কৃষ্ণচূড়ার এক সন্ধ্যা পর্ব ৪ +৫

0
464

#কৃষ্ণচূড়ার_এক_সন্ধ্যা – [০৪+০৫]
লাবিবা ওয়াহিদ

——————————-
প্রথমদিকে নিথির পড়ানো নিয়ে রায়িনের কোনো সমস্যা না থাকলেও ইদানীং নিথি সব আজব আজব কান্ড ঘটাচ্ছে৷ সেদিন তাড়াহুড়ো করে খাবার আনতে গিয়ে পা পিছলে সব রায়িনের উপর ফেলে দিয়েছিলো। আজ আবার রায়িনের পায়ের সামনে বই-খাতা পরেছে। রায়িন এবং নিথি একসাথে বই গুছাতে বসতেই নিথির মাথার সাথে রায়িনের থুঁতনিতে সজোরে আঘাত লাগলো। এরকম দৃশ্য দেখে আদন অদূরে কিটকিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। বর্তমানে রায়িন তার থুঁতনিতে হাত দিয়ে বসে আছে। নিথি চোখ-মুখ ছোট করে মাথায় হাত বুলাচ্ছে। ব্যথা যে সে পায়নি এমনও নয়। তার এসব উদ্ভট কর্মকান্ডে নিথি ভিষণরকম লজ্জিত। ভালো লাগার মানুষটার সামনেই কেন এই লজ্জাজনক ঘটনা ঘটে? হৃধির জানা নেই৷ নিথি কোণা চোখে রায়িনের দিকে তাকালো। নাকটা লাল হয়ে আছে। নিশ্চয়ই রেগে আছে ভিষণ? নিথির কলম থামতেই রায়িন ধমকে উঠলো,
–“কী সমস্যা? আবার কোন কু-বুদ্ধি আঁটছো মাথায়?”

নিথি দ্রুত ম্যাথ করতে লাগলো। তার যে কতটা ফাঁটছে সেটা একমাত্র সেই জানে। তবে রায়িনের ধমকে নিথি চাপা ক্রোধ অনুভব করতে পারে। ভিষণ ভয় হলো তার, যদি তার এসব কর্মকান্ডে নিথিকে পড়াতে না করে দেয়? তখন? নিথি কী উত্তর দিবে নিজেকে? নিথি দ্রুত নিজের মনোযোগ ম্যাথে দিলো।

রায়িনের ফোনটা বারংবার বাজছে। কিন্তু সে ফোনের স্ক্রিনে তাকাচ্ছে না। কল আসলেই সাইলেন্ট করছে নয়তো কেটে দিচ্ছে। নিথি ব্যাপারটি খেয়াল করলেও রায়িনের রাগচটা অবস্থায় কিছুতেই প্রশ্ন করার সাহস পেলো না। বরং নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো। একসময় রায়িন অতীষ্ঠ হয়ে কল রিসিভ করলো। চাপা স্বরে “হ্যালো” বলতেই অপরপাশ থেকে মধ্য বয়সী একজন লোক বেশ কড়া কন্ঠে বললো,
–“তুমি কোথায় রায়িন? কতবার বললাম, আজ বাসায় পার্টি আছে! রায়ার বার্থডে আজ! ভুলে গেছো? নাকি বড়ো ভাই হিসেবে তোমার দায়িত্ব কমে গেছে? আমি কিছু শুনতে চাই না, রাত বারোটায় তোমায় বাসায় চাই। আমি কামালকে বলে দিচ্ছি, সে তোমাকে পিক করবে!”
–“পাপা প্লিজ, আমি হোস্টেল থাকি। হোস্টেলে এতো রাতে ফেরাটা এলাউ করে না। কোনো ইতিহাসে লেখা নেই যে বারোটার পার্টিতে না গেলে বোনের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব কমে যায়। আমি এখন টিউশনিতে আছি, পরে কথা হবে!”

রায়িন কল কাটতে গিয়েও কাটতে পারলো না ভয়ংকর ধমকে। রায়িন চোখ বুজে তপ্তশ্বাস ফেলে আবার চোখ মেলে তাকালো,
–“আমার ছেলে হয়ে তুমি টিউশনি করাও, মজা পাইছো? খাওয়াই না আমি তোমায়? হোস্টেলের চিন্তা করতে বলেছি আমি তোমাকে? এই টিউশনির ভূত মাথা থেকে ছাড়াও রায়িন নয়তো…”

রায়িন ভদ্রলোককে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দেয়। নিথি পুরোপুরি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও রায়িনের চাপা স্বরে বলা কথাগুলো সে শুনতে পেয়েছে। এর মানে রায়িনের বোনও আছে? কতটুকু সে? নিথি তাহলে নতুন এক শিরোনাম হাসিল করতে সক্ষম। কিন্তু নিথি রায়িনকে জিজ্ঞেস না করে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারছে না। নিথি কলম অধরে লাগিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় আওড়ায়,
–“আপনার বোন আছে স্যার?”

