কৃষ্ণচূড়ার এক সন্ধ্যা পর্ব ৮+৯

0
457

#কৃষ্ণচূড়ার_এক_সন্ধ্যা – [০৮+০৯]
লাবিবা ওয়াহিদ

—————————-
–“নিথি? তোর স্যারটা তো সেইরকম হ্যান্ডসাম। এতো হ্যান্ডসাম বয় তোকে পড়ায়, সিরিয়াসলি? নাম কী রে? কোন ক্লাসে পড়ে? দেখে তো স্টুডেন্ট মনে হলো!”

মোহনার এত এত প্রশ্নের ভান্ডার নিথিকে চরম বিরক্তিকর করে তুললো। রায়িন স্যার সম্পর্কে সেই দু’ঘন্টা ধরে আলাপ করছে। নিথি তো আজ পণ করেছে, সে মরে গেলেও রায়িনের নাম বা নাম্বার দিবে না। কথায় আছে না, এক পা’গ’লের ভাত নাই আরেক পা’গ’লের আমদানি! নিথির নিকট মোহনাকে তেমনই লাগছে। মোহনাকে খুব একটা সুবিধার লাগছে না নিথির। যতই হোক, মোহনা তার আপনজন। তাই বলে সে কিছুতেই রায়িনের বেলায় কম্প্রোমাইজ করবে না।
–“কী রে নিথি? কিছু বলছিস না কেন?”

নিথি কথা ঘুরিয়ে বেশ বিরক্তির সাথে বললো,
–“তোর কোন দিক দিয়ে হ্যান্ডসাম লাগে স্যারকে? আমার তো তাকে খাম্বা, নিরামিষ, বাঁ/ দরের মতো লাগে। তার চেয়েও বড়ো কথা, সে গম্ভীর, অহংকারি! এমন আনরোমান্টিক ছেলেকে নিয়ে কিসের এত মাথা ব্যথা বুঝি না!”

নিথি সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো। সে কী বেশি বলে ফেললো নাকি? নাহ, এইটুকুতেই থামতে হবে। নিথি অসহায়ের মতো সিলিং ফ্যানে নজর বুলালো। আজ কাজিন থেকে রেহাই পেতে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষের বদনা। গাইতে হলো। যার পুরোটাই অযৌক্তিক! নিথি তো জানে, তার রায়িনের মাঝে কোনো খুঁত নেই। সে যথেষ্ট সম্মান করে মেয়েদের। তবে এটা সত্য রায়িন গম্ভীর স্বভাবের৷ তবে তার গাম্ভীর্য নিথির পছন্দ। বলা বাহুল্য রায়িন পুরোটাই নিথির পছন্দ। রায়িনের আচরণ, পার্সোনালিটি সবটাই তার কাছে অধিক মুগ্ধকর। নিথি এসব বলেও মোহনাকে থামাতে পারে না।
–“তাহলে আমার জন্য ভালোই হয়েছে। তুই অন্তত তার দিকে নজর দিবি না। নাম্বার দে, তুই যখন নাম বলবি না, আমি তাকেই জিজ্ঞেস করে নিবো!”

নিথি চোখ রাঙিয়ে তাকায় মোহনার দিকে। অধর কামড়ে বিড়বিড় করে বলে,
–“তোর চোখ গে/লে দিবো আমার রায়িন স্যারের দিকে তাকালে। নাম্বার তো আমি মরে গেলেও দিবো না। পাইছে টা কী আমারে!? তার চেয়েও বড়ো কথা ওরে আনাটাই আমার ভুল ছিলো।”
–“কিছু বললি?”
–“তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে?”
–“লাস্ট উইকেই ব্রেকাপ হয়েছে। এখন তুই নাম্বার দিবি কি না ব..”

মোহনা তার শেষোক্ত বাক্য শেষ করার পূর্বেই নিথি আদনকে হাঁক ছেড়ে বললো,
–“আদন, স্যার যেই ম্যাথটা তোকে দিয়েছে তা কমপ্লিট করেছিস? আজ যদি ম্যাথে গোলমাল করিস তাহলে তোর পিঠের ছা/ল তুলে দিবো, বলে দিলাম!”

