#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_৩৫
জাওয়াদ জামী
শুভর আচরণ দিনকে দিন জঘন্যরকম খারাপ হচ্ছে। সে কাউকেই সম্মান দিচ্ছেনা। এমনকি আকলিমা খানমকেও যাচ্ছেতাই বলে কথা শোনায়।
আরমানের কথামত শহিদ আহমেদ শুভকে নানারকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বরাবরই তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন।
শ্রীজা তার ভাইয়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই।
আরমান আগের থেকে একটু নরম হয়েছে বাবার প্রতি। সে শ্রীজার কাছ থেকে ঐ বাড়ির সব খবরই নেয়। আরমান যখন শুনেছে, শহিদ আহমেদ শুভকে শোধরাবার চেষ্টা করছেন, তখন আরমানের মুখে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে। কারন ও শ্রীজার কাছে শুনেছে, শহিদ আহমেদ শুভর সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
শুভ ফজরের আজানের অনেক পর বাসায় আসে। আজ ওর সাথে একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার পোশাকআশাকে আধুনিকতার ছাপ। মুখে উগ্র মেকআপ।
আকলিমা খানম ড্রয়িংরুমেই আজ ফজরের নামাজ আদায় করছে। সে আজ তার ছেলের সাথে শেষবার কথা বলতে চায়।
আকলিমা খানমের নামাজ শেষ হওয়া মাত্রই শুভ বাসায় ঢোকে। ওর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি থাকে, বিধায় ওকে দরজা খুলে দিতে হয়না।
শুভর সাথে এমন উদ্ভট পোশাকের মেয়েকে দেখেই আকলিমা খানমের রা’গ তরতর করে বাড়তে থাকে। মেয়েটা শুভর শরীরে ঢলে ঢলে পরছিল।
শুভ ওর মা’কে দেখেও না দেখার ভান করে রুমের দিকে যাচ্ছিল।
” শুভ, দাঁড়া। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা স্বত্বেও তুই আমার সাথে কথা না বলে চলে যাচ্ছিস? আমি তোর সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছি, এটাও কি তুই বুঝতে পারছিসনা? তোর সাথে এই মেয়েটা কে? ও কেন তোর সাথে যাচ্ছে? এই মেয়ে, এদিকে এস। আচ্ছা বেয়াদব তো তুমি, এই ভোরে একটা ছেলের সাথে তার বাড়িতে এসেছ, তোমার ভয় করছেনা? তোমার পরিবারের লোকজনই বা কেমন! একটা সমত্ত মেয়েকে একা ছেড়ে দিয়েছে! ”
” ওহ্ মা, একটু চুপ করবে। সবকিছুতেই তোমার মাতব্বরি না করলে চলেনা? ও আমার বেড পার্টনার বুঝেছ? আজকে রাতে ওকে পার্টিতে সময় দিতে পারিনি, তাই বাসায় নিয়ে এসেছি। তোমার সাথে কথা বলার মত সময় আমার নেই। বেইবি, এসো আমরা রুমে যাই। এই হিংসুটে মহিলার কথাকে পাত্তা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সে কারও সুখ সহ্য করতে পারেনা, বুঝলে? এমনকি নিজের ছেলেরও নয়। ” শুভ জড়ানো গলায় কথা বলে।
শুভ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলেই আকলিমা খানম তার ছেলের হাত টেনে ধরে। একটু আগেই বলা শুভর কথা শুনে ঘৃণায় তার শরীর রি রি করছে। তার ছেলের এত অধঃপতন হয়েছে ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।
” তোর সাথে আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। যদি নোংরামো করার এতই ইচ্ছে থাকে তবে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। ইচ্ছেমত নোংরামো কর। কেউ তোকে বাঁধা দিবেনা। মনে রাখিস এই বাড়িতে কোন নোংরামো করা চলবেনা। সোসাইটিতে তোর বাবার একটা সম্মান আছে। আমি চাইনা তোর মত ছেলের জন্য আমার স্বামীর সম্মান ধুলোয় লুটাক। একজন স্ত্রী হিসেবে আমি চাইনা আমার স্বামীর কোন অসম্মান হোক। তুই যদি এই বাড়িতে থাকতে চাস, তবে সব বদঅভ্যাস, খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করলে তবেই থাকতে পারবি। এই মেয়ে, তুমি এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। আর কখনোই যেন শুভর সাথে তোমাকে না দেখি। ”
