তার সামনে থেকে চলে আসার বাহানায় চায়ের প্রস্তাব রাখি।ওনিও তাতে আপত্তি রাখেন না।হয়তো ওনি আমার অস্বস্তি বুঝতে পারেন। গ্রামে সবার জন্য একা কথা না বলতে পারলেও।শহরে আসার পর তিনি আমায় বলেছিলেন, ওনি শুধু গ্রাম থেকে আমায় নিয়ে আসার জন্য বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিলেন।নইলে এ ব্যস্ত শহরে কোনোদিন হয়তো আমার আর ফেরা হতো না।ফেরা হতো না ভার্সিটিতে।আমার স্বপ্ন ইচ্ছাগুলো অপূর্ণই থেকে যেত।প্রথমে আসার পর চাঁদনি আর আন্কেলের সাথে আমার কেমন জানি দুরত্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো।নতুন সম্পর্কে বাধা পরার কারণে হয়তো।আল্লাহর রহমতে এই দুদিন ধরে সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে।আমি প্রতিদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করি,কিন্ডারগার্টেনেও পড়াই, টিউশনি এখন আর করাই না।চন্দ্র অবশ্য আমায় কিন্ডারগার্টেনেও পড়াতে না করেছিলো। আমি ততটা পাত্তা দেই নি। তিনিও কিছু বলেন নি।আমাদের সম্পর্কটাই এরকম চলছে।ওনি আমায় কিছুতেই জোর করেন না।গ্রামে যাওয়ার জন্য ছুটি নেওয়ার ফলে তার কাজের চাপও বেড়ে গেছে। নতুন কোনো কনস্ট্রাকশনের কাজ পেয়েছেন হয়তো এগুলো নিয়েই ব্যস্ত আছেন।সব মিলিয়ে সংসার জীবনের শুরুটা ভালোই যাচ্ছে। কিন্তু সব ভালোর মাঝে কিছু খারাপও আছে। সেদিন আমায় ওভাবে নিয়ে যাওয়ার কান্ডে ভবনের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলো। এ-নিয়ে অনেক প্রশ্নের মুখে পরতে হচ্ছে। আর তাছাড়া চন্দ্রের সাথে আমার হঠাৎ বিয়ে বহু সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্ডারগার্টেন নিকট ভর্তি হওয়ায়,সেখানে গিয়েও আমার এমন বীপরিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়।নিশুর আম্মুর সাথেও আমার সম্পর্কটা আগের মতো নেই।সানজুর বাবা সেদিন চন্দ্রদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।এ বিষয়টা আমায় সব থেকে বেশি পীড়া দেয়।চন্দ্র সেদিন আমায় আরো বলেছিলেন, আমি যদি চাই ডিবোর্স নিয়ে চলে যেতে পারবো।আমি কোনো প্রতিউত্তর করি নি।মাঝে মাঝে ভাবি আমার ওনাকে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত।ওনাদের এতো সুন্দর সুন্দর বন্ধনগুলো নষ্ট করার জন্য আমিই দায়ী। আবার ভাবি আমার জন্যই এতো কিছু করলেন সেই আমিই ওনাকে ছেড়ে যাবো।
——–___________
চা নিয়ে চন্দ্রকে দিলাম। ওনি চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
–চিনি ঠিক আছে।
–কেনো তুমি খেয়ে দেখনি?(খাওয়া চলমান আছে)
–আমিতো চিনি কম খাই।তাই জানতে চেয়েছিলাম।
–এতো কিপ্টেমি করার দরকার নাই।তোমার স্বামী এতোটা গরীব না।
কথাটা ওনি স্বাভাবিক স্বরে বললেও,আমি আমার গালদ্বয়কে স্বাভাবিক রাখতে পারছিলাম না।কেমন যেন রঙ পরিবর্তন করতে শুরু করো।আমি ইতস্তত ভঙ্গিমায় জানতে চাইলাম,
–আপনি তো আমায় আগে আপনি করে বলতেন।এখন তুমি করে বলেন কেন?
চায়ের পেয়ালা বর্তমানে বিরতিতে আছে।আমার উপর দৃষ্টি রেখেই বললেন,
–বউকে তো তুমি করেই বলবো।
ব্যাস আমার বাত্তি গুল মিটার চালু।অর্ধ শেষ করা চায়ের পেয়ালাটা টি টেবিলের ওপর থেকে নিয়ে চলে আসলাম,,,,,,
#চলবে,,,,
বি.দ্র:লিখতে গিয়ে কোনো প্রকার ভুল ত্রুটি করলে যা আপনাদের মন ক্ষুন্ন করে।এমন কিছুর জন্য আমি আগেই দুঃখিত।আজকের পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন। একটা কথা বলে রাখা জরুরি এই উপন্যাসের বেশিরভাগ চরিত্রই আমি বাস্তবতা থেকে নিয়েছি।তাই উপন্যাসটা হয়তো তেমন মন মুগ্ধকর হচ্ছে না।তবুও আমি চেষ্টা করবো ভালো কিছু করার।