এসব বলার বাহানায় নিথি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রাতে সবাই খেয়ে যে যার ঘরে চলে যায়। তবে নিথি নিজের রুমে গেলো না। খাওয়া শেষ হতেই শারমিন আক্তারের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“মা, তোমার না মাথা ব্যথা করছে? আমি টিপে দিবো কেমন? তুমি এসব কাজ সেরে রুমে আসো। আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি!”

বলেই নিথি শারমিন আক্তারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শারমিনের রুমের দিকে ছুটলো। শারমিন আক্তার হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে রয়। তার আবার কখন মাথা ব্যথা উঠলো? তবে লোক সম্মুখে কিছু বললেন না। যতই হোক মোহনা তার শ্বশুরবাড়ির অতিথি। কখন কোন কথা তাদের কানে লাগিয়ে দেয় তার হুঁশ নেই। তাই শারমিন আক্তার এঁটো থালাগুলো নিয়ে নিরবে প্রস্থান করলেন। আদন সবটাই সিআইডির মতো লক্ষ্য করেছে। সে রোজ সময় ধরে সিআইডি দেখে। তাই মোটামুটি বুঝলো তার বোনের ব্যবহার। আদন অবগত, মোহনা বাসায় আসলে নিথি তার সাথে চিপকায় থাকে। সেখানে মোহনাকে নিথি এড়িয়ে চলছে। নিশ্চয়ই কাহিনীতে গড়মিল আছে।

মোহনাকে তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদন বলে,
–“কী আপু, নিথি আপুর জন্য অপেক্ষা করছো? কেন? একা ভয় লাগে? নাকি বিছানায় শুঁলে মনে হয় বিছানার নিচে থেকে কেউ বেরিয়ে আসছে? হা হা ভীতু!”

মোহনা চোখ গরম করে আদনের দিকে তাকায়। মোহনা গা’লি দিয়ে বলে,
–“চুপ কর, বে/য়া/দব, পা/কনা ছেলে৷ তোকে আমি পরে দেখে নিবো!”

বলেই হনহন করে নিথির রুমে চলে যায়। আদন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাই তুলে। যেদিন থেকে মোহনার সিক্রেট সে জেনেছে সেদিন থেকেই মোহনার ব্যবহার এরকম হয়ে গেছে। তবে আদনও কম যায় না, ঠিক পয়েন্টে ঠিক কোঁপ দেয়। তার বোনের সাথে বে/ঈ/মানী? তার মা না থাকলে নির্ঘাত ঘাড় ধা/ক্কিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতো!

নিথি মাকে সত্যি সত্যি-ই মাথা টিপে দিয়েছে। নিথি জানে, মাথা টিপে দিলে শারমিন আক্তার তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। নিথির বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর শারমিন আক্তারের ঘুম যেন ধরাই দেয় না। রাত বাড়লেই একরাশ বিষণ্ণতা তাকে ঘিরে ধরে। শুধুমাত্র ছেলে-মেয়ে দুটোর কারণে চোখের পানি ফেলতে পারে না। নিজেকে শক্ত রাখেন। নিথি মাথা টিপে দিতে দিতে বলে,
–“ঘুমিয়ে গেছো মা?”
–“না, বল। কী বলবি?”

নিথি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। সাহস সঞ্চার করে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
–“যদি জানো তোমার মেয়ে কাউকে ভালোবাসে, তাহলে তুমি কী মেনে নিবে?”
–“ছেলে যদি আমার মেয়েকে সুখী রাখতে পারে তাহলে অবশ্যই মেনে নিবো। ছেলেরও তো দায়িত্ব বহন করার মতো যোগ্যতার প্রয়োজন!”