” কে শুনতে চাইছে তোমার এত উপদেশ? নিজেকে কি মনে কর? রানী এলিজাবেথ? সবাইকে আঙ্গুলে তুলে নাচাতে ভালো লাগে? কিন্তু আমার মোটেও তোমার ইশারায় নাচতে ভালো লাগেনা। আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? মা হয়েছ বলেই, সব বিষয়ে নাক গলাতে হবে! তুমি লিসাকে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলার কে? ওকে আমি এনেছি। আমার প্রয়োজন মিটলেই তবে ও এখান থেকে যাবে। কান খুলে শুনে রাখ, আমার বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দাও। এরপর কখনও আমার যেকোন বিষয়ে তোমাকে কথা বলতে দেখলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা। ”
” কি বললি তুই! নিজের মা’য়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারলি! ছিহ্ কত নিচে নেমে গেছিস তুই! আল্লাহ তোর মত সন্তান যেন কোন শত্রুকেও না দেন। তুই এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি। যা,বেরিয়ে যা। অসভ্য, কুলাঙ্গার সন্তান। আজ থেকে তোকে সন্তান বলে পরিচয় দিবনা। ”
” এত বড় বড় লেকচার যে দিচ্ছ, তা বাড়িটা কি তোমার? তোমার বাপের বাড়ি থেকে বয়ে নিয়ে এসেছ? আমি এখান থেকে যাবনা। প্রয়োজনে তোমরা যাবে। আমি ইচ্ছে করলে এখনি তোমাকে হিড়হিড় করে টেনে বের করে দিতে পারি এখান থেকে। অবশ্য আর একটা কথা যদি বল, সাথে সাথে তোমাকে বের করে দিব। তাই নিজের মুখটাকে বন্ধ রাখ। ”
চেঁচামেচির শব্দে সবাই জড়ো হয়েছে ড্রয়িংরুমে।শহিদ আহমেদ দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছেন ছেলের বিকৃত রূপ। শ্রীজা এতক্ষণ ওপরে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। কিন্তু শুভর বলা শেষ কথাটা শুনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে নিয়ে নেমে আসে।
” ভাইয়া, তুমি যার সাথে কথা বলছ সে তোমার মা। এই কথাটা ভুলে গেছ? তাকে সম্মান করতে না পারলে করোনা, কিন্তু তাই বলে তাকে অসম্মান করার অধিকার তোমার নেই। তোমার মিনিমাম লজ্জাটুকুও নেই? মা’য়ের সামনে কি বলতে হয় সেই বোধটুকুও কি হারিয়েছ? একজন বে’শ্যা’কে নিয়ে এত কিসের মাতামাতি? তবে মনে রেখ, বে’শ্যা বে’শ্যা’ই হয়। সে তার যতই দাম হোকনা কেন। আর এই বাড়িটা কোন পতিতালয় নয় যে তুমি এমন একটা মেয়েকে নিয়ে এখানে সময় কাটাবে। ”
শ্রীজা কথা শেষ করতে পেরেছে কি না, শুভর হাতের সজোরে থাপ্পড় খেয়ে দুই-তিন হাত দূরে যেয়ে ছিটকে পরে। মাথা ঠুকে যায় সিঁড়ির গোড়ায়। সেই অবস্থায়ই স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে সে।
বাড়ির কাজের মেয়েরা সবাই মুখে হাত দিয়ে, চোখ বড় বড় করে সবকিছু দেখছে। আকলিমার দুনিয়া যেন টলে উঠে। শহিদ আহমেদ মেয়েকে পরে থাকতে দেখে ছুটে আসেন। মেয়ের হাত ধরে পরম স্নেহে টেনে তোলেন। এরপর শ্রীজাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে দৃঢ় পায়ে এসে দাঁড়ায় শুভর সামনে।