আচমকা প্রশ্নে রায়িন চমকে নিথির দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ নিরব থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে নিম্ন স্বরে বলে,
–“হুম!”

নিথি যেন সটান হয়ে বসলো।
–“কতটুকু? আপনার বড় না ছোট?”
–“এসব জানাতে তোমায় পড়াতে এসেছি? নিজের পড়ায় মনোযোগ দাও, আমার বায়োডাটা না জানলেও তোমার চলবে!”

রায়িনের তেঁতো কথায় নিথি আড়ালে মুখ বাঁকালো। বললে কী এমন হয়? তার বোনকে কী নিয়ে যাবে নাকি? নিথির তো রায়িন হলেই যথেষ্ট। রায়িনের বোন দিয়ে কী মুড়ি খাবে? নিথি পুণরায় পড়ায় ধ্যান দিলো।

———————
–“কয়জনকে পড়াস রে তুই?”
–“দু’জন!”
–“ও আচ্ছা। বেতনে তোর মাস চলে যায়?”
–“হ্যাঁ, ভালো ভাবেই। কেন বল তো?”
–“এমনি জানতে চাইলাম আর কি। আলাদা আলাদা জায়গায় নাকি এক বাসাতেই?”
–“এতো জেনে কী করবি তুই?”

রাব্বি রায়িনের বিরক্তি মাখা মুখমন্ডলের দিকে তাকালো। রায়িনের সম্পূর্ণ কথাকে অগ্রাহ্য করে আবারও বললো,
–“আরে ভাই, আমি জানতে চাইছি বলবি! বললে সমস্যা কী?”

রায়িন বিরক্তির সাথে চাঁদের আলোয় চিকচিক করা নদীর পানিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। আপাতত বন্ধু’রা মিলে এক ব্রিজের উপর আড্ডা দিচ্ছে। রায়িন বেশ সময় নিয়ে বলে,
–“একই বাসার দু’জন ভাই বোন কে পড়াই!”
–“ছোট নাকি বড়ো?”
–“ছেলেটা ক্লাস ফোরে পড়ছে, আর মেয়েটা ভার্সিটির!”

রায়িনের কথায় সব বন্ধু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। এর মাঝে সানজিদ বলে ওঠে,
–“ওরে মাম্মা! তুমি তো খেলা উচ্চ ধাপে নিয়া গেছো!”
পরমুহূর্তে রাব্বিও বলে ওঠে,
–“এসব মেয়েদের থেকে সাবধান বন্ধু, ওদের মন আর নজর কখন কার উপর পরে বুঝতেও পারবা না!”

রায়িন ভ্রু কুচকে তাকালো রাব্বির দিকে। পাশ থেকে মুহিদ হেসে বললো,
–“কেন রে? সব মেয়ে রে কী তোর এক্সের মতোন নাকি?!”

রাব্বি চোখ পাকিয়ে মুহিদের দিকে তাকালো। মুহিদ রাব্বির নজর সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করলো। হেসে হেসে মুহিদ রায়িনের উদ্দেশ্যে বললো,
–“মেয়েটা কেমন দেখতে?”
–“আমি যাই পড়াতে, তাকিয়ে থাকতে না! ডাফার!”
–“কুল! রাগছিস কেন? আমি তো জাস্ট এমনি-ই বললাম। প্লিজ বল না, আমি জানতে চাই!”

মুহূর্তে-ই রায়িনের চোখে ভেসে উঠলো জড়তায় আবৃত নিথির মুখশ্রী। মেয়েটি যা কান্ড ঘটায় তাতে নিথির মুখমন্ডলে সে স্পষ্ট জড়তা, অপরাধবোধ দেখতে পায়। দেখলেই বোঝা যায় এসব সে ইচ্ছাকৃত করে না। নিথির মধ্যে অনুশোচনা বোধ না দেখলে রায়িন নির্ঘাত ধমকে-ধামকে অবস্থা খারাপ করে ফেলতো। মুহিদ রায়িনকে কনুই দ্বারা খোঁচা দিলো।
–“কী মাম্মা, কই হারাই গেলা? ওই মেয়ের ভাবনায় নাকি?”
–“শাট আপ! মুহিদ।”
–“তো বলো না কেন?”

রায়িন কিছুক্ষণ ভেবে চট করে উত্তর দিলো,
–“ভালো!”