নিথি আবারও নিশ্চুপ। কথা তার গলায় আটকে আসছে। রায়িন কে, কী তার পরিচয় নিথির জানা নেই। জানতেও চায় না সে। আল্লাহ যদি রায়িনকে তার ভাগ্যে রাখে তাহলে দু’বেলা পান্তা ভাত খেয়েও সে সংসার করতে রাজি। তাও রায়িনকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়। কিন্তু তার করবে চুরি, সে কী তাকে মেনে নিবে? নিথি চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
–“হঠাৎ এসব বললি যে?”
–“না, মা। এমনি!”

নিস্তব্ধ রুমটায় কারো কন্ঠের ধ্বনি শোনা গেলো না। মিনিটখানেক নিরবতা পালন করলো মা, মেয়ে। একসময় শারমিন আক্তার বলে ওঠে,
–“তুই আমার সন্তান, একজন মেয়ে। তোকে আমি ছোট থেকে এই অবধি একা হাতে মানুষ করেছি। আমি কখনোই চাইবো না তোর সুখে বাধা হয়ে দাঁড়াতে। তুই যদি কাউকে ভালো বেসেও থাকিস আমি কিছু বলবো না। শুধু বলবো ছেলেটাকে বাচ-বিচার করে তারপর বিয়ে নামে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবি। আমি চাই না মা, আমার মতো করে আমার মেয়েরও কপাল পুড়ুক।”

শেষোক্ত বাক্য বলার সময় শারমিন আক্তারের গলা ভেঙ্গে আসে। নিথির বুঝতে বাকি নেই তার মা কাঁদছে। নিথি ঝাপসা চোখ নিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। এতে শারমিন আক্তারের নিরব কান্না হুঁ হুঁ করে বেড়ে যায়। নিথি তার মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“এভাবে কেঁদো না আম্মু। দোষ করেছে ওই বাবা নামক কীটটা। তুমি কেন তার জন্যে কাঁদবে, কষ্ট পাবে? সে কোনো মানুষের কাতারেই পরে না। এমন মানুষের জন্যে কান্না করা বেমানান!”
–“তুই বুঝবি না রে মা। একটা সম্পর্কে আটকে পরা মানে জীবনও সেই সম্পর্কে আটকে পরে যায়। আমারও হয়েছে সেই দশা। আটকে আছি এক অসম্পূর্ণ বাঁধনে। যেই বাঁধনে বুক ছেঁড়া কষ্ট বৈ কিছু নেই।”

মায়ের এমন কথায় নিথির চোখ দিয়েও গলগল করে জল জড়িয়ে পরতে লাগলো। কোন মায়াজালে জড়ালো সে? রায়িন যদি অন্যকারো হয়ে যায়? কী করে মেনে নিবে? রায়িন কী তাহলে তার অসম্পূর্ণ, অপূর্ণ সমাপ্তিতেই থেকে যাবে? পাবে না, সেই কৃষ্ণচূড়ার এক সন্ধ্যার ন্যায় পাশে? বড্ড তোলপাড় হচ্ছে বক্ষঃস্থলে। কেন সে-ই সারাজীবন কষ্ট পেয়ে যাবে?

———————–
সকাল হতেই শারমিন আক্তার নাস্তা বানিয়ে বেরিয়ে গেলো গার্মেন্টেসের উদ্দেশ্যে। নিথি চোখ খুলতেই নিজেকে মায়ের রুমে আবিষ্কার করলো। গতকাল মায়ের কাছেই ঘুমিয়ে পরেছিলো সে। শোয়া থেকে উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙলো। মাথাটা ভিষণ ধরেছে তার। হয়তো গতরাতে কাঁদার ফলাফল। রাতের কথা ভাবতেই বক্ষঃস্থলে থেমে থাকা ঝড় পুণরায় সব তোলপাড় করতে শুরু করলো। নিথি চুলে দু’হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে রইলো। পরে কী মনে আসতেই মাথা তুলে ঘড়ির দিকে তাকালো। আদনকে স্কুলের জন্যে উঠাতে হবে, ভাবতেই নিথি আর বসলো না। মাথা ব্যথা নিয়ে-ই আদনের রুমে ছুটলো। আদনে ঘরে আসতেই দেখলো আদন কোলবালিশে পা উঠে উবুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। নিথি হেসে আদনের কানের সামনে গিয়ে এক চিৎকার দিলো। আদন হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে। চোখ বড়ো বড়ো করে আশেপাশে নজর বুলিয়ে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করলো। সেকেন্ড দশেক পার হতেই আদন চোখ গরম করে নিথির দিকে তাকালো,
–“উফফ বুবু! এত ফাঁটা – বাঁশ কেন তোমার গলা? মাইক হতে পারলে না? মাইক হলে তাও কিছু টাকা উঠতো আমাদের। আমার মাথা ব্যথা করছে এখন! এটা কী ঠিক হলো?”
–“আমারও মাথা ধরেছে। আমার একার মাথা ব্যথা হলে হয় নাকি? তাই তোকেও কিছু ভাগ দিয়ে দিলাম! দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হ! আমি নাস্তা বাড়ছি। আর হ্যাঁ, টিফিন লাগবে?”
–“না। টাকা আছে, বাইরে থেকে খেয়ে নিবো!”