” তুমি এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। আমি তোমাকে ত্যাজ্য করব। আজকেই আমার ল ইয়ারের সাথে কথা বলে সব ব্যবস্থা করে ফেলব। তোমার প্রয়োজনিয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে আমি পনের মিনিট সময় দিলাম। এরই মধ্যে যা যা নেয়ার নিয়ে নাও। আর শুনে রাখ, আমার সব সম্পত্তির বারো আনার মালিক হবে আরমান আর শ্রীজা। তোমাকে আমি আমার সম্পত্তি থেকে চার আনা দিয়েছি অনেক আগেই। তার সব পেপারসও তোমার কাছে পৌঁছে যাবে। তুমি চাইলে আইনি লড়াই করতে পার। কিন্তু আমি এই আশ্বাস দিতে পারি, তুমি হেরে যাবে। কারন তোমার সব কুকর্মের প্রমান আদালতে দেয়ার মত ক্ষমতা আমার আছে। এই চার আনা সম্পত্তি তোমাকে দিয়েছি, কারন ভবিষ্যতে যাতে তুমি বলতে না পার, আমি তোমাকে বঞ্চিত করেছি। এবার যাও তোমার হাতে পনের মিনিট সময় আছে। ”
শহিদ আহমেদের কথা শুনে তেড়ে আসে শুভ।
” আমি তোমার সম্পত্তির ন্যায্য ভাগ চাই। তুমি কিভাবে আমাকে ঠকালে? সম্পত্তির পুরো ভাগ যদি আমি না পাই তবে তোমাকে খু’ন করব আমি। আমি…”
শুভ কথা শেষ করতে পারেনা। তার আগেই আকলিমা খানম এসে ওর গালে সপাটে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। টি শার্টের কলার ধরে টেনে নিয়ে আসে দরজার কাছে।
” তুই এই মুহূর্তে এখান থেকে বের হয়ে যাবি। কোন সময় তোকে দেয়া হবেনা। কাকে খু’ন করবি তুই? তোর জন্মদাতা পিতাকে? যে তোদের সুখের জন্য নিজে জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। নিজের সুখকে পায়ে দলে তোদের জন্য খেটেছে। সেই মানুষটাকে তুই খু’ন করতে চাচ্ছিস? তবে তোর মত সন্তান আমার প্রয়োজন নেই। আজ থেকে তুই আমার কাছে মৃ’ত। আর তোর বিরুদ্ধে সাক্ষী আমি দেব। যা পারিস করে নিস। আমার সংসার ধ্বংস করেছিস তুই। তোর জন্য আমার ফুপু মা’রা গেল। হসপিটালে ভর্তি ছিল। তাকে দেখতে গেলিনা। তার জানাজায় গেলিনা। তুই তো মানুষ নেই। অমানুষ হয়েছিস। আমি কোন অমানুষ ছেলেকে চাইনা। তোর থেকে আরমান হাজারগুনে ভালো। তার সাথে কত অন্যায় করেছি, তবুও সে আমাকে অসম্মান করেনি। সেদিন হসপিটালে মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম, সে হন্তদন্ত হয়ে আমাকে তুলে বসিয়েছে। চিকিৎসা করিয়েছে। এরপরও অনেকক্ষণ ধরে আমার পাশে বসে থেকেছে। তুই কখনও এমন করেছিস? আজ আমি বলছি, আরমান সত্যিকারের মানুষ। ”
শুভ আকলিমার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে নেয় কলার থেকে। এরপর এক ধাক্কায় তাকে ফেলে দেয়। দরজার পাশে থাকা বড় ফুলদানির উপর আছড়ে পরে আকলিমা। আচমকা ধাক্কা খেয়ে নিজের ভারসাম্য রাখতে পারেনা সে। বাঁকা হয়ে পরে যাওয়ায় কোমড়ে আঘাত পায়। পিঠের দিকে যেন যন্ত্রণায় অবশ হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পায়েও ভিষন ব্যথা অনুভব করে।
” এখন আরমানের সব গুন বের হচ্ছে? আরমান ভালো আর আমি খারাপ। তুই মা নাকি ডাইনি? কোন মা তার সন্তানের এত খারাপ চায়। তা তোকে না দেখলে আমি জানতামনা। আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে! আমি সবকিছু জ্বা’লি’য়ে, পু’ড়ি’য়ে শেষ করে দিব। তবুও সম্পত্তির ন্যায্য ভাগ আমি আদায় করেই ছাড়ব। ”
শুভ আর সেখানে দাঁড়ায়না। ওর সাথে আসা মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
শহিদ আহমেদ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেননা। তার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে ভাবতেই তার বুক শুকিয়ে আসছে। একটা ছেলে কতটা খারাপ হলে তার মা’কে আঘাত করতে পারে!