রাব্বি, সানজিদ এবং মুহিদ একে অপরের দিকে চাওয়া – চাওয়ি করে ফিক করে হেসে দিলো। রায়িনের রাগ যেন সপ্তম আসমানে পৌঁছালো। লাল টগবগ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে সানজিদের হাত থেকে বাইকের চাবিটা নিয়ে নিলো। অতঃপর সানজিদের বাইকের কাছে গিয়ে হেলমেট পরে বাইকে উঠে গেলো। যাওয়ার আগে সানজিদের উদ্দেশ্যে বললো,
–“বাইকের দরকার হলে নিজে হোস্টেল এসে নিয়ে যাবি। আমি দারোয়ানের কাছে চাবি দিয়ে রাখবো। আর তোরা, এক সপ্তাহেও যেন আমার ত্রি-সীমানায় তোদের ছায়া না দেখি!”

বলেই কিড়মিড় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এক টানে বাইক নিয়ে চলে গেলো।

————————–
কৃষ্ণচূড়ার পথে আনমনে হাঁটছে নিথি। ভার্সিটি শেষ করেই বাড়ি ফিরছে সে। তার মস্তিষ্কে বারংবার রায়িন যেন চাড়া দিয়ে উঠছে। মন বলছে যদি রায়িনও তার পাশে থাকতো। পরমুহূর্তে নিথি নিজের মাথায় এক গাট্টি মারলো৷ গা’ ধী! কৃষ্ণচূড়ার এক সন্ধ্যাতেই তো একসাথেই হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলো তারা। তাও কেন মন এতো পাওয়ার লোভ করে? বেশি লোভ করতে নেই। আপাতত এটা বলেই নিজেকে সামলে নিলো এবং দ্রুত বাড়ির পথে হাঁটা দিলো। মজার ব্যাপার হলো ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরার পথেই এক সুন্দর ছোট- খাটো বাজার আছে। এই বাজার ফুল এবং মেয়েদের নানান জিনিসের। জামা-কাপড়, চুড়ি, জুতো, কসমেটিকস ইত্যাদি ইত্যাদি। বাচ্চাদের খেলনারও কয়েকটা দোকান আছে। ছেলেদের জিনিসপত্রেরও মোটামুটি কয়েকটা দোকান দেখা যায়। বলা বাহুল্য, এই শহরে এরকম বাজার অহরহ পাওয়া মুশকিল। নিথির মতে এখানে তুমি সঠিক মূল্যে এক মুঠো সুখ কিনতে পারবে। যাদের কম বাজেট থাকে তাদের জন্যে এই বাজার বিরাট চাহিদা পালন করে। নিথিও এই বাজারের নিয়মিত ক্রেতা।

নিথি প্রথমেই এক কসমেটিকসের দোকানের সামনে এলো। বিক্রেতা বেশ হাসি-খুশি ভাবেই তাকে স্বাগতম জানালো। নিথি হালকা মুচকি হেসে ঝুমকা দেখতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে একজোড়া সিলভার কালারের ঝুমকো নিথির বেশ পছন্দ হলো। ঝুমকোটি হাতে নিয়ে দোকানদারের উদ্দেশ্যে বললো,
–“এই ঝুমকোর দাম কতো?”
–“দুইশো বিশ টাকা আপা!”
–“মানেহ? আমি তো সবসময় দেড়শো টাকার মধ্যে-ই নেই৷”
–“এগুলা অরিজিনাল আপা। এমন ভালা জিনিস পাইতেন না!”

নিথি আরও কিছু বলতে নিতেই অদূরে রায়িনকে একটি মেয়ের সাথে দেখলো। মেয়েটি হেসে হেসে চুড়ি চয়েজ করছে। রায়িন মেয়েটিকে কী যেন বলতেই মেয়েটি তার চুড়ি গুলো দোকানদারের হাতে দিয়ে দেয়। রায়িন তখন মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে ব্যস্ত। রায়িন অন্য মেয়েকে চুড়ি কিনে দিচ্ছে? বিষয়টা ভাবতেই নিথির বুক ফেটে কান্না আসতে চাইলো। বুকের বা পাশটাতেও কেমন চিনচিন ব্যথা অনুভূত হচ্ছে তার। এর মানে কী রায়িন এই মেয়েকে ভালোবাসে? রায়িনের হৃদয়ে অন্য কারো বসবাস? নিথি ঝুমকোটা দোকানিকে দিয়ে কাঁপা পায়ে বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য রায়িন। সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না রায়িনের জীবনে অন্য নারীর অস্তিত্ব!

——————
–“ভাইয়া, তুমি জানলে কী করে যে আমি এরকম একটা বাজারে আসতে চেয়েছিলাম?”