বলেই দেরী না করে মাথা ধরেই আদন ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো। নিথিও নিজের রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে মোহনা তার বিছানা দখল মেরে ঘুমাচ্ছে। হাত-পা ছড়াছড়ি সমগ্র বিছানায়। নিথি মুখ বাঁকিয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।

আদনকে নাস্তা করতে দিয়ে নিথি বেরিয়ে পরলো। মোহনাকে জাগানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। ঘুমাক না, সে কেন বাঁধা দিতে যাবে?

আদন নাস্তা শেষ করে উঠতেই মোহনা চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আদন তার ব্যাগের বই চেক করতে করতে বলে,
–“নাস্তা নিজে রেডি হয়ে খেয়ে নিও। না পারলে নিজের বাড়িতে চলে যাও। তোমাকে আমি বা অন্যকেউ ধরে রাখেনি!”

মোহনা আদনের দিকে কিড়মিড় দৃষ্টিতে তাকায়।
–“বড়োদের সাথে কথা বলা শিখিসনি নাকি তোর আহ্লাদী বোন শিখায়নি? দুইটা তো একই জাতের হইছিস।”
–“খবরদার আমার বোনকে নিয়ে কিছু বলবা না। আমার অভ/দ্র ব্যবহার তাদের জন্য-ই তারা ভালো ব্যবহার করার মতো মানুষের পর্যায়ে পরে না। নিজে বানিয়ে খেতে পারলে খাও, নয়তো বিদায় হও।”

বলেই আদন থম মেরে বসে থাকে। মোহনা শারমিন আক্তারকে বিচার দিতে গেলে দেখে বাড়িতে আদন এবং সে ছাড়া কেউ নেই। মোহনার খুব ইচ্ছে হলো আদনের চুল টেনে সব ছিঁড়ে ফেলতে। দিনদিন যেন বে/য়া/দবের উচ্চ ধাপে পৌঁছাচ্ছে!
–“কী হলো যাবা নাকি নাস্তা বানিয়ে খাবা? তোমার না সকালেই যাওয়ার কথা ছিলো? তো যাও না কেন? আমি তো তালা লাগিয়ে স্কুলে যাবো। এত ঢিলা হলে চলে?”

মোহনা দাঁতে দাঁত চেপে উল্টো পথে নিথির রুমের দিকে চলে গেলো। এখানে থেকে অপ’মান হওয়ার কোনো মানেই হয় না। এখনই সে চলে যাবে। আর এখানে আসলেও এই ছেলের মুখোমুখি সে কোনদিন হবে না। এটাই পণ করেছে সে। মোহনা ভেতরে যেতেই আদন মিনমিন করে বলে,
–“শুধু ঢিলা না, ক্যারেক্টারও ঢিলা। ঢিলা প্যান্ট আর ক্যারেক্টার ঢিলা মানুষ কখনোই কোমড়ের উপরে উঠতে পারে না।”