আকলিমা খানমের আর্তনাদ শুনে শহিদ আহমেদসহ সবাই দৌড়ে আসে। তাকে ধরাধরি করে তুলে হসপিটালে নেয়া হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডক্টর জানায়, তার মেরুদণ্ডে আঘাত লাগায় হাঁটার ক্ষমতা হারিয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন আর হেঁটে বেড়াতে পারবেনা। সেই সাথে পা ভেঙে গেছে।
সব শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে আকলিমা খানম। শহিদ আহমেদও দুঃখ প্রকাশ করার অবস্থায় নেই। শ্রীজা মায়ের পাশে বসে কাঁদছে।
কতক্ষণ যে কেঁদেছে তার হিসেব জানা নেই শ্রীজার। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে চোখের পানি মুছে, পাশে থাকা ফোন হাতে নিয়ে দেখল আরমানের নম্বর। নিজেকে স্বাভাবিক করে রিসিভ করে। শ্রীজার কথা কানে যেতেই আরমান বুঝতে পারে কিছু একটা ঠিক নেই। ও শ্রীজার কাছে জানতে চায় কি হয়েছে। শ্রীজা প্রথমে বলতে না চাইলেও আরমানের ধমক খেয়ে সব বলে দেয়। সব শুনে আরমানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়। এরপর কান্তাকে ফোন দিয়ে সবকিছু জানায়। এরই খালার সাথে কথা বলে, কান্তাকে দেখে রাখতে বলে, অফিস থেকেই ঢাকায় রওনা দেয়।
আরমান ঢাকায় পৌঁছে, যখন চারদিকে সন্ধ্যা তার আঁধারে সবকিছু ঢেকে নিতে ব্যস্ত। ও সরাসরি হসপিটালে যায়।
অসময়ে আরমানকে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সবার এভাবে তাকানোয় আরমান একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
” ভাইয়া, তুমি এসেছ! আমি জানতাম তুমি আসবে কিন্তু আজই যে আসবে সেটা ধারনা করিনি। তুমি দুপুরে কিছু খেয়েছিলে? তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আচ্ছা ভাবি কেমন আছে? ” একসাথে প্রশ্নগুলো করে কান্তা।
” আমরা সবাই ভালো আছি। তোর কপালে কি হয়েছে? ” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরমান তাকিয়ে আছে শ্রীজার দিকে।
শ্রীজা কিছু না বলে শুধু শুকনো হাসে। আরমানের বুঝতে বাকি থাকেনা কি হয়েছে।
শহিদ আহমেদ অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে আছেন। আজ সত্যিই সে পরাজিত।
আকলিমা খানম ঘুম ঘুম চোখে আরমানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ভেতরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হতে হতে আজ নিঃশেষ হয়ে গেছে। আরমানের সাথে কথা বলার জন্যও কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। তাই সে কোন কথা না বলে শুধু নিরবে কাঁদতে থাকে।
সাতদিন পর আকলিমা খানমকে সিঙ্গাপুর নেয়া হলে, সেখানকার ডক্টরও জানায় সে আর কোনদিন হাঁটতে পারবেনা।
চিকিৎসা শেষে আকলিমাকে দেশে আনা হয়।
দেশে এসেই শহিদ আহমেদ সত্যি সত্যিই শুভকে কাগজে-কলমে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন। তবে শহিদ আহমেদ কথামত শুভকে দুই আনা সম্পত্তি দিয়ে দেন।
আরমানকেও তার হিস্যা বুঝিয়ে দিতে চাইলে আরমান সেগুলো নিতে অস্বীকার করে। তবে শ্রীজা ওর বাবাকে আপাতত এসব নিয়ে আরমানকে কিছু বলতে নিষেধ করে। মেয়ের কথামত শহিদ আহমেদ আর কিছুই বলেননা।