রায়িন রায়ার গাল টেনে বলে,
–“তোর কোনো বিষয় আমার অজানা নয়। এখন আর কী কিনবি বল!”
–“উফফ ভাইয়া। আজ মনে হচ্ছে এই বার্থডে আমার জন্যে সেরা। বিশ্বাস করো, আমার এতগুলো বার্থডে তে এরকম আনন্দ কখনোই অনুভব করিনি।”
–“হুম, আমিও বুঝতাম না এই ছোট জিনিসগুলোর মাঝে লুকিয়ে থাকা সুখ৷ এখন অনুভব করি, তাই তোকেও অনুভব করালাম। ওদিকটায় চল! ওদিকের জিলাপি গুলো যা বানায় না!”

রায়ার চোখ-মুখ চিকচিক করে উঠলো। মিষ্টান্ন মানেই রায়ার এক ভান্ডার ভালোবাসা। সে আবেগাপ্লুত হয়ে রায়িনের এক হাত জড়িয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
–“চলো!”

রায়িন পুণরায় বোনের গাল টেনে এগোতে নিলে আবার ধাক্কা খায়। রায়িন চোখ পাকিয়ে মাথা নিচু করে তাকাতেই দেখলো একটি মেয়ে। মেয়েটি আর কেউ নয়, নিথি। বর্তমানে সে নিজের নাক কচলাচ্ছে। ভ্রু-যুগল তার কুচকে আছে। মধ্যাহ্নের কড়া রোদ নিথির মুখমন্ডলে পরেছে। শুভ্র চেহারাটা কেমন লাল হয়ে গ্লো করছে। মাথায় তার ওড়না পেচানো। নিথির চেহারায় কেমন বাচ্চা ভাব ফুটে ওঠে। কে বলবে এই মেয়ে আঠারো পেরিয়েছে আরও দু’বছর আগে? তবে রায়িন একটা জিনিস বুঝলো না মেয়েটার সাথে সবসময় ধাক্কা খায় কেন? রায়িন বিরক্তি প্রকাশ না করে নিথির উদ্দেশ্যে বলে,
–“তুমি?”
–“আরে, রায়িন স্যার যে!”
বলেই কোণা চোখে রায়ার দিকে তাকালো নিথি।
–“এখানে কী করছো?”
–“এখানে তো আমি প্রায় সময়-ই আসি। আপনিও কী আসেন?”
বলে পুণরায় মেয়েটির দিকে কোণা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। রায়া রায়িনের বাহু আঁকড়ে বলে,
–“ভাইয়া আপুটা কে?”

রায়ার মুখে “ভাইয়া” ডাক শুনে নিথির অভ্যন্তর হতে যেন বড়ো পাথর নেমে গেলো। সে বুঝলো মেয়েটি রায়িনের বোন বা কাজিন হবে। রায়িন মুখে হাসির রেশ ধরে বললো,
–“আমার স্টুডেন্ট, নিথি!”

নিথি সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মেয়েটিকে “হাই” জানালো। মেয়েটিও এক গাল হাসলো। নিথি এবার রায়িনের দিকে উৎসুক নজরে তাকাতেই রায়িন থমথমে কন্ঠে বললো,
–“আমার ছোট বোন, রায়া!”

নিথির হাসি চওড়া হলো। রায়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“কেমন আছো রায়া?”

—————————-

[০৫]
লাবিবা ওয়াহিদ

—————————–
রায়ার সাথে কথা বলে নিথি এটুকু বুঝলো রায়া মানসিক রোগী। কেমন সবকিছুকে ভয় পায়। রায়িনের হাত একবারের জন্যেও ছাড়েনি। অচেনা কাউকে দেখলেই রায়িনের পিছে গিয়ে লুকাচ্ছে৷ নিথি কিছুটা চমকালেও নিজ কৌতুহল প্রকাশ করলো না। তবে রায়া অসম্ভব সুন্দরী। রায়িনের সাথে কিছুটা মিলও খুঁজে পায় সে। রায়া জানিয়েছে, আজ নাকি তার জম্মদিন, তাইতো রায়িন তাকে তার পছন্দ মতো সবকিছু কিনে দিচ্ছে। রায়ার সবে সতেরো পরেছে। কিছুদিন আগেই কলেজে ভর্তি হয়েছে। নিথির থেকে কয়েক বছরের ছোট। তবে নিথি রায়ার সাথে সমবয়সী হয়েই মিশেছে। বিষয়টা রায়িনের নজর এড়ায়নি। মেয়েটা খুব বেশি সরল। এই কঠিন যুগে এতো সহজ কেউ আছে বুঝি? রায়িন তপ্তশ্বাস ফেলে বোনের হাসি – মুখটার দিকে নির্বিঘ্নে চেয়ে রইলো। নিথি রায়াকে নিয়ে এক ফুচকার স্টলে আসলো। রায়িন নিথির উদ্দেশ্যে বেশ কাঠকাঠ গলায় বললো,
–“ওর আনহাইজানিক খাবার খাওয়া ঠিক না। অন্য কিছু ট্রাই করো তোমরা!”