———————-
যান্ত্রিক শহরের কোলাহলে নিথির মাথা ব্যথা যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো। নিথি ফুটপাতের এক কোণায় দাঁড়িয়ে রয় মাথা ধরে। এতো যন্ত্রণা করছে কেন মাথা? ঘাড় থেকে যেন মগজটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। পা-টাও চলতে চাইছে না। রাস্তাও পার হতে হবে। নিথি অনেক কষ্টে চোখ মেলে সামনে তাকায়। কিছু মানুষ একসাথে রাস্তা পার হচ্ছে। তাদের সাথে পার হতে হবে তাকে। তাই নিথি নিজেকে সংগত করে পা চালালো। রাস্তাটা পার হতে পারলেই সামনে ভার্সিটি। ভার্সিটি কোনরকমে যেতে পারলেই চলে। নিথি রাস্তা কিছুটা পার হতেই তার মাথা আরও তীব্র যন্ত্রণা করে উঠলো। নিথি কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই কেউ একজন নিথিকে হেঁচকা টান দিলো। নিথি তাল সামলাতে না পেরে কারো বক্ষে গিয়ে পরলো। ঠিক তখনই নিথির পাশ দিয়ে বেশ দ্রুত গতিতে একটি বাস অতিক্রম করলো, হর্ন দিতে দিতে। নিথির নাকে চেনা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। নিথি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। মাথা উঁচু করে ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। রায়িনকে দেখে নিথির অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেলো। মাথা ব্যথাও ভুলে বসলো সে।
–“এত কেয়ারলেস কেন তুমি? আমি আর এক সেকেন্ড লেট করলে কী হতো জানো?”
–“কী হতো?”
আনমনেই বলে ওঠে নিথি। রায়িন এবার নিথির মুখশ্রী লক্ষ্য করলো। রক্তিম চোখ-জোড়া দেখে রায়িন আঁতকে উঠলো। নিজেকে সংগত করে বললো,
–“বড়ো এক্সিডেন্ট হতো। পরের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই তুমি জানো?”

নিথির হুঁশ ফিরলো। সে আসলেই বুঝতে পারেনি এরকম মাথা ব্যথা এক্সিডেন্ট নামক ভয়ংকর শব্দের সাথে পরিচয় করাতে পারে। সত্যি যদি রায়িন না আসতো, তাহলে আজই যে তার শেষ দিন ছিলো। নিথি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
–“সরি, আমি বুঝতে পারিনি!”

রায়িন নিথির থেকে কিছুটা সরে গিয়ে দাঁড়ালো। নিথি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তাদের পাশ দিয়ে আবারও একটা বাস হর্ণ বাজিয়ে চলে গেলো। এতে নিথি আবারও উপলব্ধি করলো মাথার চিনচিন ব্যথা। চোখ-মুখ কুচকে নিরবে সহ্য করছে সে।
–“তোমার চোখ-মুখ লাল কেন? আর ইউ অলরাইট নিথি?”

নিথি সেভাবেই রইলো। রায়িনের বুঝতে বাকি নেই যে নিথি ভালো নেই। রায়িন নিথির দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে আসলো।
–“কী হলো নিথি? ঠিক আছো?”

নিথি চোখ মেলে পুণরায় পিটপিট করে রায়িনের দিকে তাকায়। খুব কষ্টে বললো,
–“মাথায় পেইন হচ্ছে স্যার। খুব-ই তীব্র! কোলাহল আমার সহ্য হচ্ছে না।”

রায়িন একপলক নিথিকে দেখে আশেপাশে নজর বুলালো। চারিপাশে নজর বুলাতেই একটা সুপার শপ দেখতে পায়। রায়িন নিথির উদ্দেশ্যে বললো,
–“আমার সাথে এসো!”