কয়েকদিন থেকেই আকলিমা বারবার আরমানকে বাসায় আসবার জন্য শ্রীজাকে ফোন করতে বলছে। কিন্তু বারবার শ্রীজা কিছু একটা বলে ওর মা’কে থামিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মা’য়ের সাথে পেরে না উঠে বাধ্য হয়ে আরমানকে ফোন করে বাসায় আসতে বললে, আরমান রাজি হয়না। সে জানায়, যেদিন ওরা ডক্টরের কাছে যাবে সেদিন হসপিটালে যেয়ে আকলিমাকে দেখে আসবে। শ্রীজা মা’কে কথাটা জানালে আকলিমা খানম মন খারাপ করে। সে ভাবে, আরমানের সাথে যেসব আচরণ সে করেছে, তাতে তাকে দেখতে আসার কোন দায় নেই আরমানের।
পরদিন সকালে আকলিমা খানম স্বামী ও মেয়েসহ চিটাগং রওনা দেয়। শ্রীজা এভাবে আরমানকে না জানিয়ে যেতে চায়নি। কিন্তু আকলিমা খানমের জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে ওকে রাজি হতে হয়।
দরজা খুলেই আরমান হতভম্ব হয়ে গেছে। ও কি ভুল দেখছে! শ্রীজা হুইল চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছে, চেয়ারে বসে আছে আকলিমা খানম। পাশে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আছে শহিদ আহমেদ।
” ভেতরে ঢুকতে দিবেনা ভাইয়া। ”
শ্রীজার কথা শুনে আরমান সরে দাঁড়ায়।
কান্তা ভারি শরীর নিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। তাই ও আকলিমা খানমের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসেছে। আকলিমা খানম কান্তার হাত ধরে কেঁদেই চলেছে। আরমান ডাইনিং টেবিলে পাশে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।
আকলিমা খানম আরমানকে কাছে ডাকলে ,আরমান তার কাছে এসে দাঁড়ায়। কোনকিছু না বলেই আকলিমা খানম আরমানের দু হাত চেপে ধরে নিজের বুকের মধ্যে। অঝোরে কাঁদছে সে। আরমান কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে থাকে।
অনেকক্ষণ পর নিজেকে শান্ত করে মুখ খোলে আকলিমা।
” আজ একজন অসহায় মা তোমার সামনে এসে নত হয়েছে। জানি তোমার মা হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তুমি আমাকে মা বলে মেনে না নিলেও আমার কোন অভিযোগ থাকবেনা। কারন অভিযোগ করার মত মুখ নেই আমার। আমি তোমার কাছে ক্ষমাও চাইবনা। আমি ক্ষমা চাওয়া মানেই, তোমার ক্ষতে আরও আঘাত দেয়া। আমি চাইনা আমার কারনে তুমি পুনরায় কোন আঘাত পাও। তুমি বিপদে বাবার পাশে থাক আর ছোট বোনটার একটু খোঁজ নাও, তোমার কাছে শুধু আমার এতটুকুই চাওয়া। তোমার বাবা ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছে। তার যখনতখন কোন কিছু হয়ে যেতে পারে। আমি একজন পঙ্গু মানুষ তার কিভাবে খেয়াল রাখব বল? তোমার বোনেরও বিয়ের বয়স হয়েছে। তুমি নাকি তোমার বাবাকে রিয়াদের কথা বলেছিলে। যত তারাতারি পার তোমার খালার সাথে এই বিষয়ে কথা বল। আমি পঙ্গু মানুষ এত দৌড়াদৌড়ি করতে পারবনা। যা করার তুমি আর কান্তা মিলে কর। কি করবে তো? ” আকলিমা খানমের আকুতিমাখা কথা শুনে আরমানের বুকের ভিতর ঝড় উঠেছে। মায়েদের কথা বুঝি এমনই হয়!
চলবে…