নিথি যেন রায়িনের কথাটা কানে তুললো না। বেশ হাসি-হাসি মুখ করে আওড়ায়,
–“ফুচকার জন্যে নো কম্প্রোমাইজ স্যার! আমি মনে করছি এটা ওর জন্য প্রয়োজন। খাবে তো রায়া?”
–“অবশ্যই আপু, আমি অনেকদিন ফুচকা খাই না!”
–“তাহলে বেশ। চলো এক প্লেট নিই। তুমি আমি মিলেমিশে খাবো! আইডিয়াটা কেমন?”
–“অসাধারণ!”

নিথি স্টলের লোকটাকে বললো এক প্লেটে দুই প্লেটের ফুচকা সমান ফুচকা দিতে। লোকটাও হাসিমুখে ফুচকা বানাতে শুরু করলো। রায়িন সব অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। মেয়েটার বুদ্ধি আছে বলতে হয়। এছাড়া যতটা সরল ভেবেছিলো সে ততটাও সরল না। বেশ চটপটে মেজাজের। মেয়েরা বুঝি নিজের সমবয়সী অথবা নিজের ছোট কাউকে দেখলে এমন মিশুক আর চঞ্চল হয়ে যায়? রায়িন পরক্ষণে নিজ বোনের দিকে নজর দিলো। তার হাত ছেড়ে নিথির হাত ধরে আছে। হাসি মুখটায় ভয়ের চিহ্ন নেই। এর মানে কী ধীরে ধীরে তার বোনটা স্বাভাবিক হচ্ছে? রায়িনের গম্ভীর মুখমন্ডলে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মুগ্ধ হয়ে সবটা দেখতে লাগলো। মিনিট পাঁচেকের মাঝে ফুচকার অর্ডার চলে আসে। নিথি রায়াকে নিয়ে পাশের এক প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে। সামনে কমদামি টেবিল। রায়া প্রথমে বসতে দ্বিধাবোধ করলে নিথি মুচকি হেসে বললো,
–“ভয় পেও না। আমি এবং তোমার ভাই আছি তো। এখানে বসে খেলে শান্তি পাবে। ভিষণ শান্তি।”

রায়া কয়েকবার লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে হাসলো। আশেপাশে তাকিয়ে বসলো। দুপুর হওয়ায় মানুষজন খুব একটা নেই। রায়িন বসলো নিথির বিপরীতে। সে সবটা উপভোগ করছে বেশ। নিথি যে একজন চমৎকার মেয়ে তা তার বুঝতে বাকি নেই। নয়তো যেখানে তার এই বোনটা একা ছাড়া খাবার খায় না সেখানে সে আউটলেটে ফুচকা খেতে বসেছে। ভাবা যায়? নিথি হাত ধুঁয়ে ফুচকা মিষ্টি টক দিয়ে ভিঁজিয়ে রায়ার মুখের সামনে তুলে দিলো। রায়া বাচ্চা হাসি দিয়ে হা করে ফুচকাটা মুখে পুরে নিলো।
–“এবার চোখ বুজে চিবুতে থাকো। সেই একটা ফিলিংস পাবা!”

রায়া নিথির কথামতো চোখ বুজে ফুচকার স্বাধ উপভোগ করতে লাগলো। বুক থেকে যেন এক ভারী পাথর নেমে যাচ্ছে। নিথি রায়ার হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে দেখতে নিজেও একটি ফুচকা মুখে পুরলো। দুর্ভাগ্যবশত সেই ফুচকাটায় মরিচের গুঁড়ো এবং এক দু’টো শুকনো মরিচ ছিলো। নিথি কয়েকবার কামড় দিতেই ঝালে তার অবস্থা যায়, যায়। কোনরকমে ফুচকাটা গিলে ফুচকার প্লেটের দিকে তাকালো। সবগুলো ফুচকা ঝাল। এর মানে কী ভুলবশত ফুচকাওয়ালা মামা ঝাল বেশি দিয়েছে?
–“ঠিক আছো আপু?”