রায়িন কয়েক ধাপ এগোতেই পিছে ফিরে তাকালো। নিথি এখনো একই স্থানে ঠায় দাঁড়িয়ে। রায়িন পুণরায় এগিয়ে এসে নিথির হাত ধরলো। নিথি চমকে উঠলো। কুচকে থাকা ভ্রু – যুগল নরম হয়ে এলো তার। রায়িন বিনা-বাক্যে নিথিকে ধরে সুপার শপের দিকে নিয়ে গেলো। কাঁচের ডোরটা ওপেন করে ভেতরে ঢুকতেই কোলাহল কানে আসলো না। সকাল বিধায় সুপার শপে লোকজন নেই বললেই চলে। রায়িন নিথিকে নিয়ে ভেতরে গেলো। এক কর্মচারীকে বললো যাতে তাকে বসার জন্যে একটি চেয়ার দেয়। কর্মচারী চলে যেতেই রায়িন নিথিকে নিয়ে সুপারশপের ভেতরে চলে গেলো। এদিকটায় দুটো শেল্ফ রাখা। এক শেল্ফ ভর্তি নানান চকলেট, জুস, চিপস। আরেক শেল্ফ জুড়ে নুডুলস, ময়দ, মশলা ইত্যাদি। নিথির নজর কোনটাতেই নেই। সে অবাক হয়ে সবটা উপলব্ধি করছে। তার প্রিয় মানুষটি তার এভাবে খেয়াল রাখছে? কোলাহলবিহীন জায়গায় অবস্থান করায় নিথির মাথা ব্যথা কিছুটা কমেছে। কর্মচারী রায়িনের কথানুযায়ী চেয়ার নিয়ে আসলো। রায়িন চেয়ারের দিকে ইশারা করে নিথির উদ্দেশ্যে বলে,
–“চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকো। আরাম লাগবে।”
–“না, স্যার। আপনি বসুন, আমি ঠিক আছি!”

নিথি পরলো অস্বস্তিতে। সে যতই অসুস্থ হোক না কেন, সে কী করে রায়িনকে দাঁড় করিয়ে নিজে আরাম করে বসবে? বিষয়টা বে/য়া/দবি হয়ে গেলো না? কিছু মেয়ে কর্মচারী এদিক সেদিক থেকে উঁকিঝুঁকি মারছে ওদের। হয়তো ওরা ঘটনা বুঝতে চাইছে।
–“নিজের বসার হলে, আমি-ই বসতাম। তোমাকে বলতাম না। চুপ করে বসো!”

নিথির মনে হলো রায়িন তাকে ধমকাচ্ছে। নিশ্চয়ই রায়িন নিথির উপর বিরক্ত। রায়িন নিশ্চয়ই কোথাও যেতে চাচ্ছিলো আর তখনই নিথিকে রায়িন দেখে। বেচারা হয়তো পারছে না অসুস্থ নিথিকে ফেলে যেতে। এজন্যই সে বিরক্ত। নিথি আর চাইলো না রায়িনকে বিরক্ত করতে। মনমরা নিথি চুপ করে বসে পরলো।

–“সকালে কিছু খেয়েছো নাকি না খেয়েই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুটেছো?”
রায়িনের হঠাৎ প্রশ্নে নিথি চমকে রায়িনের দিকে তাকালো। গোল গোল চোখে নির্নিমেষ তাকিয়ে রয় নিথি। এ যেন স্বপ্ন অথবা ভ্রম!
–“আমাকে নতুন দেখছো? এভাবে না তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর দাও!!”
নিথি লজ্জা পেলো, ভিষণরকম লজ্জা। তড়িৎ দৃষ্টি নামিয়ে আমতা আমতা করে আওড়ায়,
–“না, সময় পাইনি!”
–“চা খাও?”
–“জ্বী?” নিথি হতবাক হয়ে রায়িনের দিকে পুণরায় তাকালো। এমন প্রশ্ন সে মোটেও প্রত্যাশা করেনি।
–“দ্বিতীয়বার রিপিট করতে হবে?” রায়িনের কন্ঠে শোনা যায় বিরক্তির ধ্বনি।
নিথি নেতিবাচক মাথা নাড়িয়ে বলে, “খাই।”

রায়িন কী একটা ভেবে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরেও এলো। তবে হাতে তার এক কাপ চা।
–“খেয়ে নাও। মাথা ব্যথা কমে যাবে!”

~চলবে, ইনশাল্লাহ।
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। দুই পর্ব দিলাম, খুশি? গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here