নিথি তড়িৎ রায়ার দিকে তাকালো। রায়া একদম স্বাভাবিক। ওর কী ঝাল লাগেনি? নিথি তো ঝাল খুব একটা খেতে পারে না। নিথি ফ্যাকাসে মুখটায় কৃত্রিম হাসির রেশ টেনে বললো,
–“হ্যাঁ। প্রশান্তি অনুভব করেছো?”
–“হ্যাঁ! অনেকদিন পর।”
–“তাহলে খেতে শুরু করে দাও!”

রায়া মুচকি হেসে নিজের হাতে একটা ফুচকা নিয়ে মুখে পুরে নিলো। রায়ার মুখ-ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। অন্যান্য সময় হলে নিথিও মজা নিয়ে খেত। কিন্তু ফুচকা যে ঝাল! অনুভূতি তো দূর, অনুভূতির বাপও এসে তাকে নাড়া দিতে পারবে না।
–“খাচ্ছো না কেন আপু?”

নিথি পুণরায় হাসার চেষ্টা করলো। একপ্রকার বাধ্য হয়েই আরেকটা মুখে পুরলো। পরপর আরেকটা। নিথির জান যায় যায় অবস্থা। ঝালে পুরা মুখ যেন জ্বলে যাচ্ছে। চোখে জল টলমল করছে। নাকও টানছে অনবরত। নাকেও পানি জড়ো হয়েছে। রায়িন নিথিকে লক্ষ্য করলো। ঝালে হাঁসফাঁস করছে। নাকটা কেমন লাল হয়ে আছে। নিথি তড়িঘড়ি করে ব্যাগ হাতড়ে পানির বোতল বের করলো। কিন্তু আজ যেন নিথির ভাগ্য তার বিপরীতমুখী। বোতলে এক ফোঁটা জলও অবশিষ্ট নেই। সবটা নিরবে লক্ষ্য করতে-ই রায়িন উঠে দাঁড়ায় এবং রায়াকে বসতে বলে কোথায় যেন চলে গেলো। এর মাঝে ফিরেও এলো, হাতে তার দুটো পানির বোতল। একটা নরমাল আরেকটা ঠান্ডা। রায়িন এসে দেখে নিথি ঝালে ফোঁপাচ্ছে। নাকের পানি, চোখের পানিতে প্রায় জুবুথুবু অবস্থা তার। নাক টানছে আর ফোঁস ফোঁস শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলছে। রায়িন নিথিকে নরমাল পানির বোতল আর রায়াকে ঠান্ডা পানির বোতল দিয়ে বসলো। বসে হাত সেনিটাইজার দ্বারা ক্লিন করে হাতে ফুচকা নিলো এবনভ মুখেও পুরলো। নিথি তার দিকেই কোণা চোখে তাকিয়ে। ঝালে নিথির মুখশ্রীর অবস্থা নিশ্চয়ই খুব খারাপ? চোখের পানি আর নাকের পানিও এক করে ফেলেছে। কী ভাবছে রায়িন তাকে? বেশ লজ্জা পাচ্ছে নিথি। যখন রায়িন পানির বোতল এনে দেয় তখন নিথি যেন লজ্জায় আরও নুইয়ে পরে।

তবে নিথির এই নরমাল পানি একদম সহ্য হলো না। ঠান্ডা পানির বোতল দিলে কী হতো? রায়াকে তো ঠিকই এনে দিলো। আনবেই যখন ঠান্ডা পানি-ই আনতো? ঝালে নিথির চোয়াল কাঁপছে। রায়িন ফুচকা মুখে পুরে নিথির দিকে তাকাতেই নিথি তড়িৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো। নিথি পানির মুখ খুলে কয়েক ঢোক গিললো। এর মাঝে নিথির অভ্যন্তরের প্রশ্নটা রায়াই করলো,
–“ভাইয়া, আপুর জন্যে নরমাল পানি আনলে কেন?”

নিথি কোণা চোখে রায়িনের দিকে তাকালো। সেও উত্তর শুনতে চায়, প্রবলভাবে। রায়িন নিথির দিকে একপলক তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো,
–“ঝাল খেলে ঠান্ডা পানি খেতে নেই। এতে ঝাল কমবে না বরং আরও দ্বিগুণ হারে বাড়বে। দেখছিস না, ঝালে কী অবস্থা করেছে নিজের?”

এসময় নিথির লজ্জায় ইচ্ছে করলো মাটির সাথে মিশে যেতে। কী বোকামী করলো সে? কেন-ই বা এসেছিলো ফুচকা খেতে। কিন্তু ঝাল তো ঝাল-ই! এই ব্যা’টা যেন তাকে ছাড়ছেই না। তবে এর মাঝে স্নিগ্ধ অনুভব করলো সে। রায়িন তাকে নিয়ে একটু হলেও ভাবে? বিষয়টা অদ্ভুত হলেও সত্যি।

নিথি বারবার হাতের উল্টো পিঠে নাক মুছছে। চোখের পানি তো গড়গড় করে বের হচ্ছেই। এই দুই ভাইবোনের কী ঝাল লাগে না? কেমনে চুপচাপ গিললো ফুচকা গুলো! এদের জাত-গুষ্ঠি কী সব ঝাল খোড়?
রায়িন রায়াকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তার পকেট থেকে রুমালটা বের করলো। রুমাল নিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,
–“নিতে পারো। কাজে লাগবে!”

নিথি অবাক নয়নে রায়িনের দিকে তাকালো। রায়িনের এমন আচরণে নিথি হতভম্ব। সে একদমই আশা করেনি রায়িন তার রুমাল নিথিকে দিবে। নিথির যেন আকাশচুম্বী বিষ্ময়, হতভম্বতা। নিথি রুমাল নিয়ে ছোট করে “ধন্যবাদ” জানালো! তবে সে রুমালটা ব্যবহার করলো না। রায়িনের অগোচরে রুমালটা নাকের সামনে ধরলো। হ্যাঁ, রায়িনের সুগন্ধ পাচ্ছে সে। নিথি কয়েকবার প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে রুমালটা সযত্নে রেখে দেয়। অতঃপর নিজের রুমালটা বের করে নাক এবং ভেঁজা গাল মুছে নেয়।

এ যেন এক কৃষ্ণচূড়ার রাজ্য, কৃষ্ণচূড়ার স্নিগ্ধময়ী ঋতু। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো সারিবদ্ধ ভাবে ফুটপাতের পাশে দাঁড়িয়ে। দমকা হাওয়া আসলেই কৃষ্ণচূড়ার বর্ষণ হয় যেন তাদের উপর। কী স্নিগ্ধ অনুভূতি। এই কৃষ্ণচূড়ার রাজ্য পেয়েও মানুষ কেন চেরি ব্লসম খুঁজে? নিথির কাছে যে এই কৃষ্ণচূড়া এক আলাদা ভালোবাসা, এক আলাদা অনুভূতি, এক অন্যরকম সুখের নেশা।

রায়িন সিএনজি ডাকলো। আজ রায়ার সিএনজি দিয়ে ঘুরার ইচ্ছে জেগেছে। ঘুরতে ঘুরতেই সে বাড়ি ফিরবে। রায়িন সিএনজি নিয়ে আসতেই রায়া প্রথমে গিয়ে বসলো। নিথি উঠবে কী উঠবে না দ্বিধায় পরলো। তার মস্তিষ্ক তাকে জানান দিচ্ছে
“ভাই বোনকে আলাদা সময় দেয়া উচিত!”
আবার মন বলছে আরেকটু বেহায়া হতে! তবে নিথি বেহায়া হতে চাচ্ছে না। সে তার মস্তিষ্কেই সায় দিচ্ছে।

রায়াকে বিদায় দিতে গেলে রায়া জেদ ধরে বসে তাদের সাথেই নিথি বাড়ি ফিরবে। নিথি উপায়ন্তর না পেয়ে করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রায়িনের পানে। রায়িন গম্ভীর স্বরেই বলে,
–“আসতে পারো তুমি। যাওয়ার পথে তোমায় বাড়ি নামিয়ে দিবো।”

একসময় রায়ার জেদের কাছে নিথি হার মানলো এবং নিশ্চুপ হয়ে উঠে বসলো। রায়িন নিজেও চায় না তার বোনকে বেজার মুখে দেখতে। তাই আপাতত তার বোনের খুশিটাই সবার আগে। নিথি উঠতেই রায়িন লোহার গেটটা লাগিয়ে দিতে নিলো, ওমনি রায়ার চিৎকার!
–“কী করছো তুমি? আমাদের সাথে আসবে না?”
–“আমি নাহয় সামনে বসছি?”
–“কেন? আমরা তো দু’জনই মানুষ। তুমি কষ্ট করে সামনে বসতে যাবা কেন? দ্রুত এখানে এসে বসো। নয়তো খুব রাগ করবো বলে দিলাম!”

রায়িন পরলো বিব্রতিকর অবস্থায়। সে নিথির পাশে বসবে? রায়িন বসবে নিথির পাশে? যদি বসারই হতো তাহলে সেদিন রিকশাতেই পাশাপাশি বসতে পারতো। কিন্তু আজ কী হলো ব্যাপারটা? নিথি নিজেও ভিষণ চমকে যায় রায়ার এমন সিদ্ধান্তে। অদ্ভুত, অজানা কারণে তার গাল জোড়া জ্বলছে। কান দিয়েও কেমন উষ্ণ ধোঁয়া বের হচ্ছে। সত্যি-ই রায়িন তার পাশে বসবে? রায়িন তার স্বপ্ন পুরুষ? সে কী কোনো স্বপ্ন দেখছে নাকি এটা কোনো ভ্রম?

রায়িন হাজারো ভাবনা-চিন্তা করে দ্বিতীয় কোনো উপায় পেলো না। তার বোনের কথা তাকে শুনতেই হবে। রায়াকে যে ধমক দিবে সেই পরিস্থিতিও নেই। আজ পরিস্থিতি রায়িনের অনুকূলের বাইরে। অগত্যা, রায়িন দিক – নির্দেশনা না পেয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে পরলো এবং লোহার গেটটা টেনে দিলো। নিথি যেন এখনই স্ট্রোক করবে। রায়িনের শরীরের কড়া পারফিউম তার নাকে এসে বাজছে। এছাড়াও রায়িনের বাহু নির্বিঘ্নে নিথির বাহু স্পর্শ করছে। হাঁটুতে হাঁটু মিলছে। কী চমৎকার এক অনুভূতি। প্রিয় মানুষটা তারই পাশে বসে?

রায়িন বেশ করে চেষ্টা করেছে নিথির থেকে দূরে সরে বসতে। কিন্তু যখনই ভাঙ্গা রাস্তায় তাদের সিএনজি ঢুকলো তখন থেকেই ঝাকুনি শুরু হলো। রায়িনের আর দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হলো না। যখনি ঝাকুনি দেয় হয় নিথি তাল সামলাতে না পেয়ে রায়িনের উপর গিয়ে পরে নয়তো রায়িন নিথির উপর। একসময় তো রায়িন নিথির মাথার সঙ্গে বিকট শব্দে বারি খেলো। নিথি মাথা ধরে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“আউচ! জ্বলে গেলো!”

রায়িনের কপালেও হাত। বেশ লেগেছে তার। কী এক অস্বস্তিকর পরিবেশ। রায়া হেসে কুটিকুটি হয়ে বলে,
–“ভাইয়া, মাথায় আরেকটা বারি খাও নয়তো শিং গজাবে তোমার!”

রায়ার কথাকে পরোয়া না করে রায়িন তার সমস্ত রাগ ড্রাইভারের উপর গিয়ে ঝাড়লো।
–“সমস্যা কী আপনার মিয়া? এতো ভালো ভালো রাস্তা থাকতে এই চিপা গলি, ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা দিয়ে ঢুকসেন কোন সুখে?”

ড্রাইভারও বিরক্তির সাথে বললো,
–“ওই রাস্তাটায় বড় জ্যাম বেঁধেছে। তাইতো এই শর্টকাট ধরেছি!”
–“দরকার হলে জ্যামেই আটকে থাকতাম, তাও অন্তত এসব সহ্য করতে হতো না!”
–“আহ ভাইয়া। থামো। একটু সহ্য করো!”

রায়িন পুণরায় তার রাগ দমালো। নিথি রায়িনের রাগ দেখে সটান হয়ে বসেছে। এসব ধাক্কা-ধাক্কিতে নিশ্চয়উ রায়িন ভিষণ বিরক্ত? নাহ, এই বান্দাকে আর রাগানো যাবে না। আর সে ভুল করেও রায়িনের গায়ে গিয়ে পরবে না। সাহেব এখন বড্ড রেগে। নিথির ভাবনার পরপর পুণরায় ঝাকুনি দিলো। নিথি আবারও গিয়ে পরলো রায়িনের উপর। রায়িন দাঁতে দাঁত চেপে পুণরায় সহ্য করে নিলো। এমন কিছু হবে জানলে সে কখনোই নিথিকে নিজেদের সাথে উঠাতো না। এখন মনে হিচ্ছে রায়াকে ধমক দিয়ে দেয়াটাই উচিত কাজ ছিলো। এদিকে নিথি মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব ভাব ফুটিয়ে তুলেছে। সে মোটেও রায়িনের গায়ের উপর স্ব-ইচ্ছায় পরছে না। এটা কী করে রায়িনকে বুঝাবে? রায়িন কী তাকে বেহায়া, খা’ রা’ প মেয়ে ভাবছে?

রায়িন যদি তাকে ভুল বুঝে? বিষয়টা ভাবতেই নিথির বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হচ্ছে তার। পুনরায় মাথায় বারি খেলো। তাও সজোরে। দুজন সাথে থাকলে কেন শুধু অঘটন-ই ঘটে? রায়া পুণরায় ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
–“যাক, আমার ভাইয়ার মাথায় আর শিং গজাবে না!”

~চলবে, ইনশাল্লাহ।